ব্যবসায়ীদের কাছে প্রত্যাশা
- অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম
- ০৩ এপ্রিল ২০২২, ১৯:০২
দেখতে দেখতে এসে গেল রোজার মাস। সংযম, তিতিক্ষার ভেতর দিয়ে নিজেদের পরিশুদ্ধ করার মাস। সমাজের অসহায় দরিদ্রদের দুঃখ, ব্যথা, কষ্ট অনুধাবন করার মাস। তাদের দুঃখ কষ্ট বেদনাকে ভাগাভাগি করে এক অনন্য সমাজ সৃষ্টির সুযোগ। মুসলিম বিশ্বে সর্বত্র এই মাস ছড়িয়ে দিয়ে যায় অনাবিল ভ্রাতৃত্ব আর সহমর্মিতার সুবাতাস। এ মাসের সব কর্মকাণ্ড এক দিকে মহিমান্বিত হয়ে ওঠে, অপর দিকে এর বিপরীত দিকটাও মাঝে মধ্যে প্রকট হয়ে ওঠে। বছরজুড়ে ভেজাল পণ্যের রমরমা বাণিজ্য চললেও রোজার মাসে এ তৎপরতা বহুগুণ বেড়ে যায়। রোজা এলেই নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। মানহীন এবং ভেজাল পণ্যের বিক্রয় মেলার হাট যেন বসে সারা দেশে।
ইফতারির শরবত থেকে শুরু করে সাহরির দুধ-কলা কিছুই মিলছে না ভেজালমুক্ত। বিশেষ করে ইফতারির ফল-ফলাদি, আপেল, কমলা, আঙুর, খেজুর, বেদানা, নাশপাতি, পাকা পেঁপে, আনারস ও তরমুজে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন, কার্বাইড ও রাইপেন নামে বিষাক্ত কেমিক্যাল। রোজার সময় এলে পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশে পণ্যমূল্যের ছাড়ের হিড়িক পড়ে। এমনকি, অনেক অমুসলিম দেশেও এর প্রচলন দেখা যায়। অথচ বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী রোজার মাসকে টার্গেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। সঙ্কট না থাকলেও সঙ্কট তৈরি করে। পণ্যের দাম বাড়িয়ে জনজীবন বিষিয়ে তোলে। রোজার মাসকে ‘সর্বোচ্চ মুনাফার মুখ্য সময়’ হিসেবে বেছে নেয়। তাদের কাছে মানুষ, মানবতা, সহমর্মিতা কেবলই কতগুলো ঠুনকো শব্দ মাত্র। তাদের অপ্রতিরোধ্য দাপটের কাছে মাথা ঠুকে মরে অসহায় ক্রেতাসাধারণ। অথচ ক্রেতারা এ দেশেরই মানুষ। আমরা সবাই একই সমাজের একই আলো-হাওয়ায় বেড়ে উঠেছি। একই সংবেদনশীলতা আমাদের শরীরের প্রতিটি শিরা-উপশিরায়।
রোজার মাস সংযমের মাস। এই সংযম ব্যবসার ক্ষেত্রেও সমানভাবে পরিব্যাপ্ত। এই বরকতময় মাসে ব্যবসায়ীদের ইহ ও পরকালীন মুক্তি ও কল্যাণ অর্জনের সম্ভাবনা যতটা রয়েছে, অন্যদের ততটা নেই। ব্যবসায়ীরা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করবেন বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। তারা যদি এটা করতে পারেন, তাহলে তারা শ্রেষ্ঠ উপার্জন ও পরকালীন কল্যাণের অংশীদার হবেন। অনুরূপভাবে সাধারণ মানুষও উপকৃত হবে। রোজার কল্যাণময়তা ছড়িয়ে যাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি কোনায়। বস্তুত অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের বিকল্প নেই। এই বাস্তবতাকে স্বীকার করে ইসলামে ব্যবসায়কে অনুমোদন দেয়া হয়েছে; নীতিমালার রূপরেখা দেয়া হয়েছে। সততা এ ক্ষেত্রে প্রধান মাপকাঠি। প্রতারণা, ভেজাল, ওজনে ও মাপে কম দেয়ার ব্যাপারে ইসলাম অত্যন্ত কঠোর। সূরা মুতাফফিফিনে আল্লাহ স্বয়ং ওজনে কম দেয়াকে অভিশাপ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা মাপে কম দেয়, তাদের জন্য দুর্ভোগ’। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ, ‘তোমরা সঠিক ওজন কায়েম করো এবং ওজনে কম দিও না’।’ (সূরা আর-রাহমান, আয়াত : ৭-৯)
ব্যবসায় সততা অবলম্বনের ব্যাপারে নবী করিম সা:-এর উক্তি এ ব্যাপারে স্মরণ করা যেতে পারে। ‘সৎ ব্যবসায়ী শেষ বিচারের দিন মুমিন এবং শহীদদের সাথে আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে’। ‘অসৎ ব্যক্তি ছাড়া কেউ মজুদ করে না’। অথবা ‘মজুদের ব্যাপারে সাবধান নতুবা আল্লাহ তোমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন’; এবং ‘যারা প্রতারণা করে তাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই’। বাজারে পণ্য সরবরাহ অবিচ্ছিন্ন রেখে ন্যায্যমূল্যে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা; কম লাভে পণ্য বিক্রি করাকে তিনি সাদকার সাথে তুলনা করেছেন। হাদিসগুলো স্মরণ করা যেতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের ব্যবসায়ী বন্ধুরা এই বিষয়টিকে স্মরণ রাখবেন এবং রোজার মাসে পণ্যমূল্যকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবেন।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
Email : shah.b.islam@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা