২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

হেফাজতে ইসলামের দায় ও দায়িত্ব

হেফাজতে ইসলামের দায় ও দায়িত্ব - ছবি- নয়া দিগন্ত

হেফাজতে ইসলাম ইসলামের সম্মান, মর্যাদা ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য গঠিত অরাজনৈতিক সংগঠন। সাধারণভাবে আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখরা ইসলামের হেফাজতকে তাদের পরম পবিত্র দায়িত্ব মনে করেন। তারা এর স্বপক্ষে কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি দেন। ‘নায়েবে রাসূল’ বা রাসূলের প্রতিনিধি হিসেবে ইসলামী সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ইসলামী সোনালি যুগে সমাজের নেতৃত্ব, দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব এককভাবে তাদের ওপরই ন্যস্ত ছিল। ইসলামের এসব সমাজ ও দেশকে বলা হতো ‘দারুল ইসলাম’ বা ইসলামের ঘর। বিশ^ব্যাপী ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ জেঁকে বসলে ইসলামের ঘর অন-ইসলামীদের হাতে চলে যায়। এভাবে দারুল ইসলাম হয়ে দাঁড়ায় ‘দারুল হারব’ বা বিধর্মীদের ঘর। ইসলামের হেফাজতের জন্য এই দারুল হারবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা জেহাদ করাকে ফরজ মনে করেন আলেম-ওলামা ও ইসলামের অগ্রবর্তী নেতৃত্ব।

এই উপমহাদেশের ইতিহাসে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে এভাবেই প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে আলেমসমাজ। ওয়াহাবি আন্দোলন, মোহাম্মদি আন্দোলন ও ফারায়েজি আন্দোলন ছিল এসব প্রতিরোধের নাম। গড়ে উঠেছিল এই বাংলায় তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা, হাজী শরিয়ত উল্লাহর জেহাদ এবং ফকির মজনু শাহের বিদ্রোহ। অনেক ত্যাগ ও তিতীক্ষার বিনিময়ে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান হলেও সেই দারুল ইসলাম আর ফিরে আসেনি। তত দিনে দেশ ও সমাজের নেতৃত্ব চলে গেছে লর্ড মেকলের সৃষ্ট বাদামি ব্রিটিশদের হাতে। তবুও রয়ে যায় অনুরণন। পরবর্তীকালে আলেমসমাজে তিন ধরনের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। একদল আলেম ইসলামের হেফাজতের জন্য মাদরাসা মসজিদ ও খানকার মাধ্যমে ইসলামের গৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। মাওলানা হোসাইন আহম্মদ মদনী প্রতিষ্ঠা করেন দারুল উলুম দেওবন্দ। দ্বিতীয় ধারার আলেমরা রাজনীতির মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রায়াস নেন। হজরত মাওলানা শিবলী নোমানী, মাওলানা সাব্বির আহম্মদ ওসমানী, মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরী ও মাওলানা আশরাফ আলী থানভী তাদের প্রতিভূ। পাকিস্তান আন্দোলন থেকে পরবর্তী সময়কালে তারা কমবেশি ইসলামী রাষ্ট্র গঠনে চেষ্টা করেন। কিন্তু মেকলের বাদামি লোকেরা তা করতে দেয়নি। বরং পাকিস্তানে ইসলামের বিপরীত সুদ-ঘুষ, দুর্নীতি-দুরাচার ও শোষণ-ত্রাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। আলেমদের তৃতীয় ধারা সব সময়ে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর তাঁবেদার হিসেবে কাজ করে। সরকার যাবতীয় অন্যায়কে জায়েজ করার জন্য তাদের থেকে ‘ফতোয়া’ নিতে থাকে। আইউব খান যখন ইসলামের আধুনিকায়ন করেন, তাদের সরব দেখা গেছে। তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা থেকে ইয়াহিয়া খানও বঞ্চিত হননি। মুক্তিযুদ্ধে এ ধরনের কিছু ‘ওলামায়ে ছু’ বা সুবিধাবাদী আলেম শ্রেণীর কুৎসিত ভূমিকার কারণে গোটা আলেমসমাজ বিতর্কিত হয়েছে। কয়েক বছর আগে এক গবেষণায় প্রফেসর ড. তারেক ফজল তার প্রমাণ দিয়েছেন। বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পরে আজো সেই একই বিভাজন ও প্রবণতা বিরাজমান। সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে ওই তিন ধারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এক ধারা বাংলাদেশে যখনই ইসলামের সম্মান ও মর্যাদা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে তখনই স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে প্রতিবাদ করেছে। রাজনৈতিক ধারা রাজনীতির মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছে। আর একটি ক্ষীণধারা সরকারে তল্পিবাহক হিসেবে নিজেদেরকে ওলামায়ে ছু হিসেবে প্রমাণ করেছে। এই তিন ধারার সমীকরণে হেফাজতে ইসলাম এখন একটি সঙ্কটময় সময় অতিক্রম করছে।

বাংলাদেশে হেফাজতে ইসলামের আবির্ভাব, উত্থান ও আন্দোলন ছিল আর একটি সঙ্কটময় সময়ের সৃষ্টি। ২০১৩ সাল বাংলাদেশে পরপর এমন সব ঘটনা ঘটে যা ইসলাম, মুসলিম ও আলেম ওলামাদের জন্য এক রকম সংবেদনশীলতা তৈরি করে। রাষ্ট্র ও সরকার ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মৌলিক বিশ্বাসে আঘাত হানে। শিক্ষাব্যবস্থায় সুপরিকল্পিতভাবে ইসলাম ও মুসলমান পরিচয় মুছে দেয়ার চক্রান্ত হয়। ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি রাজনৈতিক নিপীড়ন চরম আকার ধারণ করে। এই সুযোগে দেশের নাস্তিক ব্লগাররা কুরআন এবং হজরত মুহাম্মদ সা:-এর প্রতি অপমানজনক উচ্চারণ করে। শাহবাগে রাজনৈতিক সরকারের মদদে এবং ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীদের ঔদ্ধত্য লক্ষ করা যায়। হাইকোর্টে ফতোয়া নিষিদ্ধ হয়। দেশের সর্বত্র আলেম ওলামারা লাঞ্ছিত হতে থাকেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বর্ষীয়ান আলেম দেওবন্দ ধারার উত্তরাধিকারী আল্লামা শফী আলেম ওলামাদের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি সকল মত ও পথের ঈমানদারদের সতত সমর্থন লাভ করেন। রাজনৈতিক ইসলামে বিশ্বাসী ব্যক্তি গোষ্ঠী ও দলসমূহ তার প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন ঘোষণা করেন। সে সময়েও ওলামায়ে ছু সক্রিয় ছিল। তারা জনগণের স্বাভাবিক সমর্থনে বিলীন হয়ে যায়। সরকার নির্মম রক্তপাতের মাধ্যমে হেফাজতের আন্দোলন ব্যর্থ করে দেয়। হেফাজতের নেতৃত্বের দুর্বলতা, লক্ষ্য নির্ধারণে অপারগতা ও বহুমুখী নেতৃত্বের সমন্বয়ের অভাবে নিদারুণ পরাজয়ের সম্মুখীন হয়। রাজনৈতিক ইসলামে বিশ্বাসীরা এবং সরকারবিরোধীরা এই আন্দোলনকে কুশলতার সাথে সার্থক করতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে হেফাজতে ইসলামের সরকারের হেফাজতি হওয়ার গল্প সবাই জানেন।

আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর জুনায়েদ বাবুনগরী নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করে হেফাজতে ইসলাম। এ সময়ে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে। মুজিব ভাস্কর্য অবশেষে মুজিব মিনারে রূপান্তরিত হয়ে আন্দোলনের অবসান ঘটে। এবারে তারা মোদি বিরোধী আন্দোলন করে ভারতে মুসলমানদের প্রতি নিগ্রহের প্রতিবাদ জানায়। এই প্রতিবাদটি সরকার স্বাভাবিকভাবে নিলে এটি এমনিতেই স্তিমিত হয়ে পড়ত। অস্বাভাবিকভাবে আওয়ামী লীগের লোকেরা বিজিপির চেয়ে বেশি মোদি প্রেমিক হওয়ায় মোদিবিরোধী মিছিলে হামলা চালায়। অবশেষে সঙ্ঘাত ও সহিংসতায় আবারো রক্তপাত ঘটে। এবার প্রাণ হারায় ২০ জন মানুষ। এই ঘটনার রেশ যেতে না যেতেই ৩ এপ্রিল হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে একটি রিসোর্টে দ্বিতীয় স্ত্রীসহ ঘেরাওয়ের মুখে পড়েন। আওয়ামী লীগের লোকেরা মামুনুলকে লাঞ্ছিত করে। হেফাজতের নেতাকর্মীরা সেখানে হামলা চালিয়ে মামুনুলকে ছিনিয়ে নেয়। মূলত এরপর থেকে হেফাজতবিরোধী কঠোর অবস্থান নেয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করেন। মানুনুল হকের ঘটনাটিকে দেশের ইসলামবিরোধী শক্তি লুফে নেয়। তারাও নানাভাবে সরকারকে প্রভাবিত করে। মামুনুল হকের অবিবেচনাপ্রসূত ও অনভিপ্রেত ঘটনাটি রটনায় পরিণত হয় বেশি। হেফাজতে ইসলাম ‘ব্যক্তিগত বিষয়’ বলে পাশ কাটিয়ে গেলেও সরকার খড়গহস্ত হয়ে ওঠে। এরপর হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে লকডাউনের সুযোগে ক্রাকডাউন করে। ১ এপ্রিল হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই ধারাবাহিকতায় ১৮ এপ্রিল আলোচিত মামুনুল হককে ধরা হয়। সরকারের নিপীড়ন, নির্যাতন ও সাঁড়াশি অভিযানে হেফাজত নেতৃত্ব বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

বিক্ষোভ সহিংসতায় দেশের বিভিন্ন জেলায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৭৯টি মামলা হয়েছে। আর এসব মামলায় ৫৯ হাজারের বেশি জনকে আসামি করা হয়েছে। প্রতিদিনই গ্রেফতারের খবর আসছে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ১৯ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, সরকার প্রথমে ৩০ শীর্ষ নেতৃত্বের একটি তালিকা করেছিল। নতুন করে এখন দু’শজনের তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে কওমি মাদরাসাভিত্তিক নেতারা যেমন আছেন, তেমনি আছেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব। খেলাফতে মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি বিশদলীয় জোটভুক্ত খেলাফত মজলিসেরও মহাসচিব। পুলিশ সূত্র বলছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় সক্রিয় নেতাকর্মীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি ওয়াজ মাহফিল ও গণমাধ্যমে সরকার বিরোধী বক্তব্য দেন এমন আলেম ওলামাদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। শিশু বক্তা তার একটি উদাহরণ। গ্রেফতারকৃত নেতাদের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে অপমান অত্যাচার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের গ্রেফতারি তালিকায় হেফাজতে আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর নামও রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে মহড়া চলছে। তবে ইতোমধ্যে আপস রফার চেষ্টাও জোরদার হয়েছে।

আপস রফার চেষ্টা হিসেবে হেফাজত নেতারা দফায় দফায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছেন বলে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। হেফাজত নেতারা সরকারকে আন্দোলনের অরাজনৈতিক চরিত্র বোঝানোর চেষ্টা করছেন। বৈঠক সূত্র জানায় যে, সরকারের সাথে যে সম্পর্ক ছিল সেটি অব্যাহত থাকা দরকার। একই সাথে নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আশ^স্ত করেন যে, বিএনপি জামায়াতের সাথেও হেফাজতের কোনো যোগাযোগ নেই। তা ছাড়া তাদের এই আন্দোলন ছিল খালেসভাবে ইসলামের হেফাজতের জন্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, সবই আইন অনুযায়ী করা হচ্ছে। তার কথায় আপসের কোনো সুর ছিল না। শেষ বৈঠকের পর ঢাকায় আরো চার নেতাসহ বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের ৫২ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে অনেকেই গ্রেফতারের মুখে রয়েছেন। হেফাজত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকার যে এতটা কঠোর পদক্ষেপ নেবে তা হেফাজতের শীর্ষ নেতার বুঝতে পারেননি। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে এখন কওমি মাদরাসাগুলো বন্ধ। রোজার পর সাধারণত ভর্তি শুরু হয়। সরকারের গ্রেফতার, মামলা ও হামলা সামাল দিতে হেফাজত নেতৃত্ব অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা। যদিও বাবুনগরী কঠিন অবস্থানের কথা জানিয়ে ছিলেন। তার সর্বশেষ পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে তিনি, বিভিন্ন চাপে এক রকম অসহায় হয়ে পড়েছেন।

২৫ এপ্রিল রোববার রাত ১১টায় তিনি হেফাজতে ইসলামের কমিটি বিলুপ্ত করেছেন। জনাব বাবুনগরী এক ভিডিও বার্তায় বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। কয়েক ঘণ্টা পরে তিনি পাঁচ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। আহ্বায়ক কমিটি অতিদ্রæত হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করবেন বলে জানানো হয়। তবে তাদের উচ্চারিত দু’টি শব্দ ‘অস্থির ও নাজুক’ পরিস্থিতি হেফাজতের অসহায়ত্বের প্রমাণ। উল্লেখ্য, সরকার ও অভ্যন্তরীণ বিরোধে হেফাজতে ইসলাম পূর্ব থেকেই সংবেদনশীল অবস্থানে ছিল। আল্লামা শফীর মৃত্যুর পরে হেফাজতে ইসলাম এ কলামে প্রথমে উল্লিখিত তিন ধারায় বিভাজিত হয়। এতে প্রাধান্য অর্জন করে খালেস কওমি প্রভাবিত অরাজনৈতিক গ্রুপ। অপর দিকে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গও সক্রিয় ছিলেন। তৃতীয় ধারার আল্লামা শফীর ছেলে আনাস মাদানিও সক্রিয় ছিলেন। ইতঃপূর্বে সরকারের সাথে সমঝোতায় তিনি অর্থ ও বিত্ত লাভ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি এখনো সরকারের পক্ষে সক্রিয় রয়েছেন বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে যে, সরকার হেফাজতের নেতৃত্ব দখলের কৌশলে আছে।

এ সঙ্কটময় সময়ে হেফাজতে ইসলাম তথা কওমি মাদরাসাগুলোকে রক্ষার চেষ্টায় এগিয়ে এসেছে আল হাইয়াতুল উলিয়া। এটি কওমি মাদরাসার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ২৫ এপ্রিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানি মাদরাসায় অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির এক সভায় কওমি মাদরাসাকে প্রচলিত সবধরনের রাজনীতি মুক্ত থাকার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কওমি অঙ্গনে বিরাজমান অস্থিরতা থেকে ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষাব্যবস্থার সুরক্ষা এবং ওলামায়ে কেরামদের ‘শান ও মান’ বজায় রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় নানামুখী দীনি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে এ আয়োজন করা হয়। এ সভায় গৃহীত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এ রকম: ১. কওমি মাদরাসার নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের যাবতীয় কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করবে। ২. কওমি মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা প্রচলিত সব রকম রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকবে। ৩. এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ১৫ সদস্যের একটি সাবকমিটি দায়িত্ব পালন করবে। ৪. উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কওমি মাদরসার যেসব নিরীহ ছাত্র-শিক্ষক, আলেম, ওলামা যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। রমজানের এ রহমতের মাস বিবেচনায় সরকারের কাছে তাদের মুক্তির আহ্বান জানানো হয়। ৫. স্বাস্থ্যবিধি মেনে রমজানের মধ্যেই হেফজ ও মক্তব বিভাগ এবং রমজানের পর কওমি মাদরাসার শিক্ষাক্রম চালু করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়। স্মরণ করা যেতে পারে যে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রাক্কালে এবং আন্দোলনের সূচনায় সরকার সকল কওমি মাদরাসা বন্ধ করে দেয়।

হেফাজতে ইসলাম বর্তমানে যে সঙ্কটময় সময় অতিক্রম করছে তার জন্য নেতৃত্বের সহ্য, ধৈর্য ও দূরদর্শিতা প্রয়োজন। কোনো চরম পন্থা যেমন লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক নয় তেমনি সুবিধাবাদী নেতৃত্বও কাক্সিক্ষত নয়। মধ্যপন্থাই উত্তম পন্থা। রাজনীতি আন্দোলনে কৌশলগতভাবে আগানো বা পেছানো বৃহত্তর আন্দোলনেরই অংশ। কওমি মাদরাসা নিয়ন্ত্রক সংগঠন যে ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বাস্তবসম্মত। আলেম ওলামারা যেমন ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করেন তেমনি সমাজেরও নেতা। সুতরাং সকল সিদ্ধান্ত নিতে হবে শান্তি ও সম্প্রীতির লক্ষ্যে। এই দেশ সমাজ ও সরকার থেকে তারা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। সমাজের সর্বত্র যেমন তাদের সম্মান রয়েছে তেমনি এক শ্রেণীর বদ্ধমূল শত্রুও রয়েছে। সরকারে এবং সবদলে তাদের শত্রু-মিত্র রয়েছে। গত আন্দোলনগুলোতে তার প্রমাণ রয়েছে। ইসলামের ডাকে এবং ঈমানের জোরে যখন মানুষ দলীয় কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বকে অগ্রাহ্য করে তখন হেফাজতে ইসলামের প্রতি তাদের আনুগত্যের ও আবেগের প্রমাণ মেলে। হেফাজতকে অবশ্যই আগামী দিনগুলোতে মানুষের আস্থা বিশ্বাস ও ভালোবাসার জন্য নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কর্মপরিকল্পনা হেফাজতকে এক সময়ে পৌঁছে দেবে মঞ্জিলে মাকসুদে।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
টেকনাফে ২ লাখ ৪৮ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার ইসকন নিষিদ্ধ চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে আইনজীবী আলিফের জানাজায় হাসনাত-সারজিস জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা : খালেদা জিয়াসহ সব আসামিকে খালাস সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করবেন মির্জা ফখরুল ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে যা জানা যাচ্ছে আবারো রিমান্ডে সাবেক মন্ত্রী আনিসুল-কামরুল শিল্পপতির বাড়িতে ডাকাতি : ৭ লাখ টাকা, ৪০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ২৪ ঘণ্টায়ও মহাসড়ক ছাড়েনি ডিইপিজেডের লেনী ফ্যাশনের শ্রমিকরা

সকল