০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সি চিন পিংয়ের সিয়াওখাং শিহুই ও মাথা থেঁতলে দেয়ার রণকৌশল

সি চিন পিংয়ের সিয়াওখাং শিহুই ও মাথা থেঁতলে দেয়ার রণকৌশল -

মাথা ভেঙে ফেলবেন! কার মাথা? যে পেছন থেকে লাগতে আসবে? বলে কী? কী দিয়ে মাথা ভাঙবেন? ভিমের গদা দিয়ে না মুগুর দিয়ে? আরে তা কি আর বলেছে নাকি! লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ওই গদাসদৃশ ভোমা লাঠি দিয়েই তো হালাক করে দিয়েছে ডজন দুয়েক ভারতী সেনা। হ্যাঁ, তাই তো! আচ্ছা পেছন থেকে লাগতে এলে মাথা গুঁড়িয়ে দেবে, ভালো কথা। তা সামনে থেকে লাগতে এলে কী করবে বলেছে কিছু? আপাতত না। ওটা টপ সিক্রেট। বলেনি। তাহলেই তো সেরেছে রে। যেখানে সিক্রেট সেখানেই তো বিপদ, সেখানেই কোপাকুপি। বড় চিন্তায় ফেলে দিলো দেখছি! দুনিয়ার তাবত ধেড়ে ধেড়ে মুরব্বি, বসদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে পয়লা জুলাই থেকে। সব গোয়েন্দা সংস্থার চিফ টিকটিকির মাথা ২৪/৭ ব্যস্ত এই মাথা ভাঙা ইস্যুতে। ওল্ড ইজ গোল্ড জো বাইডেন, মেক ইন ইন্ডিয়া মোদি জি, দ্য হেয়ার ডিজাইনার বরিস দ্য জনসন- সব গোল্লাছুট খেলতে লেগে গেছেন। পুঁটি নয়, বিশাল মাছ বস পুতিন মাঝখান থেকে চুপ। তার মনের কথা বোঝা দুঃসাধ্য বটে। খুবই ঘোড়েল চিজ। কিন্তু কথাটা যেই সমাজতান্ত্রিক পুঁজিবাদী দেশ থেকে ছড়িয়ে গেল সেই দেশের কোনো তড়পানি নেই। তাজ্জব কি বাৎ!

০১ জুলাই ২০২১। মনটা আজ বেশ ফুরফুরে প্রেসিডেন্ট অর্থাৎ সদর ই চীন হিজ হাইনেস শি জিন পিংয়ের। চীনা উচ্চারণে এটা নাকি সি চিনপিং! তা যাই হোক। যাহা বাহান্নো তাহাই তেপান্ন! নামে কি আসে যায়? ওই যে চৈনিকরা বাংলাদেশকে মুনজালাগো ডাকে, ভারতকে বলে ইন্দু, আম্রিকা হয়ে গেছে মিইগো! তাও তো নাম। কিন্তু জান ই দোস্ত পাকিস্তানের একি দশা! ওদের নাম যে চীনা ভাষায় পাজিস্তান! আস্তাগফিরুল্লাহ! তা যাক গে। সি চিনপিং সাহেব সকালে উঠেই প্রথমে দেখলেন তার নাশতার টেবিলে রেখে যাওয়া জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টটি। আজ কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না-সিপিসির শতবার্ষিকী, মহাআয়োজন চারদিকে।

১৯২১ সালে সাংহাইয়ের একটি ছোট্ট বাড়িতে গঠিত হয়েছিল চীনের কমিউনিস্ট পার্টি। তখন কি কেউ জানত চিনপিং নামের একজন দ্বিতীয় মাও হয়ে ধরায় আবির্ভূত হবেন? হোয়াং হো নদী দিয়ে এর মধ্যে অনেক পানি গড়িয়েছে, চীনের প্রাচীরে কোটি কোটি মানুষ হেঁটেছে। চেয়ারম্যান মাও সে তুংয়ের কালচারাল রেভুলিউশন টপকিয়েও চীন পয়সার মুখ দেখেনি। তাও খাঁটি মাওবাদের একটা আলাদা অ্যাসেন্স ছিল। কিন্তু কার্ল মার্কসের সমাজতন্ত্রকে ভেজে কুড়কুড়ে করে দিয়েছেন মাও যাকে শ্রম শিবিরে পাঠিয়েছিলেন সেই দেং চিয়াও পিং নামের এক নেতা। বিড়ালটি কালো না সাদা তা বড় নয়, বিড়ালটি ইঁদুর ধরতে পারে কি না সেটাই বড় বিষয়- এমন এক আপ্তবাক্য উপস্থাপন করে দেং সাহেব যেদিন পুঁজির দুয়ার খুলে দিলেন সেদিন থেকেই যে চীন কমিউটালিজম অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক পুঁজিবাদে রূপান্তরিত হয়ে গেছে তা চিন পিং মহাশয়ের লাল বইয়ে টুকে রাখা হয়নি। আরে ভাই, সমাজতন্ত্র তো সমাজতন্ত্র। এখন পুঁজিবাদ মিশিয়ে কিভাবে ইঁদুর দমন করব, সব যে আবার ধেড়ে ইঁদুর? তাই তো সি চিনপিং বহু কসরত করে নতুন এক তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন। এর নামও তার দেয়া। ‘সিয়াওখাং শিহুই’-শান্তিময় ও সমৃদ্ধ সমাজ। কত সুন্দর একটা আইডিয়া। না, বিশ্বের বড় বড় পালগুলোর তা সহ্য হয় না। খালি ষড়যন্ত্র! মেজাজটাই তেতো হয়ে যায় এসব ভাবলে। থাক, আজ আর ওসব ভাবলে চলবে না। আজ শতবার্ষিকী। পৃথিবীতে রয়ে যাওয়া সমাজতন্ত্রের কুপিটা তো অন্তত জ্বলছে! চোয়াল শক্ত হয়ে গেল সদর সাহেবের। দৃঢ়চিত্তে সিদ্ধান্ত নিলেন পৃথিবীতে আবার ছড়িয়ে দিতে হবে সমাজতন্ত্রের রেসিপি। কিসের গণতন্ত্র? ওটা সব বিশৃঙ্খল মানুষ বানায়। সারা দুনিয়াকে ডিসিপ্লিন্ড বানাতে হবে। এক পথে চলবে সবাই। ভাষণ দিতে হবে কোটি কোটি চীনার উদ্দেশে, আবার ওই ভাষণটাই দুনিয়ার সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সবাইকে বোঝাতে হবে ডেমোক্র্যাসি ইজ ডেড, কমিউটালিজম ইজ ইন অ্যাকশন! ভাষণটা অবশ্য চীনা ভাষায়। অন্য ভাষা বলে কী লাভ? জেনেও কী লাভ? চীনের মধ্যেই লীন হবে যেসব। ভাবছেন চিনপিং সাহেব। মাথাটা মাঝে মধ্যে ঘুরে ওঠে তার। এক শ’ চল্লিশ কোটি হোমো স্যাপিয়েন্স! ওরে বাপ! একেকটার মাথায় কি চিন্তা চলছে কে জানে? আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়েও তো পুরো জানা যাচ্ছে না। আরো কয়েক বছর লাগবে। এর মধ্যে যদি মানুষগুলো বেশি চিন্তা করে ফেলে? ১৯৮৪ উপন্যাসের বিগ ব্রাদারকে তাড়া করে? ধ্যাৎ! আজ তাকে মহাবাণী দিতে হবে যে! এসব কি ছাইপাশ ভাবছেন? একহাতে চপস্টিকে রাইস ন্যুডলস কিছুটা তুলে নিয়ে অপর হাতে ধরা গোয়েন্দা রিপোর্টটি তিনি পড়তে শুরু করলেন। না, গোয়েন্দাগুলো ক’বছরে এক লাইনে কাজ শিখেছে বটে! যা তিনি চিন্তা করেন, ব্যাটারা তাই খুঁজে পায়। আগের মতো আর তর্কাতর্কি করে না। শৃঙ্খলা বলে কথা!

পেইচিংয়ে তিয়ানানমেন স্কোয়ারে পিপলস হলের পাশে সত্তর হাজার মানুষ জড়ো হবে আজ। ওহ! হ্যাঁ, সবাইকে বেছে বেছে আনা হয়েছে। প্রত্যেকের সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স করা হয়েছে। আশপাশে ১০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে সব দোকানপাট গত তিন দিন ধরে বন্ধ। মাছ কাটা ছুরি বিক্রি বন্ধ। স্যাটেলাইটগুলো চষে বেড়াচ্ছে আশপাশের সব এলাকা। আম্রিকার প্রযুক্তি পাজিস্তানের কাছ থেকে টুপ করে যা পাওয়া গেছে তা দিয়ে ড্রোনগুলো মাশআল্লাহ ভালোই বানিয়েছে চেংদুর কোম্পানিগুলো। ফকফকা সব ছবি, ভিডিও তুলছে গত তিন দিন ধরে। আলহামদুলিল্লাহ। সব কুছ ঠিক হ্যায়। গোয়াদার পোর্ট বানাতে গিয়ে বহু চীনাকে উর্দু আর মুসলমানদের কিছু প্রচলিত শব্দ শিখতে হয়েছে। চিনপিং সাহেবও কয়েকটি মুখস্থ করে নিয়েছেন আর কি! সন্তুষ্ট হয়ে চপস্টিক দিয়ে খপ করে বাউল থেকে রাইস ন্যুডলস বেশ কিছুটা চালান করে দিলেন মুখে।

তবে গোয়েন্দা রিপোর্টের একটা লাইন তার মনে কিছুটা অস্বস্তির সৃষ্টি করল। আম্রিকানরা নাকি আফগানদের না জানিয়েই রাতের আঁধারে বাগরাম এয়ারবেজ থেকে ভেগে যাওয়ার কোশেশ করছে! কেন অমন তড়িঘড়ি করে ভাগছে? পাজিস্তানের পাজি গোয়েন্দা সংস্থারও কোনো রেফারেন্স নেই রিপোর্টে! আয়রন ব্রাদার হয়েও তথ্যটা এখনো দেয়নি? চেপে রেখেছে ব্যাটারা! নাহ! আম্রিকানদের মতিগতি ভালো না। ব্যাটারা চারটা এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার গ্রুপ নিয়ে ঘিরে রেখেছে তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন সাগর। মালাক্কা প্রণালীতেও বসে আছে জাহাজ নিয়ে। ওদের মতলব ভালো না। একেকটা ক্যারিয়ার গ্রুপ মানে একটা করে বিমানবাহী রণতরী, কয়েকটা ডেস্ট্রয়ার ও ভয়াবহ কতগুলো পারমাণবিক সাবমেরিন। বাবা রে বাবা! এখন আবার আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সামন্ত সরিয়ে কোথায় নিয়ে যায় কে জানে? যদি চীনের আশপাশে পাঠায়? গুয়াম ঘাঁটিতে নিয়ে রেখে দেয় যেকোনো সময় চীনের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য? ব্রিটিশরাও সাবমেরিন, বিমানবাহী রণতরী নিয়ে এসেছে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া- সব ধাড়ি বরাহ শাবকগুলো একসাথে আসছে কেন? ইন্দোনেশিয়াও জাপানের সাথে সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, আম্রিকার সাথে মেরিটাইম ইস্যু নিয়ে যৌথ উদ্যোগের পাঁয়তারা করছে। চিন্তার বিষয়। গোয়েন্দা প্রধান কই? হাঁক দিলেন চিনপিং মশাই। বস, উনি তো তিয়ানানমেন স্কোয়ারে পাবলিকের সাথে ছদ্মবেশে দাঁড়িয়ে আছেন। জানাল পিএস। ওহ! ঠিক আছে, আগে অনুষ্ঠানের ঝামেলা যাক। তারপর দেখা যাবে। কিন্তু বড়ই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন সিপিসির সেক্রেটারি জেনারেল। মনে মনে ঠিক করলেন, ব্যাটাদের বাড় খুব বেড়েছে। কিছু একটা শক্ত ভাষায় বলতে হয়। খুবই শক্ত হতে হবে। এমন শক্ত যে লেজার দিয়েও যাতে ভাঙতে না পারে। সবগুলোর মাথা ভাঙতে হবে! থেঁতলে দিতে হবে! চীনের প্রাচীর দেখেছিস, চীনের চিনপিং দেখিসনি, তোদের আমি দেখিয়ে ছাড়াবো। করোনা নিয়ে কী হচ্ছে চার দিকে?

আলহামদুলিল্লাহ, চীনে তো মাত্র দেড় মাসেই করোনা চলে গেছে, এখন কোথাও নেই। সব চলছে ঠিকঠাক। সব দেশ ঘোল খাচ্ছে, খাক গে। পশ্চিমারা কত ধানে কত চাল এখনো দেখেনি... নাহ! আবার কেউ মাইন্ড রিড করে ফেলবে না তো! করোনার উৎপত্তি নিয়ে সবাই কচকচানি শুরু করে দিয়েছে। এই বজ্জাতি ধারণার লতাপাতা গজাবার আগেই কিছু একটা করতে হবে। আগ বাড়তে দেয়া যাবে না। যাক, আগে মাথা নিয়ে ভেবে নিই।

মাথা ভাঙার কথা মনে আসায় মনে মনে বেশ প্রশান্তি অনুভব করলেন সিয়ানশেং অর্থাৎ মিস্টার চিন পিং। শতবার্ষিকীর জন্য বানানো নতুন মাও কোটটা পরে নিলেন ঝটপট। কোটটা মাও-এর কোটের মতো ঠিক কালো না, গাঢ় ছাই রঙের। মাওয়ের থেকে একটা পার্থক্য আছে না! কড়া ইস্ত্রি করা কোট পরে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন চিনপিং। নিজের মনেই বলে উঠলেন, মুন্ডু স্ম্যাশ করার এই মহা রণকৌশল যে পৃথিবীর সামনে নিয়ে আসতে যাচ্ছি সেই আমি কিন্তু সাধারণ কোনো আদম সন্তান নই। পরক্ষণেই তার মনে পড়ল তিনি কি আদম সন্তান? কমিউনিস্ট মেনিফেস্টোতে সৃষ্টিকর্তাই তো নেই, তা আদম আসবে কোথা থেকে? ধুত্তোরি ছাই। যত্তোসব বদ চিন্তা! যা হোক, এক শ’ চল্লিশ কোটি মানুষের নেতা তিনি। এর মধ্যে দুনিয়া কাঁপানো বিলিওনিয়ারও আছে, আবার দুর্গম এলাকায় গুহাবাসী মানুষও আছে। তার ভয়ে পাহাড়, পর্বত, নদীনালা তো বটেই চেং দুর জঙ্গলের পাণ্ডাগুলো পর্যন্ত থরহরি কম্প! না, এটা হয়তো ঠিক হলো না। পাণ্ডা ভয় পাবে? সেটা তো গুনাহ-ই কবিরা হয়ে যাবে আবার। পাণ্ডার কোনো ক্ষতি হলে আইনে সোজা শ্রীঘর, আর ভুলেও কেউ যদি পাণ্ডা মেরে ফেলে তো সোজা ইন্না লিল্লাহ! তিনি তো আর সেই আইন ভাঙতে পারেন না। দেশের সর্বাধিনায়ক বলে কথা। আর যে যাই বলুক কমিউনিস্ট মানুষের চেয়েও সমাজতান্ত্রিক পাণ্ডার স্ট্যাটাস অনেক বেশি এটা মানতেই হবে!

এ দিকে সাত সমুদ্দুর তের নদীর পাড়ে আঙ্কেল বাইডেন আছেন ঘুমিয়ে। শ্বেত বাড়ি নিঝুম, নিস্তব্ধ। পোষা কুকুরটা পাশের ঘরে কুই কুই করছে। হঠাৎ সিকিউরড লাইনে ফোনের বিপ বিপ শব্দ। জিল বাইডেনের ঘুম ভেঙে গেল, পাশ ফিরে তিনি রিসিভার তুলে নিলেন। কয়েকবার ধাক্কাধাক্কি করেও ওল্ড বয় বাইডেনকে ঘুম থেকে ওঠাতে পারছেন না। ঘড় ঘড় করে নাক ডেকেই চলেছেন। বেচারা! বয়স তো হয়েছে! বুড়ো হয়ে গেছে! আহা! কত কষ্ট এই বয়সে মহামারীর জমানায় সদর ই আম্রিকা হওয়ার! খুব মায়া লাগল জিলের। কিন্তু জরুরি কল যে। জোরে ধাক্কা দিলেন একটা, সাথে মিলিটারি মেজাজের কড়া সুরে হুকুম- গেটআপ জো, ইউ হ্যাগার্ড, গেট ইয়োরসেল্ফ আপ! ফোনের লাইনের ওপাশে চিফ অফ স্টাফ ফার্স্ট লেডির ভয়ানক হুকুম শুনে নিজেই চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলেন! যাক, বাইডেন জো হুকুম বলে উঠলেন ধড়মরিয়ে। কী হয়েছে? পিং পং বল কোথায়? চিন পিং কি মিসাইল ছুড়েছে গো? ট্রাম্পের ক্যাডাররা কি আক্রমণ করেছে? আবার নতুন কোনো করোনা ভ্যারিয়েন্ট এসেছে নাকি? জিল রেগে টং; তা কি জানি! নেও তোমার ফোন।

মুহূর্তেই মি. বাইডেনের মনে পড়ল তিনি আম্রিকার সদর অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট ও কমান্ডার ইন চিফ। ঘুমের মধ্যে এতক্ষণ ট্রাম্পকে স্বপ্ন দেখছিলেন যে দৌড়ে আসছে দশাসই গলফ স্টিক নিয়ে। রিসিভার কানে লাগিয়েই মাথা ঘুরতে শুরু করল প্রেসিডেন্ট মহোদয়ের। বলে কী? সি চিন পিং মাথা ভেঙে ফেলবে? এত্তোবড় সাহস? আমার মাথার দাম এত কম? কোথায় জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান? স্যার, হোল্ড ইউর ব্রেথ, চিফ অব স্টাফ কোনোমতে থামালেন প্রেসিডেন্টকে। কার মাথা ভাঙবেন তা তো সুনির্দিষ্ট করে বলেননি মি. প্রেসিডেন্ট। যে কারো হতে পারে। তবে তা আমাদের পক্ষের সবার। উনি তো আর পাজিস্তানের প্রেসিডেন্টের মাথা থেঁতলে দেবেন না! ওহ! শাটআপ। আমি জানি চিন পিং আমার ক্ষমতায় আসা পছন্দ করছে না। আমার মাথাই ওর টার্গেট। আচ্ছা ঠিক আছে আরো পঞ্চাশটা এফ-৩৫ ও বি-৫২ জাপান, কোরিয়ায় পাঠিয়ে দিতে বলো। আফগানিস্তান থেকে কালকের মধ্যেই সৈন্য সরিয়ে নিয়ে আসার হুকুম দিচ্ছি, পেন্টাগনকে জানিয়ে দাও এখনি। মেডিটেরিয়ান থেকে নৌবহর ফুল স্পিড এহেড টু সাউথ চায়না সি অ্যান্ড মালাক্কা। আর মিয়ানমারে গেরিলা দলগুলোকে বলো তেড়া বেড়া আক্রমণ করতে। এগুলো করে ফোন মিলাও পাজিস্তানের সেনাপতিকে। দেখি কার মাথা কে ভাঙে? যত্তোসব। ঘুমটা নষ্ট করল। গলফে ট্রাম্পের শেষ পরিণতিটা দেখতে পেলাম না! জিল ঠাণ্ডা পানির গ্লাস এগিয়ে দিলেন এত দিনের প্রিয় বুড়োটাকে। ঢক ঢক করে খেয়ে শুয়ে পড়লেন বাইডেন। কিন্তু মাথায় মাথা ভাঙার দুশ্চিন্তাটা রয়েই গেল!

ও দিকে নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি ওরফে মোদিজিরও ঘুম নেই চিন পিং সাহেবের মাথা ভেঙে ফেলার হুমকিতে। চোখ মুদলেই মোদিজি দেখছেন গালওয়ান ভ্যালি, লাদাখের পাহাড়, পর্বত। আকসাই চীনের দুর্গম এলাকা। অরুনাচলও চলে আসছে চিন্তায়। কেবলই চোখে ভাসছে গালওয়ানে ভীমের গদার মতো মোটা লাঠি দিয়ে ভারতীয় সেনাদের পিটিয়ে মারছে চীনা সেনারা। বাপরে বাপ! রীতিমতো ঘেমে নেয়ে উঠলেন এসি রুমে বসেও। ইন্টারকমে হুংকার দিয়ে বললেন চা নিয়ে আসতে। আগে মাথা ঠাণ্ডা করতে হবে। মনে পড়ে গেল সেই যৌবনে রেলস্টেশনে চা বিক্রির কথা। আহা রে! কত সুখেই না ছিলাম! কোন ভ‚তে যে কিলিয়েছিল, ইন্দুস্তান, রাম রাম, হিন্দুস্তানে রাজনীতি করতে গেলাম। তা এখন কি করা যায়? চিন পিংয়ের মেজাজ মর্জির তো কোনো ঠিক নেই। তবে লোকটা এককথার মানুষ। লাঠি দিয়ে মেরেই ফেলল ভারতীয় সেনাদের? এখন যদি আবার মাথা থেঁতলে দেয়ার জন্য চিনপিং দাদা আলাদা কোনো বিশেষায়িত বাহিনীই তৈরি করে ফেলে তো কম্মো সাবাড়! এর মাঝেই তো চীন অতিরিক্ত আরো সেনা মোতায়েন করেছে লাদাখে। এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম বসিয়েছে ভারত সীমান্তে। বাংলাদেশকেও বলে দিয়েছে কোয়াডে গেলে সমস্যা আছে! টিকা না দেয়ায় এমনিতেই ক্ষেপে আছে বহুদিনের পেয়ারা দোস্ত বাংলাদেশ। বাঙ্গালদের তো ঠিক মতো বিশ্বাসও করা যায় না! চীনাদের কোলে উঠে বসে আছে, আম্রিকা না জানি কী করছে? দেখা যাবে দিব্যি আম্রিকার কাঁধেই চড়ে বসেছে! দুঃখের কথা আর কত মনে করা যায় রে দাদা! মগাদের দেশ মিয়ানমারে এত তোড়জোড় করে একটা সাবমেরিন দেয়া হলো এখন সেটাও চলে গেল চীনাদের পকেট বয় মিয়ানমারের মিলিটারি গান্ডুসদের হাতে! গণ্ডা দুয়েক রাফালে দিয়ে আর কত সামাল দেয়া যায়? এক করোনাই তো শাইনিং ইন্ডিয়ার ইজ্জত পাংচার করে দিলো! সিরাম ইনস্টিটিউটকে যদি সেই রকম একটা থাবড়া দেয়া যেত! সব ফাজিলের দল। মহা হুজ্জতি! মাথা এলোমেলো হয়ে গেল মোদিজির। চা এসে পড়ায় একটু দম ছেড়ে বাঁচলেন। ফিরে গেলেন সেই চা ফেরি করার দিনে। চায়ে, চায়ে...। আহা রে, আগে কতো সুন্দর দিন কাটাইতাম রে...!

ইন্দুদের পাশের দেশ পাজিস্তানে পরিস্থিতি তখন বেশ উল্টো। কিলার অব লেডি, দূর ছাই! লেডি কিলার পাঠান উজিরে আযম ইমরান খাঁ ছাহেব খুব দিলখুশ অবস্থায় আছেন। করোনা না এলে কি এই মৌজ আসত? আয়রন ব্রাদার চীনের থেকে করোনাটা সময়মতোই ছড়িয়েছে। কী যেন ভ্যারিয়েন্ট? ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট, থক্কু ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট তো আরো যেমন- বাঘা ওল তেমন তেতুলের মতো কাজ করেছে। এক ধাক্কায় ফকফকা। চিন পিং সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞতা না জানালে তো চলে না। কিসের গণতন্ত্র, ফনতন্ত্র? কিসের নির্বাচন? সব ঝুট বাত হ্যায়। আমিই তো ক্ষমতায়! এগুলো না থাকলে তো আমিই ক্ষমতায় থাকছি! অতএব? প্রেস সেক্রেটারিকো বোলাও। দৌড়ে এলেন প্রেস সেক্রেটারি। অক্সফোর্ড গ্রাজুয়েট ইমরান খানের সামনে ইংরেজিতে খানা নেই কারো। বহু কড়া আদমি হ্যায়। কাঁপাকাপি পড়ে যায় আরকি। এর ওপর সিপাহসালার বাজপাখি বাজওয়া জেনারেল তো আঠার মতো লেগে আছে সবখানে। পানির গ্লাসে কোন দিক দিয়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে পানি খেতে হবে সেটাও মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স ও আইসিআই, তওবা তওবা, আইএসআই থেকে নির্দেশনা নিয়ে খেতে হয়। মিলিটারিদের কড়া নজরের বাইরে পান থেকে চুন খসার উপায় নাই। প্রেস সেক্রেটারি খান সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিলেন। মুখ খুললেন কোটি যুবতী, নারীর হৃদয়হরণকারী ইমরান ছাহেব। মোহতারাম সি চিন পিং কেউ লাগতে এলে মাথা ভেঙে ফেলবেন বলেছেন জানো তো? জি স্যার। তাহলে একটা জব্বর কড়া, পেশোয়ারি ঝাল দেয়া বিবৃতি দিয়ে দাও। বলে দাও আমরা পৃথিবীর নেতা বলতে বুঝি চিন পিং ছাহেবকে। তিনি ছাড়া বাকি সব বিল্লি। তিনি মহৎপ্রাণ আদর্শ...স্যার, এভাবে বললে আবার বাইডেন সাহেব নাখোশ হয়ে যেতে পারেন। চুপ রাহো! উসকো শির হালাক কর দুঙ্গা। প্রেস সেক্রেটারি বুঝে গেলেন বাজপাখিরা ঐশী বাণী পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাই চোখ নামিয়ে, মাথার নিউরন সব বন্ধ করে দ্রুত নোট নিতে শুরু করলেন। উজিরে আজমের অমর বাণী ঘোষিত হলো- গণতন্ত্র সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। চীনের নতুন ধাঁচের সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাই উত্তম। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিসি অতি উত্তম। আমাদের নতুন এই দর্শন ভেবে দেখতে হবে। একটু বাগড়া দিলেন প্রেস সচিব। স্যার, ভারতের কথা কিছু বলবেন না? রাখো ওই দেশ। চিন পিং সাহেব ওদের চিনি বেড় করে ছাড়বেন। আমরা খালি তার সব কাজে এ টু জেড সায় দিয়ে যাবো। আমাদের খামাখা নড়াচড়া করতে হবে কেন? ওহ! হ্যাঁ, পাকিস্তান কোনো দিকে যাবে না। আমাদের মুখ এক দিকে। আমরা কারাকোরাম ডিঙ্গিয়ে চীনের দিকেই যাবো। স্যার, তুরস্কও বাদ? শাটআপ। চীন এখন মাথা থেঁতলে দেয়ার কৌশল বের করেছে সেটা নেয়ার ধান্ধায় আছি আর তুমি তুরস্ক নিয়ে প্যাচাল পারছ? তুরস্কও প্রয়োজনে চীনকে ফলো করবে। বুজেছো? জি স্যার। নোট নেয়া শেষ হলো। মনে মনে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করে দিলেন প্রেস সচিব মহোদয়। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছিল আম্রিকা ঠিকই গলায় গ্যাক করে ধরে বসবে। তবে গলাটা কি খান সাহেবের না বাজওয়া সাহেবের তা এখনি বলা যাচ্ছে না। একটা ব্যাপার পরিষ্কার, ইন্না লিল্লাহ ওয়া গণতন্ত্র! ডিসিপ্লিন, সিধা হওয়া চাই আগে? সিধা হতে হলেও তো মাথায় বাড়ি দিতে হবে। ইয়া খোদা, মোহতারাম চিন পিং তো পাকিস্তানের মাথায়ও বাড়ি দেবেন!

লেখক : সাবেক সেনাকর্মকর্তা, সাংবাদিক, বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালের প্রধান সম্পাদক


আরো সংবাদ



premium cement