২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কিয়েভ নগরীর সামনে বিভীষিকা

- ছবি : সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে- পোল্যান্ড ইউক্রেনকে সোভিয়েত আমলের জঙ্গিবিমান পাঠানোর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। যুদ্ধটা একতরফা আর থাকছে না। এতে আরো দেশ জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রাশিয়া দ্রুত চাইছে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখল করে নিতে। এ লক্ষ্যে আশপাশের শহরগুলোতে মুহুর্মুহু বোমা ও গোলাবর্ষণ করছে। কিয়েভ দখলে নিতে পারলে মস্কোপন্থী একটি পুতুল সরকার গঠন করে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনাই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের লক্ষ্য। ইতোমধ্যে জেলেনস্কির আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, কোনো দেশ ইউক্রেনের আকাশকে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করলে সেই দেশ যুদ্ধে জড়িত বলে ধরে নেয়া হবে।

পুতিন, জেলেনস্কি, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের এ তৎপরতা আগত দিনগুলোতে ইউক্রেন যুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নেয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি বেড়েই চলেছে। ইউক্রেন থেকে পাশের দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীর সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জাতিসঙ্ঘ উদ্বেগ জানিয়েছে। যুদ্ধের যে বিবরণ রিপোর্টারদের ভাষ্যে এসেছে তাতে দেখা যায়, রুশ হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

শহরগুলোতে পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই। চারদিকে ধ্বংসযজ্ঞ। বেসামরিক লোজকনকে সরে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টিতে ইউক্রেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মারিউপোলে দ্বিতীয় দফায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। এরই মধ্যে অন্য শহরেও রুশ বাহিনীর অব্যাহত হামলা চলছে। রাজধানী কিয়েভের উত্তর-পশ্চিমের শহর ইরপিন, দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ, উত্তরাঞ্চলীয় চেরনিহিভ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি শহরে হামলা করেছে রুশ বাহিনী। রুশ সেনারা যুদ্ধের দশম দিনে শনিবার ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী ওডেসা দখলের দিকে এগিয়ে যায়। জেলেনস্কি বলেছেন, ওডেসা শহরে যেকোনো সময় হামলা হতে পারে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি- ইউক্রেনের দুই হাজার সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮২টি জঙ্গিবিমান, ৭০৮টি সাঁজোয়া যান, ৭৪টি রকেট লঞ্চার ও ৫৬টি ড্রোন রয়েছে। অন্য দিকে, ইউক্রেন দাবি করেছে- রাশিয়ার ৩৯টি জঙ্গি বিমান ও ৪০টি হেলিকপ্টার ধ্বংস করা হয়েছে। ইউক্রেন আরো বলেছে, রুশ হামলায় দুই হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। ইউক্রেন ৯ হাজারের বেশি রুশ সেনা নিহতের দাবি করলেও মস্কো ৪৯৮ জন সৈনিক নিহতের কথা স্বীকার করেছে। মস্কো ইউক্রেনের দুই হাজার ৮৭০ জন সেনা নিহতের কথাও জানায়। এটা থেকে স্পষ্ট যে, যুদ্ধ ভয়াবহ আকারই ধারণ করেছে। রাশিয়া স্বীকৃত ৪৯৮ সেনা নিহত হলে সংখ্যার দিক থেকে তা কম নয়। এর অর্থ ইউক্রেন শক্ত প্রতিরোধই গড়ে তুলেছে। ৭ নভেম্বর সোমবার কিয়েভের উত্তর-পশ্চিম দিকের তিনটি শহর বুচা, হোস্টোমেল ও ইরপিনে টানা বোমাবর্ষণ করে চলেছে রাশিয়া।

পোল্যান্ড থেকে সোভিয়েত আমলের বিমানগুলো ইউক্রেনের সামরিক বহরে যোগ দিলে যুদ্ধের গতি আরো তীব্র হতে পারে। ইউক্রেন যাতে এর সুফল নিতে না পারে সে জন্য রাশিয়া আগেই হামলা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে বিমান দিয়ে সহযোগিতার জন্য একটি পথ বের করেছে। পোল্যান্ডের সাথে একটি চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনকে সোভিয়েত জমানার কিছু জঙ্গি বিমান দেবে পোল্যান্ড। কারণ ইউক্রেনের বৈমানিকদের এসব বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ রয়েছে। পোল্যান্ডে এসব বিমান দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র পোল্যান্ডকে বিনিময় হিসেবে দেবে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে নানা ধরনের অস্ত্রও সরবরাহ করেছে গেরিলা যুদ্ধের সুবিধার্থে। তা ছাড়া এক হাজার কোটি ডলার অর্থসহায়তাও করছে। এ তৎপরতাকে চীন ‘আগুনে ঘৃতাহুতি’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, এমন যেকোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করবে চীন। ফলে যুদ্ধের উত্তেজনা যে ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে এটা সহজেই অনুমেয়।

পুতিনকে কিভাবে ঠেকানো যায়
যুদ্ধে সরাসরি না জড়িয়ে পুতিনকে কিভাবে ঠেকানো যায় সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়াশিংটনের পশ্চিমা মিত্ররা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদেমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের ৩০০ আইনপ্রণেতা এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে আলাপের সময় ইউক্রেনের আকাশে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণার জন্য পাশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো এ আবেদন নাকচ করেছে। কারণ ইউক্রেনের যুদ্ধ নিজেদের ঘরে টেনে আনতে চায় না ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো। এই সামরিক জোট বলেছে, এটা করা হলে পশ্চিমা দেশগুলো সরাসরি রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত ন্যাটো কিংবা ইইউ নেবে না। বরং প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ঠেকাতে নানা অবরোধ ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পক্ষপাতীই ন্যাটো ও পশ্চিমা দেশগুলো। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরুর পরই পশ্চিমা বিশ্ব কিছু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্র দিন দিন বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা ‘সুইফট’ থেকে রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করা, বিদেশে পুতিনের যেসব সম্পদ রয়েছে সেগুলো জব্দ করা, পুতিনের ব্যবসায়িক বন্ধু রাশিয়ার ধনকুবেরদের সম্পদ জব্দ, বিভিন্ন আন্তঃদেশীয় কোম্পানি রাশিয়াতে কার্যক্রম বন্ধ করা ইত্যাদি। ৫ মার্চ শনিবার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘স্যামসাং’, ‘মাইক্রোসফট’ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘ভিসা’, ‘মাস্টারকার্ড’, ‘পেপ্যাল’ এবং পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘জারা’ রাশিয়াতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছে। নিষেধাজ্ঞার অর্থনৈতিক প্রভাব ইতোমধ্যে রাশিয়ার ওপর পড়তে শুরু করেছে। রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের মূল্য পড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার দ্বিগুণ করেছে।

অর্থনৈতিক অবরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, এটা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। তবে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ সত্যিকার অর্থে রাশিয়ায় সেরকম কিছু সমস্যা হচ্ছে না। অবরোধকারী দেশগুলোর নেতাদের বুঝতে হবে তারা যে পথে এগোচ্ছেন তা রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকিতে ফেলবে। পুতিন বলেন, রুশ সেনারা লক্ষ্য অনুযায়ী আক্রমণ করে যাচ্ছে এবং নির্দিষ্ট সময়ে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছবে। তিনি ইউক্রেনে কেন হামলা চালানো হয়েছে তার পক্ষে যুক্তি দেন। তার মতে, ইউক্রেনে রুশ ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় ‘বেসামরিকীকরণ ও ইউক্রেনকে নাৎসিমুক্ত’ করতেই এ হামলা করা হয়। প্রেসিডেন্ট পুতিনের উপদেষ্টা রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ৫ মার্চ দাবি করেন, ইউক্রেনকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করার কোনো লক্ষ্য রাশিয়ার নেই। স্কাই নিউজকে তিনি বলেন, রাশিয়া শুধু নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই বিশেষ এই সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। আমরা ইউক্রেনের নিরস্ত্রীকরণ দেখতে চাই, নাৎসি মতাদর্শমুক্ত ইউক্রেন দেখতে চাই। আমরা দেখতে চাই ইউক্রেন যে নিরপেক্ষ তা সংবিধানে লিপিবদ্ধ করবে। এমনকি যেসব অস্ত্র ইউরোপে নিরাপত্তা ভারসাম্যকে বদলে দেবে, সেসব অস্ত্র ইউক্রেনে সরবরাহ করা যাবে না। যেহেতু দ্যোনেৎস্ক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিককে (ডিপিআর ও এলপিআর) রাশিয়া স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, নিরাপত্তা মস্কোর দায়িত্ব রয়েছে। দিমিত্রি পেসকভের মতে, কিয়েভের বর্তমান কর্মকাণ্ড ডিপিআর ও এলপিআরের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই রাশিয়া কিয়েভকে নিরস্ত্র করতে পদক্ষেপ নিয়েছে। ইউক্রেনে জাপোরিঝাঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (এনপিপি) স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চলছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখন রাশিয়ার সেনা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

কিয়েভ ধ্বংস নয়
বিশ্বের অন্যতম সুন্দর নগরী কিয়েভের সামনে এখন দুঃস্বপ্নের বিভীষিকা। এ নগরীর ওপর মস্কোর ক্রোধ কী আকার ধারণ করে সেটাই দুশ্চিন্তার বিষয়। একটি বড় নগরী গড়ে উঠতে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ লেগে যায়। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভও এক দিনে গড়ে ওঠেনি। বছরের পর বছর লেগেছে। আজ সেটা দৃষ্টিনন্দন শহর। এটি ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম গুরুত্বপূর্ণ নগরী। কিন্তু বর্তমান যুদ্ধে এ ঐতিহাসিক, ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিনন্দন নগরী ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনকে রাশিয়ার নিরস্ত্রীকরণ করার অর্থ হচ্ছে কিয়েভকে হাতের মুঠোয় নেয়া। কিয়েভের পতন ঘটাতে পারলেই যুদ্ধজয় সম্ভব। তাই রাশিয়া চাইবে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে হলেও কিয়েভ দখল করা। সেই লক্ষ্যেই আশপাশের একের পর এক শহর ধ্বংস করে দিয়ে কিয়েভের দিকে এগোচ্ছে রুশ সেনারা। রাশিয়ার বিশাল সামরিক বহর পাশের শহরগুলো নিস্তব্ধ করে দিয়ে কিয়েভের কাছাকাছি চলে এসেছে। কিয়েভকে রক্ষায় ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী শহরের প্রবেশদ্বারে পরিখা খনন করেছে। নিজেদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে লড়ছে। কিন্তু রাশিয়ার হামলা কতটা থামানো যাবে, কিয়েভের পতন ঠেকানো সম্ভব হবে কি না কেউ বলতে পারে না । পুরো কিয়েভজুড়েই আতঙ্ক আর বারুদের গন্ধ।

ওবলাস্তে দনিপার নদীর তীরে অবস্থিত চোখজুড়ানো নগরী কিয়েভ। এটি ইউক্রেন ও পূর্ব ইউরোপের অন্যতম প্রধান শিল্প, পরিবহন বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। লোকসংখ্যা ৩০ লাখের মতো। বহু উদ্যান ও ঐতিহাসিক স্থাপনায় কিয়েভ যে কারো দৃষ্টি কাড়ে। নগরীর বেশির ভাগই মনোরম দনিপার নদীর তীরবর্তী। কিছু স্থাপনা পাহাড়ের উপরে। যেমন- প্রাচীন দুর্গ, গির্জা ও প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ। নগরীর বেশির ভাগই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে গড়ে উঠেছে। নগরীতে রয়েছে একটি উন্নত পাতাল রেল। বিখ্যাত সন্তু সোফিয়ার মহাগির্জা বা ক্যাথেড্রাল রয়েছে কিয়েভে যা এক হাজার বছরের পুরনো। রয়েছে নামী বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান একাডেমি, গ্রন্থাগার। প্রাগৈতিহাসিক যুগেই এখানে বসতি গড়ে ওঠে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে পূর্ব স্লাভ জাতির লোকালয় সৃষ্টি হয়। ৮৬০ সালে এখানে আসে ভাইকিংরা। দক্ষিণ সীমান্ত অরক্ষিত থাকায় ১২৪০ সালে মঙ্গোল নেতা বান্টু খান শহরে লুটতরাজ চালায়। ১৩৬০ সাল পর্যন্ত এটি তাদের দখলে ছিল। এরপর লিথুয়ানীয় শাসনে চলে যায়। ১৪৮২ সালে ক্রিমিয়ার তাতার জাতির লোকেরা এ নগরী আক্রমণ করে। ১৫৬৯ সালে এটি পোল্যান্ডের সাথে একীভূত হয়। ১৬৮৬ সালে রুশ সাম্র্রাজ্য কিয়েভকে নিজেদের সাথে একীভূত করে। ১৮ শতকে কিয়েভ নগরীর প্রতিরক্ষা জোরদার করা হয়। ১৯ শতকে রুশ শিল্প বিপ্লব ঘটলে এ নগরী বাণিজ্য ও শিল্পক্ষেত্র হিসেবে পুনরুত্থান লাভ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৪-১৮) জার্মান সেনারা কিয়েভ দখল করে নেয়। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের পরে কিয়েভে বহু লড়াই হয়। ওই বছর রুশ সাম্রাজ্য থেকে কিয়েভ স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কিন্তু ১৯১২ সালে রুশ লাল ফৌজ কিয়েভকে নিয়ন্ত্রণে নেয়। ১৯৩৪ সালে এটি ইউক্রেনের রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯৪১-৪৩) জার্মান নাৎসি সেনারা কিয়েভ দখল করে। এ সময় কিয়েভের দুই লাখ লোকের মৃত্যু হয় এবং নগরীর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। সোভিয়েত আমলে এটি পুনরায় শিল্প ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রের মর্যাদায় ফিরে আসে। এটি হয় সোভিয়েত দেশগুলোর তৃতীয় বৃহত্তম নগরী। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটলে এটি স্বাধীন ইউক্রেনের রাজধানীতে পরিণত হয়। এটি ক্রমেই ইউক্রেনের বৃহত্তম এবং ধনী শহরে পরিণত হয়। কিন্তু চলমান যুদ্ধে ঐতিহ্যবাহী এ নগরী টার্গেটে পরিণত হয়েছে। কিয়েভ বাঁচার আর্তনাদ করছে। যুদ্ধে কিয়েভ ধ্বংসস্তূপ হোক এটা কারো কাম্য নয়।

মার্কিন সাংবাদিক ব্রিজের বিশ্লেষণ
মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট ব্রিজ এক মন্তব্য প্রতিবেদনে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো ইউক্রেনকে উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করেছে। ন্যাটো জোটের সদস্য হতে আহ্বান জানিয়েছে। আর এটিই মস্কোর সতর্কতার কারণ। মস্কো মনে করেছে, ইউক্রেনকে রাশিয়ার জন্য হুমকি হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। অথচ এক দশক ধরে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে রাশিয়া উদ্বেগের কথা জানিয়ে আসছে। পশ্চিমা গণমাধ্যম এমনভাবে তথ্য দিচ্ছে যাতে মনে হতে পারে, ২৪ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের মনে হয়েছে ‘দিনটা সুন্দর, ইউক্রেনে হামলা চালানো যাক’। কিন্তু ঘটনাটি এমন নয়। এ কথা কেউ বলতে পারবে না মস্কো আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্র্র ও ন্যাটোকে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানায়নি। ইউক্রেনকে ন্যাটোতে নিয়ে রাশিয়ার বিপদ ডেকে আনার সম্ভাবনা দেখেই রাশিয়া এ আক্রমণ চালিয়েছে। তাই পশ্চিমা বিশ্ব যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে না চায়, তাহলে তাদের উচিত হবে ভণ্ডামি বন্ধ করে রাশিয়ার মতামতও শোনা।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব
ইমেইল : babdal62@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement