২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিভাজন দেয়ালের অবসান চাই

- ফাইল ছবি

জার্মানির রাজধানী বার্লিনের মাঝামাঝি দেয়াল ছিল। বিভাজনের দেয়াল। রুশ-মার্কিনের স্নায়ুযুদ্ধের চরম সময়ে ১৯৬১ সালের সেপ্টেম্বরে এ দেয়াল তৈরি করা হয়। কারণ, পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাওয়া বন্ধ করা। পূর্বে অধীনতা-পশ্চিমে স্বাধীনতা। আরো স্পষ্ট করে বললে পুঁজিবাদ-সমাজবাদের আদর্শিক দ্বন্দ্ব। মার্কস, ‘অর্থনৈতিক নির্ধারণবাদের’ দ্বারা পৃথিবীর তাবত সমস্যাকে অর্থনীতির মোড়কে ব্যাখ্যা করেছেন। তেমনি পশ্চিমা দুনিয়া গণতন্ত্রকে ‘মকরধ্বজ’-সব রোগের মহৌষধ হিসেবে পেশ করেছে। অবশেষে গণতন্ত্র জয়যুক্ত হয়েছে। ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে বার্লিন দেয়ালের পতন হয়েছে।

বার্লিন দেয়ালের কাহিনী জগৎজোড়া। আমাদের সংবাদিক দেয়াল দেশজোড়া। প্রেস ক্লাবের ওই দেয়াল সারা দেশে সাংবাদিক সমাজকে বিভক্ত করেছে। যে কেউ প্রশ্ন করতে পারেন- কোথায় বার্লিন আর কোথায় প্রেস ক্লাব। ‘কিসের সাথে কী সোনার নাকের ঘি’। একটি অনেক অনেক দূরে- সাত সমুদ্র তের নদীর পাড়ে। অপরটি অনেক কাছে। ‘মেঘনা সুরমা নদী তীরে’। একটি অনেক বড় অপরটি অনেক ছোট। তবে এরিস্টটল বলেন, ‘তুমি তোমার চেহারা, ছোট আয়না দিয়েও দেখতে পারো, বড় আয়না দিয়েও দেখতে পারো।’ বার্লিন দেয়াল আর প্রেস ক্লাবের দেয়াল, ভিনদেশে ভিন্নভাবে হলেও দু’টির মধ্যে একটা মিল আছে- দু’টিই দেয়াল। প্রতীকী অর্থে দেয়ালকে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচকভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়। বার্লিনে অথবা প্রেস ক্লাবে দেয়াল অবশ্যই নেতিবাচক।

দেয়াল বাড়িকে ভাগ করে। সম্পত্তি ভাগ করে। অবশেষে হৃদয়ে ফাটল ধরায়। সম্পর্ককে নষ্ট করে। এটি দ্বন্দ্বের প্রতীকও বটে। ব্যক্তিক ও সামষ্টিক অর্থে স্বার্থ, সুবিধা ও আদর্শিক বিভাজনকে নির্দেশ করে দেয়াল। বার্লিন দেয়াল এবং প্রেস ক্লাবের দেয়াল ব্যক্তিক নয়, সামষ্টিক। সামষ্টিক মানে এর ক্যানভাস অনেক বড়। মানচিত্রজুড়ে এর অবস্থান। গোষ্ঠী, স¤প্রদায় এমনকি দেশ-জাতি ও রাষ্ট্রকেন্দ্রিক হতে পারে এ বিভাজন। এই বিভাজনের গহিন গভীরে প্রবেশ করলে আদর্শিক দ্ব›দ্বটি বেরিয়ে আসবে। বার্লিন দেয়ালের বিভাজনে আদর্শিক বিভক্তি রাষ্ট্রীয় সীমানাকে অতিক্রম করেছে। প্রেস ক্লাবের দেয়াল রাষ্ট্রিক সীমানাকে অতিক্রম করেনি। দেশ-জাতি-রাষ্ট্রকে সুস্পষ্ট সীমারেখায় বিভাজন করেছে। উভয় ক্ষেত্রে রাজনীতি স্পষ্ট। কিন্তু সে রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে আদর্শিক সীমারেখা দ্বারা। সেই আদর্শিক দ্ব›দ্ব দল, গোষ্ঠী ও সরকারে প্রতিভাত ও প্রভাবিত হয়েছে। বার্লিন দেয়াল দ্বারা আমরা সরাসরি প্রভাবিত নই; কিন্তু প্রেস ক্লাবের দেয়াল দ্বারা এই দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র বিভাজিত ও প্রভাবিত। সেই বিরাগ ও বিভাজনের গল্পও আদর্শিক।

১৯৯৩ সালের কথা। জনগণের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছে জাতীয়তাবাদী শক্তি। নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এলেন প্রেস ক্লাবে, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হয়ে। ১৯৯১ সালে জনগণের ভোটে পরাজিত অথচ আদর্শিকভাবে প্রভাবিত দেশের ধর্মনিরপেক্ষ অংশ সরকারের ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিভূ বেগম খালেদা জিয়াকে আদর্শিক কারণেই মেনে নিতে পারলেন না। সংবাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেই অসন্তুষ্ট অংশ কালো পতাকা প্রদর্শন করে। দেশের জনগণের সম্মতিতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীকে নানাভাবে বিব্রত করে তারা। তারা ভুলে গিয়েছিল যে, দলীয় বা কোনো গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করেন না- দেশের প্রধানমন্ত্রী তিনি। তারা তাদের সঙ্কীর্ণ দলীয় ও আদর্শিক বিকারে অনমনীয় থাকে। তখনকার সাংবাদিক নেতারা নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। কিন্তু অধিকতর রাজনীতিকেন্দ্রিক গোষ্ঠীটি বিভাজনের পথ বেছে নেয়। তারা নিয়মানুতান্ত্রিকতা, পেশাগত নিরপেক্ষতা ও নীতিবোধকে অগ্রাহ্য করে পৃথক প্যানেল ঘোষণা করে। তাদের প্রাথমিক এই ঘোষণা পরবর্তীকালে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বিভক্তিকে অনিবার্য করে তোলে।

বিভাজনের তীব্রতা এতই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে যে, তৎকালীন প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক ইউনিয়ন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ অবস্থায় চলে যায় বেশ কয়েক বছর। এই সময়ে সাংবাদিক সমাজের বিবেকবান অংশ ঐক্য ও সংহতির জন্য চেষ্টা করেন। অভিযোগ জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতি সহানুভ‚তিশীল অংশ ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনে রাজি হলেও প্রতিপক্ষ অনঢ় থাকে। সাংবাদিক সমাজ আজো ওই পক্ষের একজন নেতাকে স্থায়ী বিভাজনের জন্য দায়ী করেন। এটলাস্ট- ‘দে এগ্রি টু ডিজ এগ্রি’। উভয় গ্রুপের সম্মতির ভিত্তিতে সাংবাদিক ইউনিয়নের অফিসের মাঝখানে দেয়াল তুলে বিভাজনের প্রতিষ্ঠানিকতা নিশ্চিত করা হয়। এর মাঝে পদ্ম, মেঘনা, যমুনায় গড়িয়ে গেছে অনেক পানি। সরকার এসেছে, সরকার গেছে কিন্তু দেয়াল রয়ে গেছে। এই দেয়াল সুবিধা দিয়েছে স্বৈরশাসকদের। এত বছরে কখনোই সাংবাদিকরা তাদের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা, সম্মান ও পেশাগত মর্যাদা উদ্ধার করতে পারেনি। হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো ১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে সাংবাদিকদের ঐক্য এরশাদের পতন অত্যাসন্ন করে তোলে। তার পরের রাজনৈতিক সরকারগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলেছেন সাংবাদিক নেতারা।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে উপযোগের ক্রমহ্রাসমান বিধির মতো সাংবাদিক তথা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হতে থাকে। একপর্যায়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি রহস্যজনকভাবে নিহত হলে সাংবাদিকদের ঐক্য জোরদার হয়ে ওঠে। আন্দোলন বেগবান হয়। শঙ্কিত হয় সরকার। এই সময়ে ওই একই ব্যক্তি রাজনৈতিক ইস্যু এনে ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে দেন। কাকতালীয় হলেও সত্য, ১৯৯৩ সালে যে আদর্শিক বিভাজনকে কেন্দ্র করে বিভাজন ঘটে সেই একই ইস্যুর প্রধান্য দেখা যায়। সাংবাদিক সমাজের এই বিভাজন সরকারকে আরো কর্র্তৃত্ববাদী হওয়ার সুযোগ এনে দেয়। সাংবাদিক সমাজ ক্রমশ হত্যা, গুম, নিপীড়ন ও জেল-জুলুমের শিকার হয়ে দাঁড়ায়। এর সর্বশেষ নমুন হচ্ছে ছয়টি সংগঠনের ১১ জন সাংবাদিক শীর্ষ নেতার ব্যাংক হিসাব তলবের ঘটনা।

জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ শীর্ষ চারটি সংগঠনের ১১ নেতার ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে স¤প্রতি বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট- বিএফআইইউ। অভিযুক্ত ছয় সংগঠনের পদাধিকারী দু’জন করে ১২ জনের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা হওয়ার কথা। মাঝখানে একজন নেই। কেন এই শুভঙ্করের ফাঁকি? ব্যাংক হিসাব তলবের বিষটি সাংবাদিকদের মনে ভয়ভীতি সৃষ্টির কৌশল বলেই মনে করে সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠনগুলো। এসব সংগঠন হচ্ছে জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে (দুই গ্রুপ), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে (দুই গ্রুপ), ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি-ডিআরইউ। সব ইউনিয়ন একত্রিতভাবে এখন আন্দোলন করছে। উল্লেখ্য, কোনো পেশাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা এই প্রথম।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন ঘটনা। সাধারণভাবে পেশাজীবী সম্প্রদায়- সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষক এবং শিল্পীদের মানুষ সম্মানের চোখে দেখে। এর মধ্যে সাংবাদিকতা হচ্ছে সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত পেশা। আজকালকার যুগে তাদের পেশাগত ও পরিবেশগত বেশ উন্নয়ন ঘটেছে। আমাদের যুবাকালে এটিকে কেউ চাকরি বলে গণ্য করত না। বিষয়টি ছিল টিউশনি বা খণ্ডকালীন মর্যাদার। আমি স্নাতক পর্যায় থেকে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলাম। আমার শিক্ষক পিতা লোকদের বলতেন, এখনো চাকরি পায়নি, ছেলে সাংবাদিকতা করে। সাংবাদিকতা পেশাকে মহৎ পেশা মনে করা হতো। সেই সাথে সরলতা, সহজতা ও অসচ্ছলতা ছিল তাদের জীবন বৈশিষ্ট্য। আমি সেই সময়ে এমন কোনো সাংবাদিকের চেহারা মনে করতে পারছি না যে বা যারা চেহারায়, পোশাকে ও জীবনাচারে বড়লোকি ভাবের ছিলেন। সন্দেহ নেই, হিসাব তলবের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জীবনকে সন্দেহজনক করা হয়েছে। একটি প্রচলিত কথা এরকম যে- যারা যেমন মানুষ তারা তেমন চিন্তা করে।

এখন এ দেশের শাসকদের এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া ভার হবে, যারা লাখপতি বা কোটিপতি নয়। তাদের হয়ে যারা চিঠি দিয়েছেন সেসব প্রতিষ্ঠানও হয়তো ওইরকম। নইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কী করে কোটি কোটি ডলার লোপাট হয়ে যায়। সাংবাদিক সমাজ মনে করে, যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত হতেই পারে। কিন্তু পেশার বিরুদ্ধে বিশেষ করে সাংবাদিকতার মতো স্বচ্ছ পেশায় অসচ্ছতা খোঁজা অবশ্যই উদ্দেশ্যমূলক। তারা আরো বলেন, সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাবে যদি কোনো অস্বাভাবিক লেনদেন কিংবা কোনো ধরনের মানিলন্ডারিং বা জঙ্গি অর্থায়নের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় তা যেন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। তবে জনগণের ধারণা সাংবাদিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সরকারকে হতাশ করবে। অবশ্য তিলকে তাল করে তোলার যোগ্যতাও এদের কম নয়।

একটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার একজন সরাসরি শিক্ষক পাকিস্তানের একটি বিশ^বিদ্যালয়ে কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। তিনি দেশে ফেরার পর তার পাওনা-দাওনার একটি ক্ষুদ্র অংশ তার অ্যাকাউন্টে আসে। আমাদের পারঙ্গম একটি এজেন্সি তাকে সন্ত্রাসের জন্য অর্থায়নের অভিযোগে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন দেয়। আমার ওই মহান শিক্ষককে যে ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়েছে তা অবর্ণনীয়। এরকম যেন না হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিষয়টিকে অপ্রত্যাশিত বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় পুরোপুরি ভুল বোঝাবুঝির মাধ্যমে চিঠিটি গেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এভাবে যাওয়া উচিত হয়নি।’ এই সরকারের কলাকৌশল সম্পর্কে যারা জানেন তারা বলেন, এর মাধ্যমে সরকার যা করতে চেয়েছে প্রতিষ্ঠানিক পর্যায় হয়তো তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। প্রতিষ্ঠান হয়তো বুঝেছে বিষয়টি পাইকারি। অথচ বিষয়টি ছিল হয়তো খুচরা। ব্যক্তি ও সরকারবিরোধীদের শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যটি হয়তো সাধারণ হয়ে গেছে। আইনজীবী শাহদীন মালিক একে মুক্তচিন্তা ও স্বাধীন সাংবাদিকতাকে আরো ক্ষুণ্ন ও সীমাবদ্ধ করার কর্তৃত্ববাদী প্রয়াস হিসেবেই দেখছেন। তিনি সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে বলেন, ‘... আইন অনুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোনো ব্যক্তির... সুনাম (এর)... হানি ঘটে...।’

বিগত ১২ বছরে সাংবাদিকদের দমন-পীড়নে এত সব ঘটনা ঘটেছে যে, তা বর্ণনা করলে এক মহাকাব্য রচিত হবে। এসব অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা যে প্রতিবাদ আন্দোলন করেননি এমন নয়। তা একটুও ফলপ্রসূ হয়নি এই কারণে যে, সাংবাদিকরা থেকেছেন একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন। অনৈক্যই তাদের সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিমত এসেছে, ‘গণতন্ত্রের অব্যাহত ক্ষয় সাধন রোধে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ধারাবাহিক ব্যর্থতার পটভ‚মিতে মুক্ত সংবাদমাধ্যমের টিকে থাকা যখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে, তখন আরো বেশি হতাশার কারণ হয়েছে সাংবাদিকদের অনৈক্য। বলা যায়, ‘রাজনৈতিক বিভাজনের ধারায় সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর বিভক্তিতে লাভবান হয়েছে সরকার।’

সরকার একশ্রেণীর সাংবাদিককে অন্যায় সুবিধা দিয়ে একান্ত নিজের করে রেখেছে। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে, এদের সংখ্যা কম করে হলেও ৫০০। সরকার এদেরকে টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও অনলাইন পোর্টালের অনুমতি দিয়েছে। সরকারি প্লট, বিদেশী দূতাবাসে চাকরি, অনুদান ও নানা প্রকারে তাদের মাথা কিনে নিচ্ছে। আর বিপরীত ধারার সাংবাদিকরা হত্যা, গুম, মামলা-হামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের রাজনীতিবিদরা জনবিচ্ছিন্নতার কারণে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে তার আঁচ পাওয়া যায়। সাংবাদিক সমাজ অব্যাহতভাবে আমলাতন্ত্রের দুর্নীতি ফাঁস করে চলেছেন।

অনেকেই অনুমান করেন, সর্বোচ্চ পর্যায়কে বিভ্রান্ত করে আমলারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাইছে। রাজনৈতিক কর্তৃত্বের শক্তি প্রয়োগের নীতি এবং তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারে সংবাদমাধ্যম তথা সাংবাদিকতা এক অভ‚তপূর্ব প্রতিকূলতা অতিক্রম করছে। এ অবস্থায় সাংবাদিকদের ঐক্য যদি অর্জিত না হয় তাহলে বাংলাদেশের গণমাধ্যম অনতিক্রম্য সঙ্কটে পড়বে। যে আদর্শের দ্বন্দ্ব প্রেস ক্লাবে দেয়াল তুলেছে তার অবসান হতে হবে। তবে তা আদর্শের বিসর্জন দিয়ে নয়। উত্তম পেশাদারিত্ব, গণতান্ত্রিক সহনশীলতা, নিয়মতান্ত্রিকতা ও উদার নেতৃত্বের মাধ্যমেই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হতে পারে। গোটা জাতি আশা করে- লোভ-মোহ, স্বার্থ-সুবিধা, অগ্রাহ্য করে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শক্তি ও সাহস আমাদের সাংবাদিক সমাজের রয়েছে।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement