২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিরোধী দলহীন সংসদীয় ব্যবস্থা সফল হয় না

- ফাইল ছবি

সব দেশেই বৃহত্তর গণমানুষের চিন্তাচেতনা অভিপ্রায় ও আকাক্সক্ষার আলোকেই তাদের শাসনব্যবস্থা নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানের সামরিক একনায়কত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিল তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, বৈষম্য-দূর, স্বশাসিত হওয়ার দৃঢ় অভিপ্রায় পূরণের জন্য। দীর্ঘ সেই সংগ্রাম শেষে রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। যাদের নেতৃত্বে দীর্ঘ অভিযাত্রা সম্পন্ন হয়। তারা জনগণের অভিপ্রায় অনুভূতি ও আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে আর নিজেদের চেতনার আলোকে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

বিশ্বে যেসব রাষ্ট্রে বিশুদ্ধ নির্ভেজাল সংসদীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম রয়েছে, সেখানে গণমানুষের ভোটে নির্বাচিত সংসদের গুরুত্ব সমধিক। সংসদ কোনো কোনো রাষ্ট্রে দ্বিকক্ষবিশিষ্টও হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সংবিধানে এককক্ষবিশিষ্ট এই পরিষদকে জাতীয় সংসদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ব্রিটেনে যাকে পার্লামেন্ট, ভারতে ‘লোকসভা’, পাকিস্তানে ইংরেজিতে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি, আর উর্দু ভাষায় বলা হয় ‘কওমি অ্যাসেম্বলি’। আর নেপালে সংসদকে বলা হয় ‘রাষ্ট্রীয় সভা’। যেসব দেশে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা বহাল আছে সেখানে, সেসব দেশের ভাষায় সংসদ বিভিন্ন নামে অভিহিত হয়ে থাকে।
সব রাষ্ট্রেই এসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব সংশ্লিষ্ট দেশে এবং বহির্বিশ্বে সমধিক।

রাষ্ট্রীয় এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্ব এ কারণে যে, সংশ্লিষ্ট দেশে এবং বহির্বিশ্বে সবার দৃষ্টি এই পরিষদের কার্যক্রমের ওপর নিবদ্ধ থাকে। কারণ জনগণ দ্বারা নির্বাচিত এই পরিষদে দেশের অভ্যন্তরীণ নীতি কার্যক্রম যেমন প্রতিফলিত হয়, তেমনি পররাষ্ট্রবিষয়ক তথা অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে পলিসি এই সংসদেই নির্ধারিত হয়। তা ছাড়া সংসদের প্রতি দেশের মানুষের সাগ্রহ দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে এ জন্য যে, তারা জানতে ও বুঝতে চায়, তাদের স্বার্থ ও অধিকার সংরক্ষণে সংসদ কতটা আন্তরিক ও কার্যকর। এসব ব্যাপারে দেশবাসী ক্ষমতাসীনদের ভূমিকার ওপর লক্ষ রাখে, তাদের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে। অন্য দেশের যেসব প্রতিনিধি থাকে, তারাও সংসদের কার্যক্রমের ওপর গভীর নজর রাখে। এই দেশের সাথে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে এখানকার নীতিনির্ধারকদের ভূমিকার ব্যাপারে সতর্ক থাকে তারা। বস্তুত সংসদ নিয়ে যৎকিঞ্চিৎ যা আলোচনা করা হলো তা প্রকৃতপক্ষে সংসদের আদর্শিক অবস্থান থেকে। বাংলাদেশের সংসদের শুদ্ধতা, ভূমিকা, তার প্রতি জনগণের আস্থা, এসব ব্যাপারে প্রচুর প্রশ্ন আছে।

উল্লেখ্য, প্রায় সব দেশের সংসদ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়। কিন্তু কোনো গুরুতর ত্রুটি বা অদক্ষতার কারণে পাঁচ বছরের আগেই সংসদ যদি সদস্যদের আস্থা হারায়, তবে তার বিকল্প হচ্ছে সংসদের প্রতিপক্ষ যদি ক্ষমতা গ্রহণের হওয়ার আগেই নতুন নির্বাচন অনিবার্য।

যাই হোক, সংসদ সব দেশেই শুধু জাতীয় রাজনীতির প্রাণকেন্দ্রই নয়, প্রশাসনিক কার্যক্রমও এখান থেকেই পরিচালিত হয়। এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা, রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী হয়ে থাকেন তথা প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হন। রাষ্ট্রের সব নির্বাহী কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, নির্দেশনায় পরিচালিত হয় বটে। তবে আমাদের সংবিধানের ৫৫ (৪) অনুচ্ছেদ বর্ণিত রয়েছে, ‘সরকারের সব নির্বাহী ব্যবস্থা রাষ্ট্রপতির নামে গৃহীত হইয়াছে বলিয়া প্রকাশ করা হইবে।’

এটা পরিষ্কার থাকা দরকার, সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি সরকারের কোনো পার্ট নয়। রাষ্ট্রপতির পদটি একান্তই আলঙ্কারিক এবং তার কোনো প্রশাসনিক কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও দায়িত্ব নেই। সংবিধানের ৪৮(১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকিবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হইবেন।’ আবার সংবিধানের ৫২(১) ধারা অনুসারে তাকে তথা রাষ্ট্রপতিকে সংবিধান ‘লংঘন’ বা ‘গুরুতর’ অসদাচরণের অভিযোগে অভিশংসিত করা যাইতে পারিবে। ইহার জন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে অনুরূপ অভিযোগের বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের নিকট প্রদান করিতে হইবে; স্পিকারের নিকট অনুরূপ নোটিশ প্রদানের দিন হইতে ১৪ দিনের পূর্বে বা ত্রিশ দিনের পর এই প্রস্তাব আলোচিত হইতে পারিবে না। এবং সংসদ অধিবেশনরত না থাকিলে স্পিকার অবিলম্বে সংসদ আহ্বান করিবেন।’ ৪২(২) রয়েছে, ‘এই অনুচ্ছেদের অধীন কোনো অভিযোগ তদন্তের জন্য সংসদ কর্তৃক নিযুক্ত বা আখ্যায়িত কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কর্তৃপক্ষের নিকট সংসদ রাষ্ট্রপতির আচরণ গোচর করিতে পারিবে।’ ৫২(৩) এ রয়েছে, ‘অভিযোগ বিবেচনাকালে রাষ্ট্রপতির উপস্থিত থাকিবার এবং প্রতিনিধি প্রেরণের অধিকার থাকিবে।’ ৫৫(৪) এ সন্নিবেশিত রয়েছে, ‘অভিযোগ বিবেচনার পর মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে অভিযোগ যথার্থ বলিয়া ঘোষণা করিয়া সংসদ কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করিলে প্রস্তাব গৃহীত হইবার তারিখে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইবে।’

উল্লিখিত অনুচ্ছেদগুলো থেকে দেখা যায়, একে তো রাষ্ট্রপতির কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। সেই সাথে রাষ্ট্রপতি ক্ষমতাসীন দলের কাছে তথা দলনেতার কাছে কতটা অসহায়। সে আলোকে রাষ্ট্রপতির পদটি একেবারেই ভালনারেবল। তবে হ্যাঁ, এটা সত্য যে, কেবল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের অবস্থাটাই এমন নয়। ব্রিটেন ছাড়া অন্য যেসব দেশে সংসদীয় ব্যবস্থা কায়েম রয়েছে, সর্বত্র রাষ্ট্রপ্রধানের পদটি নিছক সৌন্দর্য বর্ধনের বিষয় তার কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। সরকার যদি কোনো ক্ষেত্রে জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা বা অবহেলা করে। তাতে রাষ্ট্রপতির অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি হলেও মুখ ফুটে কিছুই বলার জো নেই। রাষ্ট্রপতিকে সরকারের সব কাজের সমর্থন ও প্রশংসা করতে হয়। আমাদের দেশে রাষ্ট্রপতি সংসদে বা অন্য কোনো ফোরামে যেসব বক্তৃতা, ভাষণ দেন সেখানেও তাকে সরকারের নীতিরই প্রতিফলন ঘটাতে হয়। এর ব্যত্যয় করা সম্ভব নয়। এক সময় ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জ্ঞানী জৈল সিংয়ের সাথে ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের নীতিচিন্তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। ভারতে সেটা রীতিমতো ওপেন সিক্রেটই ছিল। কিন্তু জৈল সিং তার মতপার্থক্যের বিষয়টি কখনো মুখে বা আচার আচরণে প্রকাশ করেননি। বাংলাদেশেও খালেদা জিয়ার সরকারের সাথে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছিল। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিছু ঘটার আগেই অধ্যাপক চৌধুরী রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সরে যান।

রাষ্ট্রপতি পদের অসহায়ত্বের পাশাপাশি সংসদীয় ব্যবস্থায় সরকারপ্রধান তথা প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান সম্পর্কে আমাদের সংবিধান মোতাবেক কিছু বলা দরকার। দেশের সংবিধানের ৫৫(১) ধারায় একটি বর্ণিত রয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি মন্ত্রিসভা থাকিবে এবং প্রধানমন্ত্রী সময়ে সময়ে তিনি যেরূপ স্থির করিবেন, সেইরূপ অন্যান্য মন্ত্রী লইয়া এই মন্ত্রিসভা গঠিত হইবে।’ ৫৫(২) ধারায় রয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বা তাহার কর্তৃত্বে এই সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রযুক্ত হইবে।’ সংবিধানের ৭২(১) অনুচ্ছেদে রয়েছে, ‘সরকারি বিজ্ঞপ্তি দ্বারা রাষ্ট্রপতি সংসদ আহ্বান, স্থগিত ও ভঙ্গ করিবেন...’ এরপর সন্নিবেশিত রয়েছে, ‘তবে আরও শর্ত থাকে যে, এই দফার অধীন তাঁহার দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক লিখিতভাবে প্রদত্ত পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন।’

দেশের সংবিধানের এই সব অনুচ্ছেদের বিধানাবলি থেকে এটা পরিষ্কার হয় যে, দেশের প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান ক্ষমতা কর্তৃত্ব কতটা শক্তিশালী, দৃঢ় ও বিস্তৃত। রাষ্ট্রের ক্ষমতার পুরো বিষয়টাই প্রধানমন্ত্রীর আওতাভুক্ত। এক দিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অনুপস্থিতি, পক্ষান্তরে প্রধানমন্ত্রী সব ক্ষমতার উৎস। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন হতে পারে, দেশে ক্ষমতার ভারসাম্য কিভাবে রক্ষিত হবে! এটা ঠিক যে, এমন অবস্থা শুধু বাংলাদেশেই নয়। যেসব রাষ্ট্রে যেখানে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত। সর্বত্র এই দুই শীর্ষ পদেরই ক্ষমতার বিষয়টি অভিন্ন।

অবশ্য যে দেশে রাষ্ট্রপতি একাধারে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারেরও প্রধান, সেখানে রাষ্ট্রপতি তথা প্রেসিডেন্ট সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট সব সিদ্ধান্ত নেয়ার ও দেয়ার অধিকারী। তবে কংগ্রেস তথা সিনেট সভা ও প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যগণ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার কিছুটা রাশ টানতে পারেন।

বাংলাদেশের সংবিধান রচনার পটভ‚মি হচ্ছে, ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদের ১ম অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি ‘খসড়া শাসনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি’ গঠন করা হয়। ১৯৭২ সালের ১৭ এপ্রিল এই ‘খসড়া শাসনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি সর্বমোট ৭৪টি বৈঠকে মিলিত হয়ে শাসনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়নের জন্য ৩০০ ঘণ্টা ব্যয় করেন। কমিটি নিজেদের ধ্যান-ধারণা ও সুপারিশ বিবেচনা করে তার আলোকে ১৯৭২ সালের ১০ জুন শাসনতন্ত্রের একটি প্রাথমিক খসড়া অনুমোদন করেন। এরপর ড. কামাল হোসেন অন্যান্য দেশের সংসদীয় ব্যবস্থা অবলোকনপূর্বক খসড়া শাসনতন্ত্রের ত্রæটি দূর করার জন্য ব্রিটেন ও ভারতসহ কয়েকটি দেশ সফর করেন। ১৯৭২ সালের ১১ অক্টোবর কমিটি সর্বশেষ বৈঠকে শাসনতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ খসড়া চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশন বসে। সেখানে ড. কামাল হোসেন ‘খসড়া শাসনতন্ত্র’ বিল আকারে উপস্থাপন করেন। এই বিল নিয়ে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ১০টি বৈঠকে মোট ৩২ ঘণ্টা ধরে আলোচনা চলে। এ সময় বিলের ওপর মোট ১৬৩ সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়, তার মধ্যে ৮৪ সংশোধনী প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর খসড়া সংবিধান বিলের ওপর তৃতীয় ও সর্বশেষ পাঠ চলে তাতে দুই ঘণ্টার কম সময় ব্যয় হয়। পরে গণপরিষদ সর্বসম্মতভাবে বাংলাদেশের স্থায়ী সংবিধান অনুমোদন করে। পরে ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর গণপরিষদ আনুষ্ঠানিক অধিবেশনে বসে। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয়। সে সময় সংবিধানের ১৫৩ ধারা চারটি তফসিল ও একটি প্রস্তাবনা সন্নিবেশিত ছিল পরে আরো তিনটি তফসিল সংযোজিত হয়েছিল। পরে দ্বিতীয় তফসিল বিলুপ্ত করা হয়েছে। স্বাধীনতার মাত্র এক বছরের মধ্যেই সংবিধান রচনা কার্যকর করা একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় বটে। তারপর গৃহীত সংবিধানের অধীনে ১৯৭৩ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচিত সরকারের অধীনে রাষ্ট্র পরিচালনা শুরুও একটি বিরল ঘটনা। বাংলাদেশের সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর করা হয়।

ভারতের শাসনতন্ত্র বিশ্বের লিখিত সংবিধানগুলোর মধ্যে দীর্ঘতম। ১৯৪৭ সালের ২৯ আগস্ট বিশিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ ড. ভীমরাও রামজি আম্বেডকরের নেতৃত্বে খসড়া প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। ড. আম্বেডকর ছাড়াও এই কমিটিতে আরো ছয়জন সদস্য ছিলেন। কমিটি একটি খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে তা ১৯৪৭ সালের ৪ নভেম্বরের মধ্যে গণপরিষদে পেশ করে। গণপরিষদ সংবিধান রচনা করতে দুই বছর ১১ মাস ১৮ দিন সময় নিয়েছিল। বর্তমানে ভারতের সংবিধানে একটি প্রস্তাবনা, ২৪টি অংশে বিভক্ত ৪৪৮ ধারা, ১২ তফসিল রয়েছে। ভারতের সংবিধান অনুসারে সেখানে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়। ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান তথা রাষ্ট্রপতি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন না। তিনি সংসদ তথা লোকসভা ও রাজ্য বিধান সভাগুলোর সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। তার সব ক্ষমতা নামসর্বস্ব। রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হয়। প্রধানমন্ত্রী প্রকৃতপক্ষে সব ক্ষমতার উৎস। ভারতের কেন্দ্রীয় পরিষদ ও রাজ্য পরিষদগুলোর মেয়াদ পাঁচ বছর। ভারতের শাসনব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর অনুরূপ। সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলোর মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে দেয়া হয়েছে।

ব্রিটেনের কোনো লিখিত শাসনতন্ত্র নেই। এটা ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। কোনো একটি বিশেষ দিনে বা বিশেষ কর্তৃপক্ষ কোন শাসনতন্ত্র রচনা, গ্রহণ বা কার্যকর করেনি। এই শাসনব্যবস্থার মূল নীতিগুলো বিভিন্ন ধরনের নজির, ঐতিহ্য, প্রথা বা শাসনতান্ত্রিক রীতির মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। যদিও ব্রিটিশ সংবিধানের একটি অংশ লিখিত (যেমন ম্যাগনা কার্টা, বিল অব রাইটস, পিটিশন অব রাইটস, অ্যাক্ট অব দ্য সেটেলমেন্ট, এগুলো সবই লিখিত)। ব্রিটেনে সংসদীয় গণতন্ত্র কায়েম রয়েছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে মাদার পার্লামেন্ট বলা হয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সে দেশের সব ক্ষমতার উৎস। তবে প্রধানমন্ত্রী ও অন্য মন্ত্রীদের পার্লামেন্টের কাছে পরিপূর্ণভাবে জবাবদিহি করতে হয়। সংশ্লিষ্ট বিধি মোতাবেক। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়, এই পরিষদ মহিলাকে পুরুষ আর পুরুষকে মহিলা বানানো ছাড়া আর সব কিছু করার ক্ষমতা রাখে।
ndigantababor@gmail.com
[বাকি অংশ আগামীকাল]


আরো সংবাদ



premium cement