৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ৩০ রজব ১৪৪৬
`

পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা

- ছবি : নয়া দিগন্ত

হঠাৎ করেই পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন মোড় নিয়েছে। একই সাথে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কয়েকটি দেশেও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে শুরু করেছে। আগে থেকে এই প্রবণতা শুরু হলেও ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর এর মাত্রা প্রবল হতে শুরু করে। জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের প্রথম দফা ভোটে দক্ষিণ এশিয়ায় নেপাল ভুটান ছাড়া কেউই রুশ আগ্রাসনের নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়নি। দ্বিতীয় দফা ভোটাভুটিতে প্রস্তাবের পক্ষে বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যারা ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের বিপক্ষে ভোট দেয়নি তাদের মধ্যে ভারত ছাড়া বাকি সব কটি দেশ চীনা প্রভাবের কারণেই এই অবস্থান নিয়েছে বলে মনে হয়। আর রাশিয়ার সাথে ভারতের সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্কের বন্ধন এতটাই দৃঢ়ভাবে যুক্ত যে চীনের সাথে সীমান্ত সঙ্ঘাত সত্ত্বেও বেইজিংয়ের একই সারিতে থেকে রাশিয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে দিল্লি।

পাকিস্তান রুশ সামরিক আগ্রাসনে প্রকাশ্য সমর্থন না দিলেও ইউক্রেনে রুশ সেনা অভিযান শুরুর দিনই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মস্কো সফরে যান। এই সফর পূর্বনির্ধারিত হলেও ওইদিন পুতিনের সাথে সাক্ষাৎ দেশটির নেতৃত্বের জন্য নেতিবাচক ভাবমর্যাদা তৈরি করে। ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে ইমরান খান সফর সংক্ষিপ্ত করে ইসলামাবাদ ফিরে আসেন। কিন্তু ইমরান পশ্চিমাদের প্রতিপক্ষ শিবিরে সরাসরি নিজেকে যুক্ত করে ফেলেন।

এরপর জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধের প্রস্তাব সমর্থনের অনুরোধেও সাড়া দেয়নি পাকিস্তান। পাকিস্তান ভোট দানে বিরত থাকে। দ্বিতীয় দফা ভোটাভুটিতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত গণতন্ত্র সম্মেলনে দাওয়াত পেয়েও তাতে অংশ নেয়নি ইমরান খানের সরকার। যে মাত্রাতেই হোক না কেন বর্তমান অবস্থার সাথে এর যোগসূত্র রয়েছে।

পররাষ্ট্র সম্পর্কের টানাপড়েনে পাকিস্তান
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকেই ছিল চীনের অন্যতম প্রধান কৌশলগত মিত্র। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধকালে আমেরিকান বলয়ে ছিল ইসলামাবাদ। নব্বইয়ের দশকে এক মেরুর বিশ্বব্যবস্থার সূচনা হলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক গঠনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। আর জুনিয়র জর্জ বুশের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে পাকিস্তানের পারভেজ মোশাররফের সরকার আমেরিকাকে সব ধরনের সহযোগিতা করলেও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগী হিসেবে ভারতকে প্রতিষ্ঠিত করে। আফগান সামরিক বাহিনী গোয়েন্দা পরিষেবাসহ নিরাপত্তা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এক প্রকার ভারতের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অন্তর্ঘাতী কাজে ভারত মার্কিন সমর্থিত আফগান সরকারের সংশ্লিষ্টতা তৈরি হয়, আর যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে স্থান পায় পাকিস্তান।

এসব কারণে পাকিস্তানের মার্কিনবিরোধী মনোভাব ডিপ স্টেটের গভীরে প্রোথিত হয়। আর দেশটির দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতে ইমরান খান গভীর ক্ষমতা বলয়ের সমর্থন পেয়ে তিন বছর আগে পাকিস্তানে সরকার গঠন করেন। কিন্তু পাকিস্তানের বিভক্ত রাজনৈতিক বাস্তবতায় তিনি নিজেকে পুরোপুরি রাজনীতির নিয়ন্ত্রক অবস্থানে নিতে পারেননি। তিনি যতই প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন ততই তার বিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তি বিশেষত মুসলিম লিগ নওয়াজ ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি কাছাকাছি চলে আসে। এর সাথে থাকে মওলানা ফজলুর রহমানের দল।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও এর নেপথ্যে
পাকিস্তানের সরকার সর্বাত্মকভাবে চীন-রুশ অক্ষে চলে যাওয়ার ধারণা তৈরির পর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পশ্চিমা শক্তি ইসলামাবাদে সরকার পরিবর্তনের কলকাঠি নাড়তে শুরু করে। তাদের নেপথ্য সমর্থন বিভক্ত বিরোধী দলকে এক সারিতে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ইমরান খান তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার এই আয়োজন সম্পর্কে জানতে পারেন। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্রের যে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান সেটিকে সঠিকভাবে রক্ষা করতে পারেননি তিনি। এর ফলে এক এক করে পাকিস্তানের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক স্থানগুলো তার হাতছাড়া হতে থাকে। পশ্চিমা অর্থনৈতিক বিধিনিষেধের ঝুঁকিতে পড়ে পাকিস্তান। দেশটির সামরিক এস্টাবলিসমেন্টের পক্ষেও ইমরান সরকারকে টিকাতে ভূমিকা রাখার মতো বাস্তব অবস্থা থাকেনি।

ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ওঠার পর অস্থিরতা আরো বেড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব অবৈধ ঘোষণার পর ইমরানের পরামর্শে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। সংসদ ভেঙে দেয়ার পর পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র অনুসারে তত্ত¡াবধায়ক সরকার নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবে। এই সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত ইমরান ১৫ দিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের যে প্রক্রিয়া তাতে সরকারি দল ও বিরোধী দলকে একমত হয়ে তত্ত¡াবধায়ক প্রধানমন্ত্রী ঠিক করতে হবে। সেটি ব্যর্থ হলে পর্যায়ক্রমে সেটি চূড়ান্ত করার দায়িত্ব অর্পিত হবে সংসদের স্থায়ী কমিটি, নির্বাচন কমিশন ও সুপ্রিম কোর্টের ওপর। সংসদ ভেঙে দেয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যেই নতুন নির্বাচন হতে হবে।

সংসদ ভেঙে দেয়ার পদক্ষেপ চ্যালেঞ্জ করে বিরোধী নেতারা এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এ সংক্রান্ত স্বতঃপ্রণোদিত নোটিশ ও রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সের শুনানির জন্য পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করেছেন। এর মধ্যে শুনানি শুরু হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ সংবিধানের ৬৩(অ) অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা চেয়ে রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সের শুনানি করবে। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ বিবেচনা করে জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকারের তা খারিজ করাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সাংবিধানিক সঙ্কটের বিষয়ে প্রধান বিচারপতির নেয়া স্বতঃপ্রণোদিত নোটিশের ওপরও শুনানি হচ্ছে।

আদালতের প্রথম দিনের শুনানি অনুসরণ করলে শুনানির তিনটি সম্ভাব্য ফলাফল আসতে পারে বলে মনে হয়। প্রথমত, বিরোধী নেতাদের আশা অনুযায়ী, আদালত দ্রুত ইমরান খানের সিদ্ধান্ত বাতিল করবেন এবং অনাস্থা ভোটের আদেশ দেবেন। একই সাথে আদেশ দেয়া হতে পারে অবিলম্বে সংসদের কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্য। দ্বিতীয়ত, আদালত একটি মধ্যম স্থল বেছে নিতে পারে, এতে আদালত শাসক দলের পদক্ষেপ অসাংবিধানিক ছিল বলে ঘোষণা করবে কিন্তু বিলুপ্ত ঘোষিত সংসদ পুনরুদ্ধার করা বা অনাস্থা ভোটের অনুমতি দেয়ার আদেশ দেয়া হবে না। তৃতীয় সম্ভাবনা হলো, আদালত সংসদীয় কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার করতে পারে, যা কার্যকরভাবে ইমরান খানের পদক্ষেপকে সমর্থন করবে এবং ৯০ দিনের মধ্যে আগাম নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করবে।

নেপালের মতো সংসদ বিলুপ্তিকে অবৈধ ঘোষণা করে সংসদ পুনর্বহাল ও অনাস্থা কার্যক্রম চালুর রায় দিলে বিরোধী জোট সরকার গঠন করতে পারবে। এতে পাকিস্তানের রাজনীতি আমূল পাল্টে যাবে। পাকিস্তানের গভীর ক্ষমতা বলয় এটি চায় বলে মনে হয় না। সেটি হলে ইমরান খান ও তার দলের ওপর প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপও চলতে পারে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দিয়ে ইমরানকে জেলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল বিরোধী দলগুলো। বিরোধী নেতাদের মধ্যে কে প্রধানমন্ত্রী কে প্রেসিডেন্ট আর কে স্পিকার হবেন সেসব বিষয়ও নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছিল।

সামরিক প্রতিষ্ঠান কী চায়?
সংসদে সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রস্তাব পাঠিয়েছেন এবং জাতিকে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা উচিত। তিনি উল্লেখ করেন, ২৭ রমজানে পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এবং এ জাতি কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে, গণতন্ত্রীরা জনগণের কাছে যায়, নির্বাচন হয় এবং জনগণ সিদ্ধান্ত নেয় তারা কাকে শাসক করতে চায়।

এত সব ঘটনার পর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল বাবর ইফতেখার বলেছেন, যা হয়েছে তার সাথে সেনাবাহিনীর কোনো সম্পর্ক নেই। এই প্রথম সামরিক নেতারা এত খোলাখুলি বলেছেন যে তারা ইমরান খানের পদে থাকার দাবি সমর্থন করেননি। কারো কারো মতে, রাজনৈতিক সঙ্কট চলতে থাকলে তা সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে।

এর আগে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার দেশের একটি ‘চমৎকার’ সম্পর্ক রয়েছে এবং চীনের সাথে একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষতি না করে তা প্রসারিত করতে চায় তার দেশ। এই বক্তৃতায়, জেনারেল বাজওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্ঘাতে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নিরপেক্ষতার অবস্থান থেকে সরে যান। ‘রাশিয়ার বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগ’ স্বীকার করার পরও তিনি জোর দেন যে, একটি ছোট দেশের বিরুদ্ধে মস্কোর আগ্রাসন ক্ষমা করা যায় না।

বিদেশী ষড়যন্ত্র ও এর প্রভাব
ইমরান খান তার দল থেকে একাধিক এমপির পক্ষত্যাগের পর তার সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর মুখে পড়লে বারবার দাবি করেন যে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পদক্ষেপের পেছনে একটি ‘বিদেশী-সমর্থিত ষড়যন্ত্র’ ছিল। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিদেশী অর্থ লোকদের কেনার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

বলা হচ্ছে, ইমরান খান পদত্যাগ ও অনাস্থার মুখোমুখি হওয়া আর নতুন নির্বাচন দেয়া- এই তিন বিকল্পের মধ্যে শেষটি বেছে নিয়েছেন। কিছুদিন আগ পর্যন্ত বিরোধী দলগুলো পাকিস্তানে নতুন নির্বাচন দাবি করে আসছিল। সে বিষয়ে ইমরান একমত হওয়ার পরও বিরোধী জোট আর তাতে সম্মত না হয়ে সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সংসদ ভেঙে দেয়ার পর এখন সবকিছু উলটপালট হয়ে যায়।

সামরিক এস্টাবলিসমেন্টের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর জন্য কিছু করা কঠিন। সামরিক প্রতিষ্ঠান পাকিস্তানে সম্ভবত স্থিতি ফেরাতে চায়। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ দানের কথা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সেটি না হলে তা হতে পারে নতুন নির্বাচিত সরকারের সময়। নতুন সেনাপ্রধান কে হবেন তার ওপর পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ কিছুটা প্রভাবিত হতে পারে।

তবে পাশ্চাত্যের সাথে রাশিয়ার বর্তমানে যে সঙ্ঘাত সৃষ্টি হয়েছে তা ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ হলেও আরো অনেক দূর যেতে পারে। চীন ও রাশিয়া বিকল্প অর্থনৈতিক ও বিশ্বব্যবস্থার দিকে এগোতে চাইছে। এ ক্ষেত্রে ভারত পশ্চিমা বলয়ের সাথে না থাকলে পাকিস্তানকে কাছাকাছি রাখার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বিশেষভাবে সক্রিয় হতে পারে।

পররাষ্ট্র সম্পর্কে প্রভাব
নতুন পরিস্থিতি ইসলামাবাদে বিশাল এক অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে। ২২ কোটির বেশি লোকের পারমাণবিক সমৃদ্ধ দেশটি পশ্চিমে আফগানিস্তান, উত্তর-পূর্বে চীন এবং পূর্বে পারমাণবিক প্রতিদ্ব›দ্বী ভারতের মধ্যে অবস্থিত, যা এটিকে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
আফগানিস্তান: পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এবং ইসলামপন্থী তালেবানের মধ্যে সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিথিল হয়েছে। এখন তালেবানরা আবার ক্ষমতায় এসেছে এবং আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার কারণে অর্থনৈতিক ও মানবিক সঙ্কটের সম্মুখীন। কাতার এখন যুক্তিযুক্তভাবে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিদেশী অংশীদার।

সেন্টার ফর এ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি থিঙ্কের ইন্দো-প্যাসিফিক সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক লিসা কার্টিস-ট্যাংক বলেছেন, ‘তালেবানের বাহক হিসেবে আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) পাকিস্তানের প্রয়োজন নেই। কাতার এখন অবশ্যই সেই ভূমিকা পালন করছে।’
পাকিস্তান চায় তালেবানরা চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো দমন করার জন্য আরো কিছু করুক এবং তারা এই গোষ্ঠীগুলো পাকিস্তানে সহিংসতা ছড়াবে বলে আশঙ্কা করছে।

চীন: ইমরান খান ধারাবাহিকভাবে পাকিস্তান এবং বিশ্বে চীনের ইতিবাচক ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছেন। ৬০ বিলিয়ন ডলারের চায়না-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের দু’টি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের অধীনে চালু করা হয়েছিল, উভয়ই খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে চায়। আর ইমরান খানকে উৎখাতের জন্য পশ্চিমাদের প্রধান যুক্তি হলো তিনি অতি বেশি চীননির্ভর হয়ে পড়েছেন।

বিরোধীদলীয় নেতা শেহবাজ শরিফ পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাব প্রদেশের নেতা হিসেবে সরাসরি চীনের সাথে চুক্তি করেন এবং বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্পগুলো নিজ প্রদেশে নেয়ার জন্য তার খ্যাতি রয়েছে। ফলে সরকার পরিবর্তন হলেও বেইজিংয়ের সাথে ইসলামাবাদের সম্পর্কে তার প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। তিনি অবশ্য বলেছেন, ভিক্ষুকের পররাষ্ট্র সম্পর্কে পছন্দ অপছন্দ থাকা উচিত নয়।

ভারত : পাকিস্তান ভারতের সাথে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে তিনটি যুদ্ধ করেছে, যার মধ্যে দু’টি কাশ্মিরের বিতর্কিত মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে। আফগানিস্তানের মতোই, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সংবেদনশীল এই এলাকায় নীতি নিয়ন্ত্রণ করে। ২০২১ সাল থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার সীমান্তে উত্তেজনা সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে। তবে ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর হামলার জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চরম সমালোচনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গভীর অবিশ্বাসের কারণে প্রতিদ্ব›দ্বীদের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে কোনো আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক আলোচনা হয়নি।

ভারতীয় রাজনৈতিক ভাষ্যকার করণ থাপা বলেছেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী কাশ্মিরে সফল যুদ্ধবিরতি গড়ে তোলার জন্য ইসলামাবাদে একটি নতুন বেসামরিক সরকারের ওপর চাপ দিতে পারে। শনিবার, পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া বলেছেন, ভারত রাজি হলে তার দেশ কাশ্মির নিয়ে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত।

শরিফ পরিবারের বছরের পর বছর ধরে ভারতের প্রতি বেশ এক ধরনের দ্বৈতবাদী পদক্ষেপ রয়েছে। মোদি ও শরিফকে এর আগে একে অন্যের ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানেও যোগ দিতে দেখা গেছে। এটি শরিফ পরিবারের প্রতি ভারতের ব্যাপারে নানা অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে পাকিস্তানে।
যুক্তরাষ্ট্র : এবারের রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে ইমরান খান বেশি দায়ী করেছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পাকিস্তানের রাজনৈতিক সঙ্কট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অগ্রাধিকার হওয়ার সম্ভাবনা কম, যদি না এটি ভারতের সাথে ব্যাপক অস্থিরতা বা ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার দিকে পরিচালিত করে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে দায়িত্ব পালনকারী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র পরিচালক ড. কার্টিস বলেছেন, ‘যেহেতু সামরিক বাহিনী সেই নীতিগুলির ওপর দৃষ্টি রাখে যেগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সত্যই চিন্তার কারণ হয়, যেমন আফগানিস্তান, ভারত এবং পারমাণবিক অস্ত্র। ফলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঘটনাবলি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক।’

তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘ইমরান খানের মস্কো সফর মার্কিন সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে একটি ‘বিপর্যয়’ ছিল এবং ইসলামাবাদে একটি নতুন সরকার অন্তত ‘কিছু মাত্রায়’ সম্পর্ক সংশোধন করতে সহায়তা করতে পারে।’

ইমরান খান বলেছেন, সাম্প্রতিক মস্কো সফরের কারণে ওয়াশিংটন তাকে অপসারণ করতে চেয়েছিল। তিনি ‘হুমকির চিঠি’ পাঠানো মার্কিন কর্মকর্তার নামও প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান যে, দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি অব স্টেট ডোনাল্ড লু থেকে হুমকিমূলক বার্তা পাওয়া গেছে। বর্তমানে ভারত সফরকারী ডোনাল্ড লু হিন্দুস্তান টাইমসের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে, ‘হুমকিপূর্ণ বার্তা’ বিতর্ক সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকার করেছেন।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং হোয়াইট হাউজ একসাথে ইমরান খানের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে, হোয়াইট হাউজের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর কেট বেডিংফিল্ড ইমরান খানের অভিযোগ স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেন।

পাকিস্তানে সংসদ ভেঙে দেয়ার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন পেলে সম্ভাব্য নির্বাচনে ইমরান খানের ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে। এক জরিপে বলা হয়েছে, বর্তমানে ৫৪ ভাগ পাকিস্তানি ইমরান খানকে সমর্থন করেন। বিরোধী জোট ক্ষমতায় এসে কিছুদিন পরে এই নির্বাচন আয়োজন করা হলে তখন পরিস্থিতি পরিবর্তিতও হতে পারে। ভারতের রাশিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ায় পাকিস্তানের গুরুত্ব পশ্চিমা বলয়ে কিছুটা বেড়েছে। সেনাপ্রধানের ইউক্রেন আগ্রাসনের ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য সে সম্পর্ক আরো বাড়াতে পারে। তবে দেশটির গভীর ক্ষমতা বলয় ইমরান খানকে আবার ক্ষমতায় ফেরাতে চায় কি না সেটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ চাপ থাকবে বলে মনে হয়।

[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
ইসলাম ব্যাতিত সামাজিক সুবিচার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত সম্ভব নয় : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান চাঁদপুরে পিকআপভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেল-আরোহী নিহত শনিবার সুনামগঞ্জে কর্মী সম্মেলনে যোগ দিবেন জামায়াত আমির ৮৯ শতাংশ ইসরাইলিই মনে করে, গাজায় তারা ব্যর্থ : জরিপ ময়মনসিংহে মোটরসাইকেল উল্টে দুই তরুণের প্রাণহানি সিলেটে দুই বাসের সংঘর্ষ, আহত ২০ রংপুরে পাঁচ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন রুখতে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে : ড. আবদুল কাদের মেক্সিকোর সাথে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বারোপ আনসারীর মার্কিন বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের দু’জন চীনের নাগরিক ইজতেমা ময়দানে দেশের সর্ববৃহৎ জুমার জামাত অনুষ্ঠিত

সকল