২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

করোনা মহামারী ক্যান্সার ডায়াবেটিস ও জলবায়ু মোকাবেলা

-

করোনা, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও জলবায়ু গত সপ্তাহের আলোচিত বিষয়। বিশেষ করে করোনার টিকা আবিষ্কারের পর করোনার মুখে খাওয়ার ওষুধ আবিষ্কারের বিষয়টি মানুষের বেশি নজর কেড়েছে। একইভাবে নজর কেড়েছে জরায়ুমুখের ক্যান্সার নিরাময়ে আবিষ্কৃত এইচপিভি টিকার ৯০ ভাগ কার্যকারিতার ল্যানসেটের খবরটি।

১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত হয়েছে। একজন ব্রিটিশ চিকিৎসক সুখবর দেন যে, ওষুধ ছাড়াই তিনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায় খুঁজে পেয়েছেন। সেটি হচ্ছে ‘নো-কার্ব ডায়েট’ বা ‘কম কার্ব ডায়েটে’ মানুষকে অভ্যস্ত করে তোলা। এ ধরনের খাবার খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিন গ্রহণেরও প্রয়োজন হবে না। ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ইনসুলিনের আবিষ্কার ছিল একটি মাইলফলক। এই আবিষ্কারের এক শ’ বছর পার হয়েছে। এ সময়ে ইনসুলিন লাখ লাখ রোগীর জীবন বাঁচিয়েছে। বর্তমানে আধুনিক ইনসুলিনও এসে গেছে। এই ইনসুলিন ব্যবহার করলে খাওয়ার জন্য আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে না। এমনকি ইনসুলিন নিতে ভুলে গেলে খাওয়ার পর কিংবা খাওয়ার মাঝখানেও তা ব্যবহার করা যায়।

এ তো গেল মানুষের সুস্থতার কথা। এখন আসি আমাদের পৃথিবীর কথায়। মানুষের মতো আমাদের পৃথিবীও এখন অসুস্থ। আমরাই পৃথিবীকে অসুস্থ করে তুলেছি। জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে, গাছ কেটে বনজঙ্গল ধ্বংস করে পৃথিবীকে উষ্ণ করে তুলেছি। উষ্ণতায় বৃদ্ধি পৃথিবীকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তাই পৃথিবীকে সুস্থ করে তুলতে অর্থাৎ বাঁচাতে উপায় খোঁজার জন্য জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন হচ্ছে প্রতি বছর। এবার ছিল ২৬তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে ৩১ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত চলেছে দুই সপ্তাহের কপ-২৬ নামের এই জলবায়ু সম্মেলন। ২০০টি দেশ একটি চুক্তিতে মতৈক্য পৌঁছাতে সম্মেলনের মেয়াদ এক দিন বেড়েও যায়; অর্থাৎ ১২ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সম্মেলনে শেষ হয় ১৩ নভেম্বর শনিবার। কিছু বিষয়ে অসন্তোষ থাকলেও শেষ মুহূর্তে অংশগ্রহণকারী ২০০টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় লড়াই চালানো ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা দেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। চুক্তিতে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন প্রায় অর্ধেকে কমিয়ে আনা থেকে শুরু করে আরেকটি শক্তিশালী গ্রিনহাউজ গ্যাস মিথেন নির্গমন রোধ করার জন্য বিশ্বের যে নির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলো নেয়া উচিত তার রূপরেখা দেয়া হয়। চুক্তির মূল খসড়ায় কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে কয়লার ব্যবহার বন্ধ বা ‘ফেজ আউট’ করার কথা ছিল। বেশি কয়লা ব্যবহারকারী দেশ ভারতের আপত্তি ও এ ব্যাপারে চীনের সমর্থন এবং চাপে চুক্তিতে ভাষা পরিবর্তন করে কয়লার ব্যবহার কমানো বা ‘ফেজ ডাউন’ কথাটি সংযোজন করা হয়েছে। এ নিয়ে বেশ কিছু দেশ ও পরিবেশবাদীরা প্রতিবাদও জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ‘ফেজ ডাউন নয়, আমাদের প্রয়োজন কয়লার ফেজ আউট করা।’

পরিবেশ রক্ষায় বিশ্বে ঝড় তোলা কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ এ সম্পর্কে বলেছেন, এখন শুরু হবে ‘গ্রিনওয়াশিং’ এবং সংবাদমাধ্যমে গ্লাসগোর ফলাফলকে ‘অগ্রগতি’, ‘ভালো’ সঠিক পথে পদক্ষেপ ইত্যাদি নামে অভিহিত করে প্রচার।

কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনের চেয়ারম্যান ব্রিটিশ মন্ত্রী আলোকশর্মা সম্মেলনের ফলাফলে খুশি হতে পারেননি। সম্মেলন শেষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে গ্লাসগো চুক্তিকে তার নেতৃত্বে ‘ঠুনকো বিজয়’ বলে অভিহিত করেন। তবে তিনি বিশ্বের ২০০টি দেশের কার্বন নিঃসরণ কমানো, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে দেয়া এবং সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি রোধ করতে একমত পোষণ করার বিষয়টি ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখার লক্ষ্য টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস চুক্তি প্রসঙ্গে বলেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ তবে তা যথেষ্ট নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ুবিষয়ক দূত জন কেরি বলেন, প্যারিস ক্ষেত্র তৈরি করেছিল এবং গ্লাসগো চুক্তিতে দৌড় সেখান থেকে শুরু হয়েছে। কয়লা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কয়লা ব্যবহার শেষ করার আগে আপনাকে ব্যবহার সীমিত করতে হবে। এবারের চুক্তিতে তার পথচলা শুরু হলো। চুক্তি নিয়ে নাখোশ সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ টুইট করে বলেছেন, ‘কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে শেষ হলো। এবারের সম্মেলনের সারসংক্ষেপ হলো - ব্লা, ব্লা, ব্লা; অর্থাৎ বাজে কথা।

গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনের সামগ্রিক লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক উষ্ণতাকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলো এড়াতে একটি ‘পথনকশা’ বা ‘রোডম্যাপ’ ঠিক করা। কিন্তু চুক্তিটি ঠিক সেভাবে করা সম্ভব হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার ঝুঁকিপূর্ণ ৫৫টি দরিদ্র ও দ্বীপ রাষ্ট্রকে ধনী দেশগুলোর বার্ষিক সহায়তা ১০০ বিলিয়ন ডলার ২০২২ সালের মধ্যে প্রদানের কথা বলা হয় চুক্তিতে। ওই সব দেশের দাবি হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে ক্ষতিপূরণের এই অর্থের পরিমাণ, যাতে দ্বিগুণ অর্থাৎ ২০০ বিলিয়ন ডলার করা হয়। যদিও কপ-২৬ সভাপতি আলোক শর্মা উল্লেখ করেন, তার মতে এই অর্থের পরিমাণ ২০২৫ সাল নাগাদ বছরে ৫০০ বিলিয়ন ডলার হওয়া উচিত।

বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণ বা কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের ক্ষেত্রে কয়লার ভ‚মিকা ৪০ শতাংশ। কয়লার ব্যবহার বন্ধ করার মূল লক্ষ্য ছিল এবার। কিন্তু ভারত ও চীনের শেষ মুহূর্তের আপত্তির কারণে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করা যায়নি, সীমিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কয়লার ব্যবহার ২০৭০ সালে বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। আর চীন ও রাশিয়া ২০৬০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করবে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য কয়লা ব্যবহারকারী দেশ তা ২০৫০ সালের মধ্যে বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বন উজাড় বন্ধ এবং মিথেন নিঃসরণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিও সম্মেলনের বড় অর্জন বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেন যে, দেশগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন না করলে ২১০০ সালের শেষ দিকে বৈশ্বিক তামপাত্রা ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এটি হলে পৃথিবীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে।

করোনার মুখে খাওয়ার অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ

চীনের উহানে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল। সেই থেকে প্রায় দুই বছর ধরে বিশ্ব করোনা মহামারী আক্রান্ত। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী ৫১ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় সাড়ে ২৫ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মহামারী দেখা দেয়ার এক বছরের মধ্যেই করোনার টিকা আবিষ্কার হয়েছে, যা ছিল একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এ টিকার ফলে মহামারীর লাগাম টেনে ধরা কিছুটা হলেও সম্ভব হয়। অবশ্য বেশির ভাগ মানুষকে এখনো টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। করোনাভাইরাস তার থাবা গুটিয়ে আনলেও মাঝে মধ্যে তা কোনো কোনো অঞ্চলে ফণা তুলছে। বর্তমানে ইউরোপে আবার করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। বড়দিনের উৎসবের আগে তাই কোনো কোনো দেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, বিশ্বে যত করোনা শনাক্ত হয়েছে, তার অর্ধেকের বেশি ইউরোপে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ইউরোপ আবার করোনা মহামারীর কেন্দ্রস্থলে পরিণত হচ্ছে। গত সপ্তাহে ইউরোপে প্রায় ২০ লাখ মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। মহামারী শুরুর পর এক সপ্তাহে এত সংক্রমণ এর আগে হয়নি। ২০২০ সালের এপ্রিলে সংক্রমণের শীর্ষে ছিল ইতালি। এরপর এ পর্যন্ত ইউরোপে এটিই সবচেয়ে বেশি শনাক্ত ও মৃত্যুহার। করোনার সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ায় ইউরোপে নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, চেক প্রজাতন্ত্র ও আরো কয়েকটি দেশে নতুন করে বিধিনিষেধ চালু করা হয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান গেব্রেয়াসুস বলেন, বুস্টার ডোজের চেয়ে যারা এখনো টিকা পাননি, তাদের বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।

করোনাভাইরাসের টিকার পরে মুখে খাওয়ার ওষুধও আবিষ্কার হয়ে গেছে। মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মার্ক ‘মলনুপিরাভির’ নামের করোনার অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ তৈরি করেছে। এরই মধ্যে এ ওষুধটি যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনুমোদন দেয়। এই ওষুধ করোনা রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুঝুঁকি অর্ধেক কমিয়ে দেয়। এটিই করোনা চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট মুখে খাওয়ার প্রথম ওষুধ। যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে ওষুধটির চার লাখ ৮০ হাজার কোর্স কিনতে সম্মত হয়। মার্ক কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের তৈরি এই ওষুধ ব্যবহারের পর তা করোনাভাইরাসের একটি নির্দিষ্ট এনজাইমকে লক্ষ্য করে কাজ করে। ভাইরাসটি ওই এনজাইম ব্যবহার করেই ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। কিন্তু ওষুধ প্রয়োগের ফলে ভাইরাসটির জেনেটিক কোডে তা একটি ত্রুটি তৈরি করে, যা ভাইরাসকে বিভাজিত করে ফেলে। এতে ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধি হয় না এবং এ কারণে রোগের তীব্রতা কমে যায়। এ পদ্ধতি ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়েন্টের ওপরও সমভাবে কাজ করে। মৃদু ও মাঝারি উপসর্গ রয়েছে এমন রোগীদের ওষুধটি দেয়া হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে এটি নতুন হাতিয়ার।

বাংলাদেশে এরই মধ্যে মলনুপিরাভির ওষুধ ব্যবহারে ওষুধ প্রশাসন অনুমোদন দিয়েছে। দেশের ১০টির বেশি ওষুধ কোম্পানি ওষুধটি তৈরির জন্য অনুমোদন চেয়ে আবেদন করে। এরই মধ্যে ওষুধ কোম্পানি এসকেএফ, বেক্সিমকো ও স্কয়ার বিভিন্ন নামে মলনুপিরাভির বাজারে এনেছে। রেডিয়েন্ট, রেনেটা, ইনসেপ্টা ও হেলথকেয়ারও আনছে এ ওষুধ। দেশের চিকিৎসকরা ওষুধটিকে করোনা চিকিৎসায় ‘গেম চেঞ্জার’ বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, এত দিন করোনা চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ ছিল না। এ ধরনের ওষুধের জন্য চিকিৎসকরা অপেক্ষায় ছিলেন।

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এমআরএনএ টিকা উদ্ভাবনকারী আলোচিত যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ফাইজারও জানিয়েছে, ‘প্যাক্সলোভিড’ নামে তারাও করোনার মুখে খাওয়ার ওষুধ বাজারে এনেছে। যুক্তরাজ্য এ ওষুধটিরও অনুমোদন দেয়। ফাইজার বলেছে, তাদের ওষুধ ৮৯ শতাংশ কার্যকর। ট্রায়ালের ফলাফলকে ফাইজার চমৎকার বলে উল্লেখ করেছে। এ ওষুধ ১০ জন রোগীর ৯ জনকেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে বিরত রাখতে সক্ষম বলে কোম্পানির চেয়ারম্যান অ্যালবার্ট বোরলা জানান। যুক্তরাষ্ট্র ওষুধটির লাখ লাখ কোর্স কেনার জন্য ঠিক করে রেখেছে। সিডিসির অনুমোদন পেলেই তার ব্যবহার শুরু হবে।

এইচপিভি টিকা ৯০ শতাংশ জরায়ুমুখ ক্যান্সার রুখে দিচ্ছে
নারীদের জরায়ুমুখের ক্যান্সার নিরাময়ে আবিষ্কৃত টিকা ৯০ শতাংশ কার্যকর। গত সপ্তাহে চিকিৎসা ক্ষেত্রে এটি ছিল অন্যতম একটি সুখবর। চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট জানায় যে, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা ‘এইচপিভি টিকা’ নামের এই টিকা জরায়ু ক্যান্সার নির্মূলে এখন প্রধান কারিগর। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা এ ফলাফলকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে আখ্যা দিয়েছে। জরায়ু ক্যান্সারের প্রায় সব সংক্রমণই ভাইরাসের মাধ্যমে হয়ে থাকে। উদ্ভাবিত টিকার মাধ্যমে এ রোগ প্রায় নির্মূল করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন।

ল্যানসেটের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে কিশোরীদের এইচপিভি টিকা দেয়া শুরু হয়। অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে টিকা পাচ্ছে ১১ থেকে ১৩ বছরের কিশোরীরা। শুরুতে যাদের টিকা দেয়া হয়েছিল তাদের বয়স এখন ২০। গবেষণায় দেখা গেছে টিকা নেয়ার ফলে ভাইরাসের বিস্তার কমেছে এবং তাদের জরায়ুর ক্যান্সার ৮৭ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, ৯৯ শতাংশ জরায়ু ক্যান্সার হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস সংক্রমণে হয়ে থাকে। বর্তমানে ১০০টিরও বেশি দেশে এই টিকা দেয়া হচ্ছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর পাঁচ লাখ ৭০ হাজার নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং তিন লাখ ১০ হাজার নারী মারা যান। বাংলাদেশে প্রতি বছর নতুন করে আট হাজার ২৬৮ জন নারীর শরীরে শনাক্ত হচ্ছে জরায়ুর ক্যান্সার। বছরে পাঁচ হাজার নারী জরায়ু ক্যান্সারে মারা যায়।

জরায়ুমুখ ক্যান্সারের মূল কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস। এর ১০০টিরও বেশি প্রজাতি আছে। এর মধ্যে দু’ধরনের প্রজাতি এইচপিভি-১৬ ও এইচপিভি-১৮ ভাইরাসের কারণে ক্যান্সার হয়। এ ক্যান্সার নিরাময়ে গার্ডামিন ও সিভারিক্স নামের দুটি টিকা দেয়া হয়। ১১ থেকে ১৪ বছরের মেয়েরা এ টিকা নিতে পারবে। ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত টিকাটি নেয়া যায়। তিন ডোজ এ টিকা দেয়া হয়। প্রথম ডোজ দেয়ার এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ ও ছয় মাস পর তৃতীয় ডোজ। এইচপিভি টিকা আবিষ্কৃত হয় ২০০৬ সালে। যুক্তরাজ্যে ২০০৮ সালে প্রথম এ টিকাদান শুরু হয়। গ্ল্যাক্সো ও মার্ক কোম্পানি টিকাটি তৈরি করেছে।

ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
ব্রিটিশ চিকিৎসক ডেভিড উনউইন জানিয়েছেন, ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। সাউথপোর্টের নরউড সার্জারির এই চিকিৎসক বলেন, ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত টাইপ-২ ডায়াবেটিস ওষুধ ছাড়া নির্মূল ভাবতেই পারিনি। তবে গবেষণা করে পেয়েছি লো কার্বোহাইড্রেট ডায়েট অভ্যাস করলে এমনিতেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয়ে যায়। ব্রিটিশ একটি জার্নালে এটি ছাপা হয়। এতে বলা হয়, চিনি শস্য, মিষ্টিজাতীয় কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের বদলে প্রতিদিনের ক্যালরি চাহিদা মেটাতে প্রোটিন ও চর্বিজাতীয় খাবার খেলে ডায়াবেটিস দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে। কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তবে তিনটি উপায় রোগীদের অনুসরণ করলে ডায়াবেটিস নিয়ে চিন্তার প্রয়োজন নেই। সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত হাঁটা ও ব্যায়াম এবং অতিরিক্ত ওজন হ্রাস। যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে তা হচ্ছে - রুটি ও ভাত, শস্য, মিষ্টিজাতীয় শাকসবজি, পাস্তা, মটরশুঁটি, মধু, মিষ্টিদই, চিপস, দুধ, চিনির ক্যান্ডি, চিনিযুক্ত খাবার, ময়দা, কুকিজ, কনডেন্সড মিল্ক সিরিয়ার ইত্যাদি।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক,
সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব


আরো সংবাদ



premium cement
৭ উইকেট তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চেপে ধরেছে বাংলাদেশ লাখ টাকার প্রলোভনে শাহবাগে এত লোক কিভাবে এলো? কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদির মৃত্যু হিজবুল্লাহ কমান্ড সেন্টারে ইসরাইলি হামলা রাজশাহীতে প্রথম আলো পত্রিকায় আগুন ও সাইনবোর্ড ভাঙচুর রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে : পররাষ্ট্র সচিব আড়াইহাজারে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ১৬ শ্রম সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রগতিতে মার্কিন প্রতিনিধিদলের প্রশংসা আইপিএলে রেকর্ড গড়লেন ১৩ বছর বয়সী বৈভব সিলেটে ট্রাক ও বাসচাপায় নিহত ২ মানিকগঞ্জে প্রলোভন দেখিয়ে শাহাবাগে লোক নেয়ার মূলহোতা দবিরসহ আটক ৫

সকল