২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

‘হপ স্টেপ অ্যান্ড জাম্প’

‘হপ স্টেপ অ্যান্ড জাম্প’ - ছবি : সংগৃহীত

কলেজ জীবনে একজন মজার শিক্ষকের দেখা পেয়েছিলাম। তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী মানুষ। গতানুগতিকতার বাইরে ছিল তার অবস্থান। এ ধরনের লোকেরাই হয়তো জীবনে সফল হয়। তিনি সিএসপি হয়েছিলেন। অবশেষে তিনি প্রশাসনের শীর্ষে পৌঁছেছিলেন। তিনি বলতেন, সারাক্ষণ সারা দিন পড়াশোনা করার দরকার নেই। বাক্যে যেমন দাড়ি, কমা, সেমিকোলন আছে তেমনি পড়াশোনায় বিরতি আছে। আবার উদ্যম ও উদ্যোগ আছে। গরমে অথবা রমজানে যখন দীর্ঘ ছুটিতে যেতাম আমরা গাট্টি গাট্টি বইপত্র নিতাম পড়াশোনার জন্য। ভাবখানা এই এক মুহূর্তও নষ্ট করব না। দিগি¦জয় করে ফেলব, লেখাপড়ায়। আসলে সকলই গড়ল ভেল। গাট্টি যেমন ছিল তেমনি রয়ে যায়। স্যার এসব দেখে বলতেন, ‘তোমাদের বুদ্ধিতে গলদ আছে। খাওদাও ফুর্তি করো। ইট ড্রিংক অ্যান্ড বিমেরি।’ ভালো করে পড়াশোনা করার জন্য অবকাশ ও আনন্দের দরকার আছে। সুতরাং পড়াশোনার খানিকটা ঘাটতি পূরণ করার জন্য কৌশলী হওÑ হপ স্টেপ অ্যান্ড জাম্প। খেলাধুলার জগতে বিষয়টি পরিচিত। যারা হাই জাম্প, লং জাম্প জানেন তারা নিশ্চয়ই হপ স্টেপ অ্যান্ড জাম্পও জানেন। দীর্ঘ লাফ, উঁচু লাফ এবং দম নিয়ে লাফÑ এ রকম কষ্টকর বাংলা প্রতিশব্দ লেখা যায়। বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, আরেক ধরনের লাফ আছে তা হলো পোল ভল্ট। এটি বাঁশের সাহায্যে লাফ। এসব প্রীতিকর শব্দগুলো কখনো কখনো আমরা অপ্রীতিকরভাবে ব্যবহার করি। যেমনÑ লম্ফঝম্প বলতে বেহুদা আস্ফালন বোঝাই। লম্ফ, ঝম্ফ, হাই-জাম্প বলতে সর্বপ্রকারের প্রচেষ্টাকে বুঝাই। হপ স্টেপ অ্যান্ড জাম্পকে লাফ দেয়ার আগে পিছু দৌড়কে বোঝাই।

আশা করি সবার এ কথা জানা আছে যে, হপ স্টেপ অ্যান্ড জাম্প দিতে হলে প্রার্থী কিছুটা পিছু দৌড় দেয়, শক্তি সঞ্চয়ের জন্য। সেই সাথে নিয়ম অনুযায়ী একটা পয়েন্টে তাকে পা ফেলতে হয়। রাজনৈতিকভাবেও এসব শব্দের ব্যবহার কিংবা অপব্যবহার দেখা যায়। যেমন বলা হয় অমুক পার্টি লম্ফঝম্প করছে। আরো বলা হয়, অমুক পার্টি হাই-জাম্প দিয়েও প্রতিদ্ব›দ্বীকে হারাতে পারবে না। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক লাফঝাঁপ দেখে হপ স্টেপ অ্যান্ড জাম্প ক্রীড়া কৌশলের কথা প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। সেই শিক্ষক লেখাপড়ার ক্ষেত্রে পিছু হটে পুরোদমে যে সাফল্যের কথা বলতেন আমাদের এই সময়ের রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রেও সেটি প্রয়োগিক মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা লাভের জন্য লড়াই করে। এটি রাজনৈতিক লড়াই। সারা পৃথিবীতে একই রকম। এই কৌশলের তিনটি পর্যায় বা তিনটি প্রকারভেদ বলা যায়। প্রথমত, দলের আদর্শ ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে প্রচার-প্রচারণা। দ্বিতীয়ত, প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করা বা রাজনৈতিক কর্মসূচিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করা। তৃতীয়ত, সেই আদর্শ ও আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। কারণ নির্বাচন হলো স্বীকৃত একমাত্র পন্থা যার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার রদবদল সম্ভব। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস যদি আমরা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করি তাহলে এই তিনটি পর্যায় অতিক্রান্ত হতে দেখব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আওয়ামী লীগের জন্ম ১৯৪৯ সালে। ১৯৪৯ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত তারা দলের আদর্শ ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত গণ-আন্দোলন পরিচালনা করে। ১৯৭০ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে। এরপর বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন রয়েছে।

একই চিত্র বিএনপির ক্ষেত্রে। ১৯৭৯ সালে জাতীয় ঐক্যের আহŸান নিয়ে বিএনপির জন্ম। ১৯ দফা কর্মসূচিসহ জিয়াউর রহমানের নানাবিধ জন-আকাক্সক্ষার কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি তার কর্মসূচিকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। জিয়াউর রহমানের শাহাদতের মতো বিয়োগান্তক ঘটনা এবং এরশাদের অবৈধ ক্ষমতা দখল বিএনপিকে আন্দোলন ও সংগ্রামে বাধ্য করে। বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে আপসহীন নেত্রীর অভিধা নিয়ে দেশের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে জয়লাভ করেন। যারা বিএনপিকে ক্ষমতাশ্রয়ী রাজনৈতিক দল বলে তিরস্কার করে তারা ওই নির্বাচনে পরাজিত হয়। বহু ঘাত-প্রতিঘাত ও নিপীড়ন নির্যাতন ধারণ করে বিএনপি এখনো দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। প্রমাণ চাইলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে যাচাই করতে পারেন। বাংলাদেশের ডান ও বাম ধারার আদর্শিক রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা ভিন্নরকম। আদর্শই তাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, আন্দোলন ও নির্বাচন। সে অন্য কথা। মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর রণকৌশল বোঝাতে দুটো প্রধান রাজনৈতিক শক্তির উল্লেøখ করলাম।

ইতোমধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনায় অনেক পানি প্রবাহিত হয়েছে। নতুন করে পুরনো ঘটনা না বলি। বর্তমানের কথাই বলি। দেড় দশক ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিএনপি ওয়ান-ইলেভেন থেকে অব্যাহত নিপীড়নের মধ্য দিয়ে আজ পর্যন্ত জনগণের নীরব-সরব সমর্থনের ভিত্তিতে এখনো দাপটের সাথে নিজ অস্তিত্বের প্রমাণ দিচ্ছে। এই মুহূর্তের রাজনৈতিক অবস্থানটি দ্ব›দ্বমুখর। রাজনৈতিক দলের উল্লিখিত দ্বিতীয় পর্যায়ের সময়কাল অতিক্রম করছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি প্রণয়ন করছে। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী লক্ষ্যে পৌঁছতে চাচ্ছে। আর বরাবরের মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শক্তি প্রয়োগের সেই পুরনো নির্দয় কার্যক্রমের মাধ্যমে বিএনপিকে প্রতিহত করছে।

রাজনীতিতে রাজনৈতিক কৌশলই বড় কথা। জনগণকে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিবিধ রণকৌশল অবলম্বন করবে, এটাই স্বাভাবিক। যা অস্বাভাবিক তা হচ্ছেÑ এই রাজনৈতিক খেলাকে অন্যায়, অসত্য ও অত্যাচারের মাধ্যমে অপকৌশলে অবদমন করা। খেলার ক্ষেত্রে আমরা লং জাম্প, হাই জাম্প ও হপ স্টেপ অ্যান্ড জাম্প দেখেছি। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও দলভেদে এরা দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি বা লং জাম্প দেয়। আবার অতিউৎসাহী রাজনৈতিক দল হাই জাম্পও দিতে পারে। পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭০ সালে হাই জাম্প দিয়েছিলেন। তিনি সফল হয়েছিলেন। কিন্তু তার পরিণতি ভালো হয়নি। একইভাবে রাজনৈতিক দলগুলো ধীরে সুস্থে নিজের কর্মসূচি ও কর্মকৌশল প্রণয়ন করে। এ ক্ষেত্রে ‘ওয়ান স্টেপ ফরওয়ার্ড, টু স্টেপ ব্যাকওয়ার্ড অ্যান্ড টু স্টেপ ফরওয়ার্ড, ওয়ান স্টেপ ব্যাকওয়ার্ড’ কৌশল সবারই জানা কথা। আবার তিনপা যেতে দুবার থামে এ রকম রাজনৈতিক দলেরও ইতিহাস আছে।

বাংলাদেশের বর্তমান জটিল ও কুটিল রাজনৈতিক অবস্থায় কিভাবে বিরোধী শক্তি ক্ষমতাসীনদের মোকাবেলা করবে সেটি একটি অত্যন্ত চিন্তা ও কৌশলের বিষয়। কারণ বিগত ১৫ বছর ধরে অব্যাহতভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন রয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক পথে, নির্বাচনের মাধ্যমে তারা যদি ‘কেয়ামত সে কেয়ামততক’ ক্ষমতায় থাকে তাহলে কারো কোনো আপত্তি নেই; কিন্তু তারা ক্ষমতায় থাকছে জনগণের সম্মতি ছাড়াই। ২০১৪ সালে বিনাভোটের নির্বাচন অবশেষে তারা বলেছিল একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৮ সালে তারা আশ্বস্ত করেছিল ‘আমায় বিশ্বাস করুন’। জনগণ তাদের বিশ্বাস করলেও তারা বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। সুতরাং, ২০২৩ সাল সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস করার কোনো ভিত্তি নেই।

আগামী নির্বাচনটি অবশ্যই নির্বাচনকালীন সরকার, তত্ত¡াবধায়ক সরকার অথবা জাতীয় সরকারের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হওয়া ব্যতীত কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে, গণতান্ত্রিক উপায়ে বা সংলাপ-সমঝোতায় কোনো রাজনৈতিক সমাধান আসেনি বিগত অর্ধশতাব্দীতে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বিরোধীরা ফ্যাসিস্ট বা নাৎসি বলে গাল দেয়। বস্তুত ১৯৪৯ থেকে এই পর্যন্ত অনেক ঘটনাকে ওই অভিযোগ প্রমাণ করার সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা যায়। বিশেষত বিগত ১৫ বছরের ইতিহাস নিপীড়নের ইতিহাস, নির্যাতনের ইতিহাস। গুম, খুন ও অন্যায়-অত্যাচারের ইতিহাস। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এমনকি সিভিল সোসাইটির ভিন্ন মতাবলম্বী বুদ্ধিজীবীরাও তাদের নিপীড়ন থেকে রেহাই পায়নি। দেশে ভীতির রাজত্ব কায়েম হয়েছে। সবাই এই অবস্থা থেকে মুক্তি চায়।

এই রাজনৈতিক মুক্তির জন্য বিগত ১৫ বছরে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষত ২০ দলীয় জোট বারবার আন্দোলন করেছে। প্রতিবারই তারা প্রতারিত হয়েছে অথবা ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৪ সালে যখন নির্বাচনবিরোধী আন্দোলন সূচিত হয় তখন নির্বাচনের পর আন্দোলনটি অব্যাহত থাকলে পতন অনিবার্য হয়ে উঠত বলে রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের ধারণা। বলা হয়ে থাকে, বিদেশী নিশ্চয়তায় ও দেশী প্রতিশ্রæতিতে বিএনপি প্রতারিত হয়। ২০১৫ সালে আবার যখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু হয় তখন সরকার নিজেরাই অঘটন ঘটিয়ে বিএনপির ঘাড়ে জ্বালাও পোড়াওয়ের বদনাম চাপিয়ে দেয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, পশ্চিমা শক্তি সন্ত্রাসের জুজুর ভয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এবারো রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, ওই আন্দোলন আরো ১০ দিন অব্যাহত রাখলে পরিবর্তন সম্ভব হতো। বলা হয়ে থাকে, বিগত বছরগুলোতে বিএনপি আন্দোলনের অনেক সুযোগ নষ্ট করেছে। তবে এ কথাও মনে রাখতে হবে, যারা অস্ত্রের ভাষায় জবাব দিতে চায় তাদের কাছে নিরস্ত্র মানুষ বড়ই অসহায়। অতীতের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের এবং পাকিস্তানের আধা ঔপনিবেশিককালেও এ রকম নিপীড়নমূলক অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা সময়ে অসময়ে এ ধরনের মন্তব্য করেছেন।

আগামী নির্বাচন সাংবিধানিকভাবে, গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার পরিবর্তনের একটি উৎকৃষ্ট সুযোগ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো বারবার এ কথা নিশ্চিত করেছে যে, অনিয়মতান্ত্রিক পথে বা সন্ত্রাসের মাধ্যমে তারা রাজনৈতিক পরিবর্তন চায় না। জনগণ রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য আকুলতা-ব্যাকুলতা প্রকাশ করছে। গণমাধ্যমের ভাষা, সংবাদপত্রের নিত্যদিনের মতামত জরিপ, মাঠে-ঘাটে তাদের উচ্চারিত শব্দাবলি এবং দেয়ালের লিখন কী সাক্ষ্য দেয়? সরকার যে জনগণের এ নীরব ভাষা বোঝে না তা নয়। যদি তারা বুঝতে চায় তাহলে তাদের ক্ষমতা হারাতে হয়। মুখে যতই গণতন্ত্রের ভাষা থাক না কেন, অগণতান্ত্রিক পথই তাদের পাথেয়। এই অভ্যন্তরীণ জনমতের চাপ, বিদেশে বিব্রতকর অবস্থা এবং নিজের রাজনৈতিক কোন্দল ক্ষমতাসীনদের ক্রমেই বিপদসীমার মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য বিরোধী দল সময়ে সময়ে আন্দোলনের মহড়া দিচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যে মনে হচ্ছিল যে, সরকার কিছুটা পথ প্রশস্ত করবে; কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি প্রমাণ করছে, সরকারের ‘মুখে শেখ ফরিদ হলেও বগলে ইট’ রয়েছে। তাদের সোনার ছেলেরা শুধু কথা বলেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। তারা অস্ত্র প্রয়োগ করছে। সর্বত্র সব ক্ষেত্রে এই সোনার ছেলেরা বিরোধী রাজনীতিকে প্রতিহত করার সোল এজেন্সি পেয়েছে বলে দেশের রাজনৈতিক ঘটনাবলি প্রমাণ দিচ্ছে। রাজনৈতিক ¯েøাগানকে বাহানা করে হামলার উসকানি দিচ্ছেন দায়িত্বশীল আওয়ামী রাজনৈতিক নেতারা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ক্রমেই সঙ্ঘাতের দিকে হাঁটছে দেশ। বিরোধী রাজনৈতিক নেতারাও ১৫ বছরের শাসন-দুঃশাসনের পর এখন অস্থির হয়ে পড়েছেন। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, জনগণের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পারলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এখনই সরকারের পতন চায়। নাগরিকদের অনেকেই বিএনপির ক্রমশ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি অসহিষ্ণু। বিরোধী নেতৃত্বকে আপসকামী, অকার্যকর ও ব্যর্থতার দায়ে অভিযুক্ত করে বিপ্লব করতে চান অনেকেই। কিন্তু গভীর চিন্তাচেতনার মাধ্যমে রাজনৈতিক কৌশল সম্পর্কে যারা অবহিত তারা বলেন, নির্বাচনের এত দূরেÑ দুর্বার আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিগত ১৫ বছরে কোনো ধরনের সুস্পষ্ট লক্ষ্য এবং সরকারের নিপীড়ন কৌশলকে অবজ্ঞা করে আন্দোলন করেছে। ফলাফল আসেনি; বরং হামলা, মামলা ও গুমের গতি বেড়ে গেছে। এখন প্রায়ই দেখা যায়, আওয়ামী লীগ নেতারা নানা মন্তব্যে বিএনপিসহ বিরোধী দলকে আন্দোলনে উসকে দিচ্ছে। এই উসকানিতে সাড়া দিলে সারা দেশে সব রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে আবারো পাকড়াও করার সুবর্ণ সুযোগ তারা পেয়ে যাবে। তারা ওঁৎ পেতে আছে। বিএনপি যদি ফাটা বাঁশে পা দেয় তাহলে পা মচকে যাবে। সুতরাং চূড়ান্ত গণ-অভ্যুত্থানের পটভ‚মি তৈরি করতে তাদের এখন নিয়োজিত হতে হবে। দ্বিতীয়ত, সাংগঠনিক মজবুতির দিকে নজর দিতে হবে। তৃতীয়ত, ডান-বাম, উত্তর-দক্ষিণ নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক শক্তির ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। চতুর্থত, আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণে আন্তঃদলীয় সমন্বয় সাধন করতে হবে। ক্রীড়াক্ষেত্রে হপ স্টেপ অ্যান্ড জাম্প যেমন সফল করতে পেছনে খানিকটা যেতে হয় শক্তি সঞ্চয়ের জন্য, ঠিক তেমনি এই মুহূর্তে আন্দোলন করে শক্তিক্ষয় ও রক্তক্ষয় করা যাবে না। সমস্ত শক্তিকে সঞ্চিত করতে হবে গণতান্ত্রিক শক্তি প্রয়োগে গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টির জন্য। মনে রাখতে হবে, এই গণযুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণকে অবশ্যই জয়লাভ করতে হবে। শপথ নিতে হবে মুক্তি অথবা মৃত্যুর।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement