২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ধর্ম ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক বনাম সংঘর্ষ

-

ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক কি সম্পূরক নাকি সাংঘর্ষিক, তা অনুধাবনের জন্য পবিত্র আল কুরআনের সূরা ইয়াসিনের দুই নম্বর আয়াতটি পর্যালোচনা করা অবশ্যক। এই আয়াতে কুরআনকে বলা হয়েছে, আল কুরআনিল হাকিম যার অর্থ- শপথ বিজ্ঞানময় কুরআনের। কেউ কেউ অবশ্য হাকিম শব্দের অর্থ বিজ্ঞানময়ের পরিবর্তে জ্ঞানগর্ভ শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে আপনি যদি বিজ্ঞানময় শব্দটি পছন্দ করেন তবে ধরে নিতে হবে যে, কুরআন পড়া-বুঝা কিংবা ব্যাখ্যা করার জন্য বিশেষ জ্ঞান বা Special Knowledge দরকার হবে। কারণ বিজ্ঞান শব্দের অর্থ বিশেষ জ্ঞান এবং বিশেষ জ্ঞান ছাড়া যেমন বিজ্ঞান বোঝা যায় না তদ্রূপ একই প্রাকৃতিক জ্ঞান ছাড়া কুরআন অনুধাবন করা সম্ভব নয়।

আমরা যদি সূরা ইয়াসিনের উল্লিখিত আয়াত পর্যালোচনা করি তবে এক কথায় বলতে পারি যে, ধর্ম বিশেষত কুরআনিক ধর্ম বা ইসলাম ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের কোনো সংঘর্ষ নেই- বরং বিজ্ঞান ও ধর্ম একে অপরের পরিপূরক কিংবা সম্পূরক। পৃথিবীর অন্য প্রধান ধর্মমত যথা খ্রিষ্টবাদ এবং ইহুদিবাদ যাদের ধর্মগ্রন্থকেও বিশ্ববাসী ঐশীগ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়- তাদের ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের সাথে সংঘর্ষ হওয়ার কথা নয়। এই বিষয়ে বিস্তারিত বলতে গেলে নিবন্ধের পরিধি বড় হয়ে যাবে এবং অনেক পাঠকের কাছে তা দুর্বোধ্য মনে হতে পারে বিধায় আজকের শিরোনামে ধর্ম বলতে আমি কেবল ইসলামকে নিয়েই আলোচনা করব এবং বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের অমিয়বাণী, আচার অনুষ্ঠান এবং ঐশীগ্রন্থ কুরআনের কী কী সম্পূরক সম্পর্ক রয়েছে তা আলোচনার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।

বিজ্ঞান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আগে সূরা ইয়াসিনের দুই নম্বর আয়াতটি সম্পর্কে আরো কিছু বলা আবশ্যক। প্রথমত, এই আয়াতের বর্ণনা করতে গিয়ে মহান আল্লাহ কুরআনের মাহাত্ম্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে ‘ওয়া’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এখানে হাকিম অর্থাৎ বিজ্ঞানময় বা জ্ঞানগর্ভ অথবা প্রজ্ঞার আধার যা-ই বলি না কেন, তার গুরুত্ব বুঝানোর জন্য ‘আলের’ পরিবর্তে কেন ‘ওয়া’ ব্যবহার করা হলো! আপনার মনে যদি এই প্রশ্নে উদ্রেক হয় তবে জেনে নিন যে, কুরআনের শপথের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে আল্লাহ তার সব জাত ও সত্তার কসম খেয়েছেন এবং এ জন্যই ওয়া ব্যবহৃত হয়েছে। আর ওয়ার পরিবর্তে যদি আল ব্যবহৃত হতো তাহলে আল্লাহর শপথ কেবল সুনির্দিষ্টভাবে কুরআনকেন্দ্রিক হতো।

আমরা যদি ওয়াকেন্দ্রিক শপথের ভাবার্থ ব্যাখ্যা করতে চাই তবে বলতে পারি যে, এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের যা কিছু বিজ্ঞান, যা কিছু বিস্ময়কর এবং যা কিছু আবিষ্কৃত হয়েছে এবং যা এখনো হয়নি এবং যা কোনো দিন মানুষের কাছে প্রকাশিত হবে না ইত্যাদি সবকিছুর শপথ করে কুরআনের মালিক মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে, এটি বিজ্ঞানময় কিতাব বা জ্ঞানগর্ভ কিতাব। এখন এই কিতাবের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা কী এবং কাদের জন্য প্রযোজ্য তা যদি বুঝতে চান তবে সূরা বাকারার দুই, তিন ও চার নম্বর আয়াত মিলিয়ে পড়তে হবে। আমি এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে এবার বিজ্ঞান বিষয়ে কিছু বলার চেষ্টা করব এবং তারপর বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সম্পর্ক বলার পাশাপাশি কেন সংঘর্ষ হয় সেটি নিয়ে আলোচনা করে আজকের নিবন্ধের ইতি টানব।

বিজ্ঞান নিয়ে কেউ যদি কোনো আলোচনা করতে চান তবে সবার আগে অঙ্ক নিয়ে কথা বলতে হবে। কারণ অঙ্কই হলো পৃথিবীর সব বিজ্ঞানের মা আর অঙ্কের মূল কথা হলো যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ যা-ই করুন না কেন ফলাফল নির্ভুল হওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই হাতেকলমে অঙ্ক শিখতে হবে। অঙ্কের মৌলিক চারটি বিভাগ অর্থাৎ যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ থেকেই মূলত পরবর্তী জটিল গণনা পদ্ধতি বা ক্যালকুলাসের সৃষ্টি, যা দিয়ে মহাকাশ-গ্রহ-নক্ষত্র-সমুদ্রের গভীরতা-পাহাড়ের উচ্চতা ইত্যাদি নির্ভুলভাবে গণনা করা হয়। এই অঙ্কের আরো যেসব শাখা প্রশাখা রয়েছে সেগুলোর মধ্য জ্যামিতি-ত্রিকোণোমিতি অন্যতম যার সাহায্যে ভূমির পরিমাপ এবং বড় বড় অট্টালিকার নকশা তৈরি করা হয়ে থাকে।

গণিতের পর বিজ্ঞানের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তুর নাম পদার্থবিদ্যা বা ফিজিক্স। পৃথিবীর তাবৎ পদার্থের মধ্যে একটি নিউক্লিয়াস রয়েছে এবং নিউক্লিয়াসের মধ্যে ইলেকট্রন- নিউট্রন-প্রোটন তিন ধরনের অণু কিভাবে অনবরত ঘুরছে এবং কিভাবে প্রকৃতিকে অণু ভেঙে পরমাণুতে পরিণত হয় এবং ফিউশনের মাধ্যমে কিভাবে পারমাণবিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ইত্যাদি বিষয়াদি জটিল অঙ্কের মাধ্যমে হিসাব কষে পদার্থবিদরা এ যাবৎকালে নানা সূত্র আবিষ্কার করেছেন এবং পরে আবার সেসব সূত্রের ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানের অপরাপর শাখা যথা রসায়ন বা কেমিস্ট্রি, জুয়োলজি বা প্রাণিবিদ্যা ইত্যাদির সাথে সমন্বয় করে আধুনিক সভ্যতার অনেক জটিল যন্ত্রপাতি-ওষুধপত্র বা কীটনাশক অথবা বিষ বা সিরাম আবিষ্কার করে পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

বিজ্ঞানের উল্লিখিত শাখা-প্রশাখা ছাড়া রাজনীতি-অর্থনীতি-ভূগোল-মনোবিদ্যা-যুক্তিবিদ্যা, দর্শন, সামাজিক বিদ্যা, পারিবারিক বিদ্যা, কৃষি, পানি, বাতাস, মহাকাশ, চিকিৎসা শাস্ত্র, গৃহনির্মাণ, সাজসজ্জা, রঙ করা ইত্যাদি বিষয়াদি নিয়েও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা রয়েছে। অর্থাৎ প্রকৃতি ও পরিবেশের সব মৌলিক উপাদান নিয়ে এক বা একাধিক বৈজ্ঞানিক শাখা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের যে শাখাতেই কাজ করুন না কেন তাকে সবার আগে বিষয়বস্তুর অর্থাৎ যে বিষয় নিয়ে গবেষণা করবেন বা বিজ্ঞানচর্চা করবেন সে বিষয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। এরপর নানা তথ্য-উপাত্তের সমন্বয়ে বিস্তর গবেষণা করে তারা সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তুর ভেতরে লুকায়িত কোনো প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য যা সাধারণ জ্ঞান দ্বারা বুঝা সম্ভব নয় তা বের করে আনেন এবং নিজেদের গবেষণার বিষয়বস্তু প্রকাশ করার তা সাধারণ মানুষের সাধারণ জ্ঞান দ্বারা সহজে বোধগম্য নয়।

কয়েকটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। যেমন ধরুন, বিজ্ঞানী নিউটনের মধ্যাকর্ষণ ও মহাকর্ষণ থিউরির মূলে যে প্লেগ রোগ, আপেল এবং চিন্তা কিভাবে একটি যুগান্তকারী আবিষ্কারের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তা ব্যাখ্যা করার আগে আপনি অবশ্যই স্বীকার করবেন যে, আপেল ও প্লেগ আদিকাল থেকেই ছিল এবং মানুষ সেই সৃষ্টির শুরু থেকেই চিন্তাশীল প্রাণী হিসেবে বিবেচিত ছিল। কিন্তু নিউটন ছাড়া অন্য কেউ কেন এর আগে মধ্যাকর্ষণ শক্তির রহস্য উন্মোচন করতে পারেননি? বিজ্ঞানের এবং বিজ্ঞানীর মধ্যে মহাকালের অপার লীলায় যে রসায়ন ঘটে তা যদি আপনাকে অনুধাবন করতে হয় তবে ইতিহাস অধ্যয়ন, ইতিহাসের পর্যালোচনা এবং ইতিহাস অনুধাবন ছাড়া সেটি অসম্ভব। অথচ ইতিহাসকে কেউ বিজ্ঞান বলে স্বীকার করেন না- অর্থাৎ অবৈজ্ঞানিক ইতিহাসের সাহায্য ছাড়া বিজ্ঞান পূর্ণতা পায় না এবং সেটি যে কতটা নির্মম সত্য তা নিউটনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই বুঝতে পারবেন।

বিজ্ঞানী নিউটন বিশ্ববিখ্যাত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্কের অধ্যাপক। সেবার সারা দুনিয়াতে বর্তমান জমানার করোনার চেয়েও ভয়াবহ বিধ্বংসী মহামারীরূপে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ল। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত সব বন্ধ হয়ে গেল। বিজ্ঞানী নিউটন এই সময় নিঃসঙ্গতা কাটাতে একটি আপেল বাগানে গিয়ে বসে থাকতেন। প্লেগ শুরু হওয়ার আগে তিনি চন্দ্র-সূর্যের দূরত্ব নির্ণয়ের জন্য জটিল অঙ্কের সূত্র রচনা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে যথেষ্ট গবেষণা করেছেন এবং সেই সময়ে তার মনে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছিল কেন চন্দ্র বা সূর্য আকাশ থেকে পৃথিবীর মাটিতে পতিত হয় না। প্লেগের কারণে তিনি বিষণ্ণ ও কর্মহীন ছিলেন। ফলে তার চিন্তার জগৎ অনেকটা বাধাহীন হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় নিজের অতীত অভিজ্ঞতা অর্থাৎ ক্যালকুলাস এবং অতীত চিন্তা অর্থাৎ চন্দ্র সূর্য কেন পতিত হয় না তার সাথে যখন নতুন চিন্তা অর্থাৎ আপেল কেন মাটিতে পড়ে তার সংযোগ ঘটামাত্রই তিনি মধ্যাকর্ষণ শক্তির সূত্র আবিষ্কারের পথে অগ্রসর হতে পেরেছিলেন।

বিজ্ঞানী নিউটনের মতো আমরা যদি পিথাগোরাস, জাবির আল হাইয়ান, আর্কিমিডিস, লিউয়েন হুক, নিউনার্দো দ্য ভিঞ্চি, ইবনে সিনা, আল রাজি, টমাস আলভা এডিসন, আলবার্ট আইনস্টাইন, আলফ্রেড নোবেল প্রমুখ বিজ্ঞানীর দুনিয়া কাঁপানো আবিষ্কার নিয়ে পর্যালোচনা করি তবে দেখতে পাব যে, তাদের পর্যবেক্ষণে প্রকৃতির মৌলিক কোনো বিষয় ধরা পড়েছিল। তারা সেটি নিয়ে চিন্তা করেছিলেন এবং চিন্তার ফলে তাদের মধ্যে একধরনের বিশ্বাস পয়দা হয়েছিল। পরে সেই বিশ্বাসের ওপর ভর করে তারা অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছিলেন এবং সবার শেষে আহরিত তথ্য-উপাত্তের বাস্তব প্রয়োগ করে নতুন কিছু আবিষ্কার করেছিলেন।

বিজ্ঞানের উল্লিখিত সাধারণ নিয়মকানুন ও পদ্ধতি পর্যালোচনা করে আমরা বলতে পারি যে, বিজ্ঞানীর অনুসন্ধিৎসু মন, গভীর ধ্যান এবং বিশ্বাসের সাথে কঠোর পরিশ্রম ও গবেষণার বাস্তব পদক্ষেপ ছাড়া কোনো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্ভব হয়নি। তারা কোনো কালে অবিশ্বাসী ছিল না এবং প্রকৃতির বাইরে গিয়ে বা প্রকৃতির যে মৌলিক উপাদনগুলো রয়েছে সেগুলোর সাহায্য ছাড়া তারা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কথা কল্পনাও করতে পারতেন না। তাদের আরেকটি মহান বৈশিষ্ট্য হলো, তারা তর্ক করেন না, বিবাদ করেন না এমনকি নিজের আবিষ্কৃত বিষয়বস্তুর সত্যতা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য মারামারি কাটাকাটি বা যুদ্ধ বিগ্রহ করেন না।

এবার বিজ্ঞান বাদ দিয়ে ধর্ম নিয়ে কিছু বলি। ধর্মের মৌলিক ভিত্তি হলো বিশ্বাস। ধর্মের প্রবর্তক এবং অনুসারীরা অনেকটা বৈজ্ঞানিক গবেষণার আদলে সমসাময়িক পরিবেশ পরিস্থিতি, বৈসাদৃশ্য এবং অনিয়ম দেখার পর মন ও মস্তিষ্কে নিদারুণভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং এসব সমস্যা সমাধানের উপায় বের করার জন্য নির্জনে ধ্যান আরম্ভ করেন। তারা যখন সফলতা পান এবং নিজেদের ধর্মমতের কথা প্রচার করতে যান তখন তাদের অবস্থা হয় গ্যালিলিও, ক্যালভিন, নিকোলাই টেসলা প্রমুখ বিজ্ঞানীর মতো। অনেক ধর্মপ্রচারক তাদের উদ্ভাবিত বিশ্বাস বা ধর্ম যা তারা অর্জন করেন অনেকটা বৈজ্ঞানিক পন্থায় তা প্রচার করতে গিয়ে প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দেন।

বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যেমন দুটো মৌলিক বিষয় রয়েছে যথা- সূত্র এবং সূত্রের ফলাফল বা আবিষ্কার। একইভাবে ধর্মের ক্ষেত্রেও সূত্র হিসেবে রয়েছে কতগুলো আদেশ নিষেধ এবং বিধিমালা। মানুষ যখন এগুলোকে অর্থাৎ ধর্মীয় সূত্রগুলোকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে তখনই তা হয়ে ওঠে ধর্মাচরণ। যেমন ইসলামের প্রধানতম মৌলিক ধর্মাচরণ যথা বিশ্বাস, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত নিয়ে পৃথিবীর কোনো বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানী আজ পর্যন্ত প্রশ্ন তুলতে পারেননি। বরং ইসলামের বিশ্বাসকে মূল থিম করে আধুনিক বিজ্ঞান মানবের মনন মননশীলতা ও চিন্তার সক্ষমতা লাভের জন্য হাজার হাজার সূত্র আবিষ্কার করেছে। সুস্থ থাকা রোগ থেকে নিরাময় লাভ অথবা সফলতা অর্জনের জন্য বিশ্বাস সে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আধুনিক বিজ্ঞান অঙ্ক কষে এবং হাতেকলমে বুঝিয়ে দিয়েছে।

অন্য দিকে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের সাথে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিজ্ঞানের যে কত বড় নিবিড় সম্পৃক্ততা রয়েছে তা ধর্মানুসারীদের চেয়ে নিশ্চয়ই বিজ্ঞানীরা ভালো জানেন। আর এই পৃথিবীতে চিন্তাশীল এবং জ্ঞানী মানুষ হিসেবে বিজ্ঞানীদের মানসম্মান ও মর্যাদা যে কত ঊর্ধ্বস্তরের তা উত্তম বিজ্ঞানীদের তুলনায় উত্তম ধার্মিক ভালো করে জানেন। ধর্মচর্চা ও বিজ্ঞানচর্চার মধ্যে কেবল উপকরণগত পার্থক্য ছাড়া কোনো মৌলিক, পার্থক্য নেই। ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে মানুষ সেই সত্তাকে খুঁজে বেড়ায় যে তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে এবং তার জন্য সাহায্যকারী সব উপকরণ প্রকৃতি ও পরিবেশে সন্নিবেশিত করে রেখেছে। অন্য দিকে বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে বিজ্ঞানী এ কথাই প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, সৃষ্টিকুলের কোনো কিছুই অনর্থক নয়- সবকিছুরই প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং বস্তুর মধ্যে লুকায়িত থাকা উপযোগিতাকে খুঁজে বের করার জন্যই বিজ্ঞানী আজীবন চেষ্টা করে থাকেন, যার সাথে পবিত্র কুরআনের সূরা আল ইমরানের ১৯০ এবং ১৯১ নম্বর আয়াতের হুবহু মিল খুঁজে পাবেন। যেখানে বলা হয়েছে :

নিশ্চয়ই আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের পার্থক্যে নিশ্চিত নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য (১৯০)। তারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায় আর আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে চিন্তা করে; আর বলে, হে আমাদের রব। এসব আপনি অনর্থক সৃষ্টি করেননি; পবিত্রতা আপনার, আমাদেরকে অগ্নির শাস্তি থেকে বাঁচান (১৯১)।

ধর্ম ও বিজ্ঞানের উল্লিখিত সম্পর্কের বাইরে আমি কার্যত এবং ন্যায়ত কোনো সংঘর্ষ দেখতে পাইনি। যারা সংঘর্ষ খুঁজে বেড়ান কেবল তারাই এই দু’টি বিষয়ের সংঘর্ষ নিয়ে নিবন্ধ লিখতে পারেন।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য


আরো সংবাদ



premium cement