২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নির্বাচনের মান নিয়ে যেন প্রশ্ন না থাকে

নির্বাচনের মান নিয়ে যেন প্রশ্ন না থাকে - ছবি : সংগৃহীত

যে শিশু ভবিষ্যতে বড় কিছু করতে সক্ষম হবে, বিজ্ঞজনরা সে শিশুর জন্মের প্রত্যুষেই নাকি তা আঁচ করতে পারেন। ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’ সূর্যোদয়ের মধ্যেই দিনটির পূর্বাভাস থাকে। আমরা এমন দর্শন নিয়ে কথা বলে নিবন্ধের বপু বাড়াতে চাই না। নিরেট বাস্তব বিষয় নিয়ে আমাদের কথা।

আমরা আলোচনা করতে চাই, আজকে দেশের পরিবেশ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট সামনে রেখে। পর্যবেক্ষকদের অভিমত, দেশ এখন একটা জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সময় অতিক্রম করছে। এই অবস্থায় দেশ, দেশের মানুষ আর যারা দেশ পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত সেসব দায়িত্বশীলদের নিয়েই কথা বলার প্রয়াস থাকবে। এ আলোচনা যতটা নৈর্ব্যক্তিক, পক্ষপাতহীন এবং বাহুল্য বর্জিত হবে, প্রবন্ধকার ততটা নিরাপদবোধ করবেন। সময়ের প্রেক্ষিতে সংবাদপত্রের সচেতন পাঠক নিশ্চয়ই অবগত আছেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যায়, গোটা বিশ্বেই এখন সংবাদকর্মীদের নানামুখী চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা সঙ্কট মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আমাদের এখানেও তাই।

একটা কথা আমরা সবাই জানি, কোনো কাজের ‘গুড বিগিনিং ইজ হাফ ডান’। একটা প্রশ্ন তুলেই বক্ষ্যমাণ নিবন্ধকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। প্রশ্নটা হলো, আমরা কোনো একটা কাজেরও ‘গুড বিগিনিং’ করতে পেরেছিকি? আমরা কাজের অগ্রাধিকার নির্ধারণে পুরোপুরি সফল হতে পেরেছি কি, কোন কাজ দিয়ে কোন শ্রেণীর মানুষ সুবিধাভোগী হবেন তা কি ভেবে দেখা হয়েছে? দৃষ্টিনন্দন কোনো কাজ নিন্দনীয় নয়; কিন্তু বৃহত্তর মানুষের স্বার্থটা সর্বাগ্রে নাকি নিছক দৃষ্টিনন্দন কাজটি বিবেচনায় প্রাধান্য পাবে! এসব বিষয়ে সবসময় কি সঠিক সিদ্ধান্ত হয়েছে?
এসব প্রশ্ন তোলাও বিপদ, জাতি হিসেবে আমরা অতিকথনে পারদর্শী বটে; কিন্তু সত্যনির্ভর শক্ত কথা আমাদের ‘স্টমাকে’ কোনোকালেই হজম হয় না। আমাদের শরীরের ত্বক এত স্পর্শকাতর যে, তাতে সত্য কথায়ও ফোস্কা পড়ে। নিজের বেলায় অবশ্য আমরা খুব ‘সেনসিটিভ’; কিন্তু অন্যদের হাজারও কটুবাক্যে জর্জরিত করেও আমাদের পিত্তজ্বালা কমে না।

যাক, এখন আমরা বলতে চাই, সঞ্চিত অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার থেকে, যে বিষয়ে নিজেদের আস্থা বিশ্বাস কম। তারপরও তা নিয়ে পুনঃপুন কথা বলি, সোচ্চার হই। নিজের একটা মেকি ভাবমর্যাদা গড়ে তোলার জন্য। এ প্রসঙ্গে প্রথমে বলতে চাই মানুষের বহুবিধ অধিকার নিয়ে। এ ক্ষেত্রে আমরা দেশের সংবিধান এবং প্রচলিত ব্যবস্থা ও বাস্তবে তার অনুশীলন নিয়ে আমাদের বক্তব্য সীমাবদ্ধ রাখব।

আমরা শুরু করতে চাই সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদ থেকে, যেখানে লিখিত রয়েছে ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, সেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।’ সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত বিধিবিধান কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও ‘ম্যান্ডেটরি’ তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাই সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে। সেখানে বর্ণিত রয়েছে, ৭(১) ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতা কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে।’ ৭(২) তে আছে, জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোনো আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে।’ মানুষ সংবিধান প্রদত্ত-অধিকার কতটা ভোগ করতে পেরেছে আর তা থেকে তারা কতটা বঞ্চিত হয়েছে?

এই আলোচনায় প্রাঙ্গিকতার জন্য সংবিধান থেকেই উদ্ধৃত করব। এখানে প্রথমেই বলে রাখতে চাই, আমরা কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা, অকারণে কারো বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশ্যে অভিযোগ তোলায় বিশ্বাসী নই, কারণ সেটি অবশ্যই রুচিকর নয়। কেবল সত্যের খেদমত করাই আমাদের উদ্দেশ্য। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি আমাদের বক্তব্যকে অকারণে তাদের উদ্দেশ করে বলা হয়েছে মনে করেন, সে ক্ষেত্রে আমরা নাচার। একান্তই আজকে সময়ের প্রেক্ষিতেই আমরা কথাগুলো বলতে চাই। পেশাদার কোনো সংবাদকর্মীর পক্ষে কখনোই কোনো ইনস্টিটিউশনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা শুধু হীন মানসিকতার পরিচয় নয়, আবার দেশের ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড নীরবে মেনে নেয়াও কিন্তু দেশমাতৃকার প্রতি অকৃতজ্ঞতার শামিল। আমরা এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে চাই।

আমরা কথা বলব সংবিধানসংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে। প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তার মেয়াদ শেষ হওয়া সাপেক্ষে। আমাদের জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হতে এখনো দেড় বছরের মতো সময় বাকি; কিন্তু এরই মধ্যে সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরগরম আলোচনা শুরু হয়েছে। এ আলোচনায় দু’টি বিষয় নিয়ে কথা চালাচালি চলছে। প্রথম কথা হচ্ছে, কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে এবং ভোট ইভিএমের মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে কি না? এই মুহূর্তে দুই বিষয়ের বিতর্কেরও অবসান হবে তা মনে করা ঠিক হবে না। কোন ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বিষয়টি রাজনৈতিক এবং জটিলও সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার ওপর সেটি নির্ভর করবে।

তবে এটা খুবই স্পষ্ট, একমাত্র ক্ষমতাসীনরা ভিন্ন অন্যসব দল দলীয় বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর যৌক্তিক কারণও অবশ্য আছে। বিগত দুই সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হয়েছে; কিন্তু সেই দুই নির্বাচন নিয়ে বেশুমার অনিয়ম হয়েছে। সংসদের ৩০০ আসনের নির্বাচন নিয়েই অনিয়ম, অভিযোগ আর প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। দুই সংসদ নির্বাচনে অভিনব কিছু ঘটনা ঘটেছে। রকিব-কমিশনের সময় যে সংসদ নির্বাচন হয়েছিল তার রেকর্ড হচ্ছে সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি আসনেই প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষিত হয়েছে। এর কারণ এই ছিল না যে, বিজয়ী প্রার্থীরা এতটা যোগ্যতাসম্পন্ন ছিল যে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রার্থী হতে সাহসী হয়নি; বরং নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ, পরিস্থিতি এতটা কলুষিত ছিল যে, কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এমন প্রহসনমূলক নির্বাচনে অংশ নিতে সম্মত ছিলেন না। হুদা কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের নামে এমন অভ‚তপূর্বভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছিল যা কল্পনাকেও হারায়। গভীর রাতে ক্ষমতাসীনদের কর্মীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মদদে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে রাখে। তাই বলতে ইচ্ছা করে, হায় সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশের নির্বাচন!

ইভিএম নিয়ে যে বিতর্ক তা মূলত আইনগত। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ও তার দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং মন্ত্রীও বটে সম্প্রতি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। বিনয়ের সাথে বলতে চাই, তাদের এমন বক্তব্য আইনবহিভর্‚ত। কেননা ভোট কোন পদ্ধতিতে নেয়া হবে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্ণ এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। তাই সিদ্ধান্ত নেয়া বা মত দেয়া সংবিধান পরিপন্থী। আওয়ামী লীগের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হবে। এ দিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালের ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছিল। পরবর্তী নির্বাচনে ভোট গ্রহণে ইভিএম ব্যবহার অগ্রাধিকার রেখে নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ করছে ক্ষমতাসীন দল।

অপর দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) স্পষ্ট করে বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ ব্যালটে হবে না ইভিএমে হবে, ইভিএমে হলে ক’টি আসনে হবে এসব বিষয়ে কমিশন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। সিইসি বলেছেন, ভোট কোন পদ্ধতিতে নেয়া হবে সেটি আমাদের বিষয়। তবে এই মুহূর্তে কমিশনের পক্ষে ৩০০ আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের সক্ষমতা নেই। তা ছাড়া পত্রপত্রিকার খবরে প্রকাশ, ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ভাবনায় রয়েছে ইসি। নির্বাচন কমিশন সূত্রের বরাতে একটি পত্রিকার (কালের কণ্ঠ) খবরে বলা হয়েছে, সব আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট নিতে হলে প্রায় সাড়ে চার লাখ মেশিনের প্রয়োজন হবে। এখন নির্বাচন কমিশনের হাতে মাত্র দেড় লাখ মেশিন, এতে ব্যয় হতে পারে ছয় হাজার কোটি টাকা।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৪০ হাজার ১৮৩ কেন্দ্রে দুই লাখ সাত হাজার ৩১২ ভোট কক্ষে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হয়। ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সঙ্গতি রেখে মেশিনের সংখ্যা বাড়ে। পত্রিকাটি আরো জানায়, এবার আড়াই লাখের বেশি ভোটকক্ষে ভোট গ্রহণ হতে পারে এবং সব ভোটকক্ষে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে ব্যাক-আপ, প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহারসহ ভোটকক্ষের প্রায় দুই গুণ ইভিএমের প্রয়োজন হবে। পত্রিকাটি ইসি সূত্রের বরাত দিয়ে আরো জানায়, বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজার ইভিএম ঢাকার বাইরে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন নির্বাচন অফিসে রয়েছে। বাকি ইভিএম রয়েছে গাজীপুরে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির গুদামে। মাঠপর্যায়ে নির্বাচন অফিসগুলোতে রাখা ইভিএমগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে না এবং কিছু ইভিএম নষ্ট হওয়ার পথে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইভিএম ব্যবহার সম্পর্কে অভিযোগ ও সন্দেহগুলো হচ্ছেÑ এতে ভোট গ্রহণ ও ভোটের ফলাফল প্রকাশে দেরি হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। এতে ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেইল প্রদত্ত ভোটের কাগজে রেকর্ড হওয়ার ব্যবস্থা না থাকার কারণে ভোটের ফলাফল নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকে।

বিশেষজ্ঞ মহল ও বুদ্ধিজীবী যারা সঠিক কথাটি বলতে সৎসাহস রাখেন, তাদের মতে রাজনৈতিক দলগুলো ও সর্বস্তরের ভোটারের আস্থা অর্জন ছাড়া ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা উচিত হবে না। তাহলে আগামী নির্বাচনও বিতর্কিত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ইসিকে। কেননা সংবিধান বলছে, ১১৮(৪) অনুচ্ছেদে) ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন। নির্বাচনের প্রধান স্টেকহোল্ডার রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ইভিএম প্রসঙ্গ এলেই ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন নিয়ে সোচ্চার হতে দেখা যায়। এ দিকে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, কোথায় আপনারা ডিজিটাল ব্যবস্থা ষোলোআনা কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছেন। যেখানে অধিকাংশ মানুষ যে প্রযুক্তির সম্পর্কে এতটুকু ফ্যামেলিয়ার নয় তবে কেন ইভিএম নিয়ে গো-বেচারা মানুষের কাঁধে এমন ব্যবস্থা চাপানোর জন্য ধস্তাধস্তি শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।

দেশের সব মানুষের পরম অভিপ্রায় ও আকাক্সক্ষা একটা সুষ্ঠু, প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। জনগণ তো ১০ বছরের বেশি সময় ধরে আশায় বুক বেঁধে আছে উল্লিখিত মানের নির্বাচনের জন্য। সেখানে সহজ-সরল পথ ছেড়ে অপেক্ষাকৃত জটিল পদ্ধতি এখনই কায়েম করতে হবে এর তো কোনো কারণ খুঁজে পাই না। স্বার্থান্বেষী মহল কী ভাবছে না ভাবছে, সেটি বিবেচনায় নেয়ার কোনো কারণ ইসির থাকতে পারে না। ‘ফ্রি ফেয়ার ইলেকশনে’ মানুষ যে দল বা ব্যক্তিকে সংসদে পাঠাবে, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর কারো কোনো প্রয়োজন নেই। গণতান্ত্রিক চেতনা উচ্চকিত করতে সাধারণের বোধ বিবেচনার ও মত প্রকাশের মধ্যে, কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই। সবারই এটা বোঝা উচিত মেকি, ছলচাতুরী ও কৌশলের নির্বাচন বহু হয়েছে। আর তাতে গণতন্ত্রের পারদ কেবলই তলানিতে যাচ্ছে।

দেশের মালিক-মোক্তার জনগণ। কাকে দেশ পরিচর্যার দায়িত্ব দেয়া উচিত তা তাদের সুবিবেচনায় রয়েছে। ১৯৭০ সালে তারা তো ভুল করেনি, নিশ্চয়ই এর সাথে কেউ দ্বিমত করবেন না। তাই যদি হয়, তবে আর কিসের ভয়। আর এটাও দয়া করে কেউ ভাববেন না, আমরা শ্রেষ্ঠ, দেশের জন্য আমরাই অপরিহার্য। তা না হলে দেশ রসাতলে যাবে। পৃথিবী থেকে বহু বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ সক্ষম সরকার চলে গেছে, তাতে সেসব দেশ রসাতলে যায়নি। তা ছাড়া বিশ্বাস রাখুন, ভালো কাজের মূল্যায়ন হয়, মানুষ এতটা অকৃতজ্ঞ নয়। আমরা তো দেখেছি দেশে মানুষ অন্তত দু’টি দলকে দু’বার বিজয়ী করে ক্ষমতায় পাঠিয়েছে, সেসব নির্বাচনে অনিয়মের তেমন কোনো অভিযোগ শোনা যায়নি। যারা নির্বাচনে হেরে গেছে তারা তো পরাজয় নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করেনি। আসলে সব কিছুই নির্ভর করে নির্বাচনের ‘মান’ দিয়ে। যদি নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে তবে সব ঠিক। এখন সবাই একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য চেষ্টা করুন, তাহলেই হলো।

লেখা শেষ করতে চাই এ কথা বলে যে, বর্তমান সরকার তাদের বহু সাফল্যের কথা শত মুখে বলে চলেছেন। সে অবস্থায় তো মানুষের আনন্দ স্ফ‚র্তি থাকার কথা। সে আনন্দ স্বস্তি কোথায়! চাল, ডাল, আটা, ময়দা ও ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ-রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কিছুরই অগ্নিমূল্য। বহু বছর তো দেখা যায়নি টিসিবিকে; এখন তো টিসিবির ট্রাকের পেছনে হাজার হাজার নর-নারী হুমড়ি খেয়ে পড়ার চিত্র রাজধানীজুড়ে দেখা যায়- এর ব্যাখা কী!
ndigantababor@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement