২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

আফগানিস্তান দখলে ওয়ার অন টেরর ছিল ‘বাহানা’

- ছবি : নয়া দিগন্ত

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো বাহিনী তথা পশ্চিমা শক্তিগুলো আফগানিস্তান দখল করেছিল। দীর্ঘ দু’টি দশক নিষ্ফল এক যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষের জীবন এবং ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে পরাজয় বরণ করে রাতের আঁধারে পালিয়ে এসেছে। পশ্চিমা শক্তি সত্যিকারার্থে ‘সন্ত্রাস’কে একটি অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল। এ ধরনের আক্রমণের অজুহাত অনেক আগেই প্রমাণিত হয়েছে বুশ-বেয়ারের ইরাক দখলের মাধ্যমে। আসলে শীতলযুদ্ধের অবসানের পর ‘সমাজতন্ত্র’ নামের শত্রু বিলীন হলে মার্কিনিরা ‘সন্ত্রাস’কেই তাদের শত্রু হিসেবে খুঁজে পায়। ‘সন্ত্রাস’ দমনের নামে আর্থিক ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থ অর্জনের লক্ষ্যে কাক্সিক্ষত দেশে আক্রমণের নীতি গ্রহণ করে। এমনই একটি উদ্দেশ্যে মার্কিনিরা তাদের পশ্চিমা মিত্রদের নিয়ে বিশ বছর আগে আফগানিস্তান দখল করেছিল। ‘৯/১১’ আক্রমণের ঘটনা ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম এক অপরাধ ছিল। কিন্তু সেই সন্ত্রাসী আক্রমণের সাথে আফগান সরকার বা কোনো আফগানের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। শুধু লাদেনের অবস্থানের প্রেক্ষিত পুঁজি করেই মার্কিনিরা সেদিন আফগানিস্তান আক্রমণ করে দখল করেছিল।

আফগানিস্তানের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব:
মহাকবি ইকবাল আফগানিস্তানকে বলেছেন, এশিয়ার ‘হৃদ-স্থল’। লর্ড কার্জন বলেছেন, এশিয়ার ‘ককপিট’। বিখ্যাত ‘সিল্করোড’ আফগানিস্তানের ওপর দিয়েই ছিল। দেশটি ইরান, আরব সাগর, ভারত এবং মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগ পথে অবস্থিত হওয়ায় শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ঔপনিবেশিক শক্তিসমূহ আফগানিস্তান দখলে আক্রমণ চালিয়েছে। আলেকজান্ডার ৩২৯ খ্রি. পূর্বাব্দে আফগানিস্তান জয় করেছিলেন। ৮৭৪ খ্রি. থেকে ৯৯৯ খ্রি. পর্যন্ত পার্সিয়ানরা আফগানিস্তান শাসন করে। ১২১৯ সালে চেঙ্গিস খান আফগানিস্তানে আক্রমণ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান। ১৩৮১ সালে চেঙ্গিস খানের বংশধর তৈমুর লং হেরাত দখল করেন। এরপর ব্রিটিশরা উপমহাদেশে উপনিবেশ স্থাপনের পর ১৯ শতকে তিন তিন বার আফগানিস্তান দখলের চেষ্টা করে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে পরাজিত হয়ে ফিরে যায়। বিংশ শতাব্দীতে সোভিয়েত রাশিয়া ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ফিরে আসে। ইতিহাসের শিক্ষাকে উপেক্ষা করে আমেরিকানরাও একবিংশ শতাব্দীতে এসে দখলদারিত্বের মাধ্যমে আফগানিস্তানে একটি তাঁবেদার সরকার গঠন করে পুরো এশিয়া অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালায়। আফগানিস্তানে তাঁবেদার সরকার থাকলে সেখানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে তৎকালীন উদীয়মান প্রতিদ্ব›দ্বী চীন ও রাশিয়াকে সামাল দিতে দ্রæত প্রয়োজনীয় সৈন্য মোতায়েনের সুবিধাদি অর্জন দরকার হয়ে পড়েছিল। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র প্রতিদ্ব›দ্বী ইরানকেও আফগানিস্তান থেকে চাপে ফেলতে সেখানে মার্কিন উপনিবেশ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল।

পাইপলাইন রাজনীতি :
আফগান যুদ্ধের ধাক্কায় সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে যাওয়ার পর মধ্য এশিয়ার ছয়টি দেশ স্বাধীন হয়ে যায় ১৯৯১ সালে। এই দেশগুলোতে প্রচুর তেল ও গ্যাসের মজুদ থাকলেও ভূমিবেষ্টিত হওয়ায় তারা এই সম্পদ বাইরের বাজারে রফতানির সুযোগবঞ্চিত ছিল। এজন্য এসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা তেল-গ্যাস রফতানির একমাত্র উপায় হিসেবে আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে পাইপলাইন বসাতে সর্বাত্মক চেষ্টা শুরু করে। এ অঞ্চলে তেলের মজুদ রয়েছে ৫০ বিলিয়ন ব্যারেল এবং গ্যাসের পরিমাণ ২৩৬-৩৩৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (ওবেই জাগীরদার, ২০২১)। আরব উৎস থেকে প্রাপ্ত তেলের বিকল্প হিসেবে জ্বালানির বিকল্প উৎস এই মধ্য এশিয়ার তেল-গ্যাসের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের লোলুপ দৃষ্টি পতিত হয়। প্রতিদ্ব›দ্বী ইরান ও রাশিয়ার মাটি উপেক্ষা করে একমাত্র আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে পাকিস্তানের করাচি সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত পাইপলাইনই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নিরাপদ ও লাভজনক ব্যবস্থা। কিন্তু ১৯৯৮ সালের পর থেকে তালেবান সরকারের সাথে টানাপড়েন শুরু হলে এ পাইপলাইন স্থাপনে আফগানিস্তানে একটি পশ্চিমা তাঁবেদার সরকার অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তাঁবেদার সরকার বা রাজা-বাদশাহদের বসিয়ে একই কায়দায় ব্রিটিশ ও মার্কিনিরা অদ্যাবধি ওই এলাকার তেল সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই উদ্দেশ্যেই মার্কিন বাহিনী মাত্র দুই মাস যুদ্ধ করে তালেবান সরকারকে হটিয়ে আফগানিস্তানে একটি অনুগত সরকার বসিয়ে টানা ২০ বছর ব্যর্থ চেষ্টা করেছে।

আফগানিস্তানের মজুদ প্রাকৃতিক সম্পদ :
মূলত আফগানিস্তানের বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদের মজুদে প্রাচীনকাল থেকেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ আফগানিস্তানের দিকে লোলুপ দৃষ্টি দিয়েছে। সর্বশেষ আগ্রাসী মার্কিন বাহিনীও এর বাইরে নয়। দুষ্প্রাপ্য মৃত্তিকা ও পাথরের উৎসস্থল হলো আফগানিস্তান। এগুলোর মধ্যে আছে নীলকান্তমনি, চুনি, নীলা, কপার, পান্না, স্ক্যানভিয়াম ও ইউর্কিরিয়াম। কাবুলের ২৫ মাইল দক্ষিণে লগার প্রদেশের মেস এয়াংক খনিতে প্রায় ৬০ মিলিয়ন টন কপার মজুদের সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন দখলদারিত্বের সময় তালেবানদের কঠিন প্রতিরোধের মুখেও আফগানিস্তানে বছরে এক বিলিয়ন ডলারের খনিজ উত্তোলন করা হতো। ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্তি¡ক জরিপ সংস্থার তথ্যমতে উত্তর আফগানিস্তানে গড়ে ২৯০ শত কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত খনিজ তেল ও ১৫ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ রয়েছে। ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন লিখেছেন, ‘পরিবেশ দূষণহীন যানবাহনের ব্যাটারি ও মোবাইল ফোনের ব্যাটারির জন্য আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে কাক্সিক্ষত খনিজ হলো লিথিয়াম মৌল। আর এ খনিজের খনি রয়েছে আফগানিস্তানের মাটির নিচে। এ ছাড়াও দেশটিতে তামা, স্বর্ণ, কয়লা, লোহার আকরিক ও অন্যান্য খনিজপদার্থ আছে। হেলমান্দ প্রদেশের খানাশিন এলাকার কার্বোনাটাইট শিলাতে এক কোটি টনের মতো দুর্লভ ধাতু রয়েছে। আফগান সরকারি কর্মকর্তাদের অনুমান, দেশটির ৩০ শতাংশ অব্যবহৃত খনিজসম্পদের মূল্য কমপক্ষে এক ট্রিলিয়ন ডলার’ (নয়া দিগন্ত : ২৭/৯/২০২১)। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে জীবশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে বৈদ্যুতিক শক্তিকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে যে ব্যাটারি রিচার্জের প্রয়োজন হবে তার জন্য জরুরি হলো লিথিয়াম, তামা, অ্যালুমিনিয়াম ও নিওডিয়াম মৌল। খনিজ লিথিয়ামের সবচেয়ে বেশি মজুদ রয়েছে বলিভিয়ায়। মার্কিন সরকারের হিসাব মতে আফগানিস্তানের লিথিয়ামের মজুদের পরিমাণ বলিভিয়াকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। এক কথায় একুশ শতকের অর্থনীতির জন্য যেসব ধাতবসম্পদ প্রয়োজন তার প্রাচুর্য রয়েছে এই আফগানিস্তান নামের যুদ্ধবিধ্বস্ত দরিদ্রতম দেশটিতে (প্রাগুক্ত)। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই গরিব ঘরের ‘সুন্দরী বউ সবার ভাবি’র মতোই আফগানিস্তান যুগে যুগে সাম্রাজ্যবাদীদের আকৃষ্ট করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সেভাবেই আকৃষ্ট হয়ে আফগানিস্তান দখল করেছিল।

ঠাণ্ডা লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি :
গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আফগান দখল করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়া সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে খান খান হয়ে গেলে সমাজতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পতন ঘটে। এতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর শীতলযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের একক পরাশক্তি হিসেবে বিশ্বে আবির্ভাব ঘটে। পরিণতিতে আমেরিকানদের পররাষ্ট্রনীতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান থেকে পশ্চিমা আদর্শ ও সংস্কৃতির সম্প্রসারণে মনোযোগী হয়ে পড়ে। অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদকে ঠেকাতে নিয়োজিত সামরিক বাহিনীর বিশাল অংশ দায়িত্বমুক্ত বা কর্মহীন হয়ে পড়ে। এই বাহিনীকে প্রথমে নব্বইয়ের দশকে উপসাগরীয় যুদ্ধে মোতায়েন করা হয়। কিন্তু ২০০০ সাল নাগাদ যুদ্ধের ব্যস্ততা স্তিমিত হয়ে এলে নতুন যুদ্ধ ময়দানের প্রয়োজন হয়ে পড়ে সেনাদের ব্যস্ত রাখতে। তখন তাদের আফগানযুদ্ধে মোতায়েন করা হয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে। আমেরিকানরা বিশাল সামরিক বাহিনী ও অবকাঠামো সৃষ্টি করেছিল শীতল যুদ্ধের মোকাবেলায়। শীতল যুদ্ধ শেষ হলে যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে উপসাগরীয় যুদ্ধে এবং পরবর্তীতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যমে একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশাল সামরিক বাহিনীকে ব্যস্ত রাখা হয়েছে। আর অন্যদিকে অস্ত্র ব্যবসায় জারি রাখা, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা নির্মাণের ঠিকাদার এবং বিভিন্ন ধরনের মার্কিন কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা ইত্যাদির মাধ্যমে গাছের আগার এবং তলার সমুদয় ফল ভোগ করার নীতি তারা গ্রহণ করেছিল।

ইসলামভিত্তিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা : মার্কিনিদের আফগানিস্তান আক্রমণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল ধর্ম হিসেবে ইসলামের একটি রাজনৈতিক ভিত্তি রচিত হওয়া। এটি একটি অলিখিত ও অপ্রকাশিত কারণ। সাধারণত বিশ্লেষকরা বিষয়টি বুঝেও নানা কারণে তা প্রকাশ করেন না বা আলোচনায় আনতে চান না। আর শক্তিশালী পশ্চিমা মিডিয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে ইস্যুটি না তোলার কারণে বিভিন্ন দেশীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমও তা প্রকাশ করে না। কারণ, বিশ্বায়নের যুগে পশ্চিমা গণমাধ্যমই মূলত ফিডার মিডিয়া; যা দুনিয়ার অন্যসব মাধ্যম অনুসরণ করে থাকে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ মুসলিম অধ্যুষিত হলেও রাজতান্ত্রিকতা বা একনায়কত্বের কারণে ইসলামকে রাজনৈতিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়নি। কাজেই এসব মুসলিম দেশকে পশ্চিমারা পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে নিজেদের পক্ষপুটে রাখতে সক্ষম হয়েছে। কারণ, ইসলামের রাজনৈতিক কাঠামোকে পশ্চিমারা বা অমুসলিম বিশ্ব অত্যন্ত ভীতির চোখে দেখে থাকে। তাই সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর পতনের পর পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর উত্থান নিয়ে বিচলিত হয়ে পড়ে। কাজেই ইসলামী আদর্শের রাজনৈতিক শক্তিকে কোনোভাবেই তারা বরদাশত করতে রাজি নয়। ইরান শিয়া সম্প্রদায়ের হলেও ইসলামী রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চার কারণে বিপ্লবের শুরু থেকেই এর পিছনে পুরো পশ্চিমা বিশ্ব লেগে রয়েছে। এমতাবস্থায় আফগানিস্তানের সুন্নি তালেবানের ইসলামের নামে রাষ্ট্রগঠনপ্রক্রিয়া দেখে পশ্চিমা বিশ্ব হতচকিত হয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দিকে তালেবানকে বাগে রাখতে পারবে ভেবে নিজেদের আর্থ-রাজনৈতিক স্বার্থে সমর্থন দিচ্ছিল। কিন্তু তালেবান নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ার সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্র ভয়াবহ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে এবং শুধু আলকায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেয়ার অজুহাত তুলে আক্রমণ চালিয়ে দ্রুত আফগানিস্তান দখল করে নেয়।

সত্যিকারার্থে আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থান, ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব এবং প্রাকৃতিক সম্পদের বিশাল মজুদের কারণেই যুগে যুগে ঔপনিবেশিক শক্তি দেশটিকে নিজেদের দখলে রাখার চেষ্টা করেছে। একই কারণে মার্কিনিরা আফগানিস্তানে তাঁবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। অবশ্য ওই সব আকর্ষণের সাথে যুক্ত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির টাইমলাইন, একক পরাশক্তির বিশ্বব্যবস্থা এবং সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার অনুপস্থিতিতে ইসলাম ধর্মের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উত্থানের ভীতি। সবশেষে ‘৯/১১’-এর ঘৃণ্য সন্ত্রাসী আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রকে তালেবানের ইসলামী রাষ্ট্র ধ্বংস করে আফগানিস্তান দখলের উদ্দেশ্যে আক্রমণের সুযোগ করে দেয়। তাইতো কেবল একজন ব্যক্তিকে আশ্রয়দানের ‘অপরাধে’ একমাত্র পরাশক্তি ধরাতলের যুদ্ধবিধ্বস্ত দারিদ্র্যপীড়িত একটি রাষ্ট্রটিকে দখল করে নেয়। তারপর দীর্ঘদিন সেই দেশের মানুষের কৃষ্টি-কালচার, জীবনাচার ও মূল্যবোধ, সামাজিক ঐতিহ্য ও রীতি-নীতি এবং রাজনৈতিক গতিধারা নতুনভাবে পশ্চিমা ধাঁচে বিনির্মাণের ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। এ সবকিছুর পিছনেই ক্রিয়াশীল ছিল পশ্চিমা সভ্যতার সঙ্কীর্ণ স্বার্থ আর লাভ-লোকসানের হিসাব। 

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email: [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement