২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

উচ্চবিত্তরা কি করোনায় বেশি আক্রান্ত

উচ্চবিত্তরা কি করোনায় বেশি আক্রান্ত
উচ্চবিত্তরা কি করোনায় বেশি আক্রান্ত - সংগৃহীত

করোনাভাইরাস সংক্রমণের সাথে ধনী-গরিব, শ্রেণি-পেশা, ধর্মবিশ্বাস কিংবা উন্নত-অনুন্নত চিকিৎসার বিশেষ কোনো সম্পর্ক আছে কি না তা নিয়ে কেউ জরিপ করেননি। তবে আক্রান্ত মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও ভোগান্তির তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বলার আছে অনেক কথা। কারণ এগুলো সাদা চোখেই একেবারে স্পষ্ট।

করোনা নিয়ে অনেক সতর্কতা ও হুঁশিয়ারি দিয়েছে মিডিয়া। আশঙ্কা করা হয়েছিল, ঢাকায় ঘনবসতিপূর্ণ বস্তিগুলো হয়ে উঠতে পারে মহামারীর একেকটি কেন্দ্র। বস্তিগুলো করোনা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটাতে পারে। কারণ বস্তিবাসী চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করেন। কয়েক পরিবার মিলে এক ঘরে থাকেন। বাথরুম, কিচেন শেয়ার করে ব্যবহার করেন। লাইন ধরে পানির কল থেকে পানি সংগ্রহ করেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বালাই তাদের মধ্যে নেই। ফলে বস্তিতে ঝড়ের গতিতে করোনা সংক্রমণ হবে। একই ধরনের আশঙ্কা ঢাকার নিম্নবিত্তের অশিক্ষিত অসতর্ক মানুষের ব্যাপারেও করা হয়েছে। যারা শহরের গণপরিবহনে যাতায়াত করে। কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করে না। কিন্তু এসব আশঙ্কা এখন পর্যন্ত ঢাকায় ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এই মেগা সিটিতে কোভিড-১৯ এখনো ভয়াবহ হয়ে ওঠেনি। তবে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকার ভাগ্যে কী আছে আমরা জানি না। আপাতত ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সরকারের মাথাব্যথা বাড়াচ্ছে। ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে তাই বাঁচার মরিয়া চেষ্টা তারা করছে।

গত দেড় বছরে করোনার প্রকৃতি যাচাই করলে এর এক রহস্যজনক আচরণ দেখতে পাওয়া যাবে। সাধারণ মানুষের জন্ম-মৃত্যু আলোচনার কোনো বিষয় নয়। সাধারণ মানুষেরও এ নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ থাকে না। তবে বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিখ্যাত ব্যক্তি বা পরিচিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে মানুষের কৌত‚হল রয়েছে। বিশিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু হলে সেটা সংবাদমাধ্যমের খবর হয়। একটি জনবহুল দেশে সবসময় এমন খবর থাকে। করোনার মওসুমে কর্তাব্যক্তিদের মৃত্যুর খবর মানুষের দৃষ্টি বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। সামাজিকমাধ্যমে মতামত প্রকাশ করার সুযোগ থাকায় তারা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। তাতে মানুষের ভালোবাসা, হিংসা, ঘৃণা, বিদ্বেষ সবই প্রকাশ পায়। করোনাকালে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলা ও বিচার প্রশাসনের কর্তাব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। পরিচিত বিশিষ্ট ব্যক্তি বুদ্ধিজীবীদেরও মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে এমন রয়েছেন যারা দাম্ভিকতা প্রদর্শন করেছেন। মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। পরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। করোনাকে অভিশাপ ধরে এসব মৃত্যুকে সম্পর্কিত করার সুযোগ নেই। তবে সাধারণ মানুষ নিজেদের ওপর চলা নানামাত্রিক নির্যাতনের কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় এই সময়ে ক্ষমতার আস্ফালনকারী কারো মৃত্যু হলে তা স্রষ্টার পক্ষ থেকে ঘটানো কর্ম বা গজব বলে প্রবোধ নিতে চায়। এটি বাস্তব সত্য।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা আসার কয়েক মাস পরে অনেকের কৌত‚হল জেগে উঠল, প্রকৃতপক্ষে ঢাকার বস্তিতে কী হয়েছে। কারণ এই সময় উচ্চবিত্ত অভিজাতদের অনেকের মৃত্যুর খবর ফলাও হয়ে প্রকাশ হয়েছে। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে গত বছর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করা হয়েছিল। সেটা কোনো জরিপ ছিল না। পত্রিকার প্রতিনিধি বস্তিগুলো ঘুরে জনসাধারণের জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণ করেছেন। বস্তিবাসী, জনপ্রতিনিধি ও এনজিও কর্মীদের সাথে কথা বলে তারা ওই প্রতিবেদন তৈরি করেন। নির্বাচিত বস্তিগুলোতে গুরুতর করোনা আক্রান্ত রোগী তারা পাননি। কারো কারো ক্ষেত্রে মৃদু কিছু লক্ষণের কথা বিচ্ছিন্নভাবে জানতে পেরেছেন। এমন কি কারো মধ্যে করোনা নিয়ে কোনো আতঙ্কও তারা দেখেননি। কিন্তু সবার মধ্যে একটাই হাহাকার ছিল, তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য নেই। ভবিষ্যতে কিভাবে বেঁচে থাকবেন, তা নিয়ে তারা ছিলেন খুবই চিন্তিত। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকসহ আরো কয়েকটি সংস্থার জরিপে পরে জানা গেল, দরিদ্র নিঃস্ব মানুষের সংখ্যা ঢাকাসহ সারা দেশে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

অবশেষে আইসিডিডিআরবি পরিচালিত করোনা নিয়ে এক গবেষণায় একই ধরনের খবরের সমর্থন মিলল। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের কয়েকটি বস্তি ও তার আশপাশে নিম্নজীবী মানুষের ওপর গত বছরের অক্টোবর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারির তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তারা এ গবেষণাটি করেছে। তাতে তারা দেখেছে, ৬৮ শতাংশ মানুষের দেহে করোনার অ্যান্টিবডি রয়েছে। জরিপকারী সংস্থা কোন দৃষ্টিকোণ থেকে এর ফলাফল প্রকাশ করেছে তা স্পষ্ট নয়। তবে মিডিয়া এটি প্রচারে কিছুটা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে। কারো দেহে একটি রোগের এমন অ্যান্টিবডির অস্তিত্ব মানে জীবাণুটি তার দেহে সংক্রমিত হয়েছে। প্রথম আলো খবরটি প্রকাশ করতে গিয়ে একপর্যায়ে লিখেছে, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বস্তিতে সংক্রমণের হার বেশি। কিন্তু বাস্তবে সেখানে কোনো রোগী ও মৃত্যু সেভাবে দেখা যাচ্ছে না।’ খবরের বিস্তারিত বিবরণে দেখা যায়, বাংলাদেশের বস্তিতে করোনা কেন এমন আচরণ করছে গবেষণাকারীরা এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারছেন না। তারা কিছু আনুমানিক কথা বলেছেন সান্ত্বনা হিসেবে।

আরো কিছু বিশ্লেষণ গবেষণাকারীর পক্ষ থেকে তুলে ধরা হলো এবং মিডিয়াও তা আগ্রহভরে প্রকাশ করল। সেটা হচ্ছে, দেহে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি মানে করোনায় আক্রান্ত হলে তিনি সহজে রেহাই পাবেন এমন নয়। তারা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যা বলতে চাইলেন তার সোজা অর্থ করলে দাঁড়ায়, শরীরে এমন অ্যান্টিবডি থাকার নিশ্চিত কোনো সুফল নেই। পরোক্ষভাবে তারা এই আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন যে, করোনার নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে বস্তিবাসীরও ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। গবেষণার ফলাফল ও সংবাদটির প্রক্ষেপণ এমনভাবে হয়েছে যাতে বস্তিবাসীদের নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। গবেষণাকারী ও মিডিয়া উভয়টি এ দেশের অভিজাত শ্রেণী দ্বারা পরিচালিত। প্রচারণা থেকে অনেক সময় এমনটা মনে হতে পারে বস্তি বা নিম্নজীবীরা করোনা সংক্রমণের কারণ বা তারাই মহামারীর শঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে। যার ফাঁদে পড়ে যেতে পারে উচ্চবিত্ত বা সমাজের অভিজাতরা। আইসিডিডিআরবির এ গবেষণা থেকে প্রমাণ হয় বস্তিতে গণহারে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে ভাইরাসটির সংক্রমণ তাদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কোনো কারণ হয়নি। গবেষণাকারীরা জানাচ্ছেন, বস্তিতে সংক্রমিতদের বেশির ভাগের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায়নি। কারো কারো ক্ষেত্রে মৃদু লক্ষণ দেখা গেছে।

হাসপাতালে যখন অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির করোনাজনিত কারণে রোগে ভোগার খবর আসছে তখন দেখা গেল, বস্তিতে জরিপ হচ্ছে সেখানে করোনা কী আচরণ করছে। ব্যাপারটি রহস্যজনক। আইসিডিডিআরবি করোনাকে আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য উচ্চবিত্তদের ওপরও জরিপ চালাতে পারে। তা হলেই কেবল তুলনা করে দেখা যেতে পারে, আসলে করোনা নামক এই রহস্যজনক ভাইরাস কার ওপর কেমন আচরণ করছে।
করোনা বেশি রোষ দেখিয়েছে আমেরিকায়। সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের ওপর সবচেয়ে বেশি চড়াও হয়েছে এ পর্যন্ত। সব হিসাবে-নিকাশ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সবচেয়ে কম সংক্রমণ ঘটাতে পারার কথা। ধারণা হলো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হলে করোনা মানুষকে কাবু করতে পারে না। সবচেয়ে ধনী দেশের মানুষরা জীবনভর পুষ্টিকর খাদ্য খেয়েছে। এর ওপর তাদের রয়েছে সর্বোচ্চ খাদ্য নিরাপত্তা। ভেজাল দূষিত মানোত্তীর্ণ খাবার পরিবেশন হওয়ার সুযোগ নেই সে দেশে। তাই তাদের স্বাস্থ্য অটুট। এ তো গেল সুস্বাস্থ্যের প্লাস পয়েন্ট। তাদের চিকিৎসাব্যবস্থা সর্বোন্নত এতে সন্দেহ থাকার কথা নয়। জনপ্রতি ডাক্তার, হাসপাতালের বেড ও নার্সের সংখ্যা পর্যাপ্ত রয়েছে। কোটি কোটি আক্রান্ত আমেরিকান রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছে। এর পরও সংক্রমণ ও মৃত্যুতে আমেরিকা সবার ওপরে। গড় মৃত্যু ও গড় সংক্রমণেও বহুগুণে তারা বিশ্বের অন্যান্য দেশকে ছাড়িয়ে গেছে।
অনেকে হয়তো যুক্তি দেখাতে চাইবেন, ট্রাম্পের ভ্রান্তনীতির কারণে সংক্রমণ সেখানে সীমা ছাড়িয়ে যায়। প্রথমে গুরুত্ব দেয়নি সে কারণে সেটা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো সারা দেশে বিস্তার লাভ করেছে। ট্রাম্পের করোনানীতি বলতে যে কিছু ছিল না সেটা নানাভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি মূলত করোনাকে কোনো পাত্তাই দেননি। এটিকে তিনি আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন। তার মতে, এটি একটি অভিশাপ। কেবল পাপিতাপির জন্য এটি পৃথিবীতে এসেছে। তার মত, ঈশ্বরের বাছাই করা মানুষদের এটি কিছু করবে না। অবশ্য পরে তিনি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বোচ্চ ভিআইপি চিকিৎসাও পেয়েছেন। যদিও আগেই তিনি করোনা নিয়ে উদ্ভট উন্নাসিক আচরণ করেন। তিনি বলেছিলেন, করোনায় আক্রান্ত আমেরিকানদের গুয়ান্তানামো বে-তে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আরেকবার ইনজেকশন পুশ করে দেহে সাবান পানি ঢোকানোর পরামর্শ দেন তিনি। যাতে করে যুদ্ধ করে করোনাকে দেহের ভেতর পরাজিত করা যায়।

ট্রাম্পের এসব পাগলামি এবং শুরুতে জোরালো ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে আমেরিকা করোনায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়েছে এমন বলার সুযোগ নেই। ইউরোপের উন্নত কয়েকটি দেশও একইভাবে করোনায় বিধ্বস্ত হয়েছে। সেসব দেশে সংবেদনশীল সরকারপ্রধান ও উন্নত নীতি এবং ব্যবস্থা কার্যকর ছিল। মহামারী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বাস্তবায়নে তারা কেউ গাফিলতি করেননি। সংক্রমণ ও মৃত্যুহারের সিরিয়াল করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই থাকবে রাশিয়া, ইউরোপের যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালি। অন্য দিকে আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত দুর্বল প্রশাসনিক কাঠামোর দেশের সংখ্যা অনেক। বেশ কয়েকটি দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত হওয়ার কারণে বলতে গেলে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা নেই। মধ্যপ্রাচ্যেও একই ধরনের দেশ রয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকা ও এশিয়াতেও এমন বহু দেশ রয়েছে। তাদের স্বাস্থ্য কাঠামো দুর্বল। শাসন কর্তৃত্ব রয়েছে উৎপীড়কদের হাতে। সাধারণ মানুষের স্বার্থের ব্যাপারে তারা একেবারে উদাসীন। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের পাগলামির কারণে যদি করোনা মহামারী এই বিপুল বিপর্যয় ঘটাতে পারে তাহলে শাসকদের দায়-দায়িত্বহীনতার কারণে এসব দেশের পরিস্থিতি আরো বহুগুণ খারাপ হওয়ার কথা।

দুঃশাসন বিরাজ করছে, এমন কি ভেঙেপড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দেশগুলোতে করোনার খোঁজ নিয়ে দেখুন আশ্চর্য হওয়ার মতো তথ্য পাওয়া যাবে। কোনো দেশ ও অঞ্চল করোনা সংক্রমণের বাইরে নেই। প্রত্যেকটি দেশে এটি একটি বিশেষ মাত্রায় সংক্রমিত হয়েছে। এতে মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে ভাইরাসটির পছন্দকে সবচেয়ে স্বাধীন বলতে হবে। অর্থাৎ এই ভাইরাস মানুষের দেহে সংক্রমিত হওয়া এবং গুরুতর শারীরিক অবনতি করেছে তার নিজের নির্ধারিত প্যাটার্ন অনুযায়ী। যেমন- ইতালিতে দেখা গেল, এটি বেশি চড়াও হয়েছে প্রবীণদের ওপর। অপেক্ষাকৃত বয়সী মানুষের ওপর এর আগ্রাসী চরিত্র আরো বহু জায়গায় দেখা গেছে। তাই বলে এটি অন্যান্য বয়সী মানুষের ওপর কম বা মৃদু আঘাত হেনেছে এমনটিও সম্ভবত বলার সুযোগ নেই।

ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সূত্রপাত হয়, করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মাধ্যমে। এখন পাওয়া যাচ্ছে এর প্লাস মিউটেশন। সরকারি হিসেবে ভারতে প্রায় চার লাখ মানুষ মারা গেছে। বিরামহীন চিতার আগুন, সৎকারের জন্য অপেক্ষায় থাকা লাশের অন্তহীন লাইন আর গঙ্গায় ভেসে যাওয়া মরদেহ ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করলেও জনসংখ্যার অনুপাতে দরিদ্র ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক কম মানুষ মারা গেছে। এ থেকে বাঁচার জন্য যদি চিকিৎসাব্যবস্থা একমাত্র অবলম্বন হতো তাহলে এ যাত্রায় ভারতে কোটি কোটি মানুষ প্রাণ হারাত। করোনাকে দানবীয় শক্তি আখ্যা দিয়ে একে পরাস্ত করে দেয়ার আস্ফালন করছে মানুষ। অথচ এর বৈশিষ্ট্য বলছে, এটি পরাস্ত হওয়ার মতো এমন কিছু নয়। বরং এর রয়েছে মানুষের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি ও স্বাধীনতা। ইতোমধ্যে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালীদের বিনাশ করে তার প্রকাশ ভাইরাসটি ঘটিয়েছে। সবচেয়ে উন্নত প্রাণী প্রজাতি মানুষের করোনার রহস্য নিয়ে বিপুল ভাবনা চিন্তা করা দরকার। করোনা মানুষের চেয়ে শক্তিশালী হতে পারে, কিন্তু নিশ্চয়ই তার স্রষ্টার চেয়ে শক্তিশালী নয়।
jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement