২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

‘মুসলিম’ পরিচিতির সঙ্কট

- ফাইল ছবি

নিজ কমিউনিটি বা সম্প্রদায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এই সম্প্রদায়গত ইউনিট হতে পারে একটি পাড়া-মহল্লা থেকে একটি গোষ্ঠী কিংবা একটি জাতি পর্যন্ত। যেমন পাকিস্তান রাষ্ট্রের অধীনে থেকে বাঙালির সম্প্রদায়গত চেতনা জেগে উঠেছিল। নিপীড়ন বঞ্চনা ও অধিকার আদায়ের জন্য নিজেদের উঠে দাঁড়াতে হয়। নিজ সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অন্যায়কে রুখে দেয়া প্রয়োজনীয়। আমার পাড়া প্রতিবেশী ও আমাকে রক্ষার জন্য নিজেকেই দাঁড়াতে হবে। কথিত এই সাম্প্রদায়িকতা মানে, মানবাধিকারের পক্ষেই দাঁড়ানো।

‘সাম্প্রদায়িকতা’ শব্দটি আমাদের উপমহাদেশে ‘পচে গেছে’। এখানে প্রধানত হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে ধর্মীয় বিরোধ বিষয়টিকে সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। সংখ্যালঘুদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের ওপর চড়াও হওয়াকে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ বলা হচ্ছে। হিন্দু মুসলিম বিরোধ এ অঞ্চলে সবার জন্য আরো বড় ক্ষতির কারণ হবে, এমন আলামত দেখা দিচ্ছে। এর মূল কারণ হলো সংখ্যালঘুদের বাঁচানোর বদলে চক্রান্ত চলছে সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের, ভোটের রাজনীতিতে বাজিমাত করার।
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা এবং ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর হামলা সম্পূর্ণ ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছে। সম্প্রতি উভয় দেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ও তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া থেকে এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা মিলে। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলাকারী জঘন্য দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। তবে এ ধরনের যেকোনো একটি ঘটনা ঘটলেই মুসলিমদের বিরুদ্ধে শুরু হয় প্রবল প্রচারণা। ফলে বহু মুসলিমকে বিপদের মুখে পড়ে যেতে হয়। অন্য দিকে ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটে। এ জন্য সরাসরি সে দেশে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে আনুক‚ল্য দেয়া হয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটলেই ভারতের মুসলিম কমিউনিটি উল্টো চাপে পড়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে চক্রবৃদ্ধি হারে হামলার ঘটনা ঘটে। বহু মুসলিমের বিরুদ্ধে নেমে আসে মামলা নির্যাতন ও নিপীড়ন। এ জন্য কোনো পক্ষই প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। উভয় দেশে বিপরীতমুখী এ প্রতিক্রিয়ার ভুক্তভোগী প্রধানত মুসলিমরা। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ঘটনা যেখানেই ঘটুক এর শিকার তারা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এ দেশে আগমনকে ঘিরে দেশে প্রবল প্রতিবাদ গড়ে উঠেছিল। এই প্রতিবাদের মূল কারণ ভারতে বর্তমান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং তাদের নিপীড়ন উচ্ছেদ ও গণহত্যা চালানো। ওই সময় দেখা গেল, পুলিশ ও সরকারি দলের হামলায় দুই ডজনের বেশি মুসলিম প্রাণ হারান। হত্যার শিকার মানুষদের পক্ষে বিচার চাননি কেউ। উল্টো মোদির আগমনের বিরোধিতাকারীরা হামলা মামলায় পড়ে এক প্রকার ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছেন। এই দুঃখজনক অধ্যায়টিও ‘সাম্প্রদায়িক ঘটনার প্রতিক্রিয়া’ থেকে সৃষ্ট বলা যায়। মুসলিমরা মোদির সাম্প্রদায়িক আচরণের প্রতিবাদ করেছে। সে জন্য উল্টো তাদেরই প্রাণ দিতে হয়েছে, মামলার শিকার হতে হয়েছে।
এবার কুমিল্লায় মূর্তির পায়ের ওপর কুরআন রাখার ঘটনার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া দেখুন। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে চারজন মুসলিম প্রাণ হারিয়েছে। মানুষের এই প্রাণহানি সামান্য আলোচনার বিষয়ও হতে পারেনি। এরপর দেখা গেছে, রংপুরে দরিদ্র হিন্দুদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হলো। ঘটনার অভিমুখ প্রত্যাশামাফিক দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা কিংবা তদন্তের দিকে যায়নি। অথচ একতরফা মুসলিমদের দোষারোপ করার জন্য হইচই শুরু হয়ে গেল। ‘হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ’ সারা দেশে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে। তাদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ থেকে ঘটনার বিচার ও দোষীদের চিহ্নিতকরণ গুরুত্বপূর্ণ অ্যাজেন্ডা হিসেবে আসেনি। তারা এ জন্য বরাবরের মতো মূলত মুসলিমদের বিরুদ্ধে কামান দাগিয়ে গেছেন। নতুন করে আরো অধিক শক্তি নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে ‘ইসকন’ নামের একটি সংগঠন।

অন্য দিকে বাংলাদেশে ‘প্রগতিশীল’ নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন ও মিডিয়া একযোগে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় বিপুল প্রচারণা চালিয়ে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ও কাছেই শাহবাগে এবং সারা দেশে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো একযোগে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে গেছে। এসব অনুষ্ঠানে এমনসব সাংস্কৃতিক আয়োজন ছিল যাকে প্রগতিশীলতার চর্চা বলে চালানো হয়। অথচ ওইসব চর্চা প্রধানত হিন্দু ধর্মের আচার। অনেক ক্ষেত্রে এগুলোকে কুসংস্কার বলতে হয়। অর্থাৎ বিশেষ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও রেওয়াজকে কৌশলে ‘প্রগতিশীলতা’ বলে চালু করে দেয়া হচ্ছে।

প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়ে প্রবীণ হিন্দু রাজনৈতিক নেতারা এমন সব বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান যা কোনোভাবে নিরপেক্ষতা নয়। তারা নিজেরা একটি ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে অন্য ধর্মীয় সংগঠনের বিরুদ্ধে অবলীলায় বলে যান কীভাবে? এ জন্য তাদের ধর্মনিরপেক্ষতা কিংবা প্রগতিশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কথা। সংবাদমাধ্যমগুলো এসব ব্যক্তির কথিত প্রগতিশীলতা অসাস্প্রদায়িকতার মোড়কে ঘৃণা ও ক্ষোভকে ব্যাপক প্রচার করে থাকে। সংবাদমাধ্যম নিজে থেকে খবরের এমন প্রচার চালায় যার টোন থাকে, ‘মুসলিমরাই সাম্প্রদায়িক’। এবার দুর্গাপূজার সময়ে ৩০-৩৫টি পূজামণ্ডপে দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালিয়েছে। দেশের একটি স্বনামধন্য ইংরেজি পত্রিকা আগ বাড়িয়ে একশ’র বেশি পূজামণ্ডপে হামলা হয়েছে বলে চালিয়ে দিয়েছে। অন্য দিকে বাংলাদেশে নাগরিক সমাজ বিশেষত সাধারণ মানুষেরা স্বভাবগতভাবে হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকে চরম অপছন্দের কাজ হিসেবে দেখে। তাই সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে এমন জোয়ার উঠে, অনেক নিরপরাধ মুসলিম গোষ্ঠী ঘটনার শিকার হয়ে যায় ।

ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বেশ কিছু হমলার ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এগুলো সরাসরি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হচ্ছে। ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট খেলা নিয়ে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের প্রতিক্রিয়া দেখুন। সেখানে সাতজন মুসলিম ছাত্রকে আটক করা হয়েছে। তারা খেলায় পাকিস্তান জেতায় তাদের পক্ষে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ মামলা হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিজেপি দলীয় যোগী তার টুইটারে। অন্য দিকে একজন শিক্ষককে একই কারণে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ভারতে। সারা বিশ্বের কোথাও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এমন একটি সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটলে তা তোলপাড় হয়ে যাওয়ার কথা। ভারতে এসব ব্যাপারে কেউ প্রতিবাদ দূরের কথা, মুখও খোলে না। অভিনেতা শাহরুখের ছেলেকে নিয়ে হেনস্তার ঘটনাটিও একই প্রকৃতির।

বাংলাদেশের ঘটনার জেরে ভারতের ত্রিপুরায় সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনাগুলো আরো ভালো করে আমাদের দেখিয়ে দেবে, রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের চরিত্র কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ত্রিপুরায় ১৬টি মসজিদে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তিনটি মসজিদে দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। মুসলিমদের বাড়িঘর দোকানপাটে হামলা লুটপাট করেছে। নারীদের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। এসব ঘটনার মধ্যে কোনো লুকোছাপা ভাব নেই। সব কিছু সেখানে প্রকাশ্যে চলছে। হামলাকারীরা এই সময় মারাত্মক সব গালাগালি করছে মুসলমান সম্প্রদায়, তাদের নবী ও ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি। এসবে বাধা দেয়ার সেখানে কেউ নেই। বামপন্থী সিপিএম, মধ্যপন্থী তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস সবাই চুপচাপ। আর উগ্র ডান বিজেপি ও তার শাখা সংগঠনগুলো সরাসরি সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সেখানকার নাগরিক সমাজ উগ্র সাম্প্রদায়িক আচরণের বড়ি খেয়ে গভীর ঘুমে যেন অচেতন।

আরো আগে আসামে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত শর্মার সরাসরি নির্দেশে মুসলিম উচ্ছেদ অভিযান চলে। কয়েক দফায় তাদের উচ্ছেদ করা হয়। প্রথমে জানা যায়, হিন্দু ধর্মীয় উপাসনালয় বানানোর জন্য মুসলিমদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। পরে জানা গেল, কৃষি খামারের জন্য তারা স্থানীয় মুসলিমদের বসতি উচ্ছেদ করছে। এই ধরনের ঘটনায় ভারতের মুসলিমরা প্রতিবাদের শক্তিও হারিয়ে ফেলেছে। প্রতিবাদ করতে চাইলে তার পরিণাম কী হবে সেটাও ওই ঘটনায় বোঝা গেছে। কয়েকজন মুসলিম এর প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন। তাদের বুকের ওপর সরাসরি গুলি চালানো হয়েছে। এতে দু’জন মুসলিম ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। তার মধ্যে একজনের ওপর লাফিয়ে নৃত্য করা হয়েছে। আবার এসব নির্মম ঘটনার খবর হবে, তারও পথ বন্ধ করা হয়েছে। বিবিসির রিপোর্ট সূত্রে এ ঘটনার বিস্তারিত জানা যাচ্ছে। তবে বিবিসিও এই রিপোর্ট এড়িয়ে যেত। সম্ভবত সমালোচনা এড়ানোর জন্য তারা দায়সারা গোছের রিপোর্টটি করেছে। এ দিকে ভারতের এসব ঘটনা বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায় না। এ দেশে ঘটা তার চেয়ে অতি নগণ্য ঘটনাকে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ বলে গণমাধ্যম বিপুল প্রচারণা চালায়। ভারতে ঘটে যাওয়া তার চেয়ে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলো তারা গায়েব করে দেন। আসামের পর ত্রিপুরা জ্বলছে, আমাদের সংবাদমাধ্যমে তার ছিটেফোঁটা আলোচনা নেই।

বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাগুলোর হোতারা চিহ্নিত হয় না। এই ধরনের ঘটনা ঘটার পর মুসলিম রাজনৈতিক সংগঠনগুলো চাপে পড়ে যায়। বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলও এর দায়ভোগ করে। এবার দেখা গেছে কারান্তরীণ বিএনপি নেতাকর্মীরা মামলা ‘খেয়েছেন’। অন্যরা তো আসামি হয়েছেনই। অর্থাৎ, বর্তমান সরকার এই ধরনের ঘটনা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়। তবে এটা স্পষ্ট যে সরকার নিজেই খুব চাপে পড়ে যায়। হামলার ঘটনার বিচার না হলেও হিন্দু ভুক্তভোগীরা ক্ষতিপূরণ পান। তাদের উপাসনালয় মেরামত করে দেয়া হয়।

অন্য দিকে ভারতে বাবরি মসজিদ ভেঙে রামমন্দির প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আরো বেশ কিছু মসজিদ ভেঙে মন্দির বানানোর তালিকা নিয়ে কাজ চলছে। সেখানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিপীড়নে বাড়িঘর উচ্ছেদে সরকার কোনো দায়বোধ করে না। ত্রিপুরায় ভাঙা মসজিদগুলো পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারে এগিয়ে এসেছে ‘ইমাম পরিষদ’। ভারতীয় মুসলিম কমিউনিটি রাষ্ট্র্রের কাছ থেকে বেঁচে থাকার অধিকারও পাচ্ছে না। অন্য দিকে, বাংলাদেশ সরকারকে হিন্দু কমিউনিটির জন্য বিশেষভাবে ভাবতে হয়। তাদের বিশেষ মর্যাদা দেয়ার কথা চিন্তা করতে হয়। এবার সরকার পূজামণ্ডপ তৈরিতে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার দুই হাজার পূজামণ্ডপ বেড়েছে। এবার দুর্গপূজা হয়েছে ৩২ হাজার ১১৮টি পূজামণ্ডপে।

ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের মুসলিম ধর্মীয় পরিচয় এখন বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভারত সরকার সরাসরি মুসলিম নিপীড়ন নির্যাতন চালানোর নীতি নিয়েছে। বলা যায়, ধারবাহিক এক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তারা মুসলিমদের হীনবল করে দিতে চায়। সেখানে মুসলিম পরিচয় মানে, সমাজের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক, অবহেলিত বঞ্চিত গোষ্ঠী। সম্মান নিয়ে মানবিক মর্যাদায় তাদের বাঁচার অধিকার সীমিত করা হচ্ছে। অন্য দিকে বাংলাদেশ সরকার হিন্দুদের বিশেষ সুবিধাভোগী বানাতে চাইছে বলে মনে হয়। কিন্তু এতে করে সাম্প্রদায়িকভাবে হিন্দুরা খুব ভালো অবস্থায় চলে যাচ্ছেন এমন ব্যাপার ঘটছে না। কারণ সাধারণ ও দরিদ্র হিন্দুরা এ দেশে নানাভাবে বঞ্চিত। তাদের ওপরই হামলা-নিপীড়নের ঘটনা বেশি ঘটে। কিন্তু ‘হিন্দু’ পরিচিতিটা রাজনীতির একটা আইটেম। এটাকে মর্যাদার প্রতীকও বানানো হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। সরকারি প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় ‘হিন্দু’ হলে অগ্রাধিকার পাওয়া যায়। এটি আসলে একটি অভিজাত শ্রেণীর সৃষ্টি করেছে। এই শ্রেণীর নামে বাড়তি যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তার পুরোটা ভোগকারী এই অভিজাত গোষ্ঠী।

লক্ষণীয় আরেক ব্যাপার হচ্ছে এ দেশে মুসলিম রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক পরিচিতিগুলোর ওপর ক্রমাগত আক্রমণ চলছে। মুসলিম ধর্মীয় রাজনৈতিক সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজেভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। মুসলিম ইতিহাস ঐতিহ্য ও রাজনীতি নিয়ে কাজ মানে গ্লোরিয়াস কিছু নয়, এমন ধারণা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিগত এক যুগে এ দেশের মুসলিম ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোকে হীনবল করা হয়েছে। এই কাজ শুধু সরকার করেছে, এমন নয়। এই কাজের পেছনে সমন্বিত উদ্যোগ দেখা গেছে। মুসলিম প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে সব ধরনের অন্যায় পদক্ষেপকে এ দেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ ও মিডিয়া বৈধতা দিয়েছে। এর বিপরীতে ‘হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের’ মতো বিতর্কিত সংগঠনগুলোকে আশকারা দেয়া হয়েছে। অথচ এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের কমিউনিটির স্বার্থের পক্ষে দাঁড়ানোর পরিবর্তে বেশির ভাগ সময় ব্যবহৃত হন মুসলিম সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে। সরাসরি সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড করার পরও তাদের গায়ে কোনো কালিমা নেই। এসব ব্যক্তি এ ধরনের সংগঠন করার আড়ালে বিত্ত-বৈভবের মালিক হচ্ছেন বলে অভিযোগ। প্রতীয়মান হয় যে, তাদের জন্য থাকছে রাষ্ট্রীয় সম্মাননাও।
jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement