০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

জনকল্যাণে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়াক্ফ এস্টেট

জনকল্যাণে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়াক্ফ এস্টেট - ফাইল ছবি

ইসলামের ইতিহাসে ওয়াক্ফ সংস্কৃতি অতি প্রাচীন। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর সময় থেকে এর ধারাবাহিকতা মুসলিম সমাজে প্রচলিত। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে ওয়াক্ফের উল্লেখ রয়েছে এবং ধর্মীয় প্রয়োজন ও জনকল্যাণে সম্পদ ওয়াক্ফ করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কখনো সওয়াব অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষণ না ব্যয় করবে তা থেকে, যা তোমরা ভালোবাস। আর যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে, নিশ্চয় সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত।’ (সূরা আলে ইমরান-৯২) এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর মহানবী সা:-এর পরামর্শক্রমে হজরত তালহা মদিনার ‘বিরহা’ নামের সুপেয় পানির ক‚পটি আত্মীয়-স্বজনদের ওয়াক্ফ করে দেন। (মুফতি মুহাম্মদ শফি, মাআরিফুল কুরআন, মদিনা, পৃষ্ঠা-১৮৬)

ওয়াক্ফ অর্থ মুক্ত রাখা, আবদ্ধ রাখা। (আল কামুসুল মুহিত : ৩/২৯৬) ওয়াক্ফকৃত সম্পদ ক্রয়-বিক্রয়সহ মালিকানাসুলভ সব আচরণ থেকে মুক্ত রাখা ও সংরক্ষণ করা হয়। ইমাম ইবনে কুদামা রহ.-এর পারিভাষিক অর্থ লিখতে গিয়ে বলেন, কোনো বস্তুর এভাবে দান করা যে, এর মূল সবসময় বহাল থাকবে। তবে এর উপযোগ ও উপকারিতা আল্লাহর পথে ব্যয় হবে। (আল মুগনি : ৮/১৮) ওয়াক্ফ লিখিতভাবে করা যেতে পারে, আবার মৌখিকভাবেও করা যেতে পারে। তবে সাধারণত লিখিত দলিল সম্পাদন করা হয় এবং সেটিই উত্তম। (মুফতি লুকমান হাসান, আলোকিত বাংলাদেশ, ঢাকা, ৬ মার্চ ২০২২)

ইসলামের দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে অনেক প্রাতঃস্মরণীয় দানবীরের জন্ম হয়েছে দেশে দেশে যারা নিজের কষ্টার্জিত সম্পদ সওয়াবের আশায় ধর্মীয় কর্মকাণ্ড ও জনকল্যাণে ওয়াক্ফ করে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একবিংশ শতাব্দীতে সৌদি আরবের শিল্পোদ্যাক্তা ও বিলিয়নিয়ার শায়খ সোলায়মান বিন আবদুল আজিজ আল-রাজি অন্যতম। ২০১১ সালে তার সম্পদের পরিমাণ ফোর্বস ম্যাগাজিনে অনুমান করা হয়েছিল ৫.৯ বিলিয়ন ডলার। তাকে বিশ্বের ১৬৯তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১০ সালে সোলায়মান আল-রাজি তার স্ত্রী-সন্তানদের তার বিশাল সম্পদের অর্ধেক দিয়ে বাকি অর্ধেক ওয়াক্ফ করে দেন। সেই ওয়াক্ফ করা সম্পদের বর্তমান মূল্য ৬০ বিলিয়ন রিয়ালের বেশি। যা থেকে প্রতিনিয়ত মানুষের জন্য দান করা হচ্ছে। ফোর্বস ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের শীর্ষ ২০ জন দাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরিয়াহ ব্যাংক আল-রাজি ব্যাংক অ্যান্ড ফাইন্যান্স করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে তুলেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় পোলট্রি ফার্ম, যার নাম আল-ওয়াতানিয়া পোলট্রি। চিংড়ি চাষসহ বেশ কয়েকটি কৃষি প্রকল্প চালু করার মাধ্যমে সৌদি আরবে জৈবচাষের পরীক্ষা সক্রিয় করার কৃতিত্ব একমাত্র তার। তিনি রিয়েল এস্টেট ও অন্যান্য বিনিয়োগ প্রকল্পও প্রতিষ্ঠা করেন। সৌদি আরবে এমন একটি শহরও পাওয়া যাবে না যেখানে আল-রাজি পরিবারের অর্থে মসজিদ প্রতিষ্ঠা হয়নি। নিয়মিত অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ইসলামী দাওয়া, শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে। নিজেদের প্রতিষ্ঠানের ১৫ লাখ কর্মীকে বেতন দেয়া হয় মাস শেষের আগেই। (মুহাম্মদ শরীফ হোসেন, কালের কণ্ঠ, ঢাকা, ৫ আগস্ট ২০২০) ফোর্বস ম্যাগাজিনে তার সম্পদের পরিমাণ ৫.৯ বিলিয়ন ডলার বলা হলেও ২০১১ সালে তার সম্পদ দাঁড়ায় ৭.৭ বিলিয়ন ডলারে।

ইতোমধ্যে শায়খ সোলায়মান আল-রাজির সম্পত্তির পরিমাণ আরো বেড়েছে। তার মালিকানাধীন সৌদি আরবের আল-কাসিম শহরে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিনির্ভর বিশাল খেজুরবাগান ওয়াক্ফ করে দেন সরকারের ওয়াক্ফ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে। ওই বাগানে ৪৫ প্রজাতির খেজুর গাছ রয়েছে যার সংখ্যা দুই লক্ষাধিক। এটি ওয়াক্ফ হওয়া বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ খেজুরবীথি। এই বাগান থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে বিভিন্ন দেশে মসজিদ নির্মাণ, দরিদ্রদের সহায়তাসহ মক্কা ও মদিনার দুই পবিত্র মসজিদে রমজানে ইফতারের আয়োজন করা হয়। এই বাগানের মধ্যে খেজুর প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্যাকেজিংয়ের ইউনিট রয়েছে। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে এই বাগানের বিবরণ স্থান পেয়েছে। কঠোর পরিশ্রম এবং নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে কোটিপতি হওয়ার আগে তাকে শৈশবকালে দারিদ্র্য ও দুঃখকষ্টের সাথে লড়াই করতে হয়েছিল এবং তারপর তার সব সম্পদ ছেড়ে দিয়ে আবার নিঃস্ব হয়ে যান।

তিনি বলেন, ‘এখন আমি শুধু আমার পোশাকের মালিক। আমি আমার সম্পদ আমার সন্তানদের মধ্যে বিতরণ করেছি এবং দাতব্য প্রকল্প চালানোর জন্য ওয়াক্ফের জন্য একটি অংশ আলাদা করে রেখেছি। যতদূর আমি উদ্বিগ্ন, এই পরিস্থিতি একটি অদ্ভুত ছিল না, আমার আর্থিক অবস্থা আমার জীবনে দু’বার জিরো পয়েন্টে পৌঁছেছে এবং সে জন্য আমি (দারিদ্র্য সম্পর্কে) অনুভূতি এবং উপলব্ধি করেছি। কিন্তু এখন সুখানুভ‚তি, শিথিলতা ও মানসিক প্রশান্তি অনুষঙ্গী হয়েছে। জীবনের এই শূন্য পর্বটি সম্পূর্ণরূপে আমার নিজের সিদ্ধান্ত ও পছন্দের কারণে।’ (দ্য ডেইলি আরব নিউজ, জেদ্দা, ৩০ মে ২০১২)

কেন এই পথ বেছে নিলেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘সমস্ত ধন-সম্পদ আল্লাহর এবং আমরা কেবল তারাই যাদের (আল্লাহর) তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বেশ কিছু কারণ ছিল যা আমাকে সম্পদ বণ্টন করতে প্রণোদিত করেছিল এবং এর ফলে এই পুণ্য সম্পাদিত হয়েছিল। তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমার সন্তানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা বৃদ্ধি করা এবং তাদের সম্প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করা। এটি এই জীবনের যেকোনো সম্পদের চেয়ে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। উত্তরাধিকার বণ্টন নিয়ে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলে আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট না করার জন্যও আমি আগ্রহী ছিলাম।
এমন বেশ কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে যা প্রত্যেকে দেখতে পায় যখন সন্তানরা সম্পদ নিয়ে বিবাদে প্রবেশ করে এবং এর ফলে কোম্পানিগুলোর পতন ঘটে। এ ছাড়া প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এমন কিছু দান নিয়ে কাজ করা যা মৃত্যুর পরের জীবনে তার উপকার করতে পারে। একইভাবে, আমি আমার জীবদ্দশায় সন্তানদের সম্পদ উন্নয়নে কাজ করতে পছন্দ করি, যা তারা আমার মৃত্যুর পরে উত্তরাধিকার সূত্রে পাবে। (দ্য ডেইলি আরব নিউজ, জেদ্দা, ৩০ মে ২০১২)

ব্যয়ের ক্ষেত্রে তার কঠোরতা ও সার্থকতা সর্বজনবিদিত। শায়খ সোলায়মান আল-রাজি বলেন, ‘আমি কৃপণ নই। তবে আমি বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে সর্বদা সতর্ক। আমি সর্বদাই আমার সাথে যারা কাজ করে তাদের সবাইকে এই শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করি তা ব্যাংকিং বা পোলট্রি বা অন্যান্য প্রকল্পে, যখন এটি আমার সন্তানদের ক্ষেত্রে আসে তখন আমি এটি সম্পর্কে আরো উদ্বিগ্ন থাকি। অতীতে, আমি আমার সন্তানদের ছোটবেলায় অর্থ দেইনি। তাদের কেউ নগদ টাকা দেয়ার জন্য আমার কাছে গেলে আমি তাদের বিনিময়ে কিছু কাজ করতে বলি।

আমি সারা জীবন ইসলামের নীতিগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে আগ্রহী। একবার আমি একটি আরব দেশের সরকারের কাছ থেকে সেখানে একটি বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। সম্মেলনের ফাঁকে, আমাকে একটি নৈশভোজে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমি যখন সেখানে পৌঁছলাম, আমি একটি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখতে পেলাম, যা ছিল আমাদের ধর্মীয় রীতিনীতি ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী। তাই আমি অবিলম্বে ওই স্থান পরিত্যাগ করি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবদুল আজিজ আল-ঘোরাইরও আমার সাথে যোগ দেন। শিগগিরই ক্ষমতাধর এক মন্ত্রী আমাদের কাছে ছুটে আসেন এবং আমরা তাকে বুঝিয়ে বলি যে, অনুষ্ঠানটি আমাদের ইসলামী ঐতিহ্যের পরিপন্থী। তাই তিনি আমাদের জানান, বিনোদনমূলক পার্টি বাতিল করা হবে। তারা সেই পার্টি বাতিল করলে আমরা নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলাম। (দ্য ডেইলি আরব নিউজ, জেদ্দা, ৩০ মে ২০১২)

আল-রাজি পরিবারকে সৌদি আরবের বেশির ভাগ জনগণ দেশের সবচেয়ে ধনী অ-রাজকীয় ও বিশ্বের নেতৃস্থানীয় সমাজসেবীদের মধ্যে বিবেচনা করে থাকে। শায়খ সোলায়মান তার নিজ শহরে সোলায়মান আল-রাজি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, এটি অলাভজনক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফোকাস স্বাস্থ্য ও ইসলামিক ব্যাংকিং, তবে অন্যান্য অনুষদগুলোও রয়েছে। তিনি ২০১২ সালের কিং ফয়সাল ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পেয়েছিলেন যার পরিমাণ দুই লাখ মার্কিন ডলার। এর অর্ধেক দাতব্য কাজে, একটি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে দান করে দিয়েছেন। ১৯২৯ সালে সৌদি আরবের আল-কাসিম প্রদেশের আল-বুকাইরিয়াতে জন্মগ্রহণকারী ও নাজদে বেড়ে উঠা শায়খ সোলায়মান আল-রাজির বয়স যখন ১২ তিনি খেজুর সংগ্রহের চাকরি নেন। এতে প্রতি মাসে ছয় সৌদি রিয়ালের বেশি আয় হতো না। তিনি তার কঠোর পরিশ্রমের সময় একই পোশাক পরে একই কর্মক্ষেত্রে কাঁকরের উপর ঘুমাতেন। জীবনের একটি পর্যায়ে রিয়াদের হোটেলে রান্নাবান্নার কাজ করতেন। তিনি ও তার ভাই সালেহ আল-রাজি অর্থের বিনিময়ে তীর্থযাত্রীদের মরুভূমি পেরিয়ে উটের কাফেলা মক্কা শহরে যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন। এর মাধ্যমে তাদের ব্যবসার সূচনা।

বিজনেস দৈনিক আল-ইকতিসাদিয়াহের মুহাম্মাদ আল-হারবির সাথে একটি সাক্ষাৎকারে আল-রাজি বলেন, ‘আমি আমার উপার্জন করা প্রতিটি পয়সা পরের দিনের জন্য রাখতাম। এটিই আমাকে একটি সূচনাবিন্দু পেতে সক্ষম করেছিল যা আমি আমার ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করেছি। প্রায় ৩০ বছর আগে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর প্রধানদের বোঝাতে কিভাবে সফল হয়েছিলেন সে সম্পর্কে কথা বলেন। যে সুদ ইসলাম এবং খ্রিষ্টান উভয় ধর্মেই নিষিদ্ধ এবং ইসলামী ব্যাংকিং হলো বিশ্বে ইসলামী অর্থায়ন সক্রিয় করতে ও এটিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে সত্যিকারের উন্নতির জন্য সবচেয়ে কার্যকর সমাধান। হালাল রিজিকের জন্য সর্বদাই তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন।

ড. খালিদ বাতরাফির সাথে এক সাক্ষাৎকারে শায়খ সোলায়মান আল-রাজি বলেন, ‘এ সাফল্যের জন্য আমরা আমাদের দেশ, সমাজ ও মানুষের কাছে ঋণী। তাই দেশের জন্য, মানুষের জন্যও কিছু করতে হবে।’ তাকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি অর্ধেক সম্পত্তি স্ত্রী-সন্তানদের দিলেন, বাকি অর্ধেক দান করলেন। নিজের জন্য কী রাখলেন? মৃদু হেসে সোলায়মান আল-রাজি জবাব দিলেন, ‘কিছুই না’।

তিনি বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৮০ বছর। এ জীবনে কী আর প্রয়োজন আছে? ওয়াক্ফ থেকে আমার বাসস্থান, খাবার, পরিবহন ও চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হয়। তা-ও যত কম করা যায় আমি চেষ্টা করি।’ আপনি একজন বিলিয়নিয়ার অথচ এখন এক পয়সাও আপনার কাছে নেই, কেমন অনুভূতি? এমন প্রশ্নের জবাবেও মৃদু হেসে আল-রাজি বললেন, ‘আমি এখন ভারমুক্ত। আমি নিজেকে একটি মুক্ত পাখির মতো মনে করি। যখন স্রষ্টা ডাক দেবেন, সাথে সাথেই সাড়া দিতে পারব উৎকণ্ঠা ছাড়াই। কোনো পিছুটান থাকবে না। এর চেয়ে বড় স্বস্তি আর কী হতে পারে? (সৌদি গেজেট, রিয়াদ, ৩১ জুলাই ২০১৮)

জন্ম তার দরিদ্র পরিবারে। তিনি যে স্কুলে পড়াশোনা করতেন, একবার ওই স্কুলে আনন্দ ভ্রমণের আয়োজন করা হয়। জানিয়ে দেয়া হয় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে এক রিয়াল করে দিতে হবে। কিন্তু আল-রাজির মা-বাবার আর্থিক অবস্থা এত করুণ ছিল যে, সন্তানের জন্য একটি রিয়ালের ব্যবস্থা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ফলে ভ্রমণের সময় ঘনিয়ে আসায় তিনি কাঁদতে লাগলেন- কী করে ওই একটি রিয়ালের ব্যবস্থা করা যায়, তা ভেবে। ঠিক ওই সময়টায় পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে দেখা যায়, সোলায়মান ক্লাসে প্রথম হয়েছেন। এই সাফল্যের পুরস্কার হিসেবে এক ফিলিস্তিনি শিক্ষক তাকে পুরস্কৃত করলেন একটি রিয়াল দিয়ে। এভাবে আনন্দ ভ্রমণের শখ পূরণ হওয়ার সুযোগ পেয়ে সোলায়মান আনন্দে যেন আটখানা হয়ে গেলেন। এরপর পড়াশোনা শেষে কর্মজীবনে খুব দ্রুতই সাফল্যের দেখা পান আল-রাজি।
একজন উদ্যোক্তা হিসেবে শ্রম ও সাধনায় অল্প সময়ের ব্যবধানে ‘আল-রাজি’ নামে তিনি ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন পুরো সৌদি আরবে। এটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক।
সোলায়মান আল-রাজি এবার তার ফিলিস্তিনি শিক্ষককে খুঁজতে থাকেন। যখন শিক্ষককে পেলেন তখন তিনি অবসরপ্রাপ্ত, আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত করুণ। আল-রাজি তার শিক্ষককে নিয়ে এসে একটি গাড়িতে বসালেন। বললেন, ‘আমি আপনার কাছে ঋণী’। শিক্ষক বললেন, ‘একজন দরিদ্র লোকের কাছে মানুষ কিভাবে ঋণী হয়?’ রাজি পুরনো ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রিয় শিক্ষককে বললেন, ‘কয়েক বছর আগে আপনি আমাকে এক রিয়াল পুরস্কার দিয়েছিলেন’। শিক্ষক মৃদু হেসে বললেন, ‘সেই এক রিয়াল তুমি এখন ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছ?’ এরপর রাজি তার প্রিয় শিক্ষককে একটি সুন্দর বাড়িতে নিয়ে এলেন, সেখানে ছিল একটি দামি গাড়ি। বললেন, ‘আজ থেকে এই বাড়ি ও গাড়ি আপনার। আর আপনার যাবতীয় খরচ বহন করব আমরা।’

অশ্রুসিক্ত শিক্ষক বললেন, ‘এসব আমার জন্য অনেক বেশি হয়ে যায়’। রাজি উত্তর দিলেন, ‘আজ এসব পেয়ে আপনি যতটুকু খুশি, সেদিন এক রিয়াল পেয়ে আমি তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলাম।’ (কালের কণ্ঠ, ঢাকা, ৫ আগস্ট ২০২০) ২০১৭ সালের ২৭ জুন এ দানবীর ইন্তেকাল করেন। এই সময় তার বয়স ছিল ৯৭ বছর।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement