৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ৩০ রজব ১৪৪৬
`

বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, নাকি মহাযুদ্ধের পদধ্বনি

- ছবি : নয়া দিগন্ত

ইউক্রেনে রাশিয়ার পরিচালিত সামরিক অভিযানের পরিসমাপ্তি কিভাবে ঘটবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এ ঘটনায় বিশ্বরাজনীতিতে যে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে যাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। রাশিয়া এবং এর পেছনে চীন ও মিত্র আরো কিছু দেশ বর্তমানে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন একটি ব্যবস্থাকে অনিবার্য করে তুলতে চাইছে বলে মনে হয়। এর মধ্য দিয়ে আবার দ্বিমেরুর বিশ্বব্যবস্থার সূত্রপাত হলেও সেটি সোভিয়েত-আমেরিকার দ্বিমেরুর বিভাজনকেন্দ্রিক ব্যবস্থা না-ও হতে পারে।

এটি যদি ইউক্রেনকেন্দ্রিক সঙ্ঘাতের সমঝোতামূলক পরিসমাপ্তির মধ্য দিয়ে ঘটে সেটি হবে একরকম। আর ইউক্রেন যুদ্ধের পথ ধরে যুদ্ধ বিগ্রহ ছড়িয়ে পড়ে তৃতীয় মহাযুদ্ধের মতো কিছু ঘটলে সেটি হবে ভিন্ন রকম। তুরস্ক বা জার্মানির নেতারা শেষোক্ত অবস্থা কাটাতে সমঝোতা বা শান্তিচুক্তির মধ্য দিয়ে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের অবসান ঘটাতে চাইছেন বলে মনে হয়। কিন্তু চীন বা আমেরিকা কতটা সেটি কামনা করছে অথবা ভ্লাদিমির পুতিন সমঝোতার পথে কতটা হাঁটবেন তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে বলে মনে হয়।

সর্বাত্মক বিজয় চাইছেন পুতিন?
ইউক্রেনের চার পাশে সেনা সমাবেশ ঘটানোর পর থেকেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে একধরনের কট্টর স্বর ধ্বনিত হচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্র আর ন্যাটোকে তিনি তখন বলেন, ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ বন্ধ রাখা এবং এর আগে ১৯৯৭ সালের পর যে সম্প্রসারণ করা হয়েছে তা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেবার অঙ্গীকার করতে হবে। পুতিন ভালো করে জানতেন এটি যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর পক্ষে করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বাস্তবে ঘটেছেও সেটিই।

এরপর বেলারুশকে সাথে নিয়ে ইউক্রেনের ওপর সর্বাত্মক সামরিক অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাশিয়া। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়া তিন দফা সমঝোতার জন্য শান্তি আলোচনায় মিলিতও হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই তাদের স্বর ও শর্ত আরো চড়া হয়েছে। ইউক্রেনকে অসম্ভব সব শর্ত মেনে নেয়ার জন্য চাপ দিয়েছে আর সে সাথে যুদ্ধের বিধ্বংসী তৎপরতা বাড়িয়েছে ক্রেমলিন। সর্বশেষ তাদের দুই স্তরে যেসব শর্তের কথা প্রকাশ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, ইউক্রেনকে সুইডেন অস্ট্রিয়ার মতো নিরপেক্ষ থাকার অঙ্গীকার করতে হবে, ন্যাটো বা ইউরো জোনে না যাওয়ার বিষয়টি সংবিধান সংশোধন করে নিশ্চিত করতে হবে, ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর নিরস্ত্রীকরণের পদক্ষেপ নিতে হবে, রাশিয়ার স্বীকৃতি অনুযায়ী ডনবাসের দু’টি অঞ্চলের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে হবে, ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে আর সংশ্লিষ্ট সমুদ্রাঞ্চলে রুশ নিয়ন্ত্রণের স্বীকৃতি দিতে হবে আর সে সাথে ক্রাইমিয়ার জন্য মিষ্টি পানির সরবরাহের নিশ্চয়তাও বিধান করতে হবে। এ ছাড়া রাশিয়ার ‘নব্য নাৎসি’ হিসেবে চিহ্নিত রুশবিরোধী দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পক্ষে তার দেশকে নিরপেক্ষ রাখা বা ন্যাটো-ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান না করার অঙ্গীকারের বাইরে অন্য কোনো দাবি মেনে নেয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। রাশিয়াও তার আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখতে চেষ্টা করবে আর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ গোপনে অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনের প্রতিরোধ যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করবে। সেই প্রচেষ্টা যতটা তীব্রতা পাবে যুদ্ধের শাখা-প্রশাখা ততটা নানা স্থানে বিস্তৃতি পাবে।

কেন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে?
যুদ্ধ উত্তেজনা ইউক্রেন অঞ্চল থেকে বাইরে ছড়িয়ে পড়ার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তার পেছনের মূল কারণই হলো বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানানো। ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া দখলের পর রাশিয়া আর ট্রাম্প জমানায় চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর পর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ আরোপের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। ইউক্রেন অভিযান শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধকে তীব্র আকার দেয়া হয়েছে। একই সাথে রাশিয়াকে সমর্থন দেয়া হলে চীনের ওপর একই ধরনের অবরোধ বা নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেয়া হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। এ নিয়ে জো বাইডেন সরাসরি শি জিন পিনের সাথে কথাও বলেছেন।

এ ধরনের অবরোধ আরোপের দুই প্রধান অস্ত্র হলো বৈশ্বিক বাণিজ্য লেনদেনের তথ্য জোগান নেটওয়ার্ক সুইফট এবং বৈশ্বিক লেনদেনে মার্কিন ডলার-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মুদ্রা ও ব্যাংকব্যবস্থা। দুই ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের হাতে।

রাশিয়া ও চীন বহু দিন ধরে বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণের এই দুই প্রধান অস্ত্রকে অকার্যকর করার জন্য কাজ করে আসছে। এজন্য রাশিয়া ও চীন সুইফটের দু’টি বিকল্প লেনদেন তথ্য নেটওয়ার্ক সিস্টেম চালু করেছে। কিন্তু এই নেটওয়ার্কের আওতা সীমিত থাকায় বৈশ্বিক বাণিজ্যে তা তেমন প্রভাবশালী হয়ে উঠতে পারেনি। তবে এর নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হচ্ছে ক্রমে। অন্য দিকে বিশ্ববাণিজ্যে ডলারের আধিপত্য খর্ব করতে জাতীয় মুদ্রায় বাণিজ্যিক লেনদেনের একটি প্রক্রিয়া তৈরির চেষ্টা করছে চীন-রাশিয়া বলয়ের দেশগুলো। জাতীয় ও বৈশ্বিক লেনদেনের অভিন্ন বৈশ্বিক ডিজিটাল মুদ্রা প্রচলনের ওপরও কাজ করছে চীন।

এই দু’টি উদ্যোগ সফল হওয়ার অর্থ হলো আমেরিকান বা পশ্চিমা নিয়ন্ত্রক আধিপত্য ব্রেটন-উড চুক্তির মাধ্যমে সূচিত বিশ্বব্যবস্থায় গৌণ হয়ে পড়া। এই উদ্যোগ সমাপনীর দিকে যাওয়ার আগে তাতে বাধা তৈরিতে ইউক্রেন যুদ্ধ হয়তোবা একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। সুইফট বা ডলারের কার্যক্ষমতা ভোঁতা হওয়ার আগেই সেটিকে চূড়ান্তভাবে প্রয়োগের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা
জাতীয় পর্যায়ের যুদ্ধ যখন বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে পড়ে তখন মহাযুদ্ধ শুরুর একটি পরিবেশ তৈরি হয়। মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা সেটিই তৈরি করছে বলে মনে হয়। প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও বাদশাহ ফয়সল যখন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবে ক্ষমতায় ছিলেন তখন দু’দেশের মধ্যে এই মর্মে চুক্তি হয় যে আমেরিকার জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে সৌদি আরব আর জ্বালানি তেল বিক্রি করা হবে কেবল মার্কিন ডলারে। এর বিনিময়ে আমেরিকা সৌদি রাষ্ট্র ও রাজপরিবারের ক্ষমতা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে।

আরব বসন্তের সময় দেশে দেশে একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যে জনবিদ্রোহ দেখা দেয় তার পেছনে য্ক্তুরাষ্ট্রের ইন্ধন সক্রিয় ছিল বলে সৌদি আরব ও তার মিত্র দেশগুলোর ধারণা ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান ও মুহাম্মদ বিন জায়েদের মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে প্রভাবশালী হিসেবে উত্থান ঘটে। আমেরিকায় ক্ষমতায় আসা রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ট ট্র্যাম্পের সাথে বিশেষ সমীকরণ তৈরির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে একনায়কত্ব বা রাজতন্ত্রের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জকে শিকড়হীন করার প্রচেষ্টা তারা ক্ষমতার দুর্দমনীয় প্রয়োগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান দল ও ট্রাম্পের শাসনের পরাজয়ের পর জো বাইডেনের নতুন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যের দুই ক্রাউন প্রিন্সের কর্তৃত্বকে মেনে নিতে চাইছেন বলে মনে হয় না। এতে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিন সালমান ও বিন জায়েদ দু’জনই বিকল্প বৈশ্বিক শক্তি চীন রাশিয়ার সাথে তৈরি করেন বিশেষ সমীকরণ। সৌদি আরব আমেরিকার বিকল্প তেলের বাজার হিসেবে চীনকে ব্যবহার করে আর সেই সাথে সৌদি আরব নতুন নির্মাণাধীন কৌশলগত নিওম নগরীসহ নানা ক্ষেত্রে চীনা বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে। রাশিয়ার কাছ থেকে সমরাস্ত্র কিনে একটি বিশেষ সম্পর্ক তৈরি করে রিয়াদ। একই পথে হাঁটে আমিরাত মিসরসহ আরো কিছু মিত্র দেশ।

ইউক্রেন সঙ্ঘাতে আমেরিকার সাথে মধ্যপ্রাচ্যের এই রাজতান্ত্রিক শাসকদের দূরত্ব তীব্রভাবে প্রকাশ হয়। রাশিয়ার ওপর তেল গ্যাসে আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বাজার ঠিক রাখতে জো বাইডেন তেল উৎপাদন বাড়ানোর অনুরোধ জানানোর জন্য দুই ক্রাউন প্রিন্সকে টেলিফোন করেছিলেন। বলা হচ্ছে, তাদের দু’জনের কেউই সেই ফোনে সাড়া দেননি; বরং এরপরই মুহাম্মদ বিন সালমান ঘোষণা করেন, সৌদি আরব এখন এককভাবে মার্কিন ডলারে তেল বিক্রির নীতি থেকে সরে আসবে এবং চীনকে তার জাতীয় মুদ্রা ইয়েনে তেল সরবরাহ করবে। এর প্রভাব যে মার্কিন ডলারে কতটা পড়বে তা বোঝা যায় তাৎক্ষণিকভাবে ইরানের রিপাবলিকান গার্ডের ওপর আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ার ঘোষণায়। এই রিপাবলিকান গার্ডই ইয়েমেন থেকে শুরু করে সিরিয়া ইরাক লেবানন পর্যন্ত সর্বত্র ইরানি প্রক্সির সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করে আসছে। এ ছাড়াও ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তি পুনর্বহাল এবং দেশটির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত ওয়াশিংটন নিতে যাচ্ছে বলে আভাস দেয়া হচ্ছে।

এর সরল অর্থ হলো বৈশ্বিক সংঘাতে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তার মিত্ররা চীন রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ার সাথে সাথে বাইডেন প্রশাসন ইরানকে সর্বোতভাবে মদদ দেয়া শুরু করবে। সৌদি আরব ৮১ জনের শিরচ্ছেদের রায় কার্যকর করার পর ইরানের সাথে এর মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা এসব ব্যক্তির অর্ধেকই হলো ইরানপন্থী ও শিয়া।

যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে একধরনের সমঝোতায় যাবে বলে মনে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমেরিকা পরমাণু চুক্তি পুনর্বহালে সম্মত হতে পারে। সে সাথে তেল বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে। সেটি হলে ইরানের মধ্যপ্রাচ্যের ভূমিকায় তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে। এতে ইরান তার ভূমিকা একেবারে উল্টে হয়তো দেবে না। তবে দেশটি একটি নিরপেক্ষ অবস্থানে চলে যেতে পারে, যে অবস্থান অক্ষ ঘুরিয়ে দেবার সিদ্ধান্তে সৌদি-আমিরাত নিলে তাদের শায়েস্তা করতে কাজে লাগাতে পারবে আমেরিকা।

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টির এই পরিস্থিতি যেকোনো সময় ভয়ঙ্কর এক রূপ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও এক্ষেত্রে অনেক খেলাই এখনো বাকি রয়েছে বলে মনে হয়। তুরস্ক ও ইসরাইলেরও এই সমীকরণে প্রভাবশালী ভূমিকা থাকবে। ইসরাইল ইউক্রেনে ইতিবাচক ভূমিকা নিলে রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে তার নিরাপত্তা বিঘিœতকারী শক্তিগুলোকে সমর্থন দিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। অন্য দিকে একই কাজ তুরস্ক করলে সিরিয়া আজারবাইজান ও লিবিয়ায় তুরস্কের অবস্থানে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে বাস্তব কারণেই এই দু’টি দেশ কোনো এক পক্ষে প্রান্তিকভাবে না ঝুঁকে ভারসাম্য বজায় রাখার নীতি নিয়ে চলেছে। যদিও জোরালোভাবে পক্ষ নেয়ার ব্যাপারে তাদের ওপর চাপ রয়েছে।

পাকিস্তানে সুপারসনিক মিসাইলের রহস্য

ইউক্রেনের প্রলয়ঙ্করী যুদ্ধের আঁচ যখন মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ঠিক সে সময়েই গোলাবিহীন এক ভারতীয় ব্রহ্ম সুপারসনিক মিসাইল আকাশসীমা ভেদ করে পাকিস্তানে আঘাত হানে। মার্কিন প্রভাবশালী পত্রিকা ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান তাৎক্ষণিকভাবে ভারতে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার উদ্যোগ নিয়েছিল, সেটি থেমে যায় রাশিয়ার অনুরোধে। এরপর পাকিস্তান মিসাইলটি আসলেই রাষ্ট্রিক ত্রুটি না অন্য কোনো কারণে ছোড়া হয়েছে তা তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগের দাবি জানায়। সে দাবিতে নয়াদিল্লি এক দিকে সাড়া দেয়নি অন্য দিকে ভারত পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দখলে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর প্রকাশ হয়।

আর ঠিক এ সময় পাকিস্তানকে চীন হাইপারসনিক মিসাইল তৈরির প্রযুক্তি হস্তান্তর করার খবর প্রকাশ হয়। এই সময়ে ইসলামাবাদে আয়োজন শুরু হয়েছে ওআইসি সম্মেলন। আর একই সময়ে ইমরান খানের ওপর সংসদে অনাস্থা জ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতাও সৃষ্টি হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি উত্তেজনার আরেকটি কেন্দ্র দক্ষিণ এশিয়া হতে যাচ্ছে বলে মনে হয়।

ইউরোপে রাশিয়া-ইউক্রেন সর্বাত্মক যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ উত্তেজনা, দক্ষিণ এশিয়ায় ধূমায়িত উত্তেজনা, বৈশ্বিক পরিসরে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও কর্তৃত্ব পরিবর্তনের লড়াই, এসব কিছু একটি নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থা তৈরির পরিপ্রেক্ষিতে চলছে বলে মনে হয়। এর সাথে তাইওয়ান উত্তেজনা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে কিউবা বা অন্য কোনো দেশে নতুন কোনো উত্তাপ তৈরি হলে পৃথিবী হয়ে উঠতে পারে এক উত্তপ্ত গ্রহ।

এর পথ ধরে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো কোনো ঘটনা ঘটা অসম্ভব কিছু বলে মনে করছেন না অনেক বিশ্লেষক। আর পুতিন ল্যাভরভ বা বাইডেন ব্লিঙ্কেনের কথা অনুযায়ী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরমাণু যুদ্ধে রূপ নিলে তা বিশ্বে মনুষ্যসৃষ্ট এক মহাবিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আলেক্সান্ডার ডুগিনের ধারণা ও কর্মপন্থাকে ভ্লাদিমির পুতিন নিজের ডকট্রিন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এই ডকট্রিনের বাস্তবায়নে তিনি অনেক দূর এগিয়েও গেছেন। এর বিভিন্ন দিক এবং আগামী বিশ্বে এর প্রভাব কেমন হবে তা বিশ্লেষণ করলে এক ভয়ঙ্কর বিশ্বচিত্র ভেসে ওঠে। পরের কোনো এক কলামে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। পরম করুণাময় যেন পৃথিবীবাসীকে মনুষ্যসৃষ্ট মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা করেন।
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
ইসলাম ব্যাতিত সামাজিক সুবিচার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত সম্ভব নয় : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান চাঁদপুরে পিকআপভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেল-আরোহী নিহত শনিবার সুনামগঞ্জে কর্মী সম্মেলনে যোগ দিবেন জামায়াত আমির ৮৯ শতাংশ ইসরাইলিই মনে করে, গাজায় তারা ব্যর্থ : জরিপ ময়মনসিংহে মোটরসাইকেল উল্টে দুই তরুণের প্রাণহানি সিলেটে দুই বাসের সংঘর্ষ, আহত ২০ রংপুরে পাঁচ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন রুখতে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে : ড. আবদুল কাদের মেক্সিকোর সাথে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বারোপ আনসারীর মার্কিন বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের দু’জন চীনের নাগরিক ইজতেমা ময়দানে দেশের সর্ববৃহৎ জুমার জামাত অনুষ্ঠিত

সকল