মামলার জট : বিকল্প বিচারব্যবস্থা
- তৈমূর আলম খন্দকার
- ০৭ জুলাই ২০২২, ২০:৩১
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, ৪৩ লাখ মোকদ্দমা দেশব্যাপী বিভিন্ন আদালতে এখন বিচারাধীন, তন্মধ্যে পাঁচ লাখ মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে, বিশ্ব জাতীয় প্রেক্ষাপটে বিদ্যালয়ের সেশন জটের চেয়ে এর বেশি ক্ষতিকর দিক রয়েছে। মামলার জট নিরসনের জন্য পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো মেডিয়েশন (মধ্যস্থতা) করে Alternative Dispute Resolution (ADR)-এর মাধ্যমে মামলা জট কমিয়ে এনেছে। বাংলা-ভারত উপমহাদেশে পঞ্চায়াত প্রথার মাধ্যমে উভয়পক্ষের বিরোধ সম্মানজনকভাবে নিষ্পত্তি করার রীতি প্রচলিত আছে।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংগঠিত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ‘মহাজন’ নামক সম্মানজনক একটি গোষ্ঠী গড়ে উঠেছিল। মামলার জট নিরসনের জন্য বিচার বিভাগের দায় দায়িত্বের চেয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা এর জন্য বেশি দায়ী। কারণ প্রতিপক্ষকে দমানোর জন্য ক্ষমতাসীনরা হালে আইন আদালতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। বিনা ভোটে জাতীয় নির্বাচনে জয় লাভ করার জন্য রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যেও ক্ষমতাসীনরা মিথ্যা মামলা সৃজন করে বাংলাদেশে ‘গায়েবি’ মোকদ্দমা সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। নিম্ন আদালত অনেক সময় রাজনৈতিক মোটিভেশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কারণে প্রতিকারের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত বিচারপ্রার্থীরা উচ্চ আদালতে ভিড় করছে বিধায় মামলার জট তীব্রতর হচ্ছে। ফলে দেশবাসী ADR পদ্ধতিতে বিচার মীমাংসার বেশি পক্ষপাতী, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোতে এ পদ্ধতি Restrotative Justice নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত। প্রচারিত রয়েছে যে, এ পদ্ধতিতে তারা ৮০ শতাংশ মোকদ্দমার বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে।
গোটা বিশ্বে বিরোধ নিষ্পত্তির আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি হলো, বিচারব্যবস্থা। সাক্ষ্যপ্রমাণ ও আইন প্রয়োগের মাধ্যমে আদালত বিরোধের নিষ্পত্তি করে থাকে। কিন্তু অনেক মামলার ভারে আমাদের আদালতগুলো এখন কঠিন অবস্থার মুখোমুখি। এ ছাড়াও আইনি জটিলতা ও নানা রকম পারিপার্শ্বিক কারণে বিচারাধীন মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে আদালতকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে মামলা নিষ্পত্তিতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে দীর্ঘসূত্রতা।
এ কারণে আদালতের পাশাপাশি বিকল্প পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তির বিষয়টি বিশ্বব্যাপী দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। Alternate Dispute Resolution (ADR) শান্তিপূর্ণ উপায়ে আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তি করার পদ্ধতি। এডিআর সাধারণত দেওয়ানি মোকদ্দমায় প্রয়োগ করা হলেও বর্তমানে ছোটখাটো ফৌজদারি মামলায়ও আদালতের বাইরে এর প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে। মোকদ্দমা দায়ের থেকে শুরু করে ডিক্রি জারি পর্যন্ত বিপুল সময় ব্যয় করতে হয় মামলায় জড়িত পক্ষগুলোকে। এ ছাড়া মামলা চালাতে গিয়ে মোকদ্দমার পক্ষদেরকে আইন, আদালত ও আইনজীবীর পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। এমনকি কখনো কখনো দেখা যায়, মোকদ্দমার পেছনে যে খরচ হয়, তা মোকদ্দমার বিষয়বস্তু বা সম্পত্তির মূল্যমানকে ছাড়িয়ে যায়। ইউরোপ, আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশ বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতির সফল প্রয়োগ করে মামলার ভার হতে তাদের আদালত ব্যবস্থাকে রক্ষা করেছে।
ADR ব্যবস্থার অল্প খরচে একদম কম সময়ের মধ্যে বিরোধীয় পক্ষের পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে সহজেই বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব। এ ব্যবস্থায় বিরোধ নিষ্পত্তি করতে আনুষ্ঠানিকতা কিংবা পদ্ধতিগত কোনো জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় না। পক্ষগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই একটি সমাধান বের হয়ে আসে। এর ফলে কেউ-ই মামলায় হারে না। দু’পক্ষই বিজয়ী হয়। বিচারপ্রার্থীরা খোলামন নিয়ে মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে কথা বলে সহজেই সমাধান বের করে নেয়।
এ ব্যবস্থার আরেকটি সুবিধা হলো মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ায় পক্ষগণ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে বলে গৃহীত সিদ্ধান্তটি তারা নিজেদের বলে মনে করে। ফলে গৃহীত সিদ্ধান্তটি সব পক্ষের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পায়। এর মাধ্যমে বিরোধের কার্যকর অথচ শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি হয়।
ADR ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো শান্তিপূর্ণ উপায়ে ও দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি করা। সাধারণত বিচার প্রক্রিয়ার প্রায় প্রতিটি স্তর আইনের ছকে বাঁধা। ফলে প্রচলিত পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তি করতে অনেক দেরি হয়ে যায়। এর ফলে মামলা জড়িতদের ওপর এক দিকে যেমন মানসিক চাপ বাড়ছে, অন্য দিকে দীর্ঘ দিন ধরে মামলা চালাতে গিয়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ ছাড়াও দুর্নীতির অভিযোগও শোনা যায়, বিশেষ করে নিম্ন আদালত সমুহে; অথচ বিচারিক পদ্ধতিতে না গিয়ে আলাপ-আলোচনা বা সমঝোতার মাধ্যমে বিরোধটি নিষ্পত্তি করা গেলে অতিরিক্ত অর্থ বা সময় ব্যয় ছাড়াই মানুষ সম্ভাব্য প্রতিকার পেতে পারে। এ কারণেই বিকল্প পন্থায় বিরোধ নিষ্পত্তি বা অউজ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। আইনগত কিছু উদ্দেশ্য পূরণ ছাড়াও অউজ ব্যবস্থা অর্থনৈতিক ও সামাজিক উদ্দেশ্য পূরণে বিরাট অবদান রাখছে। ADR ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষের পারস্পরিক বন্ধনও সুদৃঢ় হয়।
ADR ব্যবস্থা যে উদ্দেশ্য পূরণ করে:- (১) জয়সূচক ফলাফল (Win-Win outcome), (২) ব্যয় কমানো অথবা কোনো ব্যয় ছাড়াই মামলা শেষ (Minimise cost or no cost at all), (৩) সময় বাঁচায় (Less time consuming), (৪) সামাজিক বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করে (Creates social binding), (৫) যুদ্ধ যুদ্ধভাব থাকে না (Absence of confrontational attitude), (৬) সামাজিক রীতি-নীতি বজায় থাকে (Maintain social norms)। (সূত্র : ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ প্রদত্ত তথ্য)।
মেডিয়েশনের বাংলা শব্দার্থ হলো মধ্যস্থতা বা সালিসি। যিনি মধ্যস্থতা বা সালিসি করেন তিনি ইংরেজি ভাষায় মেডিয়েটর যার বাংলা শব্দার্থ হলো মধ্যস্থতাকারী। নিরপেক্ষ ও স্বতন্ত্র তৃতীয় পক্ষ একজন ব্যক্তির মাধ্যমে বাদি-বিবাদি উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায়। এ পদ্ধতিতে উভয়পক্ষ সরাসরি মুখোমুখি হয়ে নিজেদের দাবি উপস্থাপন করত সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে মেডিয়েটর কোনো পক্ষ অবলম্বন করতে পারবে না এবং সমাধানের ফলাফলের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত বা কৌশল অবলম্বনপূর্বক কোনো পরামর্শ কোনো পক্ষের উপরে চাপিয়ে দিতে পারবে না।
আদালতের বিচারব্যবস্থা সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত; কিন্তু মেডিয়েশন হতে হবে ব্যক্তিগত ও গোপনীয়। মেডিয়েশন সফল না হলে, ওই বৈঠক চলাকালে উভয়পক্ষের মধ্যে কথোপকথন প্রকাশ করা হবে নৈতিকতা বিরোধী ও অগ্রহণযোগ্য এবং মেডিয়েটর কোন আদালতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো ধরনের সাক্ষ্য প্রদান করলে তা ন্যায়ত ও আইনত গ্রহণযোগ্য হবে না।
প্রবাদ রয়েছে যে, আইনের প্রয়োগ যেখানে বেশি সেখানে বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা নগণ্য (The More law, the less Justice)। এটা সবাই স্বীকার করেন যে, আইনই ন্যায় বিচার পাওয়ার একমাত্র চাবিকাঠি নয়। যেখানে আইন ন্যায় বিচার করতে ব্যর্থ সেখানে ইকুইটি (Equity) শূন্যস্থান পূরণ করে।
মেডিয়েশন পদ্ধতিতে কে হবে মেডিয়েটর বা তার যোগ্যতাই কী হবে এমর্মে কোনো বাঁধা ধরা নিয়ম পদ্ধতি নেই, তবে তাকে হতে হবে সততার ঊর্ধ্বস্থানে অবস্থিত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন একজন ব্যক্তি, ব্যবহার ও আচরণে থাকতে হবে নিরপেক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত (রায়) (Judgment) প্রদানের পূর্ব চিন্তা মুক্ত একজন ব্যক্তি। বিরোধ নিষ্পত্তিতে মেডিয়েটর তার প্রজ্ঞা ও সিনসিয়ারিটির মাধ্যমে উভয়পক্ষের মধ্যে একজন ‘শান্তির দূত’ হিসাবে কাজ করবে এবং মেডিয়েটর হওয়ার জন্য এটাই হবে তার প্রথম যোগ্যতা।
বাংলাদেশে মেডিয়েশনের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করার কার্যক্রম দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থায় শুরু হলেও ফৌজদারি বিচারে এর ব্যাপকতা লাভ করে নাই, কারণ এর পেছনে আইনগত জটিলতা রয়েছে।
দেওয়ানি কার্যবিধির ১৯০৮ এর ৮৯ (ক) ধারা সন্নিবেশিত করে ১-১০ সেকশন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে আউট-অব-কোর্ট দেওয়ানি আইনে মেডিয়েশনে বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ দেয়া হয়েছে। অথচ ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এ ৩৪৫ ধারায় আপসযোগ্য মামলার তালিকা নির্ধারিত থাকায় ফৌজদারি আদালত সর্বক্ষেত্রে আউট-অব-কোর্ট বিরোধ নিষ্পত্তি করার অনুমতি দিতে পারে না। তবে কোনো কোনো ফৌজদারি ক্ষেত্রে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যস্থতায় আপসযোগ্য বিচারাধীন মামলায় বিরোধ এখনো নিষ্পত্তি হচ্ছে, এ জন্য আইন মেনে কিছু কিছু টেকনিক্যাল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়।
রাষ্ট্রে প্রচলিত বিচারব্যবস্থার পদ্ধতি মূলত তিনটি-
যথা : (১) আইন প্রয়োগ, (২) বিচার করে সাজা বা খালাস প্রদান, (৩) সাজা হলে কারাবন্দী করা। কিন্তু ভিকটিম বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করার বিধান প্রচলিত আইনে নেই। বহুপূর্বে বিচার ব্যবস্থায় নাকের পরিবর্তে নাক, কানের পরিবর্তে কান কেটে ফেলার বিধান ছিল; কিন্তু বর্তমানে সে বিধান না থাকলেও ভিকটিমের মানসিক, আর্থিক, শারীরিক, পারিবারিক, সুনাম বা আবেগ প্রবণতার ক্ষেত্রে যে ক্ষতি হয় তা পূরণের আইনগত কোনো বিধান নাই। তবে সম্প্রতি Instrument Act’1881 আইনে ১৩৮ (ক) ধারা সংযুক্ত করে মামলার বাদীকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রভিশন চালু করা হয়েছে।
দেওয়ানি মামলায় মেডিয়েশন পদ্ধতি আরো সহজ করার জন্য ২০০৬ইং সালে আপিল চলা অবস্থায় আপস নিষ্পত্তি করার জন্য দেওয়ানি কার্যবিধি ২০০৮ সংশোধন করা হয়। অতঃপর ২০১২ এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে ওই আইন সংশোধন করে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য লিগ্যাল এইড অফিসারের কাছে প্রেরণ করার জন্য আদালতকে ক্ষমতা প্রদান করা হয়। লিগ্যাল এইড অ্যাক্ট’ ২০০০ আইন বলে লিগ্যাল এইড অফিসার নিয়োগ ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত। মেডিয়েশনে উভয়পক্ষের সম্মতিতে চূড়ান্ত চুক্তি (Agreement) স্বাক্ষরিত হওয়ার পর বিদ্যমান কোনো পক্ষই নতুন করে একই বিষয়ে কোনো মামলা, আপিল বা রিভিশন আদালতে দায়ের করতে পারবে না। অর্থঋণ আদালত আইন’ ২০০৩ এর ২২ ধারা ২০২১ ইং সালে সংশোধন করে মেডিয়েশনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে। ওই আইনের ৪৪ক এবং ৩৮ ধারা মোতাবেক আপিল, রিভিশন, এমনকি রায় Execution এর সময়ে মেডিয়েশন পদ্ধতি প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
গ্রাম আদালত, ২০০৬, আরবিট্রেশন অ্যাক্ট’ ২০০১, মুসলিম ফ্যামিলি ল অর্ডিন্যান্স’ ১৯৬১, ফ্যামিলি কোর্ট অর্ডিন্যান্স’ ১৯৮৫, ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স’ ১৯৮৪, ভ্যাট অ্যাক্ট’ ১৯৯১, কাস্টম অ্যাক্ট’ ১৯৬৯, The Conciliation of Disputes (Municipul Areas) Board Act’ 2004, Real Estate Development and Management Act’ 2010 প্রভৃতি আইনে মেডিয়েশন পদ্ধতিতে বিচার নিষ্পত্তি করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
আইনে অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মেডিয়েশন পদ্ধতি বাংলাদেশে এখনো জনপ্রিয়তা লাভ করে নাই, যার কারণগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো :-
(১) আইজীবীদের অসহযোগিতা :
(ক) গত ২০০ বছরের আইন পেশার ধারাবাহিকতায় মেডিয়েশন পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিজ্ঞ আইনজীবীরা উৎসাহ বোধ করেন না। এতে অর্থনৈতিক বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে স্কুলে মেডিয়েশন প্র্যাকটিস করানো হয়। বাংলাদেশে ন্যূনতমভাবে কলেজ ও এলএলবি কোর্সে মেডিয়েশন পদ্ধতি প্র্যাকটিস করা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক।
(খ) মেডিয়েশন করায় উপযুক্ত স্থানের প্রয়োজন। পাশের রাষ্ট্র ভারতে ৪০ হাজার মেডিয়েশন সেন্টার রয়েছে; বাংলাদেশে নির্ধারিত এ ধরনের স্থান বা অবকাঠামো নেই। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি আদালত প্রাঙ্গণে মেডিয়েশন সেন্টার স্থাপন করা আবশ্যক।
(গ) মেডিয়েশন পদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞতা। এ পদ্ধতি জনগণের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে নাই। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় জনগণের প্রতি সচেতনামূলক প্রচার ব্যাপকভাবে করা দরকার।
(ঘ) মেডিয়েটরের অভাব : মেডিয়েশন করার জন্য নিরপেক্ষ, সৎ, প্রজ্ঞাপূর্ণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ব্যক্তির অভাব থাকার কারণে এ পদ্ধতি প্রসার লাভ করতে পারে নাই। বিভিন্ন এলাকায় মেডিয়েটর প্রশিক্ষণ দেয়া আবশ্যক। প্রশিক্ষিত মেডিয়েটরদের জন্য সরকারি কোষাগার থেকে একটি সম্মানী নির্ধারিত হওয়া আবশ্যক।
মন মানসিকতার পরিবর্তন : সর্বক্ষেত্রেই প্রতিশোধমূলক না হয়ে উপর্যুক্ত ক্ষতিপূরণপ্রাপ্তির মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিরোধে জর্জরিত জনগণের মনমানসিকতার মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে।
আইনের প্রতিবন্ধকতা : আরবিট্রেশন অ্যাক্ট’ ২০০১-এর মতো বাংলাদেশে এখনো মেডিয়েশন অ্যাক্ট প্রণয়ন ও পাস করা হয় নাই, যা কার্যকর করা অত্যন্ত জরুরি।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া মেডিয়েশন পদ্ধতি চালু ও কার্যকর করা সম্ভব নয়। এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে, কারণ বিশ্ব সভ্যতার সাথে সমতলে চলার জন্য বাংলাদেশকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিচার প্রার্থনা করে প্রার্থী যে হয়রানি হয় তাতে বিচার পাওয়ার তৃষ্ণা এমনিতেই মিটে যায়। এ মর্মে আরো গবেষণা ও কার্যকর পদক্ষেপ রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে এখনই শুরু করা দরকার। মানুষ শুধু যান্ত্রিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার চায় না, মনস্তাত্বিক শান্তি লাভের বিজ্ঞান সম্মত উপায় খোঁজ করার চেষ্টা করে। বিজ্ঞানময় কুরআন মজিদে মেডিয়েশন পদ্ধতির উল্লেখ রয়েছে।
লেখক : রাজনীতিক, কলামিস্ট ও আইনজীবী (অ্যাপিলেট ডিভিশন)
E-mail: [email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা