২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

লাভ কিলিং!

লাভ কিলিং! - ছবি সংগৃহীত

গত মাসের ২ এবং ১২ তারিখে যথাক্রমে সিলেটের কানাইঘাট এবং লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ সীমান্তে দু’জন করে মোট চারজন বাংলাদেশী নাগরিককে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ গুলি করে হত্যা করেছে। তার এক মাসের কম সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মহানুভবতা ও উদারতার অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীকে বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন মাত্রা লাভ করেছে।’ (প্রথম আলো, ১ ডিসেম্বর ২০২১) আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারবার এ ধরনের মহানুভবতা বন্ধুরাষ্ট্রকে দেখাচ্ছেন। তিনি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছিলেন, ‘আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, সেটা ভারত সারাজীবন মনে রাখবে।’ (প্রাগুক্ত, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০) কিন্তু দুঃখজনক হলো- ভারত আমাদের প্রধানমন্ত্রীর এই মহানুভবতা থেকে শিক্ষা তো নেয়ইনি, তদুপরি সীমান্তে বাংলাদেশের নিরস্ত্র নিরীহ নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করা থেকে বিরত হচ্ছে না। এরই মধ্যে আমরা গত ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মৈত্রী দিবস উদযাপন করেছি।

বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের কণ্ঠে হতাশার সুর উচ্চারিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের জন্য দুঃখজনক আর ভারতের জন্য লজ্জাজনক।’ সত্যিই এই ঘটনা তাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক! তারা বলছেন বাংলাদেশ ভারতের অকৃত্রিম বন্ধু এবং অত্যন্ত প্রিয়তম প্রতিবেশী, অন্য দিকে, প্রায় নিয়মিতভাবেই বাংলাদেশীদের হত্যা করছেন। ২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং ২০১৫ সালের ৭ জুন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্পষ্টভাবে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আর প্রতি বছরে প্রায় দুইবার করে বিজিবি-বিএসএফের শীর্ষ সম্মেলনে বিএসএফ প্রধান সীমান্ত হত্যা ‘শূন্যের কোঠা’য় নিয়ে আসার আশ্বাস দিয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের আশ্বাসবাণী শুধু কূটনৈতিক বচনের মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ রয়েছে। ২০১৯ সালে তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাস বলেছেন, ‘প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশই প্রথম’। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ভারত কর্তৃক অন্যদেশের নাগরিক হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশই প্রথম! ভুটান ও নেপাল সীমান্তে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটে না। আর পাকিস্তান এবং চীন সীমান্তে ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়ার ভয়ে ভারত তাদের সাথে এই কাজটি করার সাহসই করে না। কারণ, ওইসব দেশের একজন হত্যা করলে তারা ভারতের দ্বিগুণ ক্ষতি করে। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, আমাদের নাগরিক হত্যাকাণ্ড কি নিতান্তই ভারতের লাভ কিলিং! অথচ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও সাবেক পররাষ্ট্রসচিব সুষমা স্বরাজ- সবাই একবাক্যে বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব, ভালোবাসা এবং সর্বোচ্চ উচ্চতার সম্পর্কের কথা বলেছেন। কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখছি? এমনকি আমাদের দেশের নেতারাও একইভাবে সুমধুর সম্পর্কের কথা বলছেন। কেউ বলছেন ‘স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্ক, কেউ বলছেন রক্তের রাখিবন্ধনের সম্পর্ক। তবে এই কি আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক! ২০০০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দুই দশকে এক হাজার ২৩৬ জনের বেশি বাংলাদেশীকে সীমান্তে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী! এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হত্যা করা হয়েছে ২০০৯ সালে, ৬৬ জন। এমনকি ২০২০ সালে করোনা মহামারীর মধ্যেও হত্যা করা হয়েছে ৫১ বাংলাদেশীকে।

সবচেয়ে দুঃখজনক হলো- এসব নিহত বাংলাদেশী নাগরিককে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত এবং চোরাচালানকারী বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর এই নিহতদের চোরাকারবারি বলেছেন। আর বর্তমান হাইকমিশনার দোরাইস্বামী গত কয়েকদিন যাবৎ বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলেই যাচ্ছেন, এরা চোরাচালান করতে ভারতে যায় বলেই নিহত হচ্ছে! চোরাচালান বা অপরাধ কমে গেলে এই সীমান্ত হত্যাকাণ্ড কমে যাবে! আবার ভারতের নেতারা এবং কর্মকর্তারা কখনো বলেন না যে, এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হবে। বরং তারা বলে থাকেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার পদক্ষেপ নেয়া হবে’। এমনকি, গত ৭ ডিসেম্বর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ঢাকায় আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে এক বৈঠকে বলেছেন, ‘সীমান্ত হত্যা এড়াতে ভারত আরো সতর্ক দৃষ্টি রাখবে’। আসলে তারা সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধে মোটেও আন্তরিক নয়। আমাদের নেতাদেরও বলতে শোনা যায়, এ সমস্ত লোক ভারতে চোরাচালান করতে যায় বলেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে থাকে। বাংলাদেশের নেতাদের এ ধরনের বক্তব্যে বরং বিএসএফ আরো উৎসাহিত হতে পারে। তবে সীমান্তরক্ষীর গুলি চালানো হলো সর্বশেষ পদক্ষেপ এবং তা শুধু আত্মরক্ষার জন্য। কিন্তু আমাদের লোকজন ভারতে যায় নিরস্ত্র অবস্থায়। সাধারণত একজন বা দু’জন বাংলাদেশী একসাথে গুলিবদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। অর্থাৎ এসব লোক কোনোভাবেই বিএসএফের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী নয়। এক দেশের সীমান্ত অন্য দেশের লোক অতিক্রম করলে সংশ্লিষ্ট সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে অনেক প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা রয়েছে। কাজেই কোনো আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি, ঐতিহ্য এবং সভ্যতার তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশী ‘দেখামাত্র গুলি করা’র নিয়মিত ঘটনা কতটুকু বন্ধুত্বপূর্ণ এবং প্রতিবেশীসুলভ তা এক কঠিন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের কাছে। এই প্রশ্নও উঠতে পারে- কেন বাংলাদেশীরা সীমান্তের ওই পারে যায়? এরা সবাই চোরাকারবারি নয়।

আমাদের বুঝতে হবে, আমরা প্রায় দেড় শ’ বছর এক রাষ্ট্র ছিলাম ব্রিটিশদের অধীনে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা এ অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণে মনোযোগ না দেয়ায় তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের সীমান্ত অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর ও গোলমেলেভাবে টানা হয়েছিল। ফলে হঠাৎ দেশভাগে কারো বসতবাড়ি, কারো রান্নাঘর, কারো বা বৈঠকখানা দুই দেশের মধ্যে পড়ে। অন্য দিকে, ভূরাজনীতি একই ভূমিকে দুই দেশে বিভক্ত করে দিলেও দুই দেশের নাগরিকত্বের বিভাজন তাদের মন ও সম্পর্ককে বিভাজিত করতে পারেনি। ফলে তাদের মধ্যে সামাজিক আনাগোনা বন্ধ হয়নি এখনো। আর সীমান্তবর্তী এই দরিদ্র মানুষগুলো সাধারণত কাঠ সংগ্রহ, মাছ ধরা ও কৃষিকাজে সীমান্তরেখার এপার-ওপার তোয়াক্কা না করে চলাফেরা করে থাকে। নিছক অন্নের সন্ধানে চলাফেরা করা এই লোকগুলো কী করে বিএসএফের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে তা আমাদের বোধগম্য নয়। চোরাচালানের জন্যও কিছু লোক সীমান্ত অতিক্রম করে থাকে। কিন্তু এই গরিব মানুষগুলো শুধু পণ্য বহনকারী হিসেবে কাজ করে থাকে দু’বেলা আহার জোগানোর জন্য। অথচ দুই দেশের মূল চোরাচালান ব্যবসায়ীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। তা ছাড়া এই চোরাচালান কারবার করার জন্য মূলত ভারতীয়রাই দায়ী। ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি গড়ে তোলা হয়েছে ফেনসিডিল ও ইয়াবা কারখানা। সীমান্তে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম ও সাতক্ষীরা সীমান্তের অপরদিকে ভারতীয় অংশে কোচবিহার ও চব্বিশ পরগনায় তিনটি ইয়াবা কারখানা রয়েছে। (প্রথম আলো, ১৩ নভেম্বর ২০২১)। ভারতে তৈরি করা অবৈধ ক্ষুদ্রাস্ত্র ভারতীয় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা সীমান্তে বহনকারীদের হাতে তুলে দেয়। তাদের থেকে এদেশীয় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা সময়-সুযোগমতো বাজারজাত করে থাকে। (প্রাগুক্ত, ১৫ নভেম্বর ২০২১) আর ভারতীয় গরু আনতে তো অহরহই সীমান্তের গরিবরা ওপারে যায়। প্রশ্ন হলো- এসব গরু কাদের কাছ থেকে নিয়ে আসতে যায় এবং এদেশে কাদের হাতে তুলে দেয়া হয়? নিশ্চয়ই ভারতীয় লোকজনও এর সাথে শতভাগ জড়িত থাকে। তারা তো কেউ বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় না! অর্থাৎ বিএসএফ বেছে বেছে ‘বাংলাদেশী’ চিহ্নিত করে হত্যা করে থাকে।

বিএসএফের এভাবে অপরাধীর নামে বাংলাদেশীদের হত্যার অনেক কারণ রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। এর প্রথমেই আসে ভারতের নিরাপত্তা দর্শন। ভারতের বর্তমান চরম হিন্দুত্ববাদী শাসকগোষ্ঠী ‘নিরাপত্তা’র অজুহাত তুলে ভারতের এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নিগৃহীত করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করছে। তারা ভারতের সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীকে বুঝাতে চায় যে, মুসলমানরাই হলো ভারতের একমাত্র নিরাপত্তা হুমকি। ভারতের সাম্প্রতিককালে নাগরিকত্ব আইন, নাগরিকত্ব নিবন্ধন আইন তারই প্রতিফলন। সম্প্রতি ভারতীয় অংশে সীমান্তবর্তী ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত অঞ্চল বিএসএফকে আইন প্রয়োগের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এতে মূলত ওই এলাকার মুসলমানদের হেনস্তা করে বাংলাদেশী বলে চালানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে। সত্যিকারার্থে বিএসএফ একটি ‘ট্রিগার হ্যাপি’ বাহিনীতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের চার হাজার ১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে। এ সমস্ত হত্যার জন্য তাদেরকে কখনো বিচারের সম্মুখীন হতে হয় না। এভাবে পঞ্চম দীর্ঘতম সীমান্তরেখা বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সীমান্ত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। কারণ বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের সীমানায় এ ধরনের একতরফা হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর আর কোথাও নেই। ২০১১ সালে ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় কাপড় আটকে উল্টোভাবে ঝুলে থাকাকালে বিএসএফ পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছিল। ফেলানী পানি চাইলে তাকে পানির বদলে গুলি করা হয়েছিল। আজ পর্যন্ত এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। এভাবে বাংলাদেশীদের জীবন তাদের কাছে তুচ্ছ খেল-তামাশা এবং ফায়ারিং অনুশীলনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সরকারকে বিভিন্নভাবে চাপে রাখার উদ্দেশ্যেও এই সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটে থাকে। সম্প্রতি চীনের সাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটছে। অন্য দিকে, চীন ও ভারতের সেনারা লাদাখ সীমান্তে যুদ্ধংদেহী হয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। অতিসম্প্রতি ভারতের সদ্যপ্রয়াত চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত চীনের সাথে ভালো সম্পর্কের ব্যাপারে ভারতের ছোট প্রতিবেশী দেশগুলোকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন। অন্য দিকে, আমাদের অতিমাত্রায় ভারত তোয়াজের নীতির কারণেই হয়তো বা বিএসএফ সদস্যরা নিজেদেরকে বাংলাদেশী নাগরিকের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করে রেখেছে। এমনকি আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সময়ে সময়ে ভারতের হস্তক্ষেপের বিষয়টিও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে বেপরোয়া হয়ে ওঠার সাহস জোগাতে পারে।

একতরফাভাবে বাংলাদেশীদেরকে হত্যার ঘটনা একদিকে যেমন বাংলাদেশের নেতাদের হতাশ করছে অন্য দিকে, সাধারণ জনগণের মনে ভারত সরকারের ব্যাপারে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করে দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এ ধরনের নিয়মিত সীমান্ত হত্যার ঘটনা ভুক্তভোগী দেশের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে কি না সেটাও ভেবে দেখার সময় এসেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়ের শক্ত প্রতিবাদ জানানো প্রয়োজন। এ ব্যাপারে কৌশলগত বিষয়সমূহে দরকষাকষি করার যথেষ্ট উপাদান বাংলাদেশের রয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। এদেশে ভারতের প্রায় ২০ লাখ কর্মজীবী ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আয় করছে। এ ছাড়াও ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট ইত্যাদি অনেক ধরনের কোমল অস্ত্রের (সফট ওয়েপন) অস্তিত্ব রয়েছে। সেই সাথে আমাদের সীমান্তবর্তী মানুষকে সীমান্ত আইন বিষয়ে শিক্ষিত করে তোলার পাশাপাশি সীমান্তে দারিদ্র্যবিমোচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে করে তাদের ওপারে যেতে না হয় অন্নের সন্ধানে। অন্য দিকে, আমাদের সীমান্তে নিরাপত্তা চৌকি বা বিওপির সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করে এই সীমান্ত লঙ্ঘনের বিষয়টি কমানো সম্ভব। এ ধরনের পদক্ষেপের পরও সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হলে বিষয়টি দ্বিপক্ষীয় গণ্ডির বাইরে আঞ্চলিক কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে নিয়ে যেতে পারি। সেখানে বিফল হলে আমরা অবশ্যই জাতিসঙ্ঘকে কাজে লাগিয়ে সুফল প্রাপ্তির আশা করতেই পারি। হর্ষবর্ধন শ্রিংলা গত ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় এসে পুনরায় বলেছেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সোনালি অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে’। তিনি আবারো সীমান্ত হত্যা বন্ধের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এই আশ্বাসে বিশ্বাস আনতে হলে সামনের দিনগুলোতে সীমান্তে কোনো বাংলাদেশীকে হত্যা না করেই প্রমাণ দিতে হবে ভারতকে।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক

Email: [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement