বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ
- ২৪ মার্চ ২০২২, ১২:৪৯
বাংলাদেশে রাজনীতির এক অনন্য ব্যক্তিত্ব বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। তিনি পেশাদার রাজনীতিবিদ ছিলেন না। রাজনীতিতে আসার কোনো অভিলাষও তার ছিল না। কিন্তু ইতিহাস ও সময়ের প্রয়োজনে তিনি পালন করেছিলেন অনন্য ভূমিকা। গত ২০ মার্চ তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। রেখে গেলেন জাতির জন্য এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। যাকে ভয়, ভীতি ও লোভ-লালসা দিয়ে অবনত করা যায় না। নীরবে-নিভৃতে জীবন গড়েছেন। অল্প সময়ে এই জাতির ইতিহাসে উল্লেখ করার মতো ভূমিকা রেখেছেন। রাজনীতিকে ক্ষণিকের জন্য হলেও আন্দোলিত করেছিলেন তিনি।
ছিলেন রাজনৈতিক বিরোধ ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে এক দৃষ্টান্ত। ১৯৯০ সালে প্রেসিডেন্ট এরশাদের পদত্যাগ পরবর্তী ঘটনায় রাজনীতিবিদরা যখন নিরপেক্ষ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তির সন্ধানে ব্যাকুল, তখন দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে বরিত হন রাষ্ট্রক্ষমতায়। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ’৯১ সালের ২৬ আগস্ট পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তিনি। এরপর তিনি বিচারপতির পূর্ণ পদে ফিরে যান। দ্বন্দ্বমুখর রাজনীতিকে তিনি এভাবে স্থিতিশীলতা দেন। তার নিরপেক্ষতা, বিচক্ষণতা, সততা ও সাহস জাতিকে মুগ্ধ করে। এভাবে তিনি যে ইমেজ সৃষ্টি করেন, তা আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দলকেও প্রভাবিত করে। তাই ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যখন জয়লাভ করে তখন এই নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ইমেজের লোকটিকে তারা রাষ্ট্রপতির সম্মানীয় পদে আসীন করে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়। এই সময়ে জনাব সাহাবুদ্দীন আর সেই সময়ের সাহাবুদ্দীন এক ব্যক্তি হলেও সাংবিধানিকভাবে একরকম দায়িত্বশীলতায় ছিলেন না। নির্বাচিত হওয়ার পরপর তিনি বলেছিলেন, ‘সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকারে একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে হয়। আর গণতান্ত্রিক ধারা অক্ষুণ্ন রাখার জন্যই রাষ্ট্রপতি হতে রাজি হয়েছি।’ রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে মনোনয়ন দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পিতৃপুরুষ, মুরুব্বি, অভিভাবক ও মাথার ওপর ছাতা- এরকম সম্মানীয় বিশেষণে বিশেষিত করেছিলেন। অনেকেই মনে করেন, ওই সময়ে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে নিয়ে গঠিত তথাকথিত জাতীয় ঐকমত্যের সরকারকে বৈধতা ও সম্মানীয় করার জন্য তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন যে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন তা হয়তো আওয়ামী লীগকে তার প্রতি অনুবর্তী হতে সহায়তা করেছিল। গোটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক যে, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে এক অভাবনীয় বিব্রতকর অবস্থা মোকাবেলা করতে হয়।
বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের এই দুই তরফে দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার কারণে তার প্রতি মানুষের আস্থা, বিশ^াস ও ভালোবাসা ছিল অতুলনীয়। তিনি সবসময়ই রাজনীতিবিদদের ভূমিকা নিয়ে বিব্রত ছিলেন। জাতীয় পার্টি তার প্রথম দায়িত্ব পালনের সময়ে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল। আবার ২০০১ সালে যখন তারই অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজয় বরণ করে তখন তারাও তার নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। নির্বাচিত জাতীয় সংসদে তিনি যে ভাষণ দেন, তা নিয়েও দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব তার তীব্র সমালোচনা করে। আওয়ামী লীগ তাকে বিশ^াসঘাতক, ডার্টি রোল প্লেয়ার ইত্যাদি অভিধায় অভিযুক্ত করে। এ সময়ে আওয়ামী লীগের একজন বিশ^স্ত কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী তার সম্পর্কে সিরিজ অব কলাম লেখেন। এসব কলামের শিরোনাম ছিল ‘পোর্ট্রেট অব এ ট্রেইটর, লেঘারি থেকে সাহাবুদ্দীন, কাপুরুষের জবানবন্দী, ছহি বড় সাহাবুদ্দীন নামা’ ইত্যাদি। আওয়ামী ঘরানার অন্যান্য ব্যক্তিও অশালীন ও আপত্তিকর বিবৃতি প্রদান করে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এসব বক্তৃতা, বিবৃতি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। অবশেষে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে সংবাদপত্রে একটি বিবৃতি দেন। তার বিবৃতির পূর্ণ বিবরণ এরকম :
‘গত কয়েক মাস ধরে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন রাজনীতিবিদ এবং কয়েকজন কলাম লেখক প্রায়শঃ আমার সম্পর্কে অসত্য তথ্য এবং বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। এসব বক্তব্যের সারকথা হলো অক্টোবরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরিকল্পিতভাবে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং হারিয়ে দেওয়ার পেছনে আমারও হাত রয়েছে। আমার আদর্শ, নীতিবোধ নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এসব বিকৃত বক্তব্যের জবাব দেওয়ার ইচ্ছে আমার হয়নি। সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু শালীনতাবর্জিত বক্তব্য এবং একজন কলাম লেখকের বক্তব্যে চরম মিথ্যাচার করা হয়েছে বলে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হচ্ছি। শেখ হাসিনার বক্তব্য নি¤œরূপ-১. রাষ্ট্রপতি বাঙ্গালী জনগণের সঙ্গে বেইমানি করেছেন, ২. রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে সামরিক বাহিনী নামিয়েছেন, ৩. বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার রাষ্ট্রপতির পরামর্শ মতো স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের পরিবর্তে দায়রা আদালতে করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি জনগণের সাথে বেঈমানি করেছেন বলে শেখ হাসিনা ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন তা আমার কাছে স্পষ্ট হয়নি। তিনি বা তাঁর দু-একজন অনুসারী আগেও বলেছেন, আমি বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। আমাকে তারা বিশ^াস করে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন, কিন্তু আমি মোনাফেকি করেছি। আমি এমন কোন মুচলেকা দিয়ে রাষ্ট্রপতি হইনি যে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন হওয়ার কয়েকদিন আগেও শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে আমাকে বলেছেন যে, আমি রাষ্ট্রপতি ছিলাম বলেই তারা পূর্ণ মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে পেরেছেন। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরেই তাঁর বক্তব্য সম্পূর্ণ পাল্টে গেল। আমি হয়ে গেলাম বিশ্বাসঘাতক। হেরে যাওয়ার পরে আমাকে নির্বাচন বাতিল করে রাষ্ট্রপতির অধীনে পুনরায় নির্বাচন করার অনুরোধ করেন। আমি তাতে রাজি হইনি।
সবকিছু তাদের মনের মতো হলে আমি দেবতুল্য, না হলে নরাধম। নির্বাচনের কিছুদিন আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সারাদেশে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। এর পেছনেও তারা বিশেষ উদ্দেশ্য অনুসন্ধান করেছেন। অথচ এই সামরিক বাহিনীর প্রধানকে শেখ হাসিনাই মনোনীত করেছেন। সেনাপ্রধান তাঁর সাথে একই জনসভায় বলেছেন যে, তিনি রাজাকারদের নির্মূল করবেন। তাহলে এটা কি বিশ^াসযোগ্য যে, সেই সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী পরে বিজয়ী দলকে নির্বাচনে জিতিয়ে দিয়েছে? নির্বাচনে সেনাবাহিনী প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কাজ করেছে। তাদের বিশেষ কোন ক্ষমতা দেয়া হয়নি। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, নির্বাচনের ১০/১২ দিন আগে প্রধান উপদেষ্টা সেনাবাহিনী নিয়োগের জন্য আমাকে অনুরোধ করেন এবং এ কথা উল্লেখ করেন যে, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হয়েছিল। নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করা এবং জয়-পরাজয়ের কারণ নির্ণয় করা কঠিন নয়। এত দেশী, বিদেশী পর্যবেক্ষক এবং জনগণ যারা ভোট দিয়েছেন তারা কারচুপির অভিযোগ করছেন না, শুধু কয়েকজন একদেশদর্শী রাজনীতিবিদ এবং কলাম লেখক যেভাবে অগভীর ও অর্থহীন ব্যাখ্যা করে চলেছেন, তা স্বেচ্ছাচারীর পর্যায়ে পৌঁছেছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখার স্বার্থে এ ধরনের প্রচারণা অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা কিভাবে শুরু করতে হবে সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ মিথ্যাচার বিস্ময়কর। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা সাধারণ আদালতে হবে এমন কোন পরামর্শ আমি দেইনি। তিনি নিজেই এ মামলা শুরু করেছিলেন। শুরু করার পর আমার সাথে দেখা করে বলেছিলেন যে, বিচার যাতে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হয় সে কারণে তিনি সাধারণ আদালতে মামলা করেছেন। এ ছাড়া দায়রা জজ গোলাম রসূল কেমন ব্যক্তি তা জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি বলেছিলাম তিনি ভালো লোক। এর অনেক দিন পর তিনি জানতে চাইলেন দায়রা জজের আদালতে মামলা নিষ্পত্তি হতে দেরি হচ্ছে কেন এবং জিয়া হত্যার পরপরই জেনারেল এরশাদ স্বল্প সময়ে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্যকে বিচার করে কয়েক দিনের মধ্যে কিভাবে ফাঁসি দিলেন। আমি বলেছিলাম তাদের ‘ফিল্ড কোর্ট মার্শালে’ অতি অল্প সময়ে বিচার হয়েছিল।
সে মামলার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে রিট হয়েছিল, তা খারিজ হয়ে যায়। এ ছাড়া এই মামলা সম্পর্কে তাঁর সাথে আর কোন আলোচনা হয়নি। প্রসঙ্গত, কয়েকটি কথা বলা প্রয়োজন। সংবিধান অনুযায়ী সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হয়েছিলেন। নিযুক্তির এক ঘণ্টার মধ্যে তের জন সচিবকে বদলির আদেশ দেন। প্রধান উপদেষ্টার এই আদেশের পর এক ঘণ্টা পরে চারজন সচিব বিষয়টি আমাকে জানায়। তখন আমি এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। এরপর প্রধান উপদেষ্টা আমাকে জানান, আওয়ামী সরকার মেয়াদ শেষ হওয়ার মাস খানেক আগে প্রায় দেড় হাজার অফিসারকে বদলী করেছে এবং নির্বাচনের সুবিধা লাভের জন্য এসব বদলী করা হয়েছে। এ জন্যই তিনি দ্রুত গতিতে বদলীর কাজে হাত দেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আমার পরামর্শ মতো নিয়োগ করা হয়েছে বলে যে কথা উঠেছে তাও সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই তাঁকে মনোনীত করেছিলেন। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে দৈনিক জনকণ্ঠে আবদুল গাফফার চৌধুরী ‘পোর্ট্রেট অব ট্রেটর’ নামে ধারাবাহিকভাবে যে লেখাটি লিখেছেন তা মিথ্যাচারের একটি অপূর্ব নিদর্শন। আবদুল গাফফার চৌধুরী স্বনামধন্য লেখক। একুশের সঙ্গীত রচয়িতা। তিনি যে এতোটা মিথ্যাচার করতে পারেন তা ভাবা যায় না। লেখাটি পড়লেই মনে হয়, তিনি সুদূর লন্ডনে বসে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কল্পকাহিনী রচনা করে চলেছেন। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এমন দক্ষ, চতুর, মিথ্যাচার কেবল গাফফার চৌধুরীকে দিয়েই সম্ভব এ কথা আগে শুনে থাকলেও বিশ্বাস করিনি। এখন বিশ্বাস করি।’
বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের এই বিবৃতির পর রাজনৈতিক অঙ্গনে একরকম ঝড় বয়ে যায়। আওয়ামী ঘরানার রাজনীতিক এবং বুদ্ধিজীবীরা আরেকবার তাকে ধোলাই করেন। অপর দিকে আওয়ামী বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং বুদ্ধিজীবীরা বিচারপতির সমর্থনে এগিয়ে আসেন। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের ওপর আওয়ামী লীগ মহল থেকে ক্রমাগত যেসব কথা বলা হচ্ছে তিনি এর প্রতিবাদ করা প্রয়োজন মনে করছেন। অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগের বিবৃতি শুধু অনাকাক্সিক্ষত নয়, অত্যন্ত নিন্দনীয়। অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান মিয়া বলেন, নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মতো একজন ব্যক্তিকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করার প্রয়াস পেয়েছে। কেবল তা-ই নয়, আক্রমণের ভাষা ছিল সবসময় অশালীন। অপর দিকে গাজীউল হক বিবৃতি দিয়ে বলেন, সাহাবুদ্দীন সাহেব এই প্রতিবাদটি করে ভুল করেছেন। বিচারপতি কে এম সোবহান বলেন, সাহাবুদ্দীন সাহেব যে মতামত প্রকাশ করেছেন তার সাথে জনগণ একমত নয়। উল্লেখ্য, সংক্ষিপ্ত এই বিবৃতিতে অনেক না বলা কথা ও অনুক্ত কথা প্রকাশিত হয়েছে। এই সুলিখিত বিবৃতিটি বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের নিজের হাতে লেখা এবং স্বস্বাক্ষরিত। এই বিরোধের জের বয়ে বেড়াতে হয় তাকে সারাজীবন। তার মৃত্যুর পরে দায়সারা গোছের বিবৃতি এবং আনুষ্ঠানিকতা তারই প্রমাণ দেয়। পরবর্তীকালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেয়াই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।’
চাপা ক্ষোভ ও দুঃখ-বেদনা নিয়ে তিনি বাকি জীবন কাটিয়ে দেন। সে জীবনের প্রায় সময়ে ছিল আওয়ামী লীগের শাসন। সুতরাং তাকে নিয়ে সম্মান ও গৌরবের প্রকাশ কোথাও ছিল না। এই জাতির ক্রান্তিকালে তিনি যে নেতৃত্ব ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন, তার বিনিময়ে প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা না পেয়ে তার বিনিময়ে পেয়েছেন তিরস্কার, লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা। নিভৃতচারী এই মানুষটির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটেছে সবার অগোচরে দৃশ্যপটের বাইরে। দেহ অবয়বে মানুষ তো ছিলেন ছোট। কিন্তু প্রজ্ঞা, মননশীলতা, সাহস ও স্বচ্ছতায় তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ।
এই মহান ব্যক্তি সম্পর্কে আমাদের লেখাপড়া ও গবেষণা খুব সামান্য। তার ওপর গবেষণা সমৃদ্ধ একমাত্র গ্রন্থ অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল হাকিমের ‘Bangladesh Politics : The Shahabuddin Interregnum’ প্রকাশ করেছে ইউপিএল, প্রকাশকাল ১৯৯৩। আর বাংলায় আবুল কাসেম হায়দার সম্পাদিত ‘সাহাবুদ্দীনের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ’ প্রকাশ করেছে প্যানোরমা পাবলিকেশন, প্রকাশকাল ২০০২।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা