২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এগিয়ে নিতে হবে

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এগিয়ে নিতে হবে - ছবি : নয়া দিগন্ত

[গতকালের পর]

গতকালের অংশটি পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন

ফিলিস্তিন নিয়ে ইসরাইলের যে বর্বরোচিত আচরণ, তা কী জাতিসঙ্ঘের দৃষ্টিতে পড়ে না? অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ ইসরাইলের বর্বরতা নিয়ে একটি নিন্দা প্রস্তাব পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারেনি। জাতিসঙ্ঘের সনদে যে মনোমুগ্ধকর বাক্যাবলি সন্নিবেশিত হয়েছে। তা কী অন্তরসারশূন্য আর অর্থহীন মনে করা যায় না। কিছুকাল আগে আমরা এই কলামে উল্লেখ করেছিলাম যে, এই বিশ্ব সংস্থার কার্যক্রমের পুনর্মূল্যায়ন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। এ বক্তব্যের প্রতি এসব ঘটনা কি সমর্থন করছে না?

তা ছাড়া তৃতীয় বিশ্বের বহু রাষ্ট্রে মানবাধিকার নানাভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। প্রতিটি দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম বিষয় যে, গণতান্ত্রিক অধিকার এখন তা ছিনিয়ে নিয়ে সেখানে ব্যক্তিতন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র কিংবা জান্তাতন্ত্র কায়েম করা হয়েছে। এসব দেশে ভোটব্যবস্থাকে প্রহসন বললে কম বলা হবে। তাকে বরং ‘জংলি’ ব্যবস্থা বলা যেতে পারে।

বাংলাদেশের সংবিধানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সবিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে, সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদ উল্লেখ রয়েছে- ‘প্রজাতন্ত্র’ হইবে একটি গণতন্ত্র, সেখানে মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানব সত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত এবং প্রশাসনের সব পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।’ এই মৌলনীতি ও মৌলিক অধিকারসংক্রান্ত বহু বিধানাবলি ছাড়াও পৃথক কিছু কিছু অনুচ্ছেদও রয়েছে, সেখানে মানুষের অধিকারসংক্রান্ত অনেক বিষয় সন্নিবেশিত।

বাংলাদেশের সংবিধানের ২৬ থেকে ৪৭ (ক) অনুচ্ছেদ পর্যন্ত জনগণের মৌলিক অধিকারসংক্রান্ত ধারাগুলো সংযুক্ত রয়েছে। তা ছাড়া এসব অনুচ্ছেদের সুরক্ষার জন্য ‘গ্যারান্টি ক্লজ’ও আছে। যেমন ২৬ (১) সন্নিবেশিত রয়েছে ‘এই ভাগের বিধানাবলির সাথে অসামঞ্জস্য সব প্রচলিত আইন যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ এই সংবিধান প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে।’ আর ২৬(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র এই ভাগের কোনো বিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো আইন প্রণয়ন করিবেন না। এবং অনুরূপ কোনো আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের কোনো বিধানের সাথে যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে।’ এ ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসংক্রান্ত যেসব অনুচ্ছেদ রয়েছে তার ১৫(ক) ও ১৬ অনুচ্ছেদ যা বর্ণিত রয়েছে তাও পরোক্ষভাবে মানবাধিকারকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সক্ষম।
তবে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুচ্ছেদ কার্যকর করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারের উদ্যোগহীনতা ও আন্তরিকতার অভাব লক্ষ করা গেছে।

উল্লেখ্য, সংবিধানে জনগণকে সংগঠন করার অধিকারের পূর্ণ নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। সে অনুসারে দেশে বহু রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। রাজনৈতিক সংগঠন তথা দল গঠনের সাথে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা চালানোর নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দিন থেকে লক্ষ করা যায়, অতীত থেকে আজ অবধি সব সরকারই প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোকে অবাধে তাদের কার্যক্রম, তৎপরতা চালানো ও জনসংযোগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীনদের কর্মী-সমর্থকরাই এসব প্রতিবন্ধকতার হোতা। প্রতিপক্ষ সংগঠনের ওপর হামলা আর মামলা দায়ের করে হয়রানি করা একটি রীতির পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমন কার্যক্রম প্রকৃতপক্ষে মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী এবং সংবিধানের পুরোপুরি বরখেলাপ। মানুষের অধিকারসংক্রান্ত সংবিধানে ২৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত রয়েছে ‘সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’ অথচ এ বিধানের আশ্রয় পাওয়া প্রতিপক্ষ দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভাগ্যে জোটে না। অন্য দিকে সরকারি কর্তৃপক্ষের শুভদৃষ্টিতে যারা রয়েছে, তাদের তৎপরতা নির্বিঘেœ চলে। এসবকে বস্তুত ডাবল স্ট্যান্ডার্ডই বলতে হবে।

পূর্বে সংবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে এমন কথা উল্লেখ করা হয়েছে ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র... এবং প্রশাসনের সব পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।’ এসব বিধানাবলির সরল ব্যাখ্যা হিসেবে এটিই ধরে নিতে হবে রাজনীতিরা, সে জন্য দল গঠন, তার কর্মসূচি পালন দেশে সুষ্ঠু ও কার্যকর নির্বাচন, তাতে মানুষের বাধা ও ভীতিহীনভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সংবিধানে অন্যত্র উল্লেখ রয়েছে যে, এ দেশের মালিক ‘এই ভূখণ্ডে বসবাসকারী সব মানুষ’ এসব বিষয় মানুষের অবিচ্ছেদ্য অধিকার। কিন্তু এসব অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে অতীত থেকে আজ অবধি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয়নি, বরং বহু ব্যত্যয় ঘটেছে। সে জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পদে পদে অবহেলিত হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠানো হয়। অথচ আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যথাযথভাবে কার্যকর করার তাগিদ সংবিধান দিয়েছে। গণতন্ত্র চর্চার সুষ্ঠু স্বরূপটি প্রকৃতপক্ষে মূর্ত হয়ে ওঠে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এ লক্ষ্যকে সার্থক ও পরিপূর্ণ করতে সংবিধানের নির্বাচনসংক্রান্ত অধ্যায়ের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেই কমিশন ১১৮(৪) অনুচ্ছেদ মোতাবেক তার দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন।’ এই কমিশন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সংসদ নির্বাচন বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কবে। নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব পালনে স্বাধীন বলার অর্থ তাকে ষোলোআনা সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায়িত্ব অর্পণই বোঝায়। তারা কি এই দায়িত্ব পালন করছেন? সুষ্ঠু, নিরাপদ ও বাধাহীনভাবে ভোটদানের অধিকার, মানুষের মৌলিক অধিকারের সম্পর্কযুক্ত। সেই অধিকার খর্ব হওয়ার অর্থ হচ্ছে, সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটানো। সে দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপরই বর্তাবে।

নির্বাচন নিয়ে গবেষণা পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ও গবেষকদের অভিমত যে, ভারতের নির্বাচন কমিশনকে যতটা ক্ষমতা ও ফাংশন করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তার চেয়ে বাংলাদেশের কমিশনের ক্ষমতার পরিধি অনেক বেশি। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। সেখানকার কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের আয়োজন করতে এতটা সক্ষম যে সেই (দূর) অতীত থেকে আজ অবধি তাদের দায়িত্ব পালন নিয়ে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। বিরাট দেশ, শত কোটির বেশি মানুষের বাস সেখানে। হাজারের বেশি ভাষায় কথা বলে জনগণ, মানুষের বাস নানা বিশ্বাস আর জাতিগোষ্ঠী নিয়ে বিভক্ত সে দেশ। সেখানে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে কমিশন ব্যর্থ হতো। তবে ভারতে শুধু হানাহানি, সঙ্ঘাত, সংঘর্ষ বাধত, তাই না; এমনকি জাতীয় ঐক্য বিপর্যয় ঘটত। সেখানে কিন্তু আজ পর্যন্ত তেমন সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারেনি। তার অন্যতম কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান।

পক্ষান্তরে, বাংলাদেশের বহুদিন থেকেই প্রায় সব নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম তথা নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হাজারো প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার ব্যাপারে চরম ব্যর্থ বলে মনে করে দেশী-বিদেশী নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী ব্যক্তি ও সংস্থা। এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকার তীব্র সমালোচনা হয়ে থাকে। অথচ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাণ হচ্ছে নির্বাচন। কমিশন সেই ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। সেই সাথে এ কথাও যোগ করা অসঙ্গত হবে না যে তারা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ার প্রেক্ষাপটে পদ থেকে সরে যাওয়াটাই নৈতিকতার দাবি।

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫(ক) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে বলা হয়েছে, নাগরিকদের ‘অন্ন বস্ত্র আশ্রয় শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবন ধারণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ।’ সংবিধান গৃহীত হওয়ার অর্ধ শতাব্দী পার হতে চলেছে, কিন্তু আজো মানুষের এসব অধিকার পূরণ করতে এ যাবৎ কোনো সরকারই সমর্থ হয়নি।

তৃতীয় বিশ্বের সব দেশেই নগর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে বিরাট ব্যবধান আর বৈষম্য বিরাজমান। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশের সংবিধানে এ বিষয়টিকে ‘অ্যাডড্রেস’ করা হয়েছে। এটি শুধু বৈষম্যই নয়, গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের অধিকারকে খর্ব করার শামিল। দেশের সংবিধান এই মর্মে রাষ্ট্র তথা সরকারকে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে যে, ‘নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর’ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। অথচ দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের ক্ষেত্রে শহর ও নগরকে বরাবর প্রাধান্য দিয়ে আসা হচ্ছে। এটি বলতে গেলে সংবিধানের নির্দেশনা উপেক্ষার শামিল। তা ছাড়া বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষই গ্রামাঞ্চলেস বাস করে, গণতান্ত্রিক দিকটি বিবেচনা করলে শহরকে বেশি প্রাধান্য দেয়ার এই নীতি প্রকৃতই অগণতান্ত্রিক।

এ কথা আগে বলা হয়েছে যে, প্রতিটি শিশু জন্মগ্রহণ করার পরপরই, পরিণত বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকার অধিকার সংরক্ষণ করে। শিশুটি পরিণত বয়স পর্যন্ত বেঁচে থেকে স্রষ্টার সম্পদে ভরপুর এই বিশ্বের রূপ রস আনন্দ সুখ আস্বাদনে আর ১০ জনের মতোই সে হকদার। কিন্তু তারা প্রতিকূল পরিবেশ, অনাহার আর চিকিৎসা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার অনেক বেশি।

২০১১ সালে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তা পূরণ হতে পারবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা আরো মনে করেন, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের সংখ্যা না বাড়ার পাশাপাশি দেশে প্রশিক্ষিত ধাত্রীর স্বল্পতায় শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসের আশা করা যায় না। মানুষের বেঁচে থাকাসংক্রান্ত অধিকার এভাবেই লঙ্ঘিত হচ্ছে। দেশের সঙ্কট আছে বটে, কিন্তু যদি ইচ্ছা আর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার সঙ্কট আরো বেশি।
সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে, ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’ অথচ মানুষ সেই সেবা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। বিশেষ করে সমাজের দুর্বৃত্তদের দ্বারা যখন মানুষ নিগৃহীত হয়; সেই আপদকালীন সময়ে সরকারি প্রশাসনকে দুস্থদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে দেখা যায় না। এ নির্দেশটি সর্বাধিক কার্যকর হতে পারে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ বাহিনীর ভূমিকার ক্ষেত্রে। সমাজবিরোধী দুর্বৃত্তরা যখন মানুষের জানমালের জন্য হুমকি, শান্তি-শৃঙ্খলা ক্ষুণœ করে তখনই পুলিশের ভূমিকা জরুরি। কিন্তু সব সময় সর্বত্র তাদের সেবা পাওয়া যায় না। অথচ দুর্বৃত্তদের এমন কার্যক্রম মানুষের মৌলিক অধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

তবে এর মধ্যে পুলিশের সাম্প্রতিক তৎপরতা বেশ লক্ষণীয়। বিশেষ করে এ দেশে নারী সমাজের নিরাপত্তা, সম্মান সম্ভ্রম এখন চরম হুমকির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। নারী সমাজের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিদিন বহু গৃহবধূ, যুবতী, কিশোরী আর মেয়েশিশু যৌন উন্মাদদের দ্বারা ধর্ষিত হচ্ছে। এমন কোনো দিন নেই যে বিভিন্ন স্থানে মেয়েরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে না। অবশ্য পুলিশের কাছে এমন অত্যাচার নির্যাতনের খবর পৌঁছামাত্র বাহিনীর সদস্যরা এসব ভয়ঙ্করকে পাকড়াও করে বিচারের জন্য সোপর্দ করছেন। এ বিষয়টি অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। আমরা আশা করব এই বাহিনী অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাদের ভূমিকা বিস্তৃত করবে। দেশের পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব পালন করেও প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে প্রথমে দেশের দিকেই নজর দিতে হবে। এখানে প্রশংসা পেতে হবে।
মানুষের অধিকার বলবৎ করার ক্ষেত্রে দেশের বিচার বিভাগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নানা বিষয়ে দুর্বল মানুষ যখন স্বীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়, সমাজের কিছু দূরাচারী নিরীহ মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যখন অন্তরায় সৃষ্টি করে, সামাজিক সুবিচার থেকে তারা বঞ্চিত হয়। শেষ ভরসা হিসেবে তখন আদালতের শরণাপন্ন হয় মানুষ। কিন্তু আদালতে মামলার জট থাকায় বিচার পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ইংরেজিতে একটি কথা রয়েছে- ‘জাস্টিস ডিলেড, জাস্টিস ডিনাইড’। তবে এর কারণ দেশের আদালতে অপেক্ষমাণ মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া। নিষ্পত্তি না হওয়া মামলার আনুমানিক সংখ্যা ৩৭ লাখের বেশি। বিচারকরা এসব মামলার নিষ্পত্তি করতে নিয়ত চেষ্টা করেও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। এর কিছুটা হয়তো প্রশমন হতো যদি প্রয়োজন অনুপাতে বিচারক থাকতেন।

আর একটি কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। বিচারপ্রার্থী অনুকূলে রায় পেলেও তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রশাসনের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে, কিন্তু সবসময় সে সহায়তা পাওয়া যায় না। তখন এই রায় অর্থহীন হয়ে পড়তে পারে।

দেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই উন্নয়নের সুফলের সমবণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। কেউ ভোগ উপভোগ করবে আর কেউ হাপিত্যেস করবে- এমনটি বৈষম্য, যা এখন বিরাজ করছে। উন্নয়নের সমবণ্টনের জন্য একটি বড় শর্ত দক্ষ প্রশাসন ও তার ব্যবস্থাপনা। সরকারের ভিশন নিশ্চিত করা তথা দেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করার কথা বলা হয়। তার অন্যতম উপাদানগুলোর মধ্যে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষিত করা, সত্যিকার প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা তথা নির্ভেজাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। তা না হলে উন্নয়ন পূর্ণতা পাবে না।

ndigantababor@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement