২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিচার চাই, না ফাঁসাতে চাই

- ফাইল ছবি

বাংলাদেশে বড় বড় সংবাদ প্রতিষ্ঠান ইসলামী রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে অবাধে ব্যবহৃত হয়ে যাচ্ছে। ‘হেফাজতে ইসলাম’ জনসংখ্যার সমর্থনে বিরাট একটি মঞ্চ। অন্য দিকে ‘জামায়াতে ইসলামী’ এ দেশের ‘বৃহৎ ইসলামী রাজনৈতিক দল’। রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে এরা হিন্দু সম্প্রদায়কে আক্রমণ করেছে এমন নজির কার্যত বাংলাদেশে নেই। শুধু হিন্দু নয়, অন্য কোনো ধর্ম বর্ণ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এরা কখনো কোনো ধরনের অবস্থান নিয়েছে বলে দেখা যায়নি। এমনকি তারা কোনো ঘৃণা সৃষ্টিকারী প্রচারণা চালিয়েছে এমন অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে নেই।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসাকে হেফাজতের ‘কেন্দ্র’ ধরা হয়। বিশাল এ মাদরাসায় হাজার হাজার ছাত্র। সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা বসবাস করে। আজ পর্যন্ত হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষক, ছাত্র কিংবা সেখানে কর্মরত কেউ হিন্দুদের প্রতি কোনো ধরনের বিদ্বেষ প্রদর্শন করেছেন বলে উদাহরণ নেই। অন্য দিকে জামায়াতে ইসলামী উপমহাদেশের একটি পুরনো রাজনৈতিক দল। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ইসলামিক রাজনীতি ধারণার এ অঞ্চলে অগ্রপথিক তারা। ‘রাজনৈতিক’ ইসলামের নেতৃত্বে তারা রয়েছে। এ দলটি কোনো দাঙ্গা লাগিয়েছে কিংবা তাতে উসকানি দিয়েছে- এমন একটি প্রমাণও নেই।

সাম্প্রতিক ইতিহাসে বাবরি মসজিদ ভাঙা ও তার সূত্র ধরে সারা ভারতে যে উগ্র সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাতে ভারতে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ও বিপুল সম্পত্তি বিনাশ ঘটে। তার পর গুজরাটে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চলে। এই ধারাবাহিকতায় বৃহৎ গণতান্ত্রিক ভারতে সাম্প্রদায়িক উসকানির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। ওই সব ঘটনার একটিতেও জামায়াতে ইসলামী ভারতের উগ্র সাম্প্রদায়িক দল বিজেপি এবং তার শাখা সংগঠনগুলোর মতো ভ‚মিকা রেখেছে কিংবা কোনো ষড়যন্ত্র করেছে এমন অভিযোগ উঠানো যায়নি। ভারত ও পাকিস্তানে একই নামে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়। ৮০ বছর পুরনো রাজনৈতিক দলটির বিরুদ্ধে কোথাও এ ধরনের অভিযোগ নেই। এ দেশের আরো বেশ কিছু ইসলামী রাজনৈতিক দলের উৎপত্তি হয়েছে তাদের সূত্র ধরে। তাদের কারো ক্ষেত্রেই এমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
আমরা এখানে ইসলামী রাজনৈতিক দল কিংবা অন্যান্য ইসলামিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরছি না। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, নিপীড়ন এবং তাদের পূজামণ্ডপে ভাঙচুর ও বাধা দেয়ার বিষয় নিয়ে মুক্তমনে আলোচনা করছি। এ আলোচনার লক্ষ্য এ ধরনের সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের চিরতরে বিলোপ সাধন। রংপুরের পীরগঞ্জে নিরীহ দরিদ্র হিন্দুদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের বাড়িঘর লুটপাট করা হয়েছে। মূল কথা, এমন জঘন্য ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে। দেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টানসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে চাইলে রংপুরের ঘটনাটির মতো এ ধরনের প্রতিটি ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। যারা প্রকৃত অপরাধী এবং যারা এর পেছনে ইন্ধন দিয়েছে তাদের দিকে অঙ্গুলি তুলতে হবে। সেটি না করে আমরা যদি বরাবর অঙ্গুলটি এক দিকে তুলে রাখি অন্তত এ দেশ থেকে সংখ্যালঘু নিপীড়ন চিরতরে সমূলে উৎপাটিত হবে না। আমাদের সামনে ঘটে যাওয়া রামু, শাল্লা, নাছিরনগর ও সাঁওতাল পল্লী উচ্ছেদের ঘটনাগুলো বারবার তারই প্রমাণ হয়ে সামনে হাজির হবে। সামনে আরো কত হবে, আমরা তা জানি না।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য নামে একজন প্রবীণ রাজনৈতিক নেতার একটি সাক্ষাৎকার দেখলাম। একটি বড় পত্রিকার পৃষ্ঠাজুড়ে সেটি ছাপা হয়েছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিকারের ব্যাপারে বলতে গিয়ে তিনি মুখস্থ কিছু কথাও বলে নিলেন। এ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এগুলো বহুল চর্চিত। এ চর্চা এ দেশে হয়তো দলবিশেষকে সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের কোনো উপকারে আসেনি। বাম রাজনৈতিক দলগুলো উগ্র ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’ বলতে এ দেশে ‘ইসলামী’ দলগুলোকে অভিযুক্ত করে। চলতি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় দেখা গেল, ইসলামী রাজনীতি ও সামাজিক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ তোলা গেল না। বর্তমান সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনায়ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের নামে রাজনৈতিক কেনো দল কিংবা তাদের কোনো মঞ্চকে সাম্প্রদায়িক হামলা, উসকানি কিংবা ঘৃণা সৃষ্টির জন্য অভিযুক্ত করা যায়নি। তাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক ঘৃণার সাথে দূরতম সম্পর্কও কেউ দেখাতে পারেনি। ফলে ‘কেষ্টা বেটাই চোর’ এটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে গেছে। এখন রাজনৈতিক সুযোগ সন্ধানীরাও এ অভিযোগ তুলে বেশি যুত করতে পারছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা হলেই জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে একহাত নেয়ার যে প্রবণতা, আপাতত স্তিমিত হয়ে আসছে।

পঙ্কজ বাবু হেফাজত ও জামায়াতে ইসলামীকে টেনে এনেছেন যেভাবে, তা অনেকের মতে অপ্রাসঙ্গিক। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, এ ধরনের প্রগতিশীল পত্রিকার নীতি। তারা কি প্রকৃতপক্ষে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ হোক সেটি চান? না তারা এ নিয়ে বোগাস আলোচনা চলুক, এমন কিছু চান। এর ফলে নিরপরাধ ইসলামিক রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর ওপর সরকার আরো বেশি নিপীড়ন চালাতে পারে বা তার আবারো ভিত্তি তৈরি হোক সেটি চান। বর্তমান সরকারের এক যুগের বেশি ধরে ইসলামী রাজনীতি ও ইসলামী সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন করার কারণে বহু মানুষ নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এখনো এ দেশের বহু আলেম ওলামা জেলে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে সরকার সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকারের আনা অভিযোগগুলো হাস্যকর ও ভুতুড়ে। সরকার তার নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে এসব নিরপরাধ গোষ্ঠীকে অন্যায়ভাবে দমাতে যতটুকু শক্তি ক্ষয় করেছে, তার খুব সামান্য অংশ যদি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ব্যয় করত; তা হলে গরিব হিন্দুদের ঘরবাড়ি পোড়ানোর ঘটনা ঘটতে পারত না। ষড়যন্ত্রকারীরা মূর্তির পায়ের ওপর কুরআন রাখার সুযোগ পেত না। এ থেকে সৃষ্ট উসকানিতে ২০ জেলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিস্থিতির সুযোগ সৃষ্টি হতো না। সরকারের দৃষ্টি সঠিক জায়গায় নেই। প্রগতিশীল রাজনীতিক ও প্রগতিশীল সংবাদমাধ্যমের কর্মকর্তারা সরকারকে লক্ষ করে, গলা পরিষ্কার করে কিছু বলেন না? ভাবখানা এমন, আমরা নিজেরা বা নিজেদের কমিউনিটি নির্যাতনের শিকার হই তাতেও অসুবিধা নেই, যে করে হোক ‘ইসলাম’ ‘মুসলিম’ ব্যানার যাদের হাতে উঠবে তাদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত থাক। এতেই তারা খুশি থাকবেন।

সৈকত মণ্ডল নামে একজন রংপুরের ঘটনার প্রধান হোতা। বর্তমান সরকারের র‌্যাব এ খবর জানিয়েছে। তার পরিচয় দিয়েছেন, স্থানীয় একটি কলেজ শাখার ছাত্রলীগ সহসভাপতি। পরে দেখা গেল, এক পত্রিকা খুঁচিয়ে তার শিবির পরিচিতি বের করেছে। ২৪ বছর বয়স্ক মণ্ডল কখন শিবির করার রেকর্ড নিয়ে কিভাবে একটি বড় কলেজে রাতারাতি ক্ষমতাসীন দলের নেতা হয়ে গেলেন, তা অনেক গোঁজামিল দিয়ে মেলানো হয়েছে। সংখ্যালঘু নির্যাতন-নিপীড়নের সাথে বরাবর এভাবে ইসলামী রাজনীতির সম্পর্ক বের করার চেষ্টা আমরা প্রতিনিয়ত দেখেছি। এমন অপচেষ্টা ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার এবং সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন বাড়ার কাজে সহযোগিতা করে। এর মাধ্যমে প্রকৃত দোষীর বিচার হওয়ার পথটিই রুদ্ধ হয়ে যায়। দুঃখজনক হচ্ছে সংবাদমাধ্যম যখন এমন প্রচারণার জোয়ার ওঠায় তা প্রতিরোধ করার কাজ কোনো পক্ষ করে না। প্রবীণ রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য সাক্ষাৎকারে বললেন জামায়াতে ইসলামী ঘোষণা দিয়েছে, ২০২৮ সালে তারা ক্ষমতায় আসবে। তিনি এ ধরনের খবর কোথায় পেলেন, তার রেফারেন্স থাকার অপরিহার্যতা স্বনামধন্য পত্রিকাটি অনুভব করল না।

বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় চেতনাকে ধারণ করা রীতিমতো ‘টেবু’ ম্যাটারে পরিণত করে ফেলা হয়েছে। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের গোষ্ঠীগত কোনো ইচ্ছা বাসনাকে বিপুল প্রচারণা চালিয়ে ‘হারাম’ গণ্য করা হয়েছে। বাংলাদেশের যেকোনো গোষ্ঠী রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে। সংবিধান তাকে এই অধিকার দিয়েছে। সেই দল তার উদ্দেশ্য, আদর্শ প্রচার করতে কোনো অসুবিধা নেই। জনসাধারণ যদি কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেয় সে দল ক্ষমতায় যেতে পারে। সে অর্থে হিন্দু মহাজোট, ন্যাপ কিংবা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন পেয়ে ক্ষমতায় গেলে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। জামায়াতে ইসলামীকে কিংবা অন্য যেকোনো ইসলামী দলকে যদি মানুষ সমর্থন দেয়, তার ক্ষমতায় যেতে কোনো অসুবিধা থাকার কথা নয়। উদার বহুত্ববাদী সমাজের এটিই তো বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য। একজন প্রবীণ রাজনীতিক হিসেবে কথাগুলো পঙ্কজ বাবুর বোঝার কথা।

বাংলাদেশে ইসলামিক রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন ও সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে যে কেউ যা খুশি বলতে পারার পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। বাম ডান আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ সব ধরনের দলমত আদর্শের যেমন চর্চা ও প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে সংবিধান এদেরও সেই সমান সুযোগ রেখেছে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মিডিয়া ও কিছু রাজনৈতিক পক্ষ তাদের যে ট্রিটমেন্ট দেয় সেটি অনেক ক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য, ক্ষেত্রবিশেষে তারা তাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। এটি কি একধরনের সাম্প্রদায়িকতা নয়? কিন্তু যারা এমন করছেন সেটি তারা বোঝেন বলে মনে হয় না। এতটা অন্ধকারে থেকে ‘প্রগতিশীল’ হয়ে যাওয়া যায় না। বৃহৎ সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো রেফারেন্স ছাড়া যে কেউ তাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলে প্রকাশ করে দেয়া হচ্ছে। অথচ অভিযুক্তকে এসব বক্তব্য খণ্ডন করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। আর ইসলামিক রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলো যখন কোনো কর্মসূচি পালন করে সেসব খবর চেপে যাওয়া হয়। তাদের ব্যাপারে এক ইঞ্চি খবর প্রকাশ করার প্রয়োজন অনুভব করা হয় না। এমনকি কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে এসব সংগঠন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিলে সেগুলোও প্রকাশ করা হয় না। প্রকাশ করা হলেও তা সবচেয়ে মিনিমাম ট্রিটমেন্ট পায়।

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মুসলিম সংগঠনগুলোর প্রশংসা করতে হবে। কারণ এর বিরুদ্ধে তারা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। তাদের বিরুদ্ধে যারা সঠিক তথ্য-উপাত্ত ছাড়া প্রচারণা চালায় তাদের বিরুদ্ধে মাঠে ময়দানে প্রতিবাদও তারা জানায় না। বড় বড় কিছু ঘটনায় বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম একযোগে ব্লাকআউটে নামার পর এ দেশের সাধারণ মানুষও তাদের ওপর আস্থা হারিয়েছে। টিভি চ্যানেলগুলো দর্শক হারিয়ে ফেলে। পত্রিকার ক্ষেত্রে দেখা যায়, কয়েকটি পত্রিকা মানুষ কেনে। সেগুলোকে কিন্তু তারা বিশ্বাস করে না। খেয়াল রাখতে হবে, এ ধরনের অনাস্থার সম্পর্ক দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

সংখ্যালঘু নির্যাতনে বাংলাদেশী কেসটির অনন্য চরিত্র রয়েছে। এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা হিন্দুসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রতি ভালোবাসার নীতিতে বিশ্বাসী। এর পরও তাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাগুলো কিভাবে ঘটে সেটি বরাবরই বিস্ময় সৃষ্টি করে। ঘটে যাওয়ার পর প্রতিটি ঘটনা বিপুল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে। এ দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সরব হয়ে যায়। এসব প্রতিক্রিয়ার বেশির ভাগেরই একটা অভিমুখ থাকে। তারা সবাই একে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় গোষ্ঠীর রাজনৈতিক সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ জন্য দায়ী করার অপচেষ্টা চালায়। তবে এসব ঘটনার মূল উদঘাটনে জোরালো নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে না। অপরাধী গোষ্ঠী ও এর ইন্ধনদাতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দৃঢ়তার সাথে দাঁড়ায় না। নিকটাতীতের ঘটনাগুলো এর সাক্ষী হয়ে রয়েছে। এগুলোর একটি ঘটনায়ও অপরাধী শাস্তি পায়নি। এর পেছনের ইন্ধনদাতারা শনাক্ত হয়নি। সব ঘটনা রহস্য হিসেবে থেকে গেছে।

সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে একটি শ্রেণীর জন্য অনেকটা যেন উৎসাহের আমেজ তৈরি হয়। তাদের জন্য এসব ঘটনা ‘ঘর পোড়ার মধ্যে আলু পোড়া’। যদি চুলায় পুড়িয়ে আলুকে সেদ্ধ করা হয়, সেই মিষ্টি অলু কিংবা গোল আলু খেতে খুব স্বাদ পাওয়া যায়। পীরগঞ্জে দরিদ্র অসহায় হিন্দুদের পুড়িয়ে দিয়ে অনেকের জন্য আবারো একই আমেজ তৈরি করা হলো। এটি খুবই দুঃখজনক। আমাদের ভণ্ডামি নীচুতা ছাড়তে হবে। ঘটনাকে আমরা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে কাউকে ফাঁসিয়ে দিলে আখেরে কারো লাভ নেই। তৃতীয়পক্ষই এতে সবসময় লাভবান হতে থাকবে।

jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement