হাতি, তার আনুগত্য ও আমরা
- মুসা আল হাফিজ
- ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:৩৮
আল কুরআনে সূরা ফিলের শিরোনাম আমাদেরকে হাতির মুখোমুখি করে। ফিল মানে হাতি। একটি ছোট্ট শিশু সূরাটি মুখস্থ করে, ফিল এর অর্থ জানে এবং হাতি সম্পর্কে কৌতূহলী হয়। মহান আল্লাহর উল্লেখে সে এসেছে এবং তার মধ্যে রয়েছে অবাক নিদর্শন।
স্থলচর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে হাতি সবচেয়ে বড়। আজ অবধি সবচেয়ে বড় যে হাতি পাওয়া গেছে, তার উচ্চতা চার মিটার আর ওজন ১০ হাজার কেজি। যে হাতির শাবক আজই জন্মগ্রহণ করল, তার ওজন হয় সাধারণত ১০৫ কেজি। হাতি প্রধানত আফ্রিকান ও এশিয়ান। এশিয়ায় হাতির বুকের পাঁজরের হাড় এক জোড়া কম। আফ্রিকান হাতিদের পাঁজরে ২১ জোড়া করে হাড় রয়েছে আর এশিয়ান হাতিদের আছে ২০ জোড়া করে। হাতির স্তন সামনের দু’পায়ের মাঝে। চামড়ার পুরুত্ব এক ইঞ্চি। একটি আফ্রিকান হাতি ওজনে সাধারণত ছয় হাজার কেজি এবং এশিয়ান হাতির ওজন হয় চার হাজার কেজি। বিশাল এই শরীর নিয়ে হাতি যখন চলে, পায়ের শব্দ হয় না এবং সে হেলে পড়ে না। তার পায়ে রয়েছে বিশেষ রকমের নরম প্যাড, যা তার চলার সময় ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক। সিংহ, বাঘ বা জিরাফের মতো প্রাণীকে সে মোটেও পাত্তা দেয় না। তবে হাতি ভয় পায় পিঁপড়া ও মৌমাছিকে।
একজন মানুষের নাড়ির স্পন্দন মিনিটে যেখানে ৬০ থেকে ১০০ বার, সেখানে মিনিটে একটি হাতির স্পন্দন ২৭ বার! মানুষের যেখানে গড়ে মোট আট ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন, সেখানে হাতি ঘুমায় শুধু চার ঘণ্টা। ঘুমের অর্ধেক সময় থাকে দাঁড়িয়ে। নিদ্রা যখন গভীর হয়, তখনই একপাশে শুয়ে পড়ে আর গভীর ঘুমে জোরে জোরে নাক ডাকে!
১৬ বছর বয়সে বাচ্চা দেয়ার মতো ক্ষমতা অর্জন করে একটি মাদি হাতি। সারা জীবনে সাধারণত চারটি বাচ্চা জন্ম দেয় মা হাতি। এর চেয়ে বেশি বাচ্চা দেয়ার দৃষ্টান্ত একান্ত বিরল। ২২ মাস ধরে গর্ভে ধারণ করে বাচ্চাকে। তারপর জন্ম নেয় এক হাতিশাবক!
শুঁড় হাতিদের খুব দরকারি অঙ্গ। নাক ও উপরের ঠোঁটের সমন্বয়ে সেই শুঁড় গঠিত। আফ্রিকান হাতির শুঁড়ে দু’টি ঠোঁট থাকে, আর এশীয় হাতির শুঁড়ে মাত্র একটি। হাতিরা তাদের দেহে পানি ছিটাতে শুঁড় ব্যবহার করে, শুঁড়ের সাহায্যে পরজীবীগুলো অপসারণ করে এবং উত্ত্যক্তকারীদের দূরে তাড়িয়ে দেয়। কাজটি প্রায়ই করে নিজেদের ত্বকে কাদা এবং ধূলিকণা ছড়ানোর মাধ্যমে। হাতির শুঁড়ে ৪০ হাজারেরও বেশি মাংসপেশি থাকে! অনেক সময় সে জোরে জোরে শুঁড় নাড়ায়, যেন আরো ভালোভাবে গন্ধ শুঁকতে পারে। শুঁড় দিয়ে হাতি কত বিচিত্র কাজ করে! গাছের ডালপালা চিরে ফেলে। পানি পান করা ও গোসলের কাজেও প্রধান হাতিয়ার তার শুঁড়। ডুবসাঁতারে এর সাহায্যে নেয় শ্বাস-প্রশ্বাস। শুঁড় দিয়ে সে একবারে ১৪ লিটার পানি শোষণ করতে পারে। এর দ্বারা কোনো কিছুর আকার, আকৃতি এবং তাপমাত্রা সম্পর্কে ধারণাও নেয়! খাবার তুলে নেয়া, যাত্রাপথে বাচ্চাকে কোলে নেয়া শুঁড়েরই কাজ। একটা হাতি দূরে থাকলে অন্য হাতিদের পায়ের শব্দ শোনার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে এরা শুঁড়টা মাটির সাথে লাগিয়ে রেখে বোঝার চেষ্টা করে, সঙ্গীরা কোথায়, কতদূর?
একটি বাচ্চা হাতি শুঁড় চুষে মায়ের স্তন থেকে দুধ পানের অনুরোধ জানায়। বাচ্চা হাতি যখন মায়ের দুধ খেতে পারে না, তখন সে আরামের জন্য নিজের শুঁড় চুষতে থাকে। যেভাবে মানবশিশু চুষতে থাকে নিজের অঙ্গুলি।
হাতির মুখের ভেতরে রয়েছে মোট ২৬টি চর্বণ দাঁত। শাবকদের মুখে জন্মের সময় দুধ দাঁত থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পথে এই দাঁত পড়ে গিয়ে স্থায়ী দাঁত ওঠে। জীবনে ছয়বার হাতির চর্বণের দাঁতে পরিবর্তন হয়। একবার বয়সের দুই-তিন বছরে, ছয় বছর পরে আরেকবার, ৯-১৫ বছর বয়সে তৃতীয়বার, চতুর্থবার পরিবর্তন ঘটে ১৮-২৮ বছর বয়সের মধ্যে। ৪০ বছর বয়সের আগেই পঞ্চমবার দাঁতের পরিবর্তন হয়। শেষ জীবনে নতুন দাঁত গজায় এবং মৃত্যু পর্যন্ত এই দাঁত থাকে।
গজদন্ত বা হাতির বড় দাঁত দু’টি তাকে বিশেষত্ব দেয়। পূর্ণবয়স্ক পুরুষ হাতির গজদন্ত বছরে সাত ইঞ্চি বৃদ্ধি পায়। এ আসলে ছেদক দন্ত। সে এর ব্যবহার করে প্রতিরক্ষার জন্য। এ দিয়ে সে দাগ দেয় গাছে, চিহ্নিত করে নিজের এলাকা, হাঁটার সময় রাস্তার ডালপালা সরায়। মাটি খুঁড়ে পানি বের করার জন্য কিংবা ভারী কিছু তোলার কাজে এর ব্যবহার করে। কারো সাথে লড়াইয়ে কাজে লাগায় এই দাঁত। তার মাঢ়ির দাঁত চারটি। একেকটির ওজন একেকটি ইটের ওজনের সমান!
পুরুষ এশিয়ান হাতির দাঁত বড় হয়, এশিয়ান মহিলা হাতিদের গজদন্ত হয় না। এশীয় হাতির দাঁত দুই থেকে পাঁচ ফুট লম্বা আর ওজনে ২০ কেজির মতো হয়। আফ্রিকান হাতির দাঁত আরো বড়। আফ্রিকান হাতিদের সবারই সাধারণত বড় দাঁত থাকে; কী পুরুষের, কী নারীর! তবে দাঁত ছাড়া হাতির জন্ম আফ্রিকায়ও হচ্ছে এবং যাদের দাঁত আছে, তা ছোট হচ্ছে আগের চেয়ে!
হাতির ঘ্রাণশক্তি অনেক বেশি। যখন তীব্র বাতাস বয়, তখনো এক কিলোমিটারের বেশি দূর থেকে হাতিরা মানুষের গন্ধ পায় এবং নির্দিষ্ট করতে পারে ঠিক কোথায় মানুষটি রয়েছে। একই সাথে একটি ছোট কলার খোসা পড়ে থাকলেও ৫০ মিটারের (১৬০ ফুট) চেয়ে বেশি দূর থেকে তার গন্ধ পায় হাতি। প্রস্রাবে ভেজা মাটির গন্ধ থেকে নির্ধারণ করতে পারে কোন পথে গেছে তার পরিবারের সদস্যরা।
ঘ্রাণ নেয়ার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে ওলফেক্টরি জিন। মানুষের চেয়ে এ জিন কুকুরের আছে পাঁচগুণ বেশি। শরীরে প্রায় ৪০০ ওলফেক্টরি জিন ধারণ করে কুকুর। ইঁদুরের শরীরে এমন জিন প্রায় এক হাজার ২০০ এবং হাতির শরীরে আছে দুই হাজার।
হাতির কান অনেক বড়। বেখাপ্পা না? আসলে এ কান বড় হয়েছে বড় শরীরের জন্য। শরীরের রক্ত নালিকার জটিল নেটওয়ার্ক এই কান। যা হাতির শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। আফ্রিকান হাতিগুলোর কান এশিয়ানদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বড় হয়। কারণ আকারেও তারা বড়।
আকারে যেমন বড় সে, বুদ্ধিমত্তায়ও হাতি প্রাণিজগতে অন্যতম। স্থলজ জীবজন্তুর মধ্যে তার মস্তিষ্ক সবচেয়ে বড়। যার ওজন পাঁচ কিলোগ্রাম। হাতিদের রয়েছে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সক্রিয়তা। ২৮০ কিলোমিটার দূরে বজ্রপাত হলেও হাতি তা শনাক্ত করতে পারে। এশিয়ায় সুনামি এলো ২০০৪ সালে। সুনামি তখনো আঘাত হানেনি। মানুষ সচেতন হতে পারেনি তেমন। কিন্তু হাতিরা দল বেঁধে যাত্রা করল উচ্চতর স্থানে। ক’দিন পরে দেখা গেল, অরণ্যের যে সমতলে আগে তারা ছিল, ভয়াবহভাবে প্লাবিত হয়েছে তা!
তানজানিয়ায় এলো দীর্ঘ খরা। তিনটি হাতির পাল নিয়ে অনুসন্ধান করছিলেন একদল বিজ্ঞানী। তারা লক্ষ করলেন, দীর্ঘ খরার সময়, বৃদ্ধ নারী হাতির নেতৃত্বে হাতির দু’টি পাল খরাপ্রবণ অঞ্চল ত্যাগ করল। চলে গেল এমন জায়গায়, যেখানে পানির সম্ভাবনা ভালো। দলটির অনেকেই বেঁচে গেল খরার গণমৃত্যু থেকে। বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান করে দেখলেন, সেখানে আরেক খরা হয়েছিল ৩০ বছর আগে। তখন জীবিত ছিল এই প্রবীণ নারী হাতিরা। তারা মনে রেখেছিল খরার লক্ষণ এবং ভুলে যায়নি খরা এলে কী বিপদ নেমে আসে!
তারা পারে স্মৃতিতে তথ্য সংরক্ষণ করে রাখতে। প্রাণিবিজ্ঞানী আইয়েন ডগলাস হ্যামিল্টন এক নারী হাতিকে অধ্যয়ন করেছিলেন কাছ থেকেই। তাকে তিনি চিহ্নিত করে রাখেন। চার বছর পরে হাতিটির কাছে গেলেন। সে তাকে চিনতে পেরেছিল! আপনার সাথে যদি কোনো হাতির পরিচয় হয় তবে সে আপনাকে মনে রাখতে পারে। এমনকি কয়েক বছর পরও।
আয়নায় তারা চিনতে পারে নিজেদের। এটি আত্মসচেতনতার বিশেষ লক্ষণ। একটি বাঘ আয়নায় নিজের ছবি দেখলে তাকে অন্য এক বাঘ ভেবে বসে। কিন্তু হাতি বুঝতে পারে, ছবিটি কার! হ্যাপি নামে পরিচিত এক এশিয়ান হাতির কপালে চিহ্নিত করা হয়েছিল একটি এক্স। তাকে যখন বারবার আয়নার সামনে নেয়া হতো, সে কপালের এক্স চিহ্নকে স্পর্শ করত শুঁড় দিয়ে। সেটা এলো কোত্থেকে?
হাতিরা তাদের পিঠে ধুলো ছিটিয়ে জীবাণু ও পরজীবী অপসারণ করে। হাতিদের গরম থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন ব্যবহারের বুদ্ধি রয়েছে। কোনো নদী বা জলাভূমিতে গোসল করে তারা ত্বককে উত্তপ্ত ও জ্বলন্ত রোদের হাত থেকে রক্ষা করতে কাদা এবং বালু পিঠের ওপর ছড়িয়ে দেয়।
হাতির বিষাদ, হাস্যরস, সহানুভূতি, সহযোগিতা, আত্মসচেতনতা, সরঞ্জাম ব্যবহার এবং চমৎকার শেখার ক্ষমতা আছে।
মনের মধ্যে ভবিষ্যতের ছবি গড়ে কর্মপদ্ধতি সাজাতে সক্ষম তারা। বিদ্যুতায়িত বেড়ার ওপর গাছের ডাল ইত্যাদি ফেলে তাকে অকেজো করে পেরিয়ে যেতে পারে হাতিরা।
হাতিদের রয়েছে সামাজিক শিক্ষা ও উন্নত বিনিময় প্রক্রিয়া। বেড়ালের মতো গড়গড় শব্দে তারা নিজেদের কথাবার্তা বলে। আমরা যা শুনি না, হাতি তা দিব্যি শুনতে পায়। আওয়াজের মাধ্যমে তারা যোগাযোগ করে। হাতির শব্দ এক মাইল দূরের অন্য হাতিরা শুনতে পায় এবং শনাক্ত করতে পারে। বুঝতে পারে সেখান থেকে একটি অভিবাদন জানানো হয়েছে বা সংবাদ পাঠানো হয়েছে। যখন তাদের একই পরিবারের এক সদস্যের সাথে কোথাও আরেক সদস্যের দেখা হয়, তখন তারা হালকা আওয়াজের মাধ্যমে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানায়। অন্যের সাথে যোগাযোগে তাদের এমন পদ্ধতি রয়েছে, যেখানে তারা নিজেদের সমস্ত ইন্দ্রিয়কে ব্যবহার করে। তারা একে অপরের সাথে দেহ ঘষে, হুমকি বা প্রতিরক্ষা বোঝাতে শুঁড় দিয়ে বিশেষ মাত্রার বিনিময় করে।
আফ্রিকান ও এশীয় উভয় ধরনের হাতিই মহিলা নেতৃত্বাধীন শক্তিশালী গোষ্ঠী গঠন করে। হাতির সামাজিক কাঠামো অন্য জীবজন্তুর থেকে আলাদা। ২৫টি হাতি একটি পরিবারের মতো একসাথে বাস করে। দলের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং শিশুদের যত্ন নেয় এবং শেখানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।
হাতি পরিবারে বয়স্ক হাতির প্রভাব অনেক বেশি। নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয় বয়স ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। সেটা মূলত লাভ করে দাদী বা মা হাতি। একটি দলে বেশি পুরুষ থাকতে নেই। তরুণ পুরুষ হাতিকে ৮-১৫ বছর বয়সের মধ্যে পরিবার ত্যাগ করে চলে যেতে হয়। সে সঙ্গীর সন্ধান করে এবং অন্য ছোট পরিবারের সাথে থাকতে শুরু করে। এক মাসের মতো সময়কালে পুরুষ হাতিরা সাধারণত স্ত্রী মিলনের জন্য মত্ত থাকে। নিজেদের মধ্যে প্রবল সঙ্ঘাতে লিপ্ত হয়। সময়টি যেন হাতির প্রজননের বসন্ত!
আফ্রিকান হাতি বন্য পরিবেশে সাধারণত ৭০ বছর অবধি বেঁচে থাকতে পারে। তবে বন্দী অবস্থায় হাতি এত দিন বাঁচতে পারে না। এশিয়ান হাতিগুলোর গড় আয়ু প্রায় ৪৮ বছরের মতো হয়।
হাতিরা খুবই সংবেদনশীল। দলের কোনো সদস্য বা কোনো বন্ধু দুঃখ পেলে অন্যরা কাছে গিয়ে তাকে সান্ত্বনা দেয়। বেশির ভাগ সময়ই দুঃখিত হাতিটির মুখে নিজের শুঁড় তুলে দেয়। হাতি অনেক সময় আহত হাতিদেরও সাহায্য করে থাকে। দলের কেউ হারিয়ে গেছে দূরে কোথাও। তারা অনুসন্ধানে বিরতি দেবে না। সে যদি নিজেই ফিরে আসে, নিজস্ব নিয়মে হাতিরা তাকে সংবর্ধনা দেয়।
নিজেদের কেউ মারা গেলে তারা প্রচণ্ড শোকার্ত হয়ে পড়ে। নীরব হয়ে যায় এবং মৃতের জন্য শোক প্রকাশ করে। প্রায়ই মৃতের দেহ ঢেকে দেয় ঘাস বা মাটি দিয়ে। হাতিরা চলছে। হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে থেমে গেল কারণ ছাড়াই। আসলে কারণ ছাড়া থামেনি। হয়তো মরা হাতির কিছু হাড়গোড় তাদের চোখে পড়েছে, কিছু দাঁত তারা দেখেছে। তারা এখন সেই মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। তার স্মৃতিচিহ্নে শুঁড় লাগাচ্ছে, পা দিয়ে স্পর্শ করছে। যে জায়গায় হাতির কোনো স্বজন বা ভালোবাসার কেউ মারা যায়, সেখান দিয়ে গেলে সে স্মৃতিকাতর হয়ে যায়। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ।
একটা বাচ্চা হাতি যদি কোনো বিষয়ে অভিযোগ করে, সমাধানের সম্ভাব্য সব চেষ্টা করবে গোটা দল। প্রয়োজনে দলের সব হাতি সমস্যার বিপরীতে সক্রিয় হয়। তাকে সবাই শুঁড় দিয়ে ছুঁয়ে দেবে, আশ্বস্ত করবে, ভয় নেই, চিন্তা করো না, বিষয়টি দেখছি। তুমি একা নও! আবার সে অপরাধ করলে শাস্তি হচ্ছে লাথি।
হাতিও পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে। প্রক্রিয়াটা অবশ্য একটু অন্যরকম। এ ক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করে শুঁড়। পরস্পরকে শুঁড়লগ্ন করে ভালোবাসা বা স্নেহের প্রকাশ করে। হাতি আনন্দ প্রকাশের জন্য কান নাড়ায়।
ঘাস, গাছপালা এবং ফলমূল খাওয়ার জন্য প্রতিদিন ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে হাতিরা! তাকে খেতে হবে গড়ে ১৫০ কেজি খাদ্য আর প্রায় ১৪০ লিটার পানি। হজমের উৎপাদক হিসেবে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস তৈরি করে। হাতি একদিনে যে পরিমাণ মিথেন নির্গত করে তা একটি গাড়িকে ৩২ কিলোমিটার অবধি চালিয়ে নিতে সক্ষম। প্রতিদিন সে মল ত্যাগ করে ১৬-১৮ বার। যা পরিমাণে প্রায় ১০০ কেজি! হাতির মল মাটিকে উর্বর রাখে এবং গাছের বীজ ছড়িয়ে দেয়।
ব্ল্যাক আইভরি কফি বানানো হয়ে থাকে হাতির মল দিয়ে। প্রথমে হাতিকে কফির ফল খাওয়ানো হয়। ফল হজম হয়ে মল ত্যাগ করতে হাতির সময় লাগে ১৭ ঘণ্টা। এরপর মল থেকে সংগ্রহ করা হয় কফির বীজগুলো। সেগুলো দিয়ে কারখানায় নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে তৈরি হয় পৃথিবীর সবচেয়ে দামি এবং সুস্বাদু কফি-ব্ল্যাক আইভরি। এক কেজি কফি পাওয়ার জন্য হাতিকে প্রায় ৩৩ কেজি কফি ফল খাওয়াতে হয়। মাত্র এক কিলোগ্রাম ব্ল্যাক আইভরি কফির দাম প্রায় এক হাজার ২০০ মার্কিন ডলার।
মানুষের উপকারে হাতির এ ভূমিকা একান্তই নগণ্য। বিশাল এই প্রাণীকে মানুষের বশে আনা হয়েছে। যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ বাহন হিসেবে সে কাজ করেছে। এমনকি তাকে ব্যবহার করে মানুষ বিনোদন নিয়েছে, নিচ্ছে।
তাকে যুগ যুগ ধরে যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে। সভ্যতাসমূহের উত্থান-পতনের বড় বড় রণাঙ্গনে সে ছিল অন্যতম নিয়ামক।
সূরা ফিলে হাতির যে উল্লেখ, তা মূলত মানুষের দ্বারা যুদ্ধে ব্যবহৃত হওয়ার একটি পরিপ্রেক্ষিতের ঘটনা। আবরাহা নামের এক দাম্ভিক রাজা হাতিবাহিনী নিয়ে এসেছিল আল্লাহর ঘর-কাবা ধ্বংস করতে! মহান আল্লাহ এই ঔদ্ধত্যের শাস্তি দেন এবং হাতিবাহিনী ধ্বংস হয়ে যায়।
হাতির মতো প্রাণী মানুষের অনুগত হয়ে যেন জানান দেয়, মানুষ এখানে বড়, কারণ সে আল্লাহর প্রতিনিধি। বড়ত্বের এই মূল সূত্র ও দায়িত্ব ভুলে গিয়ে মানুষ যখন স্বেচ্ছাচারী হয়, তখন সে নিজের জন্যই আপদ হয় না, অন্যান্য প্রাণীর জন্যও বিপদ ও বিপন্নতা ডেকে আনে। অনুগত হাতিদের জন্য যেমনটি ডেকে এনেছিল আবরাহা!
লেখক : কবি, গবেষক
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা