২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ইসলামী ব্যাংকিংয়ে শ্রেষ্ঠত্ব

ইসলামী ব্যাংকিংয়ে শ্রেষ্ঠত্ব - ফাইল ছবি

কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ইসলাম শব্দটি বাদ দেয়া উচিত। তারা মনে করছেন, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের নামে যা হচ্ছে তা ‘ধোঁকাবাজি’। ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আয় কোনোভাবে সুদের বাইরে নয়। ইসলামী ব্যাংকিং নতুন বিষয় নয়। এর আধুনিক রূপের জন্ম অন্তত ৬০ বছর; যদিও ইসলামের ইতিহাসে সব সময় মুদারাবা, মুশারাকা, বাইমোয়াজ্জেল, ইজারা, ইসতিসনা ইত্যাদি আয়ের ব্যবসাবাণিজ্য, অর্থ লেনদেন চালু ছিল। আমরা সবাই জানি, ইসলামী ব্যাংক এখন বিশে^র সব মহাদেশেই রয়েছে। এটা রয়েছে ইউরোপে, আমেরিকায়, আফ্রিকায় এবং এশিয়ার প্রায় সব দেশে। এটাও সবার জানা কথা যে, প্রধানত অমুসলিম মালিকানাধীন বহুজাতিক ব্যাংকগুলো ইসলামী ব্যাংকের শাখা বা উইন্ডো খুলছে। এখানে আমি উল্লেখ করতে পারি যে, মিস্টার গর্ডন ব্রাউন যিনি কিছু দিন আগেও ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী ছিলেন পরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন, তিনি নিজে লন্ডনকে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের কেন্দ্র (যঁন) করতে চেয়েছিলেন। আমি সে সময় লন্ডনে উপস্থিত ছিলাম।

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীও ঘোষণা করেছেন, তাদের দেশটাকে ইসলামী অর্থনীতির প্রধান কেন্দ্রে পরিণত করা হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কুরআন বিশেষজ্ঞ নন, ফিকাহ বিশেষজ্ঞ নন, ইসলামী অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ নন এমন কিছু অর্থনীতিবিদের মন্তব্য আমি গ্রহণ করতে পারি না। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ আলেমরা সবাই ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ কাউন্সিলের সাথে জড়িত। এসব শ্রেষ্ঠ আলেমই ইসলামী ব্যাংকগুলোর কেন্দ্রীয় শরিয়াহ বোর্ডে আছেন। এসব ব্যক্তির মধ্যে ছিলেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সাবেক খতিব মরহুম মাওলানা উবায়দুল হক, খতিব প্রফেসর মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, মাওলানা কামালুদ্দীন জাফরী, বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ফকিহরূপে গণ্য মরহুম মুফতি আবদুর রহমান, দেশের অন্যতম খ্যাতনামা ফকিহ মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া। এ ছাড়াও অন্য অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ ব্যাংকগুলোর কেন্দ্রীয় শরিয়াহ বোর্ডে কাজ করছেন। আমি নিজেও ইসলামী শরিয়াহ বোর্ডের এবং আরো দু’টি শরিয়াহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলাম। এসব খ্যাতনামা আলেম ও চিন্তাবিদরা ইসলামী ব্যাংকিংয়ে সুদ আছে এ কথা কখনো মনে করেননি। যদিও সব সময় এসব ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় শরিয়াহ অডিট হয়ে থাকে। নিরীক্ষায় যদি কখনো কোনো বিনিয়োগে ইসলামী নীতির ব্যত্যয় দেখা যায়, তাহলে তার আয় সন্দেহজনক মনে করে (যদিও তা প্রমাণিত সুদ নয়) আর নেয়া হয় না। এর অর্থ বরং ভিন্ন খাতে রেখে দরিদ্রদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়। এ ধরনের কল্যাণমূলক কাজ অনেক ইসলামী ব্যাংক স্ব-উদ্যোগে করে। কোনো কোনো ব্যাংক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দারিদ্র্যের উন্নয়নে এ অর্থ ব্যয় করে। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। বিষয়গুলোর দেখভাল করার জন্য বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি শাখা বা উইং রয়েছে। এ শাখার কর্মকর্তারা ইসলামী ব্যাংকিংয়ের ওপর এখন যথেষ্ট দক্ষ হয়ে উঠেছেন। তারাও শরিয়াহ অডিট করে থাকেন। কোনো ধরনের ত্রুটিবিচ্যুতি পেলে সেটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে যথাযথভাবে অবহিত করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া নির্দেশনা সব ব্যাংককে বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করতে হয়।

আমি আরো উল্লেখ করতে চাই, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সব ব্যাংকের সাথে পরামর্শ করে একটি ইসলামী ব্যাংক গাইডলাইন তৈরি করেছে। অত্যন্ত আন্তরিকতা নিয়ে করা গাইডলাইনটি সুবিস্তৃত। এই গাইডলাইন প্রণয়নে ইসলামী ব্যাংকের কেন্দ্রীয় শরিয়াহ বোর্ড পূর্ণ সহযোগিতা করে। ইসলামী ব্যাংকগুলো এই গাইডলাইন যথাযথভাবে অনুসরণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নীতিমালার কোনো ব্যত্যয় হতে দেয় না। আমার মনে হয়, ওই সব অর্থনীতিবিদ সুদ ও ব্যবসায় লাভের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বোঝেন না। পবিত্র কুরআন স্পষ্টভাবে বলেছে, আরব জাহিলিয়াতের লোকেরা বলত, ব্যবসা তো সুদের মতো। কিন্তু আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন, ব্যবসা ও সুদ এক জিনিস নয়। তিনি আরো ঘোষণা করেন, ব্যবসা হালাল এবং সুদ হারাম। ওই সব অর্থনীতিবিদ মূলত আরব জাহিলিয়াতের কথাই বলছেন। এটা আধুনিক বা নতুন কিছু নয়। এটা অনেক পুরনো ও বাসি কথা। ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ইসলাম শব্দটি প্রত্যাহার করার যে কথা কেউ কেউ বলছেন তার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ কেউ আবদুল করিম হতে পারেন। কিন্তু তার কাজ তার নামের বিপরীত হতে পারে। এ জন্য আমরা কারো নাম পরিবর্তনের দাবি করতে পারি না। যেমন কোনো দেশের গণতন্ত্রের মধ্যে অনেক ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও দেশটির নাম গণতান্ত্রিক হতে পারে।

আমার জানা মতে, বিশ্বের ইসলামী ব্যাংকিংয়ে কোনো বুনিয়াদি ত্রুটি নেই। এ ধরনের কোনো ত্রুটি না থাকার কারণে কেউ ইসলামী ব্যাংকের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করতে পারে না। ধোঁকা কে বা কারা দিচ্ছেন আশা করি জনগণ খুব ভালো করেই বোঝেন। আমি বরং উল্লেখ করতে পারি যে, বিশ্ব-অর্থনীতির সঙ্কটের পর পাশ্চাত্যে আধুনিক ব্যাংকের পতন হয়েছে। কোনো ইসলামী ব্যাংকের পতন হয়নি। আমেরিকার ট্রেজারি বিভাগ পর্যন্ত চিন্তা করছে কিভাবে তারা ইসলামী ব্যাংকের নীতিমালা গ্রহণ করতে পারে। শেষ কথা হচ্ছে, ইসলামী ব্যাংকিং প্রচলিত ব্যাংক থেকে উন্নত।

লেখক : সাবেক সচিব বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement
সাবেক প্রধান বিচারপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ সুপ্রিমকোর্টের বিচারকাজ বন্ধ ফিরছেন শান্ত, অপেক্ষা বাড়ছে মুশফিকের জন্য পিক‌নিকের বা‌সে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু : পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাসহ বরখাস্ত ৭ ঘন কুয়াশায় ঢেকেছে কুড়িগ্রাম, তাপমাত্রা ১৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ‘স্বৈরাচার ও ফ্যাসীবাদমুক্ত দেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ রাশিয়ায় শিক্ষার্থীদের ‘নির্মমভাবে’ গ্রেফতারের বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিবাদ সাবেক প্রধান বিচারপতি রুহুল আমিন আর নেই তাজরীন ট্র্যাজেডির এক যুগ : পুনর্বাসনের দাবি আহতদের সিইসিসহ নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনারদের শপথ আজ জর্ডানে ইসরাইলি দূতাবাসের কাছে গুলি, বন্দুকধারী নিহত আহসান মঞ্জিল : বুড়িগঙ্গা-তীরের ঐতিহাসিক স্থাপনা

সকল