২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কয়লার দিন ফুরাল!

-

কয়লার দিন ফুরিয়ে আসছে। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় চলমান কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে কয়লাকেই প্রধান লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এর ব্যবহার দ্রুত বন্ধে দেশগুলোর অঙ্গীকার আদায়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সম্মেলনে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা আশাব্যঞ্জক। হয়তো আর ৫০ বছর সীমিত রাজত্ব করবে কয়লা।

বিশ্ব উষ্ণায়নে কয়লার ভূমিকাই প্রধান। বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ নানা কাজে কয়লার ব্যবহারে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণ ব্যাপকহারে হচ্ছে। ফলে তাপমাত্রা বাড়ছে। এতে বিশ্ব জলবায়ুতে মারাত্মক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, দাবানল ছড়িয়ে পড়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ নানা দুর্যোগ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে, ১৭৬০ সালে শিল্পবিপ্লবের আগের তাপমাত্রার চেয়ে বিশ্ব তাপমাত্রা চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এটি হলে পৃথিবীকে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। গবেষণায় বলা হয়, এরই মধ্যে তাপমাত্রা শিল্প বিপ্লবের আগের সময়ের চেয়ে ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।

২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ১৯৫টি দেশ চুক্তিতে একমত হয়েছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে তাপমাত্রার বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে, তাপমাত্রা যে হারে বাড়ছে; তাতে চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা সম্ভব নাও হতে পারে। গ্লাসগোতে কপ-২৬ সম্মেলনে তাই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে কয়লার ব্যবহার বন্ধে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অঙ্গীকার আদায়ের প্রচেষ্টাই বেশি। সম্মেলনে ৭ নভেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত যেসব বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বন উজাড় বন্ধ করা, মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ কমিয়ে আনা। কয়লা বিদ্যুৎ ও কয়লা প্রকল্পে বিনিয়োগ বন্ধ করা।

বিশ্বব্যাপী কয়লার ব্যবহার আগের চেয়ে কমে এলেও এখনো বিশ্বের মোট বিদ্যুতের ৩৭ শতাংশ উৎপাদিত হয় কয়লাশক্তি থেকে। পৃথিবীর বাতাসে যত কার্বন ডাই-অক্সাইড মিশছে, এর বেশির ভাগই আসছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশেষ করে ইইউর জার্মানি, ইতালি ও পোল্যান্ড থেকে। চীন হচ্ছে সবচেয়ে বড় কার্বন নির্গমনকারী দেশ। প্রতি বছর চীন ১১ হাজার ৫৩৫ মেগাটন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন করছে। এটি পৃথিবীর সমগ্র কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের এক-চতুর্থাংশ। প্রধানত কয়লা নির্ভরতার কারণেই দেশটির এত বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন। এরপরে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতি বছর কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন করছে পাঁচ হাজার ১০৭ মেগাটন। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো সম্মিলিতভাবে নির্গমন করছে তিন হাজার ৩০৪ মেগাটন। ভারত দুই হাজার ৫৯৭ মেগাটন এবং রাশিয়া এক হাজার ৭৯২ মেগাটন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন করছে।

কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনের এখন পর্যন্ত সফলতা হচ্ছে অনেক দেশই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিজেদের কর্মসূচি তুলে ধরেছে। ব্রিটেন জানিয়েছে, সম্মেলনে ৪০টিরও বেশি দেশ ভবিষ্যতে কয়লার ব্যবহার থেকে সরে আসার অঙ্গীকার ঘোষণা করেছে। এসব দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পোল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও চিলি। বিশ্বের সর্বোচ্চ কয়লা ব্যবহারকারী দেশ চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া এই অঙ্গীকারপত্রে সই করেনি। তবে চীন জানিয়েছে, তারা ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ দেশে পরিণত হবে। যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে তারা ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হবে। বায়ুমণ্ডলে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনে তিন নম্বরে রয়েছে ভারত। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার বক্তৃতায় ঘোষণা করেছেন, আগামী ২০৭০ সালের মধ্যে তারা কার্বন নিরপেক্ষ হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঘোষণায় বলা হয়, তারা ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হবে। রাশিয়া বলেছে, তারা ২০৬০ সালে কার্বন নিরপেক্ষ হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় চীন নিজেদের পরিকল্পনায় বলেছে, ২০২৬ সাল থেকে কয়লার ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে আনবে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত মাসে ঘোষণা করেন, তারা দেশের বাইরে আর কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে অর্থায়ন করবে না। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নেও অগ্রগতি ঘটিয়েছে চীন। পৃথিবীতে যত সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় তার এক-তৃতীয়াংশ চীনে হচ্ছে। তেমনি বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনে চীন এখন বিশ্বের এক নম্বর।

সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ১৫ হাজার কোটি ডলারের ক্লিন ইলেকট্রিসিটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যা দিয়ে ফসিল জ্বালানি পরিত্যাগকারী কোম্পানিগুলোকে পুরস্কৃত করা হবে। তিনি জানান, গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের কার্বন নিঃসরণ কমতে শুরু করেছে। এত দিন যুক্তরাষ্ট্রের ৮০ শতাংশের বেশি জ্বালানির উৎস ছিল জীবাশ্ম বা ফসিলজাত জ্বালানি। ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৫ সালের স্তরের অর্ধেক কার্বন ডাই-অক্সাইড কাটছাঁট করবে। ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন গাড়ির অর্ধেকই হবে বৈদ্যুতিক গাড়ি।

জার্মানি, ইতালি ও পোল্যান্ডসহ ইইউ লক্ষ্য স্থির করেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের জ্বালানির ৪০ শতাংশ আসবে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে। ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের মাত্রা ৩৩-৩৫ শতাংশ কমিয়ে আনবে। এ সময় বিদ্যুৎ শক্তির ৪০ শতাংশ আসবে ফসিলজাত নয়, এমন জ্বালানি থেকে। রাশিয়া ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৩০ শতাংশ কমানোর কথা বলেছে।

সম্মেলনে ১৩০টি দেশ বন ধ্বংসের প্রক্রিয়া রোধ করে নতুন বনাঞ্চল সৃষ্টির অঙ্গীকারনামায় সই করেছে। এদের মধ্যে ব্রাজিল, কঙ্গো ও ইন্দোনেশিয়াও রয়েছে। বিশ্বের ৯০ শতাংশ বনাঞ্চল তিনটি দেশের। এ চুক্তিতে বন রক্ষায় ১৯০ কোটি ডলারের তহবিল জোগানোর প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত বন ধ্বংসের প্রক্রিয়া রোধ অঙ্গীকারনামায় সই করেনি। অথচ বন ধ্বংস তথা বৃক্ষরাজি ধ্বংসের মধ্য দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের গতি ত্বরান্বিত হয়; কারণ গাছপালা বিপুল পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।

সম্মেলনে একটি বড় অগ্রগতি হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে অঙ্গীকারনামায় ১০০টিরও বেশি দেশের স্বাক্ষর। কারণ বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসগুলোর মধ্যে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরের অবস্থানেই রয়েছে মিথেন। বিজ্ঞানীরা এ পদক্ষেপকে ‘ভালো সূচনা’ বলেছেন বলে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়। কারণ বিজ্ঞানীরা জানান, এর ফলে ২১০০ সালের মধ্যে শুধু মিথেন গ্যাসের নির্গমন কমানোর জন্য তাপমাত্রা বৃদ্ধি ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যাবে।

কয়লার ব্যবহার বন্ধে সর্বোচ্চ সময়সীমা ঘোষণা করেছে ভারত, ২০৭০ সাল; অর্থাৎ এরপর কয়লা আর ব্যবহৃত হবে না। এ অঙ্গীকারকেও বিজ্ঞানীরা ইতিবাচক বলেই উল্লেখ করেছেন। কয়লার দিন যে ফুরাল এটিই বড় ইঙ্গিত।

জীবাশ্ম জ্বালানি ও হুমকি
কয়লা, প্রকৃতিক গ্যাস ও খনিজ তেল হলো জীবাশ্ম জ্বালানি। একে খনিজসম্পদও বলা হয়। বায়ু বা অক্সিজেনমুক্ত পরিবেশে উদ্ভিদ ও প্রাণীর দীর্ঘ পচন প্রক্রিয়ায় তা তৈরি হয়। বিশ্ব জীবাশ্ম সম্পদের মধ্যে ৭০ শতাংশ কয়লা, ১৪ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস ও ১৪ শতাংশ তেল রয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানি সব দেশে পাওয়া যায় না। যে দেশে পাওয়া যায়, তার ওপর অন্যান্য দেশ নির্ভর করে।

জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে কয়লার ব্যবহারই সবচেয়ে বেশি। পৃথিবীতে একসময় অনেক বৃক্ষরাজি ছিল। বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও পরিবর্তনে যেসব গাছপালা মাটির নিচে চাপা পড়ে যায় এবং জমতে থাকে। গাছ, পাতা, কাণ্ড রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে কয়লায় পরিণত হয়েছে। লক্ষ কোটি বছর আগে এ কয়লা গঠিত হয়। এটি ডাইনোসর যুগেরও আগে। প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় ভূগর্ভে। পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রচণ্ড চাপ ও তাপে এর সৃষ্টি। পেট্রোলিয়াম কূপ থেকেও গ্যাস পাওয়া যায়। এর প্রধান উপাদান মিথেন, পরিমাণে ৬০-৯০ ভাগ। কোটি কোটি বছর আগে পাথরের স্তরে স্তরে গাছপালা ও সামুদ্রিক প্রাণী জমা পড়ত। কালে কালে এসবই খনিজ তেলে পরিণত হয়।

উনিশ শ’ শতাব্দী পর্যন্ত কয়লাই ছিল শক্তির বাণিজ্যিক উৎসগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত ও গুরুত্বপূর্ণ। পেট্রোলিয়াম আবিষ্কারের পর এর ব্যবহার কিছুটা কমে আসে। তবে কয়লা বিশ্বের বিদ্যুৎ উৎপাদনে শক্তির বৃহত্তম উৎস হিসেবে পরিচিত। কয়লার সবচেয়ে বড় মজুদ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বের মোট মজুদকৃত কয়লার এক-চতুর্থাংশই আমেরিকায় রয়েছে। এরপর রাশিয়া, চীন অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে। লিগনাইট, পিট, সাব-বিটুমিনাস, বিটুমিনাস, অ্যানথ্রাসাইট, গ্রাফাইট প্রভৃতি নামে কয়লা রয়েছে। ভূগর্ভের খনির মাধ্যমে কয়লা উত্তোলন করা হয়।

বাংলাদেশে বড়পুকুরিয়াসহ পাঁচটি কয়লা খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তের বাইরে ভারতের প্রধান কয়লাক্ষেত্র হচ্ছে বেঙ্গল-বিহার কোল ফিল্ডসের ঝরিয়া, রাণীগঞ্জ, বোকরাও ও করণপুরার কয়লা খনি। ১৭৭৪ সালে ভারতের প্রথম কয়লা উত্তোলন হয় পশ্চিমবঙ্গে রাপীগঞ্জ কয়লা খনি থেকে। ১৮৫৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়ার রেলওয়ে চালুর পর কয়লার ব্যাপক আহরণ শুরু হয়।

খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করতে গিয়ে শ্রমিকের মৃত্যুর করুণ ইতিহাস রয়েছে দেশে দেশে। তবে সভ্যতার বিকাশে কয়লা সম্পদের বড় ভূমিকা রয়েছে। যদিও এ কয়লা ও তেল-গ্যাসই এখন পৃথিবীর বড় সুনামি হয়ে দেখা দিয়েছে। গ্রিনহাউজ গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, মিথেন, ক্লোরফ্লোর কার্বন, সালফার ডাই-অক্সাইডসহ বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণ বিশ্ব উষ্ণায়নের সৃষ্টি করেছে; যা নিয়ে মানুষ চিন্তিত। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে ২০০টি দেশ এর থেকে পৃথিবীকে বাঁচানোর কৌশল নিয়েই আলোচনা করছেন। নবায়নযোগ্য জ্বালানিই বিকল্প। অবশ্য পারমাণবিক বিদ্যুতের বিষয়টিও এখন সামনে আসছে। যদিও চেরনোবিল ও ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পারমাণবিক জ্বালানিকে ঝুঁকি হিসেবে দেখা হয়।

ইতিহাসে কয়লা
জীবাশ্ম পরিবারের কয়লার রয়েছে দীর্ঘতম এবং সম্ভবত সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ইতিহাস। উষ্ণতার জন্য গুহা মানুষরাও কয়লা ব্যবহার করতেন বলে প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রমাণ পেয়েছেন। রোমানরা ইংল্যান্ডে এটি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীতে প্রথম ব্যবহার করেছিল। সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংরেজরা আবিষ্কার করেছিল, কয়লা জ্বালানি তৈরি করতে পারে এবং এটি অঙ্গারের চেয়ে অধিকতর স্বচ্ছ এবং বেশি তাপ উৎপাদন করে। রান্না করা, গরম করা এবং মাটির পাত্র তৈরির কাজে উত্তর আমেরিকায় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে হোপি ইন্ডিয়ানরা কয়লা ব্যবহার করত। পরে অনুসন্ধানকারীরা ১৬৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আবার কয়লা আবিষ্কার করে। শিল্পবিপ্লব সম্প্রসারণে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল কয়লার ব্যবহার। বিজ্ঞানী জেমস ওয়াট বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন। এটি চালাতে কয়লা ব্যবহার করেন।

অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে শিল্পবিপ্লব যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে। বাষ্পচালিত জাহাজ (স্টিমশিপ) ও রেলপথ ছিল পরিবহনের প্রধান মাধ্যম। এসব যানবাহনের বয়লারে জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার করা হতো। এ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে কয়লার আরো ব্যবহার পাওয়া যায়।

আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের সময় অস্ত্র কারখানাগুলো কয়লা ব্যবহার করতে শুরু করেছিল। ১৮৭৫ সাল নাগাদ ইস্পাত তৈরিতে লোহার ব্লাস্ট ফার্নেসের জন্য প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে অঙ্গারের পরিবর্তে কয়লা ব্যবহার করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার সে তুলনায় একটি নতুন সংযোজন। ১৮৮০ এর দশকে ঘরবাড়ি ও কারখানার জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ব্যবহৃত হয় কয়লা। ১৯৬১ সালের মধ্যে কয়লা যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রধান জ্বালানি হয়ে ওঠে। একসময় কয়লা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের আলোয় ঘরবাড়ি আলোকিত হয়ে ওঠে। আজকের যুগে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক কয়লা ব্যবহৃত হয়। এ কয়লা থেকে কার্বন নিঃসরণ বেশি হয়ে পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে ফেলছে। তাই পৃথিবীকে বাঁচাতে কয়েক শ’ বছর রাজত্বকারী কয়লার লাগাম টেনে ধরা হচ্ছে। এটি সুখবরই বটে।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক


আরো সংবাদ



premium cement