২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জ্ঞান ও সত্য বনাম সংশয়বাদের বিচার

জ্ঞান ও সত্য বনাম সংশয়বাদের বিচার - ছবি : সংগৃহীত

সংশয়বাদের প্রকৃত জনক অনেকের মতে পিরহো (৩৬০-১৭০ খ্রিষ্টপূর্ব) তার নামের বরাতে সন্দেহবাদের লকব হয়েছে পিরহোনিজম। স্কেপটিসিজম নামে খ্যাত এ মতবাদ সন্দেহের চোখ দিয়ে দেখে সব কিছুকে। সব কিছুই তার কাছে সন্দেহজনক। সন্দেহ না করে কোনো কিছুকেই গ্রহণ করতে নেই। লোকেরা যাকে বলে জ্ঞান, কোন জ্ঞান সন্দেহমুক্ত? অসংশয় জ্ঞান বলতে কিছুই নেই। যাকে আমরা জানি, তাকে সন্দেহ করতে হবে। কারণ এই জানাটা হতে পারে ভুল। কোনো বিষয়ে কী উত্তম, আমরা তাকে জানি না। যাকে উত্তম বলা হচ্ছে, আমরা তাকে সন্দেহ করি। ফলে আস্থার কোনো মূল্য নেই। না কোনো ব্যক্তির প্রতি আস্থা রাখা যায়, না বস্তুর প্রতি। না বিশ্বাস করা যায় কোনো বর্ণনাকে, না ঐতিহ্যকে। জীবনের একান্ত প্রয়োজনে যেখানে যা করণীয়, তা করা হবে। সেই করাটা যে সব সময় ভালো হবে, তা নয়। এর ফলাফলও ভালো হওয়া নিশ্চিত নয়।

সন্দেহবাদের আরেকটি বক্তব্য হলো অবিচলতা। পরিস্থিতি যাই হোক, এর শিকার হওয়া যাবে না। প্রতিকূলতায় ভেঙে পড়া যাবে না। সব সম্ভাবনাই বাস্তব। যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো সম্ভাবনাই জীবন্ত থাকে। কোন পরিস্থিতিতে কী ঘটবে, ভালো না মন্দ; আমরা সুস্থির বলতে পারি না। ফলে আমাদের তৈরি থাকতে হয় উভয় পরিস্থিতির জন্য। হতে পারে সবচেয়ে ভালো ফলাফল কিংবা সবচেয়ে খারাপ ফলও। উভয় অবস্থার জন্য মনকে তৈরি রাখতে হয়। পরিণতি সম্পর্কে সত্যজ্ঞান না থাকায় আমরা জানি না কোন পরিণতির দিকে যাচ্ছি। আমরা তাই তৈরি থাকব যেকোনো কিছুর জন্য। উদ্বেগ আমাদের রক্ষা করবে না সেই ঘটনা থেকে, যা ঘটতে যাচ্ছে। ফলে শান্ত ও নিরুদ্বেগ মন সন্দেহবাদী দর্শনের বিশেষ অভিপ্রায়।

পিরহোর আদর্শ মন হলো এমন, উদ্বেগ ও বিচলন যাকে আচ্ছন্ন করতে পারে না। তার সুখ নিহিত থাকে দুঃখশূন্যতায়। দুঃখকে উদ্বেগশূন্যতার মধ্য দিয়ে জয় করলেই সুখের দেখা মিলবে। সুখ যেহেতু নিশ্চিত নয়, তাই সুখের কামনা অসুখের জন্ম দেয়। দুঃখের জন্য তৈরি থাকতে হবে, সুখ যদি এর মধ্যে চলে আসে, সেটি হবে আনন্দের। মনে রাখতে হবে, আপনার জন্য অপেক্ষা করছে সবচেয়ে খারাপ মন্দ। কিন্তু ভালোটা আপনি পেয়ে গেলে তা হবে বিশেষ পাওয়া। আধ্যাত্মবাদীদের সমালোচনা করে পিরহোবাদ। কিন্তু ক্ষুধা, তৃষ্ণা, যৌনকামনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কঠোর সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়। বুদ্ধদর্শন পিরহোবাদকে প্রভাবিত করে প্রচণ্ডভাবে।

আলেকজান্ডারের সেনাদলভুক্ত হয়ে ভারতবর্ষে এসেছিলেন পিরহো। যৌবনে খ্যাতি লাভ করেন সাহিত্য ও বিজ্ঞানে মনোযোগের জন্য। দর্শন ছিল তার মনোস্বভাবের কেন্দ্রে। ডেমোক্রিটাস ও মেগারিকদের দর্শনের সাথে ঘনিষ্ঠ পরিচয় হয় তারুণ্যেই। তখন থেকেই প্রচণ্ড সংশয়ী মন তাকে চালিত করত। কিছুই লিখে যাননি পিরহো। তার মতামতগুলোর পরিচয় মেলে তার শিষ্য টাইমন (খ্রিষ্টপূর্ব ৩২০-২৩০) এর রচনায়। সংশয়বাদ সম্বন্ধে টাইমন বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এর মধ্যে একটি ছিল শ্লেষাত্মক কাব্যগ্রন্থ। যা থেলিস থেকে শুরু করে আর্কেসিলস পর্যন্ত সব আধ্যাত্মবাদীর তিক্ত সমালোচনায় মুখর! পাইরো ও জেনিফেনিস ছাড়া সবাইকে আক্রমণ করেছেন টাইমন। সংশয়ের মধ্য দিয়ে দার্শনিক প্রশ্নগুলোর মীমাংসাই ছিল তার লক্ষ্য। তিনি অস্বীকার করেন নিশ্চিত জ্ঞান ও সত্যকে। পরে আর্কেসিলস (৩১৫-২৪০ খ্রিষ্টপূর্ব), কর্নিয়াডিস (২১৩-১২৯ খ্রিষ্টপূর্ব), এনসিডিডেমাস (খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতক) প্রমুখ সংশয়বাদকে এগিয়ে নিয়ে যান।

জ্ঞানের বিপক্ষে ছিল তাদের মুখরতা। এনসিডিডেমাসের ১০ যুক্তিতে সেই মুখরতার একটি মিলিত বয়ান লক্ষ করা যেতে পারে। তিনি দেখাতে চেষ্টা করেন- ১. ইন্দ্রিয় আর অনুভূতি হচ্ছে মানুষের জ্ঞানের মাধ্যম। কিন্তু ইন্দ্রিয় যেভাবে বিচার করে এবং অনুভূতি যে সিদ্ধান্ত নেয়, তা একরকম হয় না। ২. জ্ঞানার্জন করে ব্যক্তি মানুষ। ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে জ্ঞানে দেখা যায় ভিন্নতা। কারণ ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে রয়েছে দৈহিক ও মানসিক ব্যবধান। ৩. ব্যক্তির একেক ইন্দ্রিয় একই বিষয়ে পরস্পরবিরোধী রায় দেয়। ৪. জ্ঞানের অবয়ব কেমন হবে, তা নির্ভর করে ব্যক্তির দেহজ ও মনোজাগতিক অবস্থার ওপর। সেটি যখন বদলে, জ্ঞানের অবস্থাও বদলে যায়। ৫. যে বস্তু সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা হবে, তার সম্পর্কে ধারণা বদলে যায় দৃষ্ট বস্তুর দূরত্ব ও অবস্থানের ভিত্তিতে। ফলে যে ধারণা অর্জিত হয়, তা আপেক্ষিক। ৬. যে বিষয় বা বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা হয়, কখনোই মাধ্যম ছাড়া জ্ঞান অর্জিত হয় না।

সরাসরি জ্ঞানার্জন নেই। জ্ঞান মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল। ৭. বস্তু সম্পর্কিত জ্ঞান বদলে যায়, যখন তার রঙ বদলে যায়, গুণ ও পরিমাণ বদলে যায়। ফলে যে বিষয়েই জ্ঞান লাভ হোক, তা স্থির জ্ঞান নয়। ৮. জ্ঞান অনেকটা নির্ভর করে বিষয়ের সাথে বিষয়ের পরিচয়ের মাত্রার ওপর। পরিচয়ের পরিমাণে যে পরিমাণে পার্থক্য থাকে, জ্ঞানেও পার্থক্য থাকে সেই পরিমাণ। ৯. ব্যক্তি যে অনুমানে উপনীত হয় বা যে অভিমত পোষণ করে, তাকেই চালিয়ে দেয়া হয় জ্ঞান বলে। ১০. অভিমতগুলো নানা অঞ্চলে নানা রকম। যার ফলে আচরণও হয় বিচিত্র। বহুধাবিভক্ত। যা জ্ঞানকেন্দ্রিক ভিন্ন ভিন্ন উপলব্ধির কারণে হয়ে থাকে।

এই যে ১০ যুক্তি, সবগুলো স্বতন্ত্র যুক্তি নয়। একটি প্রসঙ্গ বা একটি যুক্তিকে কয়েকটি শিরোনামে উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব যুক্তির মূল কথা হলো- সত্যের কোনো সুনিশ্চয় বাস্তবতা নেই। তার মধ্যে রয়েছে আপেক্ষিকতা। নানা প্রেক্ষাপটে, নানা অবস্থায় সে নানাভাবে অনুভূত হয়। ফলে তার কোন ধরন সঠিক, তা নিশ্চিত হওয়া যায় না। জ্ঞানের অপরিহার্য মাধ্যম হচ্ছে ব্যক্তি। জ্ঞানার্জন করে যে ব্যক্তি, তার উপলব্ধি, পরিপ্রেক্ষিত ও পরিবেশের সাথে রয়েছে জ্ঞানের সম্পর্ক। ফলে তার অর্জিত জ্ঞান নিজেই সংশয়পূর্ণ।
জ্ঞানকে সন্দেহ করতে হবে। কিন্তু এসব যুক্তি মূলত সেই উপায়ের দুর্বলতা নির্দেশ করছে, যা জ্ঞানে উপনীত হওয়ার মাধ্যম। সমস্যাটি জ্ঞানের নয়, জ্ঞানের সাথে আমাদের যোগাযোগের উপায়ের। পিরহো লক্ষ্য করেন জ্ঞানের মাধ্যম হিসেবে দু’টি প্রধান প্রস্তাবনা। একটি ইন্দ্রিয়সংবেদন, অপরটি বিচারবুদ্ধি। কিন্তু উভয় মাধ্যমই ভুল করে। ভুল তথ্য সরবরাহ করে পঞ্চ ইন্দ্রিয়। সবচেয়ে বেশি তথ্য দেয় যে চোখ, সে করে কয়েক শত রকমের ভুল। উভয় জ্ঞানমাধ্যমই ভুল করে। প্রতিটি ইন্দ্রিয়ই ভুল তথ্য সরবরাহ করে। ত্বকও ভুল করে। দু’টি উষ্ণ ও শীতল পানির পাত্রে দু’হাত ডুবিয়ে অতঃপর দুয়ের মাঝামাঝি তাপমাত্রার পানির পাত্রে উভয় হাত ডুবালে এক হাতে গরম ও এক হাতে ঠাণ্ডা অনুভূত হবে, অথচ একই পানি। এক পানি একই সময়ে একই সাথে ঠাণ্ডা ও গরম কিভাবে হতে পারে?

অপর দিকে, বিচারবুদ্ধি ভুল করে আরো বেশি। ফলে না ইন্দ্রিয়ের ওপর আস্থা রাখা যাচ্ছে, না বিচারবুদ্ধির ওপর। জ্ঞানের উভয় মাধ্যমই যখন বিশ্বাসযোগ্য নয়, ফলে জ্ঞানার্জন অসম্ভব। জ্ঞানীয় বক্তব্যগুলোর সাথে কথা বলতে হবে সন্দেহের ভাষায়। তাকে দেখতে হবে সংশয়ের চোখে। কারণ জ্ঞান নিজেই স্বপ্নের মতো।

যে মুহূর্তে মানুষ স্বপ্ন দেখছে, সে একে বাস্তব বলেই মনে করছে। স্বপ্নে সে হাসছে, উল্লøসিত হচ্ছে, কাঁদছে, বেদনাবিদ্ধ হচ্ছে, আশাবাদী হচ্ছে, হতাশ হচ্ছে, রূপে হচ্ছে মুগ্ধ, রসে হচ্ছে তৃপ্ত, গন্ধে হচ্ছে মোহিত, বর্ণে হচ্ছে পুলকিত। কিন্তু তা কেবল ঘুমের ভেতর। ঘুম শেষে তা অবাস্তব। জাগরণের সাথে সাথে প্রমাণ হয়ে যায় এতক্ষণ সে মায়ার জগতে ছিল, যার কোনো বাস্তবতা নেই। কিন্তু স্বপ্নে যখন ছিল, ভেবেছিল বাস্তবেই আছে। যে জীবন আমরা যাপন করি, এর মধ্যেও যাকে আমরা বাস্তব মনে করে বসে আছি, তা যে আসলে ঠিক স্বপ্নের মতো নয়, এর প্রমাণ কী? যখন মরণ আসবে, তখন ধরা পড়বে এর অবাস্তবতা। বোঝা যাবে এতকাল ছিলাম স্বপ্নের এক ঘোরের মধ্যে, যা আসলে বাস্তব ছিল না। অতএব এখানে যাকে বাস্তব জ্ঞান ও বাস্তব সত্য মনে করা হচ্ছে, তা যে অবাস্তব নয়, এটি কিভাবে প্রমাণিত হবে? তা যদি অবাস্তব না হয়, তবুও অবাস্তব হওয়ার সংশয়ে সে পিষ্ট। অতএব সে নিশ্চিত নয়। ফলে সে সত্য হতে পারে না। কারণ অনিশ্চিত সত্য সত্য নয়। অবাস্তবতার আশঙ্কাপূর্ণ জ্ঞান জ্ঞান নয়।
কিন্তু ইন্দ্রিয় ও বুদ্ধিবিচার যদি সন্দেহপূর্ণ হয়, তাতে তার দ্বারা অর্জিত জ্ঞানের যথার্থতা অনিশ্চিত হচ্ছে। তার সঠিক হওয়া যেমন অনিশ্চিত, তেমনি অঠিক হওয়াও অনিশ্চিত। এক কথায় তাকে প্রত্যাখ্যানের সুযোগ নেই। সে সঠিক হওয়ার সম্ভাবনাও রাখে। তার ভ্রান্তি চিহ্নিত হবে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে। ভ্রান্তি যতই চিহ্নিত হবে, সঠিকতার সম্ভাবনা ততই বাড়বে।

ইমাম গাযযালীর (১০৫৮-১১১১) দার্শনিকতা সন্দেহবাদী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। কিন্তু নিরন্তর বিচার ও নিরীক্ষণ অধিকতর শুদ্ধতার দিকে তাকে এগিয়ে নিয়েছে ক্রমাগত। যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি নিশ্চিত জ্ঞানের প্রত্যয় ঘোষণা করলেন এবং দার্শনিক প্রস্তাবনা পেশ করলেন। সত্যের প্রত্যক্ষণে প্রবুদ্ধ হলেন। সংশয়বাদের বিরুদ্ধে হানলেন প্রবল আঘাত। তার সংশয় ছিল পদ্ধতিগত সংশয়, সামগ্রিক সংশয় নয়। যা প্রকৃতপক্ষে মোকাবেলা করেছে সংশয়বাদের। পরবর্তীতে ডেকার্তের (১৫৯৬-১৬৫০) দার্শনিকতায় একই ধারা লক্ষ করা যায়। তিনিও সংশয় থেকে শুরু করে প্রত্যয়ে উপনীত হন ও সামগ্রিক সংশয়বাদীদের বিরোধিতা করেন। ‘পদ্ধতিগত সংশয়’ (সবঃযড়ফড়ষড়মরপধষ ফড়ঁনঃ) নামক দার্শনিক সত্য আবিষ্কারের পদ্ধতি হিসেবে এক ধরনের সংশয়কে অনুমোদন দেন। ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল (১৮৭২-১৯৭০) প্রস্তাবনা করেন ‘দার্শনিক সংশয়’ বা ঢ়যরষড়ংড়ঢ়যরপ ফড়ঁনঃ-এর। এ সংশয়বাদী দৃষ্টিভঙ্গি রাসেলের চোখে দর্শনচর্চার জন্য জরুরি। এগুলোর কোনোটিই সার্বিক সংশয় নয়, সবই প্রারম্ভিক সংশয়। তবে এটি সত্য যে, আধুনিক দর্শনের ওপর পিরহোনিজমের প্রভাব অত্যন্ত গভীর।

পদ্ধতিগত অর্থে দার্শনিক সত্য আবিষ্কারে নিবেদিত ব্যক্তি পুরোমাত্রায় সংশয়ী হতে পারেন; বিশেষ করে, সত্যে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত। ডেকার্তের পদ্ধতিগত সংশয় সব কিছুকেই সন্দেহ করতে বলে। যে পর্যন্ত তাকে সন্দেহ করার মতো সব বিষয় মিথ্যা প্রমাণ না হবে। অর্থাৎ তার সংশয়ের লক্ষ্য হলো সত্যে পৌঁছা। যেখানে পিরহোনিজম বলে- সত্যে পৌঁছা আদৌ সম্ভব নয়। তার জন্য চেষ্টা করেও লাভ নেই।

ডেকার্তের বক্তব্যে পিরহো প্রতিধ্বনিত হন, যখন তিনি বলেন, সব বিষয়েই সন্দেহ করতে পারি, শুধু সন্দেহ করতে পারি না সন্দেহপোষণের বিষয়ে। এর মানে হলো, একটি বিষয়ে সন্দেহমুক্ত হচ্ছি, তা হলো সব বিষয়ে সন্দেহ করি। যেহেতু আমি সন্দেহ করছি, তার মানে আমি আছি। আমার থাকাকে সন্দেহ করা যাচ্ছে না। যেহেতু আমি সংশয় পোষণ করি সেহেতু আমি আছি- এ ব্যাপারেও প্রত্যয় পোষণ করি। এমন বহু বিষয় আছে, যাকে সন্দেহ করি, কারণ তার স্বরূপ জানি না। সন্দেহ করি ইন্দ্রিয় ও বিচারবোধকেও, তাদের অস্তিত্ব আছে আর তারা ভুল করে।

তাহলে ইন্দ্রিয় ও বিচারবুদ্ধির অস্তিত্ব আছে, সেখানে সন্দেহ করছে না পিরহোবাদ, তারা ভুল করে, এতেও করছে না সন্দেহ। তার সন্দেহ নেই সন্দেহের ওপরও। কিন্তু সন্দেহের ওপর সন্দেহ না করতে হলে কয়েকটি জিনিসের ওপর থেকে সন্দেহ উঠিয়ে নিতে হবে। যে অবস্থাকে বলা যায় সন্দেহ, তার অস্তিত্ব ও উপস্থিতি বিশ্বাস করতে হবে। যে সন্দেহ পোষণ করছে, তার অস্তিত্ব ও উপস্থিতি বিশ্বাস করতে হবে। যে বিষয়ে সন্দেহ করা হচ্ছে, তার অস্তিত্ব ও বাস্তবতা বিশ্বাস করতে হবে। তার মানে, এ কথা ঠিক থাকছে না যে, সন্দেহ ছাড়া সব কিছুকেই সন্দেহ করি।

সন্দেহবাদ সন্দেহবাদী অবস্থানকে ব্যাখ্যা করার জন্য আশ্রয় নেয় ইন্দ্রিয়অভিজ্ঞতা ও বিচার-বিশ্লেষণের। এর মানে হলো, উভয় মাধ্যম তাদেরকে সন্দেহ অবধি নিয়ে যান। তারা যখন উভয় মাধ্যমকে সন্দেহ করছেন, তখনো তারা উভয় মাধ্যমকে অবলম্বন করছেন। অন্তত যে সন্দেহমূলক মতাদর্শে তারা সন্দিহান নন, সেই মতাদর্শের প্রতিষ্ঠায় ইন্দ্রিয়সংবেদ ও বিচারবুদ্ধির আশ্রয় নিয়ে তারা কী প্রমাণ করেন? প্রমাণ করেন যে, ইন্দ্রিয় সংবেদ ও বিচারবুদ্ধির কিছু সিদ্ধান্তকে অন্তত সন্দেহ করা যাচ্ছে না। যার উপর দাঁড়িয়ে আছে তাদের দার্শনিক মতামত।

বিচারবুদ্ধির ভুল চিহ্নিত করতে সন্দেহবাদ আশ্রয় নিয়েছে বিচারবুদ্ধির। এ দিয়েও সন্দেহবাদীরা এমন কিছুকে প্রমাণ করে বসেন, যা তারা প্রমাণ করতে চান না। তারা দেখাতে চান, বিচারবুদ্ধি সিদ্ধান্ত অবধি নিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু যে সিদ্ধান্তে তারা উপনীত হয়েছেন, সেখানেই আছে বিচারবুদ্ধির হাত! বিচারবুদ্ধির আশ্রয় নিয়ে যখন বিচারবুদ্ধির ভুল চিহ্নিত করা হয়, তখন এটি প্রমাণিত হয় যে, যেহেতু বিচারবুদ্ধি ভুল চিহ্নিত করতে সক্ষম, তাই সে শুদ্ধতার প্রস্তাব করতে সক্ষম। নির্ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সে সাহায্য করতে সক্ষম।

সংশয়বাদীদের চিন্তা ও দর্শনের ভিত্তিকে ধসিয়ে দিতে পারে সংশয়বাদীদের নিজস্ব বক্তব্য। সংশয়বাদ জোর দিয়ে বলে সমস্ত বিষয়ই সংশয়ের মধ্যে ডুবে আছে। এই মতামত তাদের কাছে নির্ভুল ও অকাট্য। মানে, সব কিছুতে সংশয় হলেও এ বিষয়ে সংশয় নেই। এ মূল দাবি নিজেই খারিজ করে দেয় সন্দেহবাদের মূল দাবিকে; সেটি হলোÑ সব কিছুই সন্দেহজনক। কারণ সন্দেহ সব কিছুর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু সন্দেহ তাদের কাছে সন্দেহজনক নয়। ফলাফল সব কিছুই সন্দেহজনক নয়।

তাহলে সব কিছু সন্দেহজনক প্রত্যয়টি দিয়ে সব কিছু সন্দেহজনক প্রত্যয়কে রক্ষা করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সন্দেহবাদীদের জন্য আরেকটি সুযোগ থাকে নিজেদের দাবি রক্ষার জন্য। সেটি হলোÑ সব কিছু সন্দেহজনক, এ ধারণা সত্য হওয়ার ব্যাপারে তাদের সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু এ ধারণার সত্যতায় যদি তাদের সন্দেহ থাকে, তাহলে এ সন্দেহ নিজেই তাদের তত্ত্বকে বাতিল করে দেবে। কারণ যে তত্ত্বের সঠিকতা সন্দেহজনক, তার মাধ্যমে জ্ঞান, সত্য, কল্যাণ-অকল্যাণের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যায় না!

লেখক : কবি, গবেষক

 


আরো সংবাদ



premium cement
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব হলেন সরওয়ার আলম প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক পরিচালকের বিদায়ী সাক্ষাৎ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তরুণদের প্রস্তুতি নিতে হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা চুয়াডাঙ্গায় বিজিবির অভিযানে ৪টি স্বর্ণের বার উদ্ধার স্বামীসহ সাবেক এমপি হেনরীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা সিলেটে ৫ হাজার কোটি টাকার দুই ‘মেগা’ প্রকল্প বাতিল পৌনে চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে ট্রেন যাবে খুলনায়, কাল উদ্বোধন দেশে ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্র এখনো চলছে : বিএনপি মহাসচিব চৌদ্দগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নাজেহাল করার ঘটনায় জামায়াতের নিন্দা শ্রম সংস্কার কমিশনের কাছে প্রস্তাবনা পেশ করেছে পোশাক শ্রমিক নেতারা স্বামীর পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা

সকল