২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বুমেরাং হলো কি ‘জঙ্গি’ প্রচারণা

-

আমেরিকার ওয়ার অন টেররে আমরা বিভোর হয়েছিলাম। কোন সময় তারা এই যুদ্ধ থেকে পিছু হটছে তাও খেয়াল করিনি। ওয়ার অন টেররের উত্তাপে আমাদের সীমালঙ্ঘনগুলো এখন ভারি দায় হয়ে এলো। আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলো প্রবল প্রপাগান্ডা চালিয়ে জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি পাড়ায় মহল্লায় নিয়ে গেল। ‘কাফের’ ফতোয়া দিয়ে হত্যা করে যেমন জঙ্গি হওয়া যায়; আবার ইসলামের নাম নেয়া মাত্র গণহারে মানুষকে জঙ্গি বানিয়ে দেয়া হয়েছে। ইসলামী দলগুলোকে অবলীলায় তারা জঙ্গি তকমা গায়ে লাগিয়ে দিয়েছে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ইসলামী মূল্যবোধ নিয়ে থাকা এনজিও সবই তাদের ভাষায় ‘জঙ্গি’। খুশিতে সরকার রীতিমতো সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিকে জঙ্গিবাদের উসকানিদাতা বানিয়ে ছেড়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলোর পেছনে রয়েছেন একশ্রেণীর বামতাত্ত্বিক ও কথিত বুদ্ধিজীবী। এ যাত্রায় তারা বেশ আমুদে ছিলেন যে, ওয়ার অন টেররের প্লেনে চড়ে তারা সাম্প্রদায়িক ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে এগুলো বলপ্রয়োগ করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার শক্তি জুগিয়েছে। এর মাধ্যমে যে প্রভ‚ত ক্ষতি হয়েছে, তা এখন আর এড়ানো যাচ্ছে না।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশ গুরুত্ব হারিয়েছিল। আঞ্চলিক শক্তির বরকন্দাজ ভারতের ইচ্ছা ও বাসনা সবচেয়ে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। এতে আমেরিকার কোনো লাভ হয়নি; বরং আমেরিকার প্রভাব একেবারে মুছে যাওয়া অবস্থায় পৌঁছেছে এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে। এ সময়ে আমরা দেখেছি, ‘দুই আনার মন্ত্রী’, ‘কাজের বুয়া’ এসব তকমা জুটেছে প্রতাপশালী মার্কিন কর্মকর্তাদের। তার পরেও মার্কিনিদের কোনো টুঁশব্দ করতে শুনিনি। যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি হচ্ছে গণতন্ত্র, মানবিকতা, উদার বহুত্ববাদের চর্চা। এর মাধ্যমে তারা বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের হারানো প্রভাবকে ফিরিয়ে আনতে পারে। বাইডেন প্রশাসন সেই রাস্তার কার্যকর প্রয়োগ শুরু করছে বলেই অনুমিত হচ্ছে। বহু দেশ রয়েছে সেসব দেশের নাগরিকরা শুধু স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞ হবে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রও দেশগুলোর নাগরিকদের সাথে সরাসরি যুক্ত হতে পারবে।

আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিবিরোধী বহু অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযান নিয়ে শুরু থেকে প্রশ্ন তুললে দেশে বিচারবহিভর্‚ত হত্যা, গুম ও হাজতে মৃত্যুর ঘটনা গণহারে ঘটানো যেত না। এখন এসব ঘটনার জের আসছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন জঙ্গি দমনের কথা আর বলছে না। বহু মানুষের বিচারবহিভর্‚ত হত্যা গুমের পরিসংখ্যানটা তাদের কাছে এখন মানবাধিকারের নিক্তিতে মাপযোগ্য। এতে স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্যও স্বস্তি মিলবে আশা করা যায়। বিগত এক যুগে যখন বিভিন্ন বাহিনী অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছিল তখন যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার রক্ষায় খুব একটা এগিয়ে আসেনি। প্রাণের মূল্যের চেয়ে তখন তাদের কাছে ‘ওয়ার অন টেরর’ই মুখ্য ছিল। ফলে জঙ্গিদের হত্যা করার নামে কী ঘটছে, তা পাত্তা পায়নি। মুসলিম দেশগুলোতে শাসকরা এ সুযোগকে শুধু ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য কাজে লাগিয়েছে। এর সাথে যখন মিডিয়া প্রপাগান্ডা মেশিন হিসেবে যুক্ত হয়েছে সরকারের জন্য তা আরো সহজ হয়েছে।

আমাদের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর একেবারে শীর্ষ কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্র্রের বিশ্বব্যাপী তৈরি করা নিষিদ্ধ ঘোষিত ব্যক্তির তালিকায় স্থান পেয়েছেন। এ ধরনের একটি ব্যাপার যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশের জন্য খুবই লজ্জাজনক। এটি যেন এক নির্মম পরিহাস। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স আমাদের সরকারের ঘোষিত নীতি। সরকারের মন্ত্রীরা প্রতিদিন জঙ্গিবাদ দমনে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। অন্য দিকে আমাদের পুলিশ ও র‌্যাব; এমনকি জঙ্গিদমনে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী অসংখ্য অভিযান চালিয়েছে। এসব বাহিনী আবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। আজ এ বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বিশ্বের ‘ঘাঘু’ জঙ্গির সাথে একই তালিকাভুক্ত হলেন।

আলজাজিরায় আমাদের সামরিক বাহিনীর সাবেক এক প্রধানের সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করে। সেটি একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও জিতে নিয়েছে। অথচ ওই প্রতিবেদন একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রচার হওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তাই ছিল না। ডকুমেন্টারি প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য তারা বহু শক্তি, জনবল ও অর্থ বিনিয়োগ করেছে। একটি সংবাদমাধ্যমের এত বিপুল আয়োজন করে ডকুমেন্টারি তৈরি করা নজিরবিহীন। ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অপরাধীরা নিজেদের পছন্দমতো নাম বদল করছে। তাদের বাবার নামও পরিবর্তন করে ফেলছে। এ ক্ষেত্রে দেশের নির্বাচন কমিশন, পাসপোর্ট অফিস ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের শিথিলতা, অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির প্রমাণ তারা পেশ করেছে। এরপর জানা গেল, গুরুদণ্ড পাওয়া আসামিরা রাষ্ট্রপতির বিবেচনায় মাফ পেয়ে গেছে। যারা এসব করেছেন আইনকানুন মানার কোনো প্রয়োজনীয়তা তারা মোটেও অনুভব করেনি। শুধু ক্ষমতার দাপটে এসব তারা করে বসেছেন। রাষ্ট্রের সবচেয়ে স্পর্শকাতর পদগুলোর ব্যবহার করা হয়েছে কিছু ব্যক্তিকে অন্যায় সুযোগ করে দেয়ার জন্য। বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের সংখ্যা এখন শত শত। কয়েক ডজন টিভি চ্যানেল রয়েছে আমাদের। প্রত্যেকের আবার আলাদা সংবাদ সম্প্রচার বিভাগ রয়েছে; অর্থাৎ তারাও একটি নিউজ চ্যানেলের মতো কাজ করে। জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকার সংখ্যা এখন হাজারের কাছাকাছি। তার ওপর রয়েছে শতাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা উত্থাপিত হলেই সরকারের প্রতিনিধিরা সংবাদমাধ্যমের বিপুলসংখ্যার কথা উল্লেখ করে স্বস্তিবোধ করেন। তাদের মতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকলে এতগুলো চ্যানেল ও পত্রিকা কিভাবে প্রচার হচ্ছে? আলজাজিরায় প্রকাশিত ডকুমেন্টারি এবং আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে আরোপ করা যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ প্রমাণ করে এ দেশে সংবাদমাধ্যম তার ভ‚মিকাটি পালন করেনি বা করতে পারেনি। দেশের টোটাল মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। মিডিয়া সময়মতো প্রকৃত সত্য তুলে ধরলে এসব অপরাধ হতে পারত না। আলজাজিরাকে বিপুল বাহিনী লাগিয়ে এসব তথ্য প্রমাণ জোগাড় করতে হতো না। কারণ দেশীয় মিডিয়ায় আগেই এসব অন্যায় প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় ফাঁস হয়ে যাওয়ার কথা, যাকে বলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। ফলে অপরাধ প্রচেষ্টা ভণ্ডুল হয়ে যেত। একইভাবে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আইনবহির্ভূত গুম খুন হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা এসব মিডিয়াতে খোলাসা প্রকাশ হলে তারপর সেগুলো কতটা দুর্ঘটনা কতটা ইচ্ছাকৃত এসব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হতো। এখন শত শত মানুষের গুম খুন হয়ে যাওয়ার তথ্যপ্রমাণ বাইরে থেকে আসার প্রশ্ন ছিল না। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর জোট এই পরিসংখ্যান বৈশ্বিক ফোরামগুলোতে বেশ কয়েক বছর ধরে উত্থাপন করে আসছে। অথচ এসব ব্যাপারে দেশের মিডিয়া একেবারে শীতল হয়ে রয়েছে।

গণমাধ্যমের সংখ্যার সাথে এর স্বাধীনতা ও বস্তুনিষ্ঠতার যেকোনো সম্পর্ক নেই, বাংলাদেশ তার উপযুক্ত একটি কেসস্টাডি হতে পারে। বিশেষ করে এ দেশের বিগত এক যুগের ইতিহাস সেই ক্ষেত্রে বড় কৌত‚হলোদ্দীপক তথ্যই গণমাধ্যম নিয়ে গবেষণাকারীদের জোগাবে। এখানে এসে গবেষণা করে তারা জেনে নিতে পারে, বিপুল গণমাধ্যম কিভাবে জনগণের অধিকার রক্ষায় কোনো কাজে আসেনি। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ও অর্থনীতির বিবেচনায় সংবাদমাধ্যমের সংখ্যাটা নেহায়েত কম নয়। এসব প্রতিষ্ঠান ‘কোনো রকমে’ কাজ করলেও একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা অত বেশি সীমা অতিক্রম করতে পারার কথা নয়। মোটকথা, এ দেশের মিডিয়া বিশেষ দলের প্রতি অতিরিক্ত আনুগত্য দেখাতে গেছে। এর দ্বারা তারা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলটির কোনো উপকার করতে পারেনি। অথচ এর সুযোগ নিয়ে নিয়েছে এক দুর্বৃত্ত শ্রেণী। তাদের পোয়াবারো হয়েছে। অন্যায়-অনিয়ম অবৈধ কাজের পাহাড়ের ওপর গণতন্ত্র এখন নিবু নিবু। আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম দেশবাসীর উপকার করতে না পারার পেছনে বাম মতাদর্শ অন্যতম ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। মূল ধারার সংবাদমাধ্যমে এই বামদের একধরনের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তারা ‘রাজনৈতিক ইসলামকে’ মনে করে জাতির শত্রু। সব সময় মুখিয়ে থাকে, সুযোগ পেলে কিভাবে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়া যায়। সেই সুযোগ এনে দিয়েছে আমেরিকার ওয়ার অন টেরর নীতি। রাজনৈতিক ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গিয়ে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভেঙে দেয়ায় সরকারের সহায়ক হয়েছে তারা। অথচ রাজনৈতিক ইসলাম ছিল দেশের একটি প্রান্তিক শক্তি। এটি মূলত জাতীয় রাজনীতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দেশে একটি ভারসাম্য সৃষ্টি করে রেখেছিল। ওয়ার অন টেররের সুযোগে এসব মিডিয়াজীবী পূর্ণ শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রাজনৈতিক ইসলামের ওপর। তাদের সমর্থনে রাজনৈতিক ইসলাম যখন সফলভাবে সরকার মুছে দিলো এরপর তারা অরাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইসলামকে তাড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নিলো।

হেফাজতের উদাহরণটি এ ব্যাপারে দেয়া যায়। শাপলা চত্বরে জড়ো হওয়ার সময় সব মিডিয়া হেফাজতের আন্দোলনকে দানবীয় শক্তির উত্থান হিসেবে দেখিয়েছে। অথচ হেফাজতের ওই আন্দোলন ছিল ‘শাহবাগে’ সৃষ্ট প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িকতার জবাব। ওই সময় ক্ষমতাসীনরা অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে হেফাজতকে বিধ্বস্ত করে। সরকারি বাহিনীর সাথে এই সময় সন্ত্রাসীরাও যোগ দেয়; অথচ সহিংসতার প্রতিটি ঘটনার জন্য মিডিয়া এককভাবে হেফাজতকে দায়ী করে। বায়তুল মোকাররমে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় রেহাই পায়নি কুরআনসহ ইসলামী বইপুস্তক। এসব ঘটনার জন্য তারা উল্টো হেফাজতকে একতরফা দায়ী করে খবর প্রকাশ করে। তারও আগে চারদলীয় জোট সরকারের বিদায় নেয়ার পর বায়তুল মোকাররমে একটি ইসলামী দলের ওপর দিনভার আক্রমণ চালায় সন্ত্রাসীরা। সেখানে তারা আগ্নেয়াস্ত্র বোমা, ধারাল অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। একটি পত্রিকায় অস্ত্র হাতে সন্ত্রাসীদের ছবিকে সুপার এডিট করে বানিয়ে দেয়া হলো ‘ইসলামী দলের ক্যাডারের’ সশস্ত্র হামলা। দেশের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ইংরেজি পত্রিকা অত্যন্ত সচেতনভাবে এ কাজটি করেছে।

বিগত এক যুগে এক দিকে সরকারের ক্ষমতা স্থায়ী করার অভিলাষ, অন্য দিকে মিডিয়ার গুরুদের রাজনৈতিক ইসলাম নিশ্চিহ্ন করার লিপ্সা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ধসিয়ে দিয়েছে। প্রান্তিক শক্তি হিসেবে ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ মাঠে থাকলে বিএনপিকে এভাবে কুপোকাত করা যেত না। পরিস্থিতি এখন হয়েছে, মাঠে প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি নেই। এ মাঠে এমন এক শূন্যতা তৈরি করা হয়েছে তা স্বাভাবিকভাবে পূরণ হওয়ার অবস্থায় নেই। এমন একটি অবস্থা বড়ই বিপজ্জনক। অথচ মিডিয়া শুরু থেকে পেশাদার অবস্থান গ্রহণ করলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার ভারসাম্য সমূলে নষ্ট হতো না। এর ফলে কোনো পক্ষই লাভবান হয়নি। এমনকি মিডিয়াও রেসে থাকতে পারেনি। সরকার যখন বিনা মূল্যে মিডিয়ার সেবা পেয়েছে এই মিডিয়াকেও মর্যাদা দেয়ার প্রয়োজন তারা অনুভব করে না। করোনাকালে প্রণোদনা দেয়ার সময় সাংবাদিকরা সেটি টের পেয়েছেন। তার পর সরকারের সাঁড়াশি আক্রমণ যখন ‘প্রগতিশীল’ সাংবাদিকদের ওপরও নেমে এসেছে, তা বোঝার আর কারো বাকি থাকেনি। এটি কর্তৃত্ববাদের নিয়ম। মিডিয়া জঙ্গি দমনের যতই সাফাই গাক সরকারের তখন আর তাদের দরকার নেই।

এখন জঙ্গিবাদ নিয়ে কোথাও কথা নেই। এ ব্যাপারে সামান্য আলোচনাও আমরা দেখতে পাই না। জঙ্গিবিষয়ক আগের প্রায় সব ঘটনা মানুষের কাছে ছিল রহস্যজনক। গুম খুনের দেড় হাজারের বেশি ঘটনার জন্য বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র্র। ওয়ার অন টেররের খোদ তত্ত¡দাতারা কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এসব উৎসাহী কর্মকাণ্ডকে এখন জঙ্গি দমন বিষয়ক ঘটনা হিসেবে দেখছে না। এ অবস্থায় জঙ্গিবাদ নিয়ে আগের সেসব মিডিয়া প্রচারণা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়াবহ সব অভিযানকে মানুষ আরো বেশি অবিশ্বাস করছে। ৩০ ডিসেম্বর আমেরিকার ট্রেজারি বিভাগ জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যদের কালো তালিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে আইএস, হুজি, আলকায়েদার বিভিন্ন মাস্টারমাইন্ডের সাথে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নাম যুক্ত হয়েছে। এ দেশের সাধারণ মানুষ, আলেম ওলামা ও ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কারো নাম এ তালিকায় নেই; অথচ আমাদের এ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি প্রচারণার ডামাডোলে এদেরই বিরুদ্ধে কত অভিযান চালিয়েছে, গুনে শেষ করা যাবে না। আর ওইসব অভিযানে আমাদের মিডিয়ার উপচেপড়া গদগদ উৎসাহ ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এক পা বাড়ালে তারা তখন তিন পা বাড়িয়েছিল। এসব কি আজ বুমেরাং হয়ে ফিরে এলো?
jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন গাজীপুরে বাসে বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত মাহিন বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি চলতি সপ্তাহে হবে ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি! ববিতে ‘সোচ্চার স্টুডেন্টস নেটওয়ার্ক’ এর যাত্রা শুরু মতামত গ্রহণে ওয়েবসাইট চালু করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন কপ-২৯ সম্মেলনে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও এলডিসি’র ‘ওয়াকআউট’ আলোচনায় 'না' ভোট এবং 'ভোট রিকল' হাসানের জোড়া উইকেটের পরও ৩০০ পার করলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ অনুষ্ঠিত শিক্ষার্থীদের বিতর্কিত করে অভ্যুত্থান ব্যর্থ প্রমাণের অপচেষ্টা চলছে : উপদেষ্টা নাহিদ ফরিদপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম তালুকদার গ্রেফতার

সকল