০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

অপরাধের বিস্তার ও নারী নির্যাতন

অপরাধের বিস্তার ও নারী নির্যাতন - ফাইল ছবি

পত্রিকার খবরে দেখা গেছে, ধর্ষণের ঘটনা এবং পাড়ায় পাড়ায় উঠতি মাস্তানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মনে হয়, জাতি এক ভয়াবহ সঙ্কটের মধ্যে আছে। এটা আরো বৃদ্ধি পাবে, যদি এখনই কার্যকর মোকাবেলার উদ্যোগ না নেয়া হয়। উঠতি মাস্তানদের কথা দিয়েই শুরু করি। কেন পাড়ায় পাড়ায় এসব মাস্তানের আবির্ভাব ঘটছে? কেন বস্তিগুলো থেকে বিপুলসংখ্যক মাস্তান, খুনি, ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীর উদ্ভব ঘটছে? এর কারণ বোধ হয় সবারই জানা। বস্তিগুলোতে সত্যিকারের কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। সেখানে না আছে পানির ভালো ব্যবস্থা, না আছে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট। শিক্ষার সুযোগ তো একেবারেই নেই। বস্তিবাসী মা-বাবার সন্তানরা শিক্ষা পাচ্ছে না। অথচ শিক্ষা লাভ করা ছাড়া এদের কর্মসংস্থান সম্ভব নয়। তা হলে এরা ভবিষ্যতে কী হতে পারে? তারা হতে পারে এবং হচ্ছেও ছিনতাইকারী, পকেটমার, মাদকসেবী, মাদক বিক্রেতা, ভাড়াটে খুনি, ধর্ষক ইত্যাদি।

মাস্তানদের মধ্যে ধনী পরিবারের কিছু সন্তানও আছে। অথচ তাদের কোনো অভাব নেই। তাদের নিজেদের বাড়ি আছে, গাড়ি আছে। তারপরও তারা মাস্তান, ধর্ষক, ছিনতাইকারী হচ্ছে। এদের ব্যাপারটি স্বতন্ত্র। এরা পরিবারে ভালো শিক্ষা ও নৈতিকতা পায়নি। বাবা-মায়ের খবরদারি তাদের ওপর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে থাকে না। তারা অশ্লীলতা শিখছে ইন্টারনেট থেকে। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের ওপর বাসায় বাবা-মা নজর রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। ভিডিওতে নানা ধরনের যৌনতা দেখে তারা ভয়াবহ যৌনকাতর হয়ে পড়েছে। এদের পক্ষে অন্য নারীর মর্যাদাহানি যেন কোনো ব্যাপার নয়। ইভটিজিং বা কিশোরীদের বিরক্ত করা তাদের জন্য কোনো বড় ব্যাপার নয়। তারা সহজেই পরিণত হয় ধর্ষকে। এমনকি তারা ধর্ষণের সংখ্যার হিসাব পর্যন্ত রাখে। যে যত বেশি ধর্ষণ করেছে, তাদের গোষ্ঠীর কাছে তারা ‘বড় বীর’।

এ পরিস্থিতিতে আমাদের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা চিন্তা করতে হবে। শহরের বস্তিগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। যেসব বস্তি উঠিয়ে দেয়া সম্ভব, উঠিয়ে দিতে হবে। বস্তিবাসীকে গ্রামে ফেরত পাঠাতে হবে। তাদের পুনর্বাসনে কাজে লাগাতে হবে এনজিওকে। বস্তির মালিকদের বাধ্য করতে হবে যেন তাদের মালিকানাধীন বস্তিগুলোতে পানি ও টয়লেটের সুব্যবস্থা থাকে। খাসজমির বস্তিগুলোতে এসব ব্যবস্থা সিটি করপোরেশনকে করতে হবে। ঢাকার কথা বলছি। দেশের অন্য প্রধান শহরগুলোতেও একই ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রত্যেক বস্তিতে শিক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। কিছু এনজিওর সহায়তায় প্রত্যেক বস্তিতে কিংবা কয়েকটি বস্তিকে ভিত্তি করে প্রাইমারি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করা খুবই প্রয়োজন। তারা যাতে কাজে যায়, সে জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। যত দিন কাজ না পাবে, এদের বেকার ভাতা দেয়া দরকার। শিক্ষা ও কাজ না দিয়ে বাস্তবে মাস্তানি থেকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়।

অবশ্যই পুলিশের ভূমিকা অনেক বড়। মাস্তানি দমনে তাদের অবশ্যই প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বিশেষ করে বড়লোকের সন্তান, অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষিত মাস্তানদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। পুলিশ কর্তৃপক্ষ স্বয়ং তাদের সংযোগ প্রোগ্রামের আওতায় বিভিন্ন বস্তিতে স্কুল ও ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং করা উচিত। বর্তমান আইজিপি এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারেন।

এখন নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাই। সব ধরনের নারী নির্যাতনই বাড়ছে; যৌতুক সংক্রান্ত অপরাধ, এসিড নিক্ষেপ, অপহরণ, জোর করে বিয়ে ইত্যাদি। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছেÑ ধর্ষণ এবং ধর্ষণপূর্ব হত্যা। আমরা এ ব্যাপারে যথাযথ কৌশল নির্ধারণ করতে পারছি না। এর কারণ ধর্ম ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে বাদ দিয়ে চিন্তাভাবনা এবং টিভি চ্যানেল ও বিজ্ঞাপনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অনীহা। এদের বাদ রাখা হলে কোনো কৌশলই কাজ করবে না। আইন প্রয়োজন (তা আছেও)। পুলিশের তৎপরতা ও আইন প্রয়োগ, মানসিক চিকিৎসা, মাদকসেবীদের পুনর্বাসন, অপরাধী যুবকদের কাজ দেয়া ও পুনর্বাসন- সবই প্রয়োজন। এতে আমার বা সম্ভবত কারো কোনো ভিন্নমত নেই। কিন্তু আমি মনে করি, যদি শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ পুনর্বহাল করা না যায়, টিভি চ্যানেলে যদি নৈতিকতাবিরোধী অনুষ্ঠান- নাটক ইত্যাদি চলতেই থাকে, উপস্থাপিকারা যদি উগ্র পোশাক পরিধানের রেওয়াজ সৃষ্টি করেন, বিজ্ঞাপন যদি যৌন-উদ্দীপক হয় এবং এর ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকে, পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে যদি কঠোর ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ কমানো কঠিন। সত্যি বলতে কী, যখন বস্তি ও রাস্তায় কিশোরদের দেখি, তখন তাদের মধ্যে যাদের বয়স ১২ বা ১৩ বছর বা বেশি, এদের কাছে কোনো নারীই নিরাপদ মনে হয় না। তারা নারীদের যেকোনোভাবে নির্যাতন করতে পারে বলে আশঙ্কা হয়। উঠতি ধনী মাস্তানদের সম্পর্কেও একই রকম মনে হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন ও দেশবাসীকে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে এ সঙ্কট থেকে জাতির মুক্তির কোনো উপায় দেখছি না।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement
দোয়ারাবাজারে কোরআনে পা দিয়ে অবমাননার দায়ে যুবক আটক দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদে সামরিক আইন রোধে ভোট বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে বসবেন জামায়াত আমির ভারতের সাথে হওয়া সব চুক্তি প্রকাশের দাবি হাসনাত আবদুল্লাহর এরা সিনিয়র দলকেও বিশ্বকাপে নিতে পারবে : কোচ শুভ ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের সাথে জাতিসঙ্ঘের গোয়েন লুইসের সাক্ষাৎ জয়ের জাল বুনছে বাংলাদেশ চট্টগ্রামে ভারতীয় হাইকমিশন ও ভিসা সেন্টারে নিরাপত্তা জোরদার বিবিসির ১০০ নারীর তালিকায় বাংলাদেশী রিক্তা আক্তার বানু নাটোরে পলক ও শিমুলসহ ৪৪ জনের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা

সকল