২০২২ সালে চীন রাশিয়া আমেরিকা ও মুসলিম বিশ্ব
- মাসুম খলিলী
- ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০, আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:৫৪
২০২২ সাল বিশ্বের জন্য সবচেয়ে ঘটনাবহুল বছর হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এ বছরটি এমন এক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এসেছে যখন পৃথিবীতে নতুন এক ঠাণ্ডা লড়াইয়ের মেরুকরণ চলছে। তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সাথে মুখোমুখি অবস্থানে চীন। ইউক্রেন নিয়ে যেকোনো সময় বড় ধরনের সঙ্ঘাত ঘটতে পারে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। প্রাথমিকভাবে তাইওয়ান ও ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে চীন-রাশিয়ার সাথে দু’টি যুদ্ধপরিস্থিতি হতে পারে। ধরে নেয়া যেতে পারে এই দু’টি যুদ্ধক্ষেত্রেই হতে পারে ছায়াযুদ্ধ। অর্থাৎ যুদ্ধ হবে যুক্তরাষ্ট্র চীন রাশিয়ার নিজস্ব ভূমির বাইরে। তবে যেভাবে এই যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে তাতে এটি একটি সর্বব্যাপী লড়াইয়ে রূপ নিতে পারে।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পদধ্বনি?
এ লড়াইকে অনেকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হিসেবেও চিহ্নিত করতে চাইছেন। আর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানে হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর যে বৈশ্বিক ব্যবস্থা সেটি ভেঙে পড়া। চলমান এই বৈশ্বিক ব্যবস্থার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দু’টি দিকই এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। জাতিসঙ্ঘ ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংস্থার গঠন ও কার্যধারাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা আবর্তিত। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর ব্রেটন উড ব্যবস্থা তথা বিশ্বব্যাংক-আইএমএফকেন্দ্রিক যে ব্যবস্থা সেটি হলো বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার মূলে রয়েছে আমেরিকান ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংককেন্দ্রিক বৈশ্বিক মুদ্রা ডলার ও ব্রাসেলসকেন্দ্রিক বৈশ্বিক লেনদেন নিজস্ব ব্যবস্থা সুইফট। বলা বাহুল্য, বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় ব্যবস্থার ওপরই রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রাধান্য।
জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্যের মধ্যে তিনটি যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেন ও ফ্রান্স একই ঘরানার হলেও ভেটো ব্যবস্থার কারণে একতরফা কোনো কিছু আমেরিকা ও তার মিত্ররা সেখানে করতে পারে না। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ও লোনব্যবস্থায় পশ্চিমাদের রয়েছে একতরফা প্রাধান্য। ডলার, ইউরো ও পাউন্ড হিসাব করা হলে এই তিন মুদ্রায় বিশ্বের ৯০ ভাগ বাণিজ্য লেনদেন হয়। অন্য দিকে সুইফটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য লেনদেনের হার তার চেয়েও বেশি।
এই বাস্তবতার কারণে নবপর্যায়ের স্নায়ুযুদ্ধ শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসঙ্ঘের সংস্কারের রাজনৈতিক বিষয়ের চেয়েও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরির প্রচেষ্টা বেশি গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে। একের পর এক অর্থনৈতিক অবরোধের মাধ্যমে আমেরিকানবিরোধী দেশগুলোকে চাপের মুখে ফেলার কারণে বিপদে পড়া যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী দেশগুলো আমেরিকান ডলার, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ও সুইফট নেটওয়ার্কের বাইরে বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা তৈরি করতে শুরু করেছে। চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ও বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হওয়ার কারণে বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছে বেইজিং। ক্রিমিয়া দখলকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক অবরোধের শিকার রাশিয়া যোগ দিয়েছে এই প্রচেষ্টায়।
চীন ও রাশিয়া এর মধ্যে তাদের আন্তঃবাণিজ্যিক লেনদেন স্থানীয় মুদ্রায় করা শুরু করেছে। এই লেনদেনের জন্য দু’টি দেশের অভ্যন্তরীণ লেনদেন নেটওয়ার্ককে সমন্বিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্ববহ এক উদ্যোগ হলো ডিজিটাল মুদ্রা তৈরি। চীনা মুদ্রা ইউয়ানকে ডিজিটাল করার মাধ্যমে এটিকে আন্তর্জাতিক লেনদেনে ব্যবহার ছাড়াও চীন-রাশিয়া ব্রিকস নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে পশ্চিমা বলয়বিরোধী দেশগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল বিনিময় মুদ্রা ইউনিট তৈরির উদ্যোগে অংশীদার করতে চাইছে।
এই বিকল্প বৈশ্বিক মুদ্রা ও লেনদেন ব্যবস্থা আমেরিকান আধিপত্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাইডেন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার রাশ টেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করে আগ্রাসী হয়ে ওঠার পেছনে মূল কারণ এটি বলে মনে করা হচ্ছে। এখন বৈশ্বিক অবস্থা এমন যে, পাশ্চাত্য বলয়ও আগের মতো বৈশ্বিক রাজনীতির দ্ব›দ্ব সঙ্ঘাতে অভিন্ন ইউনিটের মতো ভ‚মিকা রাখতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার অকাস মিত্র যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া আর কানাডা-নিউজিল্যান্ড যতটা কাছাকাছি ততটা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দেখা যাচ্ছে না। এমনটি জার্মানি-ফ্রান্সের মতো ইউরোপের দুই নেতৃস্থানীয় শক্তিকে অনেক ক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়ার সাথে বিশেষ সম্পর্কে আবদ্ধ হতে দেখা যাচ্ছে। ন্যাটো নিরাপত্তা জোটও এখন আগের মতো সংহত অবস্থায় নেই। এর বিভিন্ন সদস্যের মধ্যে বিরোধ ও দ্ব›দ্ব বেড়েই চলেছে।
উদীয়মান শক্তির চ্যালেঞ্জ
এ অবস্থায় নতুন পর্যায়ের স্নায়ুযুদ্ধ পুরনো স্নায়ুযুদ্ধ থেকে পৃথক রূপ পেতে পারে। নতুন প্রযুক্তি প্রতিরক্ষা শক্তি ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য বিচারে চীন-রাশিয়াই শুধু এখন আমেরিকার প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এমনটি মনে হয় না। একই সাথে অনেক উদীয়মান শক্তিও সামনে চলে এসেছে যার মধ্যে তুরস্ক, ভারত, ইরান, ব্রাজিল, জাপান, জার্মানি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সব মিলিয়ে নতুন বৈশ্বিক স্নায়ুযুদ্ধের আন্তঃসম্পর্ক ভিন্ন হবে বলে মনে হয়।
২০২২ সালে স্নায়ু সঙ্ঘাতের যে নতুন রূপ দেখা যাচ্ছে তাতে চীন-রাশিয়াকেন্দ্রিক একটি মেরুকরণ রয়েছে। রাশিয়া অব্যাহতভাবে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহায়তা ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে চীন। চীন তার অর্থনৈতিক শক্তিমত্তা দিয়ে আফ্রো-এশিয়ার ছোট মাঝারি দেশগুলোতে বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছে। এখন সেই প্রভাবকে সংহত করতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও স্থাপনা সৃষ্টিতে জোর দিচ্ছে। ইরানের সাথে ২৫ বছর মেয়াদি কৌশলগত চুক্তির পর সৌদি আরবে যৌথ উদ্যোগে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির প্রকল্প নিচ্ছে চীন।
অন্য দিকে রাশিয়া সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের পর বৈশ্বিক অবয়বে নতুন প্রভাবশালী অংশীদার হওয়ার প্রয়াসকে মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিস্তার করছে। ইউক্রেন ও জর্জিয়ায় ছায়াশক্তি ব্যবহার করে সাফল্য পাওয়ার পর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যান্য সাবেক প্রজাতন্ত্রেও প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা নিয়েছে।
ভারসাম্য অবস্থানে মুসলিম বিশ্ব
প্রশ্ন হলো- নতুন যে বৈশ্বিক ও রাজনৈতিক স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হচ্ছে তাতে বিশেষ কী বৈশিষ্ট্য আমরা দেখতে পাবো। এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের একটি হবে জাতিবাদী স্বার্থের অগ্রাধিকার প্রাপ্তি। আর দ্বিতীয়টি হবে মুসলিম বিশ্বের বিশেষ গুরুত্ব লাভ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ৯০-এর দশক পর্যন্ত যে স্নায়ুযুদ্ধ মার্কিন-সোভিয়েত বলয়ে ছিল তার একটি আদর্শবাদী রূপ ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ছিল উদার গণতন্ত্রবাদের প্রবক্তা যার অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার ছিল মুক্তবাজার।
অন্য দিকে সোভিয়েত প্রভাব বিস্তারের মূল হাতিয়ার ছিল সমাজতান্ত্রিক সাম্যবাদ। যার অর্থনৈতিক কর্মসূচির মূল কথা ছিল রাষ্ট্রীক নিয়ন্ত্রণ বা কমান্ড অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। নবপর্যায়ের এই স্নায়ুযুদ্ধে আমেরিকা এখনো উদার গণতন্ত্র ও মুক্তবাজার ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকারের প্রধান বিষয় রাখলেও রাশিয়া বা চীন কোনোটাই এখন আদর্শবাদকে তাদের পররাষ্ট্র কৌশলে রাখেনি। কমান্ড অর্থনীতি থেকে দু’টি দেশই একপ্রকার সরে এসে বাজার ও ক্ষেত্রবিশেষ মিশ্র অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করেছে। এখন প্রভাব বিস্তারের মূল স্বার্থ হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতিবাদী স্বার্থ ও হিসাব নিকাশ।
নতুন এই হিসাবে একসময়ের আমেরিকান বলয়ের অনেক দেশ এখন চীন-রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক গণ্ডি পেরিয়ে তা কৌশলগত অবয়বও গ্রহণ করেছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ একাধিক দেশের ক্ষেত্রে এই দৃষ্টান্ত এর মধ্যে দেখা যায়।
পুরনো স্নায়ুযুদ্ধে মুসলিম বিশ্বের আলাদা কোনো স্বতন্ত্র ভ‚মিকা আমরা সেভাবে দেখিনি। নতুন স্নায়ুযুদ্ধে এটি প্রবল না হলেও মোটামুটি দেখা যেতে পারে। সম্ভাব্য বৈশ্বিক মেরুকরণে আমেরিকানরা প্রতিপক্ষ চীন ও রাশিয়ার সাথে মুসলিম স্বার্থ যাতে একই সরলরেখায় না এগোতে পারে তার জন্য দু’টি দেশকেই দু’টি গভীর সমস্যায় জড়িয়ে রেখেছে। এর একটি হলো চীনের উইঘুর সমস্যা আর অপরটি রাশিয়ার ককেসাস অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতার সংগ্রাম।
এই দুই সঙ্কট ছাড়িয়েও মুসলিম দেশগুলোর সাথে চীন, রাশিয়ার বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। প্রযুক্তি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংস্কৃতির উন্নয়ন বিবেচনায় মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ইরান রাশিয়া ও চীনের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক নির্মাণ করেছে। পরমাণু চুক্তি সংক্রান্ত চলমান আলোচনা ব্যর্থ হলে এই সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হতে থাকবে। ইরান ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সাথে নিজস্ব সমীকরণ গড়ে তুলতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বলয়েই তেহরানের দৃঢ় অবস্থান থাকবে।
অন্য দিকে তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য একমাত্র মুসলিম দেশ। অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশটি ইউরোপের সমকক্ষে পৌঁছানো ছাড়াও প্রতিরক্ষা শিল্পে সাম্প্রতিক বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জন করেছে। সেই সাথে দেশটি মধ্যএশিয়া মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় বিশেষ অর্থনৈতিক ভ‚মিকার কারণে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করেছে। ন্যাটো সদস্য হওয়ার পর তুরস্ক একটি স্বাধীন পররাষ্ট্র কৌশল অনুসরণে সচেষ্ট, যার কারণে চীন ও রাশিয়ার সাথেও তুরস্কের তৈরি হয়েছে বিশেষ সম্পর্ক। দেশটির বর্তমান এরদোগান সরকারের সাথে বাইডেন প্রশাসনের সৃষ্ট দূরত্ব ও নানা ক্ষেত্রে তুর্কিবিরোধী পদক্ষেপ তুরস্ককে চীন-রাশিয়ার প্রতি আরো নিকটবর্তী করছে।
প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগানের নেতৃত্বে, তুরস্ক দীর্ঘ দিন ধরে তার আন্তর্জাতিক অবস্থান উন্নত করতে এবং বৈশ্বিক ব্যবস্থায় আরো বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করতে চায়। হার্ড পাওয়ারের ব্যবহার স্বাভাবিককরণের নীতি এবং পরিপূরক হিসেবে একই উদ্দেশ্যে কাজ করেছে। এই অর্থে, দেশটি ২০২২ সালে একটি সক্রিয় এবং উদ্যোগী বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করবে। এটি ইতোমধ্যেই নভেম্বরে তুর্কি রাষ্ট্রগুলোর সংস্থা এবং গত মাসে তৃতীয় তুরস্ক-আফ্রিকা অংশীদারিত্বের শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে সেই উচ্চাকাক্সক্ষার ইঙ্গিত দিয়েছে। এরদোগান ২০২১ সালে ব্যক্তিগতভাবে ১৪টি দেশ সফর করেছিলেন।
মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি সৌদি আরব মার্কিন প্রশাসনের সাথে সৃষ্ট মতভেদের কারণে চীন ও রাশিয়ার প্রতি সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করছে। সৌদি আরবের কৌশলগত নতুন পর্যটন নগরী নিউম সিটিতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করছে চীন। সৌদি আরবে এখন চীনা শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সৌদিদের বৃত্তি দিয়ে পড়ার জন্য পাঠানো হচ্ছে। সৌদি আরব চীনে বিনিয়োগও করছে নানা ক্ষেত্রে।
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত কৌশলগত বন্দর নির্মাণের কাজ চীনকে দেয়ার ক্ষুব্ধ হয় ওয়াশিংটন। পরে এই কার্যাদেশ বাতিল করা হলেও চীন-রাশিয়ার সাথে আমিরাতের সম্পর্ক বেশ গভীর হয়ে উঠেছে। লিবিয়ায় রাশিয়া-আমিরাত খলিফা হাফতারের পক্ষে অভিন্ন ভ‚মিকা রেখেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক জনবহুল দেশ মিসর রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র আমদানি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। সুয়েজের বিকল্প ক্যানেল খনন ও ইথিওপিয়ার রেনেসাঁ বাঁধ নিয়ে ইসরাইলি উদ্যোগে ক্ষুব্ধ কায়রো রাশিয়া-চীন বলয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। গৃহসঙ্ঘাতে জর্জরিত সিরিয়া-ইয়েমেনে এমনিতে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বলয়ের গভীর প্রভাব রয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে ২০২২ সালে নবপর্যায়ের যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হচ্ছে তাতে শক্তিশালী মুসলিম দেশগুলোর সমন্বয়ে একটি বিশেষ বলয় তৈরি হতে পারে। আর এর সামনে থাকতে পারে তুরস্ক, ইরান, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো শক্তিধর দেশগুলো। আবার একই সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন-রাশিয়া- দু’পক্ষের কাছে মুসলিম দেশগুলোর গুরুত্ব বাড়তে পারে। ভ্লাদিমির পুতিনের মহানবী সা:-এর প্রশংসা করা আর উইঘুরে মুসলিমবিরোধী ভ‚মিকার জন্য কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকে প্রত্যাহার করা এবং বাইডেন প্রশাসনের মুসলিমদের সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরির প্রচেষ্টা এরই ইঙ্গিত বলে মনে হয়।
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা