শিক্ষার পুনরুদ্ধারই জাতীয় অগ্রাধিকার
- ড. এ কে এম মাকসুদুল হক
- ২০ জুন ২০২১, ১৯:০০, আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২১, ১৫:১৭
করোনা মহামারীর কারণে আজ প্রায় ১৫ মাস যাবৎ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই দীর্ঘ ছুটির কারণে শিক্ষা পরিস্থিতি খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। এর বহুমুখী ক্ষতিকর প্রভাবে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাটাই ধ্বংসের মুখোমুখি। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, উদ্যোক্তা, শিক্ষার সাথে সংযুক্ত বেসরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারী, ব্যবসায়ীসহ সবাই আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। কাজেই এই ধ্বংসোন্মুখ শিক্ষাব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধারের জন্য এই মুহূর্তে পরিকল্পনা মাফিক কাজ শুরু না করলে পুরো জাতিই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ভবিষ্যতে একটি বিকলাঙ্গ বা ‘অটিস্টিক’ প্রজন্ম সৃষ্টি হয়ে জাতিকে ভয়াবহ অবস্থায় ফেলে দেবে। কাজেই এখন সময়ের দাবি হলো- করোনায় তছনছ হয়ে যাওয়া শিক্ষাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রকল্প বা আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সুপরিকল্পিতভাবে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে শিক্ষাঙ্গনের এই জাতীয় বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়বে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিনের বন্ধের কারণে দেশের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর জীবনে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকে ১৯ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী শিখতে না পারার ঝুঁকিতে পড়ে গেছে। অর্থাৎ ৩.৪২ মিলিয়ন মাধ্যমিকের এবং ২.৫০ মিলিয়ন প্রাথমিকের মিলিয়ে মোট ৫.৯২ মিলিয়ন শিক্ষার্থী এই ক্ষতির মধ্যে আছে। তবে শহর এলাকার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মধ্যে রয়েছে। এই শহুরে শিক্ষার্থীদের ৩০ শতাংশ বালক এবং ২৬ শতাংশ বালিকা। আবার স্কুলে দীর্ঘদিন যেতে না পারার কারণে সারা দেশে ১০ থেকে ২০ বছর বয়সের ১২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনস্তাত্ত্বিক চাপে ভুগছে, তবে মানসিক সমস্যার হুমকিতে রয়েছে প্রায় সব শিক্ষার্থীই।
অন্যদিকে মহামারীর কারণে দারিদ্র্যে পড়ে থাকায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়েছে অনেক শিক্ষার্থী। ৮ শতাংশ ছেলেশিশু এবং ৩ শতাংশ মেয়েশিশু সংসারের রোজগার বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের পেশায় নিয়োজিত হয়ে পড়েছে। বেড়ে গেছে বাল্যবিয়ে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ চর্চা না থাকার কারণে তাদের পড়া ভুলে যাচ্ছে। প্রায় সবাই শিক্ষণের বড় ঘাটতি নিয়ে উপরের শ্রেণীতে উঠে পড়েছে। আর উপরের শ্রেণীতে উঠেও নতুন শিখন নিয়ে খুব একটা এগোতে পারছে না। অন্যদিকে চলমান অ্যাসাইনমেন্ট প্রক্রিয়াও বাস্তবে তেমন একটা কার্যকর প্রক্রিয়া হিসেবে শিক্ষার্থীদের পঠনে-শিখনে ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে শিক্ষাবিদরা মনে করছেন। ফলে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে শিক্ষার্থীরা আজ অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছে এবং অত্যন্ত দুর্বল মানবসম্পদ হিসেবে বেড়ে উঠছে। কারণ তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশও সমানভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের বিপুল শিক্ষার্থীর কর্মজীবনে প্রবেশ করা আটকে আছে। তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এতে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। এদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ নিজেদেরকে সামাজিক অপরাধে জড়িত করে ফেলছে। বর্তমানে আলোচিত ‘কিশোর গ্যাং’ অপসংস্কৃতিকে এই হতাশাগ্রস্তরা আরো ভয়াবহতার দিকে নিয়ে গিয়েছে।
শিক্ষার এই ক্ষতির অর্থনৈতিক একটি পরিসংখ্যানে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বলেছে- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে ভবিষ্যতের আয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীপ্রতি ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১৮০ মার্কিন ডলার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ ছুটির ফলে বাংলাদেশের মতো দেশে ধনী-দরিদ্র বৈষম্যের অভিশাপ শিক্ষাক্ষেত্রকে গ্রাস করতে যাচ্ছে। এ সময়ে শহুরে ধনিক শ্রেণীর সন্তানরা সামর্থ্যরে কারণে বিভিন্ন অনলাইন পদ্ধতিতে কিছুটা হলেও তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারলেও দরিদ্র শ্রেণী ও গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। ফলে শিক্ষাঙ্গনেও বিশাল বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে দীর্ঘদিন লেখাপড়া থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে একটি বিকলাঙ্গ বা দুর্বল প্রজন্ম সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার একটি বীভৎস-বিশৃঙ্খল মুখোশ উন্মোচনের পাশাপাশি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দৈন্যও সুস্পষ্ট করে দিয়েছে। দেশের শিক্ষাঙ্গনের নেতৃত্বে যারা আছেন তাদের নিষ্ক্রিয়তা, অদূরদর্শিতা এবং অপরিপক্বতার জন্যই করোনা মহামারীতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর এক বছরের বেশি সময় পার হওয়ার পরও তারা শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘খুলতে পারা’ বা ‘না পারার’ চক্রে বন্দী হয়ে আছেন। তাদের দৃষ্টি শুধুই করোনা সমাপ্তির দিকে আবদ্ধ। অথচ মহামারীর শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই বোঝা গিয়েছিল, এই মহামারী দীর্ঘায়িত হতে যাচ্ছে। তারপরও তারা চার কোটি শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে সুগভীর চিন্তা করে করোনাকে সাথে করেই কিভাবে শিক্ষাজীবন চালিয়ে নেয়া যায় সে বিষয়ে মনোযোগী হতে পারেননি।
তাই এই মহামারীতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দিন স্কুল বন্ধ থাকা ১৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম (প্রথম আলো ৫ মে ২০২১)। অথচ আমরা হরহামেশাই দাবি করছি, করোনা আমাদের অনেক কম ঘায়েল করতে পেরেছে বা আমরা করোনা মোকাবেলায় সফল হয়েছি! সরকারিভাবে টিভি ক্লাস চালু হয়েছে কিন্তু তাতে মাত্র ২ শতাংশ প্রাথমিকের ও ৩ শতাংশ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী যোগদান করেছে। তাছাড়া সার্বিকভাবে মাত্র ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী দূরশিক্ষণের সাথে যুক্ত হতে পেরেছে ((Power and Participation Research Centre-(PPRC) and Brac Institute of Governmence and Development- (BIGD). (ডেইলি স্টার ১১ মে ২০২১) বিশ্বব্যাংকের জরিপ তথ্যমতে, মহামারীর আগে দেশে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৫৮ শতাংশ ন্যূনতম পড়ার দক্ষতা অর্জন করতে পারে। এই সংখ্যা এখন ৭৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আগে চার বছর বয়সে তাদের স্কুলে যাওয়া শুরু হতো, কিন্তু এখন তা পাঁচ-ছয় বছরে পড়ে যাবে। অর্থাৎ শুরুতেই প্রায় দুই বছর হারিয়ে যাবে প্রতিটি শিশুর শিক্ষাজীবন থেকে। (যুগান্তর ৩০ মে ২০২১)
এদিকে করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রথম শিক্ষাবর্ষ পেরিয়ে দ্বিতীয় বছরের প্রায় অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আমরা ক্ষয়ক্ষতির সঠিক কোনো তথ্য প্রস্তুত করতে পারিনি। কী পরিমাণ ছাত্র ঝরে পড়ল, শিক্ষার্থীদের শিখন ফলের বাস্তবিক অবস্থাটা কী ইত্যাদি কোনো বিষয়েই সরকারি কোনো গবেষণা বা সার্ভে প্রতিবেদন আজ পর্যন্ত আমরা দেখতে পাইনি। এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি সুনির্দিষ্ট কোনো বিকল্প পরিকল্পনা যাতে করে করোনার ‘ঊর্ধ্ব ও নিম্ন’ উভয় গতির মাঝেও শিক্ষাব্যবস্থা স্থবির না হয়ে পড়ে। আমাদের এবারের বাজেট পর্যালোচনা করেও মনে হচ্ছে, সরকারের কাছে খুব একটা গুরুত্ব পায়নি শিক্ষা পুনরুদ্ধারের চিন্তা। বাজেটের মাত্র ১১.৯ শতাংশ অর্থ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যেখানে শিক্ষাবিদদের মতে, কমপক্ষে ২০ শতাংশ প্রয়োজন শিক্ষা পুনরুদ্ধার কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য। উন্নয়নশীল দেশগুলো এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শিক্ষায় এটিই সর্বনিম্ন বরাদ্দ বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। ইউনেস্কোর পরামর্শ মোতাবেক ‘জিডিপি’-এর ৪-৬ শতাংশ থাকলেও আমাদের মাত্র ২ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে (ডেইলি স্টার ৭ জুন ২০২১)। এর আগেও করোনার প্রথম ঢেউ শুরু হলে শিল্প-বাণিজ্য, কৃষিসহ প্রায় সব খাতে প্রণোদনা দেয়া হলেও শিক্ষা খাতে কোনো প্রণোদনা দেয়া হয়নি (শুধু বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা অনুদান ছাড়া)।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে বহুমুখী ক্ষয়ক্ষতির বলয় থেকে বের করে নিয়ে আসতে হলে প্রথমেই দায়িত্বশীলদেরকে এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করে যথাযথ পরিকল্পনা বা প্রজেক্ট হাতে নিতে হবে। এই ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমাদেরকে ক্ষতির পরিমাণ ও ভয়াবহতা নিরূপণ করতে হবে। বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে অথবা সরকারের নিজস্ব পদ্ধতিতে এই জরিপ সম্পন্ন করতে হবে দ্রুততার সাথে। সেই সাথে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, করোনাও চলবে এবং লেখাপড়াও চলবে। এ জন্য বিকল্প উপায় খুঁজে বের করতে হবে। প্রথম বিকল্প হতে পারে অনলাইন ক্লাস। এর বাস্তবায়নের জন্য পুরো দেশব্যাপী অবকাঠামো বিস্তৃত করা এবং শিক্ষার্থীদের সহজেই অনলাইন সুবিধা ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার ব্যবস্থা করতে হবে। অনলাইন এবং শ্রেণীপাঠ এই দুই পদ্ধতির সমন্বয়ে শিক্ষাকার্যক্রম চালাতে হবে। করোনার প্রকোপ বাড়লে সপ্তাহে চারদিন অনলাইন এবং দু’দিন শ্রেণীপাঠদান রাখা যেতে পারে যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিক্ষার্থীকে কমপক্ষে একদিন হলেও বিদ্যালয়ে আসার সুযোগ দেয়া যায়। আর শ্রেণীপাঠদানের দিন শুধু আগের অনলাইন পাঠের পুনরালোচনা এবং প্রশ্নোত্তরের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এ জন্য অনলাইন পরীক্ষা পদ্ধতি এবং যথাযথ অ্যাপস প্রণয়ন করে শিক্ষার্থীদের শিখন দক্ষতা যাচাই ও পরবর্তী শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবে এই জন্য আপৎকালীন সময়ে বিষয় কমিয়ে প্রাথমিকে ‘বাংলা ও অঙ্ক’ এবং মাধ্যমিকে ‘বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক ও বিজ্ঞান’ রাখতে হবে। সেই সাথে পাঠ্যসূচিও কিছুটা কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
এরপর তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে শিক্ষার্থীদের করোনা ছুটিতে আড়ালে চলে যাওয়া পাঠসমূহকে শিখনের জন্য। বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক ও বিজ্ঞানের মতো মূল বিষয়গুলো না ‘পড়তে পারা’ পাঠ্যসূচিকে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের বর্তমান শ্রেণীর পাঠদান করতে হবে যেন তাদের শিখন দক্ষতার ঘাটতি কাটিয়ে উঠানো যায়। এই তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনায় দীর্ঘ সময়ের উৎসব ছুটিকে কাটছাঁট করে পাঠদানের সময় বাড়াতে হবে এবং সপ্তাহে ছয় দিনই পাঠদান (শ্রেণী বা অনলাইন) কার্যক্রম চালাতে হবে। সেই সাথে ‘পিইসি’ এবং ‘জেএসসি’ পরীক্ষা বাতিল করতে হবে এবং ‘এসএসসি’ ও ‘এইচএসসি’তে বিষয় কমিয়ে মাত্র সাত দিনের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে হবে। বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের শিখনদক্ষতা যাচাই করে পিছিয়ে পড়াদের আলাদা করতে হবে। এই পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনার আওতায় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন এনজিওকে দায়িত্ব দিতে হবে তাদের ঘাটতি পূরণ করার জন্য। তাছাড়া বিশ^বিদ্যালয় পাস করা বা পড়–য়া অসংখ্য বেকার তরুণ রয়েছে যাদেরকে এই পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নেয়ার জন্য ভলান্টিয়ার হিসেবে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। স্থানীয় থানা শিক্ষা অফিসের আওতায় খণ্ডকালীন চাকরি হিসেবে এ শিক্ষিত তরুণদের কাজে লাগানো যেতে পারে। অনলাইনে শিক্ষাদানপদ্ধতিকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে প্রতিটি শ্রেণীর বিষয়ভিত্তিক লেকচার রেকর্ড করে অ্যাপসের মাধ্যমে আপলোড করে দিলে ছাত্রছাত্রীরা নিজস্ব সময়ে সেগুলো অনুসরণ করবে আর পরবর্তীতে শ্রেণী পাঠদানকালে বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে সেই বিষয়ে ধারণা বা শিখন পরিষ্কার করে নেবে। তবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য শিক্ষকদেরকে যথাযথ প্রশিক্ষিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পরিকল্পিত উপায়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য একটি পৃথক শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে। আমাদের দেশে অনেক প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ তৈরি হয়েছেন যারা দেশের শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে সক্ষম এবং উদ্যোগী হতে চান। ওই সমস্ত দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদকে এই শিক্ষা কমিশনে সংযুক্ত করে তাদের পরামর্শ ও নির্দেশনা মোতাবেক শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজালে জাতি এই বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেতে পারে। শুধু ব্যুরোক্র্যাটিক এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয়। শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে পুনর্গঠন করে দেশ ও জাতিকে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত আদর্শবাদী শিক্ষাবিদদেরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সেই সাথে এই প্রস্তাবিত শিক্ষা কমিশনের অধীনে একটি শিক্ষাগবেষণা সেল গড়ে তুলতে হবে, যারা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য কাজ করবেন যেন আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা করোনা মহামারীতে তাদের শিক্ষাজীবনের ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারে।
চলতি মহামারীতে শিক্ষার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে এবং হচ্ছে। আমাদের দেশের শিক্ষা নিয়ে যারা চিন্তা করেন তারা এসব লেখালেখি এবং বিভিন্ন ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে তাদের মতামত ও প্রায়োজনীয় পদক্ষেপসমূহ সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরছেন। কিন্তু এসব গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করছে কি না আমরা বুঝতে পারছি না। তবে এগুলো আমলে নিতে পারলে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর হবে। আর আমরা যদি করোনা সমাপ্তির জন্য বসে থাকি তা হলে হয়তো আরো বছরখানেক আমাদেরকে শিক্ষার সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ করে বসে থাকতে হবে। ততদিনে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা খাদের কত গভীরে ডুবে যাবে তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে। তাই করোনা ‘শেষ হলে নয়’ বরং করোনাকে ‘সাথে নিয়েই’ আমাদের শিক্ষাকে চলমান রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email: [email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা