বৈশ্বিক করোনা মোকাবেলায় পাঁচ দিশারি
- সৈয়দ আবদাল আহমদ
- ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:২২
করোনা মহামারীর দাপট কমে আসছে এটি ঠিক। তবে মহামারী নিয়ন্ত্রণে এটি বলার সময় এখনো আসেনি। বিশ্বে এখনো প্রতিদিন করোনাভাইরাসে মৃত্যু সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। অবশ্য আক্রান্তের হার নিম্নমুখী। বাংলাদেশে কয়েক দিন ধরে করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনার সংক্রমণ দুই সপ্তাহ ধরে ৫ শতাংশের নিচে থাকলে মহামারী নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলা যাবে। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী চলছে এক বছর ৯ মাস ধরে। এ সময়ে করোনায় বিশ্বে সাড়ে ৪৭ লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছে। আর সংক্রমণের সংখ্যা ২৩ কোটি ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যু ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আর সংক্রমিত লোকের সংখ্যা সাড়ে ১৫ লাখের বেশি। সামনে শীতকাল। অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ করোনার ‘তৃতীয় ঢেউ’-এর আশঙ্কা করছেন। তবে বেশ কয়েকটি টিকার আবিষ্কার ও প্রয়োগে বিপদের আশঙ্কা ততটা হবে বলে মনে হয় না।
করোনা মহামারী মোকাবেলা এবং এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে টিকা আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে অসংখ্য বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের নিরলস পরিশ্রমে। করোনা মহামারী মোকাবেলা এবং টিকা আবিষ্কারের পথ সুগম করতে বেশ কয়েকজন দিশারির ভূমিকা পালন করেছেন। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’ পত্রিকায় তাদের অবদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের ‘জেনোম’ আবিষ্কারক ও শেয়ারার
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস চীনের উহান থেকে ছড়ায়। আবার চীনেরই একজন বিজ্ঞানীর নিবেদিত কাজের কারণে দ্রুততম সময়ে করোনাভাইরাসের টিকাও আবিষ্কার হয়েছে। তার নাম ড. ঝাং ইয়ংজেন। তিনি চীনের একজন শীর্ষস্থানীয় ভাইরোলজিস্ট এবং ফুডান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তিনিই প্রথম সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসের ‘জেনোম সিকোয়েন্স’ আবিষ্কার বা উন্মোচন করেন। কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি সকালে চীনের সাংহাইতে। সে সময় কয়েক দিনের দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে ভাইরোলজিস্ট ঝাং ইয়ংজেন চীনের উহানে নিউমোনিয়ার মতো অসুস্থতা সৃষ্টিকারী ভাইরাসের তার আবিষ্কৃত ‘জেনোম’ অনলাইনে পোস্ট করে দেন। তার পোস্ট করা এ তথ্য বিশ্বকে দেখিয়েছে যে, এটি একটি নতুন করোনাভাইরাস এবং তা ২০০৩ সালের মারাত্মক প্রাদুর্ভাব ঘটানো সার্স ভাইরাসের মতো একই রকম। জেনোম রহস্য উন্মোচিত হওয়ায় এবং অনলাইনে ড. ঝাং ইয়ংজেনের কল্যাণে তা পেয়ে যাওয়ায় সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা করোনাভাইরাসের মূল প্রোটিন অনুসন্ধান, ডায়াগনস্টিক টেস্ট এবং টিকা তৈরির জন্য উঠেপড়ে লাগেন। সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট ড. লিনফা ওয়াং বলেন, কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সেটি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন।
ভাইরাসটির ‘জেনোম সিকোয়েন্স’ প্রকাশ করা সোজা ব্যাপার ছিল না। ড. ঝাং ইয়ংজেনের পরীক্ষাগারটি ছিল সাংহাইতে। সাংহাই পাবলিক হেলথ ক্লিনিক্যাল সেন্টার নামে এ ল্যাবে ইয়ংজেন ভাইরাসের নমুনা পেয়েছিলেন ৩ জানুয়ারি ২০২০। একই দিন চীন সরকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং ল্যাবগুলোয় ভাইরাসটি সম্পর্কে কোনো প্রকার তথ্য প্রকাশ করতে নিষেধ করে আদেশ জারি করেছিল। এর ৪০ ঘণ্টা পর ৫ জানুয়ারি ২০২০ ইয়ংজেনের গবেষণা দলে একজন সদস্য তাকে সতর্ক করেন যে, ভাইরাসটি সার্সের সাথে সম্পর্কিত মনে হচ্ছে। ইয়ংজেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন যে, এটি সার্সের সাথে ৮০ শতাংশ মিলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি সাংহাই পৌর স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে নতুন ভাইরাসটির কারণে সৃষ্ট হুমকির বিষয়ে অবহিত করেন। তিনি ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ পরিচালিত ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনে (এনসিবিআই) জেনোমের তথ্য আপলোড করে দেন। পরবর্তী কয়েক দিনের মধ্যে এ নিয়ে নেচার ম্যাগাজিনে লেখা জমা দেন এবং উহান পরিদর্শন করেন। ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি বেইজিংয়ের উদ্দেশে ফ্লাইটে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছিলেন। সে সময় অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনবাদী ভাইরোলজিস্ট ও তার দীর্ঘ দিনের সহযোগী ড. এডওয়ার্ড হোমস তাকে ফোন করে ‘জেনোম সিকোয়েন্স’ অনলাইনে প্রকাশ করতে বলেন। বিজ্ঞানের সামগ্রিক স্বার্থে তিনি সেটি ড. হোমসকে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে দিতে অনুমতি দেন। একই সাথে নিজেও প্রকাশ করেন যা বিজ্ঞানী ও গবেষক মহলে সাড়া ফেলে দেয়। দুই দিনের মধ্যে থাইল্যান্ড জেনোম ব্যবহার করে নিশ্চিত হয় যে, ভাইরাসটি চীনের সীমানা অতিক্রম করে থাইল্যান্ডে ঢুকে পড়েছে। মার্কিন গবেষকরা জেনোমের তথ্য ব্যবহার করে করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে লেগে যান। অক্সফোর্ডের গবেষকরাও টিকায় মনোনিবেশ করেন।
সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসকে এত তাড়াতাড়ি চিহ্নিত করা গেছে যে, ইয়ংজেন নিজেও অবাক। ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস চিহ্নিত করতে কয়েক মাস সময় লেগেছিল। তবে পরবর্তী প্রজন্মের সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে করোনাভাইরাসের জেনোম আবিষ্কার করতে ইয়ংজেন সফল হন। এ বিজ্ঞানী অজানা অর্থাৎ নতুন নতুন আরএনএ ভাইরাস নিয়ে কাজ করছেন। উদীয়মান ভাইরাস মনিটরিং করতে ইয়ংজেন চীনের ল্যাবে একটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছেন। জেনোমের তথ্য ভাগাভাগি বা শেয়ার করতে ইয়ংজেন সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে স্বীকৃতি ও প্রশংসা পেয়েছেন। এ জন্য তিনি গর্বিত বলে টাইম ম্যাগাজিনকে সাক্ষাৎকারে জানান। আসলেই ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারির দিনটি চীন এবং বিশ্বের জন্যও ছিল একটি টার্নিং পয়েন্ট, করোনাভাইরাসের জেনোম সিকোয়েন্স প্রকাশের কারণেই।
লকডাউনের স্থপতি
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ‘লকডাউন’ শব্দটি এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পরিচিত। লকডাউনের আর্কিট্যাক্ট বা স্থপতি হলেন চীনা মহামারী বিশেষজ্ঞ এবং হেপাটোলজিস্ট প্রফেসর লি লানজুয়ান। তিনি ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক।
চীনের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি প্রফেসর লি লানজুয়ান এবং আরো কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব পরিমাপে উহানে যান। কিছু দিন পরই উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক লানজুয়ান ‘উহানকে অবিলম্বে লকডাউন’ করার আহ্বান জানান। চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে তিনি হুঁশিয়ারি করেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া অব্যাহত থাকলে অন্যান্য প্রদেশও উহানের মতো নিয়ন্ত্রণ হারাবে। তার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে উহানকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এর দায়িত্বে ছিলেন চীনের গুয়াংজু বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্বাস-প্রশ্বাস বিশেষজ্ঞ ড. ঝং নানশান। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারি ২০২০ থেকে উহানের ভেতরে ও বাইরে সব পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়। মানুষকে বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেয়া হয়। ২৫ জানুয়ারি ২০২০ থেকে শুরু হওয়া চীনের নববর্ষের ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। টানা ৭৬ দিন এই লকডাউন কঠোরভাবে মাপা হয়। লকডাউনের কারণে সংক্রমণ ৮০ শতাংশ হ্রাস পায় বলে প্রমাণিত হয়। লানজুয়ানের অভিমত ও পরিকল্পনার প্রশংসা করে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারী বিশেষজ্ঞ বেন কাউলিং বলেন, এক কোটি ১০ লাখ মানুষের একটি শহরকে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে লকডাউন করে রাখাটা অনন্য ছিল। কোভিডে আক্রান্ত মানুষের যতœ নিতে লানজুয়ান উহানে অবস্থান করেন এবং সঙ্কটে চিকিৎসার প্রতীক হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ পরিকল্পনা দেশে দেশে গ্রহণের আহ্বান জানায়। অনেক দেশই লকডাউন করে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করেছে।
ভ্যাকসিন নেতা
মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজারের ভ্যাকসিন গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ড. ক্যাথরিন জ্যানসেন এরই মধ্যে ‘ভ্যাকসিন নেতা’ হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন। ক্যাথরিন জানতেন যে তিনি একটি বড় ঝুঁকি নিচ্ছেন। যখন কোভিড-১৯ মহামারী আঘাত হানে, তখন মেসেঞ্জার আরএনএর ওপর ভিত্তি করে টিকা তৈরি ছিল একটি অপ্রমাণিত প্রযুক্তি। এর আগে কোনো কোম্পানিই মানুষের মধ্যে এ ধরনের টিকা ব্যবহারের অনুমতি পায়নি। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চে বিশ্বজুড়ে কোভিডে মৃত্যু সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে ক্যাথরিন নতুন ভ্যাকসিন প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করলেন। জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেকের প্রধান নির্বাহী বিজ্ঞানী উগুর শাহিন ক্যাথরিনকে এ টিকার সম্ভাবনা সম্পর্কে অবহিত করলে তৎক্ষণাৎ তিনি এ ঝুঁকি গ্রহণে সিদ্ধান্ত নেন। উগুর শাহিন বলেন, টিকা আবিষ্কারে তাদের সাফল্যের মূল কারিগর ক্যাথরিন; কারণ তিনি পরিশ্রমী, আছে প্রবল বৈজ্ঞানিক কৌতূহল এবং মতামত শোনার ধৈর্য ও সাহস। কোভিড টিকা মানুষের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর হবে এটি তার বিশ্বাস ছিল। তার দল ২০২০ সালের এপ্রিলে কাজ শুরু করে। নভেম্বরে টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ হয়। ২১০ দিনে বিশ্বের অন্যতম কার্যকর কোভিড-১৯ টিকা তৈরির কৃতিত্ব লাভ করেন তারা। ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা আবিষ্কারের জন্য ৬৫০ জনের টিমকে পরিচালনা করেছেন ক্যাথরিন। ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এই টিকা জরুরিভাবে ব্যবহারের অনুমোদন করে।
চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে ক্ষতিকর রোগজীবাণুকে দমনে প্রতিষেধক তৈরির একটি ট্র্যাক রেকর্ড ক্যাথরিনের রয়েছে। মার্ক কোম্পানিতে থাকাকালে তিনি হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) মোকাবেলায় একটি প্রকল্প নেন। এটি যৌন সংক্রমিত সংক্রমণ, যা জরায়ুর ক্যান্সার সৃষ্টি করে। ক্যাথরিনের প্রচেষ্টায় এর ভ্যাকসিন ‘গার্ডাসিল’ আবিষ্কৃত হয়। নিউমোক্সাল টিকার অগ্রগতি সাধন করেন তিনি। এ টিকা নিউমোনিয়া, রক্ত প্রবাহ সংক্রমণ এবং মেনিনজাইটিসের হার হ্রাস করে। গার্ডামিল এখন এ ক্যাটাগরিতে বিশ্বের সর্বাধিক চিহ্নিত টিকার মধ্যে ২ নম্বরে অবস্থান করছে। তবে ২০২১ সালে ফাইজার-বায়োএনটেকের কোভিড-১৯ টিকার বিক্রি আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বিজ্ঞানী উগুর শাহিন বলেন, বিজ্ঞানী ক্যাথরিনের সহযোগিতা তাদের দু’জনকে রণাঙ্গনের সৈনিকের মতো গভীর বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। ক্যাথরিনও উগুর শাহিনকে টিকা আবিষ্কারে অগ্রণী ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান। তাদের টিকা ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকর প্রমাণিত হওয়ায় খুশিতে চোখে পানি এসে যায় বলে তারা গণমাধ্যমকে জানান।
করোনাভাইরাস শিকারি
উরুগুয়ের বিজ্ঞানী গঞ্জালো মোরাটরিওকে বলা হয় করোনাভাইরাস হান্টার বা শিকারি। কোভিড-১৯ মহামারীর এ সময়ে উরুগুয়েতে রাতারাতি তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। তাকে সব মানুষই চেনেন। ড. গঞ্জালো মোরাটরিও মনোভিডিওতে পাস্তুর ইনস্টিটিউটের ইউনিভার্সিটি অব দ্য রিপাবলিকের ভাইরোলজিস্ট। তিনি ও তার সহকর্মীরা দেশের জন্য করোনাভাইরাস পরীক্ষা এবং এটি পরিচালনায় একটি জাতীয় কর্মসূচি তৈরি করেছিলেন, যা কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে দারুণ সহায়ক হয়েছে; অথচ করোনা মহামারী নিকটতম প্রতিবেশী আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে তছনছ করে দিয়েছে।
ড. মোরাটরিও বুঝতে পারেন করোনার প্রাদুর্ভাব এড়ানোর উপায় হলো ব্যাপক পরীক্ষা করা। তবে ডায়াগনস্টিক কিটের সঙ্কট ছিল প্রচুর। ১৩ মার্চ ২০২০ উরুগুয়েতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর মোরাটরিওসহ অন্যদের পরামর্শে সরকার স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে, স্কুল-কলেজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। ফ্লাইট ও সীমান্তে বিধিনিষেধ আরোপ করে। জনগণকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার নির্দেশ দেয়। ততক্ষণে ড. মোরাটরিও এবং সহযোগীরা করোনা শনাক্তে পিসিআর পরীক্ষায় সফল হন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষাটিকে সহজ এবং কার্যকর কিটে রূপান্তরিত করেন। এরপর করোনা পরীক্ষা ল্যাবের জাতীয় নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। এভাবেই বেশি বেশি পরীক্ষা করা হয় এবং কিটও দেশে উৎপাদিত হয়। সঠিক চিকিৎসা, উপযুক্ত ব্যবস্থা এবং পরীক্ষার ফলেই করোনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। মহামারী নিয়ে এখনো সতর্ক উরুগুয়ে।
করোনাভাইরাস বিষয়ে বিশ্বকে সতর্ককারী
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস করোনা মহামারী মোকাবেলায় বিশ্বকে একজন উপযুক্ত সতর্ককারী হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের সাথে তিনি ঝগড়ায় জড়াননি; বরং ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য গবেষকদের মন জয় করেছেন। ওয়াশিংটন ডিসির জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য আইনের গবেষক লরেন্স গোস্টিন বলেন, আধানম গেব্রিয়াসুস সত্যিই অন্যদের জন্য একটি উদাহরণ। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ডব্লিউএইচও চীনের উহানে অজানা ভাইরাসের তথ্য পায়। চীনা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জেনে প্রথমেই সংস্থাটি নিজের সব নেটওয়ার্ককে সতর্ক করেছে। জানুয়ারিতে গেব্রিয়াসুস চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠক করেন। এর তিন দিন পরই তিনি এই ভাইরাস প্রাদুর্ভাবকে ‘জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ বা হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণা করেন। গেব্রিয়াসুস বলেন, আমরা চীন হতে প্রথম রিপোর্ট পাওয়ার পর মুহূর্ত থেকেই ‘অ্যালার্ম বেল’ জোরে এবং স্পষ্ট করে বাজিয়ে দেই। এরপর করোনাভাইরাসকে মহামারী ঘোষণা এবং সদস্য দেশগুলোর করণীয় সম্পর্কে প্রতিদিনই সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়। সব দেশ যাতে টিকা ব্যবহার করতে পারে তার চেষ্টা এখন সে দিকে। গেব্রিয়াসুস বলেন, আমার মনোযোগ এখন কোভিড-১৯ এর শেষ খেলার দিকে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা