অপরাধ দমন : আইন ও শাস্তি যথেষ্ট নয়
- সালাহউদ্দিন বাবর
- ১৩ মার্চ ২০২১, ২০:৪১, আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২১, ২০:৫০
যেকোনো পণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকার সাথে সাথে তার সরবরাহ আর মূল্যও ক্রমাগত বাড়ে। এটি অর্থনীতির সহজ সূত্র। সবাইকেই যেহেতু বাজার-হাট করতে হয়, সে সুবাদে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সহজে এই তত্ত্ব উপলব্ধি করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে সুনীতির চর্চা হ্রাস পাওয়ায় দুর্নীতির সীমাহীন প্রসার ঘটেছে। আর এখানেই আমাদের প্রশ্ন, যেকোনো বস্তুর প্রাপ্যতা কমলে তার কদর ও দাম বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সুনীতির বেলায় ঠিক উল্টো হয়েছে। সুনীতি যতটা পিছু হটছে, অনৈতিকতার প্রসার লাগামহীনভাবে ঘটছে। এর কারণ সম্ভবত এটাই যে, সুনীতির প্রসারের সাথে আজকের অর্থ-বিত্ত প্রাপ্তির কোনো যোগ নেই। বরং দুর্নীতি ও অনৈতিকতা যতটা বিস্তৃত হবে, সেখানে একশ্রেণীর মানুষ বিত্তের ততটাই স্ফীতি ঘটতে থাকে। আসলে আজকে আমাদের সমাজ শুদ্ধতার দৃষ্টিতে উল্টো পথেই চলছে। কিছু মানুষ সেটিই অনুসরণ করছে। কেননা তাদের সামনে এটি ‘ভালো থাকার পথ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাদের সম্মুখে এটিই উদাহরণ যে, ভালো থাকার পথ হিসেবে উল্টো পথে চললেই যত উন্নতি। তাদের আশপাশের আরো ১০ জন এভাবেই বৈষয়িক উন্নতি করছে। তাই তারা কেন শুদ্ধতা ও নৈতিকতার পথে হেঁটে বোকা সেজে কেবলই দৈন্য নিয়ে পিছে পড়ে থাকবে। এই মনোভাবের প্রতি তারা এতটাই আসক্ত হয়ে উঠেছে যে, অন্য কিছু তথা সততা-নৈতিকতার কথা কস্মিনকালেও তাদের ভাবনায় প্রবেশ করতে পারে না। শুদ্ধতার বোধ বিবেচনা কোনো কিছুই ওদের স্পর্শ করে না। তারা তাদের এই বিবেচনা আরো বহু মানুষের মধ্যে সংক্রমিত করছে। ফলে বহু মানুষ অতীতের ধ্যান-ধারণা বিবেক হারিয়ে অন্য কিছু ভাবলেও সততা-নৈতিকতার কথা কস্মিনকালেও তাদের ভাবনায় আসে না। এরা আসলে সমাজে শুদ্ধতার বোধ বিবেচনার ধারেকাছেও নেই। এসবের উল্টো পথে চলতেই বরং স্বচ্ছন্দ অনুভব করে এবং এই অনুভূতিতে কিছু মানুষ এতটাই সংক্রমিত হয়েছে এ জন্য তারা ভ্রান্ত পথে চলছে। এটা ঠিক যে, এমন পথে চলার জন্য ‘ভিন্ন যোগ্যতা’ অর্জন করতে হয়। আর সে যোগ্যতার মূল দর্শন হচ্ছে, ভালো-মন্দের বিচার-বিবেচনার বোধকে ভুলে যেতে হবে। সততা, নীতি-নৈতিকতার চেতনাগুলো অতীতের ধ্যান-ধারণা হিসেবে গণ্য করে পরিহাস করতে হবে। ‘সৎসঙ্গ’ বলে যে কথা আগে গুরুত্ব পেত, তার বদলে এখন সঙ্গী হিসেবে তাদেরই বেছে নেয়া হয়- যেসব ব্যক্তির বিচরণ অন্ধকার গলিপথে; যেখানে আলোর কোনো রেশ নেই।
উল্টো পথে চলে বহু মানুষের ‘তরক্কি’ হচ্ছে। এ জন্য বিশেষ যোগ্যতার কথাও বলা হয়েছে। এসব যোগ্যতার অধিকারীদের সব ক্ষেত্রে শ্রীবৃদ্ধি পেলেও যাদের এমন অসামান্য যোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব নয়, তাদের সংখ্যাই বেশি। তাই বাংলাদেশে মানুষের দরিদ্রতার হার বাড়ছে। তবে এই ‘বিশেষ যোগ্য’ ব্যক্তিদের কর্মতৎপরতার ফলে লাগামহীনভাবে বিস্তার লাভ করছে যত অপরাধ আর অপকর্ম যা কি না সমাজজীবনকে বিষিয়ে তুলছে। উল্লিখিত বিশেষ যোগ্য ব্যক্তিদের তৎপরতার কারণেই রাষ্ট্রযন্ত্রের অপশাসনের বিস্তার ঘটায় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শান্তি স্বস্তি আর নিরাপত্তা। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, অতি সম্প্রতি দেশের প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি মানুষের আয় রোজগার কমে যাওয়ায় তাদের জীবনমানের চরম অবনতি ঘটেছে। পক্ষান্তরে সেই ‘অতিযোগ্য’ বহু মানুষের ক্রোড়পতি হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে।
পরস্পর এই বিপরীতধর্মী পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে, বাংলাদেশ তার মৌলিক লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। কেননা রাষ্ট্রের লক্ষ্য হচ্ছে ক্রমাগত দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা। কিন্তু সে লক্ষ্য পূরণ করা হচ্ছে কোথায়? তাই এটাই ধরে নিতে হবে যে, প্রশাসনের চরম লক্ষ্যচ্যুতি ঘটছে, ফলে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বঞ্চনার শিকার আর কিছু লোক অর্থ বিত্তে ফুলে-ফেঁপে উঠছে। নীতিতে এমন লক্ষ্যচ্যুতি ঘটায় এবং তার কোনো প্রতিকারের উদ্যোগ না থাকায় বুঝতে হবে; সমাজ এখন দূষণের কবলে পড়লেও দেশের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার নিদর্শন নেই। ধরে নিতে হবে, ভবিষ্যতে জাতির জন্য আরো মন্দ দিন অপেক্ষা করছে। সমাজবিজ্ঞানী ও সুশীল সমাজ বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। সেই সাথে সমাজের অগ্রসর মানুষের মধ্যে সাংবাদিকরা দেশের এমন পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিন লেখনী চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এ নিয়ে যেসব ব্যক্তি ও সংস্থা দায়িত্বশীল এবং যাদের কাজ রাষ্ট্রের লক্ষ্যকে সফল করা, তথা সব অব্যবস্থার প্রতিবিধান করা, সেসব অপশক্তির অপকর্মের কারণেই এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে সমাজ প্রায় ভেঙে পড়তে চলেছে। এসব রুখতে যে দায়িত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার নজির খুব একটা লক্ষ করা যায় না। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার কারণে তথা জবাবদিহিতার অভাবেই এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে যে, সমাজ ভেঙে পড়তে বসেছে। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে যদি তাদের ব্যর্থতা দেখা যায় তবে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে কেউই রেহাই পাবে না। অথচ রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সাথে জড়িত সব উচ্চপদস্থ ব্যক্তি এমন অঙ্গীকার করেই আসেন যে, তাদের সব যোগ্যতা মেধা ও কর্মতৎপরতা দেশে কল্যাণ ও মানুষের সেবা এবং দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করবেন।
অপ্রতিহতভাবে উল্টো পথে চলার জন্য কিছু লোকের ‘তরক্কি’র কথাও বলা হয়েছে। এমন উল্টো পথের যাত্রীদের কাছে রুজি রোজগারের অনেক পথের একটি হচ্ছে মাদকের ব্যবসা। সে ব্যবসা এখন বাংলাদেশে রমরমা। এখানে দিন দিন মাদকাসক্তদের সংখ্যা বাড়ছে। সঙ্ঘবদ্ধ একটি চক্রের অপতৎপরতার কারণে এমনটি ঘটছে। মাদকসেবীদের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে মাদকের চাহিদাও বেড়েছে। আর ‘উল্টো পথের ব্যবসায়ী’দের এতে ভাগ্য খুলছে দ্রুত। তারা বিভিন্নভাবে দেশে মাদক নিয়ে আসছে এবং গোটা দেশে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এমনকি এসব মাদক ব্যবসায়ীর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মাফিয়াদের সাথেও যোগাযোগ রয়েছে। এরা বাংলাদেশকে মারাত্মক সব মাদকের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। এমন তথ্য সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার কাছে রয়েছে।
আগে মাদকের ব্যবহার বলতে বোঝাতো শুধু সুরা পানকেই। কিন্তু এখন মাদকের বহু রকমফের রয়েছে। আজ সবচেয়ে দুশ্চিন্তার কারণ হচ্ছে- সমাজের যুবক শ্রেণী মাদকাসক্ত হয়ে ভয়ঙ্কর সব অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে যা সুস্থ মানুষের চিন্তার বাইরে। এমনকি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাদকের নীল দংশনে নেশা করে অবৈধ যৌনাচারে পর্যন্ত লিপ্ত হয়ে পড়ছে। আগে বড় শহরগুলোকে মাদক সংক্রমিত করত। কিন্তু এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে তা ছড়িয়ে পড়েছে। সুরা পান ও জুয়া খেলা সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। অন্যান্য মাদক রোধের ক্ষেত্রে বিধিবিধানের কমতি নেই, শাস্তির নানা ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু মাদকসেবীরা এসব আইনকানুনের থোড়াই কেয়ার করে। কেননা সমাজের বিত্তবান উচ্চশ্রেণীর মানুষের সন্তান-সন্ততিরাই এসব অপরাধে বেশি জড়িত। অর্থের বদৌলতে এরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। এসব পরিবারের সদস্যরা ঘরে বসেই মাদক গ্রহণ করে যাকে ‘হিরোইজম’ বলে জ্ঞান করে।
অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের মাদক গ্রহণজনিত অপরাধকে একেবারেই সাধারণ ব্যাপার বলে গ্রহণ করে নেন। পক্ষান্তরে সাধারণ পরিবারের মাদকাসক্ত সন্তানরা মাদকের পয়সা পাওয়ার জন্য পরিবারে নানা তাণ্ডব ঘটিয়ে থাকে। এসব বখে যাওয়া সন্তানের দ্বারা নানাভাবে নিগৃহীত হয়ে থাকেন মা-বাবারা। এক নিদারুণ কষ্ট-বেদনা নিয়ে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
উল্লেখ করা হয়েছে, মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য বহু বিধিবিধান ও নির্দেশনা রয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে মাদকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আইনকানুন দিয়ে তাদের শক্তিশালী করা হয়েছে। কিন্তু কোথায় তাদের প্রতিরোধ তৎপরতা? বরং এসব আইনকানুনের ভয় দেখিয়ে অপরাধীদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণ করে তাদের বরং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের পেছনে পুলিশ বাহিনীও রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও এমন বহু অভিযোগ রয়েছে যে, তারা নানা জুজুর ভয় দেখিয়ে অপরাধীদের কাছ থেকে অর্থবিত্ত আদায় করে থাকে। যে সর্ষে দিয়ে ভূত তাড়ানো হবে খোদ সেই সর্ষের মধ্যে যদি ভূত আশ্রয় পায় তবে তার হাল কী হবে? সেটি আমাদের সমাজের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে। সে জন্য প্রথমে কালক্ষেপণ না করে সর্ষের ভূত তাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
সম্প্রতি পুলিশের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্সের কথা ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মাদকের সাথে কিছু পুলিশ সদস্যের যোগসাজশ প্রমাণের পর এসব কঠোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে যে, কিছু পুলিশ সদস্য মাদক গ্রহণ করছে। সে জন্য বহু পুলিশ সদস্যের রক্ত পরীক্ষা করে মাদক ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়ায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। পুলিশকে নির্ভেজাল করার ক্ষেত্রে এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয় বলেই অভিহত করতে হবে। কিন্তু এই উদ্যোগ ও সতর্কতা থেমে না যায় এবং যাতে জারি থাকে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণের সাথে এসব বিষয় যোগ করা উচিত যে, মাদক থেকে দূরে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর মাদকসংক্রান্ত অপরাধের সাথে জড়িতদের প্রতি যাতে অনুরাগ অনুকম্পা দেখানো না হয় এবং সব ধরনের লোভ লালসার ঊর্ধ্বে থাকার নৈতিক শক্তি অর্জন করতে হবে। পুলিশদের মধ্যে এমন চেতনা জাগ্রত করতে হবে যে, সমাজকে পরিশুদ্ধ করার মহান দায়িত্ব রাষ্ট্র তাদের দিয়েছে। এমন চেতনা সদা জাগ্রত রাখার জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যথার্থ ভূমিকা সমাজ আশা করে। আরো যেসব সংস্থা মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে তাদেরও পুলিশের হাইকমান্ডের কাছ থেকে দীক্ষা নিতে হবে। মাদককে ‘না’ বলার যে নির্দেশ রাষ্ট্রের রয়েছে তাকে মান্য করে সে অবদান রাখতে হবে। এই নির্দেশনা কার্যকর করাকে পেশাগত জীবনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে।
মাদকের এই প্রসার রোধের জন্য অবশ্যই শাস্তিমূলক বিধিবিধানের অপরিহার্যতা নিয়ে দ্বিমত করার অবকাশ নেই; কিন্তু কেবল এসবই যে জাদুর মতো কাজ করবে তা ভাবা উচিত নয়। মাদকের অপকারিতা এবং এসব যে নীতিনৈতিকতা ও মূল্যবোধের অন্তরায় সে শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের শিক্ষা-দীক্ষায়, নীতি-নৈতিকতা ও ধর্মীয় চেতনা এবং নির্দেশনাকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক যাতে মাদকের ব্যাপারে নতুন প্রজন্মের মধ্যে সঠিক ধারণা জাগ্রত হতে পারে।
দেশের চিকিৎসক সমাজ মাদকের প্রভাবে রোগাক্রান্ত মানুষকে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলার মহান দায়িত্বে রয়েছেন। তারা মাদকসেবীদের নিরাময়ের জন্য ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু তা এখনো সীমিত পর্যায়ে রয়েছে। পরিস্থিতির আলোকে এর পরিধি বৃদ্ধি করার জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। সেই সাথে, সুস্থ হয়ে ওঠা মাদকসেবীদের সমাজে পুনর্বাসন করতে না পারলে সব ব্যর্থ হয়ে যাবে। এজন্য সমাজ কল্যাণ বিভাগকে ভাবতে হবে।
মাদক ও অন্যান্য অপরাধ সমাজে এতটা বৃদ্ধি পেয়েছে যে, তাকে ‘মহামারী’ বললে বেশি বলা হবে না। সম্প্রতি দেশে নারী মেয়ে শিশু ও কিশোরীদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি ভয়াবহ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। যত্রতত্র নারী সমাজ যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গৃহবধূ, অবিবাহিত নারী, কর্মজীবী মহিলা, মেয়ে শিশু ও কিশোরীরা চরমভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় অপরাধীদের শায়েস্তা করার জন্য দ্রুত কঠোর আইন করা হয়েছে। তারপরও পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নতি ঘটেনি। অপরাধীরা এতটা বেপরোয়া যে, অপকর্ম করে তা মোবাইলে ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং ভুক্তভোগী নারীদের এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে যাচ্ছে। আবার নারীদের বিয়ের কথা বলে বা প্রেমের ফাঁদ পেতে তাদের নিয়ত যৌন নির্যাতন করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আইন ও পুলিশ অত্যন্ত সক্রিয়। এসব দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। আর আইন আদালতও সক্রিয়। তার পরও এমন অভিযোগ পাওয়া যায় যে, এসব দুর্বৃত্তের অভিযোগলিপিতে যথেষ্ট ফাঁকফোকর থাকায় এরা জামিনে বেরিয়ে আসছে; যা অন্য অপরাধীদের দুষ্কর্মে লিপ্ত হতে সাহসী করে তুলছে।
সম্প্রতি জাতীয় একটি দৈনিকে ধর্ষণসংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এই অপরাধের ভয়াবহ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে; যা এ ক্ষেত্রে খুব প্রাসঙ্গিক বলে তার সার কথা তুলে ধরা হলো। পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে গত পাঁচ বছরে ২৬ হাজার ৬৯২টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় এসব মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশের আইজিপির পক্ষ থেকে হাইকোর্টে দাখিল করা এক রিপোর্ট থেকে এই তথ্য অবহিত হওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ক্রমাগত বেড়েছে। তাছাড়া থানার বাইরে আদালতেও ধর্ষণের মামলা করা হয়। পাঁচ বছরে এমন মামলার সংখ্যা কত, তা জানা যায়নি। এই প্রতিবেদনে তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ধর্ষণের ঘটনায় ২০১৬ সালে মামলা হয়েছে ৪ হাজার ৩৩১টি। পরের বছর এই সংখ্যা বেড়ে ৪ হাজার ৬৮৩টি মামলা হয় আর ২০১৯ সালে থানায় ধর্ষণের অভিযোগে ৬ হাজার ৭৬৬টি মামলা আর গত বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ধর্ষণের অভিযোগে ৬ হাজার ২২০টি মামলা হয়েছে। এসব পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে, ধর্ষণজনিত অপরাধের চিত্র খুব ভয়াবহ।
দেশে অপরাধ দমনের জন্য আইনের কথা বলা হয়েছে, শাস্তির ব্যবস্থাও উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তার পরও অপরাধ হ্রাস পাচ্ছে না। আইন ও শাস্তির বিধান শেষ কথা নয়। ভাবতে হবে, এর সাথে আর কী যোগ করতে হবে। এ জন্য সমাজবিজ্ঞানীদের এগিয়ে আসা এবং এ সংক্রান্ত অপরাধ দমনের ব্যাপারটি নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। তাদের সুপারিশকে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। সমাজে সুস্থতা ও নিরাপত্তা বহাল না হলে রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য যে দেশের মানুষের, সরকার ও তার বিভিন্ন মিশনারির প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে না; যা কি না রাষ্ট্রের অকার্যকর হওয়া থেকে রোধ করবে না।
শেষে বলতে চাই, বাংলাদেশে নারীর মর্যাদা সম্মান নিরাপত্তাবিধানসহ তাদের ক্ষমতায়নের অঙ্গীকার সরকারের রয়েছে। তবে বর্তমানে নারীদের অবস্থার সাথে এতটা বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়েছে যে, তাতে সেই অঙ্গীকারের বিষয়টি অর্থহীন হিসেবে পর্যবসিত হতে চলেছে। দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী, তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করতে পারলে বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান ভাবমর্যাদার সীমাহীন ক্ষতি হবে।
ndigantababor@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা