দুর্ঘটনা নয়, দুর্যোগ
- মীযানুল করীম
- ২৩ মে ২০২১, ২০:৩৪
বজ্রপাত এখন আর নিছক দুর্ঘটনা নয়; এটা অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে উঠেছে। ১১ মে টিভির খবর, দেশের তিনটি জেলায় চারজন বজ্রপাতে মারা গেছেন। পরদিন চার জেলায় পাঁচজন বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন। জামালপুরের উপজেলা ইসলামপুরে ছয়জনসহ আরো বহু লোক মারা যাচ্ছেন এবং যেতে পারেন। এর আগের সপ্তাহে আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেলের বার্তা, সংশ্লিষ্ট মার্কিন সংস্থা কয়েক হাজার বজ্রপাতের ঘটনা শনাক্ত করেছে।
কয়েক বছর আগেই জানা যায়, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়ে থাকে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলা ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য সীমান্তে। এর পরিসংখ্যান গা শিউরে ওঠার মতো। উল্লেখ্য, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বর্ষণ ঘটে (প্রতিদিনই) যে চেরাপুঞ্জিতে, সে এলাকা এখানেই ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় শীর্ষে অবস্থিত। এখানে বৃষ্টিপাত যেমন বেশি; তেমনি বজ্রপাতও। হয়তো জনবসতি কম হওয়ার কারণে, চেরাপুঞ্জির বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বাংলাদেশের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম। যাই হোক, বন্যা, ঝড়, ভাঙন, ভ‚মিকম্প, সুনামি, দাবানল, অগ্নিকাণ্ড, হিমবাহ প্রভৃতির মতো বজ্রপাতের ব্যাপারেও সতর্কতামূলক প্রস্তুতি নিতে হবে, যাতে এর ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা না গেলেও অন্তত কমানো সম্ভব হতে পারে। বর্ষা শুরু হওয়ার সাথে সাথে বজ্রপাতের মতো দুর্যোগ এবং এর ক্ষতিও শুরু হয়ে যায়। এর পরিমাণ যাতে লাগামছাড়া বেড়ে না যায়, সে জন্য অত্যধিক সাবধানতা প্রয়োজন। এ জন্য তালগাছ লাগানো এবং বাড়িঘরের আর্থিং সিস্টেমের নিশ্চিয়তা, তা ছাড়া ব্যাপক প্রচারণা ও সচেতনতা বিশেষভাবে বিবেচ্য। এ দিকে বজ্রপাতে দেশে ‘মরণমিছিল’ শুরু হয়ে গেছে আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ষার আগমনের আগেই। বাংলাদেশের বহু জেলায় বৃষ্টির সাথে বজ্রপাতে মৃত্যু ঘটছে মানুষের।
‘বজ্র’ শব্দটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। এই সংস্কৃত শব্দটা বিশেষ্য ও বিশেষণ দু’ভাবেই বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত। ‘বজ্র’ কথাটা এত বেশি প্রচলিত যে, একটি সম্প্রদায়ের কারো নাম ‘ব্রজ’ হলেও তাকে ভুল করে ‘বজ্র’ হিসেবে অনেকে উল্লেখ করে থাকেন। আকাশের বুকে মেঘমালায় আলোকের চোখ ধাঁধানো তীব্র বিচ্ছুরণ এবং এরপর শব্দের প্রচণ্ড বিস্ফোরণের সাথে প্রবল বিদ্যুতের দীর্ঘ সঞ্চার ঘটে থাকে। এটাই ‘বজ্র’ নামে অভিহিত।
উইকিপিডিয়াতে উল্লিখিত রয়েছে, বজ্রপাতে electrostatic discharge হয়ে থাকে প্রাকৃতিকভাবে। মহাকাশে কিংবা ভ‚মিতে বিদ্যুতের চার্জযুক্ত দু’টি অঞ্চল সাময়িকভাবে পরস্পর সমতা অর্জন করলে এক ‘গিগাজুল’ পরিমাণ শক্তি নিষ্ক্রান্ত হয়ে থাকে। এ সময়ে ইলেকট্র্রনের দ্রুত চলাচলের কারণে অত্যধিক উত্তাপের সৃষ্টি হয়। ফলে ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎচুম্বকীয় বিকিরণ ঘটে। বিদ্যুতের চমক বজ্রের জন্ম দেয়। এ সময়ে যে প্রচণ্ড শব্দ শোনা যায়, তার কারণ- আশপাশের গ্যাসের চাপ হঠাৎ বেড়ে গেলে ‘শকওয়েভ’ সৃষ্টি হয়। আগ্নেয়গিরির উদগীরণকালেও বিদ্যুতের চমক দেখা যেতে পারে। বজ্রপাতের সাথে সাধারণত ঝড়ঝঞ্ঝা ও শিলাবৃষ্টি জড়িত থাকে।
জানা গেছে, বছরে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন বিদ্যুতের চমক পৃথিবীর মহাকাশে পরিদৃষ্ট হয়। প্রতি সেকেন্ডে গড়ে পাঁচটি বিদ্যুৎ চমক ঘটে থাকে। বজ্রপাত বা বজ্রবিদ্যুতের হিসাব রাখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কর্তৃপক্ষ। কয়েক বছর আগে তারাই জানান, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়ে থাকে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ এবং ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তে। ৭০ শতাংশ বজ্রপাত পৃথিবীর বিষুবীয় ভ‚মিতে ঘটে থাকে। তবে বজ্রপাত কিভাবে ঘটে কিংবা কখন হবে, তা আজো বিজ্ঞান নির্ধারণ করতে পারেনি। জানা গেছে, মানুষসহ প্রাণীর ৯০ শতাংশই বজ্রপাতে আঘাত পেয়েও বেঁচে যায়। তবে এতে মৃতের সংখ্যাও কম নয়। বজ্রপাত দাবানলের একটা বড় কারণ। তবে ভ‚মির উর্বরতা অনেক বাড়িয়ে দেয় এই বজ্রপাত। উল্লেখ্য, বিমানে বজ্রপাতের ঝুঁকি খুব বেশি থাকার কথা। তবে বিমান অ্যালুমিনিয়ামের দ্বারা বিশেষভাবে তৈরি বিধায় তা বিপজ্জনক হতে পারে না।
বিভিন্ন ধর্মে বজ্রপাতের বিষয়ে বলা হয়েছে। ইসলামে বজ্রপাতকে পাপের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক দুর্যোগ বলে উল্লেখ করা হয়। এ জন্য বজ্রপাতের সময় যে দোয়াটা বেশি পড়তে হয় তা হলো- লা-হাওলা ওয়ালা-কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিয়্যুল আজিম।
ইহুদি ও খ্রিষ্ট ধর্মেও বজ্রপাতের কথা বলা হয়েছে। খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করেন, যিশুখ্রিষ্টের পুনরাগমন বজ্রপাতের বিদ্যুতের চমকের সাথে তুলনীয়। প্রাচীন গ্রিসের ‘দেবতা’ জিউস, দক্ষিণ আমেরিকার আজটেক সভ্যতার ‘দেবতা’ লালোক এবং মায়া সভ্যতার ‘দেবতা’ কে, ইউরোপের স্লাভদের পৌরানিক ব্যক্তিত্ব পেরুন, বাল্টিক জনগোষ্ঠীর পেরক্স, নরওয়ের থর, ফিনল্যান্ডের উক্কো, হিন্দুদের ইন্দ্র, শিন্টো ধর্মের রাইজিন, প্রমুখ দেবতা বা পৌরাণিক পুরুষ বজ্রের সাথে সম্পৃক্ত। আফ্রিকার বান্টু উপজাতির বিশ্বাস, বজ্রবিদ্যুৎ হলো সৃষ্টিকর্তা বা আল্লাহর ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশের প্রধান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, হিন্দুদের ধর্মীয় বিশ্বাসমতে, পৌরাণিক মুনি দধীচির হাড় দিয়ে তৈরি করা একটা অস্ত্রের নাম বজ্র, যা দেবতা ইন্দ্র ব্যবহার করেছিলেন। আরো বিশ্বাস করা হয়, অসুরদের নিধনার্থে বজ্র নির্মাণের জন্য দধীচি স্বেচ্ছায় প্রাণত্যাগ করে নিজের পাঁজরের হাড় দেবতাদের দান করেছিলেন। এ দিক দিয়ে তিনি ‘বিশ্বের মঙ্গলার্থে আত্মদানকারী মহাপুরুষ’। বাংলা ভাষায় বজ্রসহযোগে বহু শব্দ রয়েছে। বজ্রপাত এমনভাবে নিয়মিত বাড়ছে এবং অধিকতর মৃত্যুসহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে যে, এটাও এখন বিশ্বে ভ‚মিকম্প, হিমবাহ, দাবানল, সুনামি প্রভৃতির মতো ভয়াবহ দুর্যোগ হয়ে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির যেমন ওতোপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে, তেমনি মনে করা হচ্ছে, এটা বজ্রপাতের মাত্রা এবং সংখ্যাও বৃদ্ধি করেছে।
ইংরেজিতে বলা হয়, The bolt from the blue অর্থাৎ ‘বিনা মেঘে বজ্রপাত’। ধারণা করা হয়, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যার হোতা এবং বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরপুত্র কুখ্যাত মীরন পলাশীর প্রহসনমূলক যুদ্ধের কয়েক বছর পর বিহারে এক সামরিক অভিযানে গেলে তাঁবুর ওপর ‘বিনা মেঘে বজ্রপাতে’ তার শোচনীয় মৃত্যু ঘটেছিল। আরো বিশ্বাস করা হয়, বজ্রপাতের শিকার হয়ে যারা মারা যায়, তাদের হাড়গুলো অতীব মূল্যবান। এ জন্য অনেক সময়ে কবর থেকেও তাদের লাশ চুরি করা হয়। জানা গেছে, বজ্রপাতের শিকার হলে মানুষসহ যেকোনো প্রাণী আগের অবস্থায় থাকে; অর্থাৎ বসা, দাঁড়ানো বা শোয়া অবস্থার পরিবর্তন হয় না। তবে কারো স্পর্শ পেলেই সে নিষ্প্রাণ দেহ পড়ে যায়। একটা কথা বিশ্বাস করা হয় যে, ‘এক জায়গায় দুইবার বজ্রপাত ঘটে না।’ আসলে এটা সত্য নয়।
কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হচ্ছে, বজ্রপাত কেবল ধর্ম নয়; রাজনীতিতেও উল্লেøখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। কারণ বজ্রবিদ্যুৎকে ‘ক্ষমতার প্রতীক’ ধরে নেন অনেকে। যেমন- সিঙ্গাপুরের পিপলস অ্যাকশান পার্টি, ব্রিটিশ ইউনিয়ন অব ফ্যাসিস্টস (ত্রিশের দশকে), যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্টেটস রাইটস পার্টি (পঞ্চাশের দশকে) এ প্রতীক ব্যবহার করেছে। নাৎসিদের প্যারামিলিটারি Schutzstaffel বাহিনীও এটা করত। জার্মানরা বিশ্বযুদ্ধে ‘ব্রিৎজক্রিগ’ কৌশল প্রয়োগ করত যার অর্থ, ‘বিদ্যুৎবেগের লড়াই’।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা বজ্রপাত থেকে সুরক্ষার জন্য ‘আর্থিং’ বা ‘অ্যারেস্টার’ স্থাপনের ওপর জোর দিয়ে সম্পাদকীয় লিখেছে। এটি প্রায় পুরোই তুলে ধরা হলো- ‘বজ্রপাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই মানুষ মারা যাচ্ছে, আহত হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে দেশে মারা গেছে এক হাজার ৪০০ মানুষ। কত মানুষ আহত হয়েছে, গবাদিপশু মারা গেছে কতগুলো, কত গাছ ধ্বংস হয়েছে, সেসব হিসাব জানা যায় না। দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ ও আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মূলত বায়ুদূষণ বাড়ার কারণে দেশে বজ্রপাত বাড়ছে। নদী বা জলাভ‚মি শুকিয়ে যাওয়া, বনভ‚মি ধ্বংস করাও বজ্রপাত বাড়ার কারণ। বজ্রপাত বাড়া মানে, মানুষের হতাহত হওয়ার ঝুঁকি বাড়া। বজ্রপাতের ক্রমবর্ধমান বিপদ সম্পর্কে সরকারও সজাগ। ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বজ্রপাত প্রতিরোধে এক কোটি তালগাছ লাগানোর কথা রয়েছে। লাইটনিং অ্যারেস্টার যন্ত্র বসানোর কথাও ছিল। এর অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যায়নি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় তালগাছ লাগাচ্ছে। এটা একটি ভালো উদ্যোগ। তবে তালগাছগুলো বজ্রপাত প্রতিরোধের মতো সক্ষম বা বড় হতে কমবেশি ১০ বছর সময় লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এ জন্য তারা জরুরি ভিত্তিতে লাইটনিং অ্যারেস্টার বসানোর ওপর জোর দিচ্ছেন। আমরা চাইব, দ্রুত লাইটনিং অ্যারেস্টার যন্ত্র বসানোর ব্যবস্থা করা হবে। হাওরাঞ্চলসহ যেসব এলাকায় বেশি বজ্রপাত হয়, সেসব এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করতে হবে। তালগাছ লাগানো হলেও এর স্থান নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বজ্রপাতে সাধারণত চাষাবাদের কাজে নিয়োজিত কৃষক মাঠ বা জলাধারের পাশে অবস্থানরত মানুষ মারা যায়। কিন্তু তালগাছগুলো লাগানো হয়েছে মূলত রাস্তার পাশে। এতে বজ্রপাত রোধের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। বজ্রপাতপ্রবণ স্থানে তালগাছ লাগানো জরুরি।’
সম্পাদকীয় নিবন্ধটির শেষ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করা হয়, ‘বজ্রপাত সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোও জরুরি। কখন বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকে, বজ্রপাতের সময়ে কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, কোথায় আশ্রয় নিতে হবে, সেসব বিষয়ে মানুষকে বিশেষ করে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের ব্যাপক হারে জানাতে হবে।’
এ সম্পাদকীয়তে ‘হাওরাঞ্চল’ বলতে মূলত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাংশের সীমান্ত সংলগ্ন এবং গারো খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার হাওর এলাকাকে বুঝানো হয়েছে।
বজ্রপাত নিরোধে যে অ্যারেস্টারের কথা জোর দিয়ে বলা হয়, তা অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে প্রচলিত। তবে ইদানীং অনেকে এ বিষয়ে উদাসীন বলে প্রতীয়মান। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি, টিনের ঘরও যাতে বিদ্যুতের প্রবাহ থেকে নিরাপদ থাকে, সে জন্য ‘আর্থিং’ থাকত। এটা হলো, মাটির সাথে সংযুক্ত তার। এখন হয়তো অনেক বড় ভবনের ‘আর্থিং’ নেই অথবা তা পর্যাপ্ত নয়।
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের কথা অনেকের জানা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার একজন অগ্রসেনা ছাড়াও তিনি ছিলেন বিজ্ঞানী, গবেষক, উদ্ভাবক এবং রাজনীতিক। ঘুড়ি উড়িয়ে এর বিদ্যুৎ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময়ে বজ্রপাত হওয়ার কথাও আমরা জানি। ফ্রাঙ্কলিন সম্ভাব্য বজ্রপাতের ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য একটি যন্ত্র ব্যবহার করতেন, যা অ্যান্ড্রু গর্ডন ১৭৪২ সালে উদ্ভাবন করেছিলেন।
বজ্রপাতের সময়ে আলোর খানিক পরে শব্দ শোনা যায়। কারণ আলোর গতিবেগ শব্দের চেয়ে অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে প্রতি সেকেন্ডে আলো এগিয়ে থাকে এক হাজার ১২৫ ফুট। জানা গেছে, ১০০ মাইল দূরের বিজলি চমকও দেখা যায় এবং বজ্রের শব্দের গতি ২০ মাইল প্রতি ঘণ্টায়।
অনেক সময়ে দৃশ্যত কোনো মেঘ ছাড়াও বজ্রপাত হতে পারে। এটাকেই ‘বিনা মেঘে বজ্রপাত’ বলা যায়। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় রকি পর্বতে এটা বেশি চোখে পড়ে।
আগেই বলেছি, তালগাছ বজ্রপাত আকর্ষণ করে নিজে মরণকে বরণ করে মানুষসহ প্রাণীর জীবন বাঁচায়। বাল্যকালে দেখেছি আমাদের মফঃস্বল শহরটিতে একসাথে তিনটি প্রজ্জ্বলিত তালগাছকে। এগুলো বজ্রপাতে পুড়ে গিয়েছিল। অনেক বছর ধরে গাছ তিনটি ছিল কালের সাক্ষী। এ কারণে তালগাছ বড় হতে সময় লাগলেও এ বৃক্ষ রোপণকে গুরুত্ব দিতে হয়।
আরেকটা কথা, হাওর এলাকায় বজ্রপাতের হার খুব বেশি হওয়ার হেতু হলো- সেখানে পানির বিস্তীর্ণ সমতল উপরিভাগে কোনো একটা গাছ, মানুষ কিংবা নৌকা বা অন্য কোনো কিছু দেখা গেলেই তার ওপর বজ্র আপতিত হয়। সমতলের ওপরে কিছু একটার উচ্চতা যা-ই হোক, তা বজ্রকে আকৃষ্ট করে। এ জন্য, আকাশে বিজলি চমকালে বড় গাছের নিচে অথবা ধাতব ছাদের বাড়িতে আশ্রয় না নিতে তাগিদ দেয়া হয়।
পুনরুক্তি : ক, বজ্রপাতে কেবল মানুষ প্রাণ হারায়, তা নয়। অন্যান্য প্রাণীরও মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটছে এতে। যেমন- এবার আমাদের ঈদের দিন গত ১৪ মে শুক্রবার টিভির খবরে জানা যায়, ভারতের আসামে বজ্রপাত কেড়ে নিয়েছে ১৮টি হাতীর জীবন। বিশ্বে সর্বাধিক বজ্রপাতের ঘটনাস্থল ভারতের মেঘালয় প্রদেশ। এটা ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ছিল আসামের অংশ। সে আসামেই এখন মাত্র দু-একটি নয়, অনেক হাতী নিহত হচ্ছে বজ্রপাতের কবলে। বৃহত্তম স্থলচর স্তন্যপায়ী প্রাণীও বজ্রের কাছে একান্ত অসহায়।
খ. বজ্রপাতের বৈদ্যুতিক ক্ষমতা, তথা সংশ্লিষ্ট আগুনের পরিসর, অনেক। এর এই ক্ষমতার ভয়াবহতা দেখেই এটাকে ‘দেবরাজ’ ইন্দ্রের দৈত্য দমনের হাতিয়ার হিসেবে বিশ্বাস করছেন একটি সম্প্রদায়ের অনেকেই। তবে বজ্রপাতের আগুনে যত মানুষের প্রাণহানি হয়ে থাকে, সভ্যতাদর্পী মানুষের অকারণ মর্টার-মিসাইলের আগুনে এর চেয়ে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটছে। এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময়ে ফিলিস্তিনের গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের সর্বাত্মক হামলায় বহু শিশু ও নারী সমেত কয়েক শ’ মানুষ হতাহত হওয়াই এর সাক্ষ্য দেয়। উদ্দেশ্যমূলক এ মারাত্মক হামলায় শরণার্থী শিবির কিংবা নিরীহ নির্দোষ মুসলিম নর-নারীও রেহাই পায়নি বর্বরতা থেকে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা