২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সর্ষের ভেতরের ভূত

-

অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার মতো, পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়ে যায়। গোয়েন্দা পুলিশের একটি চৌকস দল প্রশ্নফাঁস চক্রকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দারা। জানতে পারে, এ চক্র নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস করে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করছে। আরো জানা গেল আমাদের নিয়োগ পরীক্ষা নিরাপদ করার দায়িত্ব যাদের ওপর তাদের কেউ কেউ ফাঁসেরও প্রধান হোতা। সৎ যোগ্য দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগদানের বদলে তারা অর্থ কামানোকে একমাত্র লক্ষ্য বানিয়েছে। একেবারে টপ পর্যায় থেকে এই সর্বনাশা আয়োজন হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একজন অধ্যাপক উপরের পর্যায় থেকে প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার কথা চক্র জানিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধান ধারার সংবাদমাধ্যমে রেখে ঢেকে খবর প্রচার হলেও সামাজিক মাধ্যমে এ শিক্ষকের ইন্টারভিউসহ একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে চক্রের এক সদস্য দেলোয়ার জানাচ্ছেন, ‘নিখিল স্যার প্রত্যেকটি প্রশ্ন এক সেট করে নিয়ে যেত। কী জন্য নিয়ে যেত সেই ভালো জানে, কিন্তু এটা তো ঠিক না।’ প্রশ্ন নিয়ে যাওয়ার কাজটি তিনি সবসময় দেখেছেন, এমনকি তাকে প্রশ্নপত্রটি ব্যাগে ভরে দিতে বলতেন ‘স্যার’। দেলোয়ার যার কথা বলেছেন তিনি বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের প্রধান ডক্টর নিখিল রঞ্জন ধর, যিনি আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা প্রশ্নপত্র ছাপাসহ পরীক্ষা আয়োজনের সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন। দেলোয়ারের বক্তব্যটি কতটুকু সত্য, সেটি যাচাই করতে যায় একটি সার্চ টিম। নিখিলের কাছে টিম যখন পৌঁছে তিনি ক্যামেরা সরিয়ে নিতে বলেন। সার্চ টিমের পক্ষ থেকে বলা হয়, আপনার কাছে আমরা একটা অফিসিয়াল ইন্টারভিউ নেবো। এ সময় তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি।

তবে তিনি সার্চ টিমের সাথে কথা বলেছেন। ভিডিওতে তার কথা বলার দৃশ্য রয়েছে। প্রেস থেকে প্রশ্ন নিয়ে আসার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, প্রশ্ন ব্যাগে রাখতাম এরপর ময়লার ভাগাড়ের মধ্যে ফেলে দিয়ে আসতাম। বলা কথাটি পরে সাথে সাথে আবার অস্বীকার করেন তিনি। একেকবার তিনি একেক কথা বলছিলেন, যেন সব গুলিয়ে ফেলছিলেন। এরই মধ্যে তাকে জড়িয়ে আদালতে জবানবন্দীও দিয়েছে চক্রের সদস্যরা। ওই ভিডিওতে সার্চ টিমের পক্ষ থেকে ব্যাংকে তার অস্বাভাবিক অর্থ লেনদেনের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। সার্চ টিমের কাছে থাকা ব্যাংক স্টেটমেন্টে দেখা যাচ্ছে, যে বছরগুলোয় তিনি প্রশ্ন ছাপার কাজে যুক্ত ছিলেন, সে বছর বিশাল অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল- এই সাত বছরে কেবল একটি ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্টে প্রায় ১০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। সর্বশেষ তিন বছরে তিনি এক কোটি ৮২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পাওয়ার বছরগুলোতে কোটি কোটি টাকা এফডিআর করেছেন। এত কম সময়ে কিভাবে কোটি কোটি টাকা পেলেন, সার্চ টিমের এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তিনি। কাগজে কলমে নিখিল পরীক্ষা কমিটিতে না থাকলেও অলিখিতভাবে তিনি ছিলেন কর্তাব্যক্তি। আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সার্চ টিমকে জানান, কোনোভাবে কেউ প্রশ্ন এভাবে বাইরে নিয়ে যেতে পারে না। এটি চিন্তারও বহু বাইরে।

দেশের নিয়োগ পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন ছাপানোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারে ঠুনকো অবস্থায় রয়েছে। কোনো একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করে এমনটি করেছে কি না; সে সন্দেহ জাগা অমূলক নয়। জিজ্ঞাসাবাদে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সদস্যরা জানাচ্ছে, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপা নিয়ে কর্তৃপক্ষ চরম গাফিলতির পরিচয় দিচ্ছে। প্রিন্টিং প্রেসগুলোতে বাড়তি কোনো নিরাপত্তার আয়োজন নেই। সেখানে কর্মরত কর্মচারীরা স্বাধীনভাবে আসা-যাওয়া করছেন। এ অবস্থায় প্রেস থেকে একটি প্রশ্ন বাজারে চলে যাওয়া কোনো ব্যাপার নয়। এ সুযোগটিই এ চক্র গ্রহণ করেছে। তার চেয়ে বড় হয়ে দেখা দিলো বুয়েটের শিক্ষকের প্রশ্ন নিয়ে যাওয়া এবং তার অ্যাকাউন্টে বিশাল অঙ্কের অর্থ লেনদেন। টানা সাত বছর ধরে তিনি প্রেস থেকে প্রশ্ন নিয়ে যাচ্ছেন। আবার তিনি কোনো ধরনের অফিসিয়াল দায়িত্ব ছাড়া প্রধান কর্তা হয়ে সব নিয়ন্ত্রণ করছেন। এখানে কয়েকটি বিষয় গুরুত্বসহ বিবেচনার দাবি রাখে। প্রথমটি হচ্ছে নিয়োগগুলোতে একদল লোককে অন্যায়ভাবে অর্থকড়ি বানানোর হাতিয়ার বানিয়ে দেয়া হচ্ছে কি না, যাতে বুয়েটের শিক্ষক থেকে প্রিন্টিং প্রেসের কর্মচারীরা অবৈধ সুযোগ নিয়ে বিপুল অর্থ কামিয়ে নিতে পারে; কারণ কোনো ধরনের নিরাপত্তা কড়াকড়ি নেই। শিক্ষকের হাত ধরে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন বাইরে চলে গেলেও দেখার কেউ নেই। এটি হচ্ছে একটা সিন্ডিকেট; তারা এ দেশের চাকরির নিয়োগকে দেখছে কেবল অন্যায়ভাবে নিজেদের অর্থকড়ি কামানোর একটি পথ হিসেবে।

বুয়েটের এই শিক্ষককে প্রশ্নপত্র মডারেশন ও প্রিন্টিংয়ের দায়িত্ব অঘোষিতভাবে দেয়া হয়েছে। কমিটিতে প্রকাশ্যে তার নাম নেই। অথচ তিনি এ প্রক্রিয়ার সর্বেসর্বা হয়ে রয়েছেন। এ ধরনের একটি অন্ধকার কী করে তৈরি করা হয়েছে? বুয়েটের এই শিক্ষকের পেছনে কি আরেকটি অদৃশ্য চক্র রয়েছে? যারা শুধু অর্থকড়ি কামানো নয়, আমাদের ব্যবস্থাপনাকেও নড়বড়ে করে ধসিয়ে দিতে চায়। বিগত বছরগুলোতে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেছে। এ যেন শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেয়া। নিখিলের অস্বাভাবিক ব্যাংক লেনদেন ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা জানা বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার জন্য কঠিন কোনো কাজ নয়। অনেক আগেই এ ধরনের অন্যায়কারী ও তাদের কর্মকাণ্ড ফাঁস হওয়ার কথা। কেন এসব অন্যায় ও অবৈধ কর্মকাণ্ড যেগুলো আমাদের জাতির ভিত্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে তার পরও জনগণ জানতে পারছে না? অন্যায়গুলো এমনভাবে আবিষ্কার হচ্ছে, প্রথমে এর লেজকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। লেজের সূত্র ধরে বহু পরে আবিষ্কার হচ্ছে মাথা। অথচ সবার আগে মাথাটা আবিষ্কার হলে ক্ষতি কমানো সম্ভব হতো। দেশে আরো অসংখ্য অন্যায়-অনিয়মের কথা ফাঁস হয়েছে কেবল বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পর। বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা কার্যক্রম দেশের জন্য যথেষ্ট সক্রিয় হতে পারছে না। এই গোয়েন্দা জড়তা যত দ্রæত কাটিয়ে ওঠা যায় জাতির জন্য ততই মঙ্গল।

প্রশান্ত কুমার হালদারের অর্থ লুটে নেয়ার ঘটনাটি দেখুন, একই ধরনের আলামত পাওয়া যাবে। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাল পেতেছেন। কোথাও তিনি নতুন কোম্পানি খুলেছেন। কোথাও পুরনো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এসব কাজ করার জন্য বড় ধরনের প্রক্রিয়াগত ব্যাপার রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ও সরকারি এজেন্সিগুলোর ছাড়ের প্রয়োজন রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সর্বোচ্চ সংস্থা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও রয়েছে। দেখা গেল তিনি অর্থকড়ি বিদেশে পাচার করে নিজে ও পরিবার নিরাপদে সটকে পড়ার পর ঘটনা জানাজানি হয়েছে।

এমনকি পি কে হালদার ও তার পরিবারের দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা ঠিক তিনি সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করার পর কার্যকর হয়েছে। এসব ঘটনা কি কাকতালীয়, না এর পেছনে আরো বড় চক্র সক্রিয় রয়েছে; তা তদন্ত করার কাজ দেশে নেই। পরে খবর বের হলো খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একেবারে শীর্ষ পর্যায়ের লোকেরা পি কে হালদারদের সাথে অর্থ লুটপাটে জড়িত রয়েছেন।

সোহেল রানা নামের এক পুলিশ পরিদর্শকের কথা জানা গেল। তার পৃষ্ঠপোষকতায় একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। তিনিও নিরাপদে ভারতে পালিয়ে যেতে পেরেছেন। তবে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী তাকে খাতির যতœ করেনি। এ সামান্য পুলিশ কর্তা দেশে রাজার হালতে চলতেন। দিনের বেলায় অফিস হাজির হতেন না। চলতেন দামি মডেলের ব্যক্তিগত গাড়িতে। মানুষের বাড়ি ফ্ল্যাট জোরপূর্বক কেড়ে নিয়েছেন। দেশে-বিদেশে গড়ে তুলেছেন সম্পদের অঢেল স্ত‚প। এসব দুর্নীতি ও লুটপাটের খবর চাকরিরত অবস্থায় প্রকাশ পায়নি। মনে হচ্ছে একটি চক্র ভেতর থেকে বাংলাদেশের ভিত্তিমূলে আঘাত করছে। রাষ্ট্রের ভেতরে জন্ম নিয়েছে আরেক ‘রাষ্ট্র’। সেই রাষ্ট্রের রয়েছে রহস্যময় নিয়ন্ত্রক। কেবল অনিয়ম-দুর্নীতির ষোলোকলা পূর্ণ হলেই একটি অনিয়ম দুর্নীতি মানুষ জানতে পারছে। আর ওই সব ঘটনায় প্রতিকারের কোনো সুযোগ থাকছে না।

পুলিশের কর্মকর্তা প্রদীপের কথাই ধরুন। তিনি কক্সবাজারের টেকনাফকে নিজের একান্ত সাম্রাজ্য বানিয়ে নিয়েছিলেন। প্রায় পৌনে দুই শ’ ক্রসফায়ারে তিনি ২০০-এর বেশি মানুষ হত্যা করেছেন। শত শত নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলেও অভিযোগ। কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সব পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। তিনি যখন কুতুবদিয়ায় ছিলেন, সেখানে এক লবণ চাষি হত্যার ঘটনায় উচ্চ আদালতে রিট হয়। উচ্চ আদালত তার বিরুদ্ধে কিছু আদেশ জারি করেন। শেষে দেখা গেল, পুলিশ সদরদফতর থেকে তার পক্ষে লবিং হয়েছে। আরো অনেকে নিজেদের বিরুদ্ধে ঘটা ভয়াবহ অপরাধের প্রতিকার পেতে চেয়েছিলেন। কেউ প্রদীপের কিছুই করতে পারেননি। কেবল সামরিক বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত চৌকস কর্মকর্তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর জাতির কর্ণকুহরে পৌঁছেছে প্রদীপ একজন খুনি ও ধর্ষক। এখন তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে। ভুক্তভোগীদের অনেকে প্রতিকার পাওয়ার সাহস নিয়ে আদালতে আসছেন।

কারাগার হচ্ছে সংশোধনাগার। সেখানকার প্রশাসন রীতিমতো সাধু সন্ত হওয়ার কথা। দেখা যাচ্ছে কারা উপমহাপরিদর্শক পার্থ গোপাল বণিক, জেলসুপার প্রশান্ত কুমার বণিক এ ধরনের অসংখ্য শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির কারো বাসাবাড়িতে, কাউকে রেলস্টেশনে বা রাস্তায় টাকার বস্তাসহ পাওয়া যাচ্ছে। কারা প্রশাসনের একেবারে উপরের পর্যায় থেকে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত অনিয়ম-দুর্নীতি আর লুটপাটের মহাসাগরে পরিণত হয়েছে। এক কর্মকর্তা কারাগারের কর্মচারীদের দল বেঁধে পাঠিয়ে দিয়েছেন নিজের খামারে কাজ করার জন্য। অথচ তাদের বেতন গুনছে সরকার। কে কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন? এখন সব চুপচাপ। জানা যাচ্ছে ২৮৮ জন কারা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের নথি চাপা পড়ে আছে।

পুলিশের সাবেক ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধানে নামেন দুদকের তৎকালীন পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতে পুলিশ ঘুষ সাধে এনামুল বাছিরকে। এ ব্যাপারে ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপ রেকর্ড করে ধূর্ত মিজানুর রহমান পরে সেটি সংবাদমাধ্যমে আবার ফাঁস করে দেন। এরপরে তাদের দু’জনের কী হলো সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়; কারণ এ দেশে উঁচু পর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া ব্যতিক্রমী ঘটনা। এ ঘটনায় প্রমাণ হয়ে যায়, বেড়ায় ক্ষেত খাচ্ছে। শুধু একটি বেড়া ক্ষেত খাচ্ছে, এমন নয়; প্রতিটি বেড়া ক্ষেত খেয়ে ফেলছে।

একটি প্রাসাদ কিছু পিলারের ওপর দাঁড়ানো। পিলারগুলো ক্ষয়ে গেলে প্রাসাদটি ধসে যায়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রটিও একটি সৌধ বা প্রাসাদের মতো। এ রাষ্ট্র টিকে থাকতে হলে কিছু পিলার অবলম্বন হিসেবে কাজ করে। একটি প্রাসাদে যেমন কিছু পিলার বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কিছু প্রতিষ্ঠান বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিছুটা কম গুরুত্বপূর্ণ পিলার ধসে গেলেও প্রধান কিছু পিলার ঠিক থাকলে প্রাসাদটি আরো কিছু দিন টিকে যায়। সেই হিসেবে আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অর্গান বা প্রতিষ্ঠান ক্ষয়ে গেছে। দুর্নীতি দমন বিভাগ নিজে সহযোগী হয়ে গেছে দুর্নীতির। বাংলাদেশ ব্যাংক নিজে সহযোগী হয়ে যাচ্ছে লুটপাটকারীদের। এ অবস্থায় একটি গণতান্ত্রিক দেশ ধসে যাওয়ার কথা। বাংলাদেশের এর পরও টিকে থাকা মানে দেশটি আজীবন টেকসইভাবে টিকে থাকবে সেটি মিন করে না। কসমেটিক ঝাড়পোচ দিয়ে এভাবে যদি দেশকে টিকিয়ে রাখা হয়, সেটি টিকে যাবে এমন নয়। একে সাময়িকভাবে ধস রোধ বলা যাবে। বরং সংশোধন প্রক্রিয়া যত তাড়াতাড়ি আরম্ভ হবে তত ভালো। বেশি ধসে যাওয়ার পরিণামও তেমনি দীর্ঘস্থায়ী হবে। একটি সংস্কার প্রক্রিয়া অনিবার্য। সেটি কিছু দিন আগে পরে হবেই।
jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement