২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

করোনা-উত্তর বেঁচে থাকার পরিকল্পনা : নগদ তহবিল ধরে রাখার সময়

করোনা-উত্তর বেঁচে থাকার পরিকল্পনা : নগদ তহবিল ধরে রাখার সময় - প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাস ব্যাপক বিস্তারের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এখন বড় ধরনের বিপর্যয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে বলে বিভিন্ন সংস্থা সতর্ক করে দিচ্ছে। দুই বিশ্বযুদ্ধ দুনিয়ার অর্থনীতিকে যে সঙ্কটে ফেলেছিল, এবার এক করোনাভাইরাসেই সেই সঙ্কটের দিকে নিয়ে গেছে বিশ্বকে। লকডাউন থাকায় এখনো স্থবির বহু দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের শেয়ার ও তেলের বাজারে ধস নেমেছে। বছর শেষে প্রবৃদ্ধির হার কত কমবে, তাই নিয়ে এখনই শুরু হয়ে গেছে হিসাব-নিকাশ। সব মিলিয়ে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে বিশ্ব যদিও কিছু দেশ লকডাউন শিথিল করে অর্থনীতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।

করোনা থেকে বাঁচতে বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠন করছে বিশ্বের বহু দেশ। নতুন মুদ্রা ছাপিয়ে সরকারকে অর্থ জোগান দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলো। করোনার এমন সব প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। জীবিকা সচল রাখতে শিথিল করা হয়েছে লকডাউন। অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে সরকার।

দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে সরকার। এপ্রিল মাসে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ সরকার ঘোষণা করে। এর মধ্যে শিল্পঋণ খাতে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ), কৃষি খাত, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রেফারেন্স স্কিম, রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নগদ সহায়তা ৭৬১ কোটি টাকাসহ ২১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত গঠন করা হয়েছে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল। এ ছাড়া করোনার মধ্যে বাজার থেকে পুরোনো নোট তুলে নিয়ে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাপিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মূলত দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সচল রাখার জন্য বিভিন্ন সেক্টরে তহবিল সরবরাহ করার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। তবে সরকারি এই প্রচেষ্টা থেকে প্রকৃত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হাতে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে। আমার এই লেখাতে মূলত এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং ব্যক্তি পর্যায়ে স্বাভাবিক ব্যবসায় এবং কার্যক্রম ধরে রাখার জন্য নগদ সরবরাহ ধরে রাখার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

বেশির ভাগ ছোট ব্যবসায়, যেগুলো কোভিড-১৯ মহামারীজনিত সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ার কারণে, বহুলাংশে অপারেশন কমে গেছে অথবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে, সেই সব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। এই সব প্রতিষ্ঠানে প্রচুর অর্থ আসছে না, এমনকি মোটেও আসছে না হয়তো।

অথচ ব্যয়গুলো এমনভাবে হচ্ছে যেন কিছুই ঘটেনি। ভাড়া, ঋণ পরিশোধ, ইউটিলিটিজ, বীমা এবং অন্যান্য বাধ্যবাধকতা এখনো প্রতি মাসে আসে। বেশির ভাগ ছোট ব্যবসায়ের কয়েক মাস ধরে চলতে পারে এমন শাটডাউন মোকাবেলা করার মতো আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যও নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, বড় বড় মেট্রো অঞ্চলে ক্ষুদ্র-ব্যবসায়ীদের অর্ধেকেরই এক মাসের বিল পরিশোধের মতো পর্যাপ্ত অর্থ ব্যাংকে থাকে না। মাত্র এক-চতুর্থাংশ ব্যবসায়ী দুই মাসের ব্যয় নির্বাহের মতো নগদ জমা ধরে রাখতে পারেন।

সুতরাং, কোভিড-১৯ মহামারীজনিত সঙ্কট মোকাবেলায় এখনকার ‘খেলা’ নগদ অর্থ সংরক্ষণ করা; অর্থাৎ আপনার যা কিছু আছে তা ধরে রাখার প্রচেষ্টা। উৎপাদনের বেশির ভাগ ব্যয় পরিবর্তনশীল। আপনি চাইলেই পরিবর্তনশীল খরচগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন বহুলাংশে। তবে, কিছু স্থির খরচ চাইলেও নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, যেমন ভাড়া। সুতরাং এখন ওই সত্যিই নিয়ন্ত্রণহীন ব্যয়গুলোর দিকে মনোনিবেশ করা দরকার। এর জন্য সাধারণ ভোক্তা এবং ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য একটি অর্থনৈতিক সুরক্ষার জাল তৈরি করা এখন সরকারের দায়িত্ব। অন্তত স্বল্পমেয়াদে সরকারকে মূল ভ‚মিকা পালন করতে হবে এবং ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ অন্যরা অনুসরণ করবে।

এক্ষেত্রে করণীয় হলো :
১. আপনার যদি ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য গ্যারান্টিযুক্ত মেয়াদি ঋণ থেকে থাকে, তবে সরকার প্রণোদনার মাধ্যমে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য আপনার অর্থ প্রদানের মূল এবং সুদ উভয়ই গ্রহণ করবে। সরকার প্রতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে আলাদা আলাদা বিবেচনা না করে সবার জন্য এপ্রিল থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমস্ত অর্থ প্রদানের জন্য এটি করতে পারে।

২. আপনার যদি প্রচলিত ব্যবসায়িক ঋণ থেকে থাকে তবে আপনার ব্যাংকে যোগাযোগ করুন এবং আপনার নিয়মিত প্রদেয় কিস্তিগুলো হ্রাস বা স্থগিত করতে অনুরোধ করুন। আপনি পরে এককালীন পরিশোধ করবেন এই শর্তে তিন-ছয় মাসের ডেফারড পেমেন্টের অনুরোধ করতে পারেন অথবা মাসিক পেমেন্ট কমিয়ে দিয়ে ঋণ প্রদানের মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন।

৩. আপনার বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলুন। সরকার ইতোমধ্যে বাড়িওয়ালাদের অন্তত এপ্রিল এবং মে মাসের ভাড়া মওকুফের কথা বিবেচনার অনুরোধ করেছেন। কমপক্ষে কিছু ভাড়াটের সাথে ভাড়া হ্রাস বা স্থগিতের বিষয়ে আলোচনা করার অনুরোধ করেছেন। অনেকেই ইতোমধ্যে ভাড়া কিছুটা কম নিয়েছেন। একইভাবে কিস্তিতে যারা অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন তাদেরও কিস্তি কয়েক মাস বিলম্ব করার অনুরোধ করা যেতে পারে। অথবা কিস্তির আকার ছোট করে মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়া যেতে পারে।

ক্ষুদ্র লিজের বাকি অংশের শেষে বা শেষাবধি এক সাথে বেশি অঙ্কের টাকা পরিশোধের বিনিময়ে ইজারা বাড়াতে বা ঋণ পরিশোধের বিনিময়ে কমপক্ষে তিন-ছয় মাসের জন্য ভাড়া পরিশোধ পিছিয়ে নিতে বলতে পারেন। এই বিষয়টি বাড়িওয়ালাদের খুব খারাপ লাগা ঠিক হবে না আশা করি।

৪. আপনার বীমা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করুন। বীমা প্রদানকারী ব্যক্তির মহামারী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ের জন্য প্রিমিয়াম হ্রাস করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, দায়বদ্ধতার বীমা প্রিমিয়ামগুলো ব্যবসায়িক আয়ের ভিত্তিতে গণনা করা হয় এবং যদি পলিসির মেয়াদে আয় রাজস্ব কমে যায়, প্রিমিয়ামগুলো আনুপাতিকভাবে পরের দিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা যায়।

৫. ব্যবসায়ীরা প্রায়ই পরিবর্তনশীল ব্যয়ের মধ্যে ইনভেন্টরি ব্যবস্থাপনা করাকেই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন। এর অন্যতম একটি কারণ হলো ব্যবসায়ীরা প্রায়ই মুনাফায় পণ্য বিক্রি করে তবে তার বেশির ভাগ বকেয়া রাখেন সামান্যই নগদ হাতে পায়। এখন পণ্য তালিকা হাতে নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখে নিন, আপনি যা পারেন তা আদায় করুন এবং ভবিষ্যতের আদেশগুলো আপাতত বাতিল করুন। আপনি আরো দেখুন, বিক্রেতাদের পাওনা প্রদান আপাতত বন্ধ করতে পারেন কি না। একই সময়ে, আপনার যদি পাওনা থাকে তবে সম্ভাব্য কিছুটা কমিশন দিয়ে হলেও এগুলোকে দ্রুত আদায় করার চেষ্টা করুন।

তবে প্রতিটি পরিস্থিতিই একটি অন্যটি থেকে আলাদা। একটি দুর্বল সংস্থা অবশ্যই এই বিপর্যয়ের মধ্যে পতিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের পক্ষে এই ধরনের প্রচেষ্টা করে টিকে থাকা সম্ভব হবে না। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানের যদি একটি মাঝারি ধরনের শক্তিশালী ব্যালান্সশিট থেকে থাকে তবে দায়বদ্ধতার চেয়ে তার আরো বেশি সম্পদ রয়েছে, সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি এই পরামর্শ কাজে আসবে এবং তারা সত্যিই এমনটি করতে পারেন।

আপনি যদি ব্যবসায়ী না হয়ে ব্যক্তি হন তবে করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাবের সময় আপনার বিনিয়োগগুলো যথাসম্ভব ক্যাশ রাখুন এবং স্বল্পমেয়াদি কার্যক্রমগুলোতে ফোকাস করুন। এখন নতুন ব্যবসায় শুরুর সময় নয় বরং পুরোনো ব্যবসাকে চালিয়ে নিন। বাহুল্য ব্যয় নিয়ন্ত্রণের এখন সময়। অভূতপূর্ব কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে পুরো বিশ্ব অনিশ্চয়তা ও কষ্টের মুখোমুখি হচ্ছে। এই মহামারীটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন বিশ্ব অর্থনীতি ইতোমধ্যে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। সুতরাং, এই পরিস্থিতিতে, ব্যক্তি অথবা পরিবারের সামগ্রিক আর্থিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিরক্ষামূলক এবং সংশোধনমূলক উভয় ধরনের বিচক্ষণ আর্থিক ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা জরুরি।

পরিবর্তিত বাস্তবতা মোকাবেলার জন্য আপনার বিনিয়োগের সিদ্ধান্তগুলোকে একসাথে বিবেচনায় আনুন। বৈশ্বিক অর্থনীতি মন্দার দিকে এগিয়ে যাওয়ার ভয় বাড়ার সাথে সাথে সম্ভবত উচ্চ মুদ্রাস্ফীতিজনিত চাপের সাথে লিকুইড অর্থের সমন্বয় করার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে স্বল্পমেয়াদে কিভাবে আর্থিক কার্যক্রমগুলো সমন্বয় করা যায় সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠে। এই সময়ে বিনিয়োগের যেকোনো সিদ্ধান্তই একজন ব্যক্তির স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যগুলোতে ফ্যাক্টরিং করা উচিত। জরুরি অবস্থা এবং স্বল্পমেয়াদি প্রয়োজনগুলোর জন্য বিনিয়োগগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে লিকুইড রাখা দরকার।

আপনি আপনার আর্থিক রেকর্ড ঘনিষ্ঠভাবে দেখুন। তহবিলের প্রয়োজন দেখা দিলে আপনার আর্থিক সম্পদগুলো তাৎক্ষণিক ব্যবহারের উপযোগী করতে পারার কথা ভাবতে হবে। আপনার যদি একটি ব্যালান্সশিট থেকে থাকে, আপনার আর্থিক রেকর্ডগুলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করার সময় এসেছে। যেমন আপনার সম্পদের কোনো নমিনি আছে কিনা, পরিবারের কোনো বিশ্বস্ত সদস্য আপনার অর্থ, বীমা এবং তার নীতিমালা ইত্যাদি সম্পর্কে জানেন কি না, ইত্যাদি। যদি না জানেন তবে এই বিষয়টি বিবেচনার এখন সময়।

আপনার সম্পত্তির যথাযথ মালিকদের শনাক্ত করার জন্য একটি উইলের কথা বিবেচনা করতে পারেন। ব্যালান্সশিট আকারে আপনার সম্পদ ও দায়বদ্ধতার একটি তালিকা প্রস্তুত করুন এবং আপনার বিশ্বাসী কারো সাথে শেয়ার করুন। আপনার সমস্ত বিনিয়োগ এবং ব্যাংক আমানতের জন্য নমিনি ঠিক করুন। আপনার জীবন এবং চিকিৎসাবীমা নীতিগুলো সহজ এবং সহজেই অ্যাক্সেসযোগ্য রাখুন। এ ছাড়াও, পরিবারের নিকটস্থ সদস্যদের সাথে বিশদ শেয়ার করুন। আপনার সমস্ত ঋণের তালিকা তৈরি করুন এবং পরিশোধের সম্ভাব্য উপায়ের একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন।

করোনাভাইরাস সঙ্কটের সময়ে কিভাবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করতে হবে এবং স্মার্ট অর্থোপার্জন করা যায় সেটা অনুভব করার এখনই উপযুক্ত সময়। যদি আমাদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখাই একমাত্র উদ্বেগ হতো তবে সেটা এতো কঠিন হতো না। কিন্তু চাকরি হারানো, আপৎকালীন সময় কাজ না থাকা এবং অবসর গ্রহণের পোর্টফোলিওগুলো হ্রাস পাওয়ায় অনেকেই আরো বেশি চাপের মুখে পড়েছেন।

আশাকরি, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো উপায় আপনি খুঁজে পাবেন সুতরাং ভয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়বেন না। ভয়কে জয় করার একমাত্র উপায় হলো, কর্মের মাধ্যমে। এই পরিস্থিতি আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, আপনার সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো এসেছে, বা আসতে পারে সেগুলো নেভিগেট করার ক্ষমতা এবং দৃঢ়তা আপনার রয়েছে। আমরা সারা জীবন প্রতিক‚লতার মুখোমুখি হয়ে সারা জীবন যা করেছি তাই এখন করতে হবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একটি কথা বলি- ‘আমি একজন যোদ্ধা এবং আমি যুদ্ধের ময়দানে ফিরে যেতে চাই না’। কখনো কখনো আমার বারবার এটি স্মরণ করা প্রয়োজন, যতক্ষণ না আমি দৃঢ়ভাবে বুঝি এবং মনে করি যে, আমি কিভাবে ভাবছি এবং অনুভব করছি তা আমার ভবিষ্যতের প্রতিটি মুহূর্তের ওপর প্রভাব ফেলবে।

বিনিয়োগের আরো কিছু বিষয়ে আমাদের এখনই ভাবতে হবে। আমাদের যদি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ থেকে থাকে তবে শেয়ার মূল্যের দ্রুত এবং গভীর পতনের বিষয়টি ভীতিকর বলে মনে হবে। এখনই বিনিয়োগ বন্ধ করার সময় নয়। দীর্ঘমেয়াদে ফোকাস করা প্রয়োজন। বাংলদেশের শেয়ারমার্কেট অনেক দিন থেকেই অস্থির। তবে, এই অবস্থায় বাজার চালু হওয়ার সাথে সাথে শেয়ার বিক্রি করে না দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে মনোনিবেশ করা এবং আঁকড়ে থাকায় কাজ হবে হয়তো। মজুদ কখন পুনরুদ্ধার হবে তা বলতে পারি না, তবে যদি সময় থাকে তবে আশা করা যায় যে ওগুলো শেষ পর্যন্ত পুনরুদ্ধার হবে।

অবসরপ্রাপ্তদের জন্য, আপনার বন্ডে বিনিয়োগের পোর্টফোলিওর বড়জোর অর্ধেক সম্ভবত রয়েছে এবং সম্ভবত আরো কিছু নগদ অর্থ আছে। আজকের বাজার দামের ভিত্তিতে আপনার এই সময়ের বন্ডের নগদ মূল্য কত? এই হিসাবগুলো এরকম স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে হয়তো আরো অনেক দিন। স্বাভাবিকভাবে হিসাবগুলো নিরাপদ করার জন্য এবং আয় তুলে আনার জন্য আরো কিছু করুন।
আশাকরি, আপনি এখনই স্টক বিক্রয় করার প্রয়োজন বোধ করবেন না। আপনার স্টকগুলো পুনরুদ্ধার করার জন্য সময় দিন। শেয়ার কি নিচে যেতে পারে? অবশ্যই, তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১২টি ভালো শেয়ারবাজারের গড় ক্ষতি হয়েছিল প্রায় শতকরা ৩৫ ভাগ। শেয়ারগুলো গড়ে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পড়েছিল, তারা সাধারণত আরও দুই বছরে তাদের লোকসান কাটিয়ে উঠেছিল এবং পরে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছিল। ধৈর্য প্রতিদান দিবেই।

লেখক : অর্থনীতিবিদ এবং গবেষক
ইমেইল : [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement