সাংবাদিকের নোবেল : কী আছে আশার
- জসিম উদ্দিন
- ১৩ অক্টোবর ২০২১, ২০:৫৯, আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২১, ২১:০০
রসায়ন, পদার্থ ও চিকিৎসায় একজন বিজ্ঞানী কেন পুরস্কার পেলেন তার যথার্থ কারণ দেখানো যায়। সুনির্দিষ্ট যে বিষয় বা বস্তু তিনি আবিষ্কার করেছেন, তা যুক্তি হিসেবে হাজির থাকে তাদের পক্ষে। নোবেল কমিটিও তার প্রমাণ পুরস্কার দেয়ার সময় উপস্থাপন করে। মানবতার কল্যাণে একজন বিজ্ঞানীর এসব আবিষ্কারকে যুগান্তকারী বলা যায়। নোবেল কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞানীদের প্রতি বছর পুরস্কার দিয়ে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। এতে অনেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নোবেল পাওয়ার প্রত্যাশাও করে থাকেন। সে জন্য জীবনভর চেষ্টাও চালিয়ে যান। তবে এসব বিষয়ে পুরস্কারপ্রাপ্তদের যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনি কি নোবেল পাওয়ার জন্য এ ধরনের সাধনা করেছেন। সম্ভবত একজনও এমন পাওয়া যাবে না যিনি বলবেন হ্যাঁ, আমি এ জন্যই জীবনভর কাজ করেছি। এ পুরস্কার প্রদান ও বিশিষ্ট কাজের কর্তারা মূলত ভালোর জন্যই কাজ করেছেন। তারা মূলত এক একজন বড় মাপের সাধক।
সাহিত্য, অর্থনীতি ও নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে অনেক ধরনের কথা বলার সুযোগ থেকে যায়। অর্থনীতিতে যারা এ পর্যন্ত পুরস্কার পেয়েছেন তারা কি পুঁজিবাদের অর্থনীতিকে বৈধতা দেননি? এ অর্থনীতি পৃথিবীতে বিপুল অর্থনৈতিক বৈষম্য তৈরি করেছে। তারা কি সেই অর্থনীতির পক্ষের যোদ্ধা হয়ে থাকেননি? কিংবা তারা কল্যাণ অর্থনীতির এমন কোনো ধারা আবিষ্কার করেছেন কি? আমেরিকার নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থা সেটি চর্চা করেছে। এমনকি সেই অর্থনীতি অনুসরণ করার ফলে অনেক দরিদ্র দেশ তাদের অর্থনীতিকে সচ্ছল করতে পেরেছে। দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের অভাব দূর হয়েছে। তাদের খাওয়া, পরা, চিকিৎসা ও থাকার উন্নত ব্যবস্থা হয়েছে। সম্ভবত এমনটি কোথাও ঘটেনি। পৃথিবীতে ৭০ কোটি মানুষ এখন চরম দরিদ্র যারা দিনে দুই ডলারও উপার্জন করতে পারে না। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে অর্থনীতিতে নোবেল কমিটি পুরস্কার দিয়ে যাচ্ছে। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে একজনও বিশ্বকে দারিদ্র্যমুক্ত করার পন্থা উদ্ভাবন করতে পারেননি। আমেরিকা ও অন্যান্য ধনী দেশকে এমন কল্যাণমূলক পদ্ধতি অনুসরণ করতে রাজি করাতে পারেননি, যাদের করের সামান্য একটি অংশ নিয়মিত দান করলেই চরম দরিদ্রতা থেকে বিপুল জনগোষ্ঠী মুক্ত হতে পারে।
সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার নিয়ে অনেক বেশি বিতর্ক ওঠেনি। সাধারণত বঞ্চিত পীড়িত মানুষের জীবনকে তুলে ধরার মধ্য দিয়ে বড় মাপের সাহিত্যিক তৈরি হন। সাহিত্যের প্রধান শক্তি দুঃখ নিপীড়ন ও শোক। সাধারণত উচ্ছেদ হওয়া মানুষের মধ্য থেকে বড় বড় সাহিত্যেকের জন্ম হয়। বাবা-দাদা কিংবা নিজেদের দেশ হারিয়ে উদ্বাস্তু হওয়া তাদের কাতর করে তোলে। ফলে অভিবাসী মানুষদের মধ্যে থেকে সাহিত্য পুরস্কার পেতে দেখা যায়। সত্যিকার অর্থে, মানুষের কথা সফলভাবে বলতে পারার কারণে তারা এমন পুরস্কার পান। অথবা বিষয়টি এমন হতে পারে, সমসাময়িক অনেক বড় মাপের সাহিত্যিকরা থাকেন। তাদের মধ্য থেকে একজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পান। পরে তিনি বিপুল পরিচিত অর্জন করেন। তার রচিত সাহিত্য বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়ে বিপুল চর্চা করা হয়। অন্য দিকে একই মাপের কোনো একজন সাহিত্যিক এভাবে সামনে আসার সুযোগ না পেয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যান।
বিজ্ঞানের বিষয়গুলো নিয়ে অনেকটাই পূর্বাভাস দেয়া যায় কারা সম্ভাব্য নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন। এক বছর ‘মিস’ হলে অপর বছর কিংবা জীবনের কোনো একটি সময় তারা পুরস্কার পান। নোবেল শান্তি পুরস্কারের বিষয়টি এ ব্যাপারে ব্যতিক্রম। এ পুরস্কার নিয়ে কোনো ধরনের পূর্বাভাস দেয়া যায় না। বিগত কয়েক যুগে অল্প কিছু ক্ষেত্রে আঁচ করা গেছে, কোন ব্যক্তি বা সংগঠন এটি পেতে যাচ্ছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যারা এটি পাবেন বলে প্রত্যাশা করেছেন তারা হতাশ হয়েছেন। এ পুরস্কারের পেছনে একটি গভীর উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য কাজ করে বলে অনুমান করা যায়। এবার এ পুরস্কার দু’জন সাংবাদিককে দেয়া হলো, যারা নিজেরাও এ পুরস্কার পেতে পারেন বলে প্রত্যাশা করেননি। রাশিয়ান সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভ নিজেই আশা করেছিলেন, রাশিয়ার বিরোধী নেতা নাভালিন এটি পাবেন। এই নেতা দীর্ঘ দিন ধরে একনায়ক প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। এক অসম লড়াইয়ে তিনি লিপ্ত হয়ে শঙ্কার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন। এখন রয়েছেন কারাগারে।
নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে মানুষের হকচকিত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রশমিত করার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। তারা বলছেন, বিশ্বব্যাপী এখন গণতন্ত্র ক্ষয়িষ্ণু। অন্য দিকে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে প্রতিক‚লতা বাড়ছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণকারী বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিবেদনে নোবেল কমিটির শঙ্কার খবরই পাওয়া যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক দেশগুলো যাত্রা করেছে কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে। অনেক দেশে একনায়ক শাসনের আবির্ভাব ঘটেছে। শাসকরা নিজেরাই শুধু গণতন্ত্রের সুফলভোগী। জনগণের উদার সমর্থনের মাধ্যমে এসে তারা বাকিদের কথা ভুলে যাচ্ছেন। এ জন্য পূর্ণ গণতন্ত্র চর্চার বদলে খুঁতযুক্ত গণতান্ত্রিক শাসনের জন্ম হচ্ছে। সেখান থেকে তারা হাইব্রিড শাসনে যাচ্ছেন। তার পর একেবারে পূর্ণ একনায়কত্ববাদী শাসনে পর্যবসিত হচ্ছে দেশগুলো।
দিমিত্রি মুরাতভ রাশিয়ার পত্রিকা নোভায়া গেজেটার প্রধান সম্পাদক। পুতিন সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তাকে প্রতিদিন কাজ করতে হয়। এ পর্যন্ত পত্রিকাটির ছয়জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। তার পরও তিনি পিছু হটেননি। জনমত দমন, বেআইনি শক্তি প্রয়োগ, ধরপাকড় ও গুম খুনের খবর তিনি দিয়ে চলেছেন। তবে দিমিত্রিকে পুরস্কার দেয়ায় নোবেল শান্তি কমিটির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সেটি হচ্ছে পুতিনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে একেবারে পুরোভাগে রয়েছেন নাভালিন। জনগণের অধিকার আদায়ে নিজের কাঁধটি বিছিয়ে দিয়ে রেখেছেন তিনি। সে জন্য পুরস্কারটি তার পাওয়ার অধিকার বেশি ছিল বলে অনেকে মনে করেছেন। তাকে পাশ কাটিয়ে একজন সাংবাদিককে এ পুরস্কার দিয়ে উদ্যোক্তারা পুতিনের প্রতি কিছুটা ছাড়ের মনোভাব প্রকাশ করেছেন; অর্থাৎ ‘শাসক হিসেবে তারা পুতিনকে খুব বেশি অপছন্দ করছেন না।’
নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া অন্য সাংবাদিক ফিলিপাইনের মারিয়া রেসা। সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট র্যাপলারের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রেসিডেন্ট দুতার্তের জনতুষ্টিবাদী কর্মকাণ্ডের অন্ধকার দিকগুলো নিয়ে তিনি অব্যাহতভাবে সোচ্চার। সরকারের প্রচারণার বিরুদ্ধে সাহসিকতার সাথে লড়ছেন। ভুয়া সংবাদ ও বানানো সংবাদের বিপরীতে সত্য জানানোর জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। দুতার্তে মূলত দেশটিকে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়া মাদকের ব্যবহারকারী, এর সহযোগী সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও মাদক কারবারিদের নির্মূলে জোরালো অভিযান চালান। কোনো ধরনের বিচার ছাড়াই ড্রাগ লর্ডসহ অনেক নিকৃষ্ট অপরাধীকে হত্যা করছেন। এর দুটো দিক রয়েছে। এক দিকে বিপুল মানুষ এতে খুশি। যদি প্রকৃত অর্থেই এটি অপরাধীদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে প্রয়োগ করা হয়। দ্বিতীয় দিকটি হচ্ছে, এর সুতা ধরে যদি বিরোধী শক্তিকে উচ্ছেদ করা হয় তা হলে সেটির জনপ্রিয়তা থাকে না। সম্ভবত দুতার্তের এ অভিযান প্রকৃত মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছে। রেসার সাড়াজাগানো সাংবাদিকতা ছিল বিনা বিচারে মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে।
নোবেল শান্তি পুরস্কার সবসময় বেশি আলোচিত সমালোচিত হয়। এ পুরস্কার দেয়া নিয়ে একটি রাজনীতিও যে পেছন থেকে কাজ করে, সেটি আর অস্পষ্ট থাকে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে নোবেল কমিটি যখন শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে, তিনি তখন মাত্র ১২ দিন অফিস করেছেন। তাকে আন্তর্জাতিক কূটনীতি জোরদারকরণ এবং মানুষের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলার জন্য এ পুরস্কার দেয়া হয়। তিনি দুই টার্মে আট বছর ক্ষমতায় ছিলেন। একজন কৃষ্ণাঙ্গ নেতা হিসেবে তিনি সাড়া জাগিয়েছিলেন। তবে তার সময়ই মূলত আমেরিকা সামরিক শক্তিমত্তা বেশি দেখিয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে এ সময় সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রক্তপাত হয়েছে। শান্তি পুরস্কারের জন্য ওবামাকে বাছাই করার পর তিনি এর বিপরীত কাজটি পুরো সময়জুড়ে করে গেছেন; তাতে সন্দেহ নেই।
অং সান সু চিকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দিয়ে বিশ্বব্যাপী আরো সাড়া জাগিয়ে দেয়া হয়। দেশ হিসেবে মিয়ানমারের চেয়ে সু চির পরিচিতি বড় হয়ে উঠল। দেখা গেল, তিনি নিজেই হিংসা সাম্প্রদায়িকতা ও অশান্তি চর্চার সমর্থন করলেন। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানো বৌদ্ধ উগ্রশক্তি ও সামরিক বাহিনীর তিনি একনিষ্ঠ সমর্থক। তাদের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের সাফাই গাওয়ার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক আদালতে উপস্থিত হয়ে গেলেন। একটি জাতিকে এভাবে পুরোপুরি মুছে দেয়ার জন্য দায়ী বড় বড় অপরাধীকে তিনি কিভাবে সমর্থন করতে পারলেন? এমন হীন কর্মকাণ্ডের জন্য নোবেল শান্তি কমিটি কিন্তু তার পুরস্কারটি প্রত্যাহার করে নেয়নি; যদিও সু চিকে দেয়া অন্য কয়েকটি পুরস্কার সেগুলোর কর্তৃপক্ষ প্রত্যাহার করেছে। আমেরিকা তথা পশ্চিমাদের নতুন সাম্রাজ্যবাদ ও নোবেল শান্তি পুরস্কারের মাঝে সূক্ষ্ম একটি সম্পর্ক দেখা যায়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমন অনেকে এ পুরস্কার পেয়েছেন যারা পশ্চিমাদের অপছন্দের শাসকের বিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে চীন ও রাশিয়াসহ সমাজতান্ত্রিক ব্লকের বিরোধিতা তাতে বেশি কাজ করেছিল বলে প্রতীয়মান হয়েছিল। ওই সব পুরস্কার দিয়ে মূলত অপছন্দের শাসকদের হেনস্তা করার চেষ্টা করা হতো।
পাকিস্তানি কিশোরী মালালা ইউসুফজাইকে ২০১৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হলো। তাকে চিহ্নিত করা হলো ‘শিশু শিক্ষাকর্মী’ হিসেবে। তার একমাত্র যোগ্যতা তিনি এক দিন স্কুলে যেতে গিয়ে গুলিতে আহত হন। একদল নির্বোধ ব্যক্তি ঘৃণ্য এ হামলার কাজটি করেছে। পরের ইতিহাসটি ভালোভাবে লক্ষ করলে এর ভিন্ন একটি মাত্রা আমরা বুঝতে পারব। কিছু পশ্চিমা বেসরকারি সংস্থা মালালাকে নিয়ে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়। তাকে তারা পশ্চিমা বিশ্বে থাকা পড়াশোনা ও অ্যাক্টিভিজম করার সুযোগ করে দেয়। তার অক্সফোর্ডে পড়াশোনার সুযোগ হয়ে যায়। তার থলিতে যোগ হয় আরো অনেক অ্যাওয়ার্ড। শেষ পর্যন্ত শিশু নারী অধিকার বিষয়ে তাকে আইকন হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো। তার প্রতিটি চিন্তাভাবনা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পশ্চিমা মিডিয়া কাভার করে। টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে তিনি সরব। তসলিমা নাসরিনসহ চরমভাবাপন্ন ব্যক্তিদের সাথে তার যোগাযোগ। বিয়ে নিয়ে তিনি সর্বশেষ যে মন্তব্য করেছেন, তাতে তার চিন্তার বিকৃতির বিষয়টি বোঝা যায়। একটি বৈধ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরিবারের গঠনের ব্যাপারে তার হতাশা ব্যক্ত করলেন। বিয়ে করার চেয়ে ‘অংশীদারিত্ব’ তার কাছে পছন্দ। অথচ মানুষের জন্মের পরিচয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। একটি সুষ্ঠু পরিবার প্রথা ছাড়া মানুষের পরিচয় বিশুদ্ধ রাখা সম্ভব নয়। পশ্চিমা বিশ্বে পরিবার প্রথা ভেঙে পড়েছে। ভবিষ্যতে সেখানে শুরু হতে পারে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা। মালালাকে নোবেল পুরস্কার ও তার পর বিপুল সুযোগ সুবিধা দিয়ে মুসলিম বিশ্বের আদর্শ হিসেবে সামনে রাখতে চাইছে মহল বিশেষ। আর মালালা চিন্তা ও চরিত্রের দিক দিয়ে ইসলামের ধারে কাছেও নেই। তিনি বরং ‘ভিন্ন কিছু একটা’ চালু করতে চান।
মতপ্রকাশের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য ফিলিপাইন ও রাশিয়ার দু’জন সাংবাদিককে পুরস্কার দেয়া হয়েছে। সারা বিশ্বে এমন আরো সাংবাদিকের উত্থানে তারা উৎসাহিত করতে চান। গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা সূচকে ফিলিপাইন ও রাশিয়া তালিকার একেবারে পেছনের দেশ নয়। এমনকি দেশ দু’টি এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়েও এগিয়ে। ভ্যারাইটিস অব ডেমোক্র্যাসির তালিকায় বাংলাদেশ ১৫৪ নম্বরে। ফিলিপাইন আমাদের চেয়ে বেশ এগিয়ে ১০৮ নম্বরে রয়েছে। রাশিয়া রয়েছে ১৫৩ অবস্থানে। ইকোনমিস্টের করা ডেমোক্র্যাসি ইনডেক্সে বাংলাদেশ ৭৬, ফিলিপাইনের অবস্থান ৫৫। সাংবাদপত্রের স্বাধীনতার সূচকে এ দুটো দেশের চেয়ে আমরা পেছনে। আফগানিস্তানও আমাদের চেয়ে এগিয়ে। এ তালিকায় আমাদের অবস্থান ১৫২, ফিলিপাইন ১৩৮ ও রাশিয়া ১৫০।
আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা শেষ হয়ে গেছে। জনগণের প্রতিনিধি বাছাইয়ের সাথে খোদ নির্বাচন কমিশনের আর কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। একজন ব্যক্তি একাই ১০ হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছেন; অথচ এসব ব্যাপারে কথা বলার সুযোগ নেই। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পুরোপুরি ধসে গেছে। গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের এই করুণ দশা এক দিনে হয়নি। দীর্ঘ এক যুগে এমনটি হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র যখন বিকৃতির দিকে রওনা হলো, তখন সাংবাদিক সমাজ কি এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল? উত্তর হচ্ছে ‘না’। আর এখন সাংবাদিকরা নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করতে পারছেন না। সাংবাদিক গুম হয়েছেন, তাদের অবৈধভাবে আটক রাখা হয়েছে, জামিন অস্বীকার করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, রেসা ও দিমিত্রির নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্তি কি আমাদের সাংবাদিকদের সাহস জোগাবে? সেই প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত হতাশাজনকই হবে। মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার অবারিত করার লড়াই দূরে থাক, এ দেশে সাংবাদিকরা নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করার সামর্থ্য রাখেন না।
jjshim146@yahoo.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা