২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ম্যাকিয়াভেলির রাজনীতিতত্ত্ব ও আজ

-

‘বলিষ্ঠ হও সিংহের মতো এবং ধূর্ত হও শৃগালের মতো। নিশ্চিহ্ন করে দাও আসল শত্রুদের। নির্ভাবনায় শাসন করবার প্রয়োজনে নিজের পরিবারের সদস্যদের নিশ্চিহ্ন করতে হলেও করে ফেলো।’

ম্যাকিয়াভেলির লিখিত বিখ্যাত দ্য প্রিন্স গ্রন্থ ভালো সরকারের বৈশিষ্ট্য জানিয়েছে এবং প্রজাশাসনের পন্থা নির্দেশ করেছে এভাবেই। বলা হয়েছে সিংহ ও শৃগাল একই সাথে হতে হবে শাসককে। কারণ সিংহ ফাঁদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না এবং শেয়াল পারে না নেকড়ে থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে। আপনাকে তাই শেয়াল হতে হবে, যাতে ফাঁদ চিনতে পারেন, আর সিংহ হতে হবে যাতে নেকড়ে তাড়াতে পারেন।

নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি কেবল দার্শনিক ও রাষ্ট্রচিন্তক ছিলেন না, তার চিন্তা থেকে জন্ম নিয়েছে ম্যাকিয়াভেলিবাদ আর তাকে শনাক্ত করা হয় আধুনিক রাষ্ট্রদর্শনের জনক অভিধায়।

৩ মে ১৪৬৯ সালে ইতালির ফ্লোরেন্সে জন্ম তার, মৃত্যু ২১ জুন ১৫২৭ সালে।

পশ্চিমা দুনিয়ায় তখন মধ্যযুগের বিবর থেকে মাথা তুলছে আধুনিক কাল। এর প্রধান এক দিশানির্দেশক ভাবা হয় তাকে। রাজতন্ত্রের বদলে আধুনিক জাতিরাষ্ট্র ও জাতীয়তাবাদের প্রস্তাবনা তার তরফে লাভ করে ইউরোপ। ইতালিতে রাজতন্ত্রী আদর্শবাদীদের মধ্যকার কলহ তখন অস্থির এক রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা তৈরি করেছে। ম্যাকিয়াভেলি এসব সঙ্কটের ভেতরে ঢুকে পড়েন। ১৪৯৪ সালে, ইতালিতে ষাট বছরের ‘হাউজ অব মেডিসি’র শাসনের অবসান ঘটিয়ে আবার প্রজাতন্ত্র চালুর চার বছর পরে ২৯ বছর বয়সী ম্যাকিয়াভেলি ফ্লোরেন্সের সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। প্রথমে ছিলেন ‘লিবার্টি অ্যান্ড পিস’-এর সেক্রেটারি, পরে হন সামরিক ও পররাষ্ট্র বিভাগের একজন কার্যনির্বাহী। ১৫০২ সালে তিনি ম্যারিয়েট্টা করসিনি নামের এক রমণীকে বিয়ে করেন।

রাজনৈতিক অস্থিরতার চক্করে তাকে ঘুরতে হয় নানা কূটনৈতিক মিশনে। ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ডসহ প্রভৃতিতে বারবার। জেলে যেতে হয় ষড়যন্ত্রের অভিযোগে। সময়টি ১৫১২ সাল। ইতালিতে তখন রাজবংশে বদল এসেছে। মেডিসির শাসনের নবসূচনা হয়েছে। কারাগারে অত্যাচার তাকে জর্জরিত করে। মুক্তি পান পোপ দশম লিউয়ের হস্তক্ষেপে। এরপর রাজনৈতিক জীবন ছেড়ে পুরোদস্তুর লেখকজীবনে তাকে আমরা দেখি। নাটক, রাজনৈতিক পুস্তক, ফ্লোরেন্সের ইতিহাস, টাইটাস লিবিয়াস বিষয়ক বিশ্লেষণ... বিচিত্র রচনা সম্পন্ন হয় তার কলমে। কিন্তু ১৫১৩ সালে রচিত এবং ১৫৩২ সালে, তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত দ্য প্রিন্স তাকে যে খ্যাতি, প্রতিষ্ঠা ও বরেণ্যতা দেয়, তা এক কথায় অবিস্মরণীয়। ম্যাকিয়াভেলির যত প্রশংসা ও নিন্দা, এর মূলে রয়েছে মূলত এই বই।

ফ্লোরেন্সের তৎকালীন রাজা পিয়ারো ডি মেডিকির ছেলে প্রিন্স লরেন্সের জন্য এবং তাকে উৎসর্গ করে রচিত হয় দ্য প্রিন্স। উৎসর্গছত্রে ম্যাকিয়াভেলি লেখেন, ‘এ পুস্তক আপনার যোগ্য নয়, এ আমি জানি। তবুও আমি আপনার মহানুভবতার সাথে পরিচিত বলেই ভরসা রাখি যে, আপনি এ নগণ্য উপহারটুকু গ্রহণ করবেন। আমি বহু বছরের পথপরিক্রমায় বহু বাধাবিপত্তি ও বিপদের মধ্য দিয়ে যা শিখতে পেরেছি, তা যতদূর সম্ভব স্বল্প সময়ে আপনাকে বোঝার সুযোগ করে দেয়ার জন্যই সামান্য এই পুস্তক রচনা।’ ম্যাকিয়াভেলি যোগ করেন- ‘আমি যে মানসিকতা ও অভিপ্রায় নিয়ে এ ক্ষুদ্র উপহার প্রদানে মনস্থ করেছি আপনিও তেমনি মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে একে গ্রহণ করবেন বলে আশা করছি। আপনি যদি মনোযোগসহকারে এ পুস্তক পাঠ ও তার বিষয়াবলি অনুধাবন করেন, তা হলে সবিনয় নিবেদন করছি, আপনার যাবতীয় গুণাবলি ও ভাগ্যের সম্ভাবনা বাস্তবে মূর্ত করে তোলার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা ও মহত্ব আপনার আয়ত্তে আসবে।’

বইটি সম্পর্কে উচ্চাভিলাষী ছিলেন ম্যাকিয়াভেলি। মানুষ সম্পর্কে এতে তার ধারণা ছিল নেতিবাচক। তার মতে, ‘সাধারণভাবে মানুষ সম্পর্কে আমরা বলতে পারি যে তারা অকৃতজ্ঞ, চঞ্চল, প্রতারক, কাপুরুষ ও স্বার্থপর।’ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে এতই সহজ এবং তাদের তাৎক্ষণিক চাহিদা দ্বারা এতই নিয়ন্ত্রিত যে, একজন প্রতারকের জন্য ঠকাবার লোকের অভাব হয় না।

ম্যাকিয়াভেলির ‘মানুষ’ যদিও মন্দময়, কিন্তু তাদের স্বাভাবিক হীন চরিত্রকে ‘সামষ্টিক ভালো’তে পরিণত করার সবচেয়ে ভালো হাতিয়ার হচ্ছে রাষ্ট্র। মানুষের এই নেতিবাচক কিন্তু সহজাত বৈশিষ্ট্যগুলোকেই যদি সঠিক পথে পরিচালিত করা যায়, তা হলে তা সামষ্টিক কল্যাণে কাজে লাগবে। এ জন্য ম্যাকিয়াভেলির চাই শক্তিমান শাসক। যিনি মানুষের শঠতাকে কাজে লাগাবেন কাঁচামালের মতো।

তিনি দেখান, মানুষ যেহেতু মূলত শঠ ও লোভী, তাই শাসকের জন্য মানুষের হৃদয় জয় করার চেয়ে তাদের প্রতারিত করা এবং ভয় দেখানো গুরুত্বপূর্ণ। এ দুই শক্তিকে জোরদার করা এবং এর চর্চাই সার্বভৌমের পক্ষে বেশি কার্যকর। রাষ্ট্র ও ক্ষমতাকে সংহত করতে যদি মিথ্যা, বিশ্বাসঘাতকতা ও নিষ্ঠুরতার দরকার হয়, তা হলে সেটিই ভালো। রাষ্ট্র বিশ্বাস ভঙ্গ করে হত্যা করতে পারে এবং এমন ঘটনা সামনে এনে তিনি তার প্রশংসা করেন। তার পরামর্শ, যারা অভ্যন্তরীণ দুশমন, তাদের সাথে আলোচনার ভাষা হলো হত্যা। একযোগে তাদের নির্মূল করতে হবে, যেন রাষ্ট্রের জন্য দুর্ভোগের দীর্ঘস্থায়ী হুমকি হয়ে তারা বাঁচতে না পারে। স্বল্পস্থায়ী হিংস্রতা ভালো। সে খুব দীর্ঘস্থায়ী না হলে মানুষকে তেমন বিরক্ত করে না। রাষ্ট্র যেন নাগরিকদের আর্থিক স্বার্থ রক্ষায় অধিক গুরুত্ব দেয়; কারণ সম্পত্তির চেয়ে মানুষের জীবন হারানো সহজ। বিচিত্র যুক্তি ও অভিজ্ঞান দিয়ে আলোচনায় ম্যাকিয়াভেলি এই বার্তা দেন যে, ‘ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য রাজাকে প্রায়ই সততা, করুণা ও ধর্মীয় আদেশের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়, তবে তাকে অবশ্যই সাবধানে ভান করতে হবে সহানুভূতির, সততার ও ধার্মিকের। ধর্মগুলো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক হাতিয়ার কারণ তারা মানুষের মনকে আরো বেশি প্রভাবিত করতে সহায়তা করে। বুদ্ধিমান শাসক ও আইনপ্রণেতারা বারবার দেবতাদের কথা বলেন, পবিত্র ইচ্ছার কথা বলেন, কারণ ধর্ম সহায়তা করে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে, গণইচ্ছার সমাবেশে, আধিপত্য বিস্তারে। রাষ্ট্রের উচিত মানুষকে পথ দেখানোর জন্য ধর্মকে ব্যবহার করা, যেহেতু লোকেরা ব্যক্তির আদেশকে সন্দেহ করে, কিন্তু দেবতার আদেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলে না।

ম্যাকিয়াভেলির বিচারে ক্ষমতা যার, শাসন করবে সেই। ক্ষমতা অনুপস্থিত মানে শাসন কর্তৃত্বও অনুপস্থিত। কিন্তু নৈতিকতা কাউকে ক্ষমতায় বসায় না। শাসনের কাছে জনতার প্রয়োজন নিরাপত্তা ও জনকল্যাণ। তিনি তা করবেন। কিন্তু তার জন্য দরকার জনতার আনুগত্য। তবে সেটি অর্জন করতে হয় ক্ষমতার উপযুক্ত ব্যবহার দিয়েই। কেননা চরম ক্ষমতাশালী শাসককে জনগণ সর্বান্তকরণে মান্য করতে বাধ্য। মানুষকে হয় আদর করা উচিত, নয়তো পিষে মারা উচিত। যেহেতু ভয় আর ভালোবাসা একসাথে থাকতে পারে না, আমাদেরকে অবশ্যই যেকোনো একটি বেছে নিতে হয়। শাসকের জন্য ভালোবাসার কারণ না হয়ে ভয়ের কারণ হওয়াই অধিক নিরাপদ। কারণ ভালোবাসার সাথে দায়বদ্ধতার সম্পর্ক আছে; মানুষের সঙ্কীর্ণতার কারণে যে কোনো সময় তা লঙ্ঘিত হতে পারে। কিন্তু আপনাকে ভয় পেলে শাস্তির ভয়ে তারা তা লঙ্ঘন করতে পারে না। তীব্র আঘাতের প্রতি তার পক্ষপাত। যদি কাউকে আঘাত করতেই হয়, তা এমন প্রচণ্ডভাবে করা উচিত যাতে তার প্রতিশোধপরায়ণতাকে আর ভয় পেতে না হয়। ছোটখাটো আঘাত করলে পরিশোধ নেয়ার সুযোগ নেবে, কিন্তু যদি তাকে সম্পূর্ণ অচল করে দেন তা হলে তাদের আর কিছুই করার থাকে না। যুদ্ধ এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে স্থগিত করা যায় কিন্তু এর সুবিধা পাবে আপনার শত্রু। রাষ্ট্রের অবশ্যই থাকবে শক্তিমান সেনাবাহিনী। যুদ্ধ, এর আকার আর উপাদান ছাড়া একজন রাষ্ট্রনায়কের আর কোনো বিষয়-চিন্তা থাকা উচিত নয়। একজন শাসকের জন্য এটিই উপযুক্ত শিল্পকলা।

ম্যাকিয়াভেলি পণ্ডিত, বুদ্ধিজীবী, দার্শনিক। শাসকদের প্রতি তার ভক্তিগদগদ আনুগত্য। তাদের একচ্ছত্র ক্ষমতা তার প্রত্যাশিত। শাসিতের জীবন ও অধিকার তার কাছে কোনো মহিম অবস্থান পায় না। আধুনিক রাজনীতিতে অনৈতিকতার বিজয়কে ঘোষণা করেছিল তার তত্ত্ব। শক্তি-সাহস-নির্মমতা দিয়ে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার মন্ত্র দিয়েছিলেন তিনি। যাতে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য নৈতিক, অনৈতিক সব কিছু করার পরামর্শও ছিল শাসকদের প্রতি।

একজন বুদ্ধিজীবীর দায় যেখানে মানুষ হিসেবে মানুষের স্বাধীনতা ও ন্যায়ের জন্য লড়াই, সেখানে ম্যাকিয়াভেলি দিশানির্দেশ করেছেন এর বিপরীতে, ক্ষমতাসীনদের স্বার্থরক্ষায়। তার সময়ে রাজাগণ পণ্ডিত-বুদ্ধিজীবীদের পালন-পোষণ করতেন। ফলে এমন বহু পণ্ডিত-বুদ্ধিজীবীর উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু আজকের দুনিয়ায় কি আমরা দেখছি না এমন বুদ্ধিজীবী, পণ্ডিত ও প্রচারকর্মীদের, যারা মানুষ হিসেবে মানবস্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে না থেকে স্তাবক ও চাকর হিসেবে ক্ষমতার পক্ষে কাজ করে চলছেন?

ম্যাকিয়াভেলির তত্ত্বে যেমন, তেমনি তাদের তত্ত্বে ও লেখায় থাকে দ্বিচারিতা ও আত্মস্বার্থ। তা কিভাবে কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে? এটিই যাদের নীতি, তাদের রাজনীতি স্থায়িত্ব পায় না। সাময়িক সাফল্য এতে হয়তো আসে, কিন্তু অচিরেই তা ব্যর্থতার পরিণতিতে হারিয়ে যায়।

গুণ অর্জনের চেয়ে গুণের ভান করা, ধার্মিক হবার চেয়ে ধার্মিক হিসেবে নিজেকে জাহির করা, প্রতিশ্রুতি পূরণের চেয়ে চটকদার প্রতিশ্রুতি দিতে থাকা, নৈতিকতার পরিবর্তে ক্ষমতার উপাসনা করা, রাজনীতি থেকে অধিকার ও বৈধতাকে উপেক্ষা করা এবং নিরঙ্কুশ ক্ষমতা না থাকলে অধিকারের মূল্যকে অবজ্ঞা করা কখনোই আদর্শ বাস্তবতা হতে পারে না। কিন্তু ম্যাকিয়াভেলি এ বাস্তবতার প্রস্তাবক।

যুবরাজ লরেন্স যদিও সেই সময় ম্যাকিয়াভেলির তত্ত্ব গ্রহণ করেননি; কিন্তু পরে দুনিয়াতে যত স্বৈরশাসক ও একনায়ক এসেছেন তাদের প্রায় সবাই দ্য প্রিন্সকে মূল উপজীব্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। হিটলারের মতো শাসক তো অকারণেই গ্রন্থটিকে নিজের বালিশের পাশে রাখতেন না।

পঞ্চদশ শতক থেকে আজ অবধি দুনিয়ার ক্ষমতাগর্বী ও শোষক, নিপীড়ক শাসকরা ম্যাকিয়াভেলি থেকে পাঠ নিয়ে চলছে। পশ্চিমা দুনিয়া এ তত্ত্বকে সঙ্গী করে নিজেদের রাজনীতিকে বিশেষ আকার দিয়েছে। তারা দুনিয়াজুড়ে উপনিবেশ কায়েম করেছে, জাতিগুলোর স্বাধীনতা হরণ করেছে, হত্যার ক্ষমতা ও প্রতারণার মাধ্যমে তাদের বশীভূত করেছে, বিশ্বের রাজনীতিপ্রবাহ নিজেদের অনুকূলে চালিত করেছে, নিজেদের পরিসরে তৈরি করছে জাতিরাষ্ট্র ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাস্তববিচারী ঐক্যের বাতায়ন। ম্যাকিয়াভেলির প্রতিটি কথা হয়তো গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু সেখানকার রাজনীতির আধুনিক চিত্র ও চরিত্র গড়ে দেয় ম্যাকিয়াভেলিবাদ। ফলে পশ্চিমা রাজনীতির মনোস্বভাবের আঁতুড়ঘর হয়ে ওঠে দ্য প্রিন্স এবং ক্রমেই সারা বিশ্বে শাসকবর্গ ও রাজনীতিকদের মনোস্বভাবে এর পদচ্ছাপ প্রগাঢ় হতে থাকে। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের ধারায় আজকের দুনিয়ায় ম্যাকেয়াভেলির অনেক কিছুই প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে, কিন্তু গণবিরোধী শাসকশ্রেণী ও তাদের বুদ্ধিজীবীদের আচার ও বিচারে তিনি রাজত্ব করে চলছেন এখনো। নানা তিক্ত বাস্তবতা ও অভিজ্ঞতা ম্যাকিয়াভেলির দৃষ্টিকে নেতিবাদী করে তুলেছিল। সাধারণভাবে ম্যাকিয়াভেলিয়ান এক শাসক অনৈতিক উপায়ে শাসন ক্ষমতা দখল করে জনগণকে মুগুরপেটা করে চার দিকে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টিকারী হতে পারেন। কিন্তু তিনি একেবারে জনবিচ্ছিন্ন শাসক হতে পারেন না। তার মধ্যে থাকবে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য। ১. তিনি হবেন ভয় বা ভালোবাসা সৃষ্টিকারী; তবে ঘৃণিত হবেন না। ২. জনগণের সমর্থন থাকবে তার। ৩. ব্যক্তিগত গুণাবলির প্রকাশ থাকবে। ৪. অস্ত্র অর্থাৎ শক্তির প্রয়োগ থাকবে ও ৫. বুদ্ধিমত্তা থাকবে।

অবাক ব্যাপার হলো আজকের দুনিয়ায় অনেক শাসক এমন, যাদের শাসনপ্রক্রিয়া ও শাসকসুলভ মান ম্যাকিয়াভেলিয়ান একজন শাসকের চেয়েও অনেক নিচে। কারণ তারা জনগণের সমর্থনের তোয়াক্কা করছেন না এবং জনতার কাছে নিজেদের ঘৃণিত করে চলছেন অব্যাহতভাবে। কিন্তু বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে ভাবছেন না, এর ফলে ক্ষমতার ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে?

বিস্ময়কর যে, তাদের বুদ্ধিজীবীরাও তা লক্ষ্য করছেন না!

লেখক : কবি, গবেষক
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement