২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

যুদ্ধ ভর করেছে মিডিয়ায়

-

আমেরিকান একটি টিভি ও রেডিও সম্প্রচার সংস্থা সিবিএসের এক সাংবাদিকের মন্তব্য থেকে আমরা অনুমান করতে পারি বর্ণবাদী মন কেমন হয়। তিনি ইউক্রেন আক্রমণের সূচনায় কিয়েভ থেকে বর্ণবাদী আচরণটি কিভাবে করে ফেললেন তা নিজেও টের পাননি। তিনি বলেছেন, পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনকে, ইরাক ও আফগানিস্তানের সাথে তুলনা করা যায় না। তার মতে, ইউরোপীয় জাতি ইউক্রেন বেশি ‘সভ্য’। চার্লি ডি’আগাটা সিবিএসের একজন সিনিয়র সাংবাদিক। পড়াশোনা করেছেন সাংবাদিকতায়। বোঝা যাচ্ছে সংস্কৃতি ও সভ্যতার সমসাময়িক ইতিহাস তার জানা নেই। কিংবা তিনি মানসিকতায় পুরো একজন বর্ণবাদী। ইরাক ও আফগানিস্তানে সভ্য জাতিরা যখন উন্নত সংস্কৃতিবান জীবন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল সেই সময় আমেরিকা নামের দেশটির অস্তিত্ব ছিল না। বিশেষ করে ইরাকে দজলা ও ফোরাতের কোলে প্রাচীন সভ্যতা নির্মাণে বহু প্রমাণ ইতিহাসে রয়েছে। অন্য দিকে চার্লির পূর্ব পুরুষেরা রেড ইন্ডিয়ানদের কাছ থেকে আমেরিকা কেড়ে নিয়েছে মাত্র কয়েক শ’ বছর আগে। সংবাদ প্রচারের মধ্যে চার্লির এমন মন্তব্যের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। চার্লি পরে ক্ষমা চান।

অস্ত্র ও গোলাবারুদের মতো মিডিয়াও যুদ্ধের অংশ। ফলাফল নির্ধারণে এর প্রভাব আরো বাড়ছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের শুরু থেকে মিডিয়ার জোরালো উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। উভয়পক্ষে বিশ্বজনমতকে নিজেদের পক্ষে রাখা ও প্রপাগান্ডা ছড়ানোর জন্য এর সর্বোচ্চ ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা মিডিয়া এক সুরে বলছে, রাশিয়া একটি আগ্রাসী শক্তি। বৈশ্বিক পরিসরে রাশিয়ান মিডিয়ার শক্তি তাদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম। তার পরও সর্বোচ্চ সামর্থ্য নিয়ে তারাও মাঠে রয়েছে। রাশিয়া বলতে চাইছে পশ্চিমারা কিভাবে বিগত কয়েক দশকে হামলা চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ধ্বংস করেছে। ইইউ প্রতিনিধিদের বাংলাদেশী মিডিয়ায় নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে দেখা গেল। যুক্তরাষ্ট্রও তাদের সাথে রয়েছে। রাশিয়ান দূতাবাসও বসে নেই। তাদের কর্মকর্তারা নিজেদের মতামত প্রভাবশালী মিডিয়ায় প্রকাশ করেছে। বিশ্বের সমগ্র অঞ্চলে তাদের মধ্যে এ প্রতিযোগিতা এখন এভাবে চলছে।

উত্তেজনার মধ্যে এক পক্ষ অন্য পক্ষের মিডিয়া বন্ধ করে দিচ্ছে। পশ্চিমাদের সুবিধা হচ্ছে প্রচলিত বিপুল পেশাদার মিডিয়ার পাশাপাশি আরো শক্তিশালী হওয়া সামাজিক মাধ্যমের নাটাইও তাদের হাতে। রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত হাতেগোনা কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রপাগান্ডা তারা সহ্য করতে পারেনি। প্রথম চোটেই সেগুলো তারা বন্ধ করেছে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়াও বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, ডয়েচে ভেলেসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের সংবাদ প্রচার সে দেশে বন্ধ করে দেয়।

বিগত কয়েক দশকে প্রধান যুদ্ধগুলো ছিল প্রধানত মধ্যপ্রাচ্যে ও আফগানিস্তানে। ওই সময় পশ্চিমা মিডিয়ার যুদ্ধ সাংবাদিকতা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে। ইরাক আক্রমণের পর প্রথম ‘এমবেডেড’ জার্নালিজমের উৎপত্তি ঘটে। আক্রমণকারী বাহিনীর লেজুড় হয়ে সাংবাদিকতা করার দৃষ্টান্ত তারা স্থাপন করে। সেই ধারা এরপর অন্যান্য জায়গায় দেখা গেছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের সংবাদ প্রচারের বৈশিষ্ট্যের সাথে ওই সময়ের পশ্চিমাদের সাংবাদিকতার বিশেষ দিকগুলো আমরা তুলনা করে দেখব। তার আগে বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকার ও ডয়েচে ভেলের সাংবাদিকতার আমাদের দেশের প্রেক্ষিত একটু দেখে নেয়া যেতে পারে।

বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকা আমাদের দেশে জনপ্রিয় ছিল। দেশীয় মিডিয়ার চেয়ে এগুলোর সংবাদ সংগ্রহ ও তা সম্প্রচারের স্টাইল ছিল আলাদা। মানুষের পছন্দ তারা ভালো করে বুঝতে পেরেছিল। তাদের দিনের প্রধান সংবাদ শোনার জন্য শ্রোতারা সারা দিন অপেক্ষা করত। বিশেষ করে এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে। এই দুটো প্রতিষ্ঠানই বিগত এক যুগে বাংলাদেশে একেবারে ম্রিয়মাণ হয়ে গেল। তারা এই সময় মানুষের সংবাদ জানার চাহিদা সেভাবে পূরণ করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠান দুটোর বাংলা সার্ভিস এমন একসময় জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলল যখন এগুলো আরো বেশি শ্রোতার কাছে প্রিয় হয়ে ওঠার কথা ছিল। কারণ দেশের সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি চাপে খবর প্রকাশে সেন্সরশিপ আরোপ করেছে। আবার এদের বড় একটা অংশ বাংলাদেশে বাম দলগুলোর সাথে সম্পৃক্ত। এই বামরা আবার বর্তমান সরকারের মিত্র। আওয়ামী লীগের সমান্তরালে সরকারি সুবিধার বড় ভাগিদার তারাও। তাই জনগণের কথা তারা নিজে থেকেও বলতে চায়নি।

এ সময় বাংলাদেশের ভোটব্যবস্থা উধাও হয়ে যায়। আরো বড় ঘটনা ছিল গুম অপহরণ ও খুনের ঘটনা। বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে লক্ষ্য করে এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তার ওপর ছিল সীমাহীন দুর্নীতি। ব্যাংকলুট ও সরকারি প্রকল্পের নামে অর্থ লোপাট এ সময় ঘটেছে। এ অবস্থায় বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ার বদলে কেন বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেল সেটি মিডিয়া পর্যবেক্ষকদের জন্য একটি গবেষণার বিষয় হতে পারে। ভয়েস অব আমেরিকা একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। যুক্তরাষ্ট্র সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এর শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে বিবিসি বাংলা বিভাগ এ ব্যাপারে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। নিষেধাজ্ঞার সুনির্দিষ্ট কারণ ছিল গুম খুনসংক্রান্ত। বিবিসি এ সময় প্রতিবেদন রচনা করল ‘কিভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা যাবে,’ সেই বিষয়ে। গুম খুনের ব্যাপারে অনুসন্ধান করার বদলে তাদের টোনটি ছিল, ‘বাংলাদেশের বর্তমান সরকার কি পারবে’ এ নিষেধাজ্ঞা উতরে যেতে! বিগত বছরগুলোতে ছয় শতাধিক মানুষ গুম হয়ে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের অন্যান্য মিডিয়ার মতো বিবিসি বাংলাও চুপ ছিল। নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও তারা জনগণের উদ্বেগের জায়গাটি শনাক্ত করেনি বা করতে পারেনি। সংবাদ প্রতিষ্ঠান হিসেবে যা করা তাদের জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিবিসি একটি ব্রিটিশ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এর বৈশ্বিক সংবাদ ব্যবস্থাপনায় অবশ্য এমন অযোগ্যতা লক্ষ করা যায়নি। জার্মান সংবাদ প্রতিষ্ঠান ডয়েচে ভেলেকেও একই ধরনের অবস্থায় পতিত হতে দেখা যাচ্ছে। সংবাদ প্রতিষ্ঠানটির বাংলা বিভাগটি অনেকটাই বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের পথে হাঁটছে। এর অন্যতম একটি কারণ হতে পারে এমন সব ব্যক্তি বাংলা বিভাগের দায়িত্ব নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছেন সাংবাদিকতার চেয়ে নিজস্ব পছন্দের ব্যাপারটি তাদের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে। এই বৈশ্বিক সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বাংলা বিভাগ নিয়ে তদন্ত করে দেখতে পারে। চাইলে তারা সংবাদ প্রকাশ ও জনগণের চাহিদার দিকে আবারো মনোযোগ ফিরিয়ে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার একটি ইতিবাচক দিক রয়েছে। তারা নিজেদের দেশে গণতন্ত্র ও মানবতার ধারক। মিডিয়ার ক্ষেত্রেও তারা একটা ন্যূনতম মানদণ্ড বজায় রাখে। বিশেষ পরিস্থিতির উদ্ভব না হওয়া পর্যন্ত একটি নির্ধারিত মূল্যবোধ ও মানমাত্রা তারা অনুসরণ করে। সমাজতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা ক্ষেত্রবিশেষে এসবের কোনো ধার ধারে না।

পশ্চিমা মিডিয়ার এখনকার সংবাদ প্রচারের কৌশল রাশিয়াকে জব্ধ করা। বিবিসি বিশ্ব সংবাদে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রচার করে চলেছে ইউক্রেনীয়দের জাতীয় ঐক্য, জেলেনস্কির বীরোচিত অনমনীয় দৃঢ়তা, শরণার্থীদের ঢেউ, বিপরীতপক্ষে রাশিয়া ও তার সামরিক বাহিনীর যত কাপুরুষোচিত কাজ নিয়ে। ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে তাদের প্রতিবেদনে দেখা গেল, সেখানে আসা রুশ সেনারা বন্দী হচ্ছে। তাদের সামরিক যান বিধ্বস্ত হচ্ছে, বিকল হয়ে যাচ্ছে। সহযোদ্ধাদের লাশ ফেলেই তারা পালিয়ে যাচ্ছে। এই লাশ সৎকার করা হচ্ছে না। রুশ সৈন্যরা জানত না তারা যুদ্ধ ক্ষেত্রে আসছে। ভিডিও কলে তারা নিজের মায়ের প্রতি আকুতি জানাচ্ছে তাদের যেন ফিরিয়ে নেয়া হয়। ইউক্রেন আগ্রাসন নিয়ে তারা ক্ষুব্ধ। এ ব্যাপারে তারা নীতিগত একমত নয় রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে। তাদের অনেকে আত্মসমর্পণ করছে। সব মিলিয়ে তারা হতাশ, তাদের মনোবল ভেঙে পড়ছে। অভিন্ন জাতির ইউক্রেনীয়দের ওপর তারা আক্রমণ করতে পারছে না। তারা যুদ্ধের কোনো প্রেরণা পাচ্ছে না। নৈতিক কোনো অবস্থান তাদের নেই।

অন্য দিকে ইউক্রেন দেশমাতৃকা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। তাদের পুরুষরা সবাই সাহসী। মেয়েরাও এই যাত্রায় সহযোগী হচ্ছে। তারা ঘরে বসে মলোটভ ককটেল বানাচ্ছে। রাশিয়ান সামরিক যান লক্ষ করে এগুলো তারা ছুড়ে মারবে। তাদের পুরুষরা অত্যন্ত দায়িত্বশীল। তাদের স্ত্রী কন্যাদের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষায়, নারী শিশুদের তারা নিরাপদ জায়গায় পাঠিয়ে দিচ্ছে। বিদায়ের সময়ের করুণ বীরোচিত সাহসী বিচ্ছেদের কাহিনীতে ভরে গেছে সংবাদ ও সামাজিকমাধ্যম। প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, সক্ষম বাবা বিদায় জানাচ্ছে তার স্ত্রীসমেত ছোট ছোট শিশুদের। এ দৃশ্যকে যতটা পারা যায় মহিমান্বিত করা হয়েছে। ভাষার প্রয়োগ ক্যামেরার ব্যবহারে সর্বোচ্চ কৌশল প্রয়োগ করতে কিছুটা কার্পণ্য করা হয়নি। মা শিশুরা কাঁদছে। বাবা আদর করে দিচ্ছে। যাত্রীবাহী ট্রেনে শত শত যাত্রী সবাই অশ্রুসিক্ত। স্বামী স্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সে নিজেকে রক্ষা করবে। বাবা ও স্বামী দেশ রক্ষার জন্য রয়ে গেছে। নারীরা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষার জন্য নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছে।

জেলেনস্কির বাণী প্রচার করা হচ্ছে। তিনি আক্রমণকারী রাশিয়ান সৈন্যদের লক্ষ করে বলছেন, তোমরা তোমাদের কমান্ডারদের বিশ্বাস করো না। তোমরা আত্মসমর্পণ করো, অস্ত্র ফেলে চলে যাও। নিজেদের জীবন বাঁচাও আর কোনো ধরনের অপপ্রচারে বিশ্বাস করো না। আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে শিশুদের ওপর হামলা। বিবিসি যুদ্ধ শুরুর দিকে এ নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, প্রাণ রক্ষার্থে সরে পড়ার সময় একটি শিশু আহত হয়। পরিবারের অন্য সদস্য প্রাণ হারায়। শিশুটিকে বাঁচাতে ইউক্রেনের হাসপাতালের ডাক্তার ও তার কর্তৃপক্ষ কতটা আন্তরিক সেটি সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এটি দেশটির সবচেয়ে বড় শিশু সেবাকেন্দ্র। এরা শিশুদের সব ধরনের চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাদের ব্যস্ততা আরো বেড়ে গেছে। হাসপাতালের বাইরে আহত আরো শিশু রয়েছে। তাদের মায়েদের চেহারায় উদ্বেগ। আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে শরণার্থী ইস্যু, পালিয়ে যাওয়া মানুষরা, তাদের অধিকার, তাদের বিভিন্ন সুবিধা। তাদের শরণার্থী হয়ে মানবেতর জীবন। গৃহহীন ইউক্রেনবাসীর জন্য বিবৃতি প্রচার। শঙ্কা দেখানো হচ্ছে, যুদ্ধবিধস্ত দেশগুলোতে ত্রাণ সহায়তা কমতে পারে। বিপরীত দিকে রাশিয়ার বর্বরতা। আর রাশিয়া কত মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহার করছে, কিভাবে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন ভাঙছে এসব। ঠিক এমন সাংবাদিকতা পশ্চিমা মিডিয়া সেই সময় করতে পারলে এখনকার বিশ্ব বাস্তবতা হতো ভিন্ন রকম।

পশ্চিমা মিডিয়ার প্রতারণা ইউক্রেন আগ্রাসনের পর দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গেল। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইয়েমেন ও লিবিয়ায় হামলার সময় জনগণের পক্ষের সাংবাদিকতা দেখা যায়নি। এসব দেশের অধিবাসীরা তাদের দৃষ্টিতে মানবিক মূল্যবোধ বা মর্যাদা পাওয়ার অধিকারী নয়, সেই সময়ের সাংবাদিকতায় এমনটি দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ওই সব দেশের ওপর হামলার জন্য যে বয়ান রচনা করেছে সেগুলো তারা প্রচার করেছে জোরেশোরে। মা শিশুদের বোমার আঘাতে ঝলসে যাওয়া নিয়ে কোনো মানবিক রিপোর্ট সেই সময় দেখা যায়নি। কারণ ট্যাংকের পেছনে থেকে, যুদ্ধবিমানের কাভার নিয়ে এমন সাংবাদিকতা করা যায় না। তারা সামনে তখন শুধু শত্রু দেখেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান সেটি উল্লেখ করেছেন। যুদ্ধবিরতির আহ্বানের পাশাপাশি পশ্চিমাদের বলেছেন, ইউক্রেনের মতো মুসলিম দেশগুলোর প্রতি একই ধরনের সহানুভূতি দেখান। তার মতে, জেলেনস্কি বুক চিতিয়ে কথা বলে আপনাদের বাহবা পাচ্ছেন। আমরা যখন একই ধরনের সাহস নিয়ে কথা বলি, সেই মর্যাদা পাই না। বিগত কয়েক দশকে বন্দুকের নলের মুখে ছিল মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোই। বন্দুকের নল ঘুরে যাওয়ায় মিডিয়ার নলও যেন ঘুরে গেল। এখন মিডিয়া কি উল্টো দিক থেকে দেখছে?

jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement