২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

হর্সশু বাদুড়ই করোনার উৎস!

-

করোনাভাইরাসের উৎস সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনো শতভাগ নিশ্চিত হননি। ভাইরাসটির উৎস কোথায়, প্রাণী না ল্যাব লিক সে বিতর্ক এখনো চলমান। তবে সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণা ও অনুসন্ধানের পর বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মোটামুটি একমত করোনাভাইরাসের উৎপত্তি প্রাকৃতিকভাবেই হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত করে সম্প্রতি যে মূল্যায়ন রিপোর্ট দিয়েছে, তাতেও এমন ইঙ্গিতই দেয়া হয়েছে। আমেরিকার নীতিনির্ধারকরাও এ নিয়ে এখন চুপ, তেমন উচ্চবাক্য করছেন না।

বিশ্বব্যাপী প্রায় দুই বছর ধরেই চলছে করোনা মহামারী বা অতিমারী। অতি ক্ষুদ্র অদৃশ্য এই করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৪৬ লাখ লোক মারা গেছে এবং পৌনে ২৩ কোটি লোক আক্রান্ত হয়েছে।

বিশ্বখ্যাত ‘সায়েন্স’ সাময়িকীর সর্বশেষ সংখ্যায় করোনাভাইরাসের উৎসের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’ ও ‘ল্যানসেটেও’ বিজ্ঞানীদের যৌথ বিবৃতি ও গবেষণাধর্মী লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এতে অনেকটা খোলাসা হয়েছে যে, করোনাভাইরাস বাদুড় থেকেই অন্য একটি প্রাণীর মাধ্যমে মানুষে মানুষে ছড়িয়েছে। সেই বাদুড়টা হচ্ছে বিশেষ প্রজাতির ‘হর্সশু বাদুড়’।

মহামারীর শুরুতেই বিজ্ঞানীরা ‘হর্সশু বাদুড়’কে করোনাভাইরাসের জন্য সন্দেহ করেছিলেন; কারণ এর আগে ২০০২ সালে সার্স ভাইরাসের জিনের গঠনও হর্সশু বাদুড়ে থাকা ভাইরাসের জিনের সাথে মিলে গিয়েছিল। বর্তমানে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস অর্থাৎ করোনাভাইরাসের জিনের গঠনের সাথে হর্সশু বাদুড়ের জিনের গঠনের মিল পাওয়া গেছে। তবে বিজ্ঞানীরা বলেন, হর্সশু বাদুড় সরাসরি মানুষের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে দেয়নি। মানুষ ও বাদুড় দুইয়ের মাঝখানে আরেকটি প্রাণী এটি ছড়িয়েছে। আর সেটি প্যাংগোলিন (বাংলাদেশে ‘বনরুই’ নামে পরিচিত)। অবশ্য অন্য কোনো প্রাণীও হতে পারে, যা চীনের উহানের বন্যপ্রাণী বেচাকেনার বাজার থেকে মানুষে ছড়িয়েছে। বিজ্ঞানীরা নভেল করোনাভাইরাস ছড়ানোয় মানুষের কর্মকাণ্ডকেও দায়ী করেছেন। তাদের মতে, বন্যপ্রাণীর আবাসভ‚মিতে মানুষের অনুপ্রবেশ, সেগুলোর আবাসভ‚মি ধ্বংস বা বিনষ্ট করা, বন্যপ্রাণীর ব্যবসা, এক জায়গায় আটকে রাখা, পাচার করা ও খাওয়া এ ধরনের কাজের ফলে ওই সব বন্যপ্রাণীর প্রজাতির মধ্যে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি করে। এককথায় প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস করা হলে ‘জুনেটিক’ রোগ অর্থাৎ প্রাণীর দেহে সৃষ্ট রোগ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ঝুঁকিপূর্ণ রোগগুলোর বাহক হিসেবে যেসব প্রাণীকে মনে করা হয়, বাদুড় এর মধ্যে অন্যতম। একমাত্র অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ ছাড়া বিশ্বের সর্বত্রই বাদুড় আছে এবং এর প্রজাতির সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। স্তন্যপায়ীদের মধ্যে বাদুড়ের সংখ্যাই ২০ শতাংশ। নিরীহ মনে হলেও নভেল করোনাভাইরাস, সার্স, মার্স, মারবার্গ, ইলোনা, হেন্দ্রা, নিপাহর মতো প্রাণঘাতী ভাইরাসসহ অন্তত ১৩০টির বেশি প্রজাতির ভাইরাস বহন করে বাদুড়। এর মধ্যে হর্সশু বাদুড়ের দেহেই এসব প্রাণঘাতী ভাইরাস বেশি পাওয়া যায়। হর্সশু বাদুড় নামের কারণÑ এ শ্রেণীর বাদুড়ের নাকের উপরটা ঘোড়ার খুরের আকৃতির।

করোনাভাইরাস ল্যাব লিক না প্রাকৃতিক?
কোভিড-১৯ মহামারীর প্রথম বছরেই ‘ল্যাব লিক’ বা ল্যাব থেকে ভাইরাসটির ছড়ানোর তত্ত¡টি আলোচনায় আসে। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, সার্স-কোভ-২ চীনের উহানের একটি পরীক্ষাগারে সৃষ্টি হয়েছে এবং তিনি এটিকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু তিনি এর সপক্ষে কখনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি। বিজ্ঞানীরাও তার কথাকে মূল্য দেননি।

তখন একদল গবেষক ল্যানসেট ম্যাগাজিনে একটি চিঠিতে ল্যাব থেকে করোনাভাইরাসের জন্মের ধারণাকে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত¡’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। তার পর এ নিয়ে উচ্চবাচ্য শুরু হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিøউএইচও) যৌথ মিশন বা জয়েন্ট মিশন করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য উৎস অনুসন্ধান করতে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে চীনে একটি বৈজ্ঞানিক দল পাঠায়। তাদের প্রতিবেদনে ল্যাব দুর্ঘটনাকে ‘একেবারেই অসম্ভব’ বলে বর্ণনা করা হয়।

কিন্তু গত বসন্তে দৃষ্টিভঙ্গি হঠাৎ বদলাতে শুরু করে। একজন প্রবীণ বিজ্ঞানবিষয়ক সাংবাদিক অভিযোগ করেন ল্যাব লিক সম্পর্কে ‘যথেষ্ট প্রমাণ’ থাকার পরও মূলধারার গণমাধ্যম তা উপেক্ষা করছে। এ অবস্থায় নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ল্যাব-লিকের বিষয়টি তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেন।

ভাইরোলজি ও বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানের নেতাসহ ১৮ জন বিজ্ঞানী ২০২১ সালের মে মাসে নেচার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি চিঠিতে ল্যাব লিক অনুমান নিয়ে আরো সুষম মূল্যায়নের আহ্বান জানান। এরপর এ নিয়ে আর বড় ধরনের কোনো গবেষণা হয়নি। গত ২৪ আগস্ট মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়ন বাইডেনের কাছে উপস্থাপন করা হয়। এতে কোনো চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়নি, কিন্তু ভাইরাসটি প্রাকৃতিকভাবে উৎপত্তি হয়েছে বলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। এর পর থেকে আমেরিকায় আর এ নিয়ে তেমন শোরগোল হচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পর যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরাও পিছু হটেছেন। তবে শিগগিরই এ নিয়ে আর কোনো প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। এ নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য সেরা জায়গা হচ্ছে চীন। চীন এরই মধ্যে বলেছে, ল্যাব লিক থিওরি বিজ্ঞানের প্রতি অসম্মান।

অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, মহামারীর প্রাথমিক ধরন সার্স-কোভ-২-এর জিনগত গঠন এবং উহানের পশুর বাজার সম্পর্কে সাম্প্রতিক গবেষণার ফলে ল্যাব লিক থিওরি কার্যত অকার্যকর হয়ে গেছে। তারা মনে করছেন, এ ভাইরাসও অন্যান্য অনেক উদীয়মান রোগজীবাণুর মতো প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। পরে তা প্রাণী থেকে মানুষে ছড়িয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ের এসব প্রতিবেদনের পর অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী মাইকেল ওয়ারোবিকের ল্যাব লিক থিওরি নিয়ে মনোভাব বদলে গেছে। তিনি এইচআইভি এবং ১৯১৮ ফ্লুর উৎপত্তি নিয়ে যুগান্তকারী কাজ করেছেন। এখন তিনি করোনাভাইরাসটি ল্যাবে তৈরি তত্ত¡ থেকে আরো দূরে সরে গেছেন। তিনি ল্যাব লিক অনুমান নিয়ে আরো পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে সায়েন্স ম্যাগাজিনে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।

ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টারের জীববিজ্ঞানী জেসি ব্লুমও সায়েন্স ম্যাগাজিনে পাঠানো চিঠিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি এখন বলেছেন, চীনা সরকার যত দিন না আরো সহযোগিতামূলক হবে তত দিন ল্যাব লিক থিওরির বিতর্ক থামবে না। তবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি চীনা বিজ্ঞানীরাও কম বিশ্বাসযোগ্য নয়।’

উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা করে থাকে। বলা হয়, দুর্ঘটনাবশত হয়তো সেখানকার দুয়েকজন কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। পরে তাদের মাধ্যমে রোগটি অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। তা ছাড়া ল্যাবে এ দুর্ঘটনা অসম্ভবও নয়। ২০০৩ সালে সার্স সংক্রমণের সময় এমনটি ঘটেছিল। কিন্তু উহানের ওই ল্যাবের প্রধান ব্যাট করোনাভাইরাস বিজ্ঞানী শি ঝেংলি এমন আশঙ্কার কথা অস্বীকার করেছেন। ২০২০ সালে সায়েন্স ম্যাগাজিনকে একটি ই-মেইল সাক্ষাৎকারে তিনি লিখেছেন, ল্যাবের সব কর্মী ও শিক্ষার্থীদের সার্স-কোভ-২ সম্পর্কিত পরীক্ষা করা হয়। তাতে সবার রেজাল্ট নেগেটিভ আসে।

বাইডেনের অনুরোধে করা প্রতিবেদনে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে ভাইরাসটি ‘সম্ভবত জিনগতভাবে রূপান্তরিত নয়’ এবং এটি ‘জৈব অস্ত্র’ হিসেবেও ব্যবহারের জন্য তৈরি নয়।

চীনা বিজ্ঞানীরাও ভাইরাসটির সম্ভাব্য প্রাকৃতিক উৎপত্তি সম্পর্কে তাদের নিজস্ব গবেষণা পরিচালনা করছেন, কিন্তু দেশের বাইরে খুব কম লোকই তাদের গবেষণার ফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন এ গবেষণায় প্রাপ্ত তত্ত¡ চীন বিশ্বকে জানাবেÑ এটিই বিজ্ঞানী সমাজ আশা করে।

বাদুড় গবেষকদের কথা
বাদুড় নিয়ে গবেষণার জন্য চীনের শীর্ষস্থানীয় ভাইরোলজিস্ট শি ঝেংলি বিশ্বজুড়ে এরই মধ্যে ‘ব্যাট ওম্যান’ বা ‘বাদুড় মানবী’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি বাদুড়ের শরীর থেকে অজানা অসংখ্যা ভাইরাসের সন্ধান করে আসছেন। তিনি উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির প্রধান। এ প্রতিষ্ঠানই কোভিড-১৯ বিতর্কের শীর্ষে রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে উহানের এ প্রতিষ্ঠান থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, যাকে ‘ল্যাব লিক’ হিসেবে বলা হচ্ছে। কারণ এ প্রতিষ্ঠানে ‘হর্সশু বাদুড়’ থেকে করোনাভাইরাসের জীবাণু নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। এ গবেষণাগার সম্পর্কে শি ঝেংলি বলেন, তাদের গবেষণা খুবই সতর্কতার সাথে করা হয়। তা ছাড়া গবেষকদের পরীক্ষা করেও দেখা গেছে সবাই করোনাভাইরাস নেগেটিভ। সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাথে এক সাক্ষাৎকারেও ঝেংলি বলেন, ল্যাব লিক ঘটনার কোনো প্রমাণ নেই, বিশ্ব কী করে তা প্রমাণ করতে চায়? কিভাবে একজন নিরপরাধ বিজ্ঞানীকে এমন দোষে দোষী বলে বলা হচ্ছে?

ফরাসি প্রতিষ্ঠান সিরাডের জন্য ভাইরাস অনুসন্ধানীর কাজ করেন ড. ম্যাথিউ বুওরগারেল। তিনিও একজন বাদুড় গবেষক।

আফ্রিকার জিম্বাবুয়ের বাদুড়ের গুহায় তিনি গবেষণার কাজে গিয়েছিলেন। সেখানকার প্রধানদের অনুমতি নিয়ে তিনি গুহায় ঢুকেছিলেন মাস্কে মুখ ঢেকে, কাপড়ে গা ঢেকে ও তিন পরতের দস্তানা পরে। গুহাটিতে সর্বত্র বাদুড়ের দুর্গন্ধ। এতই বিষ্ঠা যে, বিষ্ঠার পরত ভেঙে তাকে অগ্রসর হতে হয়। এ সময় বাদুড়গুলোর ঘুম ভেঙে যায় এবং ডানা ঝাপটাতে থাকে। জিম্বাবুয়েতে মানুষ বাদুড়কে ‘ডানাওয়ালা ড্রাগন’, উড়ন্ত ‘ইঁদুর’ বা শুধু ‘শয়তান’ নামে ডাকে। বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়, ড. বুরওসায়েল গুহা থেকে বিষ্ঠা অন্যান্য নমুনা ও বাদুড় সংগ্রহ করে এনে বাদুড়ের ভাইরাস জিন আলাদা করেন। তিনি ওই জিনের গঠন ও প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করে এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের করোনাভাইরাস চিহ্নিত করেন। এর মধ্যে সার্স এবং সার্স-কোভ-২ ভাইরাসও রয়েছে।

চীনে ভাইরোলজিস্টদের একটি দল ২০১৭ সালে চীনের ইউনান প্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গুহার ভেতরে ‘হর্সশু ব্যাট’ নামে বিশেষ প্রজাতির বাদুড়ের আস্তানায় গিয়ে যে ভাইরাস সংগ্রহ করেন, তাতেও সার্স ভাইরাসের জিন পাওয়া গিয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস টেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাদুড় নিয়ে ডক্টরেট করছেন ইরোরা তানিশি। এই গবেষক বাদুড়ের ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। তিনি বলেন, বাদুড় এক অসাধারণ সৃষ্টি। বাদুড়ের কথা উঠলেই তার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তিনি বিবিসিকে বলেন, আমি বহু গুহা, জঙ্গল, পাহাড় পর্বত এবং তৃণভ‚মি অনুসন্ধান করেছি। দেখেছি বাদুড় প্রকৃতির সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য চমৎকারভাবে বিবর্তিত হয়েছে। বাদুড়ের দেহে উন্নত রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে, যা রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীবকে সহ্য করতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের অধ্যাপক লিন-ফা ওয়াংয়ের নেতৃত্বে একদল বাদুড় গবেষক থাইল্যান্ডের একটি কৃত্রিম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে হর্সশু প্রজাতির বাদুড়ের মধ্যে সার্স-কোভ-২-এর কাছাকাছি ভাইরাস শনাক্ত করেন। ‘র‌্যাকসিএস ২০৩’ নামে ভাইরাসটির সাথে সার্স-কোভ-২ এর জিনের গঠনের মিল রয়েছে। তেমনি আরেকটি ‘আরএমওয়াইএন ০২’ ভাইরাসের সাথেও কোভিড-১৯ এর জিনগত মিল পাওয়া যায়।

বাদুড় মারবেন না!
বাদুড় গবেষক ও বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণা নিবন্ধে বাদুড় হত্যা ও এগুলোর আবাস ধ্বংসের ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য বাদুড়ের ভ‚মিকা থাকায় অস্ট্রেলিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত এবং জাপান, চীন ও থাইল্যান্ডে গণহারে বাদুড় হত্যা ও তাড়ানো শুরু হয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রকৃতি, প্রাণী ও উদ্ভিদ মিলিয়ে আমাদের চার পাশের যে ‘ইকোসিস্টেম’ তাতে বাদুড় পরাগায়ন, বীজ ছড়ানো ও ক্ষতিকর পোকামাকড় ধ্বংসের ক্ষেত্রে একটি বড় ভ‚মিকা পালন করে। খাদ্য থেকে শুরু করে প্রসাধন সামগ্রী, আসবাবপত্র ও ওষুধ সব কিছুতেই বাদুড়ের শ্রম আছে। বাদুড় ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার বনাঞ্চল টিকে থাকত না, মাদাগাস্কারের বাত্তবাব গাছ উধাও হয়ে যেত। পাখি যত বীজ ছড়াতে পারে তার দ্বিগুণ ছড়ায় বাদুড়ের মাধ্যমে। উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকার নানা বনভ‚মিতেও গাছের বংশবৃদ্ধিতে এদের ভ‚মিকা আছে। একাধিক জরিপে দেখা গেছে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই বাদুড়ের কারণে শস্য বিনষ্ট হওয়া কমে গেছে। ফসলের ক্ষতি করে এমন পতঙ্গের শত্রæ বাদুড়। বিজ্ঞানীরা বন্যপ্রাণী বেচাকেনা, পাচার ও খাবার হিসেবে ব্যবহার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বন্যপ্রাণীকে তাদের মতো চলার সুযোগ দিতে হবে। চীনে প্যাংগোলিন বা বনরুইয়ের মাংস খাওয়া হয়। এর আশ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী ওষুধ তৈরি করা হয়। অবশ্য বর্তমানে চীনে এ কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক


আরো সংবাদ



premium cement