২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বাংলাদেশের মহীসোপান ও ভারতের আপত্তি

বাংলাদেশের মহীসোপান ও ভারতের আপত্তি - ফাইল ছবি

সম্প্রতি নয়া দিগন্তের একটি ‘গরম’ খবর সবার নজর কেড়েছে। ১৮ এপ্রিল প্রথম পৃষ্ঠায় কূটনৈতিক প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশ কর্তৃক বঙ্গোপসাগরের মহীসোপান বা সমুদ্রের উপকূলীয় অগভীর অংশের ওপর ন্যায়সঙ্গত ও অনস্বীকার্য জাতীয় দাবির ব্যাপারেও প্রতিবেশী দেশ আপত্তি জানিয়েছে। এই সুবৃহৎ পড়শি রাষ্ট্র বিশেষত বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সময়ে বারবার এ দেশের ‘সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু’ ও ‘পরীক্ষিত মিত্র’ হিসেবে অভিহিত হয়ে আসছে। গঙ্গা ও তিস্তাসহ এ দুই দেশের অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা, পুশব্যাক ইস্যু, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বিকাশ, ট্রানজিট ও কানেকটিভিটি প্রভৃতি বিষয় এবং সর্বশেষ চলমান করোনা মহামারীর টিকাচুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক ঘটেছে। এ প্রেক্ষাপটে ‘মহীসোপান’ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ সম্পর্কের জটিলতা যাতে বাড়াতে না পারে সে জন্য অবিলম্বে এর স্থায়ী সুরাহা হওয়া উচিত বলে ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত। এ জন্য প্রধানত বৃহৎপক্ষের নমনীয়তা ও উদারতা প্রয়োজন।

নয়া দিগন্তের আলোচ্য খবরটি হলো বঙ্গোপসাগরের মহীসোপান দাবির বিষয়ে ভারত ‘আপত্তি’ করেছে। আরেক প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার এ ব্যাপারে দিয়েছে ‘পর্যবেক্ষণ’। এ দেশ দু’টির যথাক্রমে আপত্তি ও পর্যবেক্ষণের নিষ্পত্তি হলে কেবল তখনই ইস্যুটির সুরাহা করতে পারে সিএলসিএস অর্থাৎ কমিশন অব দ্য লিমিটস অব দ্য কন্টিনেন্টাল শেলফ। কিন্তু এসব দাবি ও পাল্টা দাবি আপত্তি এবং পর্যবেক্ষণের দরুন এটি সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠেছে।

১৬ এপ্রিল বিশ্ব সংস্থার উপরিউক্ত কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে ভারতের উল্লিখিত আপত্তি। ভারত বলেছে, ভূখণ্ডের যে বেজলাইন বা উপকূল রেখার ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশ নির্ধারণ করেছে নিজের মহীসোপানের সীমানা, এর মাধ্যমে ভারতের মহীসোপানের একাংশ দাবি করা হয়েছে। তদুপরি বঙ্গোপসাগরের grey area বা অস্পষ্ট এলাকা নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘কোনো প্রকার তথ্য দেয়া হয়নি।’

মোটকথা, সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থা সিএলসিএসএ বাংলাদেশের দাবির বিরোধিতা করেছে আমাদের দেশের প্রধান প্রতিবেশী ভারত। অন্য দিকে মিয়ানমার গত জানুয়ারি মাসে পর্যবেক্ষণ পেশ করেছে মহীসোপান নিয়ে বাংলাদেশের দাবি প্রসঙ্গে। ভারত ওই কমিশনকে অনুরোধ করেছে, যেন মহীসোপানের ব্যাপারে বাংলাদেশের কোনো দাবি বিবেচনা পর্যন্ত করা না হয়। মিয়ানমারের বক্তব্যে বাংলাদেশের এ দাবি সম্পর্কে অবশ্য আপত্তি করা হয়নি। সমস্যা হলো, বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানের যতটা আইনসঙ্গতভাবেই নিজের প্রাপ্য বলে মনে করে, তা থেকে ‘নিজেদের’ অংশ দাবি করেছে ভারত ও মিয়ানমার। অথচ এ সমুদ্রের সীমা এবং বঙ্গোপসাগরের তেল সম্পদের ন্যায্য হিস্যার ব্যাপারে বাংলাদেশের সাথে ভারত ও মিয়ানমারের বিরোধ দৃশ্যত মিটে গেছে অনেক আগেই।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৩০ বছরেরও অধিককাল ধরে আলোচনা সত্ত্বেও মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের সুরাহা হয়নি। ফলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর সালিসি আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ প্রক্রিয়ার অংশরূপে মিয়ানমারের সাথে সাগরের সীমানা নির্ধারণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জার্মানির হামবুর্গকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, ITLOS বা সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিল। আর ভারতের সাথে এ সীমা নির্দিষ্ট করার জন্য মামলা দায়ের করেছিল স্থায়ী সালিসি আদালতে। প্রায় আড়াই বছর পরে ২০১২ সালের ১৫ মার্চ ‘ইটলস’ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার সমুদ্রসীমার বিরোধের নিষ্পত্তি করে রায় দেয়। ফলে আমাদের বাংলাদেশ বিরোধমুক্ত সমুদ্র অঞ্চল পেয়েছে ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার। আর বাংলাদেশের নিজস্ব ও বিরোধমুক্ত সামুদ্রিক এলাকা রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটার।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের মামলার রায় ঘোষিত হয় দি নেদারল্যান্ডসের স্থায়ী আদালতে, ২০১৪ সালের ৮ জুলাই। সে মোতাবেক বাংলাদেশ অর্জন করেছে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চল। ভারতের সাথে আমাদের বিরোধপূর্ণ সমুদ্র অঞ্চল ছিল ২৫ হাজার ৬০২ বর্গ কিলোমিটার।

যা হোক, প্রতিবেশীদ্বয়ের সাথে বিরোধের আইনি সুরাহার পথ ধরে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বঙ্গোপসাগরের এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার আঞ্চলিক সমুদ্র বা টেরিটরিয়াল সি, তীর থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল (Exclusive economic zone বা EEZ) এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৮ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলায় অবস্থিত সর্ব প্রকার প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর। এখন ভারত আপত্তি করছে এই মহীসোপান নিয়ে।

‘নটিক্যাল’ মাইল আবার কী? অক্সফোর্ড অ্যাডভান্সড লার্নার্স ডিকশনারি অব কারেন্ট ইংলিশের মতে, Nautical (নটিক্যাল) বলতে জাহাজ ও নাবিকদের একটি পরিভাষা বোঝায়। আর নটিক্যাল মাইল হলো ৬০৮০ ফুট দৈর্ঘ্য, যা ১৮৫২ মিটারের সমান। নটিক্যাল মাইল সাধারণ মাইলের চেয়ে বড়। সাধারণত ১ মাইল বলতে ১৭৬০ গজ (১৬ শ’ মিটার) বা ৫২৮০ ফুট দূরত্বকে বুঝায়। ‘নটিক্যাল অ্যালমানাকে’ চাঁদ সূর্য সম্পর্কিত তথ্য আছে এবং জানানো হয়েছে ১ ‘ডিগ্রির ৬০/১ সমান এক নটিক্যাল মাইল।

স্থায়ী সালিসি আদালতের রায়ের ওপর বাংলাদেশের কোনো হাত নেই। সেখানে প্রভাব বিস্তার করা এ দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রায় চার দশক আগে এ আদালতের রায়েই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে, সুন্দরবনের রায়মঙ্গল নদীর মোহনাস্থ দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ ভারত পেয়েছিল। তবে এর বর্তমানে অস্তিত্ব নেই। এ বিতর্কিত ভূভাগ ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট। ১৫ বছর পরে আরেক ঝড়ের দরুন এটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। স্মর্তব্য, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সরকার নিয়োজিত, স্যার সিরিল রেডক্লিফের অঙ্কিত যে মানচিত্রের মাধ্যমে উপমহাদেশ ভাগ করা হয়েছিল, সেখানে তালপট্টি দেয়া হয়েছিল ভারতকে।

এবার ‘গ্রে এরিয়া’ প্রসঙ্গ। ধূসর বা অস্পষ্ট এলাকাটা বঙ্গোপসাগরের ৫০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত। এর মৎস্য সম্পদে অধিকার ভারতের। অবশ্য তলদেশের সম্পদের ওপর বাংলাদেশের অধিকার বিদ্যমান।

ভারত যে বেজলাইন বা ভিত্তির কথা বলে মহীসোপানের দাবি তুলেছে, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আপত্তি করেছে এক যুগ আগেই। সে আপত্তি আজ পর্যন্ত বলবৎ। ২০১৩ সালের এপ্রিলে শুনানির পর সিএলসিএস নিজে ভারতের এ-সংক্রান্ত দাবি পর্যালোচনার কাজ স্থগিত রাখে। নিয়মানুযায়ী তাই এ কমিশন কোনো সাব-কমিটি গঠন করেনি। পরের বছর আমাদের দেশ সিএলসিএসে আবেদন জানায় মহীসোপানের ওপর দাবি করে।

এ দিকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘মিয়ানমারের বক্তব্যের জবাব আমরা শিগগিরই সিএলসিএসে পেশ করব। আর ভারতের সবেমাত্র জানানো আপত্তির বিষয়ে জবাব তৈরি করা হবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।’

সমুদ্র আইন সংশ্লিষ্ট জাতিসঙ্ঘ সনদের নাম UNCLOS. সে মোতাবেক কোনো দেশের ২০০ থেকে ৩০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের বাইরের দিকের সীমানাসংক্রান্ত বিরোধের সুরাহা করবে সিএলসিএস। তার আগে উপকূলরেখা (Base Line) থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত ‘আঞ্চলিক সমুদ্র’ এবং ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত ‘একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল’র সীমারেখা নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ। এ দু’টি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত রয়েছে।

জানা দরকার, কোনো রাষ্ট্র তার মূল ভূখণ্ডের মতো আঞ্চলিক সমুদ্রেও সার্বভৌম। ইইজেডের সমুদ্রসম্পদ ও আকাশসীমার একান্ত অধিকারও তার। মহীসোপানের ওপর তার অধিকারের পাশাপাশি, অন্যের জাহাজ এখানে বিনা অনুমতিতে চলাচল করতে পারবে।

‘মহীসোপান’ কী? বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির প্রকাশিত বাংলা বিশ্বকোষ সিরিজ ‘বাংলাপিডিয়া’র অষ্টম খণ্ডে এ বিষয়ে লিখেছেন মাহমুদ আলম। ২০০৩ সালের মার্চের এ গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন সিরাজুল ইসলাম।

এতে জানানো হয়েছে, মহীসোপান হলো- স্থলভাগ সন্নিহিত সমুদ্রতলের অংশ, যেখানে সাগরের পানির গভীরতা ২০০ মিটার (বা ২২০ গজ) পর্যন্ত। এর নতিমাত্রা ১ অনুপাত ৫০০-এর চেয়েও কম। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অনেকের দ্বারা মহীসোপানের অপর নাম ‘মহীচত্বর’ উল্লিখিত হয়েছে। মহীসোপানের গড় প্রস্থ ৬৫ কিলোমিটার। এটি কোথাও মাত্র ২০-৩০ কিলোমিটার; আবার কোথাওবা ১০০ কিলোমিটারের বেশি চওড়া। মহীসোপানের বেশির ভাগই- এটি সন্নিহিত স্থলভাগের অংশ থাকাকালে যেসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিল- তার ধারক। ১৫ হাজার বছর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠ আজকের চেয়ে ১২০ মিটার নিচে ছিল। তখনকার ‘হিমবাহ আহত’ ভূভাগ কিংবা ভূভাগের মধ্যবর্তী নদীতলের বৈশিষ্ট্য আজো সাগরের মহীসোপানে বিদ্যমান। মহীসোপানের উপরিস্থ অগভীর পানি গভীর ও অবারিত সমুদ্রের পানি থেকে আলাদা। উপকূলভাগের নদীগুলোর পানিতে দ্রবীভূত বহু উপাদান এ পানিতে মিশে যায়। তবে এতে পলির পরিমাণ অধিক থাকায় মাঝসাগরের পানির চেয়ে এই পানি কম স্বচ্ছ।

‘মহীসোপান’কে ইংরেজিতে বলা হয় Continental shelf অর্থাৎ ‘মহাসাগরের তাক’। ‘মহী’ অর্থ পৃথিবী। সে কারণে এটি ‘পৃথিবীর তাক’-এর সাথে তুলনীয়।

মহীসোপানে কী কী থাকে? সামুদ্রিক উদ্ভিদ, শৈবাল বা শেওলা, প্রবাল, শামুক, ঝিনুক এবং নানা প্রজাতির গর্তবাসী ও খোলসধারী প্রাণী, পোকামাকড় প্রভৃতি দেখা যায় মহীসোপানে। এ ছাড়াও এতে বাস করে থাকে স্টার ফিশ, ব্রিটল স্টার, স্পঞ্জ মাছ, ‘সমুদ্র শশা’ প্রভৃতি প্রাণী।

এসব প্রাণীর মধ্যে Coral বা প্রবাল, Algae বা শৈবাল, মূল্যবান মুক্তার আধার ঝিনুক প্রভৃতির অর্থনৈতিক গুরুত্ব বলা নিষ্প্রয়োজন। Oxford Advanced Learner’s Dictionary-তে জানানো হয়েছে, মুক্তা বা Pearl হচ্ছে small hard shiny white ball that forms inside the shell of an oyster (ঝিনুক) and of great value as a jewel. এর অর্থ মুক্তা মানে, ঝিনুকের খোসার ভেতরে উৎপন্ন ক্ষুদ্র, শক্ত ও উজ্জ্বল সাদা গোলাকার বস্তু, যা অত্যন্ত মূল্যবান (এ কারণে অতীতের রানী-মহারানী-রাজকুমারী এবং বর্তমানের মহিলা নেত্রী-প্রধানমন্ত্রী কিংবা অভিজাত মহিলাদের গলায় শোভা পায় মুক্তার মালা)। স্টারফিশ বা তারা মাছ হচ্ছে, চ্যাপ্টা আকৃতির সামুদ্রিক প্রাণী, যার আকার তারার মতো এবং যার আছে ৫টি বাহু। আর স্পঞ্জের সাথে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। বলা হয়ে থাকে, এর দৈহিক গঠন সরল প্রকৃতির এবং পেট নরম পানিভর্তি ও হালকা বহু গর্তে পরিপূর্ণ যা থেকে স্পঞ্জ আহরণ করা হয়। কৃত্রিম স্পঞ্জও পাওয়া যায় প্রাকৃতিক স্পঞ্জের মতো। আর ‘প্রবাল’ কথাটা শুনলেই বাংলাদেশের মানুষের সাথে সাথে মনে পড়ে যায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কথা। অস্ট্রেলিয়ার পার্শ্ববর্তী coral reef বা ‘প্রবাল প্রাচীর’ বিশ্ববিখ্যাত। কঠিন দেহের শক্ত প্রবাল তৈরি হয়ে থাকে সাগরতলে এবং অতীব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামুদ্রিক প্রাণীর হাড় থেকে এর সৃষ্টি। লাল, গোলাপি, সাদা প্রভৃতি বর্ণের প্রবাল দিয়ে অলঙ্কার বানানো হয়। যে ঝিনুকের কথা বলা হলো একটু আগে, সে ঝিনুক খাদ্য হিসেবেও অনেকের প্রিয়। আর শামুক তো অনেকে খায়ই।

বাংলাদেশের মহীসোপানের পরিসর শ’খানেক কিলোমিটার। এটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে, গভীর সুন্দরবনের হিরণপয়েন্ট এবং গভীর সমুদ্র তথা ‘swatch of no grounds’-এর মাঝে অবস্থিত। তবে দেশের দক্ষিণপূর্বে কক্সবাজার উপকূলে মহীসোপান প্রায় আড়াই শ’ কিলোমিটার প্রলম্বিত। এ দেশের মহীসোপান কাদা ও পলিপূর্ণ যা দেখা যায় গভীর সাগরতলেও। অবশ্য চট্টগ্রাম ও টেকনাফের উপকূলে দেখা গেছে, মহীসোপানের অগভীর ভাগ (২০ মিটারের কম) বালুতে ঢাকা। ভাটার সময় সেখানে বালুচর ভেসে ওঠে। এই মহীসোপানে বালুর তরঙ্গ অত্যন্ত প্রকট, যা ৩ থেকে ৫ মিটার (অর্থাৎ ৯ ফুট থেকে ১৫ ফুটেরও বেশি) চওড়া। দেশের দক্ষিণ উপকূলের সুন্দরবন-পটুয়াখালী-নোয়াখালীর মহীসোপানে প্রচুর কর্দম ও পলল লক্ষণীয়। জোয়ারভাটা সেখানে একধরনের সোপান বা সিঁড়ির জন্ম দেয়। এসব স্থানে কতিপয় মগ্নচড়া দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকে। তা ছাড়া গভীর বঙ্গোপসাগরে মহাসাগরের মতো পরিবেশ থাকলেও সেখানে আজো প্রচুর পলি প্রবেশ করছে।


আরো সংবাদ



premium cement