মাতারবাড়ী মেগা প্রকল্প
- সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা
- ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:২৭
আমাদের দেশের সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে অচলাবস্থা ও দীর্ঘসূত্রতা নতুন নয়। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবেই মধ্যস্বত্বভোগীরা গৃহীত প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির জন্য সক্রিয় রয়েছে। এতে রাষ্ট্রীয় তহবিলের ব্যাপক অপচয় হলেও সরকারও এদের কাছে অনেকটাই অসহায়। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মাতারবাড়ী আলট্রা সুপারক্রিটিক্যাল কয়লাচালিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী অনুমোদন করেছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এতে প্রকল্পের ব্যয় ১৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা বৃদ্ধিসহ ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এর সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। ২৩ নভেম্বর একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেকের সাপ্তাহিক বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বৈঠকে ২৯ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা আনুমানিক ব্যয়সহ ১০টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সাতটি নতুন এবং তিনটি সংশোধিত প্রকল্প। মাতারবাড়ী প্রকল্পের মূল অর্থ ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকার বিপরীতে এখন ব্যয় দাঁড়িয়েছে মোট ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের সময়সীমা জুন ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যায়নি। গৃহীত সরকারি প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করে এমন ধারণাই করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
মূলত কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বেশ আগেই। শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, বরং পুরো এলাকাটিকেই একটি আধুনিক শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার কথা প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে। বস্তুত মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত ১০ মেগা প্রকল্পের একটি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) অধীনে বাস্তবায়নের কাজ চলছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ হয়নি, বরং অনাকাক্সিক্ষতভাবে এর ব্যয় বেড়েছে। ফলে খানিকটা অনিশ্চয়তার মুখেই পড়েছে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পটি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা একেবারেই ভাবলেশহীন।
সংশ্লিষ্ট মহল দাবি করছেন, কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ চলছে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে। সিপিজিসিবিএল সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পে ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি স্টিম টারবাইন, সার্কুলেটিং কুলিং ওয়াটার স্টেশন স্থাপন, ২৭৫ মিটার উচ্চতার চিমনি ও পানি শোধন ব্যবস্থা সংযুক্ত হবে। কয়লা আমদানির জন্য নদীতে সাত কিলোমিটার নৌ-চ্যানেলের পাশাপাশি কয়লা ওঠানামার জন্য নির্মাণ করা হবে জেটি।
কয়লা আমদানির পর তা সংরক্ষণের জন্য বানানো হবে কোল ইয়ার্ড। পাশাপাশি টাউনশিপ নির্মাণ, পল্লী বিদ্যুতায়ন কাজের আওতায় চকোরিয়া-মাতারবাড়ী ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ এবং ১৩২/৩৩ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন নির্মাণের প্রস্তাবও করা হয়েছে এই মেগা প্রকল্পে। একই সাথে অ্যাশ ডিসপোজাল এরিয়া এবং বাফার জোন নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে যা কর্তৃপক্ষের একটি উচ্চাভিলাষী ও সাহসী পরিকল্পনা বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৫ সালের আগস্টে মাতারবাড়ীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। ওই প্রকল্পে ২৯ হাজার কোটি টাকা দেবে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা-জাইকা। বাকি পাঁচ হাজার কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হবে। অবশিষ্ট অর্থের জোগান দেবে কেন্দ্রটির বাস্তবায়নকারী ও স্বত্বাধিকারী সিপিজিসিবিএল।
দেশে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের জন্য এই অতিউচ্চাভিলাষী ও ব্যয়বহুল মেগা-প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও দীর্ঘ ৯ বছরেও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। প্রকল্প গ্রহণের সময় বাস্তবায়নের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হলেও নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়েছে অনেক আগেই; কারণ এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটির অগ্রগতি এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৫ শতাংশ। অর্থ ব্যয় হয়েছে ৪৮.৫৩ শতাংশ। তাই বরাদ্দকৃত অর্থে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, বরং অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে; কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি অনুমোদনের পর বিস্তারিত ডিজাইন করা হয়েছে। ওই ডিজাইনের কারণে খরচ ১৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা বাড়ছে। ধীরগতির কারণে সময় সাড়ে তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের কাছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি অনুমোদনের পর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিটেইল ডিজাইন করেছে। সে অনুযায়ী খরচ বেড়েছে প্লান্ট ও জেটির ক্ষেত্রে।’ কিন্তু ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টিকে অনেকেই স্বাভাবিক ও যৌক্তিক মনে করছেন না।
সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্লান অনুযায়ী আগামী ২০৩০ সালে দেশে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সে আলোকে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হলো ২৫ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ দৈনিক চাহিদা সাড়ে ১৩ হাজার থেকে ১৩ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের জন্যই মাতারবাড়ীতে দু’টি ৬০০ মেগাওয়াটের মোট এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট (প্রথম সংশোধন) ২০১৪ সালের ১২ আগস্ট একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্প ঋণসহ ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয়ের ওই প্রকল্পটি সমাপ্ত করার সময় ছিল ২০২৩ সালের জুনে। কিন্তু এখন বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের খরচ ১৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর মেয়াদ আরো সাড়ে তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়। সে প্রস্তাব কোনো সংশোধনী ছাড়াই গত ২৩ নভেম্বর একনেকের বৈঠকে অনুমোদন লাভ করেছে। কিন্তু বর্ধিত সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানা গেছে, ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্তির সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে চলতি ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত অর্থাৎ প্রকল্পে সাত বছর এক মাসে খরচ হয়েছে ৪৮.৫৩ শতাংশ বা ১৭ হাজার ৪৬৬ কোটি ২০ লাখ টাকা যেখানে অস্বাভাবিকভাবে বিবিধ খাতেই খরচ বাড়ছে ১৯১ কোটি টাকা।
প্রকল্পের আওতায় কাজগুলো হলো- দু’টি ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, প্রকল্প এলাকার জন্য সমুদ্রে গভীর নাব্যতার চ্যানেল এবং তেল ও কয়লার জন্য পৃথক দু’টি জেটি নির্মাণ, স্থায়ী টাউনশিপ নির্মাণ, বিভিন্ন পূর্ত কাজ, ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন। প্রকল্পে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত জাপানি ঠিকাদার এবং বিশ্বের বিভিন্ন পরামর্শক রয়েছেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোর্ট ও জেটি নির্মাণ প্রক্রিয়ার বেশ অগ্রগতি হয়েছে। সমুদ্রগামী বিভিন্ন জাহাজ থেকে প্রকল্পের মালামাল খালাসে গত ডিসেম্বর থেকে নবনির্মিত একটি স্থায়ী জেটি এরই মধ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। আরেকটি জেটি নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্প এলাকার জন্য সমুদ্রে গভীর নাব্যতার চ্যানেল এবং তেল ও কয়লার জন্য পৃথক দু’টি জেটি নির্মাণ, স্থায়ী টাউনশিপ নির্মাণ, বিভিন্ন পূর্তকাজ, ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নকাজ চলমান আছে। প্রকল্প দেরিতে শুরু হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ২০১৬ সালে গুলশানের হোলে আর্টিজানের ঘটনায় ‘ইপিসি’ বিড সাবমিশন দীর্ঘায়িত হয়েছে। ইপিসি কাজ শুরু করে প্রকল্প অনুমোদনের তিন বছর পর।
জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইপিসির অংশ বয়লার নির্মাণে ব্যয় ৬৫০ কোটি ৮৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে যেখানে এই খাতে অনুমোদিত ব্যয় প্রথমে ছিল আট হাজার ৩৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ইপিসি অংশে টারবাইন ও জেনারেটর নির্মাণে ব্যয় বরাদ্দ ছিল চার হাজার ৫৭৯ কোটি ছয় লাখ টাকা। এখন তাতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ৬৪২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আর কয়লা ও ছাই হ্যান্ডলিং সিস্টেমের জন্য ব্যয় বরাদ্দ ছিল দুই হাজার ২২৩ কোটি ৫৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এখানেও খরচ বাড়ছে ১৯২ কোটি ২৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের জন্য অনুমোদিত ব্যয় ছিল ১৪ কোটি ৮৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। সেখানেও বাড়ছে সাত কোটি ৫০ লাখ টাকা। ট্রায়াল রান ইপিসির অংশে খরচ ধরা হয়েছিল এক হাজার ৯২৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এখন ব্যয় বাড়ছে ২৫২ কোটি ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। বলা হচ্ছে, ইপিসির চুক্তি মূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যয় বৃদ্ধি দেশী-বিদেশী পরামর্শক সেবায় ব্যয় বাড়ছে ৩২৭ কোটি ৮১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। ফলে পরামর্শক খাতে ব্যয় ৫০৭ কোটি ১১ লাখ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৩৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা; যা মোট খরচের ২ শতাংশ। নির্মাণকালীন সুদ দিতে হবে এক হাজার ৩৯২ কোটি ছয় লাখ টাকা।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিপিজিসিবিএল লিখিতভাবে তাদের বক্তব্যে পরিকল্পনা কমিশনকে বলেছে, এ প্যাকেজের বিষয়ে প্রকল্প অনুমোদনের পর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিটেইল ডিজাইন তৈরি করে থাকে। সেই ডিজাইন অনুযায়ী বিড ডকুমেন্টস তৈরি করে ইপিসি (ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট কন্ট্রাক্টর) ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়। ঠিকাদারের সাথে চুক্তিমূল্য বেড়ে ৩৮ হাজার ১১৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে গুলশানে হোলে আর্টিজান ট্র্যাজেডির কারণে প্রকল্পে ইপিসি ঠিকাদার নিয়োগে দেরি হয়। ফলে ইপিসি ঠিকাদারের বিড মূল্যায়নের পর ওই ঠিকাদারের প্রস্তাবিত সময়সীমার মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইপিসি ঠিকাদারের সাথে চুক্তি করা হয়, যাতে সিপিজিসিবিএল বোর্ডের অনুমোদন এবং জাইকার সম্মতি রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ আইএমইডি বলছে, পাওয়ার প্লান্ট ও জেটি নির্মাণে প্রাক্কলিত খরচ ১৩ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা বাড়ানোয় ইপিসি চুক্তির যাবতীয় তথ্যের বিষয়ে আইএমইডিকে অবহিত করতে হবে। প্রকল্পটির সুষ্ঠু বাস্তবায়নে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কর্তৃক নিয়মিত তদারকির আবশ্যকতা রয়েছে। প্রকল্পের জন্য বিদেশে যন্ত্রপাতি নির্মাণকাজ কোন পর্যায়ে আছে তা নিয়মিতভাবে মনিটরিং করা প্রয়োজন। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা সার্বিক পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে, যা প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধক বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধির ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের বক্তব্য হলো, ‘প্রথমে যখন পিইসি হয় তখন আমাদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু অবজারভেশন দেয়া হয়েছিল। সে আলোকে তারা ‘আরডিপিপি’ পাঠিয়েছে। আমরা সেটি পর্যালোচনা করে পাঠিয়েছি। বেশ কয়েকটি অঙ্গ নতুন করে যুক্ত হওয়ায় ব্যয় বাড়ছে।’ কমিশন আরো বলেছে, ‘পিইসি করে আমরা পাঠিয়েছি একনেক ডিভিশনে। আগে ব্যয় ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এখন বাড়ছে ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন খরচ ৫২ হাজার কোটি টাকায় এসে ঠেকেছে।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের কথা বলে বিভিন্ন ব্যয়বহুল প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে রাষ্ট্রীয় তহবিলের প্রভূত অর্থ ব্যয় করা হলেও প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পুরোপুরি অর্জিত না হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একটি অসাধু ও মধ্যস্বত্ব¡ভোগী চক্র পরিকল্পিতভাবেই প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যয় বৃদ্ধি করে পুরো প্রক্রিয়াকেই জটিল করে তুলছে। দেশে আইনের শাসনের বিচ্যুতির কারণেই এদের বিরুদ্ধে সরকার বা সংশ্লিষ্ট বিভাগ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না।
সে অশুভ বৃত্তেই পড়েছে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনা তো অনেক আগেই নস্যাৎ হয়ে গেছে। ফলে প্রকল্প ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে বেশ আগেই। সম্প্রতি একনেকের বৈঠকে তা অনুমোদনও লাভ করেছে। কিন্তু বর্ধিত সময়ে ও ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি; কারণ এ ক্ষেত্রে অতীত রেকর্ড মোটেও ইতিবাচক ও সুখকর নয়। এ অবস্থায় প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ জরুরি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা; অন্যথায় প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা কাটবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা