২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন মেজর (অব:) সিনহা

- ছবি : নয়া দিগন্ত

গত ৩১ জানুয়ারি মেজর (অব:) সিনহা হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় হয়েছে। কক্সবাজার সেশন ও দায়রা জজ মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাতে হয়। একটি অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত রায় দিয়েছেন তিনি। সরকারও ধনবাদ পাওয়ার যোগ্য একটি যৌক্তিক সময়ে ন্যায়বিচারমূলক রায় প্রদানের জন্য সার্বিক অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়ায়। এই রায়ে বাংলাদেশের মানুষের আবেগ ও বিবেকের প্রতিফলন ঘটছে।

সাবেক ওসি প্রদীপের নির্যাতনের শিকার কক্সবাজারের ভুক্তভোগী জনতার জন্য আদালতের রায় যৌক্তিকতা পেয়েছে। রায়ে বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ ও ইন্সপেক্টর লিয়াকতের ফাঁসি এবং অন্য ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে, আর সাতজন খালাস পেয়েছে। তবে ন্যায়বিচার সম্পন্ন হতে আরো অনেক সময় লাগবে বলে মনে হয়। কারণ, নারায়ণগঞ্জের র‌্যাব কর্তৃক সেভেন মার্ডারের সুবিচারমূলক রায় হলেও তা এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হন। ৫ আগস্ট সিনহার বড়বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং ইন্সপেক্টর লিয়াকতকে প্রধান আসামি করে ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম মাত্র তিন মাসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে ১৩ ডিসেম্বর মোট ৮৩ জনকে সাক্ষী করে ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তদন্তের সময় আসামি বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল বাদে ১৫ জনের মধ্যে ১৩ জনই হত্যার অভিযোগ স্বীকার করে। এরপর ২০২১ সালের ২৭ জুন আদালত মামলার চার্জ গঠন করে এবং ২৩ আগস্ট আনুষ্ঠানিক বিচারকার্যক্রম শুরু হয়। ১ ডিসেম্বর মোট ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার কার্যক্রম সম্পন্ন হয় এবং ১২ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক শেষে ৩১ জানুয়ারি, ২০২১ এ রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত হয়।

সাক্ষীগণের মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষ দর্শীর বর্ণনায় জানা যায় : ঘটনার দিন মেজর (অব:) সিনহা তার সহযাত্রী সাহেদুল ইসলাম সিফাতসহ মইন্যার পাহাড়ে পেশাগত কাজে গমন করেন। সন্ধ্যার পর মারিষবুনিয়া এলাকার পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন ইন্সপেক্টর লিয়াকতের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন এবং পার্শ্ববর্তী মসজিদের মাইকের মাধ্যমে ‘গ্রামে ডাকাত পড়েছে’ বলে ঘোষণা দেয়ার ব্যবস্থা করেন। লোকজন জড়ো হলে মেজর (অব:) সিনহা তার সহযোগী সিফাতকেসহ পাহাড় থেকে নেমে এসে তাদের প্রাইভেট কারযোগে কক্সবাজারের দিকে যাত্রা শুরু করেন। কিছুদূর এসে শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে এসআই শাহজাহান গাড়ি থামিয়ে তাদের পরিচয় জেনে স্যালুট দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দেন। এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর লিয়াকত ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত গাড়ির সামনে ড্রাম ফেলে গাড়ি থামায়। লিয়াকত পিস্তল তাক করে মেজর (অব:) সিনহাকে নামতে বললে মেজর (অব:) সিনহা নিজের পিস্তল গাড়িতে রেখে দুই হাত উঁচু করে নেমে আসেন এবং লিয়াকতকে উত্তেজিত দেখে নিজের পরিচয় দিয়ে ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য বলতে থাকেন। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে লিয়াকত সিনহার বুকে দু’টি গুলি চালায়। মেজর (অব:) সিনহা গুলি খেয়ে দু’কদম এগোলে লিয়াকত পুনরায় দু’টি গুলি ছুড়লে মেজর (অব:) সিনহা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গাড়ির অপর যাত্রী সিফাতকে দড়ি দিয়ে বেঁধে লিয়াকত দু’জন ব্যক্তিকে মুঠোফোনে জানায়, ‘সন্দেহভাজন একজন গাড়ি থেকে নেমে পিস্তল দিয়ে গুলি করলে আমিও পাল্টা গুলি করি। এতে একজনকে ডাউন করেছি ও আরেকজনকে ধরে ফেলেছি।’

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তৎকালীন ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে হাজির হয় এবং মাটিতে পড়ে ছটফট করতে থাকা সিনহাকে পা দিয়ে নাড়াচাড়া করে এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এমতাবস্থায় মেজর (অব:) সিনহা পানি চাইলে প্রদীপ তাকে বুট দিয়ে বুকে কয়েকটি লাথি মারে এবং পা দিয়ে তার গলায় চেপে ধরে। এ সময় সিনহার দেহ নিস্তেজ হয়ে এলে তার মৃত্যু নিশ্চিত হয়। তখন লিয়াকত মুঠোফোনে ঘটনা কক্সবাজারের তৎকালীন পুলিশ সুপার এবি মাসুদুর রহমানকে জানায় (কথোপকথনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল)। কিছুক্ষণ পর তারা একটি পিকআপযোগে মেজর (অব:) সিনহার মরদেহ কক্সবাজার হাসপাতালে প্রেরণ করে এবং মাদক ও পুলিশকে আক্রমণের অভিযোগ দিয়ে সিনহা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে টেকনাফ ও রামু থানায় তিনটি মামলা রুজু করে সিফাতকে গ্রেফতার দেখায়।

প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা হলেন পার্শ্ববর্তী মসজিদের ইমাম মাওলানা শহীদুল ইসলাম, মোয়াজ্জিন হাফেজ মোহাম্মদ আমিন, চেকপোস্টে আটকে পড়া সিএনজি অটোচালক মোহাম্মদ কামাল হোসেন, ওই এলাকায় খাবার সরবরাহকারী রিকশাভ্যান চালক মোহাম্মদ আলী এবং সিনহার সহযাত্রী বেঁচে যাওয়া সিফাত। তারা সবাই একই রকম ঘটনা বর্ণনা করেছেন।

সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসার মেজর (অব:) সিনহা অল্প বয়সে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করে বাংলাদেশের সৌন্দর্য বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার মতো একটি দেশপ্রেমমূলক কাজ হাতে নেন। 'ঔঁংঃ এড়' নামের ভ্রমণ তথ্যচিত্র তৈরির জন্য তিনি কক্সবাজারের সাগর-পাহাড়ে, বনে-জঙ্গলে তার সহযোগী দল নিয়ে মাসাধিককাল ধরে কাজ করছিলেন। কিন্তু দেশটাকে তিনি শুধু ভালোই বাসলেন অথচ মাতৃভূমির রূপ বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারলেন না।

তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার পর তার মাকে বলেছিলেন, ‘মা, আজ থেকে আমি শুধু তোমার সন্তান নই, দেশ মাতৃকারও সন্তান। আমার কখনো কিছু হলে তুমি কখনো বিচলিত হবে না।’ ২০০৭ সালে তাদের বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি মা ও দুই বোনকে বাবার মতো করে আগলে রেখেছিলেন। জানা যায়, কাজ পাগল এই তরুণ প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতেন। অর্থাৎ মেজর (অব:) সিনহা ছিলেন ইতিবাচক, সৃষ্টিশীল নিবেদিতপ্রাণ একজন মানুষ। তিনি মারণাস্ত্র ছেড়ে সৃষ্টিশীলতার অস্ত্র ‘ভিডিও যন্ত্রপাতি’ নিয়ে দেশের জন্য অন্য এক যুদ্ধে নেমেছিলেন। কিন্তু ছেড়ে আসা সেই মারণাস্ত্রের আঘাতেই তার মৃত্যু হলো। দেশের জন্য মেজর (অব:) সিনহা এভাবেই অকালে জীবন উৎসর্গ করলেন।

ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ বাংলাদেশ পুলিশের গর্বকে খর্ব করেছে। সে ছিল পোশাক পরা একজন বীভৎস-কুৎসিত ভয়ঙ্কর দানব। কক্সবাজারের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেছেন, ‘ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে ২০৪ জনের বেশি নিরীহ মানুষকে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ রয়েছে।’ তিনি প্রদীপের প্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ও পদক বাতিলের আহ্বান জানান (নয়া দিগন্ত : ১৩/০১/২০২২)। মামলায় কয়েকজন সাক্ষী নিজেদের সন্তান, ভাই ও স্বামীকে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা এবং জনৈকা বেবী তার মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে প্রদীপকে অভিযুক্ত করেন (ডেইলি স্টার : ২৯ এবং ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১)। এ ছাড়া স্থানীয় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফাকে তার অপকর্মের সংবাদ প্রকাশ করার জন্য ছয়টি ক্রিমিনাল মামলায় আটক করে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করেছিল ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ।

এমতাবস্থায় বেশ কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে জনমনে। হত্যাকাণ্ডের পরপরই লিয়াকত এবং প্রদীপ কক্সবাজার জেলার তৎকালীন এসপির সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন যা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু সরাসরি তত্ত্বাবধানকারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে এসপির কোনো দায়-দায়িত্ব চিহ্নিত হয়েছে কিনা তা আজো অজানা। অথবা তদন্ত এবং বিচারপ্রক্রিয়ার কোথাও সেই এসপি সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন কেন উত্থাপিত হয়নি তা একটি বড় প্রশ্নই রয়ে গেল। আমরা শুধু তাকে বদলি হয়ে অন্য একটি জেলার এসপি হিসেবে যোগদান করতে শুনেছি। দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ এবং ইন্সপেক্টর (বরখাস্ত) লিয়াকত কেন মেজর (অব:) সিনহাকে হত্যার পরিকল্পনা করল? সেই কারণটি জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। হয়তোবা তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, কিন্তু তা অপ্রকাশিত রয়েছে কোনো অজানা কারণে। এই বিষয়টি সমাজে আরো অনেক প্রশ্ন, গভীর সন্দেহ এবং বিস্তৃত গুজব সৃষ্টি করতে পারে। এর সঙ্গে সম্পূরক প্রশ্ন হলো, প্রদীপ এবং লিয়াকত মেজর (অব:) সিনহার ওপর কেন এত ক্ষিপ্ত ছিল? গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সিনহাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা, তাকে লাথি মারা এবং পা দিয়ে গলা চেপে মৃত্যু নিশ্চিত করা নিশ্চয়ই প্রাণের শত্রæর মতো আচরণ। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় মেজর (অব:) সিনহা বেশ কিছু দিন ওই এলাকায় অবস্থান করায় প্রদীপদের বিভিন্ন অপকর্মের ‘অভয়ারণ্য’ তিনি আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন এবং সেগুলোর প্রামাণ্যচিত্রও তিনি সংগ্রহ করে ফেলেছিলেন। জনশ্রুতি রয়েছে প্রদীপের অপকর্মের পেছনে একটি শক্তিশালী মহল রয়েছে যাদের বলে বলীয়ান হয়ে প্রদীপ অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছিল এবং কোনো না কোনোভাবে এতসব অপকর্মের পরেও এবং তার পূর্বের অপকর্মের রেকর্ড থাকলেও সে দু-দুইবার রাষ্ট্রীয় পদক অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। কাজেই প্রদীপ একদিনেই প্রদীপ হয়ে ওঠেনি। একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এরকম ভয়ঙ্কর একজন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছে।

ঘটনার পর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘পুলিশের হঠকারী, প্রস্তুতিহীন ও অপেশাদার আচরণ। যথাযথ তদারকি ও জবাবদিহির অভাবে গুলিবর্ষণের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মনে অসংবেদনশীলতা তৈরি হয়েছে। আত্মরক্ষাকে আইনি সুবিধা প্রদানের অপপ্রয়োগ হচ্ছে। এসব বন্ধে কমিটি ১৩ দফা সুপারিশ করে’ (দৈনিক প্রথম আলো : ৩১/০৭/২০০১)। আবার হত্যাকাণ্ড ঘটনার পর নজিরবিহীনভাবে পুলিশের কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে মেজর (অব:) সিনহার সহকর্মী শিপ্রা দেবনাথের ব্যক্তিগত বিষয়াদি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জড়িত হতে দেখা যায়, যা ছিল অনাকাক্সিক্ষত, অনৈতিক এবং অপেশাদারিত্ব।

মেজর (অব:) সিনহা হত্যাকাণ্ডের একটি প্রভাব পুরো জাতিতে পরিলক্ষিত হয়েছিল। হঠাৎ করে সেই সময় বিচারবহির্ভূত ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় চলে এসেছিল। দেশে প্রথমবারের মতো পুলিশ প্রধান ও সেনাপ্রধান যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।
সশস্ত্রবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসারগণের সংগঠন ‘রাওয়া’ কর্তৃপক্ষ আবেগপ্রবণ বক্তব্য প্রকাশ করে। এর কিছু দিন পর ‘রাওয়া’-এর তৎকালীন নির্বাচিত কমিটি বাতিল করা হয় এবং গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আসে। অন্যদিকে পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা নজিরবিহীনভাবে সরব হয়ে ওঠে এবং নানা ধরনের বক্তব্য দিতে থাকে। এমতাবস্থায় দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করায় পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।

এই মামলা চলাকালে একজন স্বনামধন্য প্রবীণ আইনজীবীর সাম্প্রদায়িক ও অপেশাদার কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়। আলামত এবং ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি ও ঘটনার ধারাবাহিকতায় ওসি প্রদীপের হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারটি সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত হলেও উক্ত আইনজীবী প্রত্যক্ষ সাক্ষীগণকে ‘পেশায় অটোরিকশা চালক’, ‘রোহিঙ্গা’ বলে অবজ্ঞা করার চেষ্টা করেন। তিনি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের দাবি জানান। তিনি মোট ১১টি দরখাস্ত করে মামলা স্থগিত চেয়েও আবেদন করেছিলেন। তার ভাষ্যমতে, ‘প্রদীপ এই হত্যাকাণ্ডের সাথে মোটেও জড়িত নয়। বরং টেকনাফে ইয়াবা নির্মূলে প্রদীপের বড় ভূমিকা রাখার কারণে তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ফাঁসিয়ে দেন’ (দৈনিক প্রথম আলো: ১৩/০১/২০২২)।

মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান টেকনাফে একটি ক্ষমতাশালী অপরাধী চক্র আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন বলেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এটি প্রকাশিত হয়ে পড়লে অপরাধ জগতের কুৎসিত চেহারা উন্মোচিত হয়ে হয়তোবা অনেকের সুন্দর চেহারার অপর পিঠের কদাকার রূপটিও দেশবাসীর সামনে উন্মোচিত হয়ে পড়ত। এজন্যই সিনহাকে জীবন দিতে হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। মেজর (অব:) সিনহা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন একজন সৈনিকের দেশপ্রেম কত গভীর, কতটুকু উৎসর্গের বিষয়। সুতরাং উচ্চ আদালতের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এই রায় যৌক্তিক সময়ের মধ্যে কার্যকর করার মাধ্যমেই জাতির আবেগ ও বিবেকের রায় সম্মানিত হবে।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email: [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement