২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

হেফাজতে ইসলাম এবং কদর্য রাজনীতি

-

হেফাজতে ইসলাম ইসলামের সম্মান, সৌকর্য এবং নিরাপত্তা বিধায়ক প্রতিষ্ঠান। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের রাজনীতির এক সঙ্কটময় মুহূর্তে এর জন্ম। এর কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল না। অরাজনৈতিক পরিচয় দিয়েই এর যাত্রা শুরু। তবে এরিস্টটলের কথাই সত্য যে, ‘মানুষ রাজনৈতিক জীব’। সে অর্থে অবশ্য সব কিছুই রাজনীতি। আর বাংলাদেশে অতিমাত্রিক ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি’ বিরাজমান। কোনো কিছুকেই আমাদের রাজনীতিকরা সহজ-সরলভাবে দেখতে পারেন না। হেফাজতে ইসলামের কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজনীতিকে প্রভাবিত করে। তবে একটি রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী যেমন ক্ষমতা আরোহণের জন্য কর্মসূচি দেয়, আন্দোলন করে- তেমনটি হেফাজত নয়। যে রাজনীতি ইসলামের মানমর্যাদা ও আদর্শকে কলুষিত করে তা প্রতিহত করাই তাদের উদ্দেশ্য।

২০১৩ সালে নাস্তিক ব্লগারদের অতিমাত্রিক উৎপাত, সরকারের ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক উপায়ে বিরোধিতা করা তাদের বিঘোষিত নীতি ছিল। গণজাগরণ মঞ্চের মাধ্যমে দেশের সেক্যুলার গোষ্ঠী আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিলে হেফাজতের কর্মসূচিও চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। দেশজ রাজনীতির অভ্যন্তরীণ সমীকরণ এবং বৈশ্বিক প্রভাব হেফাজতের অনুকূলে ছিল না। দেশে ইসলামের নামে যেকোনো রাজনীতিকে নেতিবাচকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। অপর দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশ্চাত্য ইসলামকে সন্ত্রাসের সমরূপ বিবেচনা করায় পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে। হেফাজতে ইসলাম এই সঙ্কট সময়ে দূরদর্শিতার সাথে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণে ব্যর্থ হয়। সম্ভবত শীর্ষ নেতৃত্বের দৃঢ়তার অভাব, বহুমাতৃক সম্মিলন ও সরকারের কলাকৌশল তাদের পরাজয়কে অনিবার্য করে তোলে। ফলে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাতুর রক্তাক্ত অধ্যায়ের অবতারণা ঘটে। যে হেফাজত আন্দোলনের সমাপনী হতে পারত সম্মান ও মর্যাদার সাথে তা অবশেষে আত্মসমর্পণের নাটকীতার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে।

ইসলামের শিক্ষা অসম্মানজনক আত্মসমর্পণ সমর্থন করে না। আলেমদের সুবিধাবাদী অংশ আপস করলেও ন্যায় ও সত্যের পরাজিত হওয়ার ইতিহাস নেই। ‘ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধে’ যারা বিশ্বাস করে তারা সজাগ ও সচেতন থেকেছেন সবসময়। জটিলতা, কূটিলতা ও নিপীড়ন নির্যাতন সত্ত্বেও হেফাজতে ইসলাম ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ সফর দেশের সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। মুসলমানদের প্রতি তিনি যে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও হত্যার রেকর্ড গড়েছেন তাতে বাংলাদেশের জনমত ছিল উত্তপ্ত। সরকারের অভ্যন্তরেও যে টানাপড়েন ছিল তাও বোধগম্য ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারতের অনিবার্য ভূমিকার কারণে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারত নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানানো সরকারের পক্ষে ছিল স্বাভাবিক। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ জানালে তা ছিল অধিকতর বাস্তব। এমন মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে বাংলাদেশের কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ভাষায়।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মুসলমানদের ঈমানের প্রতিধ্বনি করে নরেন্দ্র মোদিবিরোধী অবস্থান নেয়। সে সময়ের তিন দিনের আন্দোলনে ২০ জন প্রাণ হারান। হেফাজতের আন্দোলন ছিল গণতান্ত্রিক এবং নিয়মতান্ত্রিক। তাদের সে গণতান্ত্রিক অধিকারকে অস্বীকার করে সরকার শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আন্দোলন দমনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা ছিল অনৈতিক। দেশের সব মানুষ জানে, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে। একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে এসেছে, আন্দোলনের সব পর্যায়ে হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কিন্তু বাংলাদেশে মানুষের রাগ, দুঃখ, ক্ষোভ এতটাই ভেতরে ভেতরে ধূমায়িত রয়েছে যে, তা যেকোনো উপলক্ষকে সামনে রেখে অগ্ন্যুৎপাত ঘটাতে পারে।

এই রক্তপাতের ঘটনা হেফাজত এবং সরকার কারো জন্যই সুখকর ঘটনা নয়। যে কটি প্রাণ গেল তার মূল্য কে দেবে? যে মায়ের কোল খালি হলো তার জবাব কে দেবে? বাংলাদেশ সরকার নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে যে কৃতিত্ব নিতে চেয়েছিল- দেশে ও বিদেশে তা বুমেরাং হয়েছে। দেশের মানুষ মনে করছে, প্রতিবেশী শক্তি জনগণের শক্তির চেয়ে সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের জনপ্রিয়তা এতে কমেছে বৈ বাড়েনি। অভিজ্ঞ আমলারা মত দিয়েছেন, বাম ও ডানের সম্মিলনে নীরব নেতিবাচক জনঅসন্তোষ মূল্যায়নে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। রক্তপাত এড়ানো যেত বলে অভিজ্ঞ মহলের মন্তব্য। এতে নরেন্দ্র মোদির ইজ্জত বাড়েনি। তার সফরটি যে নির্বিঘ্ন করা যায়নি সরকারের জন্য এটি বিব্রতকর। যদিও মোদি বাবু সরকারকে নিখুঁত আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। একজন নীতিবান রাজনীতিকের উচিত তার কারণে এই রক্তপাতের জন্য সমবেদনা জানানো। মহাত্মা গান্ধীর দেশ ভারতের অন্য কোনো নেতা হলে হয়তো তাই করতেন। অবশ্য যারা রক্তপাতকে রাজনীতির অংশ মনে করেন তাদের কথা আলাদা। বহির্বিশে^ এই রক্তপাত বাংলাদেশে মোদি তথা ভারতবিরোধী শক্ত জনমতের প্রমাণ দিয়েছে। বহির্বিশ্বে এই রক্তপাত সেভাবেই প্রচার পেয়েছে।

এ দিকে এই রক্তপাত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ব্যাপক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিরোধীপক্ষ হেফাজতের আন্দোলনকে স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত বলে বর্ণনা করছে। অপর দিকে সরকারি দল এর কঠোর সমালোচনা করেছে। সরকার বিশেষত বামদের কাছে এটি একটি প্রমাণ যে, ইসলাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনো আবশ্যিকভাবে নির্ধারক। মহাজোটের নেতারা হেফাজতের বিষয়ে সরকারের ‘আপস’ নীতির বিরোধিতা করছেন। হেফাজতে ইসলামের বিষয়ে সরকারের নমনীয় নীতি পছন্দ নয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের। জোটের নেতারা মনে করেন, সরকার রাজনৈতিকভাবে না হলেও প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে হেফাজতের সাথে এক ধরনের সমঝোতা করে চলেছে, যা প্রগতিশীল রাজনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। জোটের অন্যতম নেতা রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করে বসে আছে কিন্তু সরকার আপস সমঝোতার নীতিতেই আছে।’ জাসদের সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছিলেন উপলক্ষ মাত্র। কার্যত হেফাজত ’৭১-এর পাকিস্তান সমর্থক রাজাকারের উত্তরসূরি হিসেবে দেশের রাষ্ট্র ও সংবিধানকে অস্বীকার করছে।

এ দিকে জাতীয় সংসদে আলোচনাক্রমে হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর হতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম। যেসব মাদরাসা থেকে রাস্তায় বের হয়ে মানুষকে হত্যা, বাড়িঘর ও স্থাপনায় আক্রমণ করা হয়েছে সেসব মাদরাসা বন্ধ করে দেয়া এবং ২০১৩ সালের ৫ মে এর ঘটনায় হওয়া মামলাগুলোর তদন্ত শেষ করার দাবি জানান এই সংসদ সদস্য। এসব নেতার কথাবার্তায় মনে হয়, মোদিবিরোধী আন্দোলনে ২০ জন মানুষের প্রাণহানি সরকারের কঠোরতার ইঙ্গিতবহ নয়। তারা হয়তো মিয়ানমারের মতো শত শত মানুষের মৃত্যু চায়। এসব জনবিচ্ছিন্ন নেতা বাংলাদেশের গরিষ্ঠ মানুষের ভাবানুভূতির খবর রাখেন না। বাম নেতারা সেই সে অতীতে মাকর্সবাদের যে ট্যাবলেট খেয়েছেন তাতে আজো তারা ধর্মকে আফিমের মতো মনে করেন। আর আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে ইসলামের বিরোধিতা করে। মনে হয় যেন ইসলাম পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের নিজস্ব সম্পত্তি। অথচ তারাই ঠেকলে মদিনা সনদের কথা বলে। প্রয়োজনে রক্তপাত করে আবার গণভবনে ডেকে নেয়। বাম ঘরানার ইসলামবিরোধিতা আদর্শিক। সরকারের ইসলামবিরোধিতা রাজনৈতিক।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আওয়ামী লীগ ২০০৬ সালে খেলাফত মজলিসের সাথে পাঁচ দফা চুক্তি করে। তরিকত ফেডারেশনকে ১৪ দলে অন্তর্ভুক্ত করার সময়ও বামরা বিরোধিতা করে কিন্তু আওয়ামী লীগ তরিকতকে লুফে নেয়। এখনো সরকারি দল আওয়ামী উলামা লীগ লালন করে। প্রয়োজনে কাজে লাগায়। বিপাকে পড়লে অস্বীকার করে। এ ছাড়া আরো দু-একটি ইসলামী প্লাটফর্মকে তারা ব্যবহার করে। ইসলামী পরিভাষায় এদেরকে ‘ওলামায়ে ছুঁ’ বা সুবিধাবাদি আলেম শ্রেণী বলা হয়। হেফাজতের মোদিবিরোধী আন্দোলনে এদের সরব হতে দেখা গেছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক অনুভূতিকে তারা কোনো একটি বিশেষ দলের বিশেষ আয়োজনের লেবাস দিতে চায়। মনে হয় যেন ওই দল ও গোষ্ঠী বাংলাদেশে ইসলামের সোল এজেন্সি নিয়েছে। আসলে এ জ্ঞানপাপীরা জেনে অথবা না জেনে প্রভুর আদেশে মূল ইসলামের বিরোধিতা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে আর একটি ইসলামী দল ও গোষ্ঠী ক্রমেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে তখন এরা পুরনো ভাষায়ই তাদের বিরোধিতা করছে।

হেফাজতের আন্দোলনের রেশ মুছে যেতে না যেতেই আরেকটি ঘটনা আলোড়ন তোলে। একটি নিছক ব্যক্তিগত ঘটনা কিভাবে রাজনীতিকে কতটা কদর্য করতে পারে এই ঘটনা তার প্রমাণ। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক সোনারগাঁওয়ের একটি রিসোর্টে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সাথে ছিলেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী। এ খবর পায় আওয়ামী লীগের লোকেরা। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ছেলেরা লাঞ্ছিত করে এই হেফাজত নেতাকে। তাকে তারা অবরুদ্ধ করে রাখে। যারা যেমন মানুষ তেমন তারা ভাবে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে মেয়েদের লাঞ্ছনা, গঞ্জনা ও ধর্ষণের ঘটনায় এরা ব্যাপকভাবে অভিযুক্ত। মাওলানা মামুনুল হক কসম কেটে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর পরিচয় দিলেও তারা বিশ্বাস করতে চায়নি। পরে হেফাজতের লোকজন তাকে উদ্ধার করে। সেখানে অবরোধ ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে মামুনুল হক ও তার স্ত্রী মুক্তি পান। এ ঘটনায় হেফাজতে ইসলাম নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।

পরে তারা সংবাদ সম্মেলনে প্রমাণ দেন, ওই মহিলা মামুনুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী। তারা বলেন, ‘দেশের যেকোনো নাগরিক তার স্ত্রী পরিবার নিয়ে যেকোনো স্থানে যাওয়ার অধিকার রাখে কিন্তু মামুনুল হকের মতো সম্মানীত ব্যক্তির ওপর সন্ত্রাসীরা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।’ তারা আরো বলেন, ‘জাতীয় সংসদে একজন নাগরিকের ব্যক্তিগত বিষয়কে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে সেটা জনগণ কখনোই আশা করেনি। তারা সংসদে প্রদত্ত বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান।’ উল্লেখ্য, সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হকের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘ধর্মের পবিত্রতার কথা ও এত কিছু বলে অপবিত্র কাজ করে ধরা পড়েন। এই বিনোদনের এত অর্থ কোত্থেকে আসে? এটা দেশবাসী বিচার করবে। আইন আইনের গতিতে চলবে’। তিনি আরো বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম ধর্মকে কলুষিত করছে। তাদের চরিত্র কেমন তা মানুষ দেখেছে। পার্লারে কাজ করা এক মহিলা, তাকে বউ হিসেবে পরিচয় দেন আবার নিজের বউয়ের কাছে বলেন যে, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমি এটা করে ফেলেছি। যারা ইসলাম ধর্মে বিশ^াস করেন, তারা এ রকম মিথ্যা বলতে পারেন? অসত্য তারা বলতে পারেন? তারা তো মিথ্যা বলতে পারেন না। তারা মানুষকে কী ধর্ম শেখাবেন? কিছু লোকের জন্য ইসলাম ধর্মে বদনাম হবে এটা কখনোই মেনে নেয়া যায় না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হেফাজতের সদস্যদের অনুরোধ করব, তারা যেন বুঝে নেন কোন নেতৃত্ব তাদের। জালাও পোড়াও করে তিনি বিনোদন করতে গেলেন সোনারগাঁওয়ের একটি রিসোর্টে একজন সুন্দরী মহিলা নিয়ে, এরা ইসলাম ধর্মের নামে কলঙ্ক। ইসলাম ধর্মকে ছোট করছেন, কিছু লোকের জন্য আজ এই ধর্ম জঙ্গির নাম, সন্ত্রাসের নাম। এখন তো যে চরিত্র দেখালো তাতে দুশ্চরিত্রের নামও জুড়ে দিচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে ঘিরে যে সঙ্ঘাত সহিংসতা হয়েছে তাতে হেফাজতে ইসলাম নয়, তাদের সাথে জামায়াত-বিএনপিও রয়েছে।’ তবে বিএনপি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের সাথে বিএনপিকে কেন জড়ানো হচ্ছে সংসদে এই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ। তিনি বলেছেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়ে বিএনপি কোনো বিরোধিতা করেনি।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা লাশ উপহার দিলাম।’ সরকারের উদ্দেশে বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘প্রতিবাদ বিক্ষোভ যারা করল তাদের সাথে আলোচনা করা যেত। যখন ভাস্কর্য-মূর্তি নিয়ে দেশে একটি সঙ্ঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি হলো তখন হেফাজতের সাথে সরকার আলোচনা করেছে।’

এখন সরকার মনে হচ্ছে আলোচনা বা শান্তির পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ সহিংসতা ও হামলায় যারা জড়িত তাদের সবাইকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, ‘সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২২ জনকে আটক করা হয়েছে।’ সংবাদপত্রে খবর এসেছে, হেফাজতের শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব বা জব্দ করা হয়েছে। মামুনুল হকের বিষয়টি পরিবেশকে আরো ঘোলাটে করে তুলেছে। তবে দেশের মানুষ ওলামায়ে কেরামকে নবী-রাসূলদের উত্তরসূরিই বিবেচনা করে। আর তাদের থেকে সেরকম আচরণই আশা করে।

ঘটনাবলি পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জটিল ও কূটিল রাজনীতির আবর্তে নিপতিত হয়েছে। হেফাজতকে তাদের কুশলতা ও সৎ সাহস দিয়ে রাজনীতির ঘূর্ণাবর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সুনির্দিষ্ট হতে হবে। তাদের স্বকীয়তা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হতে হবে। সব জাতীয় বিতর্ক থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখে স্বমহিমায় ও স্বমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। তাদের বিশ্বাস করতে হবে, বাংলাদেশের কোটি কোটি ঈমানদার মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস তাদের প্রতি রয়েছে। জাতির জরুরি প্রয়োজনে হেফাজতে ইসলাম যাতে সুপরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হতে পারে সে জন্য তাদের দেশের সর্বত্র সাংগঠনিক মজবুতি ও গতিশীলতা প্রয়োজন। পারিপার্শ্ব ও দেশের সামগ্রিক অবস্থান সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের একাগ্রতা তাদেরকে পৌঁছে দেবে কাক্সিক্ষত মঞ্জিলে মাকসুদে।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement