২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নির্বাচন এগিয়ে আনা হচ্ছে কি!

- ফাইল ছবি

দেখে শুনে মনে হয় যেন নির্বাচনের পূর্বাভাস আসছে। বিধি মোতাবেক আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। সাধারণত নির্বাচিত সংসদের প্রথম অধিবেশনকে সময়কাল ধরে পরবর্তী পাঁচ বছর পর নির্বাচন হওয়ার কথা। পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী সংসদ মেয়াদকাল শেষ হওয়ার আগের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। গোটা বিশ্বে প্রচলিত নিয়ম হলো- মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। আর এখন এখানে পূর্ববর্তী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হচ্ছে। এরকম আজব বিধানের অর্থ সম্ভবত জনগণের রোষ থেকে নিজেদেরকে সুরক্ষা প্রদান। কোনো কারণে বা জনরোষে যদি নির্বাচন করতে গিয়েও নির্বাচন করা না যায়, তাহলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অধিবেশনে বসে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো মেয়াদকাল বাড়িয়ে নেয়া যায়।

বাংলাদেশে ২০২৩ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনুরূপ অস্বাভাবিক ঘটনার অবতারণা হতে পারে বলে রাজনৈতিক তথ্যাভিজ্ঞ মহলের ধারণা। ২০১৪, ২০১৮-এর নির্বাচনী পরিণতি বিবেচনা করে ২০২৩ সালের নির্বাচনে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করবে না বলেই অনুমান করা যায়। কারণ ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়। তবে এ কথাও ঠিক, ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয় না। আর এ দেশে তো যে ‘কাউয়া’র অভাব হয় না, জনাব ওবায়দুল কাদেরের সৌজন্যে আমরা তা জেনেছি। অতীত প্রমাণ করে, তোষামোদি, চাটুকার এবং সুলভে ক্রয়যোগ্য রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে এ ধরনের নির্বাচন অসম্ভব নয়। ১৯৮৬ সালে টাকার বিনিময়ে স্বঘোষিত বেঈমানরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। ১৯৮৮ সালে গোটা জাতি যাদের সম্মান করা উচিত বলে মনে করে এমন লোকেরা দুনিয়ার বৃহত্তম বোগাস নির্বাচনী জোট উপহার দিয়েছিল। ১৯৯৬ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয় সংযোজনের জন্য অপ্রয়োজনীয় বোগাস নির্বাচন হয়েছিল। সুতরাং ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে যা দেখেছেন তা অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে ‘বৃহত্তর সংস্করণ’ মাত্র। রাজনীতিবিদদের কখনোই কোনোকালে দুর্বুদ্ধি ও দুষ্কৃতির আশ্রয় নেয়া উচিত নয়। সার্বিকভাবে সততার সাথে তাদের শতভাগ জনগণের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করতে হবে। নইলে কোনো না কোনো পর্যায়ে বিপর্যয় তাদেরকে গ্রাস করবে। অতীতের রাজনীতিবিদরা তাদের দলকে ডুবিয়েছেন, সেই সাথে ডুবিয়েছেন গোটা জাতিকে। বর্তমানের রাজনীতিবিদদের জন্য অসম্ভব পরিণতি অপেক্ষা করছে। ক্ষমতাসীনরা বারবার বলেছে, পরিবর্তন হলে লাখ লাখ নেতাকর্মীর রক্তনদী সৃষ্টি হবে। এটা অমূলক নয়। আমার প্রশ্ন- এই আশঙ্কা শুধুই কি ক্ষমতা বদলের? এটা কি সত্য নয় ‘পাপে পাপ আনে, পুণ্যে আনে সুখ?’ তারা পাপকে পরিহার করে কেন পুণ্যের কথা ভাববেন না! কেন তাদের শীর্ষ রাজনীতিবিদদের বিনয়ী হওয়ার, ঔদ্ধত্য প্রকাশ না করার উপদেশ দিতে হবে বারবার?

নেতা-নেত্রীরা যখন এসব উপদেশ দেন, নিশ্চয় তারা ময়দানের খবর রাখেন। সুতরাং রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণকে তুষ্ট করার নীতির পরিবর্তে অসন্তুষ্ট করার নীতি কেন তারা অব্যাহত রাখবেন? জনগণের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াই যদি রাজনীতি হয়, তাহলে নেতা-নেত্রীরা কেন পরাজয় স্বীকারের মানসিকতা রাখেন না! ১৯৭৫ সালের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে ২১ বছর পর হলেও আওয়ামী লীগ কি ক্ষমতাসীন হয়নি? ২০২৩ সালে ১৫ বছর পর সেই নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করলে তা কি অস্বাভাবিক হবে? তবে শর্ত একটাই, নির্বাচনটি নিরপেক্ষ হতে হবে। জনগণ যে একটি পরিবর্তন উন্মুখ অবস্থায় আছে, এ খবর ক্ষমতাসীন শীর্ষ নেতৃত্বের অজানা নয়। মনে রাখতে হবে, শুধু উন্নয়ন জনগণের মনোতুষ্টির জন্য যথেষ্ট নয়। তারা চায় গণতন্ত্র। তারা চায় স্বাধীনতা। একজন আইয়ুব খান উন্নয়নের এক দশক দেখিয়েও ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। একজন এরশাদ উন্নয়নের জয়গান গেয়েও বিদায় নিয়েছেন। তার কারণ, জনগণ চায় আরো কিছু। তার নাম গণতন্ত্র। সুতরাং উন্নয়নের মূলমন্ত্র নামক গণতন্ত্রের ভোজবাজি দিয়ে যে বেশি দিন চলা যাবে না তা স্পষ্ট। মানুষের কাছে স্বাধীনতার মূল্য আছে। আপনাকে যদি বলা হয়, কাশিমপুর জেলে থাকবেন। প্রতিদিন সেখানে কোরমা-পোলাও ও কোফতা-কাবাব খাওয়ানো হবে- আপনি কি জেলে থাকবেন? থাকবেন না। এই কারণে থাকবেন না, আপনি স্বঅধীনতায় অর্থাৎ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন। অধীনতা তা যতই আরাম আয়েশের হোক, তা কোনো ব্যক্তি বা জাতির কাম্য হতে পারে না। লিবিয়ার নেতা মোয়াম্মার আল গাদ্দাফিকে প্রাণ দিতে হয়েছিল এ জন্য যে, তিনি জনগণকে উন্নয়ন দিয়েছিলেন আর কেড়ে নিয়েছিলেন স্বাধীনতা। ৭০ বছর পর সোভিয়েত ইউনিয়নে সর্বহারার একনায়কত্বের অবসান হয়েছিল। তা এই জন্য যে, মানুষ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে।

আওয়ামী লীগ তৃতীয় মেয়াদে তৃতীয় বছর অতিক্রম করছে। আরো পুরো দুই বছর আছে ক্ষমতায় থাকার স্বাভাবিক সুযোগ। তৃতীয় বছরে এই মুহূর্তে তারা নির্বাচনের কথা বলছে। প্রধানন্ত্রী বলেছেন, ‘নির্বাচন আসছে। কাজেই দলকে আরো শক্তিশালী করে তোলার বিষয় আমাদের মনোযোগী হতে হবে।’ আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে তৃণমূল পর্যায়ে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেন তিনি। (দৈনিক ইত্তেফাক, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১) বিষয়টি প্রধান বিরোধী দল গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেছে বলে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। ‘বিএনপির ১১ সেপ্টেম্বরের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচিত হয় বিষয়টি। সরকারের মেয়াদ এখনো দুই বছরের বেশি সময় থাকা সত্তে¡ও কেন নির্বাচনের প্রসঙ্গটি এলো- প্রশ্ন তোলেন তারা। তারা বলেন, এত আগে সাধারণত ক্ষমতাসীনদের থেকে নির্বাচনের কথা বলা হয় না । কেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের কথা বলছেন, বিষয়টি ভেবে দেখার মতো’। (নয়া দিগন্ত, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১)।

প্রধানমন্ত্রীর উক্তি এবং বিএনপির ভাবনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মন্তব্য- তাহলে কি সরকার নির্বাচন এগিয়ে আনার চিন্তা করছে? জনগণ ভাবছে ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’। সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আগাম নির্বাচন বা মধ্যবর্তী নির্বাচন রীতি পদ্ধতিরই অংশ। সাধারণত তিনটি কারণে আগাম নির্বাচন বা মধ্যবর্তী নির্বাচন হতে পারে। প্রথমত, যদি সরকার সংসদে আস্থা ভোটে পরাজিত হয় বা গরিষ্ঠতার সঙ্কট প্রামাণ্য হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, সরকার যদি বড় ধরনের রাজনৈতিক সঙ্কট বা গণ-আন্দোলনের সম্মুখীন হয়। তৃতীয়ত, সরকার যদি মনে করে তাদের জন্য আগাম নির্বাচন রাজনৈতিকভাবে সুফল বয়ে আনবে। অর্থাৎ তারা যদি বড় জনপ্রিয়তার গ্যারান্টি পায়- তাহলে তারা ভবিষ্যৎ ক্ষমতাকে আরো সুদৃঢ় এবং দীর্ঘায়িত করার জন্য ‘সুবিধাজনক ব্যাসার্ধ’ নেয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে এই তিনটি কারণের একটিও প্রযোজ্য নয়।

তবে তথ্যাবিজ্ঞ মহল মনে করে, দূরদর্শী এবং কৌশলী প্রধানমন্ত্রী নানা কারণে আগামী বছরকে তাদের জন্য সুবিধাজনক বছর মনে করতে পারেন। ক. দেড় বছরে অতিক্রান্ত করোনাকালে আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক আন্দোলন মুক্ত ছিল। করোনা-সঙ্কট মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ মনে করে, তারা যথেষ্ট সফলতার পরিচয় দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দলের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সন্তোষের সাথে বলেন, এবারের করোনাভাইরাসের সময় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সেভাবে আর কেউ দাঁড়ায়নি। সরকারের করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রমেরও তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রীর এ সন্তোষ তাকে অধিকতর আস্থাশীল করে তুলতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, এটি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আসে প্রাকৃতিকভাবে আর যায়ও প্রাকৃতিকভাবে। সরকারের ব্যবস্থাপনা এ ক্ষেত্রে খুব কমই ভ‚মিকা রাখে। তবে ঝড়-বাদলে কাক মরলেও সেখানে ফকিরের কেরামতি ঝাড়ার সুযোগ রয়েছে। সে সুযোগ নিশ্চয়ই তারা হেলায় হারাবেন না। খ. সরকার বলছে, দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে। সরকারের এসব উন্নয়ন কার্যক্রম সর্বত্র দৃশ্যমান। বিশেষ করে মেগা প্রকল্প- পদ্মা সেতু, ঢাকার এক্সপ্রেস রেলওয়ে, চট্টগ্রামের পাতাল রেলওয়ে ইত্যাদি প্রকল্পগুলো আগামী বছরের শেষ নাগাদ বাস্তবায়িত হবে। সারা দেশে এ বছরই বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হবে। সরকার এসব উন্নয়নকে তার নির্বাচনী সফলতার কাজে লাগাতে চাইলে আগামী বছরই উত্তম সময়। বেশি দেরি হলে মানুষ ভুলে যাবে এসব কিছু। গ. যদিও ২০১৪ বা ২০১৮ সালেও তারা জনমতের তোয়াক্কা করেনি। নির্বাচন প্রকৌশলের মাধ্যমে জয়লাভ করেছে। তারপরও দৃশ্যমানতা, পারিপাশির্^কতা ও বহির্বিশে^ প্রদর্শনীর ব্যাপার আছে। সবকিছু মিলিয়ে নির্বাচন এগিয়ে আনাকে তারা যৌক্তিক মনে করছে।

ঘ. বহির্বিশ্বের সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলো- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেনের বিজয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য কোনো অনুকূল ঘটনা নয়। তারা ট্রাম্পের আস্থা অর্জন করেছিল। ট্রাম্প অনুরূপ শক্তি প্রয়োগের কৌশলে ঐকমত্য থাকায় তারা অধিকতর নিরাপদ ছিল। ঙ. ভারত নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ফ্যাক্টর। ২০১৪ সালে প্রত্যক্ষভাবে এবং ২০১৮ সালে পরোক্ষভাবে ভারতের সমর্থন আওয়ামী লীগের প্রতি ছিল। এখন খোদ ভারতেই মোদি সরকারের ক্ষমতা হ্রাসের লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সে ক্ষেত্রে ২০২৪ সালের আগে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় থাকতেই সুবিধা নিতে চায় আওয়ামী লীগ। চ. অভ্যন্তরীণ কোন্দলের দ্বারা আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের শত্রু- তা আজকাল প্রদর্শিত হচ্ছে। আগাম নির্বাচন দিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্বে ক্ষত-বিক্ষত আওয়ামী লীগ ঐক্য ও সংহতি জোরদারের চেষ্টা করতে পারে। ছ. আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে ততই নানামুখী ষড়যন্ত্র বৃদ্ধি পাবে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার জন্য বহির্বিশ্বে ক্ষমতাসীন সরকার রাষ্ট্রদূতদের মাধ্যমে নানাবিধ ক‚টনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অপর দিকে সাধারণ স্বাভাবিক ফেসবুকের মতো গণমাধ্যমকে মোকাবেলার জন্য এক লাখ এজেন্ট নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদের কাজ হবে ফেসবুকে যে ন্যূনতম স্বাধীনতা রয়েছে তা খর্ব করা। সেই সাথে যারাই একটু আধটু সরকারবিরোধী স্ট্যাটাস দেবে তাদের বিরুদ্ধে মামলার পর মামলা দিয়ে যাওয়া।

প্রধানমন্ত্রী নিঃসঙ্কোচে বলেছেন, প্রথমত উকিল নোটিশ পাঠাবেন। তারপর আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। বিএনপি মহাসচিবের দেয়া তথ্য মোতাবেক ৩৫ লাখ মানুষ মামলার আসামি রয়েছে। এই এজেন্টদের করুণায় মামলায় পড়া মানুষের সংখ্য কোটিতে পৌঁছতে পারে। সরকার যদি নির্বাচন এগিয়ে আনে তাহলে এই লক্ষাধিক মামলাবাজ বিরোধী দলের প্রতিটি কর্মীকে শাসানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জ. বর্তমান সময়ে আকস্মিকভাবে সরকার রাজনৈতিক নেতাদেরকে নতুন করে গ্রেফতার করছে। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে তা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন নেতারা। এখন রাজনৈতিক দলগুলো ঘরের মধ্যে কর্মিসভা করারও অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। বিএনপি ঢাকা মহানগর খিলক্ষেত থানার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে আয়োজিত কর্মিসভায় পুলিশ বাধা দেয় ও ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতা, পাতিনেতারা আস্ফালন করছেন।

আগাম নির্বাচন বা মধ্যবর্তী নির্বাচন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত। উপরোক্ত নেতিবাচক বিষয়গুলোর পরও রাজনীতিতে বিশ্বাসী মানুষ বিশ্বাস করতে চায়, যেকোনো নির্বাচন গণতন্ত্রের দ্বার উন্মোচনের সুযোগ করে দেয়; কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে- অতীতের নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে এটি আতঙ্কের বিষয় যে, প্রত্যাশিত নির্বাচন তার নেতিবাচক চরিত্রের দিক দিয়ে আরো কঠিন হবে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতাসীন রয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের ক্ষমতা ও দাপট বেড়েছে। তারা আগামী নির্বাচনে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠতে পারে বলে রাষ্ট্রচিন্তাবিদরা মনে করেন। আগামী নির্বাচনে বিরোধী দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে ন্যায্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা দেখাতে পেরেছে, তারও তোয়াক্কা করবে না আওয়ামী লীগ সমাগত নির্বাচনে। বিএনপিকে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না বলেই গতিবিধি দেখে আমাদের সন্দেহ। সে ক্ষেত্রে একতরফা বা বাকশাল কায়দায় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে আওয়ামী লীগ। তবে শেষ কথা বলার সময় আসেনি এখনো। ক্ষমতাসীনদের জন্য এটি অবশ্যই একটি অপ্রিয় সত্য যে, ‘দিনে দিনে বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ’।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement