২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আলোকিত মানুষের সন্ধানে

আলোকিত মানুষের সন্ধানে - প্রতীকী ছবি

ইসলামের সূদরপ্রসারী লক্ষ্য- ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অন্যায়, অত্যাচার বর্জিত সবধরনের মানুষের মিলনমেলায় একটি আলোকিত সমাজ গঠন। দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত সমাজ জীবনের চেষ্টার মাস রমজানুল মোবারক। সত্য-মিথ্যার বিভাজনের মাস রমজান। আল্লাহ নিজেই এ ব্যাপারে বলেছেন, আলোকিত মানুষ তৈরির উদ্দেশ্যে রমজান মাস। আলোকিত মানুষ বলতে বুঝানো হয়েছে বিশ্বাসীদের, যারা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না। মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেয় না। বিনয় এবং সদাচরণ যাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য; সুবিচার এবং ইনসাফ যাদের ভূষণ। এ ধরনের মানুষকে আলোকিত মানুষ বলা হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে এ ধরনের ব্যক্তিত্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে অসে মাহে রমজান।

ব্যবসায়ীরাও ব্যতিক্রম নন। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে- যারা ভেজাল দেন না, যারা ক্রেতাকে প্রতারণা করেন না, যারা খারাপ জিনিস ভালো জিনিসের সাথে মিশিয়ে অধিক মুনাফার আশায় ক্রেতাদের ঠকান না, অতিরিক্ত মুনাফার জন্যে মজুদদারি করেন না, বাজারে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করেন না- তারাই আলোকিত ব্যবসায়ী। ব্যবসায় সততা অবলম্বনের ব্যাপারে নবী করিম সা:-এর উক্তি এ ব্যাপারে স্মরণ করা যেতে পারে। ‘সৎ ব্যবসায়ী শেষ বিচারের দিন মুমিন এবং শহীদদের সাথে আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে।’

অসৎ ব্যক্তি ছাড়া কেউ মজুদ করে না। অথবা মজুদের ব্যাপারে সাবধান নতুবা আল্লাহ তোমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন এবং যারা প্রতারণা করে তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। বাজারে পণ্য সরবরাহ অবিচ্ছিন্ন রেখে ন্যায্যমূল্যে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে। কম লাভে পণ্য বিক্রি করাকে তিনি সাদকার সাথে তুলনা করেছেন। হাদিসগুলো স্মরণ করা যেতে পারে।

আলোকিত মানুষ মানেই একজন নিঃস্বার্থ মানুষ। তারা দেশ সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোকিত করেন। ভবিষ্যৎ সমাজে আলোর বীজ রোপণ করে ভালো মানুষ তৈরি করেন। মানুষকে মানবিক মূল্যবোধ শেখান ও অবচেতন মনকে চেতনা জোগান। সমাজকে পরিচালিত করেন আলোর পথে। শিক্ষকদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, যারা শিক্ষার্থীদের ন্যায়, সুবিচার, চরিত্র গঠন ও মানুষের অধিকারের ব্যাপারে শিক্ষা দেন তারাই হচ্ছেন আলোকিত শিক্ষক। যেসব বিচারক কখনো চাপ কিংবা অন্যায়ের সাথে আপস করেন না, নিজের চাকরি কিংবা জীবনের জন্য হলেও ন্যায়বিচারের রায় সবার ক্ষেত্রেই সমুন্নত রাখেন; তাদের আলোকিত বিচারক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

সমাজকর্মী এবং নেতাদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যারা জনগণকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন না, যারা ক্ষমতার জন্য জনগণের ওপরে অত্যাচারের স্টিমরোলার চালান না, যারা নিজেদের সুবিধার্থে সমাজে বিশৃঙ্খলা ঘটান না, যারা আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখেন তারাই হলেন আলোকিত মানুষ ও সমাজকর্মী। অনুরূপভাবে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিরতদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যারা কোনোক্রমেই ফাইল আটকে রেখে, উৎকোচ গ্রহণ করেন না, অযথা কাউকে উৎকোচের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন না; এসব মানুষই হলেন আলোকিত মানুষ।

আলোকিত মানুষ হলেন বিশ্বাসী। তারা জীবনের সব ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলেন। আল্লাহর দেয়া বিধান পালন করতে পিছপা হন না, ভালো এবং মন্দের ব্যাপারে আল্লাহর বিধান অনুসরণ করেন। ধর্ম-বর্ণ ও সামাজিক মর্যাদাকে প্রাধান্য দেন না। ক্ষমতার অপব্যবহার করেন না, ইনসাফ ও সুবিচার করাই তাদের ভূষণ। তারা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করেন। পৃথিবীতে কারো সন্তুষ্টির জন্য কাজ করেন না। তারাই আলোকিত মানুষ। আমরা প্রায়ই আলোকিত মানুষে কথা শুনি।

আলোকিত মানুষের সন্ধানের কথা শুনি। বিভিন্ন গুণীজন বলছেন আমাদের এখন দরকার আলোকিত মানুষের কিন্তু এই আলোকিত মানুষ কিভাবে তৈরি হয়? এই আলোকিত মানুষ তৈরি হওয়ার উপায় কী? এ ব্যাপারে বেশির ভাগই নিশ্চুপ। সমাজের বর্তমান ক্ষয়িষ্ণু আস্থার পরিবর্তনে এ ধরনের ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন- এ কথা সবাই বলেন।
আল্লাহ বিশ্বাসীদের জন্য সুযোগটা করে দিয়েছেন। তারা যেন নিজেদের বিশ্বাস আরো উন্নত, দৃঢ় করার মাধ্যমে আত্মগঠন করতে পারেন এ জন্য রোজা বা সিয়াম। মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক সুবিচারের পরিস্ফুটন ঘটানোর জন্যই রমজান মাস। রোজার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে পোড়ানো। বিশ্বাসীরা নিজেদের বিশ্বাস, কর্ম, চিন্তা ও চেতনাকে পুড়িয়ে খাঁটি মানুষ তথা আলোকিত মানুষ হবেন এমনটিই রোজার মুখ্য উদ্দেশ্য। অসংযমী হওয়া রোজার উদ্দেশ্য নয়!
অথচ আমরা ইফতারের নামে, ঈদের নামে সংযম হারিয়ে ফেলি। রোজার শিক্ষা ছুড়ে ফেলে বিজাতীয় সংস্কৃতি লালন করি। অথচ নিজেদের সংযমের ভেতরে রেখে, অন্যের দুঃখ, ব্যথা ও বেদনা অনুভব করার মধ্য দিয়ে একটি ভারসাম্যমূলক সমাজ গঠনের চেতনার নামই রোজা। এ চেতনায় যারা নিজেদের শামিল করেছেন তারাই হচ্ছেন আলোকিত মানুষ। তারাই দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত রাখার প্রয়াসে সবধরনের অন্যায়, অবিচার ও জুলুমকে চিরতরে বন্ধ করে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন সব মানুষের অধিকার। রোজার এ শিক্ষাই হোক আমাদের চলার পাথেয়। আসুন আমরা সবাই আলোকিত মাসে আলোকিত হওয়ার মহাসড়কে শামিল হই।
লেখক : অধ্যাপক ও চক্ষুরোগ রিশেষজ্ঞ

Email- shah.b.islam@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement