২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

‘যদি’র শর্তে আটকা ফিলিস্তিন নির্বাচন

‘যদি’র শর্তে আটকা ফিলিস্তিন নির্বাচন - ফাইল ছবি

অনেক ফিলিস্তিনি বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক একটি দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছেন। তারা বুঝে উঠতে পারছেন না, সামনের ফিলিস্তিনি নির্বাচনকে সমর্থন কিংবা প্রত্যাখ্যান করে একটা অবস্থান নেবেন কি না। এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামী ২২ মে এবং ৩০ জুলাইয়ে হওয়ার কথা। নির্বাচন খুব দূরে না থাকলেও এ প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গত জানুয়ারি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এক ডিক্রি জারির মাধ্যমে জানান পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে ফিলিস্তিনের লেজিসলেটিভ ও প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশন অনুষ্ঠিত হবে। তার এই ঘোষণা সর্বমহলে অভিনন্দিত হয়েছে। এই অভিনন্দন গণতন্ত্রের একটি বিজয় হিসেবেই নয়, বরং বিভিন্ন ফিলিস্তিনি বিবদমান পক্ষগুলো-প্রধানত ফাতাহ ও হামাসের মধ্যকার সংলাপের দৃশ্যমান ইতিবাচক সুফল হিসেবেও।

ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ সংলাপ বিবেচনায় এই নির্বাচন দুটি যদি বাধাহীনভাবে হতে পারে, তবে এমন একটি আশার আলো প্রত্যাশা করা যায় : শেষ পর্যন্ত অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিরা অন্তত কিছু মাত্রায় গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবেন। আর এটি হবে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বাইরে থাকা আরো লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে ব্যাপক গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বের প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু যদি ফিলিস্তিনিদের বিভিন্ন বিবদমান গোষ্ঠী গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বরের ‘ইস্তাম্বুল অ্যাগ্রিমেন্ট’ মেনে এ ধরনের বিনম্র প্রত্যাশা করতে যায়ও, তবু এর পেছনে এখনো থেকে গেছে নানা ‘যদি’র শর্ত। এই প্রত্যাশা পূরণ হতে পারে শুধু তখনই : যদি ইসরাইল জেরুসালেমাইটদেরসহ ফিলিস্তিনিদের বাধাহীনভাবে এই নির্বাচন করতে দেয়; যদি ইসরাইল ভোটদানে বাধা সৃষ্টি না করে; যদি প্রার্থীদের গ্রেফতার করা থেকে বিরত থাকে; যদি সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক মহল এই নির্বাচনের ফলকে প্রশ্নাতীতভাবে মেনে নেয়; যদি বিজয়ী পার্টি ও প্রার্থীদের শাস্তিদানের কোনো পদক্ষেপ না নেয়; যদি এই নির্বাচনে বিদেশী হস্তক্ষেপ না চলে। এর বাইরে লেজিসলেটিভ ও প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের পর প্রবাসী ফিলিস্তিন পার্লামেন্ট ‘ফিলিস্তিনি জাতীয় কাউন্সিল’র (পিএনসি) ও এমনি আরো উল্লেখযোগ্য নির্বাচনগুলো যথারীতি অনুষ্ঠিত হয়।

যদি এসব ‘যদি-পরিস্থিতি’ সন্তোষজনক না হয়। তবে আসন্ন ফিলিস্তিনি নির্বাচন কোনো বাস্তব লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সাধনে সফল হবে না। এই নির্বাচন এর বাইরে বড়জোর মাহমুদ আব্বাস ও তার বিরোধীদের বৈধতার অগভীর প্রলেপ দেবে। এর মাধ্যমে তারা আরো প্রচুর সময় হাতে পাবে ফিন্যান্সিয়াল বেনিফ্যাক্টরদের কাছে থেকে আরো তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রে। এই সব কিছু মিলে আমরা বাধ্য হবো একটি প্রশ্ন তুলতে : ফিলিস্তিনে সামরিক দখলদারিত্ব বজায় রেখে কি গণতন্ত্র কায়েম করা সম্ভব?

২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফিলিস্তিনি লেজিসলেটিভের সর্বশেষ গণতান্ত্রিক নির্বাচন। ওই নির্বাচনের ফল ইসরাইলকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ৬২ জন ফিলিস্তিনি মন্ত্রী ও পার্লামেন্ট সদস্যকে ইসরাইল কারাগারে পাঠায়। যাদের অনেকেই এখনো কারাগারে রয়েছেন। এখন আবার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটা শুরু হয়ে গেছে। ইসরাইল এরই মধ্যে পশ্চিম তীরের হামাস সদস্য ও নেতাদের গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি হামাস কর্মকর্তাসহ ২০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি সক্রিয়বাদীকে আটক করা হয়। এর মাধ্যমে সুস্পষ্ট বার্তা দেয়া হয় : অধিকৃত ফিলিস্তিনে ফিলিস্তিনি সংলাপ ইসরাইল মেনে নেবে না। মানবে না তাদের ঐক্য চুক্তি কিংবা তাদের গণতন্ত্র। এর দু’দিন পর ৬৭ বছর বয়সী হামাস নেতা ওমর বারঘুইতির ওপর সমন জারি করে দখলকৃত পশ্চিম তীরের ইসরাইলি সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী। তাকে আসন্ন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হয়। তিনি ‘আল-মনিটর’ পত্রিকাকে বলেন, ‘ইসরাইলি কর্মকর্তারা আমাকে নির্বাচন করতে মানা করে দিয়েছে।’

ফিলিস্তিনি মৌল আইনে কারাবন্দী ব্যক্তিকেও নির্বাচনে অংশ নেয়ার বৈধতা দেয়- সে নির্বাচন লেজিসলেটিভই হোক, কিংবা হোক প্রেসিডেন্সিয়াল। ফিলিস্তিনে শুধু জনপ্রিয়তার কারণে অনেক ফিলিস্তিনি নেতা আজ কারাগারে বন্দী। মারওয়ান বারঘুইতি তেমনি একজন নেতা। ২০০২ সালে থেকে তিনি কারাগারে আটক। বারঘুইতি ছিলেন ফাতাহ গ্রুপের খুবই জনপ্রিয় এক নেতা। যুবক অবস্থায়ই তিনি আব্বাসের ওল্ড গার্ডের বিপরীতে ফাতাহর একজন যুবনেতা। আব্বাসের গ্রুপটি নানা দুর্নীতি-ব্যবস্থা গড়ে তুলে নিজেরা লাভবান হয়েছেন। পেয়েছেন রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা। সেই সূত্রেই আব্বাস ৮৫ বছর বয়সে আজ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট। এই দুর্নীতি-ব্যবস্থা ঠিকিয়ে রাখতে আব্বাস ও তার সহযোগীরা কাজ করে যাচ্ছেন বারঘুইতিকে একপাশে ঠেলে রাখতে। আসলে ফাতাহর এই প্রভাবশালী নেতাকে ইসরাইলি কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে প্রেসিডেন্ট আব্বাসের স্বার্থ রক্ষার জন্য। এই অভিযোগের অনেক ভিত্তি রয়েছে। আব্বাস ইসরাইলকে সামান্যতম চাপও দেননি বারঘুইতির মুক্তির ব্যাপারে। কিন্তু সম্ভাব্য সব নির্ভরশীল জরিপ মতে, ফাতাহ সমর্থক ও কার্যত সব ফিলিস্তিনির মধ্যে আব্বাসের তুলনায় বারঘুইতি বেশি জনপ্রিয়।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি মাহমুদ আব্বাস তার সিভিলিয়ান অ্যাফেয়ার্স মিনিস্টার হোসেইন আল-শেখ ও ফাতাহর একজন সেন্ট্রাল কমিটির সদস্যকে পাঠান আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে তাকে বিরত থাকার ব্যাপারে বোঝাতে। মাহমুদ আব্বাসের জন্য ভালো হয়, যদি বারঘুইতিকে পিএনসি নির্বাচনে ফাতাহর প্রতিযোগীদের তালিকায় বারঘুইতিকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এমনটি হলে, মাহমুদ আব্বাস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফাতাহর উল্লেখযোগ্য সমর্থন নিয়ে ভালো ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবেন। এতে নিশ্চিত হবে তার প্রেসিডেন্ট পদ পাওয়া। কিন্তু মাহমুদ আব্বাসের এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন বারঘুইতি। এর মাধ্যমে তিনি আব্বাসের বিরুদ্ধে অনাকাক্সিক্ষত এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। এতে করে ফাতাহর ভেতরে যে ভোট বিভাজন দেখা দেবে, তাতে হামাসের সাথে পার্লামেন্ট নির্বাচন ও বারঘুইতির কাছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে আব্বাসের।

রাতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ও বিভাজিত হামাসের পরিস্থিতিতে নির্বাচন যদি অনুষ্ঠিত হয়ও, তা শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের সুযোগ করে দেবে একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গড়ে তোলার। এই ফ্রন্ট কাজ করবে ইসরাইলি দখলদারিত্ব অবসান ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তোলার আন্দোলন পরিচালনায়।

এসব সত্ত্বেও কি ফিলিস্তিনি গণতন্ত্রে এই নির্বাচন কোনো গতি আনতে পারবে? আব্বাসের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যান্ডেটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে ২০০৯ সালে। পিএনসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ২০১০ সালে। আসলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠিত হয় একটি অন্তবর্তীকালীন রাজনৈতিক কমিটি হিসেবে। এর কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৯৯৯ সালে। তখন থেকে ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব চলছে ফিলিস্তিন জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই। ফিলিস্তিনিদের প্রাসঙ্গিকতা ছাড়া এই নেতৃত্ব চলছে এর বেনিফ্যাক্টরদের সমর্থন সম্বল করে। আর এই বেনিফ্যাক্টররা ফিলিস্তিনের গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থনে খুব কমই আগ্রহী।

একমাত্র আশার আলো হচ্ছে ফাতাহ ও হামাস সম্মত হয়েছে পিএলওকে নতুন কাঠামোর অধীনে আনার ব্যাপারে, যা বর্তমানে বিশেষত মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহ আন্দোলনের একচেটিয়া অধীনে। পিএরও’র এই গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন করা হবে কি না, তা প্রধানত নির্ভর করে আগামী মে ও জুলাইয়ের নির্বাচনের ফলের ওপর।

ইসরাইলসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মতো ফিলিস্তিনের রয়েছে রাজনৈতিক বৈধতার সঙ্কট। যেহেতু ফিলিস্তিন স্বল্প স্বাধীনতা কিংবা পুরোপুরি পরাধীন একটি দখলীকৃত ভূখণ্ড, তাই এমন অভিমত আসতেই পারে- এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দেশটিতে সম্ভবত গণতন্ত্র অর্জন সম্ভব নয়।

এ কথা ঠিক, বিদেশী অনেক ক্রীড়নক ফিলিস্তিনের নির্বাচনের ফলে প্রভাব বিস্তার কিংবা হস্তক্ষেপ করতে চায়। বিষয়টি ফিলিস্তিনি নেতাদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। ফাতাহর কেন্দ্রীয় কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি মে. জে. জিবরিল বাজোব ১৬ ফেব্রুয়ারি ফিলিস্তিনি টিভিতে বলেছেন, কিছু আরব দেশ ফিলিস্তিনি নির্বাচনে এবং ফাতাহ-হামাস মীমাংসা সংলাপে হস্তক্ষেপ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর তিন দিন পর ফিলিস্তিনি পিপলস পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল ও পিএলওর নির্বাহী কমিটির সদস্য বাস্সাম আল-সালহি ‘আরব২১’ ওয়েবসাইটে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘অনেক দেশ ফিলিস্তিনের নির্বাচনে প্রচুর অর্থ খরচ করবে। কারণ, এরা লেজিসলেটিভ কাউন্সিলকে প্রভাবিত করতে চায়। আমরা আরব ও অনারব অনেক দেশের এই চেষ্টা প্রতিহত করব।’ যদিও ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা এসব দেশের নামোল্লেখ করেননি, তবুও সম্ভাব্য এসব দেশ হচ্ছে : মিসর, জর্দান ও আরব আমিরাত। এসব দেশের স্বার্থ রয়েছে এই নির্বাচনের ব্যাপারে।

এটি আর গোপন নয়, প্রেসিডেন্ট আব্বাসের নির্বাচনের আহ্বান তার ইচ্ছা কিংবা আরব দেশগুলোর চাওয়ার ওপর নির্ভর করে এসেছে। বরং, তা এসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউয়ের চাপে। ইইউ হুমকি দিয়েছে, রামাল্লায় অর্থ-সহায়তা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হবে, যদি এ নির্বাচন বাতিল করা হয়। ব্রাসেলস ও ওয়াশিংটন উভয়ই চায় এর সাথে আর কোনো চুক্তি করার আগেই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এর বৈধতা পুনরুদ্ধার করুক। এই নির্বাচনের প্রতি সমর্থন রয়েছে অন্য দুটি গুরুতপূর্ণ দেশের : তুরস্ক ও কাতারের। তবে নির্বাচন ঘোষণায় খুশি নয় কিছু আরব দেশ, বিশেষ করে মিসর ও জর্দান। এ দুটি দেশের আশঙ্কা, এ নির্বাচনে ২০০৬ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটাবে। তখন হামাস গাজা উপত্যকায় সিদ্ধান্তসূচক বিজয় লাভ করেছিল। আর এর ফলে হামাসের সাথে ফাতাহর সৃষ্টি হয় এক সশস্ত্র দ্বন্দ্ব। যদি এমনটি আবার ঘটে, তবে তা ধ্বংসকর অবস্থান সৃষ্টি করবে মিসরীয় ও জর্দানীয় অভ্যন্তরীণ বিষয়ে। মিসরীয় সরকার বিশেষ করে হামাসকে দেখে মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা হিসেবে। মিসর সরকার ২০১৩ সাল থেকে চেষ্টা চালাচ্ছে দেশ থেকে ব্রাদারহুডের অস্তিত্ব বিলোপ করে দিতে।

মিসরের আশঙ্কা, হামাসের বিজয় মিসর সরকারের ওপর বাড়তি চাপের সৃষ্টি করতে পারে। তা ছাড়া মিসরে ব্রাদারহুড আরো চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে। অধিকতর শক্তিশালী হামাস নিয়ে ভীত জর্দান সরকারও। তা ছাড়া দেশটি নির্বাচনোত্তর সময়ের যেকোনো অস্থিতিশীলতা নিয়েও দেশটি আশঙ্কিত। কারণ, দেশটিতে রয়েছে বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি।

ফিলিস্তিন নির্বাচন প্রশ্নে গভীর আগ্রহ রয়েছে আরব আমিরাতেরও। ইসরাইলের সাথে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পদক্ষেপে দেশটি নেতৃত্ব দিয়েছে। দেশটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক আরো সুসংহত করতে চায়। ইসরাইলও এই নয়া ফিলিস্তিনি নির্বাচন ঘোষণায় অখুশি। যদিও ইসরাইলে গত দুই বছরে এর নাগরিকদের চারটি নির্বাচন উপহার দিয়েছে, তবু ফিলিস্তিনে কোনো নির্বাচন না হওয়ার ব্যাপারেই বেশি অনাগ্রহী। কারণ, ইসরাইল ফিলিস্তিনে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চায়। ইসরাইল চায় মাহমুদ আব্বাসই ক্ষমতায় থাকুক এবং সহযোগিতা অব্যাহত রাখুক ইসরাইলের নিরাপত্তা সার্ভিসের সাথে। এতে ইসরাইল অবাধে দখলধারী ও বর্ণবাদী সম্প্রসারণ চালিয়ে যেতে পারবে । ইসরাইল চায় আগামী নির্বাচনে ফাতাহ বিজয়ী হোক। সে জন্য ইসরাইল পশ্চিম তীরের হামাস নেতাদের গ্রেফতার করা শুরু করে দিয়েছে।

এ নির্বাচনে আছে কূটনৈতিক চাপ। বিষয়টি প্রথম স্পষ্ট হয় ১৭ জানুয়ারি। আব্বাসের নির্বাচনী ডিক্রি জারির ৪৮ ঘণ্টা পর মিসরীয় ও জর্দানীয় গোয়েন্দা প্রধান আব্বাস কামেল ও আহমেদ হোসনি রামাল্লাহ সফর করেন। একটি সূত্র মতে, তারা দু’জন মাহমুদ আব্বাসের সাথে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তাদের আলোচনায় ফাতাহ পরিস্থিতিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে এই নির্বাচন প্রশ্নে ফাতাহর ভেতরে কোনো রাজনৈতিক ঐকমত্য নেই। এই অনৈক্য মাহমুদ আব্বাসের জন্য এক চ্যালেঞ্জ। ক্রমবর্ধমান সমর্থনের আভাষ পাওয়া যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট পদে মারওয়ান বারঘুইতির প্রার্থিতার ব্যাপারে।

এই ফাতাহ নেতা আজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে ইসরাইলি কারাগারে রয়েছেন। অধিকন্তু, লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের নির্বাচনে প্রার্থিতার ব্যাপারে ফাতাহর মধ্যে কোনো ঐকমত্য নেই। এখন ভিন্ন ভিন্ন কিছু নির্বাচনী প্রার্থী-তালিকা তৈরি করা হচ্ছে : একটি তৈরি করছেন মাহমুদ আব্বাসের ঘনিষ্ঠজনরা, আরেকটি তালিকা করছেন ফিলিস্তিনি নেতা মরহুম ইয়াসির আরাফাতের ভাইপো নাসের আল-খুদওয়া এবং আরেকটি তালিকা তৈরি করছেন সাবেক নিরাপত্তা প্রধান মোহাম্মদ দাহলান, যিনি ফাতাহ থেকে ২০১১ সালে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। নির্বাচনের আগের এই সময়টায় ফাতাহর ভেতরকার অনৈক্য নিশ্চিতভাবেই হামাসে উপকার বইয়ে আনবে।

বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মিসর ও জর্দান চাইছে ফাতাহ আসন্ন নির্বাচনে একটি ঐক্যবদ্ধ তালিকা করুক। এ জন্য দেশ দুটি মাহমুদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে দাহলানের সাথে একটি সমঝোতায় গিয়ে তাকে পার্টিতে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে। ফাতাহর এ ফাংশনারির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল আরব আমিরাতের সাথে। কোনো কোনো পর্যবেক্ষকের মতে, আবুধাবি দাহলানকে ফিলিস্তিনি কর্র্তৃপক্ষের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে বিবেচনা করে। বিষয়টি মাহমুদ আব্বাসের জন্য একটি সংশয় সৃষ্টি করে রেখেছে। এ জন্য তিনি চান না দাহলান আবার দলে ফিরে আসুন। দাহলানের সমর্থকরা প্রকাশ্যেই বলেন, তারা আমিরাত থেকে রাজনৈতিক, গণমাধ্যম ও আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। এই সহায়তায় তারা ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক শক্তির সমর্থন আদায়েও সফল হচ্ছেন। এ দিকে হামাস দাহলান গ্রুপের গাজা উপত্যকার রাজনীতিতে ফিরে আসার ব্যাপারে বিরোধিতা করেছে ২০০৭ সালের সশস্ত্র দ্বন্দ্বে তাদের ভূমিকার কারণে। শেষ পর্যন্ত মিসরের চাপে হামাস তাতে সম্মত হয়। তখন দাহলান ফিলিস্তিনিদের জন্য বেশ কিছু মানবিক প্রকল্প চালু করেন। এর মধ্যে আছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় ছাড়াই কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বিতরণ। এ সবের মূল লক্ষ্য ছিল নতুন ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব গড়ে তোলা। সব কিছু মিলে এতসব ‘যদি’ অনিশ্চিত করে তুলেছে ফিলিস্তিনির আগামী নির্বাচনের সাফল্য।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement
ইরানের কাছে বিপজ্জনক অস্ত্র থাকা উচিত না : ইসরাইল বেনাপোলে সীমান্ত থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল উদ্ধার ইউক্রেনকে ফের হুঁশিয়ারি, আইসিবিএম ছুড়ল রাশিয়া ইন্দুরকানীতে শতবর্ষী বৃদ্ধের আত্মহত্যা কোনো ভাঙাচোরা রাস্তা থাকবে না : সেলিম উদ্দিন ঢাকায় পৌঁছেছেন বাইডেন প্রশাসনের বিশেষ প্রতিনিধি দল নওগাঁয় ব্যবসায়ী সুমন হত্যা মামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার মিরসরাইয়ে দুই মাথা ও আট পা বিশিষ্ট গরুর বাছুরের জন্ম! ‘ভারত-বিরোধী নই, সম্মান ও সমতা নিয়ে সুসম্পর্ক চাই’ থাইল্যান্ডসহ ৫টি দেশে গমনেচ্ছু বাংলাদেশীদের জন্য সতর্কতা ইউক্রেনে নতুন রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার উদ্বেগজনক : জাতিসঙ্ঘ

সকল