২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কিশোর গ্যাং : অনিরাপদ সমাজ ও জাতি

কিশোর গ্যাং : অনিরাপদ সমাজ ও জাতি - প্রতীকী ছবি

এ দেশে ২০১২ সাল থেকে কিশোর গ্যাং নামক একটি সন্ত্রাসী সংস্কৃতির অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হলেও ২০১৭ সালে উত্তরায় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র আদনান কবির খুনের পর এদের কর্মকাণ্ড আলোচনায় আসে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে মাঠে নামে। ২০১২ সালে যেখানে কিশোর অপরাধে ৪৮৪টি মামলায় ৭৫১ জন আসামি ছিল, সেখানে ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসেই ৮২১টি মামলায় এক হাজার ১৯১ জন শিশু-কিশোর আসামি হয়। ২০১৭ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন মতে, ঢাকা ও এর আশপাশে ১২টি এবং সারা দেশে কমপক্ষে ৩৫টি কিশোর গ্যাং ছিল (প্রথম আলো, ১৭ নভেম্বর ২০২০)। তবে বর্তমানে রাজধানীতে এ ধরনের ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা কমপক্ষে ৭৮ এবং সদস্যসংখ্যা দুই হাজারের বেশি (যুগান্তর, ২০ জুন ২০২১)। জানা যায়, তেজগাঁওয়ে ১৪টি, মিরপুরে ২৩, উত্তরায় ১১, গুলশানে একটি, ওয়ারীতে ছয়, মতিঝিলে ১১, রমনায় আট এবং লালবাগে চারটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে।

রাজধানীর বাইরে সাভারে প্রায় ১৫টি, টঙ্গীতে ৩০টি এবং নারায়ণগঞ্জে বেশ কয়েকটি গ্রুপ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোকে অপরাধের অভয়ারণ্য বানিয়ে রেখেছে। ফলে ঢাকায় প্রতি মাসে ১৫-২০টি খুন হচ্ছে (প্রথম আলো, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। আর চট্টগ্রাম নগরে ৪৭ জন ‘বড় ভাই’ এর অধীনে প্রায় ৩১টি গ্রুপে ৬০০ সদস্য ৪৫টি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে (প্রাগুক্ত, ১৮ নভেম্বর ২০২০)। ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশে গত ১৭ বছরে এ ধরনের কিশোর অপরাধীদের হাতে ১২০ জন খুন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪ জনই খুন হয়েছে শেষ দুই বছরে (যুগান্তর, ২ জানুয়ারি ২০২১)। সাভারে ভাইয়ের কাছ থেকে বোনকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা, বরগুনায় নয়ন বন্ডের দ্বারা রিফাত খুন, বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড আর সিলেটের এমসি কলেজে ছাত্রনেতাদের দ্বারা স্বামীকে আটকে গৃহবধূকে গণধর্ষণ ইত্যাদি সবই কিশোর গ্যাংয়ের বিষফল।

বর্তমানে কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিদিনই দেশজুড়ে ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, জমিদখল, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, ধর্ষণ এবং খুন-খারাবি ইত্যাদি অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এদের অত্যাচার নির্যাতনে সমাজ বিষিয়ে উঠেছে। মানুষ অস্বস্তিকর অশান্তির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। সমাজের নিরীহ অংশ বিশেষ করে যাদের কোনো প্রভাব প্রতিপত্তি নেই বা প্রভাবশালী মহলের সাথে কোনো ধরনের সম্পর্ক ও যোগাযোগ নেই তাদের আতঙ্কই বেশি। তারা তাদের সহায়-সম্পদ ও উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটায়; কখন কারা জায়গা-জমি দখল করতে আসে বা চাঁদা দাবি করে অথবা স্কুল-কলেজে পড়–য়া মেয়েটিকে কখন কোন বখাটে বিরক্ত করে বা স্কুলে যাওয়া ছেলেটিকে তাদের গ্যাংয়ের দলে ভিড়িয়ে ফেলে। এ ছাড়া এসব গ্যাংয়ের উৎপাতে পাড়ায় পাড়ায় মারামারি কাটাকাটি তো লেগেই আছে। এই কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি বর্তমানে তরুণদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। হিরোইজম বা বাহাদুরি, কাঁচা টাকা-পয়সা, মাদকাসক্তি, সাংস্কৃতিক চর্চার নামে সস্তা ছেলে-মেয়েদের অবাধে মেলামেশার তীব্র আকর্ষণ ইত্যাদি হাতছানি দিয়ে ডাকায় দ্রুত এ সমস্ত গ্যাং এবং তাদের সদস্যসংখ্যা বাড়ছে। সেই সাথে টিকটক, লাইকি ইত্যাদি নানান ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পথভ্রষ্ট হয়ে তরুণরা কিশোর গ্যাংয়ে নাম লেখাচ্ছে। ফলে সমাজকে ভেতরে ভেতরে উইপোকার মতো খুবলে খেয়ে ফেলছে এই অশুভ চর্চা। উঠতি বয়সের, স্কুল-কলেজগামী কিশোরদের একটি অংশ লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ওই দিকেই ঝুঁকছে। ফলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সুড়ঙ্গের অপরপ্রান্তে জমা হচ্ছে নিকষকালো অন্ধকার। যারা এই জাতিকে আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবে তারা যদি এই আগ্রাসী কিশোর গ্যাং সংস্কৃতির চর্চা করে বেড়ে ওঠে তবে আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ সত্যিই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়বে। সুতরাং আজকের কিশোর গ্যাং কালচার দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য এক মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শহুরে জীবনের পাড়ায় পাড়ায় কিশোর-তরুণরা প্রথমে ছোট ছোট গ্রুপ করে ‘স্টার বন্ড’, ‘সাইজ কইরা দে’, ‘আমিই বস’ ইত্যাদি উদ্ভট অথচ রোমাঞ্চকর গ্রুপের নামে আড্ডারাজি শুরু করে। ধীরে ধীরে শুরু হয় ছোট ছোট দলগত অপরাধকর্ম ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার বা দলগত সেরা হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া। অন্য দল বা অন্য এলাকার কিশোরদের ওপর প্রভাবশালী হয়ে উঠার এক রোমাঞ্চকর স্বাদ তারা পেয়ে যায় কাউকে মারধর করে বা অপমান করে।

ভিকটিমরাও তখন প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ফলে ঘটে যায় খুনের ঘটনা। জড়িত হয়ে পড়ে স্থানীয় নেতারাও। তারা ‘বড় ভাই’ হিসেবে আগলে রাখেন গ্যাংগুলোকে। বিনিময়ে নিজেদের আর্থরাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে থাকেন এসব গ্যাংকে। গ্যাংয়ের সদস্যরাও ‘বড় ভাই’দের শেল্টারে থেকে নির্বিঘ্নে করে যায় নানা অপরাধ। ‘বড় ভাই’য়েরাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্পর্শ থেকে আগলে রাখে গ্যাংয়ের সদস্যদের। এভাবে একটি কিশোর গ্যাং জন্ম নিয়ে দাপটের সাথে এলাকায় বিস্তার করে ‘অপরাধ সাম্রাজ্য’।

সমাজ চিন্তকরা মোটা দাগে সামাজিক অবক্ষয়, ধর্মীয় মূল্যবোধের অবমাননা, দুর্বল কাঠামোর শিক্ষানীতি এবং রাজনৈতিক নীতিহীনতাকেই এই কিশোর গ্যাং নামক সামাজিক দুর্যোগের কারণ হিসেবে গণ্য করছেন। কালের আবর্তনে আমাদের সামাজিক অবক্ষয় দৃশ্যমান। এক সময় আমাদের সমাজে মূল্যবোধের চর্চার ঐতিহ্য ছিল। সমাজে ‘মুরব্বি’ সংস্কৃতির চর্চা ছিল। পাড়ার বয়স্কদের ছোটরা সম্মান করত। দূর থেকেই সালাম দিত, হাতে সিগারেট থাকলে ফেলে দিত। অন্যায় করতে দেখলে বড়রাও ছোটদের শাসন করত। ছোটরা বেয়াদবি করলে বড়রা এগিয়ে এসে বিচার সালিশ বসাত। সেই ঐতিহ্য আজ ভেঙে পড়ছে। মুরব্বিরা ভীত, কিশোর-তরুণরা বেপরোয়া। সামাজিক সেই বন্ধন ও শৃঙ্খলা খসে পড়েছে। বাবা-মায়েরা পেশা ও ব্যবসায় টাকা রোজগারে ব্যস্ত। সন্তানদের স্কুল-কলেজে ভর্তি করিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন। সন্তান কী করছে, কোথায় যাচ্ছে ইত্যাদি দেখার সময় তাদের নেই? তা ছাড়া ঘরে ঘরে স্বামী-স্ত্রীর মতানৈক্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধাহীনতা, দ্বন্দ্ব-কলহ এবং পরিবারে ভাঙনের কারণে সন্তানরা সহজেই বিপথগামী হয়ে পড়ছে। এক শ্রেণীর নারীবাদীর উসকানিতে বিভ্রান্ত হয়ে ধর্মীয় অনুশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে অনেকেই সামাজিক শৃঙ্খলা ও বন্ধনকে পদদলিত করে ফেলছে। ফলে ঘরে ঘরে আজ অশান্তির আগুন জ্বলছে। বস্তি থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত সব ঘরের ছেলে-মেয়েরাই এভাবে বিপথগামী হয়ে কিশোর গ্যাংয়ে নাম লেখাচ্ছে।

অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে খেলার মাঠ, পুকুর, নদী-নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা বা পুকুর-নদীতে ঝাঁপাঝাঁপি করার সুযোগ নিঃশেষ হয়ে গিয়ে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে গিয়েই গ্যাং সৃষ্টি করেছে। আগে অঞ্চলভিত্তিক, পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন টুর্নামেন্ট ও খেলাধুলার প্রতিযোগিতার আয়োজন হতো, যাতে সবার মধ্যে সৌহার্দ্যরে বন্ধন এবং সুস্থ প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি হতো। সেই সুযোগ হাল আমলে একেবারে ফুরিয়ে গেছে। ফলে আগে যেখানে সুস্থ বিনোদন ও সাংস্কৃতিক চর্চা হতো এখন সেখানে অপসংস্কৃতি জায়গা দখল করে নিয়েছে। শিল্প-সংস্কৃতির নামে আমরা নগ্নতা আর বেহায়াপনাকে আধুনিকতা হিসেবে প্রমোট করছি; যাতে কিশোর-তরুণরা অশ্লীলতাকে আর অপরাধ হিসেবে দেখছে না। আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা এই কিশোর গ্যাং সৃষ্টির পেছনে কম দায়ী নয়। পরীক্ষাকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা শিশু-কিশোরদেরকে যেকোনো মূল্যে ‘জিপিএ-৫’ পাওয়ার দিকে পরিচালিত করে। তাত্ত্বিক এই শিক্ষাব্যবস্থায় না আছে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার দিকনির্দেশনা, না আছে কোনো মূল্যবোধের আদর্শে নিজেকে তৈরি করার বাস্তবমুখী গাইডলাইন। ফলে যারা মেধাবী তারা শুধু টাকা উপার্জনের রোবোটিক যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে আর বাকিরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পথভ্রষ্ট হচ্ছে।

শিশু-কিশোরদের পথভ্রষ্ট হওয়ার বড় একটি কারণ হলো, ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়। এক সময় প্রতিটি এলাকায় মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিনদের একটি বিশেষ অবস্থান ছিল। তাদেরকে ছোট-বড় সবাই মানত। শিশু-কিশোররা তাদের কথা অবশ্য পালনীয় মনে করত। তারাও এলাকার কিশোর-তরুণদের স্নেহ-আদর এবং শাসন করতেন। সমাজে সেই ধর্মীয় সংস্কৃতির অবনতি ঘটেছে। একটি মহল প্রমাণ করতে মুখিয়ে থাকে যে, দেশ ও জাতির সমস্ত অনিষ্টের মূলেই ধর্ম এবং ‘হুজুর’রা। একশ্রেণীর মিডিয়া অত্যন্ত সুকৌশলে এসব অপপ্রচারণাও চালিয়ে থাকে। ফলে সমাজের শিক্ষিতদের একটি অংশ মনে করে, নিখুঁতভাবে ধর্ম পালন করা গোঁড়ামি বা উগ্রবাদ চর্চার নামান্তর। বুঝে বা না বুঝে তারা ইসলাম ধর্মকে এবং এর আলেম-ওলামাকে অবজ্ঞা করে থাকেন। এর প্রভাবে আজ কিশোর-তরুণ-যুবকরা ধর্মীয় মূল্যবোধের শৃঙ্খল মুক্ত হয়ে বেপরোয়া জীবন যাপন করতেই গর্ববোধ করতে চাচ্ছে। তা ছাড়া বেশ কিছু দিন যাবৎ কিছু আলেম-ওলামার ইসলামের ঐতিহ্যবিরোধী অতিমাত্রায় রাজনৈতিক বা মারমুখী অবস্থানের কারণে তারা গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এবং সাধারণভাবে ইসলামিস্টদের সম্মানের হানি ঘটেছে। ফলে দেখা গেছে, ঐতিহ্যবাহী ওয়াজ মাহফিলে তরুণ-যুবারা মঞ্চে উঠে জনসমক্ষে মাহফিল ভণ্ডুল এবং আলেম-ওলামাদের অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করার সাহস পাচ্ছে। এসব কারণে সমাজের উপর ধর্মীয় গুরুদের যে ঐতিহ্যগত সুশৃঙ্খল প্রভাব ছিল তা ঢিলে হয়ে পড়েছে। এর ভুল বার্তা যাচ্ছে কিশোর-তরুণদের কাছে। ঘরে-বাইরে কারো আদেশ-উপদেশে তারা কর্ণপাত না করে বরং উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ছে।

কিশোর গ্যাং সংস্কৃতির চর্চার পেছনে সবচেয়ে প্রভাবশালী যে কারণ সেটি হলো- রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার খবর মতে, প্রধানত রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাংগুলো পরিচালিত হচ্ছে। ‘পুলিশের তালিকায় কিশোর গ্যাংয়ের রাজনৈতিক শেল্টারদাতা বা পৃষ্ঠপোষক হিসেবে অর্ধশত ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে’ (যুগান্তর, ২০ জুন ২০২১)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বলেন, ‘কিশোরদের রাজনীতিতে ঢুকানো হচ্ছে। একটা এলাকায় যে রাজনৈতিক কোন্দলগুলো রয়েছে, সে কোন্দলগুলোকে ধরে রাখা, প্রতিপক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করা, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে প্রায় প্রত্যেক রাজনীতিবিদেরই একটি করে গ্রুপ থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিশোরদের দিয়ে গ্রুপ তৈরি করলে কম খরচে গ্রুপটিকে পরিচালনা করা সম্ভব হয়’ (নয়া দিগন্ত, ১১ মার্চ ২০২১)। জানা যায়, ক্ষমতাসীন দল এবং এর ছাত্র ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনগুলোর স্থানীয় নেতা এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলররা নিজ নিজ এলাকার কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে (যুগান্তর, ২০ জুন ২০২১ এবং প্রথম আলো, ১৮ নভেম্বর ২০২০)। এভাবে যেসব ‘বড় ভাইরা’ গ্যাং পরিচালনা করেন তারাই হয়ে উঠেন কিশোরদের রোলমডেল। ফলে এই কিশোর-তরুণরা ওই সমস্ত ‘বড় ভাইদের’ মতো করে নিজেদেরকে গড়ে তোলার প্রয়াস পায়। অন্য দিকে, বিদ্যমান আইনও অনেক সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে। ১৯২২ সালের বেঙ্গল চিলড্রেন অ্যাক্ট থেকে ১৯৭৪ সালের শিশুআইন এবং সর্বশেষ প্রণীত শিশুআইন ২০১৩ করা হয়েছে শিশুদের জন্য (প্রথম আলো, ২ নভেম্বর ২০২১)। কিন্তু এই আইনের ফাঁকফোকরে কিশোররা ‘শিশু’তে সংজ্ঞায়িত হওয়ায় কিশোর গ্যাং দমনে এটি একটি প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাজেই এই আইনটি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। কিশোর অপরাধ নিয়ে এখানে ১৯৬০ সালে পুলিশের জন্য প্রথম গবেষণা হয়েছিল। এ যাবৎ মোট ৭০টির মতো গবেষণার সন্ধান পাওয়া যায় (প্রাগুক্ত, ১৭ নভেম্বর ২০২০)। ওইসব গবেষণার ফল নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি দরকার আলাদা কিশোর অপরাধ আইন। আর কিশোরদেরকে যেকোনো মূল্যেই রাজনীতির বলয়ের বাইরে নিয়ে আসতে পারলে এসব কিশোর গ্যাংয়ের অভ্যন্তরীণ শক্তি লোপ পেয়ে এই অপসংস্কৃতির অবসান ঘটে সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা অবশ্যই ফিরে আসবে। আর দেশ এবং জাতি একটি ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে নিস্তার পাবে ইনশাআল্লাহ।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email : [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement