থিওরি কী? এবং প্রাক্টিস কোথায়?
- সালাহউদ্দিন বাবর
- ১৮ জুন ২০২২, ২০:৫৫
পৃথিবী কখনো থেমে থাকে না, প্রতি মুহূর্তে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটছে, আজ যা বর্তমান কাল সেটা অতীত। এর সাথে তাল মিলিয়ে প্রয়োজন পূরণের জন্য সব কিছুর ‘রিকাস্ট’ বা পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। আজ যা প্রয়োজনের সাথে সহ-অবস্থানের উপযোগী বা অপারেটিভ, ক্রিয়াশীল সেটা পরের দিন অবসোলেট, তথা চলনসই আর নয়। এটাই এ চরাচরের নিয়ম। সময়ের সাথে যারা তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম, তারাই যোগ্য, টিকে থাকার উপযোগী। যারা বিশ্বে এগিয়ে রয়েছে, তারা নতুনের সন্ধানে প্রতিনিয়ত গবেষণা, অসুন্ধান জারি রেখে চলছে। এ চলার পথে পা পিছলে পড়লে উপায় নেই, ছিটকে পড়লে ভেসে যাওয়া লাগবে। ততক্ষণে অনেক অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এগিয়ে যাবে সবাই। আমরা এখনো এই রেসে নেই, যোজন যোজন দূর পিছনে পড়ে আছি। অথচ এ জন্য কোনো অনুশোচনা, অনুতাপ, উদ্যোগ নেই।
এত কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমাদের প্রয়োজনীয় সব কিছুর এখন পুনর্মূল্যায়নের সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। প্রতি মিনিটে শিশু জন্ম নিচ্ছে। এই পরিসংখ্যান মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে। তাই সব কিছুর পুনর্মূল্যায়ন অপরিহার্য। রাষ্ট্রযন্ত্রের চলার গতি অনেক দ্রুততর করতে হবে। আমরা সব অন্তর্বর্তীকালীন পরিকল্পনা নিয়েই আছি ও মাঝে মধ্যে সে পরিকল্পনা নিয়ে মূল্যায়ন, পুনর্মূল্যায়ন করে সব কিছুকে হালনাগাদ করা হচ্ছে। তবে এমন তথ্য আমরা শুনি না। তবে হ্যাঁ, এমন নেতিবাচক খবর প্রায় প্রতিনিয়ত শুনি কোনো প্রকল্প তার বেঁধে দেয়া সময়ে শেষ করা যায়নি, তাকে ‘রিকাস্ট’ করতে হবে এবং প্রকল্প শেষ করার মেয়াদ পুনঃনির্ধারণ করতে হবে, সেই সাথে তার ব্যয় বরাদ্দ কয়েক গুণ বাড়াতে হবে। কিন্তু এ প্রশ্নের তো কোনো উত্তর নেই, কেন এবং কী কারণে প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ করা যায়নি, কেন পিছিয়ে পড়তে হলো? যেসব কর্মকর্তা এসব তদারকির দায়িত্বে ছিলেন তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অবহেলা কতটুকু, তারা সময়ে সময়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এসব তথ্য সরবরাহ করেছেন কি না। যদি করা হয়ে থাকে তাহলে কী পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। এসব তথ্য তো সবার জানার অধিকার আছে। কেননা, সাধারণের ট্যাক্সের পয়সায় এসব প্রকল্পে খরচ হয়। করের টাকা তো আর গৌরী সেনের কোষাগার থেকে আসে না। জনগণ এখন সবার কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে।
করের কথা যখন এলো, সেই মুহূর্তে একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদের একটি নিবন্ধ খবরের কাগজে পড়লাম। তার অভিমত হচ্ছে, দিনকে দিন বাজেটে রাজস্ব আদায়ের অঙ্ক স্ফীত হচ্ছে। তার অবজারভেশন, আগে উন্নয়ন বাজেটের পরিধি রাজস্ব বাজেটের চেয়ে বেশি থাকত। এখন তা লক্ষ করা যায় না; বরং রাজস্ব বাজেট বড় হচ্ছে। এ প্রশ্ন এখন নাই বা তুললাম উন্নয়নের বাজেটে অর্থ কতটা কাজে ব্যয় হচ্ছে কতটা অকাজে ব্যয় হচ্ছে তথা অপচয় হচ্ছে। এখন রাজস্ব বাজেট বপু যত স্ফীত হবে, তার সরল অর্থ এই রাজস্ব আয়ের বড় অংশই সাধারণ জনগণের দেয়া পরোক্ষ কর থেকে আসবে। একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে কিন্তু রেকর্ড পরিমাণের অর্থ ঘাটতি দেখানো হয়েছে। এ টাকা কোথা থেকে আসবে সেটা স্পষ্ট করা হয়নি। দুর্মুখরা এটাই বলে, এই অর্থ ‘হিডেন ট্যাক্স’ আরোপ করে তোলা। সময় সুযোগ মতো নীরবে ফরমান জারি করে নতুন কর বসানো হবে। আমরা সাধারণরা প্রতিবারই বছর শেষে বিগত বছরের ‘সম্পূরক’ বাজেটের একটা কথা শুনি। সেটা সংসদে পেশ করে, পাস করিয়ে নেয়া হয়। বিগত বছরের বিভিন্ন ‘শর্ট ফল’গুলো সেখানে থাকে। এর অধিকাংশ উন্নয়নের বাজেটের ‘শর্ট ফল’টাই বেশি দেখা যায় অর্থাৎ উন্নয়ন বাজেট কাটছাঁট করা হয়। যাক, আমরা অর্থনীতিবিদ নই যে, বাজেট নিয়ে পাণ্ডিত্য করব আর বক্ষ্যমাণ নিবন্ধের প্রতিপাদ্য বিষয়ও সেটা নয়।
আমাদের বক্তব্যের বহুলাংশই দেশের কিছু বিষয়ের মূল্যায়ন পুনঃমূল্যায়ন নিয়ে। পত্রিকায় দেখলাম, বেসরকারি সংস্থা সংগঠনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসর নেয়ায় তার পেনশন বা অবসর ভাতা দেয়া হবে। নিঃসন্দেহে খুব ভালো সংবাদ। সে খবরে শিরোনাম ছিল এ রকম ‘সর্বজনীন পেনশন চালু আগামী অর্থ বছরে।’ অর্থাৎ আগামী মাস (জুলাই, ২২) থেকে। কিন্তু খবরের বডিতে আর এ সংক্রান্ত স্পষ্ট কিছু নেই সব ধোঁয়াশা। যাক সেটা পরে হয়তো জানা যাবে। একটা ভিন্ন বিষয় নিয়ে উদাহরণ পেশ করতে এবং কিছু কথা বলতে চাই। আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্রে সচিত্র প্রতিবেদনে দেখেছি, প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় বেশ কয়েক হাজার গৃহহীন, ভিটামাটিহীন দুস্থ পরিবারের মাঝে পাকা ঘর দিয়ে তথা তাদের একটা ঠিকানা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এমন সচিত্র প্রতিবেদনও দেখেছি, সামান্য বৃষ্টি বাদলের কারণে সেসব ঘর জলমগ্ন হয়ে যাওয়ায় কোনো গৃহহীন মানুষই সেসব ঘরে উঠতে পারেননি, এও দেখেছি, নানা সমস্যা-প্রতিবন্ধকতার কারণে বহু ঘরে মানুষ উঠতে না পারায় সেগুলো খালি পড়ে আছে। এমন ছবি ও লেখা পড়েছি, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে সেসব ঘর বানানো হয়েছে যে, মানুষ সেখানে ওঠার আগেই তা ভেঙে গেছে। এমন কিছু অভিযোগের খবরও কাগজে এসেছে, বেশ অবস্থাসম্পন্ন মানুষও ভিটা-মাটিহীন মানুষের জন্য নির্মিত সেই সব ঘরের বরাদ্দ পেয়েছেন। সবচেয়ে অবাক হয়েছি; আর একটি সচিত্র খবর দেখেছি ক্ষমতাসীন দলের অবস্থাসম্পন্ন জনৈক নেতা এমন ঘরের বরাদ্দ পেয়েছেন। ছবিতে দেখা গেছে, যে ঘর তিনি বরাদ্দ পেয়েছেন, তার এক্সটেনশন করে বারান্দায় গ্রিল দেয়া হয়েছে। আর বারান্দার টিনের ওপর ডিশের অ্যান্টেনা লাগানো রয়েছে। মনে হয় এসব ঘর বরাদ্দের সময় কিছু ফাঁক ফোকর ছিল, আর এসব ঘর তৈরির সময় লোকেশন দেখা উচিত ছিল, উচিত ছিল কোন মানের নির্মাণসামগ্রী ঘর বানাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। অবশ্যই এসব কাজের দায়িত্ব পালন নিম্নপদস্থ কর্মচারী-কর্মকর্তাদেরই বটে। তবে সামগ্রিক তদারকির বিষয়গুলো হয়তো কিছু উপর থেকেই হবার কথা। এসব তাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়া উচিত ছিল না।
সর্বজনীন পেনশন নিয়ে যতটা ঢাকঢোল পেটানো হচ্ছে বাস্তবে হয়তো ঠিক ততটা নয়, যারা পেনশন ভোগ করতে চান তাদের অবশ্যই একটা মোটা অঙ্কের টাকা প্রতি মাসে জমা দিতে হবে; কমপক্ষে এক হাজার টাকা। আজকে নিম্ন আয়, মধ্যনিম্ন আয়, এমন কি মধ্যম আয়ের মানুষের পক্ষে মাসে খাওয়া দাওয়া ও অন্যান্য খরচের পর সেভিংস হয় শূন্য। তাদের পক্ষে পেনশন পাওয়ার জন্য মাসে এক হাজার টাকা করে দীর্ঘদিন জমা দেয়া কি সম্ভব? কথায় বলে, ৯ মণ ঘিও জোগাড় হবে না রাধাও নাচবে না। বলতে গেলে এই পেনশন স্কিম বীমা করার মতো যার সাথে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের চেতনার কোনো সামঞ্জস্য নেই। বরং যে পেনশন স্কিমের কথা বলা হচ্ছে তা নিয়ে দেখা দিবে জনগণের নানা ভোগান্তি, খাজনার চেয়ে বাজনাই বাজবে হয়তো বেশি।
জাতিসঙ্ঘের এক ঘোষণা অনুসারে, কোনো রাষ্ট্রকে তখনই কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলা যেতে পারে যখন রাষ্ট্রটি প্রতিটি নাগরিকের খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে এবং বেকারত্ব, অসুস্থতা, বৈধব্য বা অন্য কোনো কারণে জীবিকার্জনের অক্ষমতায় সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করে। এ দিকে আমাদের সংবিধানেও একটি ধারা রয়েছে সরাসরি কিন্তু কল্যাণ রাষ্ট্রের যে চেতনা তার অনেকটা কাছাকাছি তার অবস্থান। সংবিধান থেকে সেই ধারা উদ্ধৃতি করলে পাঠকের কাছে তা অনেকটা স্পষ্ট বা পরিষ্কার হবে। সংবিধানের ১৫ (ক) অনুচ্ছেদে রয়েছে ‘অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা; (খ) কর্মের অধিকার, অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করিয়া যুক্তিসঙ্গত মজুরীর বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার; (গ) যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার এবং (ঘ) সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতা-পিতাহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার।’
এমন নির্দেশনা রয়েছে। শুধু এখানেই শেষ নয়, সংবিধানে এর আরো সম্পূরক বিধানাবলী রয়েছে। যেমন বৈষম্য অবশ্যই কল্যাণের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। আমাদের সংবিধানে কিন্তু এ বিষয়ে পরিষ্কারভাবে অ্যাড্রেস করা আছে। ১৬ নং অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত রয়েছে ‘নগর ও গ্রামাঞ্চলে জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করিবার মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তরসাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ এ জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তারও বিস্তারিত বর্ণনা এই ধারার ভিতর সংযুক্ত রয়েছে। কল্যাণ রাষ্ট্রে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আমাদের সংবিধানে একটি পৃথক অধ্যায় সংযোজিত রয়েছে। সংবিধানে ২৬ থেকে ৪৭(ক) পর্যন্ত মোট ২২টি মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত ধারা সংরক্ষিত আছে। এ ধারাগুলোর রক্ষাকবচ হিসাবে সন্নিবেশিত রয়েছে। এ অধ্যায়ের প্রথম ধারাতেই বলা আছে ২৬(১) এই ভাগের বিধানাবলীর সহিত অসমঞ্জস সকল প্রচলিত আইন যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, এই সংবিধান প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে। প্রতিটি কল্যাণ রাষ্ট্রের চেতনার সাথে সকল নাগরিকের ধর্মীয় অনুভূতিকে পরম শ্রদ্ধার সাথে দেখা হয়। সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে : ৪১(১,ক)তে বলা আছে ‘প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে’; সব কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকে। আমাদের শাসনতন্ত্রের ২৩(ক) ধারায় রয়েছে, রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
আমাদের শাসনতন্ত্রে কল্যাণ রাষ্ট্র চেতনায় সমৃদ্ধ আরো কিছু বিধানাবলী রয়েছে; এই লেখার কলেবর বৃদ্ধি পাবে বিধায় তা আর উল্লেখ করছি না। আমাদের চেতনাগত বিষয়ে পরিশুদ্ধ করার থিওরি হিসাবে এখানে কোনো ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু ‘ইন প্র্যাকটিস’ তার কিছুই অনুসৃত হয় না এটাই আফসোস। আমাদের সবসময়কার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা রাজনৈতিক নির্বাহীদের এমন আচরণ সংবিধানের সেই সব নির্দেশনার সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। এখানে একটা কথা বলা হয়তো অসঙ্গত হবে না, যখন যারা রাষ্ট্রের দায়িত্বভার বুঝে নেন, সে সময় তাদের সংবিধান অনুসারে যে শপথনামা পাঠ করা হয়, সেই শপথবাক্যে নেতৃবৃন্দ, সংবিধান সংরক্ষণ এবং তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু বাস্তব অবস্থা কী তা আর খুলে বলার প্রয়োজন পড়ে না। মানুষ সবই জানে।
আসলে দেশের রাজনীতির সঠিক ধারণাটি কিন্তু অনুসরণ করা হয়নি। যদি হতো তবে সকল দলের রাজনীতি সংবিধানমুখী তথা জনকল্যাণমুখী হতো। সব দলের এখন রাজনীতির লক্ষ্য হচ্ছে কেবল ক্ষমতার উষ্ণতা লাভের প্রতিযোগিতা, সে প্রতিযোগিতার দৌড়ে যাদের হাতে ক্ষমতা বিদ্যমান থাকে, তারা অপর প্রতিযোগীদের কিভাবে ল্যাঙ মারবে তার কূটকৌশল নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তায় বিভোর থাকে। সে জন্য দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। গণতন্ত্রকে সহায়তা দেয়ার জন্য যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার অবস্থা আজ এতটা নাজুক যে, মনে হয় তাদের শিরদাঁড়া ভেঙে গেছে, তাদের আর উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই, শুধু শুয়ে শুয়ে হম্বি তম্বি করা ছাড়া। আগেই বলা হয়েছে দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দল সব সময় আমাদের প্রধান আইন গ্রন্থের প্রতি এতটা উদাসীন এবং সে গ্রন্থে যে নীতিনির্দেশনা রয়েছে তার অনুসরণ অনুশীলন করা নিয়ে কিছুমাত্র মনোনিবেশ বা আগ্রহ বোধ করে বলে মনে হয় না। অথচ তা আত্মস্থ করা নিয়ে সংবিধানে কঠিন বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সংবিধানের ২১(১) ধারায় বলা আছে, সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। সংবিধানের ও সাধারণ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বৃহত্তর আঙ্গিকে যদি দেখা হয় তবে মানুষের অধিকার সংরক্ষণ, উন্নত জীবন রচনা করা সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব, তথা ক্ষমতা থাকা না থাকাটা বড় কথা নয়। যারা ক্ষমতাসীন তাদের দায়িত্ব বারো আনা আর যারা ক্ষমতায় অতীতে রয়েছেন, তাদের কর্তব্য অবশিষ্ট চার আনা। তারা ক্ষমতাসীনদের ওপর ক্রমাগত এসব অর্জনের জন্য চাপ তৈরি করবেন। সংসদের ভিতর অপজিশন বেঞ্চ থেকে সংসদের এবং বাইরে যারা আছেন তাদেরও এই বোধকে পরিচর্যা করতে হবে।
আমরা হয়তো ভুলে বসে আছি সংবিধানের অন্যতম লক্ষ্য গণতন্ত্রকে, অথচ সংবিধান বলছে, ১১ ধারায় ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, সেখানে মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে...।’ আমাদের ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ রচনার পঞ্চাশ বছর পার হয়ে গেছে এমতাবস্থায় কারো অজুহাত যুক্তি ও ন্যায়নীতির কাছে। সুখী সমাজ বিনির্মাণের দায়িত্ব ছিল, আমাদের সর্বস্তরের নেতাদের, সে লক্ষ্যে তারা পৌঁছতে পারেননি।
ndigantababor@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা