ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে ধাঁধায় ছাত্রলীগ
- জসিম উদ্দিন
- ০১ জুন ২০২২, ২০:৪৪
জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছেন। খবরটি শুনতে অদ্ভুত লাগলেও বাস্তবে ঘটনাটি ঘটেছে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায়। আজহারী ওয়ায়েজিন হিসেবে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি আকর্ষণীয় করে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। জনপ্রিয়তা তার নিজের বিপদের কারণ হয়েছে। সরকার তাকে পছন্দ করেনি, অনেকটা তাকে এ দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি পূর্ব এশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া ও ইউরোপ-আমেরিকার মুসলমানদের মধ্যেও এখন বেশ আলোচিত একটি নাম। কিছু দিন আগে ব্রিটেনের পার্লামেন্টে তাকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাঙালিরা সেখানেও তার পিছু ছাড়েনি। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের কাভারে দেনদরবার করে সেই দেশটিতেও তার ঢুকতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। বলতে হয় ‘সাবাস বাঙালি’! এ এক দারুণ অন্তহীন পিছু লাগা। ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি বিদেশেও আমাদের জোর শক্তি জোগাচ্ছে।
ফুলগাজীর ঘটনাটি থেকে আমরা বুঝতে পারব, ছাত্রলীগ নেতা হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে যাচাই করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষেরও এ ব্যাপারে জানার অধিকার রয়েছে। তারা এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করবেন, বিচার-বিবেচনা করবেন। এমনিতেই দেশ থেকে ভোটব্যবস্থা অনেকটাই নির্বাসিত হয়েছে। সরকারি দল কিসের ভিত্তিতে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করছে, জনগণের কাছে তা বেশ আগ্রহের। স¤প্রতি ফুলগাজী উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয় বেশ ঘটা করে। এমন জাঁকজমকপূর্ণ কাউন্সিল আমরা জাতীয় দলগুলোর ক্ষেত্রেই দেখতে অভ্যস্ত ছিলাম। ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে বাছাই করা হয়েছে স্থানীয় গোসাইপুর গ্রামের মো: রাকিবুল হাসান পিয়াসকে। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর জেলা ছাত্রলীগ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পিয়াসের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে, নবগঠিত উপজেলা কমিটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে অভিযোগ তদন্ত করার জন্য।
বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত ধর্মভীরু বা ধর্মপ্রাণ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টিসহ এ দেশের সব দলের মানুষের মধ্যে একই চরিত্র দেখা যায়। এখানে খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে, ধর্মভীরুতা আর আল্লøাহভীরুতা এক জিনিস নয়। ধর্মেভীরুতা থেকে সৃষ্ট আবেগ মানুষকে তাৎক্ষণিক আচার-আচরণ শেখায়। কিন্তু আল্লøাহভীরুতা মানুষকে আবেগ থেকে বের করে নিরেট সত্যের ওপর দাঁড় করিয়ে দেয়। তবে ধর্মভীরুতা মানুষের মধ্যে কিছু মূল্যবোধের জন্ম দেয়। এতে মানুষ নমনীয় আচরণ করে। পিয়াসের পদ কী কারণে স্থগিত হয়ে গেল, দলের প্রচার করা আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তিতে না থাকলেও সংবাদমাধ্যমে তা প্রকাশ করা হয়েছে।
তরুণ রাকিবুল কিছুটা দুঃখ পেয়েছেন আজহারীর মাহফিল বন্ধ করে দেয়ায়। আজহারীর ছবি দিয়ে কয়েক বছর আগে তার করা স্ট্যাটাসটি সংবাদমাধ্যমে এসেছে। তিনি লিখেছেন ‘লজ্জিত ফেনীবাসী। আপনাকে (মিজানুর রহমান আজহারী) এত কিসের ভয় যে, আপনার মাহফিল বন্ধ করে দেয়! সমস্যা নেই। আপনি কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। আপনার বিরুদ্ধে যারা কাজ করছে, তাদের যেন আল্লøাহ হেদায়েত দান করেন।’ প্রকাশিত খবর থেকে তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরলাম। তবে পদ স্থগিত ঘোষণার পর তিনি এই স্ট্যাটাস নিয়ে কিছু বলেননি। এই মৌনতা বা এড়িয়ে যাওয়ায় তিনি যদি পদ ফিরে পান তাহলে তো তার সুফল তিনি পাবেন। তিনি ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র হাতে নিয়েও বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করতে পারতেন। তিনি জানতে চাইতে পারেন, ইসলামী বক্তার পক্ষে আবেগ বা সমর্থন প্রকাশ ছাত্র সংগঠনটির গঠনতন্ত্রের কোন ধারা অনুযায়ী নিষিদ্ধ। তিনি সংবিধানের দোহাই দিতে পারেন। সেখানে ধর্ম গোত্র বা অন্য কোনো কারণে বৈষম্য বা বঞ্চিত করার সুযোগ রাখা হয়নি।
ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ও সংগঠনটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস। দুজনই সংখ্যালঘু হিন্দু ধর্মীয় স¤প্রদায়ের। ছাত্রলীগের এই উদারতার প্রশংসা করতে হয়। পদবি পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা ধর্মীয় পরিচয়কে প্রাধান্য দেয়নি। দলের ৯০ শতাংশ সদস্য মুসলমান হওয়া সত্তে¡ও বিষয়টিকে তারা মেনে নিয়েছেন। এমনকি দলটির মধ্যে হিন্দু ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে কোনো ধরনের হিংসা-বিদ্বেষ কিংবা অসন্তোষ নেই। আবার দলটির শীর্ষস্থানীয় হিন্দু নেতারা সংখ্যাগুরু স¤প্রদায়ের চাপে নিজেদের ধর্মকর্ম ছেড়ে দিচ্ছেন এমনটিও ঘটছে না। বরং তারা নিজেদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান উৎসাহের সাথে পালন করছেন। ধর্মীয় চিহ্ন সানন্দে ব্যবহার করছেন। এমনকি ইসকনের মতো সাম্প্রদায়িক সংগঠনের সদস্য হতে এবং এর কার্যক্রম চালাতেও তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। এ নিয়ে এক কথায় তারা কোনো চাপ অনুভব করেন না। বাংলাদেশে ধর্মীয় স¤প্রীতি উদারতার বিষয়টি এ থেকে প্রকাশিত হয়।
কিন্তু দলটি বৃহত্তর মুসলমান ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান চিহ্ন এবং চেতনার প্রতি ঠিক একই ধরনের উদার মনোভাব গ্রহণ করতে পারছে না। বিশেষ করে নেতৃত্ব নির্বাচনে মুসলমান পরিচয় একটা নেগেটিভ ফ্যাক্টর হয়ে যাচ্ছে। পদবি অর্জনের জন্য তাদের একধরনের ‘প্রগতিশীলতা’ প্রদর্শন করতে হচ্ছে। সেটা প্রচলিত ধর্মীয় আবেগ, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ও মূল্যবোধের প্রতি স্পষ্ট বিরোধ তৈরি করছে। এই পর্যায়ে তারা এতটা সঙ্কীর্ণতায় ভুগছেন যে, একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিযোগিতায় অভিযোগ আনছেন মুসলমানদের প্রতি বিশেষ সম্পর্ক নিয়ে। যেমন পিয়াসের ক্ষেত্রে আনা হলো আজহারীকে সমর্থনের। আজহারী কেবল মুসলমানের ভালোলাগা বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়ায় জনপ্রিয় হয়েছেন। বোঝাই গেল ধর্মভেদে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থান নিচ্ছে ছাত্রলীগ। বৃহত্তম ধর্মের প্রতি কোনো ধরনের চেতনা প্রদর্শনকে চরমভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, একে তারা অযোগ্যতা হিসেবে গ্রহণ করছে।
ফুলগাজী উপজেলা ছাত্রলীগের প্রসঙ্গটি দেখুন। ছাত্রলীগের ঠিক এর আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। এ নিয়ে জাতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছিল। ওই ঘটনায় ফেনী ছাত্রলীগ বা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। কোনো তদন্ত কমিটিও গঠন করেনি। একই ছাত্রলীগ আজহারীর প্রতি সমর্থনকে তাদের আদর্শবিরোধী হিসেবে গ্রহণ করছে। দলটি মুসলমানবিরোধী অবস্থানকে এতটাই জোরালো করেছেÑ একজন প্রার্থী ভালো মুসলমান হওয়ার দাবি করতে সাহস পান না। দলীয় সদস্যদের যেকোনো অপরাধ সংঘটন ও অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হওয়া একজন ভালো মুসলমান হওয়ার চেয়ে উত্তম হয়ে গেল। যুক্তিতর্কের চর্চাও দলটির মধ্যে একেবারে সীমিত। তারা ন্যায়-অন্যায় যাই হোক, নিজেদের অভিভাবককে সবেচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। যেমন, বঞ্চিতরা ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের ‘অভিভাবক’ স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজাম হাজারির ওপর আস্থা রাখছেন। তিনি যদি পদ না-ও দেন তাতেও তারা প্রশান্তচিত্তে দলীয় আনুগত্য করবেন। এই পর্যায়ে এসে ছাত্রলীগ নেতারাও দৃশ্যপটে আর থাকছেন না। সারা দেশে এই ধরনের বহু ‘অভিভাবকের’ উদ্ভব ঘটেছে। এই সরকারের আমলে দেশের এক এক এলাকা এক এক অভিভাবকের অধীনে চলে গেছে।
ছাত্রলীগের একেবারে শীর্ষপর্যায়ে আদর্শিক খরা চলছে। দলটির আগের সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানিকে টেন্ডারবাজির অভিযোগে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে দলটির সম্মেলনের সময় জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলে একটি রিপোর্ট করে। সেখানে তারা ছাত্র সংগঠনটির অসংখ্য অপরাধের একটি সারাংশ করেছে। তারা মন্তব্য করেছে, ছাত্রলীগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে, পদ-বাণিজ্য। উপজেলা, ইউনিয়নও বাদ থাকছে না। বড় পদগুলো সব মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে কিনতে হয়। কেউ যদি একাধিক টার্ম সেটা ধরে রাখতে চান তার জন্যও মোটা অঙ্কের অর্থ দিতে হয়।
সাতক্ষীরা কলেজে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এক ছাত্রকে নির্মম নির্যাতন চালান। এই সূত্রে সেখানে একটি টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া যায়। ওই সময় স্থানীয় সংবাদসূত্রে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, তিনি পদটি ৩০ লাখ টাকায় কিনেছেন। দলের অন্যান্য সদস্যের কাছে তিনি এ নিয়ে দাপটও দেখিয়েছেন। ছাত্রলীগের পদ-বাণিজ্য নিয়ে এমন খবর প্রায় প্রতিদিন সংবাদপত্রে পাওয়া যাবে। সিলেটে এমসি কলেজে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে কেড়ে নিয়ে ছাত্রলীগের একদল সদস্য ধর্ষণ করে। দলটির সদস্যদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রতিনিয়ত আসছে। এ ছাড়া চাঁদবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, নির্মম নির্যাতন চালিয়ে প্রতিপক্ষকে খুনের ঘটনাও তারা ঘটাচ্ছে। এই অবস্থায় যেকোনো চরিত্রবান তরুণ ছাত্রলীগে সদস্যপদ গ্রহণ কিংবা নেতৃত্বে নেয়ার আগে দলটিকে সংশোধন হওয়ার শর্ত আরোপ করতে পারেন। এমন শর্ত আরোপ করতে এখনো কাউকে দেখা যায়নি। মূল দল আওয়ামী লীগের আগের নামটি ছিল ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’। গান্ধীর কংগ্রেস ও জিন্নাহর মুসলিম লীগের পর বাঙালি মুসলমানদের জন্যও একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ দলটি মূলত মুসলিম লীগের ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট নিয়ে তৈরি হয়। ব্রিটিশ পরবর্তী উপমহাদেশের রাজনৈতিক স্বার্থটি ধর্মকেন্দ্রিক ছিল। বিগত এক যুগে আওয়ামী লীগের রাজনীতি অনুশীলন আর এর লিখিত আদর্শের মধ্যে ব্যাপক তফাৎ দেখা দিয়েছে।
ফেনীর ভ‚-রাজনৈতিক অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। আগরতলা থেকে ফেনী হয়ে বঙ্গোপসাগরের দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। এই চিকেন নেকটি ভারত আটকে দিলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ পার্বত্য জেলাগুলো আলাদা হয়ে যাবে। তবে দেশীয় রাজনীতিতে এ এলাকাটি ঢাকা, চট্টগ্রাম বা সিলেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেনি। একসময় ফেণী সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে কুখ্যাতি পায়। জয়নাল হাজারির সৃষ্ট ‘ক্লাসকমিটি’ আবার জাতীয় পার্টির নেতা কর্নেল জাফর ইমামের ‘টাইগার’ বাহিনী জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জটিল করে তোলে। খুন সন্ত্রাসের নিয়মিত ধারা থেকে ফেনী এখনো বের হয়ে আসতে পারেনি। আওয়ামী লীগের অভিভাবক পরিষদ উপদেষ্টামণ্ডলীতে জায়গা পেয়ে হাজারি মৃত্যুর আগে পুরস্কৃত হন।
ফুলগাজী জাতীয় রাজনীতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারণে। তার পৈতৃক নিবাস উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে। তিনি এ এলাকা থেকে নির্বাচন করে কয়েক গুণ ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এ এলাকায় দুটো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডও স্মরণ করার মতো। পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনপ্রিয় নেতা আজিজুল হক রহস্যজনকভাবে খুন হন। ’৯৬-এর আওয়ামী লীগ পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় ছিল। আরো তিনটি মেয়াদ পরপর দলটি এবার পূর্ণ করতে চলেছে। খুনের ঘটনাটির রহস্য উন্মোচন করা হয়নি। এই উপজেলার পরবর্তী জেনারেশনের নেতা একরামুল হক একরাম আরো নৃশংসভাবে খুন হন। ফেনী শহরের যে এলাকায় তিনি খুন হন সেটি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণাধীন। দলটি বিরোধী দলে থাকলেও ওইসব এলাকা তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। গুলি করে কুপিয়ে একরামকে নারকীয় কায়দায় খুন করা হয়। ঘটনাটি তখন দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এরপর টানা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় কিন্তু এ হত্যার বিচারও গতি পায়নি। অথচ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে দলটি বড় বড় ঘটনার বিচার করেছে। এসব বিচার নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। একই সময়ে নিজের দলের নেতাদের বিচারে পূর্ণ উদ্যোগ তারা নিচ্ছে না। জনপ্রিয় নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেতা হত্যার বিচারে দলটির একই ধরনের অনাগ্রহ দেখা গেছে।
রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের আদর্শিক বিচ্যুতি একেবারে স্পষ্ট। টানা তিনবার ক্ষমতায় থেকে বিচ্যুতি আরো ত্বরান্বিত হয়েছে। এবারের শাসনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগÑ অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট। তার সাথে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য ধর্মের সাথে রাজনীতিকে চাতুর্যের সাথে ব্যবহার করে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় স¤প্রদায়ের ওপর চরম নিপীড়ন তারা করেছে। মুসলমানদের বিশ্বাস, চিন্তা ও চিহ্নগুলোর ওপর ঘৃণা তৈরির চেষ্টাও তারা করেছে। হেইট ক্যাম্পেইনকে তারা উচ্চাঙ্গে তুলে নিয়েছে। তারই প্রভাব পড়েছে দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগে। একজন অপরাধীর পদ যাবে, তাকে শাস্তি দেবে, এটাই স্বাভাবিক। দেখা যাচ্ছে, অপরাধীর বিরুদ্ধে তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কিন্তু ধর্মের সাথে কারো আবেগী সম্পর্ক পেলে তাকেই ফায়ার করছে। মূলত এটি একটি ফাঁদ, নিজেরাই এ ফাঁদ তৈরি করছে। ক্ষমতার পুঞ্জীভ‚ত বরফের মধ্যে থেকে তারা এটা টের পাচ্ছে না। ক্ষমতার বরফ গলে গেলে এটা হয়ে উঠবে ফাঁস। চাইলেও তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের বিশ্বাস বা আস্থায় তারা আসতে পারবে না।
jjshim146@yahoo.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা