২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ

-

ছোট বেলায় প্রাইমারি স্কুলে প্রতিদিন ক্লাস শুরু হওয়ার আগে অ্যাসেম্বলিতে দাঁড়িয়ে আমরা সবাই সুর করে গাইতাম, ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা, তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা’ আবার ‘ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়েও খাঁটি আমার দেশের মাটি’ বা ‘বাংলার রূপ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রূপ আর খুঁজিতে চাই না’ এমন অনেক দেশ-বন্দনামূলক ছন্দ-পঙ্ক্তি স্কুলজীবন থেকেই আমাদের মুখে মুখে ফিরছে। কবির কথার প্রতিধ্বনি করেই বলতে হয় আমাদের এ মাটি সত্যিই রত্নগর্ভা, এ দেশ সোনালি সম্ভবা। প্রাচীনকাল থেকেই ‘বঙ্গ’ নামে পরিচিত আমাদের এ ভূখণ্ডটি বঙ্গ থেকে বাংলা হয়ে আজ তা সোনালি হাতছানির বাংলাদেশ।

মধ্যযুগ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর পাড়ের যে বদ্বীপটি ছিল গভীর বনাঞ্চলে আবৃত, যার বসতি বলতে ছিল অসংখ্য হিংস্র প্রাণীর সাথে এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু দুঃসাহসী বনবাসী মানুষ সেটি কিভাবে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এক অপার সম্ভাবনার দেশ তা রীতিমতো এক বিস্ময়। এ অঞ্চলের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের প্রাচীন। তাম্র ও লৌহ যুগের পর অতি প্রাচীনকাল থেকে ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা অববাহিকার এ অঞ্চল সুদীর্ঘকাল ধরে পুণ্ড্রবর্ধন, গঙ্গারিদাই, মগধ বা বঙ্গ নামে নন্দা, আর্য, মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন বংশের বৌদ্ধ ও হিন্দু শাসনের অধীনে ছিল। ১২ শতকের দিকে আফগান বীর ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর কাছে সেন বংশীয় সম্রাট লক্ষণ সেনের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে এ দেশে মুসলিম শাসনের যাত্রা শুরু। অবশ্য এরও বহু আগে অষ্টম ও নবম শতকে শুরু হয়েছিল আরব মুসলিম বণিকদের আগমন। আর তারও বহু আগে দূরদূরান্তের মুসলিমপ্রধান পশ্চিম অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ থেকে কিছু সাহসী দূরদর্শী সুফি-সাধক-পীর-আউলিয়া-ধর্ম প্রচারক এ বঙ্গভূমির বিভিন্ন অঞ্চলে এসে বিভিন্ন সময়ে আস্তানা গাড়েন। তাদের প্রত্যেকের সাথে ছিল শত শত অনুসারী। তাদের নির্দেশনায় ও পরিচালনায় কর্মঠ ও পরিশ্রমী এ বিশাল অনুসারী বাহিনী স্থানে স্থানে জঙ্গল পরিষ্কার করে তৈরি করেন বিরাট প্রান্তরজুড়ে ফসলি জমি, আবাদ করেন নানা ফসল, গড়ে তোলেন দিগন্তজুড়ে কৃষিপ্রধান এক ভূ-খণ্ড। অসংখ্য নদীবিধৌত উর্বর পলিমাটিতে নানা ফসলের উৎপাদন বঙ্গ নামের এ ভূ-খণ্ডটিতে এনে দেয় অভাবনীয় প্রাচুর্য আর প্রশান্তি।

হজরত শাহজালাল, হজরত শাহ পরাণ, হজরত শাহ মখদুম, হজরত আমানত শাহ, হজরত খানজাহান আলীসহ এমন অসংখ্য আউলিয়া দরবেশের আস্তানা, দরগাহ আর মসজিদ ঘিরে গড়ে ওঠে তাদের ধর্মানুসারী মুসলিম জনবসতি। এসব পীর-আউলিয়া দূর দেশ থেকে এলেও তাদের মোহনীয় ব্যক্তিত্ব ও চারিত্রিক গুণাবলিতে আকৃষ্ট হয়ে মানুষ ব্যাপক হারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। যেমন আজকের বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলাটি একসময় নদীয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত এবং ভারতের সীমান্তবর্তী হলেও এখানে আসা পীর হজরত মেহের শাহের প্রভাব এত বেশি ছিল যে এ জেলার শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষই এখন মুসলমান। আবার বিভিন্ন এলাকায় আদি বাসিন্দা এবং ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা সনাতন ধর্মীদের নিয়ে গড়ে উঠল পাশাপাশি হিন্দু জনগোষ্ঠীও। শত শত বছরে এভাবেই গড়ে ওঠে আজকের বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরাসহ ধর্মীয় সম্প্রীতির এ বিশাল বঙ্গভূমি। প্রকৃতির বৈরিতার সাথে পাল্লা দিয়ে গড়ে ওঠা এ জনগোষ্ঠী প্রকৃতিগতভাবেই হয়ে উঠে কঠোর পরিশ্রমী, সাহসী ও মেধাবী। ক্রমেই এ জাতি সামরিক শক্তি ও শাসনব্যবস্থার পাশাপাশি কৃষি ও শিল্পে দারুণ উন্নতি লাভ করে। মসলিন বস্ত্রসহ নানা শিল্পে এ জনগোষ্ঠীর উদ্ভাবনী যুগে যুগে পৃথিবীর অনেককেই আকৃষ্ট করেছে। সে আকর্ষণেই ইবনে বতুতা আর হিউয়েন সাঙ-এর মতো বিশ্ববরেণ্য পরিব্রাজকরা এ দেশে এসে মুগ্ধ হয়েছেন আর নানা বর্ণনায় এ দেশকে তুলে ধরেছেন পৃথিবীর কাছে।

তেরো শতকের দিকে সুলতান সামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ প্রতিষ্ঠিত বাংলার সুলতানি আমলে প্রবল পরাক্রমশালী সুলতান গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করে যখন দেশ শাসন করছিলেন তখন বাংলার নাম-ডাক চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কালক্রমে বাংলা হয়ে ওঠে বিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। পুরো ভারতে বাংলা এতই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে মুঘল সম্রাটগণ তাদের সমরকুশলী সেনাপতিদের নেতৃত্বে বিরাট বাহিনী পাঠিয়েও বাংলাকে কাবু করতে পারছিলেন না। পরবর্তীতে সম্রাট আকবর এক কুশলী পদ্ধতি অনুসরণ করেন। তিনি নতুন বঙ্গাব্দ চালু করে খাজনা আদায়ের বিশেষ এক সৌহার্দ্যপূর্ণ পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলার মানুষকে কাছে টেনে নেন। এ পথেই সম্রাট জাহাঙ্গীর ও শাহজাহান, মীরজুমলা, শায়েস্তা খান আর ইসলাম খাঁদের মতো জনদরদি অমাত্যদের বাংলার সুবেদার করে পাঠান। তাদের শাসনামলে বিভিন্ন জনহিতকর পদক্ষেপের কারণে বাংলা হয়ে ওঠে এক ঐশ্বর্যপূর্ণ শস্যভাণ্ডার। খাদ্যশস্যের পাশাপাশি শিল্প খাতেও উন্নতি ঘটল রীতিমতো চোখ ধাঁধানো। টেক্সটাইল, সিল্ক, জাহাজ নির্মাণসহ কয়েকটি শিল্প খাতে এমন অভাবনীয় উন্নতি হলো যে, বাংলার অর্থনীতি বিশ্ব জিডিপির ১২ শতাংশে পৌঁছায় যা সে সময়কার পুরো ইউরোপের সামগ্রিক জিডিপির মানকেও ছাড়িয়ে যায়। মুঘল শাসনামলে সুবিশাল ভারতবর্ষের কটন টেক্সটাইল, সিল্ক ও মসলিনের কেন্দ্রই ছিল এ বাংলা। মধ্য এশিয়ার বাজারে মসলিন বস্ত্র এতই জনপ্রিয় ছিল যে এর আর এক নাম ছিল ‘ঢাকা’। তৎকালীন বিশ্ব পরাশক্তি উপনিবেশবাদী ডাচদের এশিয়া থেকে আমদানির ৪০ শতাংশই যেত এ বাংলা থেকে। জাপান, ইউরোপ আর আমেরিকাও ছিল বাংলার টেক্সটাইলের বড় গ্রাহক।

বাংলার সমৃদ্ধির এক চমৎকার বিবরণ পাওয়া যায় বিশ্বখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতার বর্ণনায়। তিনি আজকের মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য হয়ে চট্টগ্রাম দিয়ে বাংলায় ঢোকেন। অনেক জায়গা ভ্রমণের পর তিনি সুলতানি শাসকদের রাজধানী সোনারগাঁওয়ে পৌঁছান। তার বর্ণনাতেই জানা যায়, সে সময় বাংলার মানুষ সুখে-সমৃদ্ধিতে ছিল । হাটে ক্রীতদাস বেচাকেনা হতো। তখন এক টাকায় ৩৩ মণ ধান/৮ মণ চাল এবং প্রতি টাকায় ৭০ মণ ঘি/৭০ মণ চিনি পাওয়া যেত। একটি বড়সড় ষাঁড়ের দাম ছিল মাত্র তিন টাকা। এমন আরো অনেক চমকপ্রদ বর্ণনা। এ কারণেই সম্রাট আওরঙ্গজেব বলেছিলেন বাংলা হলো বিশ্বের স্বর্গরাজ্য।

এসব প্রাচুর্য আর সম্পদই একসময় বাংলার কাল হয়ে দাঁড়াল। এমনিতেই পর্তুগিজ, ওলন্দাজ ও আরাকানীয় জলদস্যু আর বর্গীদের উৎপাত ও লুটতরাজ ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা। উপকূলীয় এলাকায় তারা প্রায়ই ধন সম্পদ লুট করে পালিয়ে যেত। তাদের উৎপাত এত বেশি ছিল যে এক সময় বাংলার ঘরে ঘরে মায়েরা তাদের শিশুদের ঘুম পাড়াতেন বর্গীদের ভয় দেখিয়ে। এমনকি এ বর্গীদের নিয়ে রচিত ছড়া পাঠ্য বইতেও স্থান করে নিয়েছিল। আর এদেরই দেখানো পথ ধরে একসময় ইংরেজ বণিক গোষ্ঠী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ঢুকে পড়ল বিশ্ব বাণিজ্যের সে সময়ের প্রাণকেন্দ্র বাংলায়। মৃতপ্রায় অর্থনীতির দেশ ব্রিটেনকে বাঁচানোর বিকল্প আর কোনো পথ তাদের ছিল না। নৌপথে এসে তারা আস্তানা গড়ে কলকাতায়। তারা জানত স্বাধীনচেতা বাঙালিকে যদি কুপোকাত করা যায় তবে দিল্লির নিভু নিভু মোগল সাম্রাজ্যের শেষ প্রদীপটি নিভিয়ে দেয়া খুবই সহজ। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার বিশাল সাম্রাজ্যের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার শৌর্য-বীর্য আর প্রতিপত্তির খ্যাতি তখন তুঙ্গে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লর্ড ক্লাইভ জানত সম্মুখ সমরে নবাবের বিশাল বাহিনীর সামনে তারা দাঁড়াতেই পারবে না। তাই আশ্রয় নিলো ষড়যন্ত্রের। ১৭৫৭ সনের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিশাল বাহিনীর পরাজয় ঘটে। তারপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আর বেশি বেগ পেতে হয়নি। আর এর সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হলো ইংরেজদের দুঃশাসন। আজ আমরা হয়তো ভুলে গেছি যে, ইংরেজদের এই দুঃশাসন, জোর করে খাজনা আদায়, নানা নিপীড়ন-নির্যাতন, একই সঙ্গে ইংরেজ নীলকরদের জবরদস্তিমূলক নীল চাষের কারণে ফসলি জমি হারিয়ে বাংলার চাষিরা নিঃস্ব হয়ে গেল। যে বাংলায় একদিন ঘরে ঘরে গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ নিয়ে অনাবিল শান্তি বিরাজ করত সে বাংলায় ইংরেজ শাসনের মাত্র বারো বছরের মাথায় ১৭৬৯ সালে তথা ১১৭৬ বঙ্গাব্দে ইতিহাসের বৃহত্তম দুর্ভিক্ষে (ছিয়াত্তরের মন্বন্তর) বাংলার তখনকার জনসংখ্যার প্রায় এক- তৃতীয়াংশ মানুষ প্রাণ হারায়। যে বাংলা ছিল সুজলা-সুফলা, ভারতবর্ষের শস্যভাণ্ডার, যে বাংলার ঘরে ঘরে ছিল হাসি আর আনন্দে ভরপুর সে বাংলা সহসাই পরিণত হলো এক দুর্ভিক্ষের জনপদে। অথচ আমাদের অর্থ সম্পদ-সম্পত্তি লুটপাট করে ভেঙে পড়া অর্থনীতির দেশ ইংল্যান্ডের জনপদসমূহ হয়ে উঠল সমৃদ্ধ। কর্মহীন ও অর্থকষ্টে জর্জরিত ইংরেজরা পাড়ি জমালো ভারতবর্ষে নানান ধরনের চাকরি আর বাণিজ্যিক দায়িত্ব নিয়ে। অফিস আদালতে কর্মক্ষেত্রে শুধু পিয়ন-কেরানি এদেশীয়, আর সব হর্তা-কর্তা ইংরেজ সাহেবরা। এ দেশেরই ময়ূর সিংহাসন সে দেশের রাজা-রাণীর রাজকীয় আসন, আবার আমাদের কোহিনূর-মানিক্য মুকুটে পরেই রাজকার্য চালায়।

আমরা কিভাবে ভুলব ইংরেজ শাসনের নিপীড়ন-নির্যাতন? ভুলে তো যাওয়া সম্ভব নয় যে, এ দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় অকুতোভয় নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ও তার পরিজনকে কি নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল? পরবর্তীতে এ দেশের স্বাধীনতা রক্ষার শেষ প্রচেষ্টায় ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহে অংশগ্রহণের অপরাধে দিল্লির রাস্তায় রাস্তায় অলি-গলিতে অসংখ্য এ দেশীয় সৈন্যকে কী নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল? সিপাহি বিদ্রোহের মাঠপর্যায়ে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের দুই পুত্রকে হত্যা করে তাদের বিচ্ছিন্ন মস্তক সম্রাটের কাছে পাঠানো হয়েছিল শুধু শোকাহত সম্রাটকে কষ্ট দেয়ার জন্য। এমনকি সিপাহি বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে ৮২ বছরের বৃদ্ধ সম্রাটকে ভারত ছেড়ে রেঙ্গুনে পরিবার পরিজনসহ একটি পরিত্যক্ত ছোট বাড়িতে জীবনের শেষ কয়টি বছর নির্মম কষ্টে নির্বাসনে কাটাতে হয়। কী নিদারুণ যে, ভারতবর্ষের মহাপরাক্রমশালী সম্রাট যিনি একাধারে একজন উচ্চমানের কবিও ছিলেন তার জীবনের শেষ বছরগুলোতে দৈনিক খরচের জন্য ইংরেজদের বরাদ্দ ছিল মাত্র ১১ টাকা। এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ সংগ্রামী পুরুষ এবং ভারতবর্ষের কোটি কোটি মানুষের অতি প্রিয় সম্রাটের প্রতি এমন নির্দয়, নৃশংস ও নিচুমানের আচরণ কি এদেশের মানুষ ভুলতে পারে? সম্ভব নয়। এমনকি কবি-সম্রাট নিজেও মৃত্যুর পূর্বে আফসোস করেই লিখে গিয়েছিলেন-
‘জাফর, তুমি এতই দুর্ভাগা যে,
স্বদেশের মাটিতে কবরের জন্য তোমার দু’গজ জায়গাও মিলেনি।’

এ পঙ্ক্তিটি সম্রাটের কবরের গাঁয়ে লেখা। একবার ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী রেঙ্গুন সফরের সময় সম্রাটের কবরে গিয়ে এ লেখাটি দেখেন। উত্তরে তিনি লিখেছিলেন, ‘হে মহান কবি-সম্রাট দুর্ভাগ্য তোমার নয়। বরং তোমার এবং আমাদের উভয়েরই সৌভাগ্য যে তোমার সেদিনের আত্মদানই ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল।’

শুধু ইংরেজ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পথ রোধ করার অপরাধে কিশোর ক্ষুদিরামকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হয়েছিল। এ দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার উদগ্র বাসনায় বাঁশের কেল্লা বানিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে অসম সাহসী নেসার আলী তিতুমীর ও শত শত সহযোদ্ধা অকাতরে প্রাণ দিয়েছিলেন। অকুতোভয় স্বাধীনতা সংগ্রামী সূর্যসেন আর প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মত্যাগ আমরা ভুলি কেমনে? ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অপরাধে এ দেশেরই সূর্যসন্তান নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস সেই যে নিখোঁজ হয়ে গেলেন আর ফিরে এলেন না। এমন শত সহস্র মহাপ্রাণ অবলীলায় তাদের জীবন বিলিয়ে গেছেন শুধুই ব্রিটিশদের কাছ থেকে এদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে। শুধু ব্রিটিশরাই নয়। দুই শ’ বছরের ব্রিটিশ শাসনের পরবর্তী ২৫ বছর আবার আমাদের নতুন করে পাকিস্তানিদের শাসন-শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিতে হয়েছিল লাখ লাখ মানুষকে। ইজ্জত হারাতে হয়েছিল অগণিত মা-বোনকে। এ দেশের সম্পদ লুণ্ঠিত হয়েছে বেসুমার। এতসব আত্মবলিদানের বিনিময়েই আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা।

আজ আমাদেরই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জীবন ছিনিয়ে নেয়ার জন্য যারা দায়ী তাদের জবাবদিহিতায় দাঁড় করানো। তাদের সীমাহীন অপশাসন, নিপীড়ন, নির্যাতন, বিপুল সম্পদ-বিত্ত লুণ্ঠন আর লক্ষ প্রাণ অকালে ঝরিয়ে নেয়ার দায় স্বীকার করে কি তারা আমাদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছে? দেয়নি তো। ক্ষমা চেয়েছে? ন্যূনতম দুঃখ প্রকাশ করেছে? তাও তো করেনি। তাহলে আমরা কেন আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা দাবি করব না? ক্ষতিপূরণইবা চাইব না কেন? আমাদের দেশ থেকে লুণ্ঠিত লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ কি আমরা ফেরত চাইতে পারি না? মনে করার কোন কারণ নেই যে, এতদিন পরে কেন এসব দাবি? এতদিন পরে হলেই দাবি তামাদি হয়ে যায় না। আমাদের দাবি যুক্তিসঙ্গত, আমাদের পাওনা আমাদের অধিকার। সুতরাং আমরা দাবি জানাতে পারি এবার পরিশোধ করুন আমাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত সম্পদের ঋণ। কবির ভাষায় ‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ’।

লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড


আরো সংবাদ



premium cement
সাঙ্গু নদীতে নৌকা বাইচের মাধ্যমে শুরু হলো বান্দরবানে সপ্তাহব্যাপী ক্রীড়া মেলা ফার্মগেটে ৭ তলা ভবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে ইউক্রেনের ডনেটস্ক অঞ্চলের গ্রামগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রাশিয়া পর্ণো তারকাকে অর্থ দেয়ার মামলা খারিজের আবেদনের অনুমতি পেলেন ট্রাম্প দোহারে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর নামে ছাত্রলীগ নেতার মামলা ‘কোরআন-সুন্নাহর আদর্শ ছাড়া আলেমদের জন্য রাজনীতি জায়েজ নেই’ চীনা দূতাবাসের আউটস্ট্যান্ডিং পার্টনার অ্যাওয়ার্ড অর্জন অ্যাবকার ঢাবির রাজনীতিবিষয়ক বিশেষ কমিটির কার্যক্রম শুরু রোববার রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিকদের বিক্ষোভ রেহানার সুরের মূর্ছনায় হেমন্তের এক মুগ্ধ সন্ধ্যা একুশে বইমেলায় স্টলভাড়া কমানোর দাবি

সকল