২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পরমাণু প্রযুক্তির সমস্যা ও সম্ভাবনা

-

গত মাসে পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ‘রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল’ বা ‘চুল্লি’ উদ্বোধন করা হয়েছে। বিষয়টিকে দেশে পরমাণু প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবেই মনে করা হচ্ছে যদিও নিরাপত্তা ইস্যুতে বিশ্ব এখন এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের সবে সূচনা। মূলত, বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু বা কমিশনিং প্রক্রিয়ায় এই ‘চুল্লি’ স্থাপন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। পরমাণু বিজ্ঞানীরা রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেলকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘হার্ট বা হৃৎপিণ্ড’ বলে বিবেচনা করে থাকেন। আর চুল্লি উদ্বোধনকে প্রকল্পের বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিতই হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

পাকিস্তান আমলে এই বৃহৎ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হলেও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছিল। ২০১০ সালে রাশিয়ার সাথে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট হয়। একই বছর জাতীয় সংসদে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি অ্যাক্ট পাস করা হয়। ২০১৩ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের কাজের উদ্বোধন করা হয় যা এখনো চলমান রয়েছে।

বাস্তবায়নাধীন এই পারমাণবিক চুল্লি নির্মিত হচ্ছে রাশিয়ার সহযোগিতায়। ভিভিআর-১২০০ মডেলের এই রিঅ্যাক্টরে পরমাণু জ্বালানি পুড়িয়ে মূল শক্তি উৎপাদন করা হবে এবং ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব বলে জানা গেছে। রূপপুরের প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে পারবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

রূপপুর কেন্দ্রে দুটি ইউনিটে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রাথমিকভাবে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ ধরা হয়েছে। বাংলাদেশে একক প্রকল্প হিসেবে এটি সবচেয়ে বড় কোনো অবকাঠামো প্রকল্প।

জলবায়ু পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে বর্তমানে বিশ্বে নবায়ণযোগ্য শক্তির ওপরে যে জোর দেয়া হচ্ছে পারমাণবিক শক্তি তার অন্যতম উৎস। তবে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লির নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, অতীতে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রে বড় দুর্ঘটনাও ঘটেছে। সঙ্গত কারণেই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্ঘটনার ব্যাপারে বিরাট ভীতিও রয়েছে।

পারমাণবিক চুল্লির দুর্ঘটনা হয় খুবই ভয়াবহ। কারণ, এই দুর্ঘটনায় তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়লে দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব থাকে। তবে জাপানের ফুকুশিমায় দুর্ঘটনার পর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্ঘটনা ঝুঁকি কমাতে নিরাপত্তাব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। রাশিয়ার ভিভিআর ১২০০ মডেলের বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্ঘটনা রোধে পাঁচটি স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে এর বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্নের কোনো যৌক্তিক সমাধান এখন পর্যন্ত হয়নি।

অতীতে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্ঘটনা বেশ আঁতকে ওঠার মতো। ১৯৮৬ সালে ইউক্রেনের চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর তেজস্ক্রিয়তা সুদূর জার্মানিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। এরপর জার্মানিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎবিরোধী আন্দোলন জোরদার হওয়ার কারণে সাতটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং ২০২২ সালের মধ্যে বাকি সব পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে।

যদিও বর্তমান প্রযুক্তির পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে বিজ্ঞানীদের অনেকেই আশ্বস্ত, তবে নির্মাণের প্রতিটি পর্যায়ে কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণ এবং তদারকি প্রয়োজন রয়েছে বলে তারা মনে করেন। আর তা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে রয়েছে বড় ধরনের প্রশ্ন। এ বিষয়ে পরমাণু বিজ্ঞানীদের বক্তব্য হলো - পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নানাবিধ ইস্যু রয়েছে। আর নিরাপত্তার প্রশ্নে এসব ইস্যুর যৌক্তিক সমাধানের আবশ্যকতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে প্রেসার ভেসেলই প্রধান ইস্যু। তারপর পাম্প থাকে অনেক; পাম্পের অনেক ভালভ রয়েছে। তাই যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য এসব যথাযথভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করে প্রস্তুত করার আবশ্যকতা থাকলেও এসব ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে।

বর্তমান বিশ্বে একদিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে আসার প্রবণতা যেমন আছে, আবার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ঠেকাতে পরমাণুকে তেল-কয়লার মতো ফসিল ফুয়েলের বিকল্প জ্বালানি হিসেবেও দেখছে অনেক দেশ। মূলত, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্ঘটনার ঝুঁকির বিষয়টি অস্বীকার করার মতো নয়। বিশেষজ্ঞরা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে ভবিষ্যতের কিছু চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে বলছেন, এগুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হলে ঝুঁকি অনেকটা কমে আসবে। তারা মনে করেন, পাওয়ার প্ল্যান্ট রেডি করার পর গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সির হেভি ফ্লাকচুয়েশনের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্র না চালানোও হবে বিপজ্জনক। সর্বোপরি অপারেটর তৈরি করা একটি চ্যালেঞ্জ। তার সাথে আছে ফুয়েল হ্যান্ডলিং এবং ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট। এ ছাড়া ইমারজেন্সি রেসপন্স - এগুলোর জন্য রেগুলেটর যারা আছেন, তাদের অধিকতর দক্ষ ও অভিজ্ঞ হওয়া দরকার। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে রয়েছে আমাদের বড় ধরনের দুর্বলতা।

পারমাণবিক চুল্লিতে দুর্ঘটনা ঘটলে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার কারণে কী মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে সে সম্পর্কে বেশির ভাগ মানুষের কোনোই ধারণা নেই! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা দীপ্তিহীন এবং দ্যুতিহীন এক ধরনের বিকিরণ, যা স্বাস্থ্য, খাদ্যপণ্য ও জীবনযাপন প্রণালির ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে জীবনহানি, বিকলাঙ্গ সন্তান জন্মসহ দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধি সৃষ্টি করে। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় ৪৩৭টি পারমাণবিক চুল্লি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কাজ করছে। তবে ১৯৯৬ সালের পর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নতুন কোনো চুল্লি ইউরোপ ও আমেরিকায় স্থাপন করা হয়নি। তেজস্ক্রিয়তার এই ভয়াবহতা চর্মচক্ষুতে দৃশ্যমান নয়, এমনকি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যও নয়। দুর্ঘটনাস্থল ছাড়িয়ে হাজার মাইল দূরে এই তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। অতীতের ভয়াবহতা সে কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে বার্লিনে গ্লোবাল রেডিয়েশন ভিকটিমস কনফারেন্সে ড. জে এফ ল্যাপিন জানিয়েছেন, চেরনোবিলের দুর্ঘটনায় ১৩ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ত্রাণকর্মীদের বেশির ভাগই ভুগেছেন তেজস্ক্রিয়াজনিত ব্যাধিতে। সারা বিশ্বে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির হার ১৯৭২-৯৩ পর্যন্ত ছিল ১৮ শতাংশ, কিন্তু এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে বার্ষিক ৪ শতাংশে। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। রাশিয়ার পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের রূপপুরে যে ভিভিইআর-১০০০ চুল্লিটি বসানো হবে তা তৃতীয় জেনারেশনের এবং ইতঃপূর্বে রাশিয়ায় ব্যবহৃত জইগক চুল্লি থেকে ভিন্ন ও উন্নত। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছেন না।

এমতাবস্থায় আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিরাপত্তা বিষয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম প্রশ্ন হলো, আমরা কি একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর মতো দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল গড়ে তোলার ব্যবস্থা করেছি? এখানে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ ছাড়াও কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা, দায়িত্ববোধ ও সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আমরা কি যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছি? উত্তরটা নেতিবাচকই হওয়ার কথা। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো - পদ্মার তীরবর্তী রূপপুরে পলিগঠিত নমনীয় মাটিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ব্যাপারটি কতটা ঝুঁকিমুক্ত, সেটিও বিভিন্ন পরিবেশগত সমীক্ষার মাধ্যমে খতিয়ে দেখা দরকার। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রূপপুর ভূচ্যুতির ওপর অবস্থিত। এ ধরনের ভূচ্যুতি ভূমিকম্পের উৎসস্থল। কাজেই জায়গাটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো - পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার সাথে সাথে ব্যাকআপ শীতলীকরণ ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা জরুরি। রূপপুরে যেখানে পারমাণবিক চুল্লি উদ্বোধন করা হয়েছে, ওই স্থানের নিকটবর্তী কোনো পানির উৎস নেই। কোনো কারণে যদি দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে চুল্লির বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হবে। তখন বাইরের উৎসের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে পাম্পের মাধ্যমে পদ্মা নদী থেকে পানি এনে চুল্লি ঠাণ্ডা করার কাজ চালু করতে হবে যা খুব সহজসাধ্য নয়।

একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো পরিচালন ব্যয় নেই ঠিকই, কিন্তু চালু করার আগে অনেকগুলো বিষয় নিশ্চিত করার আবশ্যকতা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাবে ত্রুটিমুক্ত অবকাঠামো তৈরি, জ্বালানি এবং তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পরিবহন ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম নিখুঁতভাবে পরিচালনা, যথাযথ নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা, কেন্দ্রের কাছাকাছি কর্মীদের বাসস্থান ও লবণমুক্ত পানির অবারিত উৎস এবং একটি বিশাল দক্ষ পারমাণবিক প্রকৌশল জ্ঞানসম্পন্ন নিবেদিতপ্রাণ কর্মীবাহিনী গড়ে তোলা। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা খুব সন্তোষজনক নয়।

স্মরণ করা দরকার, জীবন বাজি রেখে ফুকুশিমা প্ল্যান্টের কর্মীরা কাজ করেছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, পুরো কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বিধান এবং জনগণকে ঝুঁকি ও লাভের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানানো। অর্থাৎ দেশবাসী অবশ্যই জানবে, দেশের বা অঞ্চলের পরিবেশগত অবস্থার নিরিখে এবং ঝুঁকির মাপকাঠিতে প্রাপ্তি কতটা বেশি বা কম। ফুকুশিমা চুল্লি দুর্ঘটনার বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণে আনতে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল কেন্দ্রের কাছে স্বাদু পানির উৎসের অভাব। উত্তপ্ত চুল্লি ঠাণ্ডা করতে সাগরের লোনা পানি ব্যবহার করায় চুল্লিগুলো একেবারে অকার্যকর হয়ে যায়। রূপপুরে যে চাপযুক্ত হালকা পানির তৃতীয় জেনারেশনের চুল্লি বসানো হচ্ছে, তাতে চারটি দরকারি উপাদান থাকবে। এগুলো হলো - শক্তি উৎপাদনের জন্য ইউরেনিয়াম ধাতু, যা প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হবে, নিউট্রনের গতি শ্লথ করার জন্য মডারেটর, চুল্লির কেন্দ্র থেকে তাপ সরিয়ে নেয়ার জন্য শীতক যন্ত্র, নিউট্রনের গতি শ্লথ করা, কিংবা গতি বাড়ানো অথবা পারমাণবিক ফিশন বিক্রিয়া একেবারে বন্ধ করার জন্য নিয়ন্ত্রক দণ্ড। তেজস্ক্রিয় ফিশন উপাদানগুলো যাতে কোনোভাবে বাইরে আসতে না পারে, সে জন্য ইউরেনিয়াম দণ্ডগুলো জারকোনিয়াম শঙ্কর ধাতুর অত্যন্ত কঠিন আবরণে আবৃত করা হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো - প্লুটোনিয়ামের মতো বিশাল অর্ধ-জীবনের তেজস্ক্রিয় ফিশন খণ্ডাংশ এবং ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় জ্বালানি নিরাপদ ভাণ্ডারজাতকরণ, রাশিয়ায় নিরাপদ পরিবহন ও তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য-ব্যর্থতার ওপরই নির্ভর করছে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের ভবিষ্যৎ।

আসলে, পারমাণবিক তেজস্ক্রিয় ভস্ম পানি ছিটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা যায় না। এটা নিষ্ক্রিয় হবে ফিশন খণ্ডাংশের অর্ধ-জীবনের স্কেলে। এই প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারে যেমন অপার সম্ভাবনা রয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে সমস্যাও নেহাত কম নয়। তাই পারমাণবিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অধিক উল্লসিত হওয়ার আপাত কোনো সুযোগ নেই বরং নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা না গেলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই সবার আগে অগ্রাধিকার দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। অন্যথায় এত ব্যয়বহুল ও অতিউচ্চাভিলাষী প্রকল্প জাতীয় জীবনে দুর্ভোগ বয়ে আনতে পারে। তাই এ বিষয়ে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

smmjoy@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement